Ajker Patrika

যুক্তরাষ্ট্র-চীন বৈরিতা: আইফোন ছেড়ে বৈদ্যুতিক গাড়িতে ঝুঁকছে ফক্সকন

আপডেট : ১৬ জুন ২০২৩, ১৯: ৩৯
যুক্তরাষ্ট্র-চীন বৈরিতা: আইফোন ছেড়ে বৈদ্যুতিক গাড়িতে ঝুঁকছে ফক্সকন

আইফোন নির্মাতা ফক্সকন নতুন করে ব্যবসা কৌশল সাজাচ্ছে। চীন থেকে ইলেকট্রনিকস পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহব্যবস্থা সরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরিতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে। ব্যবসার ক্ষেত্র পরিবর্তন বড় ঝুঁকি হলেও ওয়াশিংটন-বেইজিংয়ের তিক্ত সম্পর্কের মধ্য তাইওয়ানভিত্তিক এই কোম্পানি আর কোনো পথ দেখছে না। 

১৯৭৪ সালে ফক্সকন বা হন হাই টেকনোলজি গ্রুপ নামে এই কোম্পানির যাত্রা শুরু করেছিল। শুরুতে টেলিভিশনের নব বা চাবি তৈরি করত। এখন এটি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানি, যার বার্ষিক আয় ২০০ বিলিয়ন ইউএস ডলার। আইফোন থেকে আইম্যাকস—পর্যন্ত অ্যাপলের অর্ধেকের বেশি পণ্য তৈরি করে ফক্সকন। এর বাইরে মাইক্রোসফট, সনি, ডেল এবং অ্যামাজনকের পণ্য সরবরাহ করে এটি। 

কয়েক দশক ধরে বহুজাতিক করপোরেশনগুলোর চাহিদামাফিক পণ্য সরবরাহ করে সুনাম কেড়েছে এই কোম্পানি। যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের নকশা করে চীনে তৈরির পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হতো। এভাবেই ছোট কারখানা থেকে আজকের দুনিয়ার টেক-জায়ান্টে পরিণত হয়েছে ফক্সকন। 

কিন্তু ওয়াশিংটন-বেইজিংয়ের মধ্যে তিক্ত সম্পর্কের কারণে ফক্সকনের কিছুটা জটিল পরিস্থিতিতে পড়েছে। সহজ কথায়, বিশ্বের বড় দুটি অর্থনীতির দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে বিপদেই আছে প্রতিষ্ঠানটি। 

বাণিজ্য থেকে শুরু করে ইউক্রেনের যুদ্ধ পর্যন্ত নানা বিষয়েই যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বিরোধ আছে। তবে সবচেয়ে বড় বিরোধের কেন্দ্র তাইওয়ান, যেখানে ফক্সকনের সদর দপ্তর। 

এমন প্রেক্ষাপটে কোম্পানির সামনে কী ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে—তা সম্প্রতি বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তুলে ধরেছেন ফক্সকনের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী ইয়াং লিউ। 

ইয়াং লিউ বলেন, চলমান উৎপাদন চীন থেকে সরিয়ে বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণ শিল্পে বিনিয়োগের এই পরিকল্পনায় এক দশকের মধ্য কোম্পানির প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে। যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক যেহেতু দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। তাই সবচেয়ে বাজে পরিণতি মাথায় রেখেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফক্সকন।

৬৭ বছর বয়সী লিউ বলেন, ‘আমরা আশা করছি, দুই দেশের নেতারা যেই সিদ্ধান্ত নেবেন তা শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্যই নেবেন। কিন্তু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে সবচেয়ে খারাপ পরিণতিই মাথায় রাখি।’ 

তাইওয়ানকে নিজের বলে দাবি করে আসছে চীন। পরিস্থিতি এখন যেমন, তাতে বেইজিং যেকোনো সময় স্বশাসিত দেশটিকে অবরুদ্ধ করে দিতে পারে অথবা সেখানে আগ্রাসনও চালাতে পারে। 

লিউ বলেন, ‘ব্যবসা নিরবচ্ছিন্ন রাখার পরিকল্পনা’ চলছে। এর মধ্যেই বেশ কিছু কারখানা চীন থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে জাতীয় নিরাপত্তাসামগ্রী উৎপাদন মেক্সিকো ও ভিয়েতনামে স্থানান্তর করা হয়েছে। 

বিবিসি বলছে, ‘জাতীয় নিরাপত্তাসামগ্রী’ বলতে সম্ভবত ফক্সকনের তৈরি সার্ভারকে বুঝিয়েছেন। বিশ্বজুড়ে ডেটা সেন্টারের জন্য ব্যবহৃত এই পণ্যে ‘সংবেদনশীল তথ্য’ থাকতে পারে। 

দুই দেশের মাঝে বন্দিদশা
তাইওয়ান নিয়ে বিবাদ দীর্ঘদিন ধরে চললেও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ‘পুনরায় একত্রীকরণের’ ডাক নতুন করে বিবাদের আগুনে ঘি ঢালছে। দুই দেশের মধ্যে বারবার অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। উপরন্তু চীন তাইওয়ানে হস্তক্ষেপ করলে বা হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে দেবে না বলে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সরব আছেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদ ও কূটনৈতিক তাইওয়ানের স্বাধীনতার পক্ষে বক্তব্যও দিয়েছেন। যদিও হোয়াইট হাউস তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে জানিয়েছে, তারা তাইপে নয়, বেইজিংয়ের সঙ্গেই কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখে। 

এই সপ্তাহ শেষে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন চীন সফরের কথা রয়েছে। এই সফরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার আশা করছেন অনেকেই। তবে সংঘাতের আশঙ্কাও রয়েছে। এক মার্কিন জেনারেলের ধারণা, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই দুই দেশের মধ্য সামরিক সংঘাত হতে পারে। 

ওয়াশিংটন ডিসির উইলসন সেন্টারের এশিয়া প্রোগ্রামের ডেপুটি ডিরেক্টর শিহোকো গোটো বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও চীন কৌশলগত প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। এখানে ফক্সকন উভয়ের সঙ্গে ব্যবসা করতে চায়, কিন্তু শেষমেশ বিজয়ী হবে একজনই।’ 

কিন্তু বিষয়টা ‘তত সরল’ বলে মনে করেন না লিউ। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র থেকে নকশা করে চীনে পণ্য তৈরির যে মডেল ফক্সকন অনুসরণ করে, তার দিন শেষ হতে বহু দেরি। 
  
লিউ বলেন, ‘আমরা প্রচুর কর্মী নিয়োগ করি। চীনসহ বেশির ভাগ দেশ তাদের কর্মীদের স্বার্থরক্ষায় আগ্রহী। প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগের কারণে ফক্সকনের মতো কোম্পানিকে চীনের দরকার আছে।’

পশ্চিমারা বিভিন্ন দেশ ও কোম্পানিকে ব্যবসা ঝুঁকিমুক্ত করতে চীন থেকে বের হয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে আসছে। তবে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর এই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এখনো বাস্তবে রূপ নেয়নি।

লিউ বলেন, ‘চীন থেকে উৎপাদন সরাতে কিছু বিদেশি গ্রাহকের কাছ থেকে চাপ এসেছিল। তবে এটি তাদের সিদ্ধান্ত ছিল, ফক্সকনের নয়। ওই সব কোম্পানির ওপর সরকারের চাপ ছিল। তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি, তাঁরা আমাদের জানাবে।’ 

কোভিড-১৯ চ্যালেঞ্জ
ভূ-রাজনীতি বাদ দিলেও চীন থেকে ব্যবসা সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে  কোম্পানিগুলোর জন্য সবচেয়ে বড় কারণ হবে কোভিড-১৯। ২০২২ সালের শেষ দিকে কঠোর কোভিড নীতি, কোয়ারেন্টাইনের জায়গার অভাব এবং ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের কারণে ঝেংজুতে ফক্সকনের কারখানায় বিক্ষোভ ও দাঙ্গার সূত্রপাত হয়। তখন বিশ্বে আইফোন যন্ত্রাংশ তৈরির বৃহত্তম কারখানা ছেড়ে যায় ফক্সকনের অনেক কর্মী। 

এ বিষয়ে লিউ বলেন, করোনাকালে বহির্বিশ্বে চীনের যেসব দৃশ্য দেখানো হয়েছে, তা পেছনের সত্য অনেকেই জানেন না। মূলত বেইজিংয়ের কঠোর কোভিড নীতির কারণে যানবাহন শূন্য হয়ে পড়েছিল শহরগুলো।

তবে তিনি নিজ প্রতিষ্ঠানে পরিস্থিতিকে অন্যভাবে মোকাবিলা করা উচিত ছিল স্বীকার করে বলেন, ‘যদি একই পরিস্থিতি আবার দেখা দেয়, আমি সম্পূর্ণভাবে উৎপাদন বন্ধ করে দেব। এমনকি অ্যাপলের মতো ক্লায়েন্টদের হারালেও এই সিদ্ধান্ত অটল থাকব।’

তবে কোম্পানির সাফল্য অবশ্যই তার নামীদামি গ্রাহকদের ওপরই নির্ভর করে। কিন্তু এখানে গ্রাহকরাই ফক্সকনের কাছে আসতে একরকম বাধ্য। বিষয়টি স্পষ্ট করে বললে, চীনে ৬০ শতাংশ আইফোন তৈরি করে ফক্সকন। পাশাপাশি চীনের কারখানাগুলো আইফোনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ক্যামেরা মডিউল, কানেকটর ও ফোনের ব্যাক পার্ট তৈরি করে থাকে। 

চাকার ওপর আইফোন
ফক্সকনের পরবর্তী বাজিমাত বৈদ্যুতিক গাড়িগুলো দিয়ে হবে বলে লিউ আশা করছেন। বড় আইফোন আকৃতির বিশাল বোর্ডের দিকে ইঙ্গিত করে লিউ বলেন, ‘কার গাড়ি একটি বড় আইফোন। আমরা এর সঙ্গে খুব ভালোভাবে পরিচিত।’ 

বিশ্বজুড়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণির চাহিদা মেটাতে চকচকে সাদা ইলেকট্রিক এসইউভি কার গাড়ি ইতিমধ্যে বানিয়েছে ফক্সকন। এ বিষয়ে লিউ বলেন, ‘আমরা মনে করি এটি আমাদের জন্য একটি দুর্দান্ত সুযোগ। এত দিন পৃথিবীতে শুধু গ্যাস বা ডিজেলচালিত গাড়ির ইঞ্জিন (এমভি) ছিল। কিন্তু আমরা বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) নিয়ে আসছি, যা অবশ্যই সাড়া ফেলবে।’ 

ফক্সকন আগামী কয়েক বছরে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিশ্ববাজারের প্রায় ৫ শতাংশ দখল করার আশা করছেন। একটি বড়সড় লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছেন তাঁরা। কোম্পানিটি এখন পর্যন্ত মাত্র কয়েকটি মডেল তৈরি করেছে। কিন্তু লিউ আশাবাদী যে এটাই সফলতার শীর্ষে নিয়ে যাবে। 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির বিষয়ে লিউ বলেন, ‘এক জায়গায় ইভি (বৈদ্যুতিক গাড়ি) বানানোর কোনো মানে হয় না, গাড়ির জন্য আঞ্চলিক উৎপাদন খুবই স্বাভাবিক। ফক্সকন গাড়ির কারখানাগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া এবং সম্ভবত ভারতেও হবে।’ 

বিবিসি অবলম্বনে আব্দুল বাছেদ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আকাশপথে পণ্য পরিবহনে অফডক চান ব্যবসায়ীরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১: ১০
গ্রাফিকস: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিকস: আজকের পত্রিকা

আকাশপথে আমদানি-রপ্তানি ব্যবস্থার দুর্বলতা নতুন করে সামনে এনেছে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ড। ওই ঘটনায় কয়েক দিনের জন্য কার্গো কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ায় ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েন। এই প্রেক্ষাপটে আকাশপথে পণ্য পরিবহনকে নিরবচ্ছিন্ন, দ্রুত ও সংকটসহনীয় করতে বিমানবন্দরের বাইরে অফডকভিত্তিক এয়ার কার্গো ব্যবস্থা চালুর দাবি জোরালো হয়েছে। সেই সঙ্গে দ্রুত এয়ার কার্গো অপারেটরস স্টেশন (এসিওএস) নীতিমালা চূড়ান্ত ও বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকেরা। তাঁরা বলছেন, অফডকভিত্তিক এয়ার কার্গো অপারেশন চালু না হলে যেকোনো সংকটে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

অফডক হলো বন্দর বা বিমানবন্দরের মূল এলাকার বাইরে অবস্থিত এমন নির্ধারিত স্থাপনা, যেখানে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের খালাস, সংরক্ষণ, পরীক্ষা ও হ্যান্ডলিং করা হয়। সহজভাবে বলা যায়, বন্দরের ভেতরে সব কাজ না করে বন্দরের বাইরে আলাদা জায়গায় কার্গোর কাজ করা, এটাই অফডক।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের মতো আকাশপথেও অফডক ব্যবস্থা চালু করা যায় বলে মনে করেন নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, বর্তমানে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিং সেবা মূলত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে তাদের সক্ষমতা খুবই সীমিত। অনেক সময় পণ্য খালাসে অতিরিক্ত দুই থেকে তিন দিন সময় লেগে যায়। এতে রপ্তানি ও আমদানি উভয় ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়েন।

অফডক চালু হলে এ ধরনের জটিলতা থাকবে না জানিয়ে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এতে পণ্য খালাস দ্রুত হবে এবং সামগ্রিকভাবে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য আরও সহজ ও গতিশীল হবে।

অফডক দরকার কেন

সংশ্লিষ্টরা জানান, অফডক ব্যবস্থা চালু হলে বেসরকারি উদ্যোগে একাধিক অপারেটর থাকবে। ফলে কার্গো আমদানি-রপ্তানি পরিবহনে টার্মিনাল হ্যান্ডলিং, কার্গো হ্যান্ডলিং, স্ক্যানিং চার্জসহ অন্যান্য ফি নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক বাজারব্যবস্থা সৃষ্টি হবে। একই সঙ্গে সেবার মানও বাড়বে।

তথ্যমতে, বর্তমানে আকাশপথে প্রতি কেজি পণ্য রপ্তানিতে প্রায় ২৬ টাকা সার্ভিস চার্জ নেয় বিমান বাংলাদেশ ও সিভিল এভিয়েশন। একই সেবা পেতে ব্যাংককে প্রতি কেজিতে ৬.৪২ টাকা, কলকাতায় ৪.৮৮ টাকা এবং দিল্লিতে ৬.১০ টাকা দিতে হয়। এতে করে আকাশপথে পণ্য পরিবহন খরচ কয়েক গুণ বেড়ে যাচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা মনে করেন, দেশে এয়ার কার্গো অপারেশনে অফডক পদ্ধতি চালু হলে অধিকতর কার্গো নিরাপত্তার সঙ্গে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে। ইলেকট্রনিক কার্গো ট্র্যাকিং সিস্টেম (ইসিটিএস) চালু হবে। ফলে সহজে কার্গোর অবস্থান জানা যাবে। দ্রুত পণ্য খালাসে সুবিধা পাবে এবং জট কমবে। ওষুধের কাঁচামাল, জরুরি গার্মেন্টস পণ্যের নমুনাসহ আনুষঙ্গিক পণ্য সহজে পরিবহন করা যাবে। এতে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ত্বরান্বিত হবে।

ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা এর সুফল ভোগ করতে পারবেন। বিশ্বের অনেক দেশে অফডক ব্যবস্থা চালু আছে। যেমন সিঙ্গাপুর, দুবাই, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, জাপান, ভারত, হংকং, ইউএসএ। সেখানে এই ব্যবস্থার ফলে কার্গো পরিবহনে সময়ের সাশ্রয় ও পণ্য খালাসে জটিলতা নেই বললেই চলে।

ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে দীর্ঘদিন ধরে অফডক ব্যবস্থা চালু আছে এবং তা সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। একই ধরনের ব্যবস্থা ঢাকার বিমানবন্দর ও আশপাশের এলাকায় চালু করা গেলে আকাশপথে পণ্য পরিবহন আরও সহজ হবে।

এদিকে এয়ার কার্গো অপারেটরস স্টেশন (এসিওএস) নীতিমালা চূড়ান্ত ও বাস্তবায়ন চেয়ে ২৩ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছে তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ। সংগঠনটি বলছে, ঢাকা বিমানবন্দর এবং এর আশপাশে অফডক সুবিধা চালু হলে আমদানি প্রক্রিয়া সহজ হবে এবং রপ্তানির গতি বাড়বে। তবে অফডকের জন্য লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে কম খরচে ভালো সেবা নিশ্চিত করতে স্পষ্ট শর্ত থাকা প্রয়োজন।

বিজিএমইএ আরও জানিয়েছে, বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস বিমানবন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে। তাই অফডক ব্যবস্থায় বিমানের সঙ্গে সমন্বয় ও চুক্তির বিষয়টি নীতিমালায় স্পষ্ট থাকা জরুরি।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর পরিচালক ফয়সাল সামাদ বলেন, অফডক চালু হলে ডিএইচএল বা ফেডেক্সের মতো কুরিয়ার কোম্পানিগুলো বন্ড লাইসেন্স নিয়ে এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করার পরে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে সরাসরি ডেলিভারি করতে পারবে। তখন আর বিমানের ওপর নির্ভর করতে হবে না। ফলে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে।

১০ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে ‘এয়ার এক্সপ্রেস সার্ভিস ডেলিভারি’ বিষয়ক একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ—বিডা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনসহ আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে জড়িত দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, ইতিমধ্যে এয়ার কার্গো কার্যক্রমকে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় আনতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) কাস্টমস ও মূল্য সংযোজন কর বিভাগ থেকে ‘এয়ার কার্গো অপারেটরস স্টেশন (এসিওএস) স্থাপন, ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা, তদারকি ও কাস্টমস নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ২০২৫ ’-এর খসড়াও প্রণয়ন করা হয়েছে।

এয়ার কার্গো অপারেটর’স স্টেশন নীতিমালা চূড়ান্ত ও বাস্তবায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে আইআরডি সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ‘অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে যত দ্রুত সম্ভব বিধিমালা চূড়ান্ত করে তা বাস্তবায়ন করতে চাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আইএফআইসি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের জন্য মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি তাদের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের জন্য অ্যান্টি মানি লন্ডারিং (এএমএল) ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ (সিএফটি) সংক্রান্ত এক সচেতনতামূলক কর্মশালার আয়োজন করেছে। গত ২১ ডিসেম্বর ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এই কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়।

ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. মেহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে পরিচালনা পর্ষদের সকল সদস্য এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।

এএমএল ও সিএফটি কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতকরণে পরিচালনা পর্ষদের ভূমিকা এবং প্রাসঙ্গিক নিয়ন্ত্রক নির্দেশনা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিই ছিল এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য। কর্মশালায় আলোচিত প্রধান বিষয় ছিল—ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে এবং মানি লন্ডারিং তদারকিতে পরিচালনা পর্ষদের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) কর্তৃক বিভিন্ন সময় সিস্টেম চেক পরিদর্শন থেকে প্রাপ্ত পর্যবেক্ষণসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। দেশের সাম্প্রতিক মানি লন্ডারিং পরিস্থিতি এবং রিপোর্টিং সংস্থা হিসেবে ব্যাংকের করণীয়।

কর্মশালায় রিসোর্স পারসন হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএফআইইউর অতিরিক্ত পরিচালক রেজওয়ানুর রহমান ও যুগ্ম পরিচালক জুয়াইরিয়া হক।

এ ছাড়া ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মো. এবতাদুল ইসলাম, কাজী মো. মাহবুব কাশেম এফসিএ, মো. গোলাম মোস্তফা ও মুহাম্মদ মনজুরুল হক উপস্থিত ছিলেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মনসুর মোস্তফা, উপব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এই সচেতনতামূলক সেশনে অংশ নেন।

আইএফআইসি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, ব্যাংকিং কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে এ ধরনের কর্মশালা নিয়মিত আয়োজন করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিএসআরএম স্টিলসের ২৩তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ০৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দেশের শীর্ষস্থানীয় ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম স্টিলস লিমিটেডের ২৩তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশিকা অনুযায়ী ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় শেয়ারহোল্ডাররা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ (ক্যাশ ডিভিডেন্ড) সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করেছেন। কোম্পানির চেয়ারম্যান আলী হোসেন আকবরআলী এফসিএ সভায় সভাপতিত্ব করেন।

সভায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণী এবং পরিচালকমণ্ডলীর প্রতিবেদন অনুমোদিত হয়। শেয়ারহোল্ডাররা ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য কোম্পানির পরিচালক পুনর্নিয়োগ এবং নিরীক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন করেন।

কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমীর আলীহোসেন পরিচালকমণ্ডলীর বিবরণী উপস্থাপন করেন এবং কোম্পানির ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শেয়ারহোল্ডারদের অবহিত করেন।

বিপুলসংখ্যক শেয়ারহোল্ডার নিজ নিজ বিও (BO) আইডি ব্যবহার করে ওয়েব লিংকের মাধ্যমে এই ভার্চুয়াল সভায় সরাসরি অংশ নেন। নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণীসহ বিভিন্ন বিষয়ে শেয়ারহোল্ডারদের প্রশ্নের উত্তর দেন কোম্পানি সচিব।

শেয়ারহোল্ডাররা তাঁদের মন্তব্যে কোম্পানির বর্তমান ব্যবস্থাপনা ও পরিচালকমণ্ডলীর প্রতি গভীর আস্থা ও নির্ভরতার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

সভায় কোম্পানির পরিচালকবৃন্দ, কোম্পানি সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে কোম্পানির ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রোজার আগে কমেছে খেজুরের আমদানি শুল্ক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৩১
বিভিন্ন ধরনের খেজুরের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতা। গতকাল রাজধানীর বায়তুল মোকাররম এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা।
বিভিন্ন ধরনের খেজুরের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতা। গতকাল রাজধানীর বায়তুল মোকাররম এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা।

রমজান মাস উপলক্ষে খেজুর আমদানিতে বড় ধরনের শুল্কছাড় দিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। রোজার অন্যতম ইফতারসামগ্রী খেজুরের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে বলে আজ বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে এনবিআর।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পবিত্র রমজান মাসে খেজুরের সরবরাহ ও বাজারমূল্য স্বাভাবিক রাখার উদ্দেশ্যে খেজুর আমদানিতে কাস্টমস ডিউটি ২৫ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে এনবিআর। এই শুল্ক অব্যাহতি আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এর ফলে খেজুরের আমদানি বাড়বে এবং দামও কমবে বলে আশা করছেন এনবিআর কর্মকর্তারা।

গত বছরও রোজার আগে নভেম্বর মাসে আমদানি শুল্ক ২৫ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ ও অগ্রিম আয়কর ১০ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছিল।

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরু থেকে সব ধরনের খেজুর আমদানিতে সব মিলিয়ে ৫৭ দশমিক ২০ শতাংশ শুল্ক-কর ছিল। এর মধ্যে আমদানি শুল্ক (সিডি) ২৫ শতাংশ, ভ্যাট ১৫ শতাংশ, অগ্রিম কর ৫ শতাংশ ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩ শতাংশ।

এখন ১০ শতাংশ কমানোর ফলে মোট শুল্ক-কর ৪৭ দশমিক ২০ শতাংশে দাঁড়াল। তবে এই সার্কুলার এখনো এনবিআরের সার্ভারে যুক্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন আমদানিকারকেরা। তিন দিন ছুটি থাকায় আগামী রোববারে নতুন সার্কুলারে পণ্য শুল্কায়ন শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

এ ছাড়া এই শুল্ক কামানোর ফলে প্রতি কেজি খেজুরের দাম কত কমতে পারে, এ বিষয়ে এখনই কোনো ধারণা দিতে পারেননি আমদানিকারকেরা। তাঁরা বলছেন, ১০ শতাংশ শুল্ক কমার ফলে দাম কিছুটা কমবে। তবে কতটুকু কমবে, তা শুল্কায়ন শুরু হলে বোঝা যাবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমদানি শুল্ক কমানোর সঙ্গে সঙ্গে অগ্রিম কর ও রেগুলেটরি ডিউটি কমানোর দাবিও ছিল আমাদের। কিন্তু সরকার তা মানেনি। আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ কমানোর ফলে খেজুরের দাম সামান্য কমতে পারে। তবে এটি বাজারে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের খেজুর আমদানিতে মূল সমস্যা হলো ট্যারিফ হার বা শুল্কায়ন মূল্য। আমরা যে দামে আমদানি করি, শুল্ক ধরা হয় তার চেয়ে অনেক বেশি দামের ওপর। এতেই ট্যাক্সের হার বেড়ে যায়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত