Ajker Patrika

শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি বাড়বে, বাংলাদেশের কমবে: বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস

আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২৪, ১৮: ১৯
শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি বাড়বে, বাংলাদেশের কমবে: বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস

দেউলিয়া পরিস্থিতির মধ্যেও শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের অর্থনীতি দ্রুত পুনরুদ্ধার হচ্ছে। আগামী দিনে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) এর প্রভাব পড়বে। তবে বাংলাদেশে টানা কয়েক বছর ৫ শতাংশের উপরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হলেও এবার নিচে নেমে আসবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। 

আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংকের সদ্য প্রকাশিত ‘সাউদ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট’- এর অক্টোবর সংখ্যায় এই পূর্বাভাস তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, ভারতে প্রত্যাশাতীত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ভর করে ২০২৪ সালে দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধি ৬ থেকে বেড়ে ৬ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়াতে পারে।
 
২০২৫ সালের মার্চে সমাপ্য চলতি অর্থবছরের জন্য ভারতের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস এপ্রিলের ৬ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭ শতাংশ ধরা হয়েছে। কৃষি উৎপাদনে ঘুরে দাঁড়ানো ও ব্যক্তিগত ভোগ বাড়ার ফলে প্রতিবেশী দেশটিতে প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলে বিশ্ব ব্যাংকের বিশ্লেষণ।

কিন্তু গত অগাস্টে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর বাংলাদেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি এবং তৈরি পোশাক শিল্পে অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে রপ্তানিতে মন্দার কারণে প্রবৃদ্ধি কমবে। 

বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৭ শতাংশ হবে বলে আগে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রবৃদ্ধির হার ৪ শতাংশে নামতে পারে। 

ঋণদাতা সংস্থাটি বলছে, অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও শিল্প খাতে দুর্বল প্রবৃদ্ধি পরিলক্ষিত। পাশাপাশি সাম্প্রতিক বন্যার ফলে কৃষিতে জোরালো প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা পূরণ হবে না। এক্ষেত্রে মাঝারি মানের প্রবৃদ্ধি হবে বলে মনে করছে বিশ্ব ব্যাংক।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস লক্ষ্যের চেয়ে তো অবশ্যই কম, কোভিড মহামারির পর সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়।

গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রবৃদ্ধির হারও সংশোধন করে ৫ দশমিক ২ শতাংশে নামিয়েছে বিশ্বব্যাংক। গত অর্থবছরের জন্য সরকারের সাময়িক প্রাক্কলন ছিল ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি।

প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোয় নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যানের অনুপস্থিতি এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রতিফলন ঘটেছে পূর্বাভাসে। এ কারণে স্বল্প মেয়াদে বিনিয়োগ ও শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি বাড়ার সম্ভাবনা নেই। অন্যদিকে বন্যার কারণে কৃষি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তবে মধ্য থেকে দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলে প্রত্যাশা করছে বিশ্বব্যাংক। সরকারের সংস্কার কর্মসূচির ফলে প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলে মনে করে সংস্থাটি। আর্থিক খাতে সংস্কার, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে রাজস্ব বাড়ানোর পদক্ষেপ, ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি ও বাণিজ্য চাঙা হওয়ার বিষয়গুলো বিশেষভাবে উল্লেখ করেছে বিশ্বব্যাংক।

সার্বিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, চলতি বছরে এই অঞ্চলে প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ, যা তাদের আগে করা পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি। এর ফলে এই অঞ্চল অর্থনীতির দিকে থেকে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অঞ্চলে পরিণত হওয়ার ধারা বজায় রাখবে।

বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইসার রয়টার্সকে বলেন, উদীয়মান ভোক্তা শ্রেণী ভারতের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আর শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান অর্থনীতির সংকট কাটছে। এদিকে পর্যটনের ভর করে নেপাল ও ভুটানের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে।

পূর্বাভাসের ঊর্ধ্বমুখী সংশোধনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংকের কাছে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত। এই অঞ্চলে সামনের দুই বছরে ৬ দশমি ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে সংস্থাটির পূর্বাভাস। 

রাইসার বলেন, বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চললে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য উর্ধ্বমুখী সম্ভাবনা রয়েছে। তবে গতি বজায় রাখতে দেশগুলিকে অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচিতে লেগে থাকতে হবে। 

গতকাল বুধবার চলতি অর্থবছরের জন্য তার জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৭ দশমিক ২ শতাংশ বজায় রেখেছে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের ধারণা, উৎপাদনে গতি ও মুদ্রানীতি সহজ করার ফলে চলতি অর্থবছর পাকিস্তানের অর্থনীতি ২ দশমিক ৮ শতাংশ হারে বাড়বে, যা আগের পূর্বাভাস ২ দশমিক ৩ শতাংশের চেয়ে বেশি। 

সার্বভৌম ঋণ খেলাপি ও কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে হামাগুড়ি দিয়ে বের হতে থাকা শ্রীলঙ্কার প্রবৃদ্ধির বড় ঊর্ধ্বমুখী সংশোধন হয়েছে। এবছর দেশটির প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৪ শতাংশ ও ২০২৫ সালে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ হবে বলে আশা করছে। 

আর চলতি অর্থবছরের জন্য নেপালের প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ১ শতাংশ এবং ভুটানের প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭ দশমিক ২ শতাংশ হবে বলে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস। 

দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ৩২ শতাংশ, যা বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন। এই অঞ্চলে নারীদের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ বাড়ানো উচিত বলে সুপারিশ করেছে বিশ্বব্যাংক। রাইসার বলেন, ‘শ্রমশক্তিতে আরও বেশি নারীকে আনার ফলে উৎপাদন সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যু

বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল বুধবার দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে পোশাকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। আজ মঙ্গলবার পোশাকমালিকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে জানাজার আগপর্যন্ত দেশের বিপণিবিতানগুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।

চিঠিতে বিজিএমইএ বলে, ‘দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প কারখানায় আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

পৃথক বিবৃতিতে বিজিএমইএ বলেছে, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে আগামীকাল এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সারা দেশের বিপণিবিতান ও দোকানপাট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিজিএমইএ ছাড়াও শোক জানিয়েছে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), টেক্সটাইল মিলের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

এ ছাড়া শোক জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসসহ (বেসিস) আরও অনেক সংগঠন।

সংগঠনগুলো পৃথক বার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত চেয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত