Ajker Patrika

১৪ বছরের উন্নয়নে নতুন রূপে রাজশাহী

রিমন রহমান, রাজশাহী
আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২৩, ২৩: ৫৭
১৪ বছরের উন্নয়নে নতুন রূপে রাজশাহী

বহুদিন ধরেই উন্নয়নবঞ্চিত হয়ে থাকার অভিযোগ জানিয়ে আসছিলেন যমুনার পশ্চিম পারের মানুষ। যারাই ক্ষমতায় থাকুক, উত্তরাঞ্চল উন্নয়নবঞ্চিত থেকেছে বলে অভিযোগ করে এসেছেন তাঁরা। তবে বর্তমান সরকারের তিন মেয়াদে বিগত ১৪ বছরে সেই আক্ষেপ অনেকটাই মিটেছে। দেশের অন্য অঞ্চলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে রাজশাহী অঞ্চলও। 

বিশেষ করে গত পাঁচ বছরে রাজশাহীর প্রতিটি জেলাতেই উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। বিভাগীয় শহর রাজশাহী পরিণত হয়েছে সাজানো-গোছানো এক দৃষ্টিনন্দন নগরীতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন দেওয়া প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার একটি সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাজশাহী হয়ে উঠছে দেশের সেরা শহর। রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এরই মধ্যে এর বাইরেও অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। 

শিক্ষানগরী রাজশাহীতে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক। এখানে তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানকে জায়গা বরাদ্দও শুরু হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী করতে ঢাকার বাইরে রাজশাহীতেই দ্বিতীয় নভোথিয়েটার নির্মাণ করা হচ্ছে। এর কাজও প্রায় শেষ। শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য করা হচ্ছে বিসিক-২ শিল্পাঞ্চল। নির্মিত হয়েছে শিশু হাসপাতাল। চলছে ক্যানসার সেন্টারের নির্মাণকাজও। মহানগরীর বুধপাড়া এলাকায় নির্মিত হয়েছে রাজশাহীর প্রথম ফ্লাইওভারআরও অনেক উন্নয়নের কল্যাণে বদলে গেছে রাজশাহী মহানগরী। সর্বশেষ ১০ বছর আগে রাজশাহীতে এসেছিলেন এমন কোনো ব্যক্তি এখন শহরটাকে আর চিনতেই পারবেন না! 

উত্তরাঞ্চলের প্রথম ফ্লাইওভার নির্মিত হয়েছে রাজশাহীতে। শহরের সরু সড়কগুলোকে সম্প্রসারণ করে চার লেন পর্যন্ত করা হয়েছে। সড়কগুলোর মাঝে দৃষ্টিনন্দন সড়কবাতি বসিয়েছেন সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। নতুন নতুন সড়ক আর সড়কবাতি দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন নগরবাসী।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত শুধু রাজশাহী সিটি করপোরেশনই ১ হাজার ১৪৭ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এখনো চলছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প। এই প্রকল্পের ভেতরেই রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা করা হয়েছে। চলছে বাস্তবায়ন। এরই মধ্যে রাসিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার উন্নয়ন করেছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য নির্মিত হয়েছে বড় বড় নালা। আলিফ লাম মিম ভাটার মোড় থেকে বিহাস পর্যন্ত নবনির্মিত ফোর লেন সড়কএই ১৪ বছরে রাজশাহী জেলা পরিষদ বাস্তবায়ন করেছে ২১ কোটি টাকার বেশি উন্নয়ন প্রকল্প। এর মধ্যে ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে আধুনিক জেলা পরিষদ ভবন। রাজশাহীর গ্রামীণ সড়কগুলোর উন্নয়নে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) গত ১৪ বছরে ২ হাজার ৫৫৭ কোটি ৮২ লাখ টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এর ফলে রাজশাহীর প্রত্যন্ত গ্রামের কাঁচা রাস্তাগুলোও এখন পাকা হয়েছে। নির্মিত হয়েছে ব্রিজ-কালভার্ট। সহজ হয়েছে গ্রামের মানুষের জীবন।

রাজশাহীতে অবকাঠামোগত উন্নয়নে গণপূর্ত বিভাগ-১ গত ১৪ বছরে বাস্তবায়ন করেছে ২৬৩ কোটি টাকার প্রকল্প। এর মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, এনএসআই কার্যালয়, রাজশাহী নগর পুলিশের নতুন প্রধান কার্যালয়, মডেল মসজিদ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন ইত্যাদি। 

গণপূর্ত বিভাগ-২ রাজশাহীতে বাস্তবায়ন করেছে ২৬৮ কোটি ১১ লাখ টাকার প্রকল্প। এর মধ্যে রয়েছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সম্প্রসারণ, শিশু হাসপাতাল নির্মাণ, বিভিন্ন ফায়ার স্টেশনসহ অন্য সরকারি দপ্তরের ভবন। দৃষ্টিনন্দন শেখ রাসেল পার্কশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নে রাজশাহী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদের ১৪ বছরে ৭৩৯ কোটি ১৬ লাখ টাকার বেশি উন্নয়ন প্রকল্প। এর ফলে রাজশাহী মহানগরী তো বটেই, জেলার ৯ উপজেলার প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হয়েছে আধুনিক ভবন। 

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর রাজশাহীতে বাস্তবায়ন করেছে ৮৬ কোটি টাকার প্রকল্প। গত ১৪ বছরে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) পোড়ামাটিতে ফসল ফলাতে বাস্তবায়ন করেছে ২ হাজার ৯৫০ কোটি ১৮ লাখ টাকার বেশি প্রকল্প। এর ফলে বরেন্দ্র অঞ্চলের একফসলি জমিতে এখন তিনটি ফসল ফলছে। 

জনস্বাস্থ্যের জন্য ৩৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। পদ্মার ভাঙন থেকে রাজশাহীকে রক্ষায় রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বাস্তবায়ন করেছে ১ হাজার ১৩৭ কোটি ৬১ লাখ ৭৬ হাজার টাকার বিভিন্ন প্রকল্প। মহানগরীর বিভিন্ন উন্নয়নে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) ১৪ বছরে হাতে পেয়েছে ৫১৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৫ হাজার টাকার প্রকল্প। এতে হয়েছে সড়কের উন্নয়ন। গড়া হয়েছে নতুন আবাসিক এলাকা।দৃষ্টিনন্দন পদ্মা পাড়। ছবি: আজকের পত্রিকাআওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই প্রথম রাজশাহী শহরে পাইপলাইনে গ্যাস এসেছে। পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড এ পর্যন্ত ১০০ কোটি ৫০ লাখ টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্র গবেষণার জন্য পেয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা। রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলপথ উন্নয়নে ব্যয় হয়েছে ২১৭ কোটি ৪৬ লাখ ১২ কোটি টাকা। রাজশাহী বিএডিসি পেয়েছে ৬ কোটি ১০ লাখ টাকা। বিসিক শিল্পনগরী-২ গড়ে তুলতে রাজশাহী বিসিক পেয়েছে ১৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এ কাজও শেষ পর্যায়ে। 

নারীদের উন্নয়নে গত ১৪ বছরে রাজশাহী মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর পেয়েছে ১৯ কোটি ৭০ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। নারীদের নানা রকম প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বনির্ভর করেছে সরকারের এ উদ্যোগ। রাজশাহী ওয়াসাকে ১৪ বছরে সরকার দিয়েছে ১৪৭ কোটি ৭২ লাখ ১৫ হাজার টাকা। 

এ ছাড়া প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ৬ কোটি ২৮ লাখ ৯ হাজার টাকা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ৭৪ কোটি ৭৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা এবং মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট ৪৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা ব্যয় করেছে।বিলসিমলা লেভেল ক্রসিং থেকে কাশিয়াডাঙ্গা পর্যন্ত সড়কে লাগানো হয়েছে প্রজাপতি সড়কবাতি

এই ১৪ বছরে শুধু রাজশাহী জেলা ও মহানগরে ১০ হাজার ৬৫৯ কোটি ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এতে সবদিক থেকেই এগিয়ে গেছে রাজশাহী। আরও অনেক উন্নয়ন প্রকল্প এখন চলমান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল রোববার রাজশাহী আসছেন। ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের জনসভায় ভাষণ দেবেন তিনি। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, তিন মেয়াদে উন্নয়নের মাধ্যমে রাজশাহীকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এই জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো হবে। জনসভায় যোগ দেবে পাঁচ থেকে সাত লাখ মানুষ। 

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচ বছর আগেও একবার রাজশাহী এসেছিলেন। কিন্তু এবার তাঁর আসাটা একটু অন্য রকম। কারণ, তিনি রাজশাহীবাসীকে দুই হাত ভরে দিয়েছেন। রাজশাহীর উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান। জনসভা থেকেও তিনি ২৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। এ ছাড়া আরও ছয়টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। তিনি রাজশাহীকে নিয়ে তাঁর আগামী দিনের পরিকল্পনাও জানাবেন।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজবাড়ীতে চাঁদাবাজির সময় গণপিটুনিতে সম্রাট বাহিনীর প্রধান নিহত

রাজবাড়ী প্রতি‌নি‌ধি
সম্রাট বাহিনীর প্রধান অমৃত মন্ডল ওর‌ফে সম্রাট। ছবি: সংগৃহীত
সম্রাট বাহিনীর প্রধান অমৃত মন্ডল ওর‌ফে সম্রাট। ছবি: সংগৃহীত

রাজবাড়ীর পাংশায় চাঁদাবা‌জি করার সময় জনগ‌ণের পিটুনিতে সম্রাট বাহিনীর প্রধান অমৃত মন্ডল ওর‌ফে সম্রাট নিহত হ‌য়েছেন। এ সময় দু‌টি অস্ত্রসহ তাঁর সহ‌যো‌গী সে‌লিম শেখ‌কে আটক ক‌রে পু‌লি‌শে দি‌য়েছে জনতা। বুধবার দিবাগত রাত পৌ‌নে ১১টার দি‌কে উপ‌জেলার ক‌লিমহর ইউনিয়‌নের হো‌সেনডাঙ্গা গ্রা‌মে এই ঘটনা ঘ‌টে। নিহত সম্রাট উপ‌জেলার ক‌লিমহর ইউনিয়‌নের হো‌সেনডাঙ্গার অক্ষয় মন্ড‌লের ছে‌লে। আটক সে‌লিম একই ইউনিয়‌নের বসাকু‌ষ্টিয়া গ্রা‌মের ইসলাম শে‌খের ছে‌লে।

সম্রা‌টের সহ‌যো‌গী‌ সেলিমের কাছ থে‌কে এক‌টি পিস্তল ও এক‌টি ওয়ান শুটারগান জব্দ করে‌ছে পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
সম্রা‌টের সহ‌যো‌গী‌ সেলিমের কাছ থে‌কে এক‌টি পিস্তল ও এক‌টি ওয়ান শুটারগান জব্দ করে‌ছে পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্থানীয় বাসিন্দাদের বরা‌ত দিয়ে পাংশা ম‌ডেল থানার ওসি শেখ মঈনুল ইসলাম জানান, সম্রাট নিজের না‌মেই এক‌টি বা‌হিনী গড়ে তু‌লে মানুষ‌কে ভয়ভী‌তি দে‌খি‌য়ে চাঁদাবা‌জি কর‌তেন। দীর্ঘদিন ভার‌তে পা‌লি‌য়ে থাকার পর সম্প্রতি এলাকায়‌ ফি‌রে এসে এক‌টি বাড়িতে চাঁদা দা‌বি ক‌রেন। কিন্তু তারা চাঁদার টাকা দি‌তে অস্বীকৃতি জানা‌য়। গত রা‌তে সম্রাট তাঁর বা‌হিনীর সদস‌্যদের নি‌য়ে ওই বাড়িতে চাঁদার টাকা আন‌তে যান। এ সময় ওই বাড়ির লোকজন ডাকাত ডাকাত ব‌লে চিৎকার দি‌লে আশপা‌শের লোকজন এসে ধ‌রে তাঁকে গণ‌পিটু‌নি দেয়। এতে ঘটনাস্থ‌লেই তাঁর মৃত‌্যু হয়। এ সময় তাঁর অন‌্য সহ‌যো‌গীরা পালি‌য়ে গে‌লেও অস্ত্রসহ ধরা প‌ড়েন সে‌লিম না‌মের একজন।

ওসি শেখ মঈনুল ইসলাম আরও জানান, সম্রা‌টের সহ‌যো‌গী‌ সে‌লিম‌ের কাছ থে‌কে এক‌টি পিস্তল ও এক‌টি ওয়ান শুটারগান জব্দ করা হয়ে‌ছে। নিহত সম্রা‌টের না‌মে হত‌্যা, চাঁদাবা‌জিসহ একা‌ধিক মামলা র‌য়ে‌ছে। সম্রা‌টের মর‌দেহ ময়ন‌াতদন্তের জন‌্য ম‌র্গে পাঠা‌নোর প্রস্তু‌তি চল‌ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‎টঙ্গীতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে জুলাই যোদ্ধা তাহরিমা গ্রেপ্তার

টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৪৬
টঙ্গীর মরকুন পূর্বপাড়া চৌরঙ্গীর পাড় এলাকায় নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার তাহরিমা জান্নাত সুরভী। ছবি: আজকের পত্রিকা
টঙ্গীর মরকুন পূর্বপাড়া চৌরঙ্গীর পাড় এলাকায় নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার তাহরিমা জান্নাত সুরভী। ছবি: আজকের পত্রিকা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকার, সরকারের একাধিক উপদেষ্টা ও সেনাবাহিনীর প্রধানকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করায় মামলা দায়েরের পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে জুলাই যোদ্ধা তাহরিমা জান্নাত সুরভীকে (২৫)। ‎বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) রাত ১টার দিকে টঙ্গীর মরকুন পূর্বপাড়া চৌরঙ্গীর পাড় এলাকায় তাঁর নিজ বাসায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে যৌথ বাহিনী। পরে তাঁকে টঙ্গী পূর্ব থানায় হস্তান্তর করা হয়।

‎জানা যায়, গ্রেপ্তার তাহরিমা জান্নাত সুরভী দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বর্তমান সরকার, সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা এবং সেনাবাহিনীর প্রধানকে নিয়ে অশালীন, কুরুচিপূর্ণ ও রাষ্ট্রবিরোধী মন্তব্য করে আসছিলেন। তাঁর এসব বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

‎আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, তাহরিমা জান্নাত সুরভীর বিরুদ্ধে আগে থেকেই ওয়ারেন্ট জারি ছিল। একই সঙ্গে তাঁর অনলাইন কর্মকাণ্ড দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হতে পারে, এমন আশঙ্কায় গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাতে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে।‎

‎টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মেহেদী হাসান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘গ্রেপ্তার তাহরিমা জান্নাত সুরভীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। ওই মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার সকালে কালিয়াকৈর থানা-পুলিশের কাছে তাহরিমাকে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পঞ্চগড়ে চার দিন ধরে ঘন কুয়াশা ও কনকনে শীত

পঞ্চগড় প্রতিনিধি 
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ০৪
ঘন কুয়াশার কারণে ভোরে হেডলাইট জ্বালিয়ে বাস চলছে। পঞ্চগড়ের তেলিপাড়া এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘন কুয়াশার কারণে ভোরে হেডলাইট জ্বালিয়ে বাস চলছে। পঞ্চগড়ের তেলিপাড়া এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

টানা চার দিন ধরে ঘন কুয়াশা ও কনকনে শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। ভোর থেকেই জেলার সড়ক ও জনপথ ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে। কনকনে ঠান্ডা আর কুয়াশার কারণে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। এর প্রভাব পড়েছে কর্মজীবী মানুষ থেকে শুরু করে হাসপাতালগুলোতে।

বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১০০ শতাংশ। ঘন কুয়াশার কারণে ভোর থেকেই যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।

ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষেরা। ভোরে অনেকেই কাজে যেতে পারছেন না। শীত নিবারণের জন্য বিভিন্ন এলাকায় মানুষকে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা গেছে।

নাইট কোচের চালকেরা জানান, ঘন কুয়াশার কারণে রাস্তায় কিছুই দেখা যায় না। রফিকুল আলী নামের এক চালক বলেন, ‘এত কুয়াশায় সাবধানে গাড়ি চালিয়ে আসতে হয়েছে। শীত এলেই আমাদের এই সমস্যায় পড়তে হয়। কুয়াশায় সামনে কিছুই বোঝা যায় না।’

আরেকজন চালক জানান, কুয়াশার কারণে গতি কমিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। একটু অসতর্ক হলেই দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।

শীতের প্রভাবে জেলার হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে রোগীর ভিড়। সর্দি-কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। সদর হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানান, তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। তিনি এ সময় গরম কাপড় ব্যবহার, উষ্ণ খাবার গ্রহণ এবং প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেন।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় জানান, ১১ থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত তেঁতুলিয়ায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। গত শনিবার তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও পরবর্তী দিনগুলোতে তা আবার কমে গেছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক কাজী সাইমুজ্জামান জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে প্রায় ১৫ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আরও শীতবস্ত্রের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। প্রাপ্ত শীতবস্ত্রগুলো প্রতিটি উপজেলায় সমানভাবে ভাগ করে শীতার্ত মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পিরোজপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন সাবেক ভিপি মাহমুদ হোসেন

নেছারাবাদ (পিরোজপুর) প্রতিনিধি 
মাহমুদ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
মাহমুদ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

পিরোজপুর-২ (কাউখালী, ভান্ডারিয়া ও নেছারাবাদ) আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক ভিপি মাহমুদ হোসেন। মোবাইলে আলাপকালে মাহমুদ হোসেন নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মাহমুদ হোসেন ভান্ডারিয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি এবং প্রখ্যাত সাংবাদিক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার ভাতিজা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পিরোজপুর-২ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে এই আসনে বিএনপির একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক বলয় গড়ে উঠেছে বলে স্থানীয়ভাবে জানা যায়।

উল্লেখ্য, পিরোজপুর-২ আসনে বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন আহমদ সোহেল মঞ্জুর সুমন। গত মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পরপরই মাহমুদ হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

এ বিষয়ে মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘আমি ২০২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দিলেও ছাত্রজীবন থেকেই বিএনপির আদর্শে বিশ্বাসী। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের চেতনাকে ধারণ করে সব সময় দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি।’

মাহমুদ হোসেন আরও বলেন, ‘পিরোজপুর-২ আসনের সাধারণ মানুষ আমাকে এই আসনে নেতৃত্বে দেখতে চান। জনগণের সেই প্রত্যাশাকে প্রাধান্য দিয়েই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিএনপি একটি গণমানুষের দল। সেই গণমানুষের চাওয়াকেই গুরুত্ব দিয়ে সামনে এগোতে চাই।’

মাহমুদ হোসেন জানান, শিগগির তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত