Ajker Patrika

অর্থনীতির নীরব যোদ্ধা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা, অবদান বৃহৎ শিল্পের দ্বিগুণ

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২: ১৯
অর্থনীতির নীরব যোদ্ধা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা, অবদান বৃহৎ শিল্পের দ্বিগুণ
ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছেন। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের অর্থনীতির অদেখা নায়ক হলো ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্প খাত। এটি ঠিক ছোটদের বড় স্বপ্নপূরণের এক মঞ্চ। বৃহৎ শিল্প খাতের ঝলমলে আলোর আড়ালে থেকেও সিএমএসএমই উদ্যোক্তারা তাঁদের সীমিত পুঁজি, অক্লান্ত পরিশ্রম এবং অদম্য উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে নীরবে চালিয়ে যাচ্ছেন অর্থনীতির চাকা। এই খাতের অবদান জাতীয় আয়ের ৩৮ শতাংশ, যা বৃহৎ শিল্পের প্রায় দ্বিগুণ। তবে এর গুরুত্ব কেবল অর্থনৈতিক সূচকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। লাখো মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের আলো জ্বালিয়ে এই খাত শুধু জীবিকা নয়, স্বপ্ন আর স্বাবলম্বিতার এক অপার সম্ভাবনা তৈরি করছে। সিএমএসএমই উদ্যোক্তারা যেন বটবৃক্ষের মতো—ছায়া দিচ্ছে, ফল দিচ্ছে, আবার শিকড় দিয়ে মাটিকে শক্ত করছে।

তারপরও সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তারা প্রতিদিন লড়াই করছেন। ঋণের কঠোর শর্ত, সরকারি সেবা পেতে হয়রানি এবং পণ্য বাজারজাতকরণে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার লড়াই—এসব যেন তাঁদের প্রতিদিনের সঙ্গী। পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস-সংযোগের জটিলতায় অনেক উদ্যোগ শুরুই করতে পারেন না। আবার ব্যবসা সনদ বা অনুমোদনের কাগজপত্র জোগাড় করতে করতে অনেকের পুঁজি শেষ হয়ে যায়।

অনেকে ঋণের জন্য ব্যাংকে গেলে শুনতে পান, ‘জামানত ছাড়া হবে না।’ বাধ্য হয়ে তাঁরা উচ্চ সুদে দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা নেন। কেউ কেউ মাঝপথে হাল ছেড়ে দেন, আর যাঁরা টিকে থাকেন, তাঁদের জন্য প্রতিটি দিন নতুন চ্যালেঞ্জ।

কিন্তু সব বাধার পরও এই খাতের উদ্যোক্তারা থেমে থাকেন না। তাঁদের মধ্যে একধরনের অদম্য জেদ আর সৃষ্টিশীলতার ঝলক আছে। একজন নারী উদ্যোক্তা তাঁর গ্রামে কারুশিল্প শুরু করেছেন, আরেকজন ছোট দোকান থেকে ব্যাগ তৈরি করে এখন বিদেশে রপ্তানির স্বপ্ন দেখছেন। এভাবে আরও কত হরেক স্বপ্ন অর্থনীতিতে লুকায়িত রয়েছে, যা মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বড় ভূমিকা রেখে চললেও কখনোই সেটি সবার সামনে আসে না।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এখন সময় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়ানোর। ব্যাংকগুলোর উচিত সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া এবং প্রশাসনিক হয়রানি কমিয়ে ডিজিটাল সেবা সহজলভ্য করা। পণ্য বাজারজাতকরণের জন্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে হবে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বড় করতে একটি অনুকূল পরিবেশ প্রয়োজন। তাঁদের সফলতা শুধু তাঁদের নয়, দেশের অর্থনীতি ও সমৃদ্ধি এগিয়ে নেবে। সিএমএসএমই খাতের উত্থান অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে ছোট উদ্যোগের মাধ্যমে বড় পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে।

এ বিষয়ে জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি, বাংলাদেশ (নাসিব) সভাপতি মির্জা নুরুল গণী শোভন বলেন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য বাজার সৃষ্টি, মেলা, আমদানি-রপ্তানি সহজীকরণ, শুল্কছাড় এবং বৈদেশিক বিনিয়োগে ইজ অব ডুয়িং বিজনেস নিশ্চিত করা জরুরি। এসব পদক্ষেপ উদ্যোক্তাদের ব্যবসা পরিচালনা সহজ করবে এবং কর্মসংস্থান ও জিডিপিতে আরও অবদান রাখবে।

গোল্ডেন টাচের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুর রহমান বলেন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারের সহায়তা প্রয়োজন এবং নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য অবাধ প্রবেশের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। হয়রানি বা বাড়াবাড়ি বন্ধ হলে দেশের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রপ্তানি বাড়বে, বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে এবং লাখ লাখ মানুষ কর্মসংস্থান পাবে। এর ফলে ছোট উদ্যোক্তারা দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখতে সক্ষম হবেন।’

ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, ‘ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে তারল্যের প্রবাহ না বাড়ালে অনেক প্রতিষ্ঠান টিকে থাকতে পারবে না। তাই তাদের জন্য ব্যাংক, ইক্যুইটি এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটাল থেকে অর্থায়নের সুযোগ বাড়ানো জরুরি।

সিএমএসএমই খাতের বর্তমান চিত্র

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) সর্বশেষ তথ্যমতে, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত দেশে ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি (সিএমএসএমই) খাতের উদ্যোক্তার সংখ্যা ৭৮ লাখ ১৮ হাজার। এর মধ্যে কুটির শিল্পের সংখ্যা ৬৮ লাখ ৪২ হাজার ৮৮৪, মাইক্রো শিল্পের ১ লাখ ৪ হাজার ৭, ক্ষুদ্র শিল্পের ৮ লাখ ৫৯ হাজার ৩১৮ এবং মাঝারি শিল্পের সংখ্যা মাত্র ৭ হাজার ১০৬টি। উল্লেখ্য, বিসিক এই তথ্যের ভিত্তি হিসেবে ২০১৩ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষার ডেটা ব্যবহার করেছে।

small-business-01

খাতসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রকৃত চিত্রটি ভিন্ন এবং বর্তমানে এই খাতের উদ্যোক্তার সংখ্যা প্রায় সোয়া কোটি ছাড়িয়ে গেছে। অপরদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, দেশের বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার ৪৫০টি। এগুলোর মধ্যে কার্যকর বড় শিল্পকারখানার সংখ্যা মাত্র ২ হাজার ৮৫৬টি।

কুটির থেকে বৃহৎ শিল্পের বৈশিষ্ট্য

কুটির শিল্প বলতে এমন শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বোঝায়, যাদের স্থায়ী সম্পদের মূল্য ১০ লাখ টাকার নিচে এবং শ্রমিকের সংখ্যা ১৫ জনের বেশি নয়। মাইক্রো শিল্পে স্থায়ী সম্পদের মূল্য ১০ লাখ থেকে ৭৫ লাখ টাকা, শ্রমিকের সংখ্যা ১ থেকে ২৫। ক্ষুদ্র শিল্পে স্থায়ী সম্পদের মূল্য ৭৫ লাখ থেকে ১৫ কোটি টাকা, শ্রমিকের সংখ্যা ২৬ থেকে ১২০ জন। মাঝারি শিল্পের জন্য স্থায়ী সম্পদের মূল্য ১৫ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকা এবং শ্রমিকের সংখ্যা ১২১ থেকে ৩০০ জন। বৃহৎ শিল্পে স্থায়ী সম্পদের মূল্য ৫০ কোটি টাকার বেশি এবং শ্রমিকের সংখ্যা ৩০০ জনের বেশি।

সিএমএসএমই ও বৃহৎ শিল্পে ব্যাংকঋণের চিত্র

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সিএমএম খাতে ব্যাংকগুলো মোট ৩ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এই খাতের জন্য বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ মোট ব্যাংকঋণের মাত্র ২১ দশমিক ৪৪ শতাংশ। তুলনামূলকভাবে বৃহৎ শিল্প খাতে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ প্রায় ৪৩ শতাংশ, যার স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা।

খেলাপি ঋণের চিত্রে দেখা যায়, সিএমএসএমই খাতে খেলাপি ঋণের হার মাত্র ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ, যা অত্যন্ত স্বস্তিদায়ক। অপরদিকে বৃহৎ শিল্প খাতে এই হার ৫৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ, অর্থাৎ বিতরণ করা ঋণের মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা খেলাপি হয়ে গেছে।

এনসিসি ও মেঘনা ব্যাংকের সাবেক এমডি মোহাম্মদ নূরুল আমিন বলেন, ‘ব্যাংকগুলো সব সময় ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে কম মনোযোগ দেয়। যদিও ঋণের একটি নির্ধারিত অংশ সিএমএমই খাতে বিতরণের নির্দেশনা রয়েছে, ব্যাংকগুলো তা অনেক সময় পূরণ করে না, ফলে একদিকে সিএমএসএমইরা বঞ্চিত হয়, যা দেশের সামগ্রিক উৎপাদন ও কর্মসংস্থানে অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে সবকিছু বিবেচনা না করে বড়দের বড় ঋণ দেওয়ায় ব্যাংকগুলোও বিপদগ্রস্ত হচ্ছে।

ঋণ পেতে ছোটদের যত জটিলতা

সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মোট বিতরণ করা ঋণের মাত্র ১৮ শতাংশ দেয় দেশের এসএমই খাতে। এর মধ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান পায় মাত্র ৯ শতাংশ ঋণ, ফলে ৯১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ঋণের সহায়তা থেকে বঞ্চিত থাকে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, এসএমই ঋণের সম্ভাব্য বাজার ২৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

বিদ্যমান বাস্তবতায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের মোট ঋণের ২৫ শতাংশ সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এ খাতের জন্য কম সুদের বেশ কয়েকটি প্রণোদনা ও পুনঃঅর্থায়ন তহবিল রয়েছে। তবে ব্যবসা সনদ, বার্ষিক প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন জটিলতার কারণে এসএমই উদ্যোক্তারা ঋণ ও প্রণোদনা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারছেন না।

বিনাস ক্র্যাফটস অ্যান্ড ডিজাইনসের স্বত্বাধিকারী সাফিনা আক্তার বলেন, ‘ছোট ব্যবসা করতে অনেক বাধার মুখে পড়তে হয়। বড়দের সঙ্গে টিকতে জনবল ও অন্যান্য সম্পদ প্রয়োজন, যা আমাদের নেই। ব্যাংকে ঋণ চাইতে গেলে কাগজপত্র এবং জামানতের প্রয়োজন পড়ে, যা ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে পাওয়া কঠিন।’

কিষাণঘর অ্যাগ্রোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারেকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকঋণের অভিজ্ঞতা খুবই খারাপ। দুই কোটি টাকার সম্পদ দেখিয়েও এসএমই বা কৃষিঋণ পাওয়া যায় না। ব্যাংকগুলো বিভিন্ন কৌশলে ঋণ দিতে উৎসাহী নয়।’

দেশে ৯০ শতাংশ শিল্পই কুটির

বাংলাদেশে ৯০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান কুটির শিল্প হলেও ব্যাংকগুলো তাদের ঋণ দিতে আগ্রহী নয়। তারা মূলত বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ দেওয়ার দিকে বেশি মনোযোগী। এই পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতির জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, সিএমএসএমই খাতে ঋণ বাড়ানো হলে দেশের অর্থনীতির গতি বৃদ্ধি পাবে এবং কর্মসংস্থানও অনেক বাড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী সতর্ক করে বলেন, ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো না বাঁচলে দেশের অর্থনীতি সঠিকভাবে এগিয়ে যেতে পারবে না। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোকে নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করে ছোট ব্যবসাগুলোর জন্য ঋণের সুযোগ বাড়াতে হবে।

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, এসএমই খাতে প্রায় ৪০ শতাংশ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, যদি এসএমই উদ্যোক্তারা সহজ শর্তে ঋণ পান, তবে তাঁরা তাঁদের ব্যবসার পরিধি বাড়াতে পারবেন, যা নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করবে এবং কর্মসংস্থান বাড়াবে।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এসএমইগুলোর জন্য চমৎকার নীতি প্রণয়ন করা হলেও সেগুলো বাস্তবায়নে দুর্বলতা রয়েছে। এসএমই নীতিতে নতুন বাজার বৃদ্ধি ও রপ্তানির সম্ভাবনা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হলেও সংশ্লিষ্টরা সে অনুযায়ী কাজ করতে পিছিয়ে রয়েছে।’

এসএমই ফাউন্ডেশনের এমডি আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘এসএমই বিকাশে সরকারের আর্থিক এবং প্রকল্প সহায়তা পাওয়া যায় না। ২০১৯ সালের এসএমই নীতিমালার বাস্তবায়নের জন্য ২ হাজার ১৪১ কোটি টাকার বাজেট থাকলেও কোনো অর্থ বরাদ্দ হয়নি।’

নীতিসহায়তার অভাবে রুগ্‌ণ

বিসিক সূত্র থেকে জানা গেছে, বিসিকের আওতাধীন সিএমএসএমই খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৫৬ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা। এই বিনিয়োগ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৮৮৭টি হচ্ছে রপ্তানিমুখী শিল্প। তবে উৎপাদনে আসার পর পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে ব্যর্থ হওয়ায় দেশীয় ও রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য থেকে গত জুন পর্যন্ত রুগ্‌ণ ও বন্ধ শিল্পকারখানার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫৭টি। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি ও সরকারের নীতিসহায়তার ঘাটতি বাস্তবতার কারণে এই শিল্পগুলোর কিছু অংশ রুগ্‌ণ ও কিছু বন্ধ হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আকাশপথে পণ্য পরিবহনে অফডক চান ব্যবসায়ীরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১: ১০
গ্রাফিকস: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিকস: আজকের পত্রিকা

আকাশপথে আমদানি-রপ্তানি ব্যবস্থার দুর্বলতা নতুন করে সামনে এনেছে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ড। ওই ঘটনায় কয়েক দিনের জন্য কার্গো কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ায় ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েন। এই প্রেক্ষাপটে আকাশপথে পণ্য পরিবহনকে নিরবচ্ছিন্ন, দ্রুত ও সংকটসহনীয় করতে বিমানবন্দরের বাইরে অফডকভিত্তিক এয়ার কার্গো ব্যবস্থা চালুর দাবি জোরালো হয়েছে। সেই সঙ্গে দ্রুত এয়ার কার্গো অপারেটরস স্টেশন (এসিওএস) নীতিমালা চূড়ান্ত ও বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকেরা। তাঁরা বলছেন, অফডকভিত্তিক এয়ার কার্গো অপারেশন চালু না হলে যেকোনো সংকটে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

অফডক হলো বন্দর বা বিমানবন্দরের মূল এলাকার বাইরে অবস্থিত এমন নির্ধারিত স্থাপনা, যেখানে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের খালাস, সংরক্ষণ, পরীক্ষা ও হ্যান্ডলিং করা হয়। সহজভাবে বলা যায়, বন্দরের ভেতরে সব কাজ না করে বন্দরের বাইরে আলাদা জায়গায় কার্গোর কাজ করা, এটাই অফডক।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের মতো আকাশপথেও অফডক ব্যবস্থা চালু করা যায় বলে মনে করেন নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, বর্তমানে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিং সেবা মূলত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে তাদের সক্ষমতা খুবই সীমিত। অনেক সময় পণ্য খালাসে অতিরিক্ত দুই থেকে তিন দিন সময় লেগে যায়। এতে রপ্তানি ও আমদানি উভয় ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়েন।

অফডক চালু হলে এ ধরনের জটিলতা থাকবে না জানিয়ে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এতে পণ্য খালাস দ্রুত হবে এবং সামগ্রিকভাবে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য আরও সহজ ও গতিশীল হবে।

অফডক দরকার কেন

সংশ্লিষ্টরা জানান, অফডক ব্যবস্থা চালু হলে বেসরকারি উদ্যোগে একাধিক অপারেটর থাকবে। ফলে কার্গো আমদানি-রপ্তানি পরিবহনে টার্মিনাল হ্যান্ডলিং, কার্গো হ্যান্ডলিং, স্ক্যানিং চার্জসহ অন্যান্য ফি নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক বাজারব্যবস্থা সৃষ্টি হবে। একই সঙ্গে সেবার মানও বাড়বে।

তথ্যমতে, বর্তমানে আকাশপথে প্রতি কেজি পণ্য রপ্তানিতে প্রায় ২৬ টাকা সার্ভিস চার্জ নেয় বিমান বাংলাদেশ ও সিভিল এভিয়েশন। একই সেবা পেতে ব্যাংককে প্রতি কেজিতে ৬.৪২ টাকা, কলকাতায় ৪.৮৮ টাকা এবং দিল্লিতে ৬.১০ টাকা দিতে হয়। এতে করে আকাশপথে পণ্য পরিবহন খরচ কয়েক গুণ বেড়ে যাচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা মনে করেন, দেশে এয়ার কার্গো অপারেশনে অফডক পদ্ধতি চালু হলে অধিকতর কার্গো নিরাপত্তার সঙ্গে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে। ইলেকট্রনিক কার্গো ট্র্যাকিং সিস্টেম (ইসিটিএস) চালু হবে। ফলে সহজে কার্গোর অবস্থান জানা যাবে। দ্রুত পণ্য খালাসে সুবিধা পাবে এবং জট কমবে। ওষুধের কাঁচামাল, জরুরি গার্মেন্টস পণ্যের নমুনাসহ আনুষঙ্গিক পণ্য সহজে পরিবহন করা যাবে। এতে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ত্বরান্বিত হবে।

ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা এর সুফল ভোগ করতে পারবেন। বিশ্বের অনেক দেশে অফডক ব্যবস্থা চালু আছে। যেমন সিঙ্গাপুর, দুবাই, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, জাপান, ভারত, হংকং, ইউএসএ। সেখানে এই ব্যবস্থার ফলে কার্গো পরিবহনে সময়ের সাশ্রয় ও পণ্য খালাসে জটিলতা নেই বললেই চলে।

ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে দীর্ঘদিন ধরে অফডক ব্যবস্থা চালু আছে এবং তা সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। একই ধরনের ব্যবস্থা ঢাকার বিমানবন্দর ও আশপাশের এলাকায় চালু করা গেলে আকাশপথে পণ্য পরিবহন আরও সহজ হবে।

এদিকে এয়ার কার্গো অপারেটরস স্টেশন (এসিওএস) নীতিমালা চূড়ান্ত ও বাস্তবায়ন চেয়ে ২৩ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছে তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ। সংগঠনটি বলছে, ঢাকা বিমানবন্দর এবং এর আশপাশে অফডক সুবিধা চালু হলে আমদানি প্রক্রিয়া সহজ হবে এবং রপ্তানির গতি বাড়বে। তবে অফডকের জন্য লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে কম খরচে ভালো সেবা নিশ্চিত করতে স্পষ্ট শর্ত থাকা প্রয়োজন।

বিজিএমইএ আরও জানিয়েছে, বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস বিমানবন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে। তাই অফডক ব্যবস্থায় বিমানের সঙ্গে সমন্বয় ও চুক্তির বিষয়টি নীতিমালায় স্পষ্ট থাকা জরুরি।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর পরিচালক ফয়সাল সামাদ বলেন, অফডক চালু হলে ডিএইচএল বা ফেডেক্সের মতো কুরিয়ার কোম্পানিগুলো বন্ড লাইসেন্স নিয়ে এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করার পরে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে সরাসরি ডেলিভারি করতে পারবে। তখন আর বিমানের ওপর নির্ভর করতে হবে না। ফলে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে।

১০ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে ‘এয়ার এক্সপ্রেস সার্ভিস ডেলিভারি’ বিষয়ক একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ—বিডা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনসহ আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে জড়িত দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, ইতিমধ্যে এয়ার কার্গো কার্যক্রমকে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় আনতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) কাস্টমস ও মূল্য সংযোজন কর বিভাগ থেকে ‘এয়ার কার্গো অপারেটরস স্টেশন (এসিওএস) স্থাপন, ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা, তদারকি ও কাস্টমস নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ২০২৫ ’-এর খসড়াও প্রণয়ন করা হয়েছে।

এয়ার কার্গো অপারেটর’স স্টেশন নীতিমালা চূড়ান্ত ও বাস্তবায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে আইআরডি সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ‘অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে যত দ্রুত সম্ভব বিধিমালা চূড়ান্ত করে তা বাস্তবায়ন করতে চাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আইএফআইসি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের জন্য মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি তাদের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের জন্য অ্যান্টি মানি লন্ডারিং (এএমএল) ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ (সিএফটি) সংক্রান্ত এক সচেতনতামূলক কর্মশালার আয়োজন করেছে। গত ২১ ডিসেম্বর ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এই কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়।

ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. মেহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে পরিচালনা পর্ষদের সকল সদস্য এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।

এএমএল ও সিএফটি কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতকরণে পরিচালনা পর্ষদের ভূমিকা এবং প্রাসঙ্গিক নিয়ন্ত্রক নির্দেশনা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিই ছিল এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য। কর্মশালায় আলোচিত প্রধান বিষয় ছিল—ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে এবং মানি লন্ডারিং তদারকিতে পরিচালনা পর্ষদের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) কর্তৃক বিভিন্ন সময় সিস্টেম চেক পরিদর্শন থেকে প্রাপ্ত পর্যবেক্ষণসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। দেশের সাম্প্রতিক মানি লন্ডারিং পরিস্থিতি এবং রিপোর্টিং সংস্থা হিসেবে ব্যাংকের করণীয়।

কর্মশালায় রিসোর্স পারসন হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএফআইইউর অতিরিক্ত পরিচালক রেজওয়ানুর রহমান ও যুগ্ম পরিচালক জুয়াইরিয়া হক।

এ ছাড়া ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মো. এবতাদুল ইসলাম, কাজী মো. মাহবুব কাশেম এফসিএ, মো. গোলাম মোস্তফা ও মুহাম্মদ মনজুরুল হক উপস্থিত ছিলেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মনসুর মোস্তফা, উপব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এই সচেতনতামূলক সেশনে অংশ নেন।

আইএফআইসি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, ব্যাংকিং কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে এ ধরনের কর্মশালা নিয়মিত আয়োজন করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিএসআরএম স্টিলসের ২৩তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ০৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দেশের শীর্ষস্থানীয় ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম স্টিলস লিমিটেডের ২৩তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশিকা অনুযায়ী ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় শেয়ারহোল্ডাররা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ (ক্যাশ ডিভিডেন্ড) সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করেছেন। কোম্পানির চেয়ারম্যান আলী হোসেন আকবরআলী এফসিএ সভায় সভাপতিত্ব করেন।

সভায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণী এবং পরিচালকমণ্ডলীর প্রতিবেদন অনুমোদিত হয়। শেয়ারহোল্ডাররা ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য কোম্পানির পরিচালক পুনর্নিয়োগ এবং নিরীক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন করেন।

কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমীর আলীহোসেন পরিচালকমণ্ডলীর বিবরণী উপস্থাপন করেন এবং কোম্পানির ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শেয়ারহোল্ডারদের অবহিত করেন।

বিপুলসংখ্যক শেয়ারহোল্ডার নিজ নিজ বিও (BO) আইডি ব্যবহার করে ওয়েব লিংকের মাধ্যমে এই ভার্চুয়াল সভায় সরাসরি অংশ নেন। নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণীসহ বিভিন্ন বিষয়ে শেয়ারহোল্ডারদের প্রশ্নের উত্তর দেন কোম্পানি সচিব।

শেয়ারহোল্ডাররা তাঁদের মন্তব্যে কোম্পানির বর্তমান ব্যবস্থাপনা ও পরিচালকমণ্ডলীর প্রতি গভীর আস্থা ও নির্ভরতার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

সভায় কোম্পানির পরিচালকবৃন্দ, কোম্পানি সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে কোম্পানির ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রোজার আগে কমেছে খেজুরের আমদানি শুল্ক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৩১
বিভিন্ন ধরনের খেজুরের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতা। গতকাল রাজধানীর বায়তুল মোকাররম এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা।
বিভিন্ন ধরনের খেজুরের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতা। গতকাল রাজধানীর বায়তুল মোকাররম এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা।

রমজান মাস উপলক্ষে খেজুর আমদানিতে বড় ধরনের শুল্কছাড় দিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। রোজার অন্যতম ইফতারসামগ্রী খেজুরের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে বলে আজ বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে এনবিআর।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পবিত্র রমজান মাসে খেজুরের সরবরাহ ও বাজারমূল্য স্বাভাবিক রাখার উদ্দেশ্যে খেজুর আমদানিতে কাস্টমস ডিউটি ২৫ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে এনবিআর। এই শুল্ক অব্যাহতি আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এর ফলে খেজুরের আমদানি বাড়বে এবং দামও কমবে বলে আশা করছেন এনবিআর কর্মকর্তারা।

গত বছরও রোজার আগে নভেম্বর মাসে আমদানি শুল্ক ২৫ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ ও অগ্রিম আয়কর ১০ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছিল।

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরু থেকে সব ধরনের খেজুর আমদানিতে সব মিলিয়ে ৫৭ দশমিক ২০ শতাংশ শুল্ক-কর ছিল। এর মধ্যে আমদানি শুল্ক (সিডি) ২৫ শতাংশ, ভ্যাট ১৫ শতাংশ, অগ্রিম কর ৫ শতাংশ ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩ শতাংশ।

এখন ১০ শতাংশ কমানোর ফলে মোট শুল্ক-কর ৪৭ দশমিক ২০ শতাংশে দাঁড়াল। তবে এই সার্কুলার এখনো এনবিআরের সার্ভারে যুক্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন আমদানিকারকেরা। তিন দিন ছুটি থাকায় আগামী রোববারে নতুন সার্কুলারে পণ্য শুল্কায়ন শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

এ ছাড়া এই শুল্ক কামানোর ফলে প্রতি কেজি খেজুরের দাম কত কমতে পারে, এ বিষয়ে এখনই কোনো ধারণা দিতে পারেননি আমদানিকারকেরা। তাঁরা বলছেন, ১০ শতাংশ শুল্ক কমার ফলে দাম কিছুটা কমবে। তবে কতটুকু কমবে, তা শুল্কায়ন শুরু হলে বোঝা যাবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমদানি শুল্ক কমানোর সঙ্গে সঙ্গে অগ্রিম কর ও রেগুলেটরি ডিউটি কমানোর দাবিও ছিল আমাদের। কিন্তু সরকার তা মানেনি। আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ কমানোর ফলে খেজুরের দাম সামান্য কমতে পারে। তবে এটি বাজারে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের খেজুর আমদানিতে মূল সমস্যা হলো ট্যারিফ হার বা শুল্কায়ন মূল্য। আমরা যে দামে আমদানি করি, শুল্ক ধরা হয় তার চেয়ে অনেক বেশি দামের ওপর। এতেই ট্যাক্সের হার বেড়ে যায়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত