Ajker Patrika

১৪ বছরের উন্নয়নে নতুন রূপে রাজশাহী

রিমন রহমান, রাজশাহী
আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২৩, ২৩: ৫৭
১৪ বছরের উন্নয়নে নতুন রূপে রাজশাহী

বহুদিন ধরেই উন্নয়নবঞ্চিত হয়ে থাকার অভিযোগ জানিয়ে আসছিলেন যমুনার পশ্চিম পারের মানুষ। যারাই ক্ষমতায় থাকুক, উত্তরাঞ্চল উন্নয়নবঞ্চিত থেকেছে বলে অভিযোগ করে এসেছেন তাঁরা। তবে বর্তমান সরকারের তিন মেয়াদে বিগত ১৪ বছরে সেই আক্ষেপ অনেকটাই মিটেছে। দেশের অন্য অঞ্চলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে রাজশাহী অঞ্চলও। 

বিশেষ করে গত পাঁচ বছরে রাজশাহীর প্রতিটি জেলাতেই উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। বিভাগীয় শহর রাজশাহী পরিণত হয়েছে সাজানো-গোছানো এক দৃষ্টিনন্দন নগরীতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন দেওয়া প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার একটি সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাজশাহী হয়ে উঠছে দেশের সেরা শহর। রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এরই মধ্যে এর বাইরেও অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। 

শিক্ষানগরী রাজশাহীতে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক। এখানে তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানকে জায়গা বরাদ্দও শুরু হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী করতে ঢাকার বাইরে রাজশাহীতেই দ্বিতীয় নভোথিয়েটার নির্মাণ করা হচ্ছে। এর কাজও প্রায় শেষ। শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য করা হচ্ছে বিসিক-২ শিল্পাঞ্চল। নির্মিত হয়েছে শিশু হাসপাতাল। চলছে ক্যানসার সেন্টারের নির্মাণকাজও। মহানগরীর বুধপাড়া এলাকায় নির্মিত হয়েছে রাজশাহীর প্রথম ফ্লাইওভারআরও অনেক উন্নয়নের কল্যাণে বদলে গেছে রাজশাহী মহানগরী। সর্বশেষ ১০ বছর আগে রাজশাহীতে এসেছিলেন এমন কোনো ব্যক্তি এখন শহরটাকে আর চিনতেই পারবেন না! 

উত্তরাঞ্চলের প্রথম ফ্লাইওভার নির্মিত হয়েছে রাজশাহীতে। শহরের সরু সড়কগুলোকে সম্প্রসারণ করে চার লেন পর্যন্ত করা হয়েছে। সড়কগুলোর মাঝে দৃষ্টিনন্দন সড়কবাতি বসিয়েছেন সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। নতুন নতুন সড়ক আর সড়কবাতি দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন নগরবাসী।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত শুধু রাজশাহী সিটি করপোরেশনই ১ হাজার ১৪৭ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এখনো চলছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প। এই প্রকল্পের ভেতরেই রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা করা হয়েছে। চলছে বাস্তবায়ন। এরই মধ্যে রাসিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার উন্নয়ন করেছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য নির্মিত হয়েছে বড় বড় নালা। আলিফ লাম মিম ভাটার মোড় থেকে বিহাস পর্যন্ত নবনির্মিত ফোর লেন সড়কএই ১৪ বছরে রাজশাহী জেলা পরিষদ বাস্তবায়ন করেছে ২১ কোটি টাকার বেশি উন্নয়ন প্রকল্প। এর মধ্যে ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে আধুনিক জেলা পরিষদ ভবন। রাজশাহীর গ্রামীণ সড়কগুলোর উন্নয়নে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) গত ১৪ বছরে ২ হাজার ৫৫৭ কোটি ৮২ লাখ টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এর ফলে রাজশাহীর প্রত্যন্ত গ্রামের কাঁচা রাস্তাগুলোও এখন পাকা হয়েছে। নির্মিত হয়েছে ব্রিজ-কালভার্ট। সহজ হয়েছে গ্রামের মানুষের জীবন।

রাজশাহীতে অবকাঠামোগত উন্নয়নে গণপূর্ত বিভাগ-১ গত ১৪ বছরে বাস্তবায়ন করেছে ২৬৩ কোটি টাকার প্রকল্প। এর মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, এনএসআই কার্যালয়, রাজশাহী নগর পুলিশের নতুন প্রধান কার্যালয়, মডেল মসজিদ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন ইত্যাদি। 

গণপূর্ত বিভাগ-২ রাজশাহীতে বাস্তবায়ন করেছে ২৬৮ কোটি ১১ লাখ টাকার প্রকল্প। এর মধ্যে রয়েছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সম্প্রসারণ, শিশু হাসপাতাল নির্মাণ, বিভিন্ন ফায়ার স্টেশনসহ অন্য সরকারি দপ্তরের ভবন। দৃষ্টিনন্দন শেখ রাসেল পার্কশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নে রাজশাহী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদের ১৪ বছরে ৭৩৯ কোটি ১৬ লাখ টাকার বেশি উন্নয়ন প্রকল্প। এর ফলে রাজশাহী মহানগরী তো বটেই, জেলার ৯ উপজেলার প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হয়েছে আধুনিক ভবন। 

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর রাজশাহীতে বাস্তবায়ন করেছে ৮৬ কোটি টাকার প্রকল্প। গত ১৪ বছরে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) পোড়ামাটিতে ফসল ফলাতে বাস্তবায়ন করেছে ২ হাজার ৯৫০ কোটি ১৮ লাখ টাকার বেশি প্রকল্প। এর ফলে বরেন্দ্র অঞ্চলের একফসলি জমিতে এখন তিনটি ফসল ফলছে। 

জনস্বাস্থ্যের জন্য ৩৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। পদ্মার ভাঙন থেকে রাজশাহীকে রক্ষায় রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বাস্তবায়ন করেছে ১ হাজার ১৩৭ কোটি ৬১ লাখ ৭৬ হাজার টাকার বিভিন্ন প্রকল্প। মহানগরীর বিভিন্ন উন্নয়নে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) ১৪ বছরে হাতে পেয়েছে ৫১৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৫ হাজার টাকার প্রকল্প। এতে হয়েছে সড়কের উন্নয়ন। গড়া হয়েছে নতুন আবাসিক এলাকা।দৃষ্টিনন্দন পদ্মা পাড়। ছবি: আজকের পত্রিকাআওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই প্রথম রাজশাহী শহরে পাইপলাইনে গ্যাস এসেছে। পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড এ পর্যন্ত ১০০ কোটি ৫০ লাখ টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্র গবেষণার জন্য পেয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা। রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলপথ উন্নয়নে ব্যয় হয়েছে ২১৭ কোটি ৪৬ লাখ ১২ কোটি টাকা। রাজশাহী বিএডিসি পেয়েছে ৬ কোটি ১০ লাখ টাকা। বিসিক শিল্পনগরী-২ গড়ে তুলতে রাজশাহী বিসিক পেয়েছে ১৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এ কাজও শেষ পর্যায়ে। 

নারীদের উন্নয়নে গত ১৪ বছরে রাজশাহী মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর পেয়েছে ১৯ কোটি ৭০ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। নারীদের নানা রকম প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বনির্ভর করেছে সরকারের এ উদ্যোগ। রাজশাহী ওয়াসাকে ১৪ বছরে সরকার দিয়েছে ১৪৭ কোটি ৭২ লাখ ১৫ হাজার টাকা। 

এ ছাড়া প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ৬ কোটি ২৮ লাখ ৯ হাজার টাকা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ৭৪ কোটি ৭৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা এবং মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট ৪৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা ব্যয় করেছে।বিলসিমলা লেভেল ক্রসিং থেকে কাশিয়াডাঙ্গা পর্যন্ত সড়কে লাগানো হয়েছে প্রজাপতি সড়কবাতি

এই ১৪ বছরে শুধু রাজশাহী জেলা ও মহানগরে ১০ হাজার ৬৫৯ কোটি ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এতে সবদিক থেকেই এগিয়ে গেছে রাজশাহী। আরও অনেক উন্নয়ন প্রকল্প এখন চলমান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল রোববার রাজশাহী আসছেন। ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের জনসভায় ভাষণ দেবেন তিনি। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, তিন মেয়াদে উন্নয়নের মাধ্যমে রাজশাহীকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এই জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো হবে। জনসভায় যোগ দেবে পাঁচ থেকে সাত লাখ মানুষ। 

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচ বছর আগেও একবার রাজশাহী এসেছিলেন। কিন্তু এবার তাঁর আসাটা একটু অন্য রকম। কারণ, তিনি রাজশাহীবাসীকে দুই হাত ভরে দিয়েছেন। রাজশাহীর উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান। জনসভা থেকেও তিনি ২৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। এ ছাড়া আরও ছয়টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। তিনি রাজশাহীকে নিয়ে তাঁর আগামী দিনের পরিকল্পনাও জানাবেন।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সরকারি সার অবৈধভাবে বিক্রি, চুয়াডাঙ্গায় ডিলারকে জরিমানা

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি­
জব্দ করা সার। ছবি: আজকের পত্রিকা
জব্দ করা সার। ছবি: আজকের পত্রিকা

সরকারি সার অবৈধভাবে বিক্রির অপরাধে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় এক ডিলারকে ৫০ হাজার টাকা ও ক্রেতাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আমিনুল ইসলাম।

জানা গেছে, সদর উপজেলার পাঁচমাইল এলাকার এক বিএডিসির সারের ডিলার অবৈধ উপায়ে আলমডাঙ্গার বলেশ্বরপুর এলাকার তাওহীদ হোসেন নামের এক ব্যক্তির কাছে ডিএপি ১১ বস্তা ও এমওপি ৯ বস্তা সার বিক্রি করেন।

বিষয়টি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পেরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আমিনুল ইসলাম দ্রুত অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাঁদের জরিমানা করেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় বিএডিসি সার ডিলার মডার্ন অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী ইকবাল বিশ্বাসকে নগদ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে অবৈধ উপায়ে সার কেনার অপরাধে ক্রেতা তাওহীদ হোসেনকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় সহযোগিতা করেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিছুর রহমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরিশালে বিএনপির ২ শতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
বিএনপি নেত্রী নাসরিনের ওপর সরোয়ার অনুসারীদের হামলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিএনপি নেত্রী নাসরিনের ওপর সরোয়ার অনুসারীদের হামলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশালে শহীদ বেদিতে ফুল দেওয়া নিয়ে হামলার ঘটনায় ২ শতাধিক বিএনপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন নগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে তিনি কোতোয়ালি মডেল থানায় অভিযোগ দেন। এর আগে দুপুরে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে হামলার শিকার হন নাসরিন।

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন উল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ফুল দেওয়া নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। সেই ইস্যুতে বিএনপির নেত্রী নাসরিন থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

জানা গেছে, অভিযোগে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২০০ জনের কথা বলা হয়েছে। এদের অধিকাংশই ছাত্রদল, যুবদল ও বিএনপির নেতা-কর্মী।

জানতে চাইলে বিএনপির নেত্রী আফরোজা খানম নাসরিন জানান, তাঁর ওপর যারা হামলা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে তিনি রোববার রাত ৯টার দিকে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে তাদের নাম তিনি প্রকাশও করেছেন।

নাসরিনের অভিযোগ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বরিশাল-৫ (মহানগর-সদর) আসনের মনোনীত প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের অনুসারীরা তাঁর ওপর হামলা করেছে।

এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক জানান, রোববার দুপুরে ফুল দিয়ে তাঁরা যখন যাচ্ছেন, তখন বাইরে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নাসরিনের ঝামেলা হয়েছে। তবে কী হয়েছে জানেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৩২
ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের শ্যালক শিপু, স্ত্রী সামিয়া ও বান্ধবী মারিয়া। ছবি: সংগৃহীত
ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের শ্যালক শিপু, স্ত্রী সামিয়া ও বান্ধবী মারিয়া। ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রীসহ আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে এক বার্তায় জানিয়েছে পুলিশের বিশেষ এই ইউনিট।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ফয়সালের স্ত্রী সামিয়া, তাঁর শ্যালক শিপু ও বান্ধবী মারিয়া।

র‍্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক ইন্তেখাব চৌধুরী জানান, সামিয়া ও শিপুকে নারায়ণগঞ্জ থেকে এবং মারিয়াকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, গত শুক্রবার হাদিকে গুলির ঘটনার আগে ও পরে ফয়সালের সঙ্গে তাঁদের ফোনে ঘন ঘন যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে।

এ নিয়ে এ ঘটনায় র‍্যাব মোট চারজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছে। এর আগে গুলির সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আব্দুল হান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ তিন দিনের রিমান্ডে নেয়।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকার বিজয়নগর এলাকায় চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে করা গুলিতে গুরুতর আহত হন রিকশায় থাকা ওসমান হাদি। তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে, হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ও অপরিবর্তিত রয়েছে। আগামীকাল সোমবার দুপুরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে।

আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাফর, ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি কল কনফারেন্সে এ সিদ্ধান্ত নেন। পরে প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত দুদিন ধরে ওসমান হাদির চিকিৎসার জন্য সরকার সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার কয়েকটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেছে। আজ এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের পরামর্শে ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, বর্তমানে ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ও অপরিবর্তিত রয়েছে।

আগামীকাল দুপুরে ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক দল ও ভ্রমণসংক্রান্ত সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের অ্যাকসিডেন্ট ইমার্জেন্সি বিভাগে তাঁর চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ওসমান হাদির চিকিৎসাসংক্রান্ত সব ব্যয় রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করা হবে। তাঁর চিকিৎসাপ্রক্রিয়া সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন ড. ইউনূস।

ওসমান হাদির দ্রুত সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া ও প্রার্থনা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ১৪
ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। তাঁর সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। সর্বশেষ সিটি স্ক্যানে তাঁর মস্তিষ্কের ফোলা (সেরিব্রাল ইডেমা) আগের তুলনায় বেড়েছে।

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি ওসমান হাদির চিকিৎসায় গঠিত মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিকেল বোর্ড আজ রোববার বিকেলে বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ওই হাসপাতালের আইসিইউ ও এইচডিইউ সমন্বয়ক এবং জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট মো. জাফর ইকবাল।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন ওসমান হাদির সর্বশেষ সিটি স্ক্যানে দেখা গেছে, তাঁর মস্তিষ্কের ফোলা আগের তুলনায় বেড়েছে, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে একটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ক্লিনিক্যাল পরিস্থিতি। ১২ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে প্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের পর তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। আজ আবার তাঁর শারীরিক অবস্থা মূল্যায়ন করা হলে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত চাপ ও ফোলাজনিত ঝুঁকি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, ব্রেন স্টেমে আঘাত ও বাড়তি সেরিব্রাল ইডেমার কারণে রোগীর রক্তচাপে ওঠানামা হচ্ছে। এদিন তাঁর হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি লক্ষ করা গেছে। তবে রক্তচাপ ও হৃদ্‌যন্ত্রের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় মেডিকেল সাপোর্ট অব্যাহত রয়েছে। ফুসফুসের কার্যকারিতা ও ভেন্টিলেটর সাপোর্ট বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি বা অবনতি হয়নি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ওসমান হাদির কিডনির কার্যক্ষমতা আপাতত বজায় আছে এবং ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কিছুটা কমেছে। তবে মস্তিষ্কে আঘাতের কারণে শরীরের হরমোনগত ভারসাম্যহীনতা দেখা দেওয়ায় প্রতি ঘণ্টায় ইউরিন উৎপাদনে তারতম্য হচ্ছে। এ কারণে অ্যাসিড-বেস ব্যালেন্স, ফ্লুইড ও ইলেকট্রোলাইট নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ব্লাড সুগার সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে, যা এ ধরনের সংকটাপন্ন রোগীর ক্ষেত্রে একটি বড় ক্লিনিক্যাল চ্যালেঞ্জ।

মেডিকেল বোর্ড আরও বলেছে, ওসমান হাদির সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। তবে সর্বোচ্চ পেশাদারত্ব ও সমন্বয়ের মাধ্যমে তাঁকে সর্বোত্তম চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। পরিবার অথবা পরিবারের মাধ্যমে সরকার চাইলে তাঁকে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও মেডিকেল বোর্ড সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

ওসমান হাদির প্রথম অস্ত্রোপচারে অংশ নেওয়া ঢামেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মো. আব্দুল আহাদ আজ এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গণমাধ্যমকে বলেন, গতকাল শনিবারের মতো আজও মেডিকেল বোর্ডের সব সদস্যের উপস্থিতিতে বৈঠক হয়েছে। রোগীর কেস সামারি প্রস্তুত করে ইতিমধ্যে বিদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, হাদিকে আগামীকাল সোমবার দুপুরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে। আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাফর ও ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি কল কনফারেন্সে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। পরে প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

গত শুক্রবার বেলা সোয়া ২টার দিকে পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে মোটরসাইকেলে আসা দুই দুর্বৃত্ত চলন্ত রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে মাথায় গুলি করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত