Ajker Patrika

সিসিক নির্বাচন: আরিফুলের ‘হ্যাটট্রিক মিশনে’ বাধা দলীয় সিদ্ধান্ত

ইয়াহ্ইয়া মারুফ, সিলেট
সিসিক নির্বাচন: আরিফুলের ‘হ্যাটট্রিক মিশনে’ বাধা দলীয় সিদ্ধান্ত

সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) টানা দুবারের মেয়র বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। আসছে নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও মেয়রের চেয়ারে বসলে দুটিই হবে তাঁর হ্যাটট্রিক। সিসিক নির্বাচনের মনোনয়ন দাখিল ২৩ মে, প্রত্যাহার ১ জুন ও ভোটগ্রহণ ২১ জুন। সময় মাত্র আড়াই মাস। তফসিল ঘোষণার পরপরই চাঙা হয়ে উঠেছে নগরে ভোটের রাজনীতি। চায়ের দোকান থেকে সর্বত্রই শুরু হয়েছে আলোচনা। বর্তমান মেয়র বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর হ্যাটট্রিক নাকি নতুন মুখ বসছেন নগর পিতার আসনে। তবে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কিত সাধারণ মানুষ। 

অবশ্য, দু-তিন মাস আগেই মাঠে নেমেছেন সম্ভাব্য মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তাঁদের ব্যানার, পোস্টার, বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে নগর। তবে জাতীয় পার্টির দুজন ছাড়া মেয়রপদে প্রচার চালানো সবাই আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। এবার আওয়ামী লীগের নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতার মধ্যে নীরব বিএনপি। নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে বিএনপিতে ভর করছে এই নীরবতা। আরিফুল হক চৌধুরীর ‘হ্যাটট্রিক মিশনে’ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দলীয় সিদ্ধান্ত। এই অবস্থায় সরব আওয়ামী লীগে নির্বাচনী প্রচারণাও একতরফা দেখা দিয়েছে। সিসিকের সর্বশেষ দুই নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হন আরিফুল হক চৌধুরী। পুরো সময়টাই নগরবাসীর ‘খোঁড়াখুঁড়িজনিত’ ভোগান্তি হলেও বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে আরিফের জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে দাবি সমর্থকদের। তবে এবার বিএনপির পক্ষ থেকে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সরকার পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। 

এই অবস্থায় আগামী নির্বাচনে মেয়র পদে আরিফের প্রার্থিতার ক্ষেত্রে দলীয় দোলাচলে রয়েছে নানা আলোচনা। সিটি নির্বাচনে আরিফুল প্রার্থী হবেন কি না, এ নিয়েও চলছে জল্পনা-কল্পনা। ভেতরে-ভেতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার খবর পাওয়া গেলেও এ বিষয়ে কৌশলী অবস্থানে রয়েছেন আরিফুল। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের বিষয়ে দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’

এদিকে গত রোববার মেয়র আরিফুল যুক্তরাজ্য সফরে গেছেন। নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার ঠিক আগমুহূর্তে মেয়রের হঠাৎ লন্ডন যাওয়া নিয়েও চলছে নানা আলোচনা। সিসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল আলিম শাহ বলেন, ‘মেয়রের এই সফর একান্ত ব্যক্তিগত। মেয়েকে দেখতে এবং মেয়ের শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে মেয়র এক সপ্তাহের মতো লন্ডনে অবস্থান করবেন।’ 

আরিফ-ঘনিষ্ঠ দলীয় সূত্র জানায়, সিসিক মেয়র বিএনপির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে লন্ডন গেছেন। নির্বাচনে তাঁর প্রার্থিতার বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও দলীয় হাইকমান্ডের সিগন্যাল পাওয়ার লক্ষ্যে তাঁর এই সফর। তারেক রহমানকে বাস্তবতা বোঝানোর চেষ্টা করবেন। ১০ বছরে তাঁর উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে দলের সিদ্ধান্ত নিজের পক্ষে আনার চেষ্টা করবেন। 

তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার বিষয়ে আরিফের জন্য আলাদা কোনো সিদ্ধান্ত হবে না। তাঁর রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের দাবি, ‘তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেন না। জেলে থাকাকালীন বড় বড় অফার পেয়েছিলেন; দলের সঙ্গে বেইমানি করে সেগুলো গ্রহণ করেননি। মেয়র হওয়ার জন্যও দলের বাইরে যাবেন না। এই সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না-এই কথায় দল অনড়। সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অর্থ এই নির্বাচন কমিশনকে স্বীকৃতি দেওয়া। তাই লন্ডন থেকে সুখবর না আসার কথাই উচ্চারিত হচ্ছে বেশি।’ 

আরিফ-ঘনিষ্ঠ নগর বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ দুজন নেতা বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরাও আরিফুলকে নির্বাচন না করার পরামর্শ দিয়েছি। লন্ডন থেকে ফেরার পর সিদ্ধান্ত কী হবে জানি না। যতটুকু বুঝেছি, তিনিও আমাদের সঙ্গে একমত। দলের কোনো ‘গ্রিন সিগন্যাল’ ছাড়া তিনি নির্বাচনে যাবেন না। ”

তবে আরিফুলের পরিবারের ঘনিষ্ঠ লোকজন জানান, বিএনপির চলমান আন্দোলনে সক্রিয় থাকলেও ভেতরে-ভেতরে নিজের মতো করে নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন আরিফ। শেষ সময়ে তিনি অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেবেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের এটি বুঝিয়ে শেষ মুহূর্তে তিনি নির্বাচনে রাজি করাতে পারেন অথবা শীর্ষ নেতাদের সম্মতি নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীও হতে পারেন। 

বিএনপির নেতাকর্মীর দাবি, সিলেট সিটিতে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রার্থী ছিলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রয়াত মেয়র প্রয়াত বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। ২০১৩ ও ২০১৮ সালে কামরানকে হারিয়েই মেয়র নির্বাচিত হন আরিফ। ২০২০ সালে কামরানের মৃত্যুর কারণে এবার সিলেটে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী কোনো প্রার্থী নেই। ফলে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আরিফের জয় অনেকটাই সহজ হবে। 

সবকিছুই যথাসময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে জানিয়ে আরিফের ঘনিষ্ঠ লোকজন জানান, সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চাচ্ছেন আরিফ। বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নিলে এবং মনোনয়নপ্রাপ্তি নিশ্চিত হলে সিটি নির্বাচনে আরিফ অংশ নিতে নাও পারেন। রাজনৈতিক জীবনে তিনি কখনো দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেননি। এবারও করবেন না, তাই স্বতন্ত্রপ্রার্থী হওয়ারও সম্ভাবনা নেই বলে দাবি, আরিফ বলয়ের দলীয় নেতাদের। আরিফুল বলেন, ‘দল এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তা ছাড়া আমরা এখন সরকার পতনের দাবিতে আন্দোলনে রয়েছি। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হবে না।’ 

এদিকে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে আরিফই মনোনয়ন পাবেন, তাও নিশ্চিত নয়। মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে এখানে একাধিক নেতা তৎপর আছেন। তবে জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার বিবেচনায় আরিফুলের বিকল্প নেতা বিএনপিতে খুব একটা নেই বলেও নগরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে আলোচনা আছে। আরিফুলের বিকল্প না থাকলেও দলে তাঁর বিরোধী শক্তির অবস্থান অত্যন্ত পাকাপোক্ত। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট-১ (নগর ও সদর) আসন থেকে বিগত সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরের সঙ্গে আরিফুলের ‘নীরব যুদ্ধ’ চলছে বলে রাজনীতির মাঠে প্রচলিত আছে। তাই বিএনপি নির্বাচনে এলেও আরিফুল যেন মনোনয়ন না পান, এ নিয়ে বিপক্ষ বলয়ের নেতারা স্বাভাবিকভাবেই তৎপর থাকবেন। 

সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, ‘সিসিকের বর্তমান মেয়র বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা। অবশ্যই তিনি দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মেনে চলবেন। আমরা বিশ্বাস করি আরিফুল দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেন না। দল নির্বাচনে গেলে আমিসহ অনেকেই মনোনয়নপ্রত্যাশী। সর্বশেষ দল যাকেই মনোনয়ন দেবে, আমরা দলের প্রতীককে বিজয়ী করতে মাঠে নামব।’ 

আরিফুলের ঘনিষ্ঠ লোকজন বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা ও তারেক রহমানের কাছ থেকে নির্বাচন শেষে দলে ফেরার নিশ্চয়তা পেলে স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। নাগরিক কমিটির ব্যানারে নির্বাচনেরও সব প্রস্তুতি রয়েছে তাঁর। তবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে আরিফুলের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। বিদেশ সফর শেষে দেশে ফিরলে আগামী সপ্তাহেই বিষয়টি ক্লিয়ার করবেন মেয়র।’ 

বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন জীবন বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে তিনি যাবেন, এমনটা আমরা চিন্তাও করি না। আর দল সিদ্ধান্ত নিলে আরিফুল শুধু হ্যাটট্রিক নয়, সিলেটকে আরও ইতিবাচক পরিবর্তন করার সুযোগ পাবেন।’ 

নির্ভার আওয়ামী লীগে প্রার্থীজট
বিএনপি নীরব থাকলেও সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগে রীতিমতো প্রার্থীজট দেখা দিয়েছে। দলটির যে কয়জন নেতা দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন, তাঁদের পোস্টার-বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে নগরে। এ ছাড়া জনসংযোগও শুরু করে দিয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ নেতাদের ধারণা, এবার সিটি নির্বাচনে বিএনপির আরিফুল অংশ নাও নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে দলীয় মনোনয়ন পেলে জয় অনেকটা নিশ্চিত। তাই দলীয় মনোনয়নের জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, দলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সিলেট মহানগরের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ টি এম হাসান জেবুল ও কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ এবং বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের ছেলে আরমান আহমদ শিপলু। তাঁদের মধ্যে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী দলের হাইকমান্ডের সবুজ সংকেত পেয়েছেন বলে প্রচার চালাচ্ছেন। 

আনোয়ারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা চাই বিএনপি বা আরিফুল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন। অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। আমরা নগরবাসীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি নির্বাচন উপহার দিই। ভোটে নগরবাসী তাঁদের সেবক নির্বাচন করবেন। আমি দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। জনগণের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি।’ 

 ‘আরিফুলের সঙ্গে লড়াই করার মতো শক্তিশালী প্রার্থী নেই’ এমন বিষয় মানতে নারাজ নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘আরিফুল স্বশিক্ষিত। ম্যাট্রিকও পাস করেননি। নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদসহ অনেক গ্র্যাজুয়েট ও সুযোগ্য প্রার্থী রয়েছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লাঠিতে ভর দিয়ে করতে হয় যাতায়াত, একই পরিবারে ছয় প্রতিবন্ধীর মানবেতর জীবন

ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি 
ফরিদগঞ্জ পৌরসভার পশ্চিম বড়ালী গ্রামের প্রয়াত আবু মনুহর ও ফুল বানু দম্পতির ছয় সন্তানই শারীরিক প্রতিবন্ধী। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফরিদগঞ্জ পৌরসভার পশ্চিম বড়ালী গ্রামের প্রয়াত আবু মনুহর ও ফুল বানু দম্পতির ছয় সন্তানই শারীরিক প্রতিবন্ধী। ছবি: আজকের পত্রিকা

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে চরম মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে একটি পরিবার। পরিবারটির ছয় সদস্যই শারীরিক প্রতিবন্ধী। ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম বড়ালী গ্রামের আজিম বাড়ির বাসিন্দা প্রয়াত আবু মনুহর ও ফুল বানু দম্পতির সাত সন্তানের মধ্যে শুধু একজন সুস্থ। বাকি ছয় সন্তান শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় ভুগছেন।

পরিবারে পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ে। একমাত্র সুস্থ সন্তান মিসু আক্তার প্রিয়া (৩৩) গৃহস্থালির কাজ করেন। অন্য ছয় সন্তানের কেউই শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে স্বাভাবিক জীবন কিংবা দাম্পত্য জীবনে পা রাখতে পারেননি। অর্থাভাবে নিয়মিত চিকিৎসাও হচ্ছে না। অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে তাঁদের। ভালো বাসস্থানের ব্যবস্থাও নেই। ফলে পুরো পরিবারের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ।

শারীরিক প্রতিবন্ধী সন্তানেরা হলেন নুরুল ইসলাম (৪১), তাজুল ইসলাম (৩৯), জাহাঙ্গীর হোসেন (৩৫), বিল্লাল হোসেন (৩৪), মো. আবদুর রব (৩২) ও রেহানা বেগম (২৩)। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সবাই স্বাভাবিকভাবে জন্ম নিলেও ছয় থেকে সাত বছর বয়সে টাইফয়েডে আক্রান্ত হওয়ার পর ধীরে ধীরে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়েন।

জানা যায়, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আবু মনুহর দিনমজুরের কাজ করে সন্তানদের জীবিকা নির্বাহ করতেন। প্রায় দেড় বছর আগে স্ট্রোক করে তাঁর মৃত্যু হয়। এর পর থেকে পরিবারটির দুর্দশা আরও বেড়ে যায়। বর্তমানে তাঁরা নিজের ঘরে শিশুদের খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করে কোনোরকমে দিন চালাচ্ছেন।

প্রতিবন্ধী আবদুর রব বলেন, ‘শরীরে শক্তি নেই, হাঁটতেও পারি না। তাই ভিক্ষাও করতে পারি না। ঘরে বসে শিশুখাদ্য বিক্রি করি। দিনে ৭০ থেকে ১০০ টাকা আয় হয়। আটজনের সংসারে অনেক সময় না খেয়েই থাকতে হয়।’

নুরুল ইসলাম ও তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা শুধু প্রতিবন্ধী ভাতা পাই। সরকারি বা বেসরকারি আর কোনো সহযোগিতা পাই না। বেঁচে থাকার জন্য সহযোগিতা চাই।’

প্রতিবন্ধী সন্তানদের মা ফুল বানু বলেন, ‘একটি স্বাভাবিক সন্তান বড় করতেই এখন অনেক কষ্ট। সেখানে পরপর ছয়টি প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে যে মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণা ভোগ করছি, তা ভাষায় বোঝানো যাবে না। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে। আমি এখনো বিধবা ভাতার কার্ড পাইনি।’

স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আহমদ, বিল্লাল হোসেন মানিক ও রাজনীতিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, উপার্জনক্ষম কেউ না থাকায় পরিবারটি চরম দুঃখ-কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। প্রতিবন্ধী ভাতা ছাড়া আর কোনো সহায়তা তারা পাচ্ছে না। তাঁরা পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানান।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, পরিবারের সদস্যরা ইতিমধ্যে প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় এসেছেন। কেউ বাদ পড়লে যাচাই-বাছাই করে সুবিধার আওতায় আনা হবে।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। হাসপাতালে এলে বিশেষভাবে চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হয়।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেটু কুমার জানান, বিষয়টি দুঃখজনক, খোঁজখবর নিয়ে তাঁদের পাশে থাকার চেষ্টা করব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতার ঘরে আগুন: দগ্ধ আরেক সন্তানের মৃত্যু

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩৩
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

লক্ষ্মীপুরের ভবানীগঞ্জের চরমনসা এলাকায় বিএনপি নেতা বেলাল হোসেনের বসতঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর বড় মেয়ে সালমা আক্তার স্মৃতিও (১৭) মারা গেছে। এর আগে একই ঘটনায় তাঁর ছোট মেয়ে আয়েশা বেগমের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে এই ঘটনায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল দুজনে।

গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্মৃতির মৃত্যু হয়। বেলাল হোসেন নিজেও অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হন। রাত ১টার দিকে লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান কাজেমী বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

অভিযোগ রয়েছে, ১৯ ডিসেম্বর রাতে ভবানীগঞ্জের চরমনসা গ্রামের সুতারগোপ্তা এলাকায় দুর্বৃত্তরা বাইরে থেকে দরজায় তালা লাগিয়ে পেট্রল ঢেলে বেলাল হোসেনের বসতঘরে আগুন দেয়। এতে ঘর ও আসবাব পুড়ে যায় এবং আগুনে পুড়ে ঘটনাস্থলেই ছোট মেয়ে আয়েশা বেগমের মৃত্যু হয়।

এই ঘটনায় বেলাল হোসেন, তাঁর বড় মেয়ে স্মৃতি এবং অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেজো মেয়ে সায়মা আক্তার বিথি (১৪) দগ্ধ হয়। বেলাল হোসেন লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। স্মৃতি ও বিথিকে ঢাকায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকদের তথ্যমতে, স্মৃতির শরীরের প্রায় ৯০ শতাংশ এবং বিথির প্রায় ৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। চিকিৎসা শেষে বিথিকে পরদিনই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। তবে স্মৃতি পাঁচ দিন ধরে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যায়।

এই ঘটনায় মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে বেলাল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। ঘটনার পর থেকে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। ঘটনাস্থল থেকে তিনটি তালা উদ্ধার করা হয়েছে, এর মধ্যে দুটি বন্ধ এবং একটি খোলা অবস্থায় ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এদিকে পোড়া বাড়ি পরিদর্শন করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানিসসহ বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মী এবং জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান কাজেমী বলেন, ঘটনার দিন আগুনে পুড়ে আয়েশার মৃত্যু হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্মৃতিও মারা গেছে। নিহত সন্তানদের বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজশাহীতে প্রাথমিকের শতভাগ বই পৌঁছেছে, বিদ্যালয়গুলোতে যাচ্ছে নতুন বই

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫৮
২১ ডিসেম্বর থেকে নতুন বই স্কুলে স্কুলে পাঠানো হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
২১ ডিসেম্বর থেকে নতুন বই স্কুলে স্কুলে পাঠানো হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহীর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে নতুন বই পৌঁছাতে শুরু করেছে। প্রাথমিক পর্যায়ের শতভাগ বই ইতিমধ্যে রাজশাহী এসেছে বলে জানিয়েছে শিক্ষা অফিস। তবে মাধ্যমিকের সব বই পৌঁছেনি। প্রথম ধাপে ষষ্ঠ শ্রেণির সব বই এবং নবম শ্রেণির কিছু বই এসেছে। সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই এখনো উপজেলা পর্যায়ে না পৌঁছানোয় বিতরণ শুরু হয়নি।

২১ ডিসেম্বর থেকে নতুন বই স্কুলে স্কুলে পাঠানো হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
২১ ডিসেম্বর থেকে নতুন বই স্কুলে স্কুলে পাঠানো হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে জানা গেছে, প্রাক্‌-প্রাথমিক পর্যায়ে জেলায় বই দরকার ৪১ হাজার ৬৪০ সেট। আর প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত দরকার ১১ লাখ ১৯ হাজার ২০৪ কপি বই। ইতিমধ্যে চাহিদার সব বই পাওয়া গেছে। ২১ ডিসেম্বর থেকে বই বিভিন্ন স্কুলে পাঠানো হচ্ছে।

এদিকে জেলা শিক্ষা অফিস জানিয়েছে, জেলায় ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ের চাহিদা প্রায় ২২ লাখ ৭ হাজার কপি। সব বই এখনো পাওয়া যায়নি। যেগুলো এসেছে, সেগুলোই উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে স্কুলে স্কুলে বিতরণ করা হচ্ছে। বাকি বইগুলো আসামাত্র বিতরণ করা হবে।

বুধবার রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের বই বিতরণ করতে দেখা যায়। বই সংগ্রহ করতে আসা শিক্ষকেরা জানান, গত শিক্ষাবর্ষে তিন থেকে চার মাস দেরিতে সম্পূর্ণ বই হাতে পাওয়ায় পাঠদান কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হয়েছিল। এবার শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে সব বই পৌঁছানোর প্রত্যাশা করছেন তাঁরা।

উপজেলা শিক্ষা অফিস জানিয়েছে, প্রথম ধাপে ষষ্ঠ শ্রেণির সব বই এবং নবম শ্রেণির কিছু বই সরবরাহ করা হয়েছে। তবে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই এখনো উপজেলা পর্যায়ে না পৌঁছানোয় সেগুলো বিতরণ শুরু হয়নি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে অবশিষ্ট বই পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জায়েদুর রহমান বলেন, ‘নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগেই শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ পাঠ্যবই হাতে পাবে। তবে বই উৎসবের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে কি না, সে বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এবার প্রাথমিকের বই নিয়ে কোনো সংকট নেই। আমাদের চাহিদার শতভাগ বই আমরা পেয়েছি। এবার বছরের প্রথম দিনই শিক্ষার্থীরা হাতে নতুন বই পাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সুজনের গোলটেবিলে পর্যবেক্ষণ: ভোটের খরচ না কমলে দুর্নীতিও কমবে না

  • আর্থিক বিষয়সহ কমিশনের অনেক সুপারিশ উপেক্ষা করার অভিযোগ।
  • নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার বিষয়ও বিবেচনায় রাখার তাগিদ।
  • অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বাদ পড়েছে বা গৃহীত হয়নি বলে অভিমত।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচনী ব্যয় কমানো না গেলে নির্বাচন-পরবর্তী দুর্নীতিও কমানো যাবে না। কিন্তু অনিয়ম প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্যয় মনিটরিং কমিটি গঠনের মাধ্যমে নিবিড় নজরদারি করতে সংস্কার কমিশনের সুপারিশ উপেক্ষা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল এবং নির্বাচন কমিশন (ইসি) উভয়ের তরফে অবহেলা হচ্ছে। রাজনৈতিক দলের গণতন্ত্রায়ণ, আর্থিক স্বচ্ছতা ও দলের সদস্যদের দায়বদ্ধতা, নির্বাচন কমিশনের দায়বদ্ধতা ইত্যাদি বিষয় নিয়েও কিছু সুপারিশ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) গ্রহণ করা হয়নি।

গতকাল বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত ‘নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার: অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তাদের কাছ থেকে এসব কথা উঠে আসে। বেসরকারি সংগঠন ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)’ এ বৈঠকের আয়োজন করে।

বৈঠকে বক্তারা বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং সরকার ও ইসির প্রস্তাবের মাধ্যমে আরপিওর বিভিন্ন অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। আবার অনেক বিষয়ই উপেক্ষা করা হয়েছে। কোনো আসনে মোট ভোটের ৪০ শতাংশ না পড়লে আবার ভোট গ্রহণের বিধান, পর পর দুটি নির্বাচনে অংশ না নিলে দলের নিবন্ধন বাতিলের বিধান বাতিল করা এবং প্রতি পাঁচ বছর পর দলের নিবন্ধন নবায়ন বাধ্যতামূলক করা, কোনো ব্যক্তির একাধিক আসনে প্রার্থী হওয়ার বিধান বাতিল করা, ২০২৩ সালে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে’ নিবন্ধন দেওয়া দলের নিবন্ধন বাতিল করাসহ অনেক সুপারিশ উপেক্ষা করা হয়েছে।

নির্বাচনী ব্যয়ের অর্থ পরে জনগণের কাছ থেকে আদায়ের চেষ্টা করা হয় বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি মনে করেন, ইতিমধ্যে ‘মনোনয়ন-বাণিজ্যের মাধ্যমে’ নির্বাচনী ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার এবং আচরণবিধি লঙ্ঘনের আশঙ্কা রয়েছে।

নির্বাচনে নিরাপত্তা প্রসঙ্গে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, শুধু নির্বাচনের আগে নয়, নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা থেকেও সুরক্ষা প্রয়োজন। জাতীয় ঐক্য ছাড়া একটি গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়।

সুজনের সম্পাদক এবং অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়া, ভোট গণনা এবং অভিযোগ নিষ্পত্তির বিষয়টি একটি দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণ হিসেবে দেখা উচিত। নির্বাচন কমিশন এবং সরকার নির্বাচনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ নিশ্চিত করতে যে সংস্কারগুলো করেছে, তা সন্তোষজনক নয়।

বিচারপতি এম এ মতিন বলেন, নির্বাচনসংক্রান্ত সুপারিশগুলোর মধ্যে মাত্র ৫০ শতাংশ গৃহীত হয়েছে। বাকি সুপারিশগুলো যাতে গ্রহণ করা হয়, সে জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া এবং কমিশনকে চাপের মুখে রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

ইসির সাবেক অতিরিক্তি সচিব জেসমিন টুলি বলেন, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা নির্বাচনী আচরণবিধির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে এর অপব্যবহার বা ভোটারদের বিভ্রান্তি রোধে প্রয়োজনীয় নির্দিষ্ট বিধিনিষেধ বা সীমাবদ্ধতাগুলো স্পষ্টভাবে থাকা উচিত ছিল। তা করা হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য সংস্কার কমিশনের তুলনায় নির্বাচনবিষয়ক কমিশনের অর্জন কিছুটা বেশি হতে পারে, তবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বাদ পড়েছে বা গৃহীত হয়নি।

বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় বৈঠকে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন, অধ্যাপক ওয়ারেসুল করিম, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য মীর নাদিয়া নিভিন প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত