Ajker Patrika

রাজশাহীতে জনসংলাপ: সাপ্তাহিক ছুটি চান গৃহকর্মীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ২৮ মে ২০২৫, ১৭: ৩২
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বারসিকের উদ্যোগে জনসংলাপে গৃহকর্মীরা অংশ নেন। আজ সকালে রাজশাহীর একটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বারসিকের উদ্যোগে জনসংলাপে গৃহকর্মীরা অংশ নেন। আজ সকালে রাজশাহীর একটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে। ছবি: আজকের পত্রিকা

অসুখ-বিসুখে গৃহকর্মীরা এক দিন কাজে যেতে না পারলেই বেতন কেটে নেওয়া হয়। অথচ তাঁদের কোনো ছুটি নেই। তাই তাঁরা সপ্তাহে অন্তত এক দিন ছুটি চান। সেই সঙ্গে গৃহকর্তার কাছ থেকে ভালো ব্যবহারও আশা করেন তাঁরা। ‘রাজশাহী নগরীর গৃহকর্মীদের অবদান, সমস্যা ও সমাধানের উপায়’ শীর্ষক এক জনসংলাপে গৃহকর্মীরা এমন কথা বলেছেন।

আজ বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরের একটি হোটেলের সম্মেলনকক্ষে এই জনসংলাপের আয়োজন করে বেসরকারি উন্নয়ন ও গবেষণা সংস্থা বারসিক। সংলাপের শুরুতে ‘রাজশাহী নগরীর গৃহকর্মীদের অবদান, সমস্যা ও সমাধানে নীতি গবেষণা’ শীর্ষক এক গবেষণার প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, নগরে ৮ থেকে ১০ হাজার গৃহকর্মী কাজ করেন।

শহরবানু বিবির এক হাত ভাঙা। থাকেন পদ্মাপারের বস্তিতে। ভাঙা হাত নিয়েই গৃহকর্মীর কাজ করেন ৭০ বছরের এই নারী। জনসংলাপে তিনি বলেন, তিনি এখন একা হয়ে পড়েছেন। তাই এলাকার এক বাড়িতে কাজ করেন। সেখানে খান, মাস শেষে এক হাজার টাকা দেওয়া হয়। কোনো কাজে ভুল-ত্রুটি হলে গৃহকর্তার ‘কড়া কথা’ তাঁকে কষ্ট দেয়। মানুষমাত্রই ভুল করে। তাই এর জন্য কড়া কথা যেন বলা না হয়, এইটুকুই প্রত্যাশা করেন তিনি।

গৃহকর্মী মুনমুন বললেন, কাজ করতে করতে একদিন তিনি মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে মেঝেতেই ঘুমিয়ে যান। গৃহকর্তার স্ত্রী তখন তাঁকে পা দিয়ে লাথি দিয়ে তোলেন। সেদিন তিনি অসুস্থ ছিলেন বলে পরের দিনটা ছুটি চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে ছুটি দেওয়া হয়নি। অসুস্থ শরীরেই তাঁকে কাজ করতে হয়েছে। কাজে না গেলে তাঁকে বাদ দিয়ে দেওয়া হতো। মুনমুন বলেন, ‘আমরাও মানুষ। আমাদেরও অসুখ-বিসুখ হয়। অন্তত একটা দিন ছুটি দরকার।’

আজেমা বেগম নামের আরেক গৃহকর্মী বলেন, ‘ওরা চাকরি করে। সপ্তাহে এক দিন ছুটি পায়। আমরা সামান্য বেতনে কাজ করি। আমরা কেন ছুটি পাব না?’ গৃহকর্মী শিলা বলেন, ‘কাজ দেওয়ার সময় বলা হয় একটা কাজ। কিন্তু কাজে গেলে কাজ হয়ে যায় সাতটা। তারপরও আমরা কাজ হারানোর ভয়ে কাজ করি। অথচ অসুখ-বিসুখে একটা দিন না এলে পরের দিন দারোয়ানকে বলে রাখে যেন আর ঢুকতে না দেয়। এটা খুব কষ্ট দেয়।’

নগর দরিদ্র অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, ‘গৃহকর্মীরা বাড়িতে ভালোমন্দ রান্না করেন। সেই খাবার দিনের পর দিন ফ্রিজে থেকে নষ্ট হয়। তারপরও বেশির ভাগ বাড়ির মালিক একটু ভালো খাবার গৃহকর্মীকে খেতে দেন না। অসুস্থ হলে তাঁরা গৃহকর্মীর বেতন কেটে নেন। এসব ক্ষেত্রে উদার দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। অবশ্য কিছু কিছু ব্যতিক্রমও আছে। তাঁরা গৃহকর্মীদের যথেষ্ট ভালোবাসেন। তাঁকেও আপন করে নেন।’

উন্নয়নকর্মী সম্রাট রায়হান বলেন, অবহেলিত উন্নয়নকর্মীদের জীবনমানের উন্নয়ন ও অধিকার আদায়ে তাঁদেরও অ্যাসোসিয়েশন থাকা প্রয়োজন। তাঁদেরও সংঘবদ্ধ থেকে ভালো বেতন ও সাপ্তাহিক ছুটি আদায় করে নিতে হবে। পাশাপাশি গৃহকর্তারও মানসিকতার উন্নয়ন দরকার।

জনসংলাপে গৃহকর্মীদের নানা পরামর্শ দেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের রাজশাহীর সহকারী পরিচালক নীলা ইয়াসমিন, শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা আবদুল আমিন, কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলের সুপার ফেরদৌস রাবিয়া ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আইনুল হক। সংলাপ পরিচালনা করেন বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম। এর আগে বারসিকের পলিসি রিসার্স অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি অফিসার আমরীন বিনতে আজাদ গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে প্রেজেন্টেশন দেন।

চলতি বছরের মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত শহরে পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা যায়, রাজশাহীতে এখনো ১১ শতাংশ গৃহকর্মীর বয়স ১৫ বছরের নিচে। গৃহকর্মীদের ৪০ শতাংশই নিরক্ষর। মাসে ২ হাজার টাকার কম বেতন পায় ২৫ শতাংশ গৃহকর্মী, আর ৪ হাজার টাকার বেশি বেতন পায় মাত্র ১০ শতাংশ। গবেষণা প্রতিবেদনে শিশুশ্রম বন্ধ করা, বেতন না কেটে গৃহকর্মীদের ছুটি ও স্বাস্থ্য সুবিধা নিশ্চিতের সুপারিশ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাসার বাথরুমে পড়ে ছিল নারী প্রভাষকের লাশ, মাথায় আঘাতের চিহ্ন

বগুড়া প্রতিনিধি
ফাবিয়া তাসনিম সিধি। ছবি: সংগৃহীত
ফাবিয়া তাসনিম সিধি। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়ার এক বাসা থেকে ফাবিয়া তাসনিম সিধি (২৯) নামের এক প্রভাষকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে বগুড়া শহরের চক ফরিদ এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

মৃত ফাবিয়া বগুড়ার সরকারি শাহ সুলতান কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক। বছর দেড়েক আগে তিনি কলেজটিতে যোগদান করেন।

এই তথ্য নিশ্চিত করে বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজার রহমান জানান, ফাবিয়া অবিবাহিত। তিনি বগুড়া শহরের চক ফরিদ এলাকায় ডা. রাশেদুল হাসানের বাড়ির তিনতলায় ভাড়া বাসায় তাঁর মায়ের সঙ্গে থাকতেন। কয়েক দিন আগে তাঁর মা গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে যান। গতকাল দুপুরের পর থেকে মেয়েকে ফোনে না পাওয়ায় তাঁর মা রাত ১০টার দিকে বগুড়া আসেন। অনেক ডাকাডাকি করে দরজা না খোলায় পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পরে পুলিশ সেখানে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের উপস্থিতিতে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে বাসার বাথরুমে ফাবিয়ার লাশ দেখতে পায়।

পুলিশ জানায়, মৃত ব্যক্তির নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল এবং মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্ন ছাড়াও জিবে দাঁত দিয়ে কামড় দেওয়া ছিল। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজার রহমান বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অটোরিকশাকে চাপা দিল বাস, প্রাণ গেল তিনজনের

ফরিদপুর প্রতিনিধি
বাসচাপায় অটোরিকশাটি ভেঙেচুরে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাসচাপায় অটোরিকশাটি ভেঙেচুরে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বাসের চাপায় একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় শিশুসহ আরও চারজন আহত হয়। আজ শুক্রবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল মহাসড়কের কৈডুবী সদরদি রেলক্রসিং এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সোহেল মিয়া এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন নারী ও একজন পুরুষ। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।

খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার অভিযান চালান। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে।  

হাইওয়ে থানার এসআই সোহেল মিয়া বলেন, অটোরিকশাটি ভাঙ্গা থেকে টেকেরহাটের উদ্দেশে যাচ্ছিল। কৈডুবী সদরদি রেলক্রসিং এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা নিউ মডার্ন পরিবহনের একটি বাস অটোরিকশাটিকে চাপা দেয়। এই ঘটনায় বাসটি আটক করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাতিয়ায় ৫৬০০ কেজি জাটকা ইলিশ জব্দ, এতিমখানায় বিতরণ

­হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
কোস্ট গার্ডের অভিযানে জব্দ জাটকা ইলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
কোস্ট গার্ডের অভিযানে জব্দ জাটকা ইলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

নোয়াখালীর হাতিয়ার জাগলার চর এলাকার মেঘনা নদীতে অভিযান চালিয়েছে কোস্ট গার্ড। এ সময় একটি নৌকা থেকে ৫ হাজার ৬০০ কেজি জাটকা ইলিশ জব্দ করা হয়। এই ঘটনায় আটক কয়েকজন মাঝিমাল্লার কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে কোস্ট গার্ড হাতিয়ার একটি দল এই অভিযান চালায়। জব্দ করা জাটকাগুলোর মূল্য প্রায় ২৮ লাখ টাকা।

কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট মো. আবুল কাশেম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মেঘনা নদীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কোস্ট গার্ড। অভিযানে মেঘনা নদীর জাগলার চর এলাকায় একটি কাঠের নৌকায় তল্লাশি করা হয়। ওই নৌকা থেকে ৫ হাজার ৬০০ কেজি জাটকা জব্দ করা হয়। এ সময় মাঝিদের মুচলেকা নিয়ে নৌকা ছেড়ে দেওয়া হয়। জব্দ মাছগুলো মৎস্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এতিমখানা ও দুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। মৎস্য সম্পদ রক্ষায় কোস্ট গার্ডের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মাঠে পড়ে ছিল মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের সালথায় উৎপল সরকার (৩৫) নামের এক মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের গৌরদিয়া এলাকার কালীতলা ব্রিজ-সংলগ্ন মাঠ থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় মাঠ-সংলগ্ন সেতু থেকে চোখ বাঁধা অবস্থায় থাকা ফিরোজ মোল্যা নামের এক ভ্যানচালককে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন।

নিহত উৎপল ফরিদপুর জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের রনকাইল গ্রামের অজয় সরকারের ছেলে। তাঁর স্ত্রী ও আড়াই বছর বয়সী এক শিশুসন্তান রয়েছে।

থানা-পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ ভোরে সড়কের পাশে ফাঁকা মাঠে রক্তাক্ত অবস্থায় একটি লাশ দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন। পাশেই একটি সেতুর সঙ্গে একই গ্রামের ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় বেঁধে রাখা হয়েছিল। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি খুলে বলেন তিনি।

ভ্যানচালকের বরাত দিয়ে রনকাইল গ্রামের বাসিন্দা ও প্রতিবেশী কাজী শাহীন বলেন, উৎপল সরকার ব্যাটারিচালিত ভ্যানে করে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে মাছ কিনতে যাচ্ছিলেন। পথে অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চার ব্যক্তি দেশীয় অস্ত্রের মুখে ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে ব্রিজের রেলিংয়ে বেঁধে ফেলে। তারা উৎপলের সঙ্গে থাকা টাকাপয়সা লুট করে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সালথা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কে এম মারুফ হাসান রাসেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুই থেকে তিনজন দুর্বৃত্ত ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে এটাকে ডাকাতি বলা যায় না। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষে মূল কারণ বলা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত