Ajker Patrika

সিগন্যাল নেই, ঘড়ি দেখে লেভেল ক্রসিংয়ে ব্যারিয়ার ফেলেন গেটকিপাররা 

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০২২, ১২: ১২
সিগন্যাল নেই, ঘড়ি দেখে লেভেল ক্রসিংয়ে ব্যারিয়ার ফেলেন গেটকিপাররা 

থাকেন জরাজীর্ণ স্যাঁতসেঁতে অবস্থায়, বিদ্যুৎহীন ঘরে নেই আলো-বাতাস। ওয়াশরুমের ব্যবস্থাও নেই। বছরের পর বছর এভাবেই বসবাস করে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন ময়মনসিংহ রেলওয়ে বিভাগের গেটকিপাররা। ট্রেন আসার আগে সংকেত না পাওয়া গেটকিপাররা ঘড়ি দেখেই লেভেল ক্রসিংয়ে গেট ব্যারিয়ার ফেলছেন। ট্রেন আসতে অনেক সময় বিলম্ব হলে মারধরেরও শিকার হন তাঁরা।

ময়মনসিংহ রেলওয়ে অঞ্চলে ২০০টির মতো লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে ১০৫টি লেভেল ক্রসিং অরক্ষিত। এর মধ্যে প্রকল্পের আওতায় নিয়োগ দেওয়া গেটকিপার দিয়ে চলছে ৬০টি লেভেল ক্রসিং। ট্রেন আসা-যাওয়ার সময় তাঁরা কোনো সিগন্যাল না পাওয়ায় ঘড়ি দেখে গেট ব্যারিয়ার ফেলেন। এতে প্রায় সময়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। অনিশ্চিত চাকরি আর সামান্য বেতন নিয়েও গেটকিপারদের নানা ক্ষোভ। 

পলাশ কাজী। বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশালে। ২০১৮ সালে প্রকল্পের আওতায় গেটম্যানের চাকরি পান। বর্তমানে কর্মরত আছেন ময়মনসিংহ নগরীর কলেজ রোড লেভেল ক্রসিংয়ে গেটকিপার হিসেবে। যোগদানের দুই বছর পর গেট ব্যারিয়ার দেওয়া হয় কলেজ রোড লেভেল ক্রসিংয়ে। পূর্বের দুই বছর ট্রেন এলে রাস্তার মধ্যে দুই হাত মেলে অন্যান্য গাড়ি থামাতেন। এখন দুটি গেট ব্যারিয়ারের মধ্যে একটি একেবারে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। অন্যটির অর্ধেক পর্যন্ত ভেঙে গেছে। চাকরির দীর্ঘ সাড়ে চার বছরেও কোনো দিন ট্রেন এলে সিগন্যাল পাননি। ঘড়ি দেখে ট্রেন আসার সময় হয়েছে ধারণা নিয়ে গেট ব্যারিয়ার ফেলেন তিনি। অনেক সময় ট্রেন আসতে একটু বিলম্ব হওয়ায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়াতে হয়। সাধারণ মানুষের মারধরেরও শিকার হন। 

পালশ কাজী বলেন, ‘রেলওয়ের সবচেয়ে অবহেলিত এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাকরি গেটকিপারদের। আমাদের একটু অবহেলায় অনেকের প্রাণ যেতে পারে। কিন্তু বছরের পর বছর প্রকল্পের আওতায় সার্ভিস দিয়ে আমাদের চলছে না। গেটকিপারের চাকরির সবচেয়ে বড় প্রয়োজন একটা পতাকা, বাঁশি, কোদাল, শাবল ও বালতি—এগুলো আজও পর্যন্ত পাইনি। নিজের পকেটের টাকা দিয়ে কিনে চলছি। বিশ্রামের জন্য যে ঘরটি রয়েছে, সেখানে বাথরুম ও বিদ্যুৎ নেই। জরাজীর্ণ অবস্থায় আমাদের থাকতে হচ্ছে।’ 

সানকিপাড়া লেভেল ক্রসিং-২-এর গেটকিপার কবিরুল ইসলাম বলেন, ‘এই লাইন দিয়ে ৪৮ বার ট্রেন চলাচল করে। আমরা কোনো সংকেত পাই না। অনুমান করে গেট ব্যারিয়ার ফেলে ট্রেন পাড় করি। এটি একটি ব্যস্ত রাস্তা হওয়ায় অনেক আগে ব্যারিয়ার ফেললে মানুষ অনেক বকাবকি করে। কিছুদিন আগে স্থানীয় একজন আমাকে মারছেও। শুধু আছি পেটের তাগিদে। সরকার যদি চাকরিটা রাজস্বকরণ করে দেয়, তাহলে আমরা কিছুটা চিন্তামুক্ত হতাম।’ 

সানকিপাড়া লেভেল ক্রসিং-১-এর গেটকিপার সাহেব আলী বলেন, ‘অনেক দিন চাকরি করার পর আমার চাকরিটা রাজস্ব খাতে গেছে। এখন নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছি। বেতন নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। আমরা ট্রেন আসলে সংকেতও পাই। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা ঘুমের ঘরের বেহাল অবস্থা। বসে থাকার মতোও পরিবেশ নেই। কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি বারবার বলেও কোনো কাজ হচ্ছে না।’ 

জরাজীর্ণ স্যাঁতসেঁতে ঘরেই থাকতে হচ্ছে গেটকিপারদের। কলেজ রোড এলাকার বাসিন্দা মশিউর রহমান রাসেল বলেন, ‘গেটকিপারের কাছে একটা পতাকা ও বাঁশি থাকবে না এটা কী করে হয়! প্রায় সময় যেতে দেখি গেটকিপার হাত মেলে যানবাহন থামাচ্ছেন। একটা গেট ব্যারিয়ার আছে, তা-ও আবার অর্ধেকটা ভাঙা। যাঁদের জন্য লোকজন নিরাপদে চলাচল করছে, তাঁদের এমন অবস্থা হলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’ 

এখানকার আরেক বাসিন্দা কামরুল হাসান বলেন, ‘গেটকিপারদের চাকরিটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তাদের এমন করুণ অবস্থা হলে রেল বিভাগের কী অবস্থা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের দাবি, বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে আগে গেটকিপারদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হোক।’ 

জেলা জন-উদ্যোগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, ‘নিরাপদ যাত্রার অন্যতম বাহন ট্রেন। একটি মাফিয়া চক্রের কারণে রেল বিভাগ জিম্মি হয়ে আছে। বিভিন্ন লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা দুঃখজনক। রেলে প্রাণ যাওয়া মানে প্রত্যক্ষভাবে সরকার দায়ী। গেটকিপাররা রেলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তাই প্রতিটি লেভেল ক্রসিংয়ে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্য সরকারকে জোড় আহ্বান জানাচ্ছি।’

ময়মনসিংহ রেলওয়ে অঞ্চলের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী নারায়ণ প্রসাদ সরকার বলেন, ‘অনেক সময় বাধা অতিক্রম করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রেললাইন ওভার করে রাস্তা করায় সেখানে প্রকল্পের আওতায় গেটকিপার নিয়োগ দেওয়া হয়। এমন লেভেল ক্রসিং ময়মনসিংহ অঞ্চলে ৬০টির মতো রয়েছে। তাঁরা ট্রেন যাওয়া-আসা করলে সংকেত পান না। তাঁদের সব সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য মন্ত্রণালয়ে বরাবর আবেদন করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে বিষয়টি তড়িৎ গতিতে সমাধান হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদির ওপর হামলাকারীরা সীমান্ত দিয়ে পালিয়েছে কি না—তা শতভাগ নিশ্চিত নয় বিজিবি

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান । ছবি: আজকের পত্রিকা
বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান । ছবি: আজকের পত্রিকা

বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ঢাকায় শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলি বর্ষণকারী ব্যক্তিরা ময়মনসিংহ সীমান্ত ব্যবহার করে ভারতে পালিয়েছে কি না—তা এখনো শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

সোমবার ময়মনসিংহ নগরীর খাগডহর বিজিবি ক্যাম্পে তিনি আরও জানান, শুক্রবার ৯টার মধ্যে বিজিবি সদর দপ্তরের নির্দেশনায় সম্ভাব্য পাচারের রুটগুলো চিহ্নিত করে টহল এবং চেকপোস্ট বসানো হয় সীমান্তের অধিকাংশ স্থানে। পরদিন অর্থাৎ শনিবারে পুলিশ এবং বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ অপারেশনের প্ল্যান করা হয়। ঢাকা থেকে আগত পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বিজিবি ময়মনসিংহ সেক্টর কমান্ডারের নিয়মিত যোগাযোগ এবং অপারেশন সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হয়।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আলোচনায় দুটি স্থানে একসঙ্গে অপারেশনের প্ল্যান করা হয়। সন্দেহভাজন হিসেবে শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে অবস্থানরত ফিলিপ স্নালকে আটকের পরিকল্পনা করা হয়। পুলিশের আরেকটি টিম হালুয়াঘাট এলাকায় অপারেশনের প্ল্যান করে। হালুয়াঘাটে অপারেশনের বিষয়ে বিজিবির সোর্স এবং অন্যান্য বিষয়ে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করেছে। অপর দিকে নালিতাবাড়ীর বারোমারি এলাকায় অপারেশন পরিচালিত হয় বিজিবির নেতৃত্বে এবং ঢাকা হতে আগত ও হালুয়াঘাট থানার পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে। কিন্তু ফিলিপকে পাওয়া যায়নি। তবে তার স্ত্রী ডেলটা চিরান, শ্বশুর ইয়ারসন রংডি এবং মানব পাচারকারী লুইস লেংমিঞ্জাকে আটক করা হয়। তাদের বাড়ি থেকে একটি মোটরসাইকেলও উদ্ধার করা হয়।’

তাঁদের পরিবারের তিনজনসহ এ পর্যন্ত বিজিবি চারজনকে আটক করেছে। এঁদের মধ্যে সোমবার সকালে মানব পাচারকারী বেঞ্জামিন চিরামকে আটক করা হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরগুনায় স্বামীকে গলা টিপে হত্যা, স্ত্রী ও পরকীয়া প্রেমিক আটক

বরগুনা প্রতিনিধি
আটক পরকীয়া প্রেমিক আলামিন। ছবি: সংগৃহীত
আটক পরকীয়া প্রেমিক আলামিন। ছবি: সংগৃহীত

বরগুনার বামনা উপজেলায় পরকীয়া প্রেমের জেরে এক প্রবাসফেরত স্বামীকে গলা টিপে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহত ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ আব্দুল জলিল (৪৫)। তিনি উপজেলার রামনা ইউনিয়নের ঘোপখালী গ্রামের বাসিন্দা।

এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৫) ও তাঁর পরকীয়া প্রেমিক আলামিনকে (৩০) আটক করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দুজনই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে আব্দুল জলিলের নিজ বাড়িতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

স্থানীয় ও থানা সূত্রে জানা যায়, প্রায় পাঁচ বছর ধরে একই এলাকার আবু খতিবের ছেলে আলামিন নিহতের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে নাজমা বেগমের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রায় ১৫ দিন আগে প্রবাস থেকে বাড়িতে ফিরে স্ত্রীর সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারেন আব্দুল জলিল।

অভিযোগ রয়েছে, রোববার বিকেলে স্ত্রী ও ওই গৃহকর্মী মিলে ঘুমন্ত অবস্থায় আব্দুল জলিলকে গলা টিপে হত্যা করেন।

হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করে বামনা থানায় নিয়ে যায়। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নিহতের স্ত্রী ও তাঁর পরকীয়া প্রেমিককে তাৎক্ষণিকভাবে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা দুজনই হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মামলা দায়েরের পর আসামিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মহান বিজয় দিবসে মেট্রোরেল সাময়িক বন্ধ থাকবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আগামী ১৬ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) মেট্রোরেল চলাচল সাময়িক বন্ধ থাকবে। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় প্যারাজাম্প অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে প্যারাট্রুপারদের নিরাপত্তার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ডিএমটিসিএল ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছে, আগামী ১৬ ডিসেম্বর দুপুর ১১টা ৫০ মিনিট হতে ১২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত, অর্থাৎ মোট ৪০ মিনিটের জন্য মেট্রোরেল চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।

ডিএমটিসিএল সাময়িক অসুবিধার জন্য যাত্রীসাধারণের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে। যাত্রীদের এই সময়সূচি মেনে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয়মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
নোবেল। ছবি: সংগৃহীত
নোবেল। ছবি: সংগৃহীত

বাসায় আটকে রেখে ইডেন কলেজের এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় গায়ক নোবেলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। গত ২৯ নভেম্বর ডেমরা থানার উপপরিদর্শক এসআই মুরাদ হোসেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন প্রসিকিউশন বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) ইলামনি আজ সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, আগামী ২৮ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্রটি উপস্থাপন করা হবে। পরে এ সংক্রান্ত মামলা বিচারের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে।

নোবেলের আইনজীবী মোসতাক আহমেদ জানান, এই ধর্ষণ মামলার বাদীকে বিয়ে করেছেন নোবেল। তাঁরা সংসার করছেন।

গত ১৯ মে নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করেন ইডেন কলেজের ওই ছাত্রী। নোবেলকে গ্রেপ্তার করার পর কারাগারে পাঠানো হলে বিয়ের শর্তে তিনি জামিন পান। ১৯ জুন ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বসে ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে নোবেল ওই ছাত্রীকে বিয়ে করেন।

এই মামলায় অভিযোগ করা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ছাত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয় নোবেলের। এরপর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর নোবেল তাঁর স্টুডিও দেখানোর কথা বলে ছাত্রীকে ডেমরার বাসায় নিয়ে যান। সেখানে আটকে রাখেন, মোবাইল ফোন ও টাকা কেড়ে নেন। এরপর ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ করেন। কথামতো না চললে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ও দেখান।

অভিযোগে বলা হয়, ওই তরুণীকে ছয় মাস ধরে ডেমরার ওই বাসায় আটকে রাখা হয়, মারধর করা হতো প্রায়ই। দু-তিন জনের সহায়তায় বাদীকে চুল ধরে টেনেহিঁচড়ে একটি কক্ষে আটকে রাখেন নোবেল। ওই ঘটনার ভিডিও ছড়ালে বাদীর বাবা-মা তাঁকে চিনতে পারেন। এরপর পরিবার পুলিশের সহায়তায় তাঁকে ১৯ মে উদ্ধার করে এবং পুলিশ নোবেলকে গ্রেপ্তার করে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, নোবেল বাদীকে আটক রেখে ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে রাখেন। বাসায় না থাকলে ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। নোবেল নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বিভিন্ন সময়ে তাঁকে মারপিট করেছেন।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, বাদীর অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। আসামি নোবেল জামিনে আছেন।

তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে আরও বলেছেন, বাদীকে মারধর ও ধর্ষণে আসামিকে আরও কয়েকজন সহযোগিতা করেছেন। তবে তাঁদের নাম-ঠিকানা উদ্‌ঘাটন করা সম্ভব হয়নি। অদূর ভবিষ্যতে তাঁদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করা সম্ভব হলে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

এখন কী হবে:

নোবেলের আইনজীবী বলেছেন, নোবেল মামলার বাদীকে বিয়ে করে সংসার করছেন। তাই এই অভিযোগপত্রে নোবেলের কোনো সমস্যা হবে না। বিচারিক ট্রাইব্যুনালে বাদী আপসনামা দেওয়ার পর মামলা নিষ্পত্তি হবে। খালাস পাবেন নোবেল।

উল্লেখ্য, ভারতের সংগীত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান ‘সা রে গা মা’ দিয়ে পরিচিতি পান এই গায়ক। এর আগে মাদকে আসক্ত হয়ে সংগীত ছেড়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ বিরতির পর আবারও শ্রোতাদের সামনে হাজির হন। সেবার নোবেল জানিয়েছিলেন, তিনি আর কখনো দর্শকদের হতাশ করবেন না। সব অতীত পেছনে ফেলে নিয়মিত গান উপহার দেবেন।

কিন্তু ২০২৩ সালে অগ্রিম টাকা নিয়ে গান গাইতে না যাওয়ায় প্রতারণার অভিযোগে রাজধানীর মতিঝিল থানায় নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা হয়। জানা যায়, ওই বছর ১৬ মে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ হেডকোয়ার্টার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি ব্যাচ ২০১৬-এর অনুষ্ঠানে গান গাইতে গিয়ে ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা অগ্রিম নেওয়ার প্রতারণায় অভিযোগে আটক হয়েছিলেন। সে সময় একদিন রিমান্ডেও ছিলেন এই গায়ক। পরে আপসের মাধ্যমে ওই মামলা থেকে অব্যাহতিও পান নোবেল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত