Ajker Patrika

এগিয়ে চলার মাঝে থামাও জরুরি 

আবুল মোমেন
আপডেট : ২৭ জুন ২০২১, ১৪: ৪৬
এগিয়ে চলার মাঝে থামাও জরুরি 

এই বঙ্গের মানুষ বরাবর উদ্যোগী, প্রকৃতির খামখেয়ালির বিরুদ্ধে লড়াই করে তারা টিকে থাকে এবং সামান্য সুযোগকেও কাজে লাগিয়ে ভাগ্য ফেরাতে সক্ষম। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের এই বৈশিষ্ট্যের কথা প্রথম স্পষ্ট করে বলেছিলেন মনীষী হুমায়ুন কবির। এ দেশের প্রান্তিক মানুষ কৈবর্ত বা জেলে সম্প্রদায় সফল বিদ্রোহ করেছিল সেই দশম শতাব্দীতে। বিদ্রোহীরা শক্তিধর পাল রাজাকে যুদ্ধে হারিয়ে সিংহাসন দখল করেছিল, রাজ্যের বড় অংশই তাদের অধিকারে এসেছিল। দুই প্রজন্ম অন্তত রাজ্য দখলেও রেখেছিল। বাংলার বিখ্যাত বারভূঁইয়ারা ছিলেন আফগান ও রাজপুত অভিজাতদের বংশধর, কিন্তু তাদের বাহিনীতে দেশীয় মানুষের সমাগম ছিল যথেষ্ট। বিদ্রোহের ধারা মোগল আমলে বেড়েছিল। তখনকার অনেক কৃষক বিদ্রোহের খবর জানা যায়। আর ব্রিটিশ আমলে স্বাধীনতাসংগ্রামে বাঙালিরাই তো নেতৃত্ব দিয়েছে।

বাঙালি জীবনের বরাবরের সঙ্গী ছিল দারিদ্র্য, তার ওপর সেকালে মড়ক ও দুর্ভিক্ষের প্রকোপ ছিল বেশ। উর্বর ভূমির কৃষিকাজে ও নদীমাতৃক দেশের জেলেজীবনে কখনো দারিদ্র্য কাটেনি। বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির পালাবদল শুরু হয় ইউরোপে নৌ-বাণিজ্যের প্রসার থেকে, উন্নত নৌযান ও উন্নত অস্ত্রসমৃদ্ধ নৌবহর নিয়ে এতে এগিয়ে ছিল ইউরোপীয় বিভিন্ন জাতি। এর সঙ্গে যোগ হয় কয়লা-লোহাসহ মূল্যবান খনিজ আবিষ্কারের সুফল। এভাবে শক্তিধর ইউরোপ অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে সাম্রাজ্য বিস্তার করেও বিশ্বের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কেন্দ্র হয়ে ওঠে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক পালাবদলের সুযোগ ক্রমে অন্যদের জন্য খুলেছে প্রথম শিল্পবিপ্লবের পরে, তত দিনে তারা উপনিবেশের খাঁচায় বন্দী। তাই ঔপনিবেশিক নিগড় থেকে রাজনৈতিক মুক্তির জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে বিংশ শতাব্দীর ষাট-সত্তর দশক পর্যন্ত। এই তিন ক্ষেত্রে–রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক-মুক্তি ছাড়া কোনো জাতির প্রকৃত মুক্তি ও উন্নতি সম্ভব নয়।

বঙ্গবন্ধু একাত্তরের ৭ মার্চের ভাষণে যুগপৎ স্বাধীনতা ও মুক্তির কথা বলেছেন। ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’–এ কথা বলে তিনি রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক মুক্তির ইশারাই দিয়েছিলেন। সেই সময়ে পাকিস্তাানি অপশাসনের বিরুদ্ধে বাঙালি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উভয় শৃঙ্খল থেকে মুক্তির লড়াই করছিল। রাজনৈতিক সংগ্রামকে শাণিত করার জন্য দুই প্রদেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক বৈষম্য, বাংলা ও বাঙালির বঞ্চনা-উপেক্ষা এবং অর্থনৈতিক শোষণের কথা দৃষ্টান্তসহ তুলে ধরা হয়েছিল ৬ দফা ও ছাত্রদের ১১ দফায়। স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন, সেভাবে কর্মসূচিও ঘোষণা করেছিলেন। তবে তাঁর সময় গেছে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন ও অগ্রযাত্রার ভিত রচনায়। দুর্ভাগ্য দ্বিতীয় বিপ্লবের কাজ প্রবর্তনের আগেই তিনি সপরিবারে নিহত হলেন।

তারপরে টানা কুড়ি বছর চলেছে বায়ান্ন থেকে একাত্তর পর্যন্ত বহু মানুষের ত্যাগে অর্জিত রাজনৈতিক মুক্তির পথকে ভুল প্রমাণিত করে বিস্মৃতির গর্ভে ঠেলে দেওয়ার এবং দেশকে পাকিস্তানি রাজনৈতিক ভাবাদর্শে ফিরিয়ে নেওয়ার কাজে। মাঝে ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত শেখ হাসিনার সংক্ষিপ্ত শাসনকালে রাজনীতিকে সঠিক পথে ফেরানোর চেষ্টা শুরু হতে হতে সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তা ছাড়া, ক্ষমতার জন্য তখন থেকে যেসব আপস শুরু হয়েছিল, তার ফলে পূর্ণোদ্যমে রাজনীতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঢেলে সাজানো সহজ ছিল না। তার পরের বিএনপি-জামায়াত সরকার রাজনৈতিক অঙ্গনে পাকিস্তানি পন্থার গতি জোরদার এবং অর্থনীতিতে দেশকে পুঁজিবাদী ধারায় মুক্তবাজারের পথে চালিত করেছিল। সমাজতান্ত্রিক পথ ছেড়ে পুঁজিবাদের পথে যাত্রা বস্তুত জিয়ার আমল থেকেই শুরু হয়েছিল। বিশ্বায়নের বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ সরকারও সেই পথেই অর্থনীতির চাকা চালিয়ে নিচ্ছে।

পরবর্তী প্রযুক্তি ও শিল্পবিপ্লবের ফল আমাদের দেশের শিল্পায়নে খুব ব্যবহৃত না হলেও কৃষিতে তা দারুণ প্রভাব ফেলেছে এবং কৃষিপ্রধান দেশটি কৃষি উৎপাদনে চমকপ্রদ সাফল্য পেয়েছে। প্রধান খাদ্য চাল উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হলো, কৃষির বৈচিত্র্য বেড়ে সবজি, ফল এবং অন্যান্য শস্য উৎপাদনে বৈশ্বিক মানদণ্ডে দেশ উচ্চ অবস্থানে উঠেছে। প্রাণিজ আমিষ উৎপাদনেও আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ। মুক্তবাজারে অন্তত পোশাক খাতে বাংলাদেশের শক্ত অবস্থান রয়েছে। অর্থনীতিতে যুক্ত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারে কর্মরত অদক্ষ শ্রমিকদের পাঠানো টাকা। মূলত কৃষিসহ এই তিনের ওপর ভর করে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিকশিত হয়েছে। বলা বাহুল্য অন্যান্য খাতও ক্রমে বেড়েছে। অর্থনৈতিক অগ্রগতির চিত্র ধরা পড়ে দেশীয় উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার সমন্বয় থেকে। এই উন্নয়নের প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন সামাজিক খাতেও–গড় আয়ু বৃদ্ধি, মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস, টিকা কার্যক্রম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, সুপেয় পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার ব্যবস্থাপনার বিস্তার ইত্যাদিতে।

জনসংখ্যাবহুল ও ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়া সত্ত্বেও করোনার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ অনেক উন্নত দেশের তুলনায় ভালো করেছে। এসব উন্নয়ন ও সক্ষমতা থেকে বোঝা যায়, এ দেশের মানুষ তার মৌলিক বৈশিষ্ট্য উদ্যমশীলতা কখনো হারায়নি। রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া বা অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি অর্জনে নতুন প্রযুক্তির সদ্ব্যবহারে, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও সুযোগ গ্রহণে এই উদ্যমী মনোভাবের প্রকাশ বারবার দেখা গেছে। বাংলাদেশ এগিয়েছে, এগিয়ে যাচ্ছে–এ বিষয়ে সন্দেহ নেই।

তারপরও অনেক পথচলা বাকি। যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের দৃষ্টান্ত আমরা দিয়েছি, তাকে যথেষ্ট টেকসই কি বলা যাবে? কারণ, যে তিনটি মূল খাতের কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে দুটি সম্পূর্ণই অন্যের চাহিদা ও বাস্তবতার ওপর নির্ভরশীল। তৈরি পোশাক খাতে প্রথমত প্রতিযোগিতা প্রবল, দ্বিতীয়ত, এর চাহিদা ও মূল্য ক্রেতার নানান শর্তের ওপর নির্ভরশীল। মুনাফা নিশ্চিত নয়, সরকারের নানা বদান্যতা-সহায়তা এখনো প্রয়োজন হচ্ছে। নিজস্ব পুঁজির বদলে থাকতে হচ্ছে ব্যাংকের অর্থায়নের নির্ভরতায়। এ সূত্রে ঋণখেলাপি সংস্কৃতির কথাও মনে রাখতে হবে, যা শিল্পায়নের দুর্বলতাই প্রকাশ করে। বিদেশে অদক্ষ শ্রমিকেরা মূলত নানা নির্মাণকাজের সস্তা শ্রমিক। এ জীবন মানবেতর, ব্যক্তি ও দেশের জন্য অমর্যাদার। তদুপরি যেকোনো সময় নির্মাণের গতি স্তিমিত হবে। এ সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলার জন্য আমরা শ্রমজীবী মানুষের বহুমুখী কর্মে দক্ষতা অর্জনের উপযোগী কোনো প্রকল্প হাতে নিইনি। বিশ্বায়নের যুগে কাজের বিশ্ববাজার নিশ্চয় থাকবে, হয়তো তার বিস্তারও ঘটবে, কিন্তু কর্মীর চাহিদায় অদক্ষতার কোনো স্থান আর তখন থাকবে না, এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়। আমাদের শিক্ষার সংখ্যাগত বিস্তার ঘটলেও বিশ্ববাজারের মান বিবেচনায় তা অনেক পিছিয়ে, ক্ষেত্রবিশেষে তামাদি হয়ে রয়েছে। কৃষি উৎপাদনে সমৃদ্ধি ঘটলেও এখানে সংকট হলো বাজারজাতকরণ-বিপণন ব্যবস্থা ভঙ্গুর, ফড়িয়াদের দাপটে পুঁজি পুনরুদ্ধার অনিশ্চিত এবং রাজনৈতিক বখাটেদের উৎপাতে পুরো ব্যবস্থাই দুর্নীতিগ্রস্ত। ফলে মূল উৎপাদক সচ্ছলতা অর্জন করে সত্যিকারের খামারি-উৎপাদক হতে পারছে না। অর্থনৈতিক বিবেচনায় দেশে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান বেড়েই চলেছে। আর এই অতিমারির সময় দ্রুত দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধিতে স্পষ্ট হলো অর্থনীতির ভিত কত নাজুক। এই দুর্বলতাগুলো সহজে কাটবে বলে মনে হয় না, কারণ সামাজিক বেশ কিছু সূচকে চমকপ্রদ অগ্রগতি ঘটলেও শিক্ষার দুর্গতি, রাজনৈতিক অবক্ষয় এবং শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা ও দুর্নীতিগ্রস্ততা সমাজকে পিছু টানছে। আইনের শাসনের ভিত্তিই হলো রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গ ও প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু বিকাশ, পরিণত নিরপেক্ষ আচরণে সমাজের দৃঢ় ভিত অর্জন। একমাত্র পদ্ধতির দক্ষতা-কার্যকারিতাই ধীরে ধীরে দুর্নীতির ফাঁকগুলো ভরাট হতে পারে। কিন্তু দেশের কোনো প্রতিষ্ঠানই এমন লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে না, তাই সেভাবে বিকশিতও হচ্ছে না।

শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে নীতিনির্ধারকদের বিভ্রান্তি সব শুভ প্রয়াস বানচাল করে দেয়। তদুপরি গত শতকের আশির দশক থেকে ইসলামি মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের উত্থান এবং বিপরীতে প্রগতিশীল চেতনার অবক্ষয়ের প্রেক্ষাপটে সামগ্রিকভাবে সমাজচেতনা রক্ষণশীল অচলায়তনে বাধা পড়েছে। এতেও শিক্ষাঙ্গনে মুক্ত, সৃজনশীল বাতাবরণ সৃষ্টি কঠিন হয়ে পড়েছে। এর জন্য বাড়তি চাপ, বিশেষত রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও সে অনুযায়ী সরকারের উদ্যোগী ভূমিকা প্রয়োজন। তার ঘাটতি চোখে পড়ার মতো।
সব মিলিয়ে যুগোপযোগী মানবসম্পদ সৃষ্টিতে দেশ পিছিয়ে পড়ছে। সামাজিক নৈতিকতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা অধরাই থেকে যাচ্ছে, কারণ উভয় ক্ষেত্রে শাসকের চেয়েও শাসিত নাগরিকের অগ্রণী ভূমিকাই জরুরি। এদিকে বাংলাদেশ ভূখণ্ডটি ভূমি ও জলবায়ুগত অনিশ্চয়তার মধ্যে তার বিপুল জনগণকে কোনো কালেই লালন-ধারণ করতে পারেনি। এখান থেকে মানুষ পার্শ্ববর্তী নানা অঞ্চলে সব সময় ছড়িয়ে পড়েছিল, আজও পড়ছে। কিন্তু যুগের দাবি হলো নতুন বাস্তবতায় যে কর্মজগৎ সৃষ্টি হয়েছে, তার জন্য উপযুক্ত জনশক্তি যাদের ভাষা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা, ব্যবহারিক ও আচরণগত সংস্কৃতির নতুন উন্নত ধরন চাই। অদক্ষ শ্রমজীবীর চাহিদা ক্রমেই কমতে থাকবে।
মানবসভ্যতা স্থাণুও নয়, নিখিল বিশ্ব একরকমও নয়, মানুষের মতোই তা পরিবর্তনশীল। তাই এখানে কালের গতি-প্রকৃতি বোঝা, গুরুত্ব ও ভরকেন্দ্র চেনা আর সমকালের দাবির অগ্রাধিকার নির্ণয়ে সক্ষমতা জরুরি। এই জটিল বাস্তবতায় জাতীয় বিবেচনায় কোন অগ্রগতিটি আপাত, মেকি–তা প্রায়ই বোঝা যায় না। চূড়ান্ত বিচারে আদত অগ্রগতি চেনা ও তার পথ নিশ্চিত করাই যথার্থ নেতৃত্বের আসল কাজ। আর অগ্রগতি মানে কেবল এগিয়ে চলা নয়, মাঝে মাঝে থামাও এর অঙ্গ, থেমে বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন জরুরি। তারপর আবার পথচলা। থেমে যে কাজ তার গুরুত্ব চলার চেয়ে কম নয়, কারণ এতেই বেপথে যাওয়ার ভুল এড়ানো যায়। 

আবুল মোমেন, সাংবাদিক, কবি, প্রাবন্ধিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাশিয়াকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নিতে বলছে তুরস্ক, কিন্তু কেন

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন

গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেটের মতো আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ক্যাশলেস সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এসব বিষয়ে প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেট জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সালের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক নাদিম নেওয়াজ।

নাদিম নেওয়াজ
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১৮: ৪৮
গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।

জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?

জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।

প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।

পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?

জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।

প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।

এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?

জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাশিয়াকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নিতে বলছে তুরস্ক, কিন্তু কেন

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন

নিরাপত্তা ও সেবায় মার্কেট শেয়ারে এগিয়ে সিটি ব্যাংক

দেশের ক্রেডিট কার্ড বাজারে সিটি ব্যাংক এক নির্ভরযোগ্য নাম, বিশেষ করে একমাত্র আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) ক্রেডিট কার্ড ইস্যু এবং অ্যাকুয়ারের ক্ষেত্রে। উদ্ভাবন এবং গ্রাহককেন্দ্রিক সেবা দিয়ে নেতৃত্বের আসন মজবুত করেছে। এ বিষয়ে ব্যাংকটির কার্ড বিভাগের প্রধান তৌহিদুল আলমের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান নূর।

আসাদুজ্জামান নূর
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১৮: ৪৮
তৌহিদুল আলম
তৌহিদুল আলম

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?

তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।

এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?

তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।

ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?

তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।

মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?

তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাশিয়াকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নিতে বলছে তুরস্ক, কিন্তু কেন

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন

১৫০০‍-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে সুবিধা দেয় ঢাকা ব্যাংক

ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার মাহফুজুল ইসলাম

মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১৮: ৪৯
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।

অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।

দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।

গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।

ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাশিয়াকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নিতে বলছে তুরস্ক, কিন্তু কেন

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন

মাস্টারকার্ডেই সহজ ও নিরাপদ লেনদেন

বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার জয়নাল আবেদীন খান

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১৮: ৫০
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।

গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।

দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।

নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।

মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।

মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।

গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।

ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাশিয়াকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নিতে বলছে তুরস্ক, কিন্তু কেন

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত