Ajker Patrika

সিসিক নির্বাচন: আরিফুলের ‘হ্যাটট্রিক মিশনে’ বাধা দলীয় সিদ্ধান্ত

ইয়াহ্ইয়া মারুফ, সিলেট
সিসিক নির্বাচন: আরিফুলের ‘হ্যাটট্রিক মিশনে’ বাধা দলীয় সিদ্ধান্ত

সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) টানা দুবারের মেয়র বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। আসছে নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও মেয়রের চেয়ারে বসলে দুটিই হবে তাঁর হ্যাটট্রিক। সিসিক নির্বাচনের মনোনয়ন দাখিল ২৩ মে, প্রত্যাহার ১ জুন ও ভোটগ্রহণ ২১ জুন। সময় মাত্র আড়াই মাস। তফসিল ঘোষণার পরপরই চাঙা হয়ে উঠেছে নগরে ভোটের রাজনীতি। চায়ের দোকান থেকে সর্বত্রই শুরু হয়েছে আলোচনা। বর্তমান মেয়র বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর হ্যাটট্রিক নাকি নতুন মুখ বসছেন নগর পিতার আসনে। তবে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কিত সাধারণ মানুষ। 

অবশ্য, দু-তিন মাস আগেই মাঠে নেমেছেন সম্ভাব্য মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তাঁদের ব্যানার, পোস্টার, বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে নগর। তবে জাতীয় পার্টির দুজন ছাড়া মেয়রপদে প্রচার চালানো সবাই আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। এবার আওয়ামী লীগের নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতার মধ্যে নীরব বিএনপি। নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে বিএনপিতে ভর করছে এই নীরবতা। আরিফুল হক চৌধুরীর ‘হ্যাটট্রিক মিশনে’ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দলীয় সিদ্ধান্ত। এই অবস্থায় সরব আওয়ামী লীগে নির্বাচনী প্রচারণাও একতরফা দেখা দিয়েছে। সিসিকের সর্বশেষ দুই নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হন আরিফুল হক চৌধুরী। পুরো সময়টাই নগরবাসীর ‘খোঁড়াখুঁড়িজনিত’ ভোগান্তি হলেও বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে আরিফের জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে দাবি সমর্থকদের। তবে এবার বিএনপির পক্ষ থেকে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সরকার পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। 

এই অবস্থায় আগামী নির্বাচনে মেয়র পদে আরিফের প্রার্থিতার ক্ষেত্রে দলীয় দোলাচলে রয়েছে নানা আলোচনা। সিটি নির্বাচনে আরিফুল প্রার্থী হবেন কি না, এ নিয়েও চলছে জল্পনা-কল্পনা। ভেতরে-ভেতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার খবর পাওয়া গেলেও এ বিষয়ে কৌশলী অবস্থানে রয়েছেন আরিফুল। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের বিষয়ে দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’

এদিকে গত রোববার মেয়র আরিফুল যুক্তরাজ্য সফরে গেছেন। নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার ঠিক আগমুহূর্তে মেয়রের হঠাৎ লন্ডন যাওয়া নিয়েও চলছে নানা আলোচনা। সিসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল আলিম শাহ বলেন, ‘মেয়রের এই সফর একান্ত ব্যক্তিগত। মেয়েকে দেখতে এবং মেয়ের শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে মেয়র এক সপ্তাহের মতো লন্ডনে অবস্থান করবেন।’ 

আরিফ-ঘনিষ্ঠ দলীয় সূত্র জানায়, সিসিক মেয়র বিএনপির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে লন্ডন গেছেন। নির্বাচনে তাঁর প্রার্থিতার বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও দলীয় হাইকমান্ডের সিগন্যাল পাওয়ার লক্ষ্যে তাঁর এই সফর। তারেক রহমানকে বাস্তবতা বোঝানোর চেষ্টা করবেন। ১০ বছরে তাঁর উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে দলের সিদ্ধান্ত নিজের পক্ষে আনার চেষ্টা করবেন। 

তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার বিষয়ে আরিফের জন্য আলাদা কোনো সিদ্ধান্ত হবে না। তাঁর রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের দাবি, ‘তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেন না। জেলে থাকাকালীন বড় বড় অফার পেয়েছিলেন; দলের সঙ্গে বেইমানি করে সেগুলো গ্রহণ করেননি। মেয়র হওয়ার জন্যও দলের বাইরে যাবেন না। এই সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না-এই কথায় দল অনড়। সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অর্থ এই নির্বাচন কমিশনকে স্বীকৃতি দেওয়া। তাই লন্ডন থেকে সুখবর না আসার কথাই উচ্চারিত হচ্ছে বেশি।’ 

আরিফ-ঘনিষ্ঠ নগর বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ দুজন নেতা বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরাও আরিফুলকে নির্বাচন না করার পরামর্শ দিয়েছি। লন্ডন থেকে ফেরার পর সিদ্ধান্ত কী হবে জানি না। যতটুকু বুঝেছি, তিনিও আমাদের সঙ্গে একমত। দলের কোনো ‘গ্রিন সিগন্যাল’ ছাড়া তিনি নির্বাচনে যাবেন না। ”

তবে আরিফুলের পরিবারের ঘনিষ্ঠ লোকজন জানান, বিএনপির চলমান আন্দোলনে সক্রিয় থাকলেও ভেতরে-ভেতরে নিজের মতো করে নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন আরিফ। শেষ সময়ে তিনি অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেবেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের এটি বুঝিয়ে শেষ মুহূর্তে তিনি নির্বাচনে রাজি করাতে পারেন অথবা শীর্ষ নেতাদের সম্মতি নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীও হতে পারেন। 

বিএনপির নেতাকর্মীর দাবি, সিলেট সিটিতে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রার্থী ছিলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রয়াত মেয়র প্রয়াত বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। ২০১৩ ও ২০১৮ সালে কামরানকে হারিয়েই মেয়র নির্বাচিত হন আরিফ। ২০২০ সালে কামরানের মৃত্যুর কারণে এবার সিলেটে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী কোনো প্রার্থী নেই। ফলে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আরিফের জয় অনেকটাই সহজ হবে। 

সবকিছুই যথাসময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে জানিয়ে আরিফের ঘনিষ্ঠ লোকজন জানান, সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চাচ্ছেন আরিফ। বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নিলে এবং মনোনয়নপ্রাপ্তি নিশ্চিত হলে সিটি নির্বাচনে আরিফ অংশ নিতে নাও পারেন। রাজনৈতিক জীবনে তিনি কখনো দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেননি। এবারও করবেন না, তাই স্বতন্ত্রপ্রার্থী হওয়ারও সম্ভাবনা নেই বলে দাবি, আরিফ বলয়ের দলীয় নেতাদের। আরিফুল বলেন, ‘দল এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তা ছাড়া আমরা এখন সরকার পতনের দাবিতে আন্দোলনে রয়েছি। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হবে না।’ 

এদিকে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে আরিফই মনোনয়ন পাবেন, তাও নিশ্চিত নয়। মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে এখানে একাধিক নেতা তৎপর আছেন। তবে জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার বিবেচনায় আরিফুলের বিকল্প নেতা বিএনপিতে খুব একটা নেই বলেও নগরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে আলোচনা আছে। আরিফুলের বিকল্প না থাকলেও দলে তাঁর বিরোধী শক্তির অবস্থান অত্যন্ত পাকাপোক্ত। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট-১ (নগর ও সদর) আসন থেকে বিগত সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরের সঙ্গে আরিফুলের ‘নীরব যুদ্ধ’ চলছে বলে রাজনীতির মাঠে প্রচলিত আছে। তাই বিএনপি নির্বাচনে এলেও আরিফুল যেন মনোনয়ন না পান, এ নিয়ে বিপক্ষ বলয়ের নেতারা স্বাভাবিকভাবেই তৎপর থাকবেন। 

সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, ‘সিসিকের বর্তমান মেয়র বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা। অবশ্যই তিনি দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মেনে চলবেন। আমরা বিশ্বাস করি আরিফুল দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেন না। দল নির্বাচনে গেলে আমিসহ অনেকেই মনোনয়নপ্রত্যাশী। সর্বশেষ দল যাকেই মনোনয়ন দেবে, আমরা দলের প্রতীককে বিজয়ী করতে মাঠে নামব।’ 

আরিফুলের ঘনিষ্ঠ লোকজন বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা ও তারেক রহমানের কাছ থেকে নির্বাচন শেষে দলে ফেরার নিশ্চয়তা পেলে স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। নাগরিক কমিটির ব্যানারে নির্বাচনেরও সব প্রস্তুতি রয়েছে তাঁর। তবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে আরিফুলের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। বিদেশ সফর শেষে দেশে ফিরলে আগামী সপ্তাহেই বিষয়টি ক্লিয়ার করবেন মেয়র।’ 

বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন জীবন বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে তিনি যাবেন, এমনটা আমরা চিন্তাও করি না। আর দল সিদ্ধান্ত নিলে আরিফুল শুধু হ্যাটট্রিক নয়, সিলেটকে আরও ইতিবাচক পরিবর্তন করার সুযোগ পাবেন।’ 

নির্ভার আওয়ামী লীগে প্রার্থীজট
বিএনপি নীরব থাকলেও সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগে রীতিমতো প্রার্থীজট দেখা দিয়েছে। দলটির যে কয়জন নেতা দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন, তাঁদের পোস্টার-বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে নগরে। এ ছাড়া জনসংযোগও শুরু করে দিয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ নেতাদের ধারণা, এবার সিটি নির্বাচনে বিএনপির আরিফুল অংশ নাও নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে দলীয় মনোনয়ন পেলে জয় অনেকটা নিশ্চিত। তাই দলীয় মনোনয়নের জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, দলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সিলেট মহানগরের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ টি এম হাসান জেবুল ও কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ এবং বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের ছেলে আরমান আহমদ শিপলু। তাঁদের মধ্যে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী দলের হাইকমান্ডের সবুজ সংকেত পেয়েছেন বলে প্রচার চালাচ্ছেন। 

আনোয়ারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা চাই বিএনপি বা আরিফুল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন। অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। আমরা নগরবাসীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি নির্বাচন উপহার দিই। ভোটে নগরবাসী তাঁদের সেবক নির্বাচন করবেন। আমি দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। জনগণের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি।’ 

 ‘আরিফুলের সঙ্গে লড়াই করার মতো শক্তিশালী প্রার্থী নেই’ এমন বিষয় মানতে নারাজ নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘আরিফুল স্বশিক্ষিত। ম্যাট্রিকও পাস করেননি। নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদসহ অনেক গ্র্যাজুয়েট ও সুযোগ্য প্রার্থী রয়েছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হবিগঞ্জে রত্না বেইলি সেতু ভেঙে ট্রাক আটকা, দুর্ভোগে যাত্রীরা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

হবিগঞ্জ-বানিয়াচং আঞ্চলিক সড়কের রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে ওই পথে সব ধরনের যান চলাচল। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে শতাধিক যাত্রী ও ওই পথে চলাচলকারীরা। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, জাফলং থেকে ছেড়ে আসা বানিয়াচংগামী পাথরবোঝাই একটি ট্রাক ব্রিজের ওপর ওঠামাত্রই ব্রিজের দুটি পাটাতন ভেঙে যায়। মুহূর্তেই ট্রাকের পেছনের দুটি চাকা ধসে পড়ে এবং পুরো ট্রাকটি ব্রিজে আটকে যায়।

এতে দীর্ঘ লাইনে আটকা পড়ে যাত্রীবাহী বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, টমটম, প্রাইভেট কারসহ অসংখ্য যানবাহন। বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, রোগী এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ব্যবসায়ীরা।

দুর্ঘটনার পর ব্রিজের একপাশ থেকে অন্যপাশে যাওয়ার জন্য যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে ভাঙা অংশ অতিক্রম করছে। এতে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘ট্রাকটি ব্রিজে উঠতেই জোরে শব্দ হয়। একটু পরই দেখি পাটাতন নিচে ধসে গেছে। ভাগ্য ভালো যে ট্রাকটি পুরোপুরি নিচে পড়ে যায়নি। তবে এখন তো ও পথে চলাচলকারীরা আটকা পড়ে আছে।’

যাত্রীরা জানান, রত্না বেইলি ব্রিজটি বহুদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভারী যানবাহনের অতিরিক্ত চাপের কারণে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে—এমন আশঙ্কা দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। এদিকে যাত্রীদের দাবি, এখানে যেন বেইলি ব্রিজের পরিবর্তে দ্রুত স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হয়, যাতে প্রতিদিনের এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, ‘ব্রিজটি দ্রুত মেরামত করার কাজ চলছে। পাথরবোঝাই ট্রাকটিতে বেশি লোড থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার

নরসিংদী প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে আব্দুর রশিদ (৪০) নামের এক অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর তীর থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

আব্দুর রশিদ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের দক্ষিণ লোহাজুরী গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি ছিলেন অটোরিকশাচালক; তবে নিয়মিত আড়িয়াল খাঁ নদে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করা ছিল তাঁর নেশা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৬টার দিকে ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর পাড়ে রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেন। লাশের পাশেই মোবাইল ফোন ও অটোরিকশাটি ছিল। পরে স্বজনেরা এসে লাশ শনাক্ত করেন। আব্দুর রশিদের মাথা ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করছে, তিনি দুষ্কৃতকারীর হামলার শিকার হয়েছেন।

নিহত ব্যক্তির ভাই কাজল মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত অটোরিকশা চালিয়ে তারপর নদীর পাড়ে বসে মাছ শিকার করে বাড়ি ফিরত ভাই। কিন্তু গতকাল রাতে আর বাড়ি ফেরেনি। সকালে খবর পেয়ে নদীর পাড়ে এসে ভাইয়ের মরদেহ দেখতে পাই।’

নিহত ব্যক্তির ছেলে হৃদয় বলেন, ‘রাতে বাড়ি না ফেরায় কল দিলে ফোন বন্ধ পাই। সকালে খবর শুনে নদীর পাড়ে এসে বাবার মরদেহ, মোবাইল ও অটোরিকশা পড়ে থাকতে দেখি।’

বেলাব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাসির উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি পিবিআইকে জানানো হয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৬৭ বছর পর রামেক হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

অবশেষে ৬৮ বছরে পা দিতে চলা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ মনোরোগ ওয়ার্ড চালু হলো। হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানসিক রোগী চিকিৎসা নিতে এলেও ভর্তির সুযোগ ছিল না। গুরুতর রোগীদের কিছু ক্ষেত্রে মেডিসিন বিভাগে রাখা হলেও, পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ডের অভাবে এতদিন অনেককেই ফিরিয়ে দিতে হতো।

হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ৬৭ বছর পর এই প্রথম ২৫ শয্যার একটি সুসজ্জিত মনোরোগ ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। হাসপাতালটির পুরাতন আইসিইউ ভবনে এই নতুন ওয়ার্ডটি গড়ে তোলা হয়েছে।

এই ওয়ার্ডে রোগী ভর্তির জন্য নির্দিষ্ট বিন্যাস রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ১০টি, নারীদের জন্য ৭ টি, শিশু-কিশোরদের জন্য ৫টি এবং উচ্চ পর্যবেক্ষণের জন্য ৩টি শয্যা সংরক্ষিত রয়েছে। এ ছাড়া রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার জন্য থেরাপি ও কাউন্সেলিং রুমসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওয়ার্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মোস্তফা আলী।

এই ওয়ার্ডটি চালুর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল কলেজের স্বীকৃতি বজায় রাখা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী মার্চ মাসেই ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশন (ডব্লিউএফএমই) থেকে একটি প্রতিনিধি দল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ পরিদর্শনে আসবে। পরিদর্শনকালে মনোরোগ বিভাগের ওয়ার্ড না পেলে কলেজের পয়েন্ট কমে যাওয়ার এবং অ্যাক্রিডিটেশনে বড় ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এতে করে এই কলেজের শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা বা পড়াশোনা করার সুযোগ কমে যেত। এ ছাড়া এফসিপিএস এবং ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্যও এমন একটি ওয়ার্ড জরুরি ছিল।

কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুরোধ শুনে সদ্যবিদায়ী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ দ্রুত এই ওয়ার্ড চালুর উদ্যোগ নেন এবং গত বুধবার এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের সময় তাঁর সঙ্গে নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামসহ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালে যে ৬৭ বছরেও মানসিক রোগীদের জন্য ওয়ার্ড চালু হয়নি, এটি সত্যিই অবাক হওয়ার মতো বিষয়। আমরা প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি চালু করেছি। এখন থেকে এ অঞ্চলের মানসিক রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি থেকেও উন্নত চিকিৎসা নিতে পারবেন।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি রামেক হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর উদ্যোগেগত ২৩ অক্টোবর শুধু সাপে কাটা রোগীদের জন্য বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালু করা হয়।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে একজনও সাপে কাটা রোগীর মৃত্যু হয়নি, যেখানে আগে প্রায় প্রতিদিনই এই রোগে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতো। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজমিস্ত্রির বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
অভিযানে পাওয়া অস্ত্রসামগ্রী। ছবি: আজকের পত্রিকা
অভিযানে পাওয়া অস্ত্রসামগ্রী। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সোহাগ হোসেন নামের এক রাজমিস্ত্রির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমানপুর কলপাড়া গ্রামে এই অভিযান চালান সেনাসদস্যরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সেনাক্যাম্পের রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি দল ওসমানপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন নামের এক যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে দুটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, গুলি, দেশীয় চাকু ও হাঁসুয়া পাওয়া যায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সোহাগ হোসেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর বাবার নাম আশরাফ হোসেন।

পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্র থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত