Ajker Patrika

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের ‘ডি গ্রেড’ কেন, সেরা কারা?

আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২২: ৩১
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের ‘ডি গ্রেড’ কেন, সেরা কারা?

বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গর্ভনরদের র‍্যাংকিং করেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিন। উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও টাকার অবমূল্যায়নের কারণে এই র‍্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ‘ডি’ গ্রেড পেয়েছেন। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যর্থতার জন্য গভর্নর আব্দুর রউফ ডি গ্রেড পেলেন। আর ‘এ প্লাস’ গ্রেডই বা পেলেন কারা, কোন অর্জনের জন্য তা জেনে নেওয়া যাক:  

গত রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত গ্লোবাল ফাইন্যান্সের ‘সেন্ট্রাল ব্যাংকার রিপোর্ট কার্ড ২০২৩’ এ বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষেত্রেও পর্যালোচনা মেয়াদের প্রথমার্ধে ম্যান্ডেট পূরণ হয়েছিল। কোভিড-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫.৬%। আবার মূল্যস্ফীতির হার বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রাকে কিছুমাত্রায় ছাড়ালেও এ অতিরিক্ত হার সীমিত ছিল ০.৬ শতাংশে। স্থিতিশীল ছিল টাকার বিনিময় হারও।

কিন্তু ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে টাকার ৯.৫% অবমূল্যায়ন হয়। ডলার-সংকটে তখন হাসফাঁস দশা হয় আমদানিকারকদের। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি ও খাদ্যমূল্যও বেড়ে যায়, মূল্যস্ফীতি হয়ে পড়ে লাগামহীন। এ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সহায়তা চায় বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতির কাঠামোগত দুর্বলতা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সরকারের ৬০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণের কারণে ২০২২ সালের উচ্চ বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির মতো বাহ্যিক ঝুঁকিগুলোর শিকার হয় বাংলাদেশ।

২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ১০১টি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরদের কার্যক্রমের মূল্যায়নের ভিত্তিতে সর্বশেষ এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরদের পাঁচটি ক্যাটাগরিতে গ্রেড দেওয়া হয়েছে, এ, বি, সি, ডি এবং এফ। এর মধ্যে এ, বি, সি, এবং ডি ক্যাটাগরিগুলোকে পারফরম্যান্স মূল্যায়নের ভিত্তিতে আরও তিনটি সাব-ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। যেমন, ‘এ’ ক্যাটাগরির গভর্নরদের ‘এ প্লাস’, ‘এ’ এবং ‘এ মাইনাস’ সাব-ক্যাটাগরিতে মূল্যায়ন করা হয়েছে।

গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিনের ‘এ প্লাস’, ‘এ’ এবং ‘এ মাইনাস’ গ্রেড প্রাপ্ত গর্ভনরদের তালিকাবাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পাশাপাশি জিম্বাবুয়ের জন মাঙ্গুদিয়া ও সুরিনামের মরিস রোমারও ডি গ্রেড পেয়েছেন। কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অকার্যকর এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে ব্যর্থ বলে বিবেচিত হলে, সে দেশের গভর্নরকে ‘এফ’ ক্যাটাগরিতে ফেলা হয়েছে। এসব গর্ভনেরের মধ্যে রয়েছেন লাওসের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গর্ভনর বাউনলেউয়া সিনক্সায়ভোরাভং, ভেনেজুয়েলার ক্যালিক্সতো হোসে ওর্তেগা সানচেজ ও আর্জেন্টিনার মিগুয়েল অ্যাঞ্জেল পেস।

অন্যদিকে শ্রীলংকাকে দেউলিয়াত্ব ও ভয়াবহ মূল্যস্ফীতি থেকে বের করে আনা গভর্নর নন্দলাল বীরাসিংহে পেয়েছেন ‘এ মাইনাস’ গ্রেড। আর ‘এ প্লাস’ গ্রেড পেয়েছেন ভারত, সুইজারল্যান্ড ও ভিয়েতনামের গর্ভনরেরা। 

ভারত: ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর শক্তিকান্ত দাসকে ‘এ প্লাস’ গ্রেড দেওয়ার  বিষয়ে বলা হয়, রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার গভর্নর, শক্তিকান্ত দাস সবল জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে ভূমিকা রেখেছেন। ২০২১ সালে ভারতের অর্থনীতি ৯ দশমিক ১ শতাংশ হারে বিকশিত হয়, যা ছিল সর্বকালের সর্বোচ্চ, আগের বছরে যা ছিল ৮.৭ শতাংশ। 

সম্ভাবনাময় এই গতির সাথে অন্যান্য প্রধান প্রধান খাতেও তার পারদর্শীতা ছিল উল্লেখ করার মতো। যেমন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, যেমন জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশ থেকে কমে ৪.২৫ শতাংশ এসেছে। 

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গভর্নর বাজারে অর্থপ্রবাহ সংকোচনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, এই ফলাফল তার যৌক্তিকতা তুলে ধরেছে। এজন্য এপ্রিল পর্যন্ত ছয় বার রেপো সুদহার বাড়ানো হয়, এবং তা ৬.৫ শতাংশ পর্যন্ত করা হয়েছে। অভূতপূর্ব এই পারদর্শীতার জন্য (শক্তিকান্ত) দাসকে যথাযথ মূল্যায়ন দিতেই হবে।

শক্তিকান্ত দাস সম্পর্কে আরও বলা হয়, অনিয়মিত ভারি বৃষ্টিপাতে ফসলহানির ফলে জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হার ৭ দশমিক ৪ শতাংশ হয়েছে, অনাকাঙ্ক্ষিত এই পরিস্থিতি তার সার্বিক পারদর্শীতার নির্দেশক নয়, এজন্য সেক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। তার অন্যান্য বড় অর্জন– ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য তারল্য নীতি চালু এবং এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি নিয়ন্ত্রক কাঠামো প্রতিষ্ঠা, যা গত বছরের অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়েছে।   

সুইজারল্যান্ড: ২০২২ এবং ২০২৩ সালে মূল্যস্ফীতি এবং সুদের হার নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের খুব কমসংখ্যক কেন্দ্রীয় ব্যাংকই সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) চেয়ে ভালো করেছে। সুদের হার ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ বাড়ানো সত্ত্বেও ব্যাংকটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে। ভোগপণ্যর দাম গত বছরের ৩ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২০২৩ সালের আগস্টে ১ দশমিক ৬ শতাংশে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। 

অধিকন্তু, ইউরোপীয় ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সঙ্কট এড়াতে ‘ক্রেডিট সুইস’ ইস্যু সময়মত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বিশ্লেষকেরা ভূয়সী প্রশংসা করেছ। এসব অর্জনকে বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংকটির গর্ভনর থমাস জর্ডানকে ‘এ প্লাস’ গ্রেড দেওয়া হয়েছে। 

ভিয়েতনাম: ভিয়েতনামের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নগুয়েন থি হংও র‍্যাংকিংয়ে ‘এ প্লাস’ গ্রেড পেয়েছেন। গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিন বলেছে, চলতি বছর সুদহার কর্তন করেছে হাতেগোনা কয়েকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যার মধ্যে স্টেট ব্যাংক অব ভিয়েতনাম অন্যতম। তারা পুনঃঅর্থায়নের নীতি সুদহার চারবার হ্রাস করে, জুন নাগাদ ৪.৫ শতাংশে নামিয়ে আনে। 

গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিনের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের গর্ভনরদের তালিকাভিয়েতনামের বাণিজ্যিক ঋণদাতারা এসব কর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ দিতে পেরেছেন। এভাবে দেশটির ঋণ কাঠামোর যৌক্তিকীকরণকে দৃঢ় করেছেন গভর্নর নগুয়েন থি হং। বিশেষত, নগদ অর্থ কম থাকা ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের উদ্যোগগুলো যে কম সুদে ঋণ নিতে পারে তা নিশ্চিত করেছেন।

‘এ গ্রেড’ প্রাপ্ত গর্ভনরেরা: এই তালিকায় রয়েছেন আটজন গর্ভনর। তাঁরা হলেন, ব্রাজিলের রবার্তো ক্যাম্পোস নেতো, ইসরায়েলের আমির ইয়ারো, মরিশাসের হারভেশ কুমার শীগোলাম, নিউজিল্যান্ডের অ্যাড্রিয়ান অর, প্যারাগুংয়ের জোসে কান্তেরো সিয়েনরা, পেরুর জুলিও ভেলার্দে ফ্লোরেস, তাইওয়ানের ইয়াং চিন লং ও উরুগুয়ের দিয়েগো লাবাত।  

‘এ মাইনাস গ্রেড’ প্রাপ্ত গর্ভনরেরা: এই তালিকায় রয়েছেন ১০ জন গর্ভনর। তাঁরা হলেন, কলম্বিয়ার লিওনার্দো ভিলার গোমেজ, ডোমিনিকান রিপাবলিকের হিক্টর ভালদেজ আলবিজু, আইসল্যান্ডের অ্যাসজেইর জনসন,  ইন্দোনেশিয়ার পেরি ওয়ারজিও, মেক্সিকোর ভিক্টোরিয়া রদ্রিগুয়েজ সেজা, মরোক্কোর আবদেল-লতিফ জওহারি, নরওয়ের ইড্যা ওলডেন বাখ, দক্ষিণ আফ্রিকার লেসিথজা গানায়াগো, দক্ষিণ কোরিয়ার হি চ্যাং-ইয়ং ও শ্রীলংকার নন্দলাল বীরাসিংহে।

১৯৯৪ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গভর্নরদের গ্রেডিং করে আসছে গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিন; সাময়িকীটির বার্ষিক প্রকাশনা হিসাবে নিয়মিত ‘সেন্ট্রাল ব্যাংকার রিপোর্ট কার্ড’ প্রকাশিত হয়ে থাকে।

এই প্রতিবেদন তৈরিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, স্থানীয় মুদ্রা বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সুসংহত করার মতো বিষয়গুলো গভর্নরদের মূল্যায়নের মানদণ্ড হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে; গত বছর এসব সূচকে অবনতি হয়েছে বাংলাদেশের।

গ্লোবাল ফাইন্যান্সের মতে, অর্থনৈতিক কাঠামোর দুর্বলতা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বড় দুর্বলতা হিসেবে দেখছে তারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তেল-পেঁয়াজে দাম বাড়তি, সবজিতে ফিরছে স্বস্তি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪০
টাটকা সবজি কিনছেন একজন। গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারে।
টাটকা সবজি কিনছেন একজন। গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারে।

বাজারে একলাফে লিটারে ৯ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সয়াবিন তেলের দাম। আর দেশি পুরোনো পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা। তবে এসব পণ্যের সরবরাহে তেমন কোনো সমস্যা নেই বাজারে। পুরোনো পেঁয়াজের সঙ্গে নতুন পেঁয়াজও পাওয়া যাচ্ছে।

ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজ ছাড়া বাজারে সবজি, ডিম, মুরগি, আটা, চিনিসহ প্রায় অধিকাংশ পণ্যের দাম কমেছে। বিশেষ করে সবজির বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় অনেকটাই স্বস্তি ফিরেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ, রামপুরাসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা, এক সপ্তাহ আগে মানভেদে দাম ছিল ১১০-১২০ টাকা কেজি। নতুন পেঁয়াজের দাম অবশ্য তুলনামূলক কম। খুচরায় পাতাসহ নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি।

জানতে চাইলে রামপুরা বাজারের সবজি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার পেঁয়াজ আমদানি না করেই বাজারের চাহিদা মিটে গেছে। এখন আগের মৌসুমের পেঁয়াজের মজুত একেবারেই শেষের দিকে। এই সময় পুরোনো পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেশিই থাকে। তবে এটা বেশি দিন থাকবে না। বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। চাহিদা অনুসার পেঁয়াজ রয়েছে।’

বেড়েছে ভোজ্যতেলের দামও। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯৮ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮৯ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৫-১৭৯ টাকা লিটার, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৭১-১৭৪ টাকা লিটার।

বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানিগুলো গত এক সপ্তাহে ধীরে ধীরে বাজারে বাড়তি দামে তেল সরবরাহ করেছে। এখনো অনেক দোকানে আগের দামের তেল পাওয়া যায়। তবে বাজারের অধিকাংশ দোকানেই বাড়তি দামের তেল রয়েছে।

গত সপ্তাহ পর্যন্ত খুচরায় কাঁচা মরিচ বিক্রি হতো ১২০-১৫০ টাকা কেজি, তবে চলতি সপ্তাহে দাম কমে ৭০-১০০ টাকা কেজিতে নেমেছে। এ ছাড়া শীতের সবজি হলেও শিমের দাম হঠাৎ বেড়ে ১৫০ টাকার ওপরে উঠেছিল।

সেই শিম এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা কেজি। ফুলকপি, বাঁধাকপির দাম কমেছে প্রতিটিতে ১০ টাকা। দুই ধরনের কপিই পাওয়া যাচ্ছে ৩০ টাকায়। তবে ভালো মানের ফুলকপি ৫০ টাকা। গত সপ্তাহে একটি কপি কিনতে ৪০-৬০ টাকা লেগেছিল।

দাম কমেছে টমেটোরও। মান ও বাজারভেদে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৪০ টাকা।

দেশি গাজরের সরবরাহ ব্যাপক বেড়েছে বাজারে, এতে দামও কমেছে। প্রতি কেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০-১০০ টাকা। তবে আমদানির গাজর আগের মতোই ১২০-১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে বেগুন বিক্রি হয়েছিল ৮০-১০০ টাকা কেজি, যা চলতি সপ্তাহে কমে ৭০-৮০ টাকায় নেমেছে। বাজারে আলুর দাম আগের মতোই প্রতি কেজি ২৫ টাকা রয়েছে।

আমিষের সবচেয়ে বড় উৎস ডিমের দাম আরও কমেছে। ফার্মের মুরগির সাদা ও বাদামি ডিমের দাম কমে ১১০ থেকে ১২৫ টাকা ডজনে নেমেছে। গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৩০ টাকা।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত বছর এই সময় ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছিল ১৪০-১৫০ টাকা ডজন। টিসিবি বলছে, গত বছরের তুলনায় ডিমের দাম ৩৫ শতাংশ কমেছে।

ডিমের সঙ্গে কমেছে ফার্মের মুরগির দামও। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম কমে ১৫০-১৭০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৬০-১৮০ টাকা কেজি।

সেগুনবাগিচা বাজারের ডিম বিক্রেতা নূর ই আলম বলেন, ‘ডিম ও মুরগির বাজার স্বাভাবিক আচরণ করছে না। হঠাৎ দামের এত পতন হচ্ছে কেন, তা বোঝা যাচ্ছে না। বর্তমানে ডিমের যে দাম, তা গত কয়েক বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম।’

ডিম-মুরগির সঙ্গে কিছুটা কমেছে রুই-কাতলা মাছের দামও। বাজারে চাষের এই মাছগুলো বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩২০-৪৫০ টাকা কেজি।

মুদিপণ্যের মধ্যে চিনির দাম আগে থেকেই কমেছে। খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৯০-১০০ টাকা কেজি। চলতি সপ্তাহে নতুন করে কমেছে আটা, মসুর ডাল, ছোলার দাম। খোলা আটার দাম ২-৩ টাকা কমে ৪৫-৪৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ৪৮-৫০ টাকা কেজি। কেজিপ্রতি বড় দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৯৫-১০৫ টাকা। ছোলার দামও কেজিপ্রতি ৫ টাকা কমে ৯৫-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের মামা-ভাগনে মুদিদোকানের বিক্রেতা হারুনুর রশিদ বলেন, রমজান উপলক্ষে পণ্যের আমদানি ব্যাপক বেড়েছে। তাই প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম কমছে। তবে ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজের বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

উত্তরা ব্যাংকের ২৫০তম শাখার উদ্বোধন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

উত্তরা ব্যাংক পিএলসির একটি নতুন শাখার উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার ব্যাংক রোড, দৌলতগঞ্জ বাজারে ব্যাংকের ২৫০তম লাকসাম শাখার উদ্বোধন করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. আবুল হাশেম।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল হাসান।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. রবিউল হাসান এবং উপমহাব্যবস্থাপক ও আঞ্চলিক প্রধান (কুমিল্লা অঞ্চল) মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

টানা চার মাস কমল রপ্তানি আয়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রেমিট্যান্সে প্রবাহ বাড়লেও পণ্য রপ্তানিতে ধাক্কার ধারা থামছে না। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের নভেম্বরে দেশের রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৮৯ কোটি ১৫ লাখ ডলার। গত বছরের একই মাসে এই আয় ছিল ৪১১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ মাসওয়ারি হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানি আয় কমেছে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ, টাকার অঙ্কে এই হ্রাসকৃত রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়ায় ২২ কোটি ৮১ লাখ ডলার।

এবারই প্রথম নয়, আগস্ট থেকে শুরু হওয়া নিম্নমুখী ধারা নভেম্বরে এসে চতুর্থ মাসে পা দিল। জুলাইয়ের শক্তিশালী সূচনার পর রপ্তানি খাত যে ধারাবাহিক গতি অর্জন করেছিল, সেই গতি আগস্টেই থমকে যায়। ওই মাসে আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশে নেমে আসে। সেপ্টেম্বরেও পতন গভীর হয়—৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। অক্টোবরে সেই হার আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশে।

জুলাইয়ের ব্যতিক্রমী সাফল্যের পর পরবর্তী চার মাস যেন একটানা ঢালু পথ। সেই জুলাইয়ে রপ্তানি আয় ছিল ৪৭৭ কোটি ৫ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। কিন্তু এরপর প্রতি মাসেই কমতে কমতে নভেম্বরে এসে রপ্তানি আয়ের ব্যবধান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

সার্বিক চিত্রটি বলছে, অর্থবছরের শুরুতে পাওয়া জোয়ারটি এখন চার মাসের টানা ভাটার মুখে দাঁড়িয়ে।

আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ইপিবির তথ্য পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর মিলিয়ে পাঁচ মাসে মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ২০০২ কোটি ৮৫ লাখ ডলার; যা আগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ঘটেছে মাত্র দশমিক ৬২ শতাংশ। অর্থাৎ পাঁচ মাসের সার্বিক রপ্তানি আয়ের চিত্রও নামমাত্র।

নভেম্বরের সবচেয়ে বড় আঘাত লেগেছে পোশাক খাতে, যেটি দেশের রপ্তানির প্রধান ভরসা। ওই মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ৩১৪ কোটি ৯ লাখ ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ কম। এ সময় নিটওয়্যার খাতে আয় নেমেছে ১৬১ কোটি ৮৪ লাখ ডলারে, আর ওভেনে এসেছে ১৫২ কোটি ২৪ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে নিটওয়্যার আয় ছিল ১৭৩ কোটি ৮২ লাখ ডলার এবং ওভেন ১৫৬ কোটি ৯২ লাখ ডলার।

পোশাকের বাইরে কৃষিপণ্যে রপ্তানি কমেছে ২৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্যে কমেছে ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ ছাড়া রপ্তানি পতনের তালিকায় রয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত সামগ্রী, হোম টেক্সটাইলস, ফার্মাসিউটিক্যালস, জাহাজ, চিংড়ি ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং। এর মানে হচ্ছে, প্রচলিত এসব খাতেও মন্থরতা স্পষ্ট।

তবে সব বাজারে একই চিত্র নয়। কিছু গন্তব্যে বিপরীত প্রবণতা দেখা গেছে, যা সামগ্রিক মন্দার মধ্যেও আশার সঞ্চার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বেড়েছে ৪ দশমিক ২০ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। উদীয়মান বাজারগুলোর মধ্যেও ইতিবাচক প্রবণতা স্পষ্ট—চীনে রপ্তানি বেড়েছে ২৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ, পোল্যান্ডে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ, সৌদি আরবে ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং স্পেনে ১০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এ প্রবণতা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যেন অনেকটাই ব্যতিক্রমী সাফল্য।

সব মিলিয়ে চিত্রটি দ্বিমুখী। একদিকে ঐতিহ্যগত প্রধান খাতগুলোতে পতন; অন্যদিকে কিছু নতুন বাজারে ইতিবাচক ইঙ্গিত। তবে বড় প্রশ্ন রয়ে যায়, এই বাজার বৃদ্ধি কি পোশাকসহ প্রধান খাতের ধারাবাহিক মন্দাকে সামাল দিতে পারবে?

বর্তমান বাস্তবতা বলছে, বৈচিত্র্য বাড়ানোর পথে অনেক দূর যেতে হবে। উৎপাদন প্রতিযোগিতা, মূল্যের চাপ, বৈদেশিক অর্ডার সংকোচন এবং বিশ্ববাজারের অনিশ্চয়তা, সব মিলিয়ে রপ্তানি খাতে সামনের পথ সহজ নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিল সিগারেট কোম্পানি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৪৮
৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিল  সিগারেট কোম্পানি

পাবনার ইশ্বরদীভিত্তিক সিগারেট কোম্পানি ইউনাইটেড টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রায় ৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযানে গিয়ে এই ফাঁকি ধরেছেন বলে আজ বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে এনবিআর।

এনবিআর জানায়, তামাক ও তামাকজাত পণ্যের অবৈধ উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধে সম্প্রতি কার্যক্রম আরও জোরদার করেছে এনবিআর। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সূত্রের ভিত্তিতে এনবিআরের ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের একটি দল ঈশ্বরদীতে অবস্থিত ইউনাইটেড টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে।

গোয়েন্দা দলের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ করলেও দীর্ঘদিন ধরে আনুষ্ঠানিক উৎপাদন কার্যক্রম প্রদর্শন না করে গোপনে সিগারেট উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে। অভিযানে ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯০ শলাকা জাল ব্যান্ডরোলযুক্ত সিগারেট জব্দ করা হয়, যার বাজারমূল্য ৩৮ লাখ টাকারও বেশি। এসব সিগারেটের বিপরীতে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ২৯ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়।

এ ছাড়া ১০ লাখ ২৯ হাজারটি অব্যবহৃত জাল ব্যান্ডরোল বা স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়, যা ব্যবহার করা হলে অতিরিক্ত ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকারও বেশি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া সম্ভব ছিল। প্রতিষ্ঠানটি ৩ লাখ ২২ হাজার ৫০০টি বৈধ ব্যান্ডরোল সংগ্রহ করলেও তা ব্যবহার না করে জাল ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে সিগারেট উৎপাদন ও বিক্রি করছিল।

এনবিআর জানিয়েছে, সব সিগারেট ও উপকরণ আইনানুগভাবে জব্দ করা হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনিপ্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। অভিযানে উদ্ধার করা দলিলাদির ভিত্তিতে শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারেটকে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন ও বিক্রি কার্যক্রমের ওপর কঠোর নজরদারির জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত