Ajker Patrika

সংকটে বেহুলার লাচারি

শরীফ নাসরুল্লাহ, ঢাকা
আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২৫, ০৭: ৪৯
টাঙ্গাইলে বেহুলার লাচারি পরিবেশন করেন স্থানীয় লোকশিল্পীরা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: সংগৃহীত
টাঙ্গাইলে বেহুলার লাচারি পরিবেশন করেন স্থানীয় লোকশিল্পীরা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গাইলের নাম শুনলে চোখে ভাসে তাঁত। জিভে জল আনে পোড়াবাড়ীর চমচম। কিন্তু ১৫টির বেশি নদী জড়িয়ে রেখেছে এই জনপদ। যমুনা, ধলেশ্বরী, বংশী, পুংলী, ঝিনাই, এলংজানি, হাওয়া—কত বাহারি নাম। জলমগ্ন এই ভূমির মানুষের জীবন জলের সঙ্গে জুড়ে গেছে। জলের সঙ্গে আছে সাপের যোগ। সাপের সঙ্গে বাঙালির জীবনের যে সম্পর্ক, তার দারুণ উদাহরণ এই টাঙ্গাইল। শ্রাবণে সাপকে কেন্দ্র করে কৃত্যে আর নৃত্যে বর্ণিল হয়ে ওঠে এই জনপদ।

‘শাওনে ডালা’ কিংবা ‘বেহুলার লাচারি’ টাঙ্গাইলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। ইউনেসকো এই ঐতিহ্যকে ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ হিসেবে তালিকাভুক্ত করার সংকেত দিয়েছে। মনসামঙ্গলের বিখ্যাত কাহিনি বেহুলা-লখিন্দরকে উপজীব্য করে এই কৃত্য ও সাংস্কৃতিক আয়োজন চলে শ্রাবণ মাসব্যাপী।

জাতীয় জাদুঘরের ওয়েবসাইট বলছে, পনেরো শতাব্দী থেকে এই অঞ্চলে শাওনে ডালা বা বেহুলার লাচারির চর্চা হয়ে আসছে। শ্রাবণ মাসের প্রথম দিন ঘট স্থাপনের মাধ্যমে এ উৎসব শুরু হয়। শ্রাবণের শেষ দিন গান ও নাটকের আবহে সাত ঘাটে মনসাকে নৈবেদ্য দেওয়ার মধ্য দিয়ে এই উৎসব শেষ হয়। এ দিন সপ্তম ঘাটে মঞ্চস্থ হয় বেহুলা-লখিন্দর লোক-নাট্যাংশ। এতে অংশ নেন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে স্থানীয় মানুষেরা। এই কৃত্যের অনুপ্রেরণা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জীবনাচরণ থেকে উঠে এলেও, এই আয়োজনে যাঁরা অংশ নেন তাঁদের বেশির ভাগ মুসলমান।

এ বছর শাওনে ডালা বা বেহুলার লাচারি শুরু হবে ১৬ জুলাই। শ্রাবণের শেষ দিন টাঙ্গাইলের বিভিন্ন নদীতে সাত ঘাটে ভোগ দিয়ে জিয়ন্তি আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। এটিকে কেন্দ্র করে এখন প্রস্তুতি নিচ্ছে ১০টির অধিক দল। উল্লেখযোগ্য হলো—মনির অপেরা, ভাই-বোন যাত্রাপালা, মায়ের দোয়া যাত্রাপালা, ভাই ভাই বেহুলা পালা, সুজন বন্ধু যাত্রাপালা, একডালা যাত্রাপালা, নূরনবী যাত্রাপালা, গণেশবাবু নাট্য অভিনয় গোষ্ঠী, শাখারিয়া বেহুলার লাচারি গোষ্ঠী, লালমিয়া শিল্পসংঘ ইত্যাদি।

দলনেতা ও দলগুলোর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বংশ পরম্পরা, গুরু-শিষ্য কিংবা একেবারে নিজের শিল্পক্ষুধা থেকে এই কৃত্যের সঙ্গে জড়িয়েছেন শিল্পীরা। আবার কেউ কেউ সাপের বিষ ঝাড়ার ওঝা। এক দিকে ওঝা, অন্য দিকে তিনি শিল্পী। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নয়ন, বিনোদনের অবাধ প্রবাহে ধীরে ধীরে এখান থেকে সরে আসছেন শিল্পীরা। এক দিকে অর্থনৈতিকভাবে তাঁরা ক্ষতির শিকার; অন্য দিকে নবীন শিল্পীর অভাবে দলগুলোতে পরম্পরা ধরে রাখা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

মনিকা অপেরা যাত্রা ক্লাব ও সাজঘরের কর্ণধার মো. মনির। তিনি বলেন, ‘আমি ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় এলেঙ্গাতে যাত্রা এসেছিল। সেটা দেখে যাত্রা শিখেছি। এরপর আমি ১০-২০টি দলে কাজ করেছি। ১৯৯৩ সালে নিজের দল বানাই। ১৭ বছর ধরে আমি কাজ করি। অভিনয় করি বেহুলার চরিত্রে।’

মনির আরও বলেন, ‘পেশায় আমি কবিরাজও। বিষ নামাই। আর শ্রাবণে নদীতে নৌকা ভাসিয়ে কলার খোলে দুধ-কলা ইত্যাদি দিয়ে ভোগ দিই। শ্রাবণ মাসে শাওনে ডালা করি। কিন্তু এটা করতে অনেক কষ্ট হয়। একটা নৌকা ভাড়া করতে লাগে ১৭ হাজার টাকা। আরও নানা কিছু জোগাড় করতে ৫০-৬০ হাজার টাকা খরচা হয়। সাধনা থেকে কিছু সহযোগিতা করা হয়। এ ছাড়া কেউ সহযোগিতা করে না।’

মনিরের বক্তব্য, এই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে হলে আর্থিকভাবে শিল্পীদের সামর্থ্য বাড়ানো প্রয়োজন। এখানে সবাই গরিব। যাত্রাপালা করেই দিন চলে।

শুধু আর্থিক নয়, মাঝে মাঝে সামাজিকভাবেও হেয় প্রতিপন্ন হতে হয় শিল্পীদের। গণেশবাবু নাট্য-অভিনয় গোষ্ঠীর মালিক নুরুন্নবী। পেশায় বেসরকারি চাকরিজীবী হলেও শিল্পীজীবন ছাড়তে পারেননি। শাওনের ডালায় তিনিও অংশগ্রহণ করেন। নিজের বাবাকে দেখে তিনি শিল্পী হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন। পরে তিনি ও তাঁর বড় ভাই এই দলের হাল ধরেন।

নুরুন্নবী বলেন, ‘আমি ২০ বছর ধরে এই আয়োজনের সঙ্গে জড়িত। আমার রক্তে মিশে গেছে। আমরা মুসলমান। অনেকে বলে, এটা করা পাপ, কইরো না। তবে কেউ বাধা দেওয়ার সাহস করে না। কিন্তু আর্থিকভাবে আমরা দুর্বল।’

জানা গেছে, একসময় গুরু-শিষ্য কিংবা বংশ পরম্পরায় শিল্পী তৈরি হলেও এখন এই ধারা কমে যাচ্ছে। শিল্পীদের বক্তব্য, পরবর্তী প্রজন্মের হাতে এই ঐতিহ্য রেখে যেতে তাঁদের দরকার সামাজিক সমর্থন। পরিবেশনায়ও এসেছে পরিবর্তন। কেউ কেউ চকমকে কিংবা সিনেমার পোশাক ঢুকিয়েছে। আগে পুরুষেরাই নারী সেজে অভিনয় করত। এটাই এই পরিবেশনার চল। কিন্তু এখন দর্শকদের মনোরঞ্জনের জন্য তরুণীদের আনা হয়েছে। এসব কারণে এই ঐতিহ্যের প্রকৃত পরিচয় হারিয়ে যেতে বসেছে বলে মনে করছেন শিল্পীরা। তবে সম্প্রতি ইউনেসকো ঐতিহ্যটি নিয়ে কাজ করার ইঙ্গিত দিয়েছে। সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান সাধনা বলছে, ২০০২ সাল থেকে লুবনা মারিয়াম এই ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করছেন। ২০১০ সালে ইউনেসকোর কাছে ইনটেনজিবল হেরিটেজ হিসেবে আবেদন করা হয় জাতীয় জাদুঘরের সহযোগিতায়। ২০২২ সালে ইউনেসকো কাজ করতে আগ্রহী হয়। ২০২৫ সালে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ওয়ার্কশপের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই যাত্রা। পুরো কাজটিতে সহযোগিতা করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্রতী।

সাধনার কো-অর্ডিনেটর লাবন্য সুলতানা বলেন, ‘শাওনে ডালা প্রান্তিক পর্যায়ের ঐতিহ্য। ইউনেসকোর সহযোগিতায় এটি নিয়ে আমরা কাজ করছি। ইতিমধ্যে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ওয়ার্কশপ আয়োজন করেছি। আমাদের ইচ্ছা, এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে সহযোগিতা করা এবং বিশ্বের কাছে তুলে ধরা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কেরানীগঞ্জে মাদ্রাসায় বিস্ফোরণ: সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় রিমান্ডে ৬

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় মাদ্রাসা ভবনে বিস্ফোরণ। ফাইল ছবি
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় মাদ্রাসা ভবনে বিস্ফোরণ। ফাইল ছবি

ঢাকার কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদে মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধারের ঘটনায় ছয়জনকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুর রহমান এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রিমান্ডে নেওয়া ছয়জন হলেন—শাহিন ওরফে আবু বকর ওরফে মুসা, মো. আমিনুর ওরফে দরজি আমিন, মো. শাফিয়ার রহমান ফকির, আছিয়া বেগম (পলাতক আসামি ও ওই মাদ্রাসার পরিচালনার দায়িত্বে থাকা আল আমিনের স্ত্রী), ইয়াসমিন আক্তার ও আসমানী খাতুন ওরফে আসমা। তাঁদের মধ্যে পুরুষদের ৭ দিন করে এবং নারী আসামিদের ৩ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।

হাসনাবাদের চার কক্ষের একটি একতলা বাড়ি ভাড়া নিয়ে পরিচালিত উম্মাল কুরা ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসায় গত শুক্রবার সকালে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। এতে দুটি কক্ষের দেয়াল ও ছাদের একাংশ ধসে পড়ে। আহত হন চারজন। পুলিশ সেখান থেকে ককটেল, রাসায়নিক, বোমা তৈরির বিপুল সরঞ্জাম উদ্ধার করে।

ওই মাদ্রাসার পরিচালক শেখ আল আমিন স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে বাড়িটির একটি কক্ষে থাকতেন। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক। জেএমবির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তিনি ২০১৭ ও ২০২০ সালে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

মাদ্রাসায় বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশ শনিবার ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে পুলিশ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক মো. জহুরুল ইসলাম গ্রেপ্তার ছয়জনকে আজ আদালতে হাজির করে প্রত্যেকের ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, গ্রেপ্তার আসমানী খাতুন এর আগেও জঙ্গিসম্পৃক্ততার অভিযোগে কারাগারে ছিলেন। শাহিনের বিরুদ্ধেও নাশকতার মামলা রয়েছে।

শুনানির সময় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন আল আমিনের স্ত্রী আছিয়া বেগম। তিনি দাবি করেন, তাঁর স্বামী এক বছর ধরে তাঁর সঙ্গে ছিলেন না। স্বামী তাঁকে নির্যাতন করতেন। স্বামী অপরাধ করে থাকতে পারেন, কিন্তু তাঁরা নির্দোষ। তাঁর (আছিয়ার) ভাইয়ের স্ত্রী আসমানী শুধু তাঁদের দেখতে এসে গ্রেপ্তার হয়েছেন।

এ মামলায় আসমানী খাতুন ছাড়া অন্য আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। আসমানীর আইনজীবী আদালতে বলেন, আগের মামলায় কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি বলেই আসমানী খাতুন খালাস পেয়েছিলেন। এ জন্য তাঁকে এই মামলায় রিমান্ডে নেওয়ার মতো উপাদান নেই। এ ঘটনার সঙ্গেও তাঁর সম্পৃক্ততা নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

টাঙ্গাইল-১ আসনে জামায়াতের প্রার্থী পরিবর্তন

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি 
মোহাম্মদ আব্দুল্লাহেল কাফী। ছবি: সংগৃহীত
মোহাম্মদ আব্দুল্লাহেল কাফী। ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। এই আসনে অধ্যক্ষ মোন্তাজ আলীকে পরিবর্তন করে মোহাম্মদ আব্দুল্লাহেল কাফীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।

আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) মধুপুর উপজেলা জামায়াতের আমির মো. আবদুল কাদির এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে নির্বাচনী বিধিমালার শর্তের ব্যত্যয় ঘটায় এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।

জানা গেছে, টাঙ্গাইল জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য ও মধুপুর সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. মোন্তাজ আলীকে দলের পক্ষ থেকে টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তিনি উভয় উপজেলায় স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে ব্যাপকভাবে জনসংযোগও করেন। কিন্তু মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে তা পূরণের সময় নির্বাচনী বিধিমালার শর্ত অনুসরণ করতে গিয়ে বিষয়টি নজরে আসে।

মধুপুর উপজেলা জামায়াতের আমির মো. আবদুল কাদির জানান, নির্বাচনী বিধিমালা অনুসারে সরকারি চাকরিজীবীরা নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে অবসরের তিন বছর সময় অতিবাহিত হতে হয়। কিন্তু অধ্যক্ষ মো. মোন্তাজ আলী মধুপুর সরকারি কলেজ থেকে অবসর নেওয়ার পর তফসিল ঘোষণার দিন পর্যন্ত তাঁর সময় হয়েছে ২ বছর ৭ মাস। এই জটিলতার কারণে মনোনয়নঝুঁকি এড়াতে নতুন প্রার্থী দেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বসুন্ধরা থেকে চীনা নাগরিকের মরদেহ উদ্ধার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর ভাটারা থানার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে এক চীনা নাগরিকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত ব্যক্তির নাম ওয়াং পিং লিউ। তিনি ঢাকায় কেমিক্যালের ব্যবসা করতেন বলে জানা গেছে। বর্তমানে তাঁর মরদেহ এভারকেয়ার হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। পরিবার এলে তাদের চাওয়া অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, গতকাল শনিবার দুপুরে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার জি-ব্লকের ২৩ নম্বর সড়কের ৭৫৭ নম্বর বাসা থেকে তাঁর মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।

আজ রোববার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মো. আসাদুজ্জামান এ ঘটনার বিষয়ে বলেন, ‘মৃত ওয়াং পিং লিউ একটি ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন। তাঁর পরিবার চীনে থাকে। গতকাল তাঁর স্ত্রী তাঁকে ফোনে পাচ্ছিলেন না। এরপর তিনি বিষয়টি বাংলাদেশের চীনা দূতাবাস ও মৃত ওয়াংয়ের ব্যবসায়িক পার্টনারকে জানান। এরপর বাড়িওয়ালা, ব্যবসায়িক পার্টনার ও পুলিশ গিয়ে তাঁকে একটি কক্ষের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন।’

এসি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘তিনি আগেই মারা গিয়েছিলেন। পরে তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরাও জানান, তিনি অনেক আগেই মারা গেছেন। তবে কী কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, এখনো জানা যায়নি। জানতে পেরেছি, তাঁর ডায়াবেটিসহ আরও কিছু রোগ ছিল। তাঁর শরীরে কোনো জখম পাওয়া যায়নি। আমরা বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। সেখানেও সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি। তবে আমরা বিষয়টি বিস্তারিত তদন্ত করে দেখছি।’

মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ‘আজ মৃত চীনা নাগরিকের স্বজনদের ঢাকায় আসার কথা ছিল। তবে রাত ৯টা পর্যন্ত তাঁরা কেউ যোগাযোগ করেননি। দূতাবাসকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। স্বজনেরা এলে তাঁদের চাওয়া অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইমাউল হক বলেন, মৃত চীনা নাগরিক দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে ব্যবসা করছেন। তাঁর মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখার চেষ্টা চলছে। পরিবার ময়নাতদন্ত করতে চাইলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মুনাফিকি না করলে ৮ দলের ঐক্য অটুট থাকবে: ফয়জুল

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
বরিশাল-৫ আসনে সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের মনোনয়নপত্র জমা। ছবি: আজকের পত্রিকা
বরিশাল-৫ আসনে সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের মনোনয়নপত্র জমা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মুনাফিকি না করলে ৮ দলের ঐক্য অটুট থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম। আজ রোববার জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে বরিশাল-৫ আসনের মনোনয়নপত্র জমা শেষে তিনি এই মন্তব্য করেন।

সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ৮ দলের (বর্ধিত হয়ে ১০ দল) এক ব্যালট এক বাক্স নীতি অটল রয়েছে। কেউ যদি মুনাফিকি না করে কিংবা ক্ষমতার লোভে না পড়ে, তাহলে এই ঐক্য অটুট থাকবে।’

জোট ও আসন বণ্টন প্রসঙ্গে ফয়জুল করীম বলেন, ‘অনেকে আমাদের কাছে প্রশ্ন করে, জামায়াত কি আমাদের আসন ছেড়ে দেবে? এটি ভুল প্রশ্ন। এখানে কেউ কাউকে সিট দেবে না। আমরা অ্যালায়েন্স করব। যার যেখানে অবস্থান ভালো, সে সেখানেই নির্বাচন করবে।’

উল্লেখ্য, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখন পর্যন্ত ৪৭ জন প্রার্থী মোট ৪৯টি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তাঁদের মধ্যে দুজন প্রার্থী তিনটি করে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন বলে জানান জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম সুমন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত