Ajker Patrika

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন /ট্রাম্পের শুল্ক ধসিয়ে দিতে পারে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের অগ্রযাত্রা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বাংলাদেশের পোশাক খাতের প্রায় ৭০ শতাংশ কর্মীই নারী। ছবি: নিউইয়র্ক টাইমসের সৌজন্য
বাংলাদেশের পোশাক খাতের প্রায় ৭০ শতাংশ কর্মীই নারী। ছবি: নিউইয়র্ক টাইমসের সৌজন্য

২০২৫ সালটি হয়তো বাংলাদেশের জন্য কঠিন হবে। গত বছর, এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে গেছে দেশটি। ছাত্র-জনতা এক স্বৈরশাসককে হটিয়ে দেয়, আর পুরো দেশ পড়ে যায় বিশৃঙ্খলার মুখোমুখি। এরপর, যখন নতুন সরকার অর্থনীতি সামাল দিতে ব্যস্ত, তখনই আসে আরেক দুঃসংবাদ—যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে! বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকটাই রপ্তানি আয়ের ওপর নির্ভরশীল, যার মাধ্যমে জ্বালানি, খাদ্যসহ জরুরি পণ্য আমদানি করা হয়। এই সিদ্ধান্তে বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাংলাদেশসহ আরও বেশ কিছু দেশের ওপর শুল্ক স্থগিত করেন। তবে তা আবার চালু হওয়ার সম্ভাবনায় আতঙ্কে দিন কাটছে পোশাক খাতের শ্রমিকদের।

ঢাকার উপকণ্ঠে থাকা ২৫ বছর বয়সী মুর্শিদা আক্তার গত পাঁচ বছর ধরে সেলাই মেশিন চালিয়ে সংসার চালান। সম্প্রতি তিনি ও আরও প্রায় ২০০ জন শ্রমিক (যাদের ৭০ শতাংশই নারী) সাভারের শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত ৪-এ ইয়ার্ন ডাইং নামের একটি পোশাক কারখানায় নতুন চাকরি নেন।

শুল্কের ব্যাপারে আশঙ্কা থাকলেও মুর্শিদা নতুন কর্মস্থলে এসে বেশ খুশি। আগের চেয়ে বেতন কিছুটা বেশি— মাসে ১৫৬ ডলার (প্রায় ১৯ হাজার টাকা)। পথঘাটও আগের চেয়ে সহজ, পরিবেশটাও তুলনামূলক ভালো। ট্রাম্পের শুল্কের বিষয়ে কথা বললে মুর্শিদা বলেন, ‘আমার চিন্তা, অর্ডার কমে যাবে। তাহলে তো কাজও কমে যাবে।’

প্রায় ১৭ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ, যা আয়তনে যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের সমান। ১৯৭১ সালে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর স্বাধীন হয় দেশটি। একসময় মনে করা হতো, দেশটি অর্থনৈতিকভাবে ব্যর্থ। তবে ১৯৮০-এর দশক থেকে পোশাকশিল্পকে কেন্দ্র করে দেশটি ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করেছে।

বিশ্বের দরজায় দরজায় সেলাইয়ের কাজ করেছে বাংলাদেশের শ্রমিকেরা, বিশেষ করে নারীরা। ফলে এখন বাংলাদেশের মানুষের গড় জীবনমান পাশের দেশ ভারতের নাগরিকদের থেকেও উন্নত।

মুর্শিদা আক্তারের মতো প্রায় ৪০ লাখ মানুষ সরাসরি রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পে কাজ করছেন। তাঁর স্বামী ও সন্তানসহ আরও অনেকের পরিবার এই কাজের ওপর নির্ভরশীল।

ট্রাম্পের আরোপিত ৩৭ শতাংশ শুল্ক এবং চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত ১৪৫ শতাংশ শুল্কের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের মতো দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থমকে যেতে পারে। অবশ্য শুল্ক স্থগিত হওয়ার আগেই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান ও শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে একটি চিঠি লেখেন। তিনি ৯০ দিনের সময় চেয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বাংলাদেশ আরও বেশি আমেরিকান তুলা ও অন্যান্য পণ্য কিনবে, যাতে করে দেশটির ৬ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত কমে আসে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর ট্রাম্পের এই হুমকিকে বলেন, ‘ক্ষমতার এক কুৎসিত প্রদর্শনী।’ তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিনের দারুণ প্রবৃদ্ধির পর এখন যখন দেশটি মন্দার মুখে, তখন এভাবে আঘাত হানা অমানবিক।’

বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের প্রায় ৮৫ শতাংশই পোশাক— আর সবচেয়ে বেশি পোশাক যায় যুক্তরাষ্ট্রে। এমনকি যদি ট্রাম্প জুলাইয়ে তার ‘গ্রেস পিরিয়ড’ শেষে ৩৭ শতাংশ শুল্ক না-ও ফেরান, তবুও ১০ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকবে, যা তিনি প্রায় সব দেশের ওপরই আরোপ করেছেন।

কিন্তু এই ১০ শতাংশ শুল্কও পোশাকশিল্পের মতো কম মুনাফার খাতে বড় ধাক্কা। প্রতিযোগিতা তীব্র—চীন, ভারত, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে প্রতিনিয়ত পাল্লা দিতে হচ্ছে।

এদিকে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতাকে পশ্চিমা উদার গণতন্ত্রের সমর্থকেরা এক আশার বার্তা হিসেবে দেখলেও প্রতিবেশী দেশ ভারত বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। শেখ হাসিনার সঙ্গে তাদের জোট ছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ড. ইউনূসকে স্বাগত জানিয়েছে।

শেখ হাসিনার শাসনামলে আর্থিক খাতে যে লুটপাট চলেছিল, তা সামাল দিতে এখনো হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২৬ সাল নাগাদ অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াবে—এই আশাতেই ছিলেন তারা। কিন্তু শুল্ক সেই আশায় পানি ঢেলে দিয়েছে। বিশ্বব্যাংক আগামী দুই বছরের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর চাপও বাড়ছে। গত বছর তারা বাংলাদেশকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করে।

ঢাকা-ভিত্তিক থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আমরা আইএমএফ থেকে প্রচণ্ড চাপের মুখে আছি—সাবসিডি কমাতে হবে, জ্বালানির দাম বাড়াতে হবে।’

১০ শতাংশ শুল্ক ও ভবিষ্যতের আশঙ্কা বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের হৃৎপিণ্ডে আঘাত হানছে—যে খাতটি নিজেকে বদলে ফেলেছে গত এক দশকে। ২০১৩ সালে ঢাকার সাভারে রানা প্লাজা ধসে পড়ে, প্রাণ যায় ১ হাজার ১০০ জনের বেশি শ্রমিকের। এ ঘটনাটি পশ্চিমা ক্রেতাদের মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছিল—তারা ভেবেছিল, হয়তো আর এখানকার কারখানাগুলোর সঙ্গে কাজ করা যাবে না।

তবে খাতটি তখনই বুঝে ফেলে, টিকে থাকতে হলে বদলাতে হবে। রানা প্লাজার ধ্বংসাবশেষ এখনো পড়ে আছে সাভারগামী প্রধান সড়কের ধারে। এ স্থানটি যেন এক চিরন্তন স্মারক—যা পথ দেখিয়েছে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পকে।

পোশাকশিল্পে প্রতিষ্ঠানসংখ্যা কমলেও রপ্তানির পরিমাণ এবং কর্মসংখ্যা বেড়েছে। এখন বাংলাদেশে ২৩০টি কারখানা আছে, যারা ইউএস–ভিত্তিক ‘লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন’ (LEED) সার্টিফায়েড—যা পরিবেশবান্ধব ও টেকসই উৎপাদনের প্রতীক। বিশ্বের আর কোনো দেশে এত LEED সার্টিফায়েড পোশাক কারখানা নেই।

মুর্শিদা আক্তার যে ৪এ ইয়ার্ন ডাইং কারখানায় কাজ করেন, সেটিও এর মধ্যে পড়ে। নামের মধ্যে ‘ইয়ার্ন ডাইং’ থাকলেও আসলে প্রতিষ্ঠানটি এখন আর সুতার রং করে না। তারা এখন উচ্চমূল্যের জ্যাকেটসহ বিভিন্ন আউটারওয়্যার তৈরি করে—যেখানে থাকে উন্নত মানের জিপার, ওয়াটারপ্রুফ ফিনিশিংসহ নানা জটিলতা।

তাদের ক্রেতাদের তালিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কারহার্ট থেকে শুরু করে কেলভিন ক্লেইনের মতো ব্র্যান্ড, যদিও ইউরোপীয় ক্রেতার সংখ্যাই বেশি।

কারখানার পাঁচটি ফ্লোরেই কর্মীরা ব্যস্তভাবে কাটিং, সেলাই ও ফিনিশিংয়ের কাজ করছে—এই মুহূর্তে তারা কস্টকোর জ্যাকস নিউইয়র্ক সিরিজের পণ্য তৈরি করছে। ফ্যানের গুমগুম আওয়াজ, সুচের কটকট শব্দ ও হালকা সংগীত—সব মিলিয়ে কর্মপরিবেশটা খোলামেলা, হাওয়াদার এবং তুলনামূলকভাবে আরামদায়ক, এমনকি প্রাক-বর্ষা মৌসুমেও।

কারখানার ভেতরে সাইনবোর্ডগুলোর ভাষা প্রথমে ইংরেজি, তারপর বাংলা। এখানকার অন্য অনেক কারখানার মতোই, ৪এ ইয়ার্ন ডাইং প্রস্তুত থাকে বিদেশি পরিদর্শকদের চোখে চোখে থাকার জন্য।

বাইরের দেয়ালজুড়ে ঝুলছে সবুজ গাছপালা, ছাদজুড়ে বসানো আছে সৌর প্যানেল, যা কারখানার উৎপাদনে সহায়তা করে।

গত আগস্টে শেখ হাসিনার পতনের সময়কার আন্দোলনে এই কারখানাও হামলার মুখে পড়ে। কারখানার জেনারেল ম্যানেজার খন্দকার ইমাম বলেন, তারা কাজ বন্ধ করেননি।

বিক্ষোভকারীরা তখন দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল—ধারণা করা হচ্ছিল, তারা হাসিনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিল। খন্দকার ইমাম বলেন, ‘আমাদের গেটে এক হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিল।’ তিনি হেলমেট পরে নিজেই কর্মীদের সঙ্গে গেটের বাইরে গিয়ে রুখে দাঁড়ান।

শেষ পর্যন্ত কেউ গুরুতর আহত হননি, আর একদিনের জন্যও উৎপাদন বন্ধ হয়নি বলে জানান ইমাম। তাঁর ভাষায়, এই কোম্পানি যেমন টিকে আছে, তেমনি দেশও এখন বিপদের মধ্য দিয়েই টিকে থাকতে অভ্যস্ত।

কোম্পানির প্রধান পরিবেশ ও টেকসই বিষয়ক কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের দেশের পুরো অর্থনীতি এই সেক্টরের ওপর নির্ভরশীল। যারা হাসিনাকে সরিয়েছে, তারাও এটা বোঝে। কারণ আমাদের শ্রমশক্তিই একমাত্র সম্পদ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তেল-পেঁয়াজে দাম বাড়তি, সবজিতে ফিরছে স্বস্তি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪০
টাটকা সবজি কিনছেন একজন। গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারে।
টাটকা সবজি কিনছেন একজন। গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারে।

বাজারে একলাফে লিটারে ৯ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সয়াবিন তেলের দাম। আর দেশি পুরোনো পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা। তবে এসব পণ্যের সরবরাহে তেমন কোনো সমস্যা নেই বাজারে। পুরোনো পেঁয়াজের সঙ্গে নতুন পেঁয়াজও পাওয়া যাচ্ছে।

ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজ ছাড়া বাজারে সবজি, ডিম, মুরগি, আটা, চিনিসহ প্রায় অধিকাংশ পণ্যের দাম কমেছে। বিশেষ করে সবজির বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় অনেকটাই স্বস্তি ফিরেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ, রামপুরাসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা, এক সপ্তাহ আগে মানভেদে দাম ছিল ১১০-১২০ টাকা কেজি। নতুন পেঁয়াজের দাম অবশ্য তুলনামূলক কম। খুচরায় পাতাসহ নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি।

জানতে চাইলে রামপুরা বাজারের সবজি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার পেঁয়াজ আমদানি না করেই বাজারের চাহিদা মিটে গেছে। এখন আগের মৌসুমের পেঁয়াজের মজুত একেবারেই শেষের দিকে। এই সময় পুরোনো পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেশিই থাকে। তবে এটা বেশি দিন থাকবে না। বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। চাহিদা অনুসার পেঁয়াজ রয়েছে।’

বেড়েছে ভোজ্যতেলের দামও। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯৮ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮৯ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৫-১৭৯ টাকা লিটার, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৭১-১৭৪ টাকা লিটার।

বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানিগুলো গত এক সপ্তাহে ধীরে ধীরে বাজারে বাড়তি দামে তেল সরবরাহ করেছে। এখনো অনেক দোকানে আগের দামের তেল পাওয়া যায়। তবে বাজারের অধিকাংশ দোকানেই বাড়তি দামের তেল রয়েছে।

গত সপ্তাহ পর্যন্ত খুচরায় কাঁচা মরিচ বিক্রি হতো ১২০-১৫০ টাকা কেজি, তবে চলতি সপ্তাহে দাম কমে ৭০-১০০ টাকা কেজিতে নেমেছে। এ ছাড়া শীতের সবজি হলেও শিমের দাম হঠাৎ বেড়ে ১৫০ টাকার ওপরে উঠেছিল।

সেই শিম এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা কেজি। ফুলকপি, বাঁধাকপির দাম কমেছে প্রতিটিতে ১০ টাকা। দুই ধরনের কপিই পাওয়া যাচ্ছে ৩০ টাকায়। তবে ভালো মানের ফুলকপি ৫০ টাকা। গত সপ্তাহে একটি কপি কিনতে ৪০-৬০ টাকা লেগেছিল।

দাম কমেছে টমেটোরও। মান ও বাজারভেদে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৪০ টাকা।

দেশি গাজরের সরবরাহ ব্যাপক বেড়েছে বাজারে, এতে দামও কমেছে। প্রতি কেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০-১০০ টাকা। তবে আমদানির গাজর আগের মতোই ১২০-১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে বেগুন বিক্রি হয়েছিল ৮০-১০০ টাকা কেজি, যা চলতি সপ্তাহে কমে ৭০-৮০ টাকায় নেমেছে। বাজারে আলুর দাম আগের মতোই প্রতি কেজি ২৫ টাকা রয়েছে।

আমিষের সবচেয়ে বড় উৎস ডিমের দাম আরও কমেছে। ফার্মের মুরগির সাদা ও বাদামি ডিমের দাম কমে ১১০ থেকে ১২৫ টাকা ডজনে নেমেছে। গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৩০ টাকা।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত বছর এই সময় ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছিল ১৪০-১৫০ টাকা ডজন। টিসিবি বলছে, গত বছরের তুলনায় ডিমের দাম ৩৫ শতাংশ কমেছে।

ডিমের সঙ্গে কমেছে ফার্মের মুরগির দামও। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম কমে ১৫০-১৭০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৬০-১৮০ টাকা কেজি।

সেগুনবাগিচা বাজারের ডিম বিক্রেতা নূর ই আলম বলেন, ‘ডিম ও মুরগির বাজার স্বাভাবিক আচরণ করছে না। হঠাৎ দামের এত পতন হচ্ছে কেন, তা বোঝা যাচ্ছে না। বর্তমানে ডিমের যে দাম, তা গত কয়েক বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম।’

ডিম-মুরগির সঙ্গে কিছুটা কমেছে রুই-কাতলা মাছের দামও। বাজারে চাষের এই মাছগুলো বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩২০-৪৫০ টাকা কেজি।

মুদিপণ্যের মধ্যে চিনির দাম আগে থেকেই কমেছে। খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৯০-১০০ টাকা কেজি। চলতি সপ্তাহে নতুন করে কমেছে আটা, মসুর ডাল, ছোলার দাম। খোলা আটার দাম ২-৩ টাকা কমে ৪৫-৪৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ৪৮-৫০ টাকা কেজি। কেজিপ্রতি বড় দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৯৫-১০৫ টাকা। ছোলার দামও কেজিপ্রতি ৫ টাকা কমে ৯৫-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের মামা-ভাগনে মুদিদোকানের বিক্রেতা হারুনুর রশিদ বলেন, রমজান উপলক্ষে পণ্যের আমদানি ব্যাপক বেড়েছে। তাই প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম কমছে। তবে ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজের বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

উত্তরা ব্যাংকের ২৫০তম শাখার উদ্বোধন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

উত্তরা ব্যাংক পিএলসির একটি নতুন শাখার উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার ব্যাংক রোড, দৌলতগঞ্জ বাজারে ব্যাংকের ২৫০তম লাকসাম শাখার উদ্বোধন করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. আবুল হাশেম।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল হাসান।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. রবিউল হাসান এবং উপমহাব্যবস্থাপক ও আঞ্চলিক প্রধান (কুমিল্লা অঞ্চল) মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

টানা চার মাস কমল রপ্তানি আয়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রেমিট্যান্সে প্রবাহ বাড়লেও পণ্য রপ্তানিতে ধাক্কার ধারা থামছে না। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের নভেম্বরে দেশের রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৮৯ কোটি ১৫ লাখ ডলার। গত বছরের একই মাসে এই আয় ছিল ৪১১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ মাসওয়ারি হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানি আয় কমেছে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ, টাকার অঙ্কে এই হ্রাসকৃত রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়ায় ২২ কোটি ৮১ লাখ ডলার।

এবারই প্রথম নয়, আগস্ট থেকে শুরু হওয়া নিম্নমুখী ধারা নভেম্বরে এসে চতুর্থ মাসে পা দিল। জুলাইয়ের শক্তিশালী সূচনার পর রপ্তানি খাত যে ধারাবাহিক গতি অর্জন করেছিল, সেই গতি আগস্টেই থমকে যায়। ওই মাসে আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশে নেমে আসে। সেপ্টেম্বরেও পতন গভীর হয়—৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। অক্টোবরে সেই হার আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশে।

জুলাইয়ের ব্যতিক্রমী সাফল্যের পর পরবর্তী চার মাস যেন একটানা ঢালু পথ। সেই জুলাইয়ে রপ্তানি আয় ছিল ৪৭৭ কোটি ৫ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। কিন্তু এরপর প্রতি মাসেই কমতে কমতে নভেম্বরে এসে রপ্তানি আয়ের ব্যবধান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

সার্বিক চিত্রটি বলছে, অর্থবছরের শুরুতে পাওয়া জোয়ারটি এখন চার মাসের টানা ভাটার মুখে দাঁড়িয়ে।

আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ইপিবির তথ্য পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর মিলিয়ে পাঁচ মাসে মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ২০০২ কোটি ৮৫ লাখ ডলার; যা আগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ঘটেছে মাত্র দশমিক ৬২ শতাংশ। অর্থাৎ পাঁচ মাসের সার্বিক রপ্তানি আয়ের চিত্রও নামমাত্র।

নভেম্বরের সবচেয়ে বড় আঘাত লেগেছে পোশাক খাতে, যেটি দেশের রপ্তানির প্রধান ভরসা। ওই মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ৩১৪ কোটি ৯ লাখ ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ কম। এ সময় নিটওয়্যার খাতে আয় নেমেছে ১৬১ কোটি ৮৪ লাখ ডলারে, আর ওভেনে এসেছে ১৫২ কোটি ২৪ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে নিটওয়্যার আয় ছিল ১৭৩ কোটি ৮২ লাখ ডলার এবং ওভেন ১৫৬ কোটি ৯২ লাখ ডলার।

পোশাকের বাইরে কৃষিপণ্যে রপ্তানি কমেছে ২৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্যে কমেছে ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ ছাড়া রপ্তানি পতনের তালিকায় রয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত সামগ্রী, হোম টেক্সটাইলস, ফার্মাসিউটিক্যালস, জাহাজ, চিংড়ি ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং। এর মানে হচ্ছে, প্রচলিত এসব খাতেও মন্থরতা স্পষ্ট।

তবে সব বাজারে একই চিত্র নয়। কিছু গন্তব্যে বিপরীত প্রবণতা দেখা গেছে, যা সামগ্রিক মন্দার মধ্যেও আশার সঞ্চার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বেড়েছে ৪ দশমিক ২০ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। উদীয়মান বাজারগুলোর মধ্যেও ইতিবাচক প্রবণতা স্পষ্ট—চীনে রপ্তানি বেড়েছে ২৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ, পোল্যান্ডে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ, সৌদি আরবে ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং স্পেনে ১০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এ প্রবণতা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যেন অনেকটাই ব্যতিক্রমী সাফল্য।

সব মিলিয়ে চিত্রটি দ্বিমুখী। একদিকে ঐতিহ্যগত প্রধান খাতগুলোতে পতন; অন্যদিকে কিছু নতুন বাজারে ইতিবাচক ইঙ্গিত। তবে বড় প্রশ্ন রয়ে যায়, এই বাজার বৃদ্ধি কি পোশাকসহ প্রধান খাতের ধারাবাহিক মন্দাকে সামাল দিতে পারবে?

বর্তমান বাস্তবতা বলছে, বৈচিত্র্য বাড়ানোর পথে অনেক দূর যেতে হবে। উৎপাদন প্রতিযোগিতা, মূল্যের চাপ, বৈদেশিক অর্ডার সংকোচন এবং বিশ্ববাজারের অনিশ্চয়তা, সব মিলিয়ে রপ্তানি খাতে সামনের পথ সহজ নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিল সিগারেট কোম্পানি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৪৮
৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিল  সিগারেট কোম্পানি

পাবনার ইশ্বরদীভিত্তিক সিগারেট কোম্পানি ইউনাইটেড টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রায় ৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযানে গিয়ে এই ফাঁকি ধরেছেন বলে আজ বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে এনবিআর।

এনবিআর জানায়, তামাক ও তামাকজাত পণ্যের অবৈধ উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধে সম্প্রতি কার্যক্রম আরও জোরদার করেছে এনবিআর। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সূত্রের ভিত্তিতে এনবিআরের ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের একটি দল ঈশ্বরদীতে অবস্থিত ইউনাইটেড টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে।

গোয়েন্দা দলের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ করলেও দীর্ঘদিন ধরে আনুষ্ঠানিক উৎপাদন কার্যক্রম প্রদর্শন না করে গোপনে সিগারেট উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে। অভিযানে ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯০ শলাকা জাল ব্যান্ডরোলযুক্ত সিগারেট জব্দ করা হয়, যার বাজারমূল্য ৩৮ লাখ টাকারও বেশি। এসব সিগারেটের বিপরীতে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ২৯ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়।

এ ছাড়া ১০ লাখ ২৯ হাজারটি অব্যবহৃত জাল ব্যান্ডরোল বা স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়, যা ব্যবহার করা হলে অতিরিক্ত ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকারও বেশি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া সম্ভব ছিল। প্রতিষ্ঠানটি ৩ লাখ ২২ হাজার ৫০০টি বৈধ ব্যান্ডরোল সংগ্রহ করলেও তা ব্যবহার না করে জাল ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে সিগারেট উৎপাদন ও বিক্রি করছিল।

এনবিআর জানিয়েছে, সব সিগারেট ও উপকরণ আইনানুগভাবে জব্দ করা হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনিপ্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। অভিযানে উদ্ধার করা দলিলাদির ভিত্তিতে শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারেটকে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন ও বিক্রি কার্যক্রমের ওপর কঠোর নজরদারির জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত