Ajker Patrika

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর: সাঁকো বেয়ে উঠতে হয় চার কোটির সেতুতে

  • দুই পাশে ২০-২৫ ফুট দৈর্ঘ্যের বাঁশের সাঁকো বেয়ে উঠতে হয় সেতুতে
  • চরম ভোগান্তিতে তিনটি ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামের মানুষ
ফরিদ আহমেদ চঞ্চল, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ)
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ১৮
সংযোগ সড়ক না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো বেয়ে উঠতে হয় সেতুতে। সম্প্রতি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার ক্যাইজা বিশ্বনাথপুর নতুনপাড়া এলাকায়।	ছবি: আজকের পত্রিকা
সংযোগ সড়ক না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো বেয়ে উঠতে হয় সেতুতে। সম্প্রতি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার ক্যাইজা বিশ্বনাথপুর নতুনপাড়া এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় পৌনে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ করা হলেও সংযোগ সড়ক না থাকায় স্থানীয় লোকজনকে প্রতিদিন চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ সেতুর দুই পাশে ২০-২৫ ফুট দৈর্ঘ্যের সাঁকো বেয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছে।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের হাট পাচিল থেকে এনায়েতপুর মণ্ডলের মোড় পর্যন্ত যমুনা তীর রক্ষা বাঁধ সংস্কারের কাজ চলায় পূর্ব ও দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষদের বাধ্য হয়ে প্রতিদিন মালামালসহ সেতু পারাপার হতে হচ্ছে। এতে ছোট-বড় দুর্ঘটনাও ঘটছে।

জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অর্থায়নে সিরাজগঞ্জ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০২১-২২ অর্থবছরে উপজেলার খুকনি ইউনিয়নের ক্যাইজা বিশ্বনাথপুর নতুনপাড়া পোরাকুম বিলের ওপর ৬০ মিটার সেতু নির্মাণে ৩ কোটি ৭৪ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেতুটি নির্মাণের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড।

স্থানীয়রা জানান, সেতুর নির্মাণকাজ প্রায় ৮ মাস আগে শেষ হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংযোগ সড়ক তৈরি করেনি। এ কারণে সেতুতে উঠতে স্থানীয়রা বাঁশ ও কাঠ দিয়ে বানানো সাঁকো ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। এই সাঁকো দিয়েই প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল ও ভ্যান চলাচল করছে। ভ্যানচালকেরা মালামাল মাথায় নিয়ে সাঁকো পার হয়ে পরে আবার ভ্যান নিয়ে গিয়ে মালামাল পরিবহন করছেন। সাঁকো পার হতে অনেকে একে অপরের ওপর নির্ভর করতে হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, স্থানীয় মানুষদের পাশাপাশি কৃষকেরা তাঁদের ধান-চালসহ উৎপাদিত পণ্য বাজারে নিতে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন। গর্ভবতী মা, শিশু ও অন্য রোগীদের হাসপাতালে আনা-নেওয়া করতে বিপদে পড়ছেন স্বজনেরা। স্থানীয় ভ্যানচালক মোজাম সরকার বলেন, বিকল্প কোনো সড়ক না থাকায় মালামাল মাথায় করে সেতু পার হতে হয়। অপর ভ্যানচালক হামিদ ভাঙারি বলেন, সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ না হওয়ায় প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিতে হচ্ছে। তারা অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করেছেন।

স্থানীয়রা আরও জানায়, সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরও সংযোগ সড়ক না হওয়ায় খুকনি, বিশ্বনাথপুর, ক্যাইজা, নতুন ঘাটাবাড়ী, সড়াতৈল, রুপসি, সৈয়দপুর, চ্যাংটাপাড়াসহ পূর্ব ও দক্ষিণ অঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এতে ধান-চালসহ উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাতসহ দৈনন্দিন যাতায়াতে চরম অসুবিধা হচ্ছে।

জানতে চাইলে প্রকল্পের তদারকি কর্মকর্তা নকশাকার (উপসহকারী প্রকৌশলী) আমির ফারুক সরকার বলেন, ‘দীর্ঘদিন যাবৎ ঠিকাদারকে চিঠি দিয়েও কাজ করানো সম্ভব হয়নি।’ তবে বিভাগীয় চিঠি দেওয়াসহ অতি দ্রুত সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী এ এইচ এম কামরুল হাসান রনি বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক দ্রুত নির্মাণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিলের টাকা আটকে রাখা হয়েছে। অ্যাপ্রোচ সড়ক তৈরি না করলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ