Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

নির্বাচিত সরকার ছাড়া ব্যবসার পরিবেশ ফিরবে না

আজকের পত্রিকার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে আবদুল আউয়াল মিন্টু

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল আউয়াল মিন্টু। তিনি ব্যবসায়িক গোষ্ঠী মাল্টিমোড গ্রুপের প্রধান নির্বাহী। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত মিন্টু বর্তমানে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক রোকন উদ্দীন

রোকন উদ্দীন, ঢাকা

আজকের পত্রিকা: বর্তমানে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিস্থিতি আপনার দৃষ্টিতে কেমন?

আবদুল আউয়াল মিন্টু: এই মুহূর্তে সামাজিক শৃঙ্খলা বা আইন-শৃঙ্খলার যে অবস্থা, তা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ঠিক অনুকূল পরিবেশ নয়। এটা আমার একার কথা নয়। বিভিন্ন ধরনের ছোট-বড় ব্যবসায়ীর সঙ্গে আমার প্রতিদিন কথা হয়। তাঁদের সবার কথাই আমি বলছি।

দ্বিতীয়ত, আর্থিক খাতের যে সমস্যা, তাকে আমি ঠিক বিশৃঙ্খলা বলব না। তবে আর্থিক খাতের এখনকার পরিবেশ বিনিয়োগের জন্য ভালো নয়।

তৃতীয়ত, আমি বলব বিনিয়োগের সমস্যার কথা। যে হারে উচ্চ মূল্যস্ফীতি রয়েছে, সে হারে মজুরি বাড়ছে না। এতে সঞ্চয় কমে যাচ্ছে। সঞ্চয় যদি কমে যায়, তবে বিনিয়োগ কোথা থেকে আসবে? এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সরকারের কিছু ভুলনীতি। যেমন বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি নিয়েছে। এতে বিনিয়োগ বা কাঁচামাল কেনার জন্য যে এলসি খোলা দরকার, তা-ও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এগুলোকে একত্র করে দেখলে বলা যায়, দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ হচ্ছে না; অতএব কর্মসংস্থান হচ্ছে না। এতে বোঝা যায়, অর্থনীতি যে দিকে যাওয়া দরকার, সে দিকে যাচ্ছে না।

আজকের পত্রিকা: এই অবস্থার জন্য দায়ী কে এবং এ থেকে উত্তরণের উপায় কী?

আবদুল আউয়াল মিন্টু: এই প্রশ্ন আরও পরে করতে হবে। কারণ সমস্যা আরও আছে। দেশে যদি গণতন্ত্র না থাকে, ঠিক রাজনীতি না থাকে কিংবা ধরুন যদি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বা অনিশ্চয়তা থাকে, তবে অর্থনীতির এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সহজ কোনো রাস্তা নেই।

আগে যাঁরা দেশ চালিয়েছেন, তাঁরা কী করেছেন তা তো সবাই জানেন। কিন্তু বর্তমানে যাঁরা দেশ চালাচ্ছেন, তাঁরা তো রাজনীতিক না। অতএব রাজনীতিকরা যেভাবে মানুষের সমস্যা বোঝার চেষ্টা করেন, তাঁরা সেভাবে বোঝার চেষ্টা করবেন না। কিংবা চেষ্টা করলেও পুরোপুরি সেভাবে বুঝবেন না।

অতএব উত্তরণের একটাই উপায়; সেটা হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। এটা সম্ভব হবে, দেশে যদি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে একটা প্রকৃত গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। যে সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। পালিয়ে যাওয়া সরকারের মতো নয়।

আজকের পত্রিকা: অন্তর্বর্তী সরকারের গত ছয় মাসের সিদ্ধান্তগুলো ব্যবসার জন্য কতটা সহায়ক বা ক্ষতিকর?

আবদুল আউয়াল মিন্টু: সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে, এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে আমি দেখিনি। আবার যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছে, সেগুলোও যে ইচ্ছাকৃত ক্ষতি করার জন্য নিয়েছে, সেটাও নয়। যেমন বাংলাদেশ ব্যাংক বারবার বলেছিল টাকা ছাপাবে না। কিন্তু সবাই তো বলে, তারা টাকা ছাপিয়েছে। আমার প্রশ্ন, দেশের জিডিপির আকার অনুসারে ঠিক কতটুকু মুদ্রা দরকার, তা কি জনসমক্ষে প্রকাশ করেছে কেউ? মুদ্রানীতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে জনগণের কাছে ব্যাখ্যা দেন যে আমাদের কত মুদ্রার সরবরাহ দরকার। মুদ্রা অনেক সময় দেশের বাইরেও চলে যায়। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ছাপানো মুদ্রার ২০-২২ শতাংশ অভ্যন্তরে থাকে। বাকিটা বাইরে চলে যায়। আমাদের তো এত যাবে না।

সংকুচিত মুদ্রানীতির জন্য আমাদের সুদের হার বেড়েছে, যা ব্যবসার জন্য বড় বাধা। যে দেশে পাট, চামড়া ও লবণ ছাড়া বাকি শিল্পের কাঁচামাল এবং সব খাদ্যপণ্য আমদানি করে চলতে হয়, সে দেশে শুধু সংকুচিত মুদ্রানীতির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি কমাতে চাইলে হিতে বিপরীত হবে। টাকার অবমূল্যায়নের ফলে আমদানি খরচ বেড়েছে। আবার বাড়তি খরচের ওপর বাড়তি শুল্ক দিতে হচ্ছে। অতএব সবার সঙ্গে আলোচনা করে নিতে হবে।

আজকের পত্রিকা: রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বা অস্থিরতা কমার কোনো আভাস বা উদ্যোগ দেখছেন কি না?

আবদুল আউয়াল মিন্টু: অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা আলাদা করে দেখলে আমি বলব দুটোই পুরোপুরি বিদ্যমান। গত কয়েক দিনে দেখেছেন রাতভর ছেলেরা মারামারি করেছে। তার আগে ছিল বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের গণ্ডগোল। এখনো বহু কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ চলছে। ছাত্রদের অসন্তোষ রয়েছে। আর সাধারণ মানুষের অসন্তোষ হলো তারা যে দীর্ঘদিন আন্দোলন করেছে, একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের জন্য; সেটা এখনো পাওয়া যায়নি।

দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা দুটোই সমানভাবে রয়েছে। যেখানে সেখানে রাতে-দিনে চুরি ডাকাতি ছিনতাই হচ্ছে, খুন হচ্ছে।

আজকের পত্রিকা: ব্যবসায়িক নেতৃত্ব নিয়ে কিছু বলবেন?

আবদুল আউয়াল মিন্টু: দেশের ব্যবসায়িক নেতৃত্ব গত দশ-পনেরো বছরই দলীয় লেজুড়বৃত্তি চালিয়ে গেছে। ওই সময়টাতে ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কোনো কথা হয়নি। সে হিসেবে এখন কিছু কিছু হচ্ছে।

আজকের পত্রিকা: অন্তর্বর্তী সরকার জোর দিয়ে সংস্কারের কথা বলছে। আপনি বিষয়টাকে কীভাবে দেখছেন?

আবদুল আউয়াল মিন্টু: সংস্কারের নানা ধরন আছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে বুঝতে হবে, তারা কতটুকু সংস্কারের সামর্থ্য বা অধিকার রাখে। সবকিছু সংস্কার করতে হলে জনপ্রতিনিধি হয়ে আসতে হবে। আপনি সংবিধান সংস্কার করছেন, সবকিছু বাদ দিয়ে দেবেন, এই অধিকার আপনাকে কে দিল? এই ক্ষমতা কোত্থেকে এল? আর প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করাই যায়। আপনি দুদক সংস্কার করেন, জুডিশিয়াল সংস্কার করেন, ছাত্ররাজনীতির সংস্কার করেন। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। আমরা চাচ্ছি সরকার আগে বলুক, ঠিক কী কী সংস্কার করবে। যেগুলো সম্ভব, সেগুলো তাড়াতাড়ি করে ফেলুক; আর দ্রুত নির্বাচন দিয়ে দিক।

আজকের পত্রিকা: আপনিতো লাল তীর সিড কোম্পানির মাধ্যমে কৃষিভিত্তিক শিল্প খাতেও যুক্ত হয়েছেন। এই খাত নিয়ে কিছু বলুন—

আবদুল আউয়াল মিন্টু: কৃষির সঙ্গে খাদ্যনিরাপত্তা ও কর্মসংস্থান দুটোই যুক্ত। দেশের জিডিপিতে অবদান ও কর্মসংস্থান কমছে কৃষি খাত থেকে। অথচ এ খাতে এই সরকারের কোনো সংস্কার দেখছি না। যে খাত থেকে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান সম্ভব, সে খাতে নজর দেওয়া দরকার।

আজকের পত্রিকা: আপনি অর্থনীতির যে সার্বিক চিত্রের কথা বললেন; তাতে ২০২৬ সালে আমাদের কি স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণ করা উচিত হবে?

আবদুল আউয়াল মিন্টু: অচিরেই এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে সমস্যা তো অবশ্যই হবে। কারণ কম সুদহারে ঋণ নেওয়া বন্ধ হয়ে যাবে, উচ্চ শুল্ক দিয়ে রপ্তানি করতে হবে। আগের সরকার মিথ্যা তথ্য দিয়ে উত্তরণের পথে হেঁটেছে। উত্তরণ তিন বছর পিছিয়ে দেওয়ার দাবির সঙ্গে আমি একমত।

আজকের পত্রিকা: আপনার নিজের ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

আবদুল আউয়াল মিন্টু: আমার বয়স ৭৫ পার হয়ে গেছে। এখন আর কী বিশেষ পরিকল্পনা থাকতে পারে! তবে ব্যবসার ক্ষেত্রে কয়েকটি নতুন শাখার কাজে হাত দিয়েছি। একটা হলো গাভি ও ষাঁড়ের জাত উন্নয়ন। আর একটা হলো খাগড়াছড়িতে কফি উৎপাদন। ইতিমধ্যে ৩৫ একর জমিতে কফির চাষ করা হয়েছে। পাহাড়ের কৃষকদের প্রণোদনা দিয়ে এটা করছি। আর রাজনৈতিক অবস্থান আগে যা ছিল, এখনো তা-ই আছে। ভবিষ্যতেও এভাবেই থাকব। কোথাও নির্বাচন করার পরিকল্পনা আমার নেই। তারপরও বাকিটা আল্লাহ জানেন। দেখা যাক, পরিবেশ পরিস্থিতি কোথায় নিয়ে যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সোনার দাম ভরিতে ১৪৭০ টাকা বাড়ল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশের বাজারে সোনার দাম আরও বাড়ানো হয়েছে। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম বাড়ানো হয়েছে ১ হাজার ৪৭০ টাকা। এতে এক ভরি সোনার দাম ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৭ টাকা হয়েছে।

স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার (পাকা সোনা) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই দাম বাড়ানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৈঠক করে এই দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এর আগে ১৪ ডিসেম্বর ভালো মানের প্রতি ভরি সোনার দাম বাড়ানো হয় ৩ হাজার ৪৪২ টাকা এবং ১২ ডিসেম্বর ভালো মানের প্রতি ভরি সোনার দাম বাড়ানো হয় ১ হাজার ৫০ টাকা। এই দাম বাড়ানোর ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে এখন আবার দাম বাড়ানো হলো।

এখন সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনায় ১ হাজার ৪৭০ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৭ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় ১ হাজার ৪১১ টাকা বাড়িয়ে ২ লাখ ৭ হাজার ২১১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় ১ হাজার ২৪৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম ১ লাখ ৭৭ হাজার ৬৪৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনায় ১ হাজার ৬৩ টাকা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৯০০ টাকা।

বিষয়:

দামসোনা
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেভরনের সহায়তায় সিলেটে ৬০ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনে ফেরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
শেভরন-এসএমআইএল প্রকল্পে ৬০ প্রতিবন্ধীর মধ্যে কৃত্রিম অঙ্গ বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
শেভরন-এসএমআইএল প্রকল্পে ৬০ প্রতিবন্ধীর মধ্যে কৃত্রিম অঙ্গ বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

শেভরন বাংলাদেশের সহায়তায় বাস্তবায়িত এসএমআইএল (SMILE) প্রকল্পের আওতায় ‘রিস্টোরিং মোবিলিটি: আর্টিফিশিয়াল লিম্ব সাপোর্ট’ উদ্যোগের সমাপনী অনুষ্ঠান সম্প্রতি গ্র্যান্ড সিলেটে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে সিলেট ও নবীগঞ্জ উপজেলার ৬০ শারীরিক প্রতিবন্ধী উপকারভোগীর মধ্যে কৃত্রিম অঙ্গ (প্রোস্থেটিক) ও অর্থোটিক ডিভাইস বিতরণ করা হয়।

দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে পুনর্বাসন ও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত থাকা এই উপকারভোগীরা কৃত্রিম অঙ্গ পেয়ে নতুন জীবন ফিরে পেলেন। জালালাবাদ ডিজেবল্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতালের (জেডিআরসিএইচ) সহযোগিতায় এই উদ্যোগ পরিচালিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সমন্বয় ও মনিটরিং উইংয়ের সচিব মো. আবদুল মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন শেভরন বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও প্রেসিডেন্ট এরিক এম ওয়াকার, করপোরেট অ্যাফেয়ার্স পরিচালক মুহাম্মদ ইমরুল কবির, সোশ্যাল ইনভেস্টমেন্ট প্রধান এ কে এম আরিফ আক্তার, সুইসকন্টাক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর হেলাল হোসেন এবং জেডিআরসিএইচ বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান রোটারিয়ান পিপি ইঞ্জিনিয়ার শোয়াইব আহমেদ মতিন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো. আবদুল মান্নান বলেন, ‘কৃত্রিম অঙ্গ সহায়তা শুধু চিকিৎসা নয়, এটি প্রতিবন্ধী মানুষের জীবনযাত্রায় মৌলিক পরিবর্তন আনে। শেভরন বাংলাদেশ, সুইসকন্টাক্ট ও জেডিআরসিএইচের যৌথ উদ্যোগ চলাচল সক্ষমতা ফিরিয়ে এনে উপকারভোগীদের জীবনে নতুন আশার দ্বার খুলে দিয়েছে।’

শেভরন বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও প্রেসিডেন্ট এরিক এম ওয়াকার বলেন, ‘বিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ এ ধরনের বিশেষায়িত পুনর্বাসন সেবার পর্যাপ্ত সুযোগ পায় না। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ব্যক্তিকেন্দ্রিক সেবা পৌঁছে দিতে পারা আমাদের জন্য গর্বের। উপকারভোগীদের প্রতিটি অগ্রযাত্রাই একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের দিকে দৃঢ় পদক্ষেপ।’

সুইসকন্টাক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর হেলাল হোসেন বলেন, ‘এই প্রকল্প কেবল চলাচল সক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়নি; এটি উপকারভোগীদের কর্মজীবনে ফেরা, শিক্ষা চালিয়ে যাওয়া এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করেছে—যা সমাজে অন্তর্ভুক্তি আরও সুদৃঢ় করেছে।’

করপোরেট অ্যাফেয়ার্স পরিচালক মুহাম্মদ ইমরুল কবির বলেন, ‘শেভরন তিন দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের বিশ্বস্ত জ্বালানি অংশীদার। আমাদের অঙ্গীকার কেবল জ্বালানি সরবরাহেই সীমাবদ্ধ নয়। এসএমআইএল প্রকল্পের মতো উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা চলাচল সক্ষমতা ও মানবিক মর্যাদা পুনরুদ্ধারে কাজ করছি। বাংলাদেশে আমাদের সামাজিক বিনিয়োগ কার্যক্রম জাতিসংঘ ঘোষিত ১৭টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের মধ্যে ৯টির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’

অনুষ্ঠানে উপকারভোগীরা তাঁদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, কৃত্রিম অঙ্গ পাওয়ার ফলে তাঁরা আবার স্বাভাবিক চলাচল, আত্মনির্ভরতা ও আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন। এই ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রভাব পরিবার ও সমাজেও ছড়িয়ে পড়ছে।

গৃহস্থালি আয় স্থিতিশীল হওয়া ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির ফলে এর ইতিবাচক প্রভাব পরিবার ও সমাজে ছড়িয়ে পড়ছে—যা কমিউনিটির স্থিতিশীলতা ও সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করছে। এ সাফল্যের ধারাবাহিকতায় শেভরন বাংলাদেশ ও সুইসকন্টাক্ট এসএমআইএল প্রকল্পের মাধ্যমে টেকসই ও প্রভাবশালী উন্নয়ন উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে তারা অর্থোটিক ও প্রোস্থেটিক সহায়তা প্রয়োজন, এমন মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বাস্তব ও পরিমাপযোগ্য পরিবর্তন নিশ্চিত করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আরও ১৪ কোটি ১৫ লাখ ডলার কিনল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলো থেকে অতিরিক্ত ডলার ক্রয় করেছে। আজ সোমবার ১৩টি ব্যাংক থেকে প্রায় ১৪ কোটি ১৫ লাখ মার্কিন ডলার (১৪১.৫ মিলিয়ন) কেনা হয়েছে। ডলারের বিনিময়হার ছিল ১২২ দশমিক ২৯ থেকে ১২২ দশমিক ৩০ টাকা আর কাট-অফ রেট ছিল ১২২ দশমিক ৩০ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে, ১১ ডিসেম্বর ১৬টি ব্যাংক থেকে প্রায় ১৫ কোটি ডলার (১৪৯ মিলিয়ন) কেনা হয়েছিল। এ সময় প্রতি ডলারের বিনিময়হার ছিল ১২২ টাকা ২৫ পয়সা থেকে ১২২ টাকা ২৯ পয়সা। আর কাট-অফ রেট ছিল ১২২ টাকা ৯ পয়সা। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত নিলামপদ্ধতিতে মোট ২৮০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার (২.৮০ বিলিয়ন) সংগ্রহ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জানান, আজ ১৩টি ব্যাংক থেকে প্রায় ১৪ কোটি ১৫ লাখ মার্কিন ডলার কেনা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দিনে ১৭২৫০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিল সরকার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বাজার সহনীয় করতে পেঁয়াজের আমদানি আরও বাড়িয়েছে সরকার। আজ সোমবার থেকে দৈনিক ১৭ হাজার ২৫০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে; যা আগে ছিল ৬ হাজার টন করে।

আজ এক বিজ্ঞপ্তিতে কৃষি মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।

জানা যায়, চলতি মাসের শুরু থেকে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। তিন দিনের ব্যবধানে ১২০ টাকার পেঁয়াজের দাম বেড়ে ১৫০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৭ ডিসেম্বর থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া শুরু করে কৃষি মন্ত্রণালয়। শুরুতে প্রতিদিন ৫০ জন আমদানিকারককে ৩০ টন করে মোট ১ হাজার ৫০০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। দীর্ঘ তিন মাস পর এই অনুমোদন দেওয়া হয়।

তবে এরপরও বাজারে দাম না কমলে আমদানির অনুমতির পরিমাণ বাড়ানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমদানি আরও বাড়ানো হয়। ১৩ ডিসেম্বর থেকে প্রতিদিন ২০০ জনকে ৩০ টন করে ৬ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়, যা আজ থেকে আরও বাড়িয়ে ১৭ হাজার ২৫০ টন করা হয়।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে আজ বলা হয়, পেঁয়াজের বাজার সহনীয় রাখতে ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর দুই দিনের জন্য প্রতিদিন ৫৭৫টি করে আইপি (আমদানি অনুমতি) ইস্যু করা হবে। প্রতিটি আইপিতে আগের ন্যায় সর্বোচ্চ ৩০ টন পেঁয়াজের অনুমোদন দেওয়া হবে। আবেদনের বিষয় আগের ন্যায় বলবৎ থাকবে। অর্থাৎ গত ১ আগস্ট থেকে যেসব আমদানিকারক আমদানি অনুমতির জন্য আবেদন করেছেন, তাঁরাই কেবল এই দুই দিন আবেদন পুনরায় দাখিল করতে পারবেন। একজন আমদানিকারক একবারের জন্য আবেদনের সুযোগ পাবেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ উইংয়ের অতিরিক্ত উপপরিচালক (আমদানি) বনি আমিন খান বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পর আজ আমরা ৫৭৫ জনকে আমদানির অনুমোদন দিয়েছি। অনুমোদন নিয়ে এ দিন আমদানিকারকেরা ঋণপত্র খুলতে পেরেছেন। যদিও দুই দিনের কথা বলা হয়েছে, তবে সরকার প্রয়োজন মনে করলে সময় আরও বাড়বে। এর আগে গত শনিবার থেকে প্রতিদিন ৬ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দিয়ে আসছিলাম আমরা।’

দেশে সাধারণত প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেন ব্যবসায়ীরা। সে হিসাবে যেদিন ঋণপত্র খোলেন, সেদিনই আমদানি করতে পারেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত