Ajker Patrika

সাধারণ মানুষের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়বে

আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য অন্তর্বর্তী সরকার অর্থবছরের মাঝামাঝি এসে ভ্যাটের (মূল্য সংযোজন কর) ওপর ভর করার যে পথটি বেছে নিয়েছে, তা প্রতিকূল ফলাফল নিয়ে আসতে পারে বলে অর্থনীতিবিদেরা আশঙ্কা করছেন। ৪৩ ধরনের পণ্য ও সেবার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের মাধ্যমে সরকার সম্পদশালীদের ওপর সরাসরি বাড়তি কর আরোপের পরিবর্তে পরোক্ষ করের বোঝা বাড়াচ্ছে।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইতিমধ্যেই মূল্যস্ফীতিতে কাহিল সাধারণ মানুষের ওপর এ কৌশল চাপ আরও বাড়াবে। কারণ, পণ্য এবং সেবার দাম বাড়বে বলে এ ধরনের পরোক্ষ করের বোঝা গরিব এবং মাঝারি আয়ের মানুষদের ওপর সমানভাবে পড়বে। এটি সমাজের উচ্চমাত্রার আয়বৈষম্যকে আরও তীব্র করবে।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী মহলের ধারণা, মূল্যস্ফীতির এ নতুন ধাক্কা এবং বৈষম্য বৃদ্ধি দীর্ঘ মেয়াদে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ অবস্থায় সরকার কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে সর্বস্তরের জনগণের জন্য মঙ্গলজনক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে, তা একটি বড় প্রশ্ন।

প্রাথমিকভাবে ৪৩ ধরনের পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হবে। গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। উপদেষ্টা পরিষদ এ-সংক্রান্ত অধ্যাদেশের খসড়াটি নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে।

ভ্যাট বৃদ্ধির বিষয়ে ঠিক কী কী পরিবর্তন আনা হচ্ছে, তা আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো জানানো হয়নি। তবে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) রেস্তোরাঁয় খাবারের বিলের ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বর্তমানের নন-এসি হোটেল সেবার ওপর থাকা সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাটও বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তৈরি পোশাক কেনার ক্ষেত্রেও ভ্যাট বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তৈরি পোশাকের দোকানের বিলের ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। এটি বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। অর্থাৎ তাতে তৈরি পোশাক কেনার খরচও বাড়বে। মিষ্টির ভ্যাটও সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এসবের বাইরে বিস্কুট, আচার, সিআর কয়েল, ম্যাট্রেস, ট্র্যান্সফরমার, টিস্যুপেপার ইত্যাদি পণ্য এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সের কার্ডের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, ‘দেশ চালাতে রাজস্ব লাগবে। সে জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। আর এটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। চূড়ান্ত হোক। এ বিষয়ে অধ্যাদেশ জারি করা হবে। অধ্যাদেশ জারি হোক। তারপর বিস্তারিত বলা যাবে।’

ব্যবসায়ীদের অন্যতম প্রধান সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যে পণ্য বা সার্ভিসের ওপরই ভ্যাট বাড়ানো হোক না কেন, প্রভাব পড়বেই। মানুষের খরচ তো একটু বাড়বেই। মূল্যস্ফীতি আছে, বাড়ছে। সাধারণ মানুষের অসুবিধা হবেই।’

অর্থনীতিবিদেরা প্রায় সমস্বরে বলেছেন, রাজস্ব বাড়ানোর তাগিদ থেকে সরকার দ্রুত সমাধানের সহজ পথ বেছে নিয়েছে—দীর্ঘমেয়াদি কঠিন পথে যায়নি। কিন্তু এর কারণে বৈষম্য বাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্ন আয়ের মানুষ।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, রাজস্ব আদায় বাড়ানোর চাপেই এটি করা হয়েছে। কারণ, এটি সহজ উপায়। কিন্তু এটি মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ বাড়াবে। সাবান, ডিটারজেন্ট, পেইন্ট, এলপিজির ওপর ভ্যাট বাড়বে, যেগুলো মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তদের ওপর প্রভাব ফেলবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকনোমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘সরকার কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর কঠিন পথে না গিয়ে সহজ পথে হাঁটল। পরোক্ষ কর ধনী-গরিব সবার জন্যই সমান। পরোক্ষ কর বাড়লে ধনীদের সমস্যা হয় না, সমস্যা হয় গরিবদের। এতে অসমতা আরও বাড়বে।’

রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‍্যাপিড) চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভ্যাটের মতো পরোক্ষ কর বাড়ালে বৈষম্য দূর করা যায় না। রাজস্ব বাড়ানোর সহজ উপায় হচ্ছে, ভ্যাট বাড়ানো। সরকার সেটাই করেছে।’

সরকারের এই উদ্যোগ প্রত্যাশা অনুযায়ী কার্যকর হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ও প্রকাশ করেছেন সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, ‘পরোক্ষ কর বাড়ানোর কারণে মানুষের ভোগ কমে যেতে পারে। তখন এ ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত থেকে কাঙ্ক্ষিত ফল আসবে না।’ এ সময় ভ্যাট বাড়ানোর উদ্যোগকে মূল্যস্ফীতি মোকাবিলার ক্ষেত্রে সরকারেরই দুটি সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের প্রতিফলন বলে মনে করছেন সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে একদিকে যখন বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়িয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে এনবিআরও ভ্যাট বাড়াচ্ছে। অথচ সমন্বয় থাকলে কিছু ক্ষেত্রে উল্টো কর হ্রাসের কথা ছিল।’

অর্থ উপদেষ্টার ভিন্নমত

ভ্যাট বৃদ্ধিতে জিনিসপত্রের দামের ওপর তেমন প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অত্যাবশ্যকীয় সব পণ্যের শুল্ক কমিয়ে জিরো (শূন্য) করে দেওয়া হয়েছে। আপনারা সে ছাড়টা দেখবেন।’

যেসব পণ্যের ওপর কর বাড়ছে, সেগুলো মূল্যস্ফীতি বাড়ানোর ক্ষেত্রে খুবই কম গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের মূল্যস্ফীতির মূল সূচকগুলো হলো চাল, ডাল ইত্যাদি।’

সরকারের এই উদ্যোগের পরিণতিতে সাধারণ মানুষের কষ্ট হবে কি না, জানতে চাইলে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মনে হয় না কষ্ট হবে।... তিন তারকার ওপর যে রেস্টুরেন্টগুলো, সেগুলোর ক্ষেত্রে ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে। ভাতের রেস্টুরেন্ট বা অন্য রেস্টুরেন্ট থেকে তো যাবে না।’

বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে এটি করা হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘না, সবদিক চিন্তাভাবনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণের শর্ত হিসেবে ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ করার শর্ত দিয়েছে। বাংলাদেশকে দেওয়া ৪৭০ কোটি ডলারের চলমান ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড়ের আগে গত ডিসেম্বরেই ঘুরে গেছে আইএমএফের একটি মিশন। ঋণের পরিমাণ বাড়ানোর শর্ত হিসেবে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন তাগিদ দিয়েছে প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যু

বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল বুধবার দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে পোশাকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। আজ মঙ্গলবার পোশাকমালিকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে জানাজার আগপর্যন্ত দেশের বিপণিবিতানগুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।

চিঠিতে বিজিএমইএ বলে, ‘দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প কারখানায় আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

পৃথক বিবৃতিতে বিজিএমইএ বলেছে, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে আগামীকাল এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সারা দেশের বিপণিবিতান ও দোকানপাট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিজিএমইএ ছাড়াও শোক জানিয়েছে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), টেক্সটাইল মিলের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

এ ছাড়া শোক জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসসহ (বেসিস) আরও অনেক সংগঠন।

সংগঠনগুলো পৃথক বার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত চেয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত