Ajker Patrika

২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করলেন আ.লীগ মেয়র প্রার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
আপডেট : ১৭ জুন ২০২৩, ১৬: ৪৩
২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করলেন আ.লীগ মেয়র প্রার্থী

ভোটের তিন দিন আগে ২১ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। আজ শনিবার বেলা ১টার দিকে নগরের হোটেল নিভার্না ইনের হলরুমে তিনি এই ইশতেহার ঘোষণা করেন।  

নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার আগে আনোয়ারুজ্জামান বলেন, ‘সিলেটের সমস্যা ও সমাধান জানতে ইতিমধ্যেই আমরা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিক, তরুণ-তরুণী, ছাত্রছাত্রী, নগরবিশেষজ্ঞ, পরিকল্পনাবিদসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। সেমিনারে অংশ নিয়েছি। অনলাইনে হাজার হাজার মানুষের সুনির্দিষ্ট মতামত, পরামর্শ এসেছে। নির্বাচিত হলে যার অনেক কিছুই বাস্তবায়ন সম্ভব। নগরবিদদের মতো আমারও আকাঙ্ক্ষা “সুন্দর সমৃদ্ধ সিলেট”। বিশেষজ্ঞ মতামত ও জরিপের কারণে এখন আমি এই শহরের প্রতিটি সমস্যা ও তার সম্ভাব্য সমাধান সম্পর্কে সচেতন। যেসব সমস্যা ইতিমধ্যেই চিহ্নিত হয়েছে, তা সমাধানে স্বল্পমধ্যম-দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের পরিকল্পনাও করেছি আমরা। জনগণ আমাকে নির্বাচিত করলে, পাঁচ বছরের মধ্যে সিলেট একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে নাগরিকদের সামনে দৃশ্যমান হবে ইনশা আল্লাহ।’ 

আওয়ামী লীগ মনোনীত এই মেয়র প্রার্থী বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারা দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। সিলেটেও আওয়ামী লীগ সরকার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, যা অতীতে কোনো সরকার করেনি। আমি সিলেটকে একটি স্মার্ট নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করুন।’

২১ দফা ইশতেহারে থাকছে—স্মার্ট নগর ভবন, সবুজ পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব সিলেট, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও বন্যানিয়ন্ত্রণে পরিকল্পনা, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিকল্পিত নগরায়ণ, নিরাপদ স্বাস্থ্যকর সিলেট, দুর্যোগ মোকাবিলায় সচেতনতা, শিক্ষা ও সংস্কৃতিবান্ধব সিলেট গঠন করা, নারীবান্ধব সিলেট গঠন করা, ব্যবসাবান্ধব সিলেট, পার্ক, উদ্যান ও খেলার মাঠ প্রতিষ্ঠা, যানজট নিরসনের সচল সিলেট, কর্মসংস্থানের মানবিক উন্নয়নে সিলেট গঠন, প্রবাসীবান্ধব, সম্প্রীতির নগর হিসেবে সম্প্রীতি সিলেট গঠন, নামের সঙ্গে মিল রেখে পর্যটন নগরী গঠন, সামাজিক অপরাধ নির্মূল, অংশগ্রহণমূলক ও সুশানিত সিলেট, মৌলিক সেবার মাধ্যমে নাগরিকবান্ধব সিলেট গঠন, সিলেটের মোট ভোটারের প্রায় ৩২ শতাংশ নতুন ভোটারের জন্য তারুণ্যের সিলেট, সব সেবা ডিজিটালাইজের মাধ্যমে প্রযুক্তির সিলেট গঠন করা। 

ইশতেহার ঘোষণাকালে আনোয়ারুজ্জামান আরও বলেন, ‘আমি গতানুগতিক নেতা হতে আসিনি, নির্ভরতার প্রতীক হতে এসেছি। নির্বাচিত হতে পারলে অপরিকল্পিত কসমেটিক উন্নয়ন করতে চাই না।’

তা ছাড়া নগরপিতা শব্দটিতে কেমন যেন দূরত্ব অনুভব করেন তিনি। তাই নগরপিতা নয়, বরং নগরবাসীর সেবক হতে পারলে সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া নির্বাচিত হলে তিন মাসের মধ্যে সিলেটে দখলদারত্ব, ভূমি দস্যুতা, চাঁদাবাজি ও কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। 

এ সময় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, কার্যনির্বাহী সদস্য আজিজুস সামাদ আজাদ ডন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান, মহানগর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেনসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মহাসড়কে দোকান যানজটে ভোগান্তি

মো. আজিমুশ শানুল হক দস্তগীর চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম)
মহাসড়কে দোকান যানজটে ভোগান্তি

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চন্দনাইশের দোহাজারী অংশটি এখন শুধু যাতায়াতের পথ নয়, ক্রমেই মৃত্যুফাঁদে পরিণত হচ্ছে। দোহাজারী বাজার এলাকায় ৬ লেনের প্রশস্ত সড়ক নির্মাণ হলেও যান চলাচলে শৃঙ্খলা ফেরেনি। একদিকে সড়কের ডিভাইডার দখল করে গড়ে ওঠা ভাসমান দোকান ও কাঁচাবাজার, অন্যদিকে মূল সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার অবাধ চলাচল—সব মিলিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের এই ব্যস্ত এলাকায় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, দোহাজারী পৌর সদরের প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকায় সড়কের বিভাজকে (ডিভাইডার) খুঁটি গেড়ে অস্থায়ী দোকান বসানো হয়েছে। কোথাও সবজি, কোথাও ফল, আবার কোথাও চায়ের দোকান। নিয়ম অনুযায়ী মহাসড়কের ওপর কোনো ধরনের স্থাপনা থাকার কথা না থাকলেও এখানে ডিভাইডারই যেন বাজারের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।

৬ লেনের এই মহাসড়কে দূরপাল্লার যানবাহনের জন্য দ্রুতগতির লেন থাকলেও দোহাজারী অংশে তা কার্যত অকার্যকর। সড়কের দুই পাশে শত শত সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা এলোমেলোভাবে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছে। নির্দিষ্ট পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় মূল লেনেই যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকছে। ফলে ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে আসা দ্রুতগতির বাস ও ট্রাককে দোহাজারী সদরে এসে হঠাৎ ব্রেক কষতে হচ্ছে। এতে পেছনে থাকা যানবাহন দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন মাঝে মাঝে উচ্ছেদ অভিযান চালালেও তা স্থায়ী হয় না। সকালে উচ্ছেদ হলেও বিকেলেই আবার দোকান বসে। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র ও বাজার ইজারাদারেরা প্রতিদিন এসব ভাসমান দোকান থেকে চাঁদা আদায় করে। এতে সড়ক দখলমুক্ত করার উদ্যোগ বারবার ব্যর্থ হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা নুর উদ্দিন বলেন, ‘৬ লেনের সড়ক হওয়ায় যাতায়াত সহজ হবে বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু এখন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সগুলো ২০-৩০ মিনিটের যানজটে আটকে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে।’

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দোহাজারী পৌর প্রশাসক ঝন্টু বিকাশ চাকমা জানান, তিনি সদ্য কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। দোহাজারীতে সড়ক দখল করে ভাসমান দোকান ও বাজার বসার বিষয়টি সম্প্রতি তাঁর নজরে এসেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে শিগগির অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান তিনি।

দোহাজারী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সালাহউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও সিএনজির বিরুদ্ধে মামলা ও জরিমানা করা পুলিশের নিয়মিত কাজের অংশ। প্রতিদিনই মামলা হচ্ছে। তবে স্থানীয় তদবিরের কারণে অনেক সময় দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি হয় বলে তিনি দাবি করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘সাংগঠনিক কমিটি ভেঙে দিলে, সেই কমিটির নেতৃত্বেই নির্বাচনী কমিটি গঠন করুন।’

দশমিনা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি 
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৪
হাসান মামুন। ছবি: সংগৃহীত
হাসান মামুন। ছবি: সংগৃহীত

পটুয়াখালী-৩ (দশমিনা–গলাচিপা) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী ও সদ্য বহিষ্কৃত বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন কেন্দ্রীয় নেতাদের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে নেতা-কর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বিএনপির সমঝোতার অংশ হিসেবে ওই আসনে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। এই ঘোষণার পর দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন হাসান মামুন। তিনি নুরুল হক নুরের বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেন। এর আগে ২৮ ডিসেম্বর তিনি বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্যপদ থেকে অব্যাহতির জন্য পদত্যাগপত্র জমা দেন।

এদিকে গতকাল বুধবার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগে হাসান মামুনকে নির্বাহী কমিটির সদস্যপদসহ প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

বহিষ্কারের খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশের পর হাসান মামুন তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে একাধিক পোস্টে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে তিনি নেতা-কর্মী ও ভোটারদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

বুধবার রাত ৮টার দিকে এক পোস্টে তিনি লেখেন, বিএনপির সিদ্ধান্ত পূর্বনির্ধারিত ছিল এবং তিনি আগেই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। একই পোস্টে নেতা-কর্মীদের সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণ ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।

এর আগে আরেক পোস্টে তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে লেখেন, মজলুম নেত্রীর ইন্তেকালের দিনে তৃণমূলের মজলুম নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত? একই সঙ্গে অতীতের একটি বহিষ্কার ও পরবর্তী সময়ে তা প্রত্যাহারের উদাহরণ তুলে ধরেন।

রাত ১১টার দিকে দেওয়া আরেক পোস্টে হাসান মামুন লেখেন, ৩৭ বছরের বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত কর্মীদের চেয়ে দুই দিনের অবিশ্বস্ত ও ফ্রন্ট মিত্রদের সঙ্গে চলা বিষধর সাপের সঙ্গে বসবাসের চেয়েও ঝুঁকিপূর্ণ।

সর্বশেষ পোস্টে তিনি লেখেন, সবাইকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। সাংগঠনিক কমিটি ভেঙে দেওয়া হলে সেই কমিটির নেতৃত্বেই নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করার আহ্বান জানান তিনি। তার ভাষায়, নেতা-কর্মী ও ভোটাররাই তাদের মূল শক্তি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দুয়ারেই বিষাক্ত ধোঁয়া দম বন্ধ পড়াশোনা

জিল্লুর রহমান, মান্দা (নওগাঁ)
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭: ৪৮
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশেই ইটভাটা। সম্প্রতি নওগাঁর মান্দা উপজেলার সাবাইহাট এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশেই ইটভাটা। সম্প্রতি নওগাঁর মান্দা উপজেলার সাবাইহাট এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিদ্যালয়ের আঙিনায় ভাসছে বিষাক্ত ধোঁয়া। নওগাঁর মান্দা উপজেলায় দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অদূরে দীর্ঘদিন ধরে একটি ইটভাটা পরিচালিত হওয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে কোমলমতি পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী। ইটভাটার লাগাতার কার্যক্রমে প্রতিদিনই স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে শিশুরা। শ্বাসকষ্ট, চোখ জ্বালা ও অসুস্থতায় ভুগেও ক্লাসে বসতে হচ্ছে শতাধিক শিক্ষার্থীকে। নিরাপদ শিক্ষাবান্ধব পরিবেশের বদলে কালো ধোঁয়ার নিচে বড় হচ্ছে তাদের শৈশব—যা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের জন্য এক গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে উপজেলার সাবাইহাট এলাকার ঝাঁঝরের মোড়ে ‘যমুনা ব্রিকস’ নামে ইটভাটাটি স্থাপন করা হয়েছে। ভাটার মাত্র ২৫০ মিটার দূরে রয়েছে একরুখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একরুখী উচ্চবিদ্যালয়। আশপাশে রয়েছে আবাসিক এলাকা ও দুটি আমবাগান। গোসাইপুর গ্রামের কার্তিক চন্দ্র মণ্ডল নামের এক ব্যক্তি ভাটাটি পরিচালনা করেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে ফিক্সড চিমনির মাধ্যমে ইট পোড়ানো হচ্ছে। কয়লার পাশাপাশি কাঠের খড়ি ব্যবহার করায় ধোঁয়ার মাত্রা আরও বেড়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাসে বসে পড়াশোনা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১৩ সালের সংশোধনী) অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আবাসিক এলাকা ও বাগানের ১ কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন ও পরিচালনা নিষিদ্ধ। তবে এই আইন অমান্য করেই প্রায় ২০ বছর ভাটাটি পরিচালিত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

একরুখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, গত বছর ভাটা চালু হওয়ার পর তার এক সহপাঠী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং চিকিৎসা নিতে হয়। অনেক শিক্ষার্থী শ্বাসকষ্টে ভোগে বলেও জানায় সে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলাম বলেন, ইটভাটা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান কামরুল বলেন, ইটভাটাটি নিয়ে তেমন কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে কিছুদিন আগে ভাটামালিক ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছেন।

জানতে চাইলে ভাটামালিক কার্তিক চন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়েই ভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আগামী বছর থেকে আর ব্যবসা করব না।’

এ বিষয়ে ইউএনও আখতার জাহান সাথী বলেন, যমুনা ব্রিকসের পরিবেশ ছাড়পত্র ও অন্যান্য কাগজপত্র যাচাই করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে লাইসেন্সবিহীন সব ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খাগড়াছড়ির ১ আসন

ভোটের মাঠে: জয়ের সমীকরণ পাল্টে দেবে পাহাড়ি ভোটার

  • স্বতন্ত্র ও আঞ্চলিক দলের প্রার্থীরা হেভিওয়েটদের জয়ে বড় বাধা হতে পারে।
  • পাহাড়ি-বাঙালি উভয় জনগোষ্ঠীর মানুষ আমাকে সমর্থন দিয়েছে: বিএনপির প্রার্থী
নীরব চৌধুরী বিটন, খাগড়াছড়ি
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ১৯
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশাল পাহাড়ি এলাকার তিনটি সংসদীয় আসনের মধ্যে একটি খাগড়াছড়ি। আসনটিতে বিভিন্ন দলের হেভিওয়েট প্রার্থীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র ও আঞ্চলিক দলের প্রার্থীরাও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। স্বতন্ত্র ও আঞ্চলিক দলের এসব প্রার্থী হেভিওয়েটদের জয়ে বড় বাধা হতে পারে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সবুজ পাহাড়ের রাজনীতির হিসাবনিকাশ বুঝতে মূল রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি আঞ্চলিক দলগুলোর ভোটের অঙ্ক কষতে হয় বিশ্লেষকদের। ভোটের সময় সেই অঙ্কে যুক্ত হয় পাহাড়ি-বাঙালি সমীকরণ। এবার জয়ের সমীকরণ পাল্টে দিতে পারে পাহাড়ি ভোটাররা।

২৯৮ নম্বর খাগড়াছড়ি আসনে বিএনপি, জামায়াত, স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ১৬ জন। তাঁরা হলেন বিএনপির প্রার্থী আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, জামায়াতের এয়াকুব আলী, ইসলামী আন্দোলনের মো. কাউসার, ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশের নুর ইসলাম। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী সমীরণ দেওয়ান, সন্তোষিত চাকমা, লাব্রিচাই মারমা, ধর্ম জ্যোতি চাকমা, সোনা রতন চাকমা, স্বতন্ত্র প্রার্থী জিরুনা ত্রিপুরা, জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মিথিলা রোয়াজা, খেলাফতে মজলিস মনোনীত আনোয়ার হোসাইন মিয়াজী, গণঅধিকার পরিষদ মনোনীত দীনময় রোয়াজা, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ মনোনীত মো. মোস্তাফা, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি মনোনীত উশোপ্রু মারমা। এদিকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মনোনীত প্রার্থী মনজিলা সুলতানা ঝুমা।

জানা গেছে, বিএনপি, জামায়াতসহ কয়েকটি দল প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও বেশ কৌশলী এবং শক্তিশালী। কারণ পাহাড়ি ভোটার। স্থানীয় আঞ্চলিক দল ও আঞ্চলিকতার প্রশ্নে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোটের বাক্সে বেশ এককাট্টা স্থানীয় ভোটাররা।

এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) নির্বাচনের ব্যাপারে আগে নীরব থাকলেও এখন তারা অনেকটা সরব। পাহাড়ের আরেক শক্তিশালী রাজনৈতিক সংগঠন জনসংহতি সমিতি জেএসএস (এমএন লারমা) সরাসরি ভোটে না এলেও পছন্দের প্রার্থীদের সমর্থন দেওয়ার কথা বলছে। ফলে জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য জয়ে আশার বাতিঘরে কিছুটা হতাশাও বেশ প্রকাশ্যে। এ ছাড়া প্রার্থীর যোগ্যতা, ভোটারদের বিগত দিনের বিশ্লেষণ এবং হিসাবনিকাশে জয়ে পদে পদে বাধার সম্মুখীন হতে পারে আশাবাদী দলগুলো।

আঞ্চলিক দলগুলো নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার আগপর্যন্ত পাহাড়ের ভোটের যে সমীকরণ ছিল; এখন সেটা পাল্টে গেছে। কারণ আঞ্চলিক দলগুলো নির্বাচনে না এলে ভোটের মাঠ অনেকটা বিএনপি ও জামায়াতের দখলেই থাকত। কিন্তু ইউপিডিএফ ও জেএসএসের নির্বাচনে থাকার ঘোষণা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নতুন মাত্রা দিয়েছে।

বিশ্লেষকদের ধারণা, আগামী নির্বাচন সরল-দ্বিমুখী লড়াইয়ের বদলে কোথাও কোথাও কঠিন-ত্রিমুখী লড়াইয়ে পরিণত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বিএনপি। যদিও আওয়ামী লীগহীন এই নির্বাচনে বিএনপি সারা দেশেই বড় জয়ের আশা করছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সমর্থকদের ভোট কোন বাক্সে পড়বে, সেটিও দেখার পালা এবার।

পাল্টে যাওয়া সমীকরণ

এ আসনে বিএনপির প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য খাগড়াছড়িতে জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভূঁইয়া প্রার্থী ঘোষণার আগ থেকেই গণসংযোগে রয়েছেন। প্রার্থিতা ও তফসিল ঘোষণার পর প্রচারে আরও সরব হয়ে উঠেছেন তিনি। ইউপিডিএফ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণার আগপর্যন্ত এখানে ওয়াদুদ ভূঁইয়ার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত এয়াকুব আলীকে ধরা হলেও এখন সমীকরণ পাল্টে গেছে।

বিএনপির প্রার্থী ওয়াদুদ ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি আগেও জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। জনগণ আমাকে চিনে। জেলার বেশির ভাগ সড়ক, স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, বিহার আমার সময়ে নির্মিত হয়েছে। পাহাড়ি-বাঙালি উভয় জনগোষ্ঠীর মানুষ আমাকে সমর্থন দিয়েছে। এরই মধ্যে চাকমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর মানুষ স্বতন্ত্রভাবে আমার সমর্থনে সমাবেশও করেছে।’

জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী এয়াকুব আলী বলেন, ‘আমরা এমন একটি বাংলাদেশ তৈরি করব, যেখানে নির্ভয়ে, নির্বিঘ্নে, নিরাপত্তা নিয়ে ভয়হীন দেশে ইনসাফের সঙ্গে বসবাস করবে। পাহাড়ি-বাঙালি মিলেমিশে তৈরি হবে এক সম্প্রীতির বাংলাদেশ।’

জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরা বলেন, ‘আমরা নির্বাচনমুখী দল। তবে এই নির্বাচনে আমরা সরাসরি কোনো প্রার্থী না দিলেও কোনো না কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দেব। তবে কোনো দলকে নয়। খাগড়াছড়ির এবার পরিস্থিতি আগের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন।’

পাহাড়িদের দীর্ঘদিনের ভূমি, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক অধিকারসংক্রান্ত সমস্যাগুলো সমাধানে জাতীয় দলগুলোর আন্তরিকতা নিয়ে অভিযোগও বেশ পুরোনো। এই প্রেক্ষাপটে নাগরিক সমাজের উদ্যোগে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী থেকে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিষয়টিকে বেশ গুরুত্বসহকারে দেখছেন স্থানীয় পাহাড়ি ভোটাররা। এখানেই তাঁরা এককাট্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত