Ajker Patrika

ডলার সংকটের মূলে জ্বালানি আমদানি, বিকল্প খুঁজতে হবে: সিপিডি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২৩, ১৭: ৪১
ডলার সংকটের মূলে জ্বালানি আমদানি, বিকল্প খুঁজতে হবে: সিপিডি

বাংলাদেশে ডলার সংকটের জন্য অনিয়ন্ত্রিত জ্বালানি আমদানিকে দায়ী করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি)। বিকল্প জ্বালানি না খুঁজলে দেশে এ সংকট আরও বাড়তে থাকবে বলে মনে করে সংস্থাটি। 

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে ‘কারেন্ট চেইঞ্জ-কোয়ার্টারলি ব্রিফ অব দ্য পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি সেক্টর’ শীর্ষক মিডিয়া বিফ্রিংয়ে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এসব পর্যালোচনা তুলে ধরনে। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সহযোগী গবেষক হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তী।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক বলেন, ‘আমরা খুঁজছি কোন জায়গা থেকে একটা ডলার বাঁচানো যায়। কিন্তু সেখানে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিতে হচ্ছে, অথবা বাকি রাখতে হচ্ছে। অন্যদিকে এলএনজি ও কয়লা আমদানি করতেও খরচ হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ।’ তিনি বলেন, ‘আমরা একধরনের জ্বালানি সংকটে রয়েছি। জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানি না করা ছাড়া আমাদের উপায় নেই। ডলার সংকট সহজে সমাধান হবে না। এটা দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জের বড় উৎস জ্বালানি খাত। এ খাতে যতক্ষণ পর্যন্ত না ডলার অপচয় বন্ধ করতে পারছি, বিকল্প জ্বালানি না খুঁজতে পারি, তাহলে ডলার ক্ষয় কমিয়ে আনা কঠিন। ডলার সংকট বাড়তে থাকবে যদি না আমরা বিকল্প জ্বালানিতে যাই। ঋণ করে কয়েক মাসের সংস্থান করতে পারব, কিন্তু সংকট দীর্ঘমেয়াদি হবে।’ 

জ্বালানি খাতের বিভিন্ন দিক উল্লেখ করে সিপিডির গবেষণা সহযোগী হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তী বলেন, ‘অতিরিক্ত অব্যবহৃত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও, বিপিডিবি ইনস্টলড বিদ্যুৎ সম্প্রসারণ করেছে। সঞ্চালন লাইন ও সাবস্টেশনে অগ্রগতি সত্ত্বেও জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও বিভ্রাট বেড়েছে। এসব সমস্যা দূরীকরণে স্মার্ট গ্রিড এবং আধুনিক ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম গড়ে তোলা প্রয়োজন।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘ব্যয়বহুল গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমাতে ৪৬টি গ্যাস কূপ খনন ত্বরান্বিত করা জরুরি। ৪৬টি গ্যাস কূপ খননের কাজ ত্বরান্বিত করার জন্য সরকারের আরও অর্থ বরাদ্দ করা উচিত। উচ্চ মূল্যের পেট্রোলিয়াম তেল এবং এলএনজির কারণে আমদানি ব্যয় বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপ প্রয়োজন। রিনিউবেল জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে অগ্রগতি প্রত্যাশার চেয়ে কম।’ 

ক্যাপাসিটি চার্জকে বড় রকমের অপচয় উল্লেখ করে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘আমরা মনে করি ২০০৯ সালে বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল। সে সময়ে ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়ে বেসরকারি খাতকে আকৃষ্ট করার যুক্তি ছিল। তখন আমাদের ঘাটতি ছিল। কিন্তু পর্যায়ক্রমে বেসরকারি খাত উদ্বৃত্ত হয়েছে। উদ্বৃত্ত থেকে এখন বাহুল্য হয়েছে। এটা বাহুল্য বা মাথা ব্যথার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এখন আর ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার যৌক্তিকতা নেই। এখন ক্যাপাসিটি চার্জ থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। এটি একটি বড় রকমের অপচয়। এ অপচয় নেওয়ার মতো সামর্থ্য আমাদের অর্থনীতিতে নেই।’ সিপিডির গবেষণা পরিচালক বলেন, ‘জ্বালানি পরিস্থিতির জন্য সাতটি বিষয় আমরা তুলে ধরতে পারি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে দুর্বল জ্বালানি নিরাপত্তা। আলোচ্য সময়ে প্রচুর লোডশেডিং হচ্ছে, জ্বালানি আমদানির অসমর্থ দেখতে হচ্ছে।’ 

কয়লা ও এলএনজি আমদানিনির্ভরতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকার জ্বালানি রূপান্তরের উল্টো পথে যাত্রা শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেন ড. মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, ‘জীবাশ্ম জ্বালানির সবচেয়ে খারাপ উপাদান কয়লা। সেটার ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকার জ্বালানি রূপান্তরে উল্টো পথে যাত্রা শুরু করেছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কয়লানির্ভরশীলতা কমানোর কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সেখানে কয়লাজনিত ব্যয় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে লোডশেডিং অব্যাহত ছিল। সঞ্চালন ও বিতরণব্যবস্থায় ত্রুটির কারণে লোডশেডিং বৃদ্ধি পাচ্ছে। জ্বালানি খাতে প্রচুর বিল বকেয়া রয়েছে। জ্বালানি আমদানির অসমর্থ্যতাও দেখতে পাচ্ছি। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ গ্যাস উৎপাদনকে এড়িয়ে গিয়ে এলএনজি আমদানির দিকে ঝুঁকছে সরকার। এলএনজি উন্নয়নের কাজ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ঋণ ও বিল পরিশোধে সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে।’ 

ড. মোয়াজ্জেম বলেন, অভ্যন্তরীণ গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধি করার সুযোগ থাকলেও সেটা করা হচ্ছে না। গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়নে বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে এলএনজি আমদানির জন্য ঋণ নেওয়া হচ্ছে। সরকারের ৪৬টি কূপ খননের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, সেটা পূরণ করা উচিত। 

নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসঙ্গে মোয়াজ্জেম বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে সরকারের আগ্রহ দেখা গেলেও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। দক্ষতা বৃদ্ধি ছাড়া দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের যে সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, তাতে কার্যত লাভবান হওয়া যাবে না। প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি করা না গেলে উচ্চমূল্যের বিদ্যুতে ভোক্তার ওপর চাপ বৃদ্ধি পাবে। 

তিনি বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদের জন্য সবচেয়ে লাভজনক। সবকিছু মিলিয়ে বলতে পারি জ্বালানি রূপান্তরের জন্য পরিবর্তনের পথে যাওয়া দরকার। গত তিন মাসে সেটা প্রত্যাশার চেয়ে অনেক নিচে। অর্থাৎ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত এখনো দুর্বলতম অবস্থায় রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

জেপির মঞ্জুর পর নির্বাচন বর্জন করলেন রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশীদ

প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন তাসনিম জারা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

জেপির মঞ্জুর পর নির্বাচন বর্জন করলেন রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশীদ

প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন তাসনিম জারা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

জেপির মঞ্জুর পর নির্বাচন বর্জন করলেন রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশীদ

প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন তাসনিম জারা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামি ১০ ও সরকারি ৬ ব্যাংক: ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২৭
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

দেশের ব্যাংকিং খাতের ভেতরে জমে থাকা অনিয়ম, রাজনৈতিক আশ্রয় ও কৃত্রিম হিসাবের পর্দা চলতি বছর যেন একে একে সরে যেতে শুরু করেছে। আর তাতেই সামনে এসেছে এক ভয়াবহ বাস্তবতা। সরকারি ও শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের ভারে এখন কার্যত দিশেহারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৪৯ দশমিক ৬৫ শতাংশে, আর ইসলামি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে তা আরও বেশি—৫৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থাৎ, এই দুটি খাতেই বিতরণ করা ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি হয়ে পড়েছে। যেখানে বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপির হার ৪১ দশমিক ৯৫ ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপির হার মাত্র ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শরিয়াহভিত্তিক ১০টি ইসলামি ব্যাংক মোট ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা ঋণ বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৫ কোটি টাকা। হিসাব বলছে, প্রতি ১০ টাকার প্রায় ৬ টাকাই এখন আদায় অনিশ্চিত। সেই তুলনায় শরিয়াহসহ দেশীয় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ৬৩ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এই তুলনাতেই স্পষ্ট, খেলাপির বোঝা এককভাবে সবচেয়ে বেশি ইসলামি ব্যাংকগুলোর ঘাড়েই।

সরকারি ছয় ব্যাংকের অবস্থাও খুব একটা ভিন্ন নয়। এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা। মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় অর্ধেকই সেখানে অনাদায়ি। ব্যাংকার ও বিশ্লেষকদের মতে, এই সংকট রাতারাতি তৈরি হয়নি। বছরের পর বছর ধরে দুর্বল তদারকি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং ইচ্ছাকৃত খেলাপিকে আড়াল করার প্রবণতা ধীরে ধীরে ব্যাংকগুলোকে এই জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, খেলাপি ঋণের এত উচ্চ হার শুধু ব্যাংকিং খাতের ভেতরের সমস্যা নয়, এটি সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি। ব্যাংকগুলো নতুন ঋণ দিতে পারছে না, বিনিয়োগ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ছে, শিল্প-কারখানার সম্প্রসারণ থেমে যাচ্ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানে। তাঁর মতে, খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং ঋণ আদায়ে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ ছাড়া পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব নয়।

ইসলামি ব্যাংকিং খাতে এস আলম, নাসা ও বেক্সিমকো গ্রুপের নাম বারবার আলোচনায় এসেছে। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, দীর্ঘদিন সরকারি মদদে এসব গ্রুপ বিপুল ঋণ নিয়ে খেলাপি হলেও তা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়নি। এখন সেই বাস্তবতা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।

সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যাংকিং খাতের চিত্র আরও উদ্বেগজনক। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৮ লাখ ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে প্রায় ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, বিগত সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর যে অপচেষ্টা ছিল, তা এখন ভেঙে পড়েছে। সঠিক হিসাব সামনে আসায় হার ৩৬ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে, যা বাস্তবতারই প্রতিফলন। তিনি আবারও শীর্ষ ১০ খেলাপির জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনালের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, আগের সরকারের আমলে লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণ প্রকাশ পাওয়ায় এই হার বেড়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ঋণ আদায়ে কঠোর নির্দেশনার কারণে আগের তুলনায় আদায় বেড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

জেপির মঞ্জুর পর নির্বাচন বর্জন করলেন রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশীদ

প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন তাসনিম জারা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ছয় মাসে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি

ডলার এখন রেমিট্যান্স, রপ্তানি, হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ—সবকিছুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে। তাই বাজারে ডলার হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে সবাই চুপ। এই ডলারের সরবরাহ ও দাম স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি পুরো বৈদেশিক মুদ্রার ভারসাম্য ঠিক রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়মিত বিরতিতে ডলার কিনছে। সেই ধারাবাহিকতায় শুধু চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ প্রসঙ্গে আজকের পত্রিকাকে জানান, ডিসেম্বর মাসে কেনা ডলারের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, ৯২ কোটি ডলার এবং চলতি অর্থবছর ধরে মোট কেনা হয়েছে ৩ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। জুলাইয়ে প্রথম ডলার কেনা হয়েছিল ৪৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার, আগস্টে ৪৫ কোটি ৪০ লাখ, সেপ্টেম্বরেই তা বেড়ে ৯২ কোটি ৯০ লাখে পৌঁছায়। এরপর অক্টোবর ও নভেম্বরে অবশ্য অনেকটাই কমে ১৪ কোটি ২০ লাখ এবং ৫ কোটি ৪০ লাখে নেমে আসে। ডিসেম্বরেই তার বড় উল্লম্ফন ঘটে, কেনার পরিমাণ দাঁড়ায় ৯২ কোটি ১০ লাখ ডলারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি, হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংকিং চ্যানেলের শক্তিশালীকরণ এবং অনলাইনে আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজার মনিটরিংয়ের ফলে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে। এ ছাড়া ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিং বন্ধ হওয়ায় ব্যবসার আড়ালে ডলার পাচার কমেছে। এসব কারণে ব্যাংকগুলোতে জমে থাকা অতিরিক্ত ডলার ক্রয় করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আগের অর্থবছরগুলোর সঙ্গে তুলনায় এবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রেতার ভূমিকায়, যেখানে অতীতের বছরগুলোতে বড় অঙ্কে বিক্রি হতো। ২০২১-২২ অর্থবছরে বিক্রি হয়েছিল ৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন, ২০২২-২৩ এ ছিল ১৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন, ২০২৩-২৪ এ ১২ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন এবং ২০২৪-২৫ এ ১ দশমিক ১২৪ বিলিয়ন ডলার। এই পরিবর্তন বাজারে স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বর্তমান খোলাবাজারে ডলারের দর ১২৪-১২৫ টাকার মধ্যে, যেখানে গত বছরের এই সময়ে তা ছিল ১৩১ টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে পণ্য আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬১ বিলিয়ন ডলার, আগের বছরের তুলনায় ৭ শতাংশ কম। অনলাইনে বাজার নজরদারি এবং ওভার/আন্ডার ইনভয়েসিং নিয়ন্ত্রণে আসায় পণ্যের আড়াল থেকে ডলার পাচারও অনেক কমেছে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার ক্রয় বাজারে স্থিতিশীলতা আনার জন্য সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এর ফলে আমদানি, বিনিয়োগ ও বাজার ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক হয়েছে।’

সব মিলিয়ে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ, পাচার কমে আসা—সব মিলিয়ে ডলার বাজারে স্বস্তি ফিরিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ডলার বিক্রেতা নয়; বরং ক্রেতার ভূমিকায়, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

জেপির মঞ্জুর পর নির্বাচন বর্জন করলেন রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশীদ

প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন তাসনিম জারা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত