Ajker Patrika

হাসপাতালে দুই দিন ধরে চিকিৎসাসেবা বন্ধ, রোগীদের দুর্ভোগ

রংপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ২০: ২৭
চিকিৎসাসেবা না পেয়ে তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা। আজ রোববার দুপুরে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
চিকিৎসাসেবা না পেয়ে তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা। আজ রোববার দুপুরে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

আজ রোববার দুপুর ১২টা। রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে টাঙানো চিকিৎসকদের কর্মবিরতি ব্যানারের নিচে হাঁসফাঁস করছিলেন ঝাঁকুয়াপাড়া গ্রামের রোগী বৃদ্ধ আব্দুল মজিদ। তাঁর একটু সামনে দুই বছরের অসুস্থ শিশুকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন নারায়ণজন গ্রামের গৃহবধূ চায়না বেগম।

আব্দুল মজিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শ্বাসকষ্ট, বুকব্যথা। সকালে হাসপাতালোত আলচু। ডাক্তারে চেম্বারোত তালা। ধর্মঘট করোছে। ডাক্তারোক ধরি নাকি মারছে, ওই জন্যে ধর্মঘট করোছে। চিকিৎসা বন্ধ থুইছে। চিকিৎসা বন্ধ থুইলে হামরা বাঁচমো কেমন করি? অনেক্ষণ থাকি বসি। আর আনা দম নিয়ে বাড়িত যাইম।’

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গৃহবধূ চায়না বেগম বলেন, ‘ছাওয়া কোনার জ্বর। ৪০ টাকা ভ্যান খরচ করি হাসপাতালোত আসনু। কিন্তু ডাক্তার কোনো রোগী দেখছে না। রুমোত তালা ঝুলাইছে। অসুস্থ ছাওয়াটাক নিয়া অ্যালা কোনটে যাইম কন তো?।’

শুধু বৃদ্ধ আব্দুল মজিদ ও গৃহবধূ চায়না বেগমই নন, আরও অনেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে চিকিৎসা নিতে এসে না পেয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে বাড়ি ফিরেছেন।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক অন্তঃসত্ত্বা নারী চিকিৎসককে সমন্বয়ক পরিচয়ে গত শুক্রবার মারধরের অভিযোগ ওঠে। প্রতিবাদে গতকাল থেকে দুই দিন ধরে কর্মবিরতি পালন করছেন হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মচারীরা। এতে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটিতে প্রতিদিন বহির্বিভাগে গড়ে পাঁচ শতাধিক রোগী চিকিৎসাসেবা নেন। গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কলেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা রাধারানী মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আতাউর রহমান বুকে ব্যথা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক সাবরিনা মুসরাত জাহান মৌ (৩০) ওই রোগীকে হৃদরোগে আক্রান্ত হিসেবে চিকিৎসাসেবা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। এরপর তিনি অন্য রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত হন। এ সময় সেখানে সমন্বয়ক পরিচয়ধারী রোগী আতাউর রহমানের ছেলে তাহমিদ সরকার তুর্যসহ আরও চার–পাঁচজন ওই চিকিৎসককে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে চিকিৎসকের শরীরে আঘাত করেন। এ ঘটনায় চিকিৎসক সাবরিনা মুসরাত জাহান মৌ তুর্য, তাওরাতসহ অজ্ঞাতনামা চার–পাঁচজনের বিরুদ্ধে শুক্রবার রাতে তারাগঞ্জ থানায় অভিযোগ দেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল শনিবার সকাল থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

চিকিৎসাসেবা না পেয়ে তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা। আজ রোববার দুপুরে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
চিকিৎসাসেবা না পেয়ে তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা। আজ রোববার দুপুরে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

তবে চিকিৎসককে মারধর করার অভিযোগ অস্বীকার করে তাহমিদ সরকার তুর্য বলেন, ‘আমার বাবা হাসপাতালে ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন। ওই চিকিৎসককে বারবার দেখার জন্য অনুরোধ করছিলাম। তিনি না শুনে উল্টো আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে একটু কথা–কাটাকাটি হয়েছে।’

আজ দুপুর ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান ফটকে পুলিশি পাহারা। হাসাপাতালের সামনে চিকিৎসকদের কর্মবিরতির ব্যানার টাঙানো। বহির্বিভাগে কার্যক্রম বন্ধ, চিকিৎসকদের কক্ষে ঝুলছে তালা। হাসপাতাল চত্বর বহির্বিভাগের সামনে ও বারান্দায় রোগীদের জটলা। চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীরা অপেক্ষার পর ফিরে যাচ্ছেন। ভর্তি রোগীরাও বেডে কাতরাচ্ছেন।

চিকিৎসাসেবা নিতে আসা ফকিরপাড়া গ্রামের তৌহমিনা বেগম বলেন, ‘শ্বাসকষ্টে বাচুছি না। জীবন বাঁচার জন্যে হাসপাতাল আসনো, তা এটা সউগ বন্ধ। কি করমো বুঝির পাওছি না। হামার জীবন নিয়া টানাটানি উঠছে।’

দুই ঘণ্টা অপেক্ষার পর চিকিৎসক দেখাতে না পেরে বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের নুর হোসেনের স্ত্রী হাসিনা বেগম (৬০)। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘পায়োত খোচা ঢুকছে। ব্যথাতে সারা রাত ঘুমার পাও নাই। সকাল ৯টায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিবার আলছুং। কিন্তু দুই ঘণ্টা বসি থাকি কোনো চিকিৎসা পানু না। বাড়ি ফেরত যাওছু।’ ডায়রিয়া নিয়ে হাসপাতালে এসে চিকিৎসাসেবা না পেয়ে ফিরে গেছেন পালপাড়া গ্রামের চিন্তা মনি মহন্ত।

চিকিৎসাসেবা না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন জগদীশপুরের বৃদ্ধা মজিফা বেগম, ঝাঁকুয়াপাড়ার নুর বানু, সাহেবা বেগম, সুরঙ্গের বাজারের আশরাফুল ইসলাম, পালপাড়ার চিন্তা মনি মহন্তসহ অন্তত ৩০ জন রোগী।

চিকিৎসকদের দ্বিতীয় দিনের কর্মবিরতিতে তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবাকক্ষগুলোতে তালা ঝুলছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
চিকিৎসকদের দ্বিতীয় দিনের কর্মবিরতিতে তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবাকক্ষগুলোতে তালা ঝুলছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

শুধু বহির্বিভাগেই নয়, কর্মবিরতিতে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালে ভর্তি কাংলাচড়া গ্রামের ধীরেন্দ্র রাথ রায় বলেন, ‘হাত ফাটি গেছে। এক দিন এক রাত হওছে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার, কিন্তু কোনো ডাক্তার মোক দেখিল না।’

জানতে চাইলে তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার অর্নিবান মল্লিক বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত চিকিৎসককে হামলাকারী গ্রেপ্তার হবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।

তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। চিকিৎসকদের পুলিশি প্রটেকশন দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।

রংপুরের সিভিল সার্জন শাহীন সুলতান মোবাইল ফোনে বলেন, ‘ঘটনা শোনার পর গতকাল হাসপাতালে গিয়েছিলাম। আজও চিকিৎসকদের আউটডোর–ইনডোর সেবা চালু রাখার অনুরোধ করেছি।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর জেলা কমিটির সদস্য আল-আমিন ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটির সদস্য তাওরাত আর তাহমিদ সরকার তুর্য উপজেলা কমিটির জন্য লিস্টেট সদস্য। সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে কেউ যদি অন্যায় করে, তাঁর শাস্তি হবে। কোনো ব্যক্তির দায়ভার কোনো সংগঠন নেবে না। তবে তাঁরা সত্যি কোনো অপরাধ করেছে কি না, তা দেখার বিষয়।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ বলেন, ‘ঘটনা শোনার পর গতকাল তারাগঞ্জ হাসপাতালে গিয়েছিলাম। রোগী-স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছি। সেবাপ্রার্থীরা চিকিৎসক ও হাসপাতালের স্টাফদের আচরণ খারাপের অভিযোগ করেছে। যে দুজনের বিরুদ্ধে চিকিৎসকের সঙ্গে ঝামেলার অভিযোগ উঠেছে, তাদের মধ্যে তাওরাত জেলা কমিটির সদস্য।’ তাহমিদ সরকার তুর্যের বিষয়ে বলেন, এখনো উপজেলা কমিটি ঘোষণা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যৌনকর্মীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ, কুয়াকাটায় জামায়াত নেতা বহিষ্কার

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
বহিষ্কার করা জামায়াত নেতা আ. হালিম। ছবি: সংগৃহীত
বহিষ্কার করা জামায়াত নেতা আ. হালিম। ছবি: সংগৃহীত

নিজের বাড়িতে যৌনকর্মীদের (পতিতা) আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে কুয়াকাটা পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি আ. হালিমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর কুয়াকাটা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য নিশ্চিত করেন কুয়াকাটা পৌর জামায়াতের আমির মাওলানা মো. শহীদুল ইসলাম।

জামায়াত নেতারা বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার বিশেষ রোকন বৈঠক আহ্বান করা হয়। বৈঠকে উত্থাপিত অভিযোগ ও প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিষয়টি জামায়াতে ইসলামীর নীতিমালা ও আদর্শ পরিপন্থী। তাই সাংগঠনিক শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে আ. হালিমকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কুয়াকাটা পৌর জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা মোহাম্মদ মাঈনুল ইসলাম মন্নান, লতাচাপলী ইউনিয়ন জামায়াতের আমির রাসেল মুসুল্লি, পৌর জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা আল আমিন মৃধা, যুব জামায়াতের সভাপতি হেমায়েত উদ্দিন সিকদার এবং জামায়াতের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সেক্রেটারি শাহাবুদ্দিন ফরাজি।

কুয়াকাটা পৌর জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা মোহাম্মদ মাঈনুল ইসলাম মন্নান বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী একটি আদর্শভিত্তিক সংগঠন। এখানে ব্যক্তির চেয়ে সংগঠনের আদর্শ ও নৈতিকতা গুরুত্বপূর্ণ। কোনো নেতার বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠলে তা দলীয়ভাবে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়। সংগঠনের সুনাম ও আদর্শ রক্ষার স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

কলাপাড়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘একটি অভিযোগের ভিত্তিতে বিশেষ রোকন বৈঠক ডেকে কুয়াকাটা পৌর ৫ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতিকে বহিষ্কার করা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী করতে হলে অবশ্যই সাংগঠনিক নিয়মকানুন ও দলীয় নীতিমালা মেনে চলতে হয়।’

তবে অভিযুক্ত মো. আ. হালিম তাঁর বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার বাসায় ছয়টি পরিবার ভাড়া থাকে। এর মধ্যে একটি বাসা মা-মেয়ে পরিচয়ে চারজন নারী দুই মাস আগে ভাড়া নেন। তাঁরা কোথায় কী কাজ করেন, তা আমার জানার বিষয় নয়। আমার সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই আমাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমি শিগগির সংবাদ সম্মেলন করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দলবদলেও রক্ষা পেলেন না ছাত্রলীগ নেতা, ডিবির হাতে আটক

দেবিদ্বার (কুমিল্লা) সংবাদদাতা
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ০১
মোহাম্মদ শাহীন মিয়া। ছবি: সংগৃহীত
মোহাম্মদ শাহীন মিয়া। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপিতে যোগদানের এক দিন পার না হতেই নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কুমিল্লা উত্তর জেলার সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ শাহীন মিয়াকে (৩৪) আটক করেছে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। গতকাল সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাত ৮টার দিকে দেবিদ্বার উপজেলার ১ নম্বর বড়শালঘর ইউনিয়নের সৈয়দপুর বাজারে তাঁর নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ‘শাহীন ফার্মেসি’ থেকে ডিবি ও থানা-পুলিশের যৌথ অভিযানে তাঁকে আটক করা হয়।

মোহাম্মদ শাহীন মিয়া বড়শালঘর গ্রামের মৃত শহিদ মেম্বারের ছেলে। তিনি নিষিদ্ধ সংগঠন কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি এবং কুমিল্লা-৪ দেবিদ্বার আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের আস্থাভাজন ছিলেন।

এর আগে গত রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে দেবিদ্বার পৌর এলাকার গুনাইঘরে ‘শহীদ জিয়া মিলনায়তনে’ আনুষ্ঠানিকভাবে শালঘর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের দুই শতাধিক নেতা-কর্মী বিএনপিতে যোগদান করেন। অনুষ্ঠানে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, টানা চারবারের সাবেক এমপি ও আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মুন্সির হাতে তাঁরা বিএনপির পতাকা তুলে দেন। যোগদানকারীদের মধ্যে মোহাম্মদ শাহীন মিয়াও ছিলেন।

ওই যোগদান কার্যক্রম সম্পন্ন হয় আওয়ামী লীগের বড়শালঘর ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি জহিরুল ইসলাম জারু চেয়ারম্যানের নির্দেশে এবং উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সহসভাপতি ও ইউপি সদস্য আলম হাজারীর নেতৃত্বে। যোগদানকারীরা সবাই সাবেক আওয়ামী লীগ এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের সমর্থক ছিলেন।

এ বিষয়ে সদ্য বিএনপিতে যোগদানকারী ইউপি সদস্য আলম হাজারী বলেন, ‘শাহীনের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। কেন তাঁকে আটক করা হলো, সেটিও আমরা জানি না।’

কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার রেজভিউল আহসান মুন্সি বলেন, ‘মোহাম্মদ শাহীন মিয়া আমাদের পুরোনো কর্মী। বিগত সরকারের আমলে নিরাপত্তার কারণে তিনি ভিন্নভাবে চলাফেরা করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।’

দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সারোয়ার শাহীন মিয়াকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তিনি বর্তমানে ছুটিতে আছেন। অভিযানে থাকা ওসি (তদন্ত) মঈনুদ্দিনের কাছ থেকে বিস্তারিত জানা যাবে।

মঈনুদ্দিন বলেন, ‘শাহীনকে ডিবি পুলিশ আটক করেছে। কোন মামলায় তাঁকে আটক দেখানো হয়েছে, তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানানো হবে।’

এ বিষয়ে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ওসি মো. শামসুল আলম শাহ বলেন, গ্রেপ্তারের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‎আরমানিটোলায় বহুতল ভবনে আগুন‎, ৪০ মিনিট পর নিয়ন্ত্রণে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫৯
বাবুবাজার এলাকায় হাজী টাওয়ার নামের ১৪ তলা ভবনের ষষ্ঠ তলায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। ছবি: ফায়ার সার্ভিস
বাবুবাজার এলাকায় হাজী টাওয়ার নামের ১৪ তলা ভবনের ষষ্ঠ তলায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। ছবি: ফায়ার সার্ভিস

‎রাজধানীর আরমানিটোলার বাবুবাজার এলাকায় হাজী টাওয়ার নামের ১৪ তলা ভবনের ষষ্ঠতলায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে আগুন লাগার খবর পেয়ে নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট। সকাল ৭টা ২০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর থেকে আজ সকালে খুদে বার্তায় সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানানো হয়।

‎‎ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে আগুন লাগার সংবাদ পাওয়া যায়। খবর পাওয়ার মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে, অর্থাৎ সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলো ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।

বাবুবাজার এলাকায় হাজী টাওয়ার নামের ১৪ তলা ভবনের ষষ্ঠ তলায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। ছবি: ফায়ার সার্ভিস
বাবুবাজার এলাকায় হাজী টাওয়ার নামের ১৪ তলা ভবনের ষষ্ঠ তলায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। ছবি: ফায়ার সার্ভিস

হাজী টাওয়ারের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সদরঘাট ফায়ার স্টেশন থেকে ২টি, সিদ্দিকবাজার ফায়ার স্টেশন থেকে ৫টি এবং সূত্রাপুর ফায়ার স্টেশন থেকে ২টিসহ মোট ৯টি ইউনিট ঘটনাস্থলে কাজ করে। পরে সকাল ৭টা ২০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।‎

তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। এ বিষয়ে তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নির্দোষ আওয়ামী লীগসহ সাধারণ মানুষকে হয়রানি না করার দাবি বিএনপি নেতার

নেছারাবাদ (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪১
গতকাল দুপুরে নেছারাবাদে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা মো. মইনুল হাসান। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল দুপুরে নেছারাবাদে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা মো. মইনুল হাসান। ছবি: আজকের পত্রিকা

নেছারাবাদে নির্দোষ ও নিরপরাধ আওয়ামী লীগ সমর্থকসহ সাধারণ জনগণকে হয়রানি না করার জন্য পিরোজপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন বিএনপি নেতা মো. মইনুল হাসান। গতকাল সোমবার দুপুরে নেছারাবাদ উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এই দাবি জানান। জেলা প্রশাসকের সফর উপলক্ষে নেছারাবাদ উপজেলা পরিষদ হলরুমে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পিরোজপুর জেলা প্রশাসক মো. আবু সাঈদ। সভাপতিত্ব করেন নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিত দত্ত। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন নেছারাবাদ-কাউখালী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সাবিহা মেহবুবা, নেছারাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেহেদী হাসান।

সভায় স্বরূপকাঠি পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মইনুল হাসান বলেন, ‘নেছারাবাদ উপজেলায় যেন কোনো নির্দোষ ও নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা না হয়। গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন বা হয়রানি বন্ধ করতে হবে।’ প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি। বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘বিএনপির প্রার্থী আহমেদ সোহেল মঞ্জুর সুমনও ইতিপূর্বে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে একই ধরনের অনুরোধ জানিয়েছেন।’ পাশাপাশি ধর্মকে অপব্যবহার করে নেছারাবাদে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি যেন না হয়, সে বিষয়ে প্রশাসনের কঠোর নজরদারির আহ্বান জানান তিনি।

এর আগে একই সভায় বক্তব্য দেন জামায়াত নেতা মো. গোলাম আযম। তিনি অভিযোগ করে বলেন, অতীতে ডিবি পুলিশের মাধ্যমে নির্দোষ কিছু মানুষকে ধরে গ্রেপ্তার-বাণিজ্য করা হয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ করে প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার দাবি জানান তিনি।

নেছারাবাদ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রায়হান মাহমুদের সঞ্চালনায় মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন, নেছারাবাদ সেনাক্যাম্পের কমান্ডার ক্যাপ্টেন আল আরাফ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর হোসেন জয় প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত