এক প্রকল্পেই নিয়োগ ৭৫৩ গেটকিপার, বেতন বন্ধ ছয় মাস

  • ২০১৬ সালে এসব গেটকিপার নিয়োগ দেওয়া হয়
  • ছয় মাস ধরে তাঁরা কোনো বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না
  • বেতন-ভাতা না পেলেও দিনরাত ডিউটি করতে হচ্ছে: ভুক্তভোগী
  • প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে বেতন দেওয়ার চেষ্টা চলছে: পিডি
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী    
Thumbnail image
ফাইল ছবি

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ৭৫৩ জন গেটকিপার ছয় মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। এসব গেটকিপার নিয়োগ পেয়েছিলেন একটি প্রকল্পে। ওই প্রকল্পে এখন কোনো টাকা নেই। এ কারণে তাঁদের বেতন দিতে পারছে না রেল কর্তৃপক্ষ। আবার তাঁদের চাকরি রাজস্ব খাতেও নেওয়া হচ্ছে না। ফলে বেতন-ভাতা ছাড়া মানবেতর জীবন যাপন করছেন এসব গেটকিপার।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ‘পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লেভেল ক্রসিং গেটসমূহের পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন’ নামক একটি প্রকল্প ২০১৫ সালের ১ জুলাই অনুমোদন পায়। প্রকল্পটির আওতায় ২০১৬ সালে মোট ৮৫১ জন গেটকিপার নিয়োগ দেওয়া হয়। বর্তমানে চাকরিতে আছেন ৭৫৩ জন। ছয় মাস ধরে তাঁরা কোনো বেতন-ভাতা পাননি।

জানা গেছে, ওই প্রকল্পের আওতায় গেট রক্ষণ ঘর নির্মাণ, রোড সারফেস মেরামত, গেটে প্রতিবন্ধক স্থাপন, চেক রেল, বেয়ারিং প্লেট, চেক বোল্টসহ বিভিন্ন কাজ হয়। প্রকল্পটির অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৪৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। প্রকল্পের অধিকাংশ কাজ সম্পন্ন হলেও শুধু গেটকিপারদের বেতন রাজস্ব খাতে স্থানান্তর না হওয়ায় প্রকল্পটি এখনো শেষ হয়নি। শুধু গেটকিপারদের বেতন-ভাতার জন্য প্রকল্প দ্বিতীয় দফা বাড়িয়ে ১১৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা করা হয়। ওই টাকা শেষ হওয়ার পরে প্রকল্প ব্যয় ফের ১৩০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু সংশোধিত তৃতীয় দফার বর্ধিত প্রকল্প ব্যয় এখনো অনুমোদন হয়নি।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গেটকিপারদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের জন্য ২০১৯ সালের আগস্টেই মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় পশ্চিম রেল। প্রস্তাবটি রেল মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যায় অর্থ বিভাগে। এরপর গত ৩০ সেপ্টেম্বর অর্থ বিভাগ চিঠি দিয়ে জানায়, ১৯৯৭ সালের জুলাই এবং তার পরবর্তী সময়ে শুরু হওয়া কোনো প্রকল্পের চাকরি এই মুহূর্তে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের সুযোগ নেই। ফলে রাজস্ব খাত থেকেও বেতন পাচ্ছেন না গেটকিপাররা।

রাজশাহীর আড়ানী রেলসেতুর গেটকিপার তাহমিনা খাতুন বলেন, ‘আমার বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরবে। মা ও ছেলেকে নিয়ে আড়ানীতে ভাড়া বাসায় থাকি। গত ছয় মাস বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় সংসার চালাতে কষ্টের শেষ নেই। মাস শেষ হলেই শুনি এবার বেতন হবে, কিন্তু আর হয় না। বেতন-ভাতা না পেলেও দিনরাত ডিউটি করতে হচ্ছে। তা না হলে তো দুর্ঘটনা ঘটে যাবে।’

তাহমিনা খাতুন আরও বলেন, ‘অন্য সরকারি চাকরিতে যাওয়ারও আর বয়স নেই। তাই আমরা চাই আমাদের চাকরিটা সরকারীকরণ করা হোক। না হলে আমরা বিপদে পড়ে যাব।’

পশ্চিম রেলের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গেটকিপাররা প্রায় ২০ হাজার টাকা বেতন পেতেন। সব বিধিবিধান মেনেই তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রকল্পটির অন্য সব কাজই শেষ হয়েছে, শুধু গেটকিপারদের বেতন-ভাতার জন্যই প্রকল্পটির মেয়াদ তৃতীয় দফা বাড়াতে হচ্ছে। রেল কর্তৃপক্ষ সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা করছে, বিষয়টি অত্যন্ত মানবিক। আবার এখন গেটকিপারদের ছাঁটাই করলে একদিকে যেমন ট্রেন ও যাত্রীর নিরাপত্তাঝুঁকি বাড়বে, তেমনি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলাও হবে। এই জটিলতার তারা একটা সমাধান চাচ্ছে।

ওই প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) বীরবল মন্ডল বলেন, ‘এখন প্রকল্পের তহবিলে কোনো টাকা নেই। ফলে গেটকিপারদের বেতন দেওয়া যাচ্ছে না। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে বরাদ্দ পাওয়া গেলে বেতন দেওয়া হবে। পাশাপাশি তাঁদের চাকরি প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। সেটার সম্ভাবনা আপাতত কম। তবে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়েই বেতন দেওয়ার চেষ্টা চলছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত