Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

নির্বাচিত সরকার ছাড়া ব্যবসার পরিবেশ ফিরবে না

আজকের পত্রিকার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে আবদুল আউয়াল মিন্টু

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল আউয়াল মিন্টু। তিনি ব্যবসায়িক গোষ্ঠী মাল্টিমোড গ্রুপের প্রধান নির্বাহী। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত মিন্টু বর্তমানে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক রোকন উদ্দীন

রোকন উদ্দীন, ঢাকা

আজকের পত্রিকা: বর্তমানে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিস্থিতি আপনার দৃষ্টিতে কেমন?

আবদুল আউয়াল মিন্টু: এই মুহূর্তে সামাজিক শৃঙ্খলা বা আইন-শৃঙ্খলার যে অবস্থা, তা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ঠিক অনুকূল পরিবেশ নয়। এটা আমার একার কথা নয়। বিভিন্ন ধরনের ছোট-বড় ব্যবসায়ীর সঙ্গে আমার প্রতিদিন কথা হয়। তাঁদের সবার কথাই আমি বলছি।

দ্বিতীয়ত, আর্থিক খাতের যে সমস্যা, তাকে আমি ঠিক বিশৃঙ্খলা বলব না। তবে আর্থিক খাতের এখনকার পরিবেশ বিনিয়োগের জন্য ভালো নয়।

তৃতীয়ত, আমি বলব বিনিয়োগের সমস্যার কথা। যে হারে উচ্চ মূল্যস্ফীতি রয়েছে, সে হারে মজুরি বাড়ছে না। এতে সঞ্চয় কমে যাচ্ছে। সঞ্চয় যদি কমে যায়, তবে বিনিয়োগ কোথা থেকে আসবে? এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সরকারের কিছু ভুলনীতি। যেমন বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি নিয়েছে। এতে বিনিয়োগ বা কাঁচামাল কেনার জন্য যে এলসি খোলা দরকার, তা-ও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এগুলোকে একত্র করে দেখলে বলা যায়, দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ হচ্ছে না; অতএব কর্মসংস্থান হচ্ছে না। এতে বোঝা যায়, অর্থনীতি যে দিকে যাওয়া দরকার, সে দিকে যাচ্ছে না।

আজকের পত্রিকা: এই অবস্থার জন্য দায়ী কে এবং এ থেকে উত্তরণের উপায় কী?

আবদুল আউয়াল মিন্টু: এই প্রশ্ন আরও পরে করতে হবে। কারণ সমস্যা আরও আছে। দেশে যদি গণতন্ত্র না থাকে, ঠিক রাজনীতি না থাকে কিংবা ধরুন যদি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বা অনিশ্চয়তা থাকে, তবে অর্থনীতির এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সহজ কোনো রাস্তা নেই।

আগে যাঁরা দেশ চালিয়েছেন, তাঁরা কী করেছেন তা তো সবাই জানেন। কিন্তু বর্তমানে যাঁরা দেশ চালাচ্ছেন, তাঁরা তো রাজনীতিক না। অতএব রাজনীতিকরা যেভাবে মানুষের সমস্যা বোঝার চেষ্টা করেন, তাঁরা সেভাবে বোঝার চেষ্টা করবেন না। কিংবা চেষ্টা করলেও পুরোপুরি সেভাবে বুঝবেন না।

অতএব উত্তরণের একটাই উপায়; সেটা হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। এটা সম্ভব হবে, দেশে যদি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে একটা প্রকৃত গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। যে সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। পালিয়ে যাওয়া সরকারের মতো নয়।

আজকের পত্রিকা: অন্তর্বর্তী সরকারের গত ছয় মাসের সিদ্ধান্তগুলো ব্যবসার জন্য কতটা সহায়ক বা ক্ষতিকর?

আবদুল আউয়াল মিন্টু: সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে, এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে আমি দেখিনি। আবার যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছে, সেগুলোও যে ইচ্ছাকৃত ক্ষতি করার জন্য নিয়েছে, সেটাও নয়। যেমন বাংলাদেশ ব্যাংক বারবার বলেছিল টাকা ছাপাবে না। কিন্তু সবাই তো বলে, তারা টাকা ছাপিয়েছে। আমার প্রশ্ন, দেশের জিডিপির আকার অনুসারে ঠিক কতটুকু মুদ্রা দরকার, তা কি জনসমক্ষে প্রকাশ করেছে কেউ? মুদ্রানীতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে জনগণের কাছে ব্যাখ্যা দেন যে আমাদের কত মুদ্রার সরবরাহ দরকার। মুদ্রা অনেক সময় দেশের বাইরেও চলে যায়। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ছাপানো মুদ্রার ২০-২২ শতাংশ অভ্যন্তরে থাকে। বাকিটা বাইরে চলে যায়। আমাদের তো এত যাবে না।

সংকুচিত মুদ্রানীতির জন্য আমাদের সুদের হার বেড়েছে, যা ব্যবসার জন্য বড় বাধা। যে দেশে পাট, চামড়া ও লবণ ছাড়া বাকি শিল্পের কাঁচামাল এবং সব খাদ্যপণ্য আমদানি করে চলতে হয়, সে দেশে শুধু সংকুচিত মুদ্রানীতির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি কমাতে চাইলে হিতে বিপরীত হবে। টাকার অবমূল্যায়নের ফলে আমদানি খরচ বেড়েছে। আবার বাড়তি খরচের ওপর বাড়তি শুল্ক দিতে হচ্ছে। অতএব সবার সঙ্গে আলোচনা করে নিতে হবে।

আজকের পত্রিকা: রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বা অস্থিরতা কমার কোনো আভাস বা উদ্যোগ দেখছেন কি না?

আবদুল আউয়াল মিন্টু: অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা আলাদা করে দেখলে আমি বলব দুটোই পুরোপুরি বিদ্যমান। গত কয়েক দিনে দেখেছেন রাতভর ছেলেরা মারামারি করেছে। তার আগে ছিল বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের গণ্ডগোল। এখনো বহু কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ চলছে। ছাত্রদের অসন্তোষ রয়েছে। আর সাধারণ মানুষের অসন্তোষ হলো তারা যে দীর্ঘদিন আন্দোলন করেছে, একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের জন্য; সেটা এখনো পাওয়া যায়নি।

দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা দুটোই সমানভাবে রয়েছে। যেখানে সেখানে রাতে-দিনে চুরি ডাকাতি ছিনতাই হচ্ছে, খুন হচ্ছে।

আজকের পত্রিকা: ব্যবসায়িক নেতৃত্ব নিয়ে কিছু বলবেন?

আবদুল আউয়াল মিন্টু: দেশের ব্যবসায়িক নেতৃত্ব গত দশ-পনেরো বছরই দলীয় লেজুড়বৃত্তি চালিয়ে গেছে। ওই সময়টাতে ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কোনো কথা হয়নি। সে হিসেবে এখন কিছু কিছু হচ্ছে।

আজকের পত্রিকা: অন্তর্বর্তী সরকার জোর দিয়ে সংস্কারের কথা বলছে। আপনি বিষয়টাকে কীভাবে দেখছেন?

আবদুল আউয়াল মিন্টু: সংস্কারের নানা ধরন আছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে বুঝতে হবে, তারা কতটুকু সংস্কারের সামর্থ্য বা অধিকার রাখে। সবকিছু সংস্কার করতে হলে জনপ্রতিনিধি হয়ে আসতে হবে। আপনি সংবিধান সংস্কার করছেন, সবকিছু বাদ দিয়ে দেবেন, এই অধিকার আপনাকে কে দিল? এই ক্ষমতা কোত্থেকে এল? আর প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করাই যায়। আপনি দুদক সংস্কার করেন, জুডিশিয়াল সংস্কার করেন, ছাত্ররাজনীতির সংস্কার করেন। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। আমরা চাচ্ছি সরকার আগে বলুক, ঠিক কী কী সংস্কার করবে। যেগুলো সম্ভব, সেগুলো তাড়াতাড়ি করে ফেলুক; আর দ্রুত নির্বাচন দিয়ে দিক।

আজকের পত্রিকা: আপনিতো লাল তীর সিড কোম্পানির মাধ্যমে কৃষিভিত্তিক শিল্প খাতেও যুক্ত হয়েছেন। এই খাত নিয়ে কিছু বলুন—

আবদুল আউয়াল মিন্টু: কৃষির সঙ্গে খাদ্যনিরাপত্তা ও কর্মসংস্থান দুটোই যুক্ত। দেশের জিডিপিতে অবদান ও কর্মসংস্থান কমছে কৃষি খাত থেকে। অথচ এ খাতে এই সরকারের কোনো সংস্কার দেখছি না। যে খাত থেকে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান সম্ভব, সে খাতে নজর দেওয়া দরকার।

আজকের পত্রিকা: আপনি অর্থনীতির যে সার্বিক চিত্রের কথা বললেন; তাতে ২০২৬ সালে আমাদের কি স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণ করা উচিত হবে?

আবদুল আউয়াল মিন্টু: অচিরেই এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে সমস্যা তো অবশ্যই হবে। কারণ কম সুদহারে ঋণ নেওয়া বন্ধ হয়ে যাবে, উচ্চ শুল্ক দিয়ে রপ্তানি করতে হবে। আগের সরকার মিথ্যা তথ্য দিয়ে উত্তরণের পথে হেঁটেছে। উত্তরণ তিন বছর পিছিয়ে দেওয়ার দাবির সঙ্গে আমি একমত।

আজকের পত্রিকা: আপনার নিজের ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

আবদুল আউয়াল মিন্টু: আমার বয়স ৭৫ পার হয়ে গেছে। এখন আর কী বিশেষ পরিকল্পনা থাকতে পারে! তবে ব্যবসার ক্ষেত্রে কয়েকটি নতুন শাখার কাজে হাত দিয়েছি। একটা হলো গাভি ও ষাঁড়ের জাত উন্নয়ন। আর একটা হলো খাগড়াছড়িতে কফি উৎপাদন। ইতিমধ্যে ৩৫ একর জমিতে কফির চাষ করা হয়েছে। পাহাড়ের কৃষকদের প্রণোদনা দিয়ে এটা করছি। আর রাজনৈতিক অবস্থান আগে যা ছিল, এখনো তা-ই আছে। ভবিষ্যতেও এভাবেই থাকব। কোথাও নির্বাচন করার পরিকল্পনা আমার নেই। তারপরও বাকিটা আল্লাহ জানেন। দেখা যাক, পরিবেশ পরিস্থিতি কোথায় নিয়ে যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আদালতের রায়ে ইতিহাস গড়লেন ইলন মাস্ক, সম্পদ ছাড়াল ৭০০ বিলিয়ন ডলার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ২৪
টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক। ছবি: সংগৃহীত
টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক। ছবি: সংগৃহীত

পে প্যাকেজ বা বেতন-ভাতাসংক্রান্ত একটি মামলার রায়ের পর টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্কের সম্পদ গত শুক্রবার রাতে ৭৪৯ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকেছে।

ফোর্বসের বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, ডেলাওয়্যার সুপ্রিম কোর্ট মাস্কের ১৩৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের টেসলা স্টক অপশনগুলো পুনর্বহাল করার পরই তাঁর সম্পদে এই বিশাল উল্লম্ফন দেখা যায়।

উল্লেখ্য, গত বছর আদালত এই সুবিধাগুলো বাতিল করেছিলেন।

২০১৮ সালে মাস্কের যে বেতন প্যাকেজের মূল্য ৫৬ বিলিয়ন ডলার ছিল, সেটিই গত শুক্রবার ডেলাওয়্যার সুপ্রিম কোর্ট পুনর্বহাল করেন। এর দুই বছর আগে নিম্ন আদালত ওই পারিশ্রমিক চুক্তিকে ‘অবিশ্বাস্য’ আখ্যা দিয়ে বাতিল করেছিলেন।

সুপ্রিম কোর্ট রায়ে বলেছেন, ২০২৪ সালে দেওয়া যে সিদ্ধান্তে বেতনের প্যাকেজটি বাতিল করা হয়েছিল, তা সঠিক ছিল না এবং মাস্কের প্রতি অন্যায্য ছিল।

এর আগে চলতি সপ্তাহে মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স শেয়ারবাজারে আসতে পারে—এমন প্রতিবেদনের পর মাস্কের সম্পদ ৬০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্য দিয়ে তিনি ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন।

এদিকে গত নভেম্বরে টেসলার শেয়ারহোল্ডাররা আলাদাভাবে মাস্কের জন্য ১ ট্রিলিয়ন ডলারের একটি পারিশ্রমিক পরিকল্পনা অনুমোদন করেন।

এটি করপোরেট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বেতন প্যাকেজ। বিনিয়োগকারীরা বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা টেসলাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিকসভিত্তিক এক শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরে মাস্কের পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জানান।

ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী, মাস্কের বর্তমান সম্পদমূল্য গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজের চেয়ে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার বেশি। ল্যারি পেজ বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পুঁজিবাজারে নথি জমা এখন এক ক্লিকে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
পুঁজিবাজারে নথি জমা এখন এক ক্লিকে

দীর্ঘদিন ধরে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর তথ্য জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া ছিল জটিল ও সময়সাপেক্ষ। একই তথ্য বারবার ছাপিয়ে আলাদা স্টক এক্সচেঞ্জে জমা দিতে হতো। এ সমস্যার সমাধান হিসেবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সম্প্রতি চালু করেছে সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক স্মার্ট সাবমিশন সিস্টেম (এসএসএস)।

নতুন এই সিস্টেমের মাধ্যমে কোম্পানি ও ফান্ডগুলো মূল্য সংবেদনশীল ঘোষণা, আর্থিক প্রতিবেদন ও অন্যান্য রেগুলেটরি ফাইলিং কাগজ ছাড়াই অনলাইনে জমা দিতে পারবে। এতে সময় ও খরচ কমার পাশাপাশি তথ্য ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা এবং ট্র্যাকিং ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

ডিএসই সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া এই প্ল্যাটফর্ম ধাপে ধাপে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। সর্বশেষ দুটি নতুন মডিউল যুক্ত হওয়ায় এখন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে তথ্য একই ডিজিটাল গেটওয়ে দিয়ে জমা দেওয়া সম্ভব। ফলে দ্বৈত সাবমিশনের ঝামেলা প্রায় সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, এই উদ্যোগের মাধ্যমে কাগুজে নথির ওপর নির্ভরতা পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। ডিজিটাল সাবমিশন শুধু সুবিধার বিষয় নয়, এটি বাজার শৃঙ্খলা ও সময়ানুবর্তিতা নিশ্চিত করার একটি কাঠামোগত পরিবর্তন।

ডিএসই জানায়, চায়নিজ কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে কাজ করে প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বাড়ানোর পর সিস্টেমটি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে ভবিষ্যতে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী নতুন ফিচার যুক্ত করা সহজ হবে।

প্রযুক্তিগত দিক থেকে এর গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে ডিএসইর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ড. মো. আসিফুর রহমান বলেন, একক ডিজিটাল সাবমিশন পয়েন্ট চালু হওয়ায় ম্যানুয়াল হস্তক্ষেপজনিত ভুল কমবে এবং তথ্য জমার প্রতিটি ধাপ ডিজিটালি যাচাইযোগ্য থাকবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের প্রভাব শুধু স্টক এক্সচেঞ্জেই সীমাবদ্ধ থাকবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দেশের প্রথম ‘ক্যাশলেস’ জেলা হতে যাচ্ছে কক্সবাজার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশকে একটি ডিজিটাল ও নগদ লেনদেনমুক্ত (ক্যাশলেস) রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বড় ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে দেশের প্রথম ‘ক্যাশলেস’ জেলা হিসেবে ঘোষণা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

গতকাল শনিবার চট্টগ্রামে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এই তথ্য জানান।

গভর্নর বলেন, ‘২০২৭ সালের মধ্যে দেশের অন্তত ৭৫ শতাংশ খুচরা লেনদেন ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে দেশের প্রতিটি নাগরিকের হাতে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকার মধ্যে স্মার্টফোন পৌঁছানো নিশ্চিত করতে হবে।’

চট্টগ্রাম অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা শীর্ষক এই সভায় গভর্নর চট্টগ্রামকে দেশের ‘অর্থনৈতিক লাইফলাইন’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘প্রধান সমুদ্রবন্দর, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড), ভারী শিল্প এবং জ্বালানি অবকাঠামোর কেন্দ্রবিন্দু এই চট্টগ্রাম। সিঙ্গাপুর, দুবাই বা হংকংয়ের মতো চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সংযোগ শক্তিশালী করতে হবে। তবেই এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব হবে।’

আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সহজ করতে দেশের সব সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরে শিগগিরই ২৪ ঘণ্টা রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস) সিস্টেম চালু করা হবে বলে জানান গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এটি একটি তাৎক্ষণিক ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার ব্যবস্থা যা বাণিজ্যের গতি বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এ ছাড়া, তৃণমূল পর্যায়ে বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এমএমই) এবং কৃষি খাতে পর্যাপ্ত ও সহজ শর্তে ঋণ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন গভর্নর। জেলা ও তৃণমূল পর্যায়ে উৎপাদনশীল খাতের বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে ব্যাংকগুলোকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. মকবুল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় বিভিন্ন ব্যবসায়িক চেম্বার, ব্যাংকার, সরকারি সংস্থার প্রতিনিধি এবং শিক্ষাবিদ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের গ্র্যাচুইটি ফান্ড: কর্মকর্তার অবহেলায় ৬৫ লাখ টাকার ক্ষতি

  • ৩৩ মাস অব্যবহৃত পড়ে ছিল ফান্ডের অর্থ
  • অভিযুক্ত কর্মকর্তা আগাম স্বেচ্ছা অবসরে
  • দায়িত্বে অবহেলায় জরিমানা ১ লাখ টাকা
সবুর শুভ, চট্টগ্রাম 
প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের গ্র্যাচুইটি ফান্ড: কর্মকর্তার অবহেলায় ৬৫ লাখ টাকার ক্ষতি

দেশের একমাত্র গাড়ি প্রস্তুত ও সংযোজনকারী রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে কর্মচারীদের গ্র্যাচুইটি ফান্ড ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘ ৩৩ মাসের অবহেলায় অন্তত ৬৫ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। অথচ এই ক্ষতির দায়ে তদারকি কর্মকর্তার কাছ থেকে জরিমানা হিসেবে আদায় করা হয়েছে মাত্র ১ লাখ টাকা। বিশাল ক্ষতির বিপরীতে সামান্য দণ্ডে দায় নিষ্পত্তির ঘটনা প্রতিষ্ঠানটিতে প্রশ্ন ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

ফান্ড দেখভালের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সহপ্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ মিললেও তিনি শর্তসাপেক্ষে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে দায়িত্বমুক্ত হয়েছেন। ২৫ ডিসেম্বর তাঁর অবসর কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও তিনি গত ৩১ আগস্ট থেকে আগাম অবসরে যান। ২১ জুলাই শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসইসি) কাছে তিনি স্বেচ্ছায় অবসরের আবেদন করেন এবং তাঁর অবসর মঞ্জুর করা হয়।

এ বিষয়ে জসিম উদ্দিন বলেন, আমি প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এমপ্লয়িজ গ্র্যাচুইটি ফান্ড ট্রাস্টের সদস্য নই। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ফান্ডের দেখভাল করেছি। ডাবল বেনিফিট স্কিমের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর ভুলবশত তা রিনিউ করা হয়নি। দোষটা আসলে ব্যাংকের, বিষয়টি ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। সে কারণে আমরা মুনাফা থেকে বঞ্চিত হয়েছি।

জসিম উদ্দিন আরও বলেন, গ্র্যাচুইটি ফান্ড পরিচালনার পূর্ণ দায় ট্রাস্টি বোর্ডের সাত সদস্যের। তারপরও আমার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে, আমি তা মোকাবিলা করেছি এবং ১ লাখ টাকা জরিমানাও গুনেছি। এটি অনিচ্ছাকৃত একটি ভুল।

প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ সূত্রে জানা যায়, কর্মচারীদের জন্য গঠিত ‘প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এমপ্লয়িজ গ্র্যাচুইটি ফান্ড ট্রাস্ট’-এর ২ কোটি টাকা ২০১২ সালের ২৪ জুলাই জনতা ব্যাংকের শেখ মুজিব রোড (আগ্রাবাদ) শাখায় ডাবল বেনিফিট স্কিমে জমা রাখা হয়। ছয় বছর মেয়াদি এ স্কিমে সুদের হার ছিল ১২ দশমিক ৬৩ শতাংশ। মেয়াদ শেষে ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই সুদে-আসলে টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ কোটি ৭৯ লাখ ৫৮ হাজার টাকা।

কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৩৩ মাস ওই অর্থ একইভাবে ব্যাংকে পড়ে থাকে। এ সময়ে না প্রগতি কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নেয়, না ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ফান্ডের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়। এতে সম্ভাব্য মুনাফা হারিয়ে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয় ৯৩ লাখ ৯৪ হাজার ৬১০ টাকা।

ঘটনাটি ধরা পড়ার পর ফান্ড তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা জসিম উদ্দিনের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। ২০২৩ সালের ১ মার্চ দেওয়া তাঁর ব্যাখ্যা কর্তৃপক্ষ গ্রহণযোগ্য মনে করেনি। পরবর্তী সময়ে ১১ এপ্রিল প্রগতির তিন কর্মকর্তাকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন বিভাগীয় প্রশাসনিক প্রধান মো. নুর হোসেন। সদস্য হিসেবে ছিলেন সহপ্রধান হিসাবরক্ষক গোলাম রাব্বি মোহাম্মদ সাদাত হোসেন এবং হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. খায়রুল বাশার।

তদন্ত কমিটির সুপারিশে জনতা ব্যাংকের কাছে ৩৩ মাসের মুনাফা দাবি করা হয়। দেনদরবারের পর ব্যাংক সঞ্চয়ী বেনিফিটের আওতায় ২৮ লাখ টাকা পরিশোধ করে। জসিম উদ্দিনের কাছ থেকে আদায় করা জরিমানার ১ লাখ টাকা যোগ করে মোট উদ্ধার হয় ২৯ লাখ টাকা। ফলে এখনো অনাদায়ী থেকে যায় ৬৪ লাখ ৯৪ হাজার ৬১০ টাকা।

এ বিষয়ে জনতা ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ব্যবস্থাপক মো. সানাউল্লাহ বলেন, ডাবল বেনিফিট স্কিমের মেয়াদ শেষে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নবায়ন হয় না। এ কারণে ওই সময়ের বেনিফিট পাওয়ার সুযোগ ছিল না। ২৮ লাখ টাকা পরিশোধের বিষয়ে তিনি জানান, বিষয়টি তাঁর আগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপকের সময়কার সিদ্ধান্ত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত