Ajker Patrika

‘নিয়োগ বাণিজ্যের অডিও নিজের বলে স্বীকার করেছেন ইবি উপাচার্য’

পল্লব আহমেদ সিয়াম, ইবি
আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২২: ৩৬
‘নিয়োগ বাণিজ্যের অডিও নিজের বলে স্বীকার করেছেন ইবি উপাচার্য’

শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে গত সপ্তাহে যে অডিও ফাঁস হয়েছে সেটি নিজের বলে স্বীকার করেছেন কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম। এমনটাই দাবি করেছেন প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন শাপলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. মো. মাহবুবর রহমান।

অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেছেন, ‘অডিওগুলো উপাচার্যের এটা তিনি বৈঠকে স্বীকার করেছেন। প্রাথমিক ভাবে তিনি যে ঘটনা ঘটিয়েছে তার সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। তাই তিনি নৈতিক ভাবে ওই চেয়ারে বসার যোগ্যতা হারিয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে পুরো বিষয়টি সঠিক তদন্তসাপেক্ষে হস্তক্ষেপ করবেন বলে আমরা আশা করি।’

গত বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) নিয়োগসংক্রান্ত একটি অডিওতে কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক অলিউর রহমানকে ‘অলি কোথায়’ বলে সম্বোধন করতে শোনা যায়। কণ্ঠটি উপাচার্যের বলেই মনে হচ্ছে। সেই অডিওর পর বিভিন্ন বিষয়ে ছয়টি অডিও ফাঁস হয়েছে। অডিওগুলোতে অবশ্য উপাচার্যের কণ্ঠ ছাড়া অন্য পাশের কোনো কণ্ঠ শোনা যায়নি।

এই অডিও কাণ্ডে ক্যাম্পাস উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। অডিওর জেরে দুর্নীতর অভিযোগে উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করছেন চাকরি প্রত্যাশী ছাত্রলীগের সাবেক নেতা–কর্মীরা। ভর্তির ন্যূনতম যোগ্যতা নেই এমন ১৬ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তির দাবি জানিয়েছে কর্মকর্তা সমিতি। বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে উপাচার্যকে চাপে ফেলে অনৈতিক দাবি–দাওয়া পেশ করছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধান না করতে পারলে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে।

প্রগতিশীল শিক্ষকদের সংগঠন শাপলা ফোরাম ও শিক্ষক সমিতির প্রায় অর্ধেক নেতা আগের প্রশাসনের। ওই প্রশাসনের প্রায় সবাই এই প্রশাসনের বিরোধী। কর্মকর্তাদের একটি বড় অংশ উপাচার্যের বিরোধী।

এদিকে অডিও কাণ্ডে পদ হারিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের ব্যক্তিগত সহকারী আইয়ূব আলী। উপাচার্য তাঁকে অব্যাহতি দিয়েছেন। ঠিক কী কারণে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে তার কারণ কেউ জানে না।

এর আগে অডিও ফাঁসের ঘটনায় উপাচার্যের কার্যালয় ও বাংলোয় তল্লাশি করা হয়। অডিওগুলো কীভাবে ফাঁস হলো তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। অডিও ফাঁসের বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এর মধ্যে অনিবার্য কারণ দেখিয়ে পাঁচটি নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অডিও সংগ্রহের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন শাপলা ফোরাম তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। এর আগে উপাচার্যের অবস্থান জানতে চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে শাপলা ফোরাম।

নিয়োগ সংক্রান্ত অডিও ফাঁস হওয়ার জেরে অস্থায়ী চাকরিজীবী পরিষদ উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। ফলে ক্যাম্পাসের ভেতরে বাংলোয় থেকেই প্রয়োজনীয় কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন উপাচার্য। উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধানের জন্য দফায় দফায় বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তবে সমাধানের পথ খুঁজে পায়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আজ থেকে আগামী ৪ মার্চ পর্যন্ত ছুটিতে গেছেন উপাচার্য। এ সময় উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে থাকবেন সহউপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান। আজ সকালেই ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন উপাচার্য। 

‘ফারাহ জেবিন’ ও ‘মিসেস সালাম’ নামে দুটি ফেসবুক আইডি থেকে গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার উপাচার্যের ‘কণ্ঠের মতো’ পাঁচটি অডিও প্রকাশ করা হয়। পরে ‘আল বিদা’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে আরেকটি অডিও ফাঁস হয়। অডিওগুলোতে নিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন কথা শোনা যায়। 

প্রথম অডিওটি ছয় মিনিটের। অডিওর শুরুতে প্রথমে উপাচার্যকে বলতে শোনা যায়, ‘অলি কোথায়?’ 

সার্বিক বিষয়ে জানতে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের ব্যবহৃত ফোন নম্বরে কল করা হলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

খণ্ডকালীন শিক্ষক অলিউর রহমানের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্টহাউসেই থাকতেন। একমাস আগে তিনি গেস্টহাউস ছেড়েছেন। এরপর আর কোনো যোগাযোগ নেই। তবে গত ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে লেখেন, ‘ডিপার্টমেন্টে তোমাদের শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আমার আর যাওয়া হবে না।’ গ্রুপে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি।

কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা জানা গেছে, অলিউর রহমান বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাবিতে শেখ পরিবারের নামে থাকা ৪ হলের নাম পরিবর্তন

জাবি প্রতিনিধি 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শেখ হাসিনা ও তাঁর স্বজনদের নামে থাকা চারটি আবাসিক হলের নাম পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আজ শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এ বি এম আজিজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

আজিজুর রহমান বলেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় শেখ পরিবারের নামে থাকা চারটি হলের নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

এসব হলের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে রাখ হয়েছে ‘শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক হল’, শেখ রাসেল হলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘নবাব সলিমুল্লাহ হল’। এ ছাড়া শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন করে ‘জুলাই চব্বিশ জাগরণী হল’ এবং বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ ফেলানী খাতুন হল’ নাম রাখা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হবিগঞ্জে রত্না বেইলি সেতু ভেঙে ট্রাক আটকা, দুর্ভোগে যাত্রীরা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

হবিগঞ্জ-বানিয়াচং আঞ্চলিক সড়কের রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে ওই পথে সব ধরনের যান চলাচল। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে শতাধিক যাত্রী ও ওই পথে চলাচলকারীরা। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, জাফলং থেকে ছেড়ে আসা বানিয়াচংগামী পাথরবোঝাই একটি ট্রাক ব্রিজের ওপর ওঠামাত্রই ব্রিজের দুটি পাটাতন ভেঙে যায়। মুহূর্তেই ট্রাকের পেছনের দুটি চাকা ধসে পড়ে এবং পুরো ট্রাকটি ব্রিজে আটকে যায়।

এতে দীর্ঘ লাইনে আটকা পড়ে যাত্রীবাহী বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, টমটম, প্রাইভেট কারসহ অসংখ্য যানবাহন। বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, রোগী এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ব্যবসায়ীরা।

দুর্ঘটনার পর ব্রিজের একপাশ থেকে অন্যপাশে যাওয়ার জন্য যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে ভাঙা অংশ অতিক্রম করছে। এতে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘ট্রাকটি ব্রিজে উঠতেই জোরে শব্দ হয়। একটু পরই দেখি পাটাতন নিচে ধসে গেছে। ভাগ্য ভালো যে ট্রাকটি পুরোপুরি নিচে পড়ে যায়নি। তবে এখন তো ও পথে চলাচলকারীরা আটকা পড়ে আছে।’

যাত্রীরা জানান, রত্না বেইলি ব্রিজটি বহুদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভারী যানবাহনের অতিরিক্ত চাপের কারণে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে—এমন আশঙ্কা দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। এদিকে যাত্রীদের দাবি, এখানে যেন বেইলি ব্রিজের পরিবর্তে দ্রুত স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হয়, যাতে প্রতিদিনের এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, ‘ব্রিজটি দ্রুত মেরামত করার কাজ চলছে। পাথরবোঝাই ট্রাকটিতে বেশি লোড থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার

নরসিংদী প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে আব্দুর রশিদ (৪০) নামের এক অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর তীর থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

আব্দুর রশিদ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের দক্ষিণ লোহাজুরী গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি ছিলেন অটোরিকশাচালক; তবে নিয়মিত আড়িয়াল খাঁ নদে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করা ছিল তাঁর নেশা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৬টার দিকে ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর পাড়ে রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেন। লাশের পাশেই মোবাইল ফোন ও অটোরিকশাটি ছিল। পরে স্বজনেরা এসে লাশ শনাক্ত করেন। আব্দুর রশিদের মাথা ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করছে, তিনি দুষ্কৃতকারীর হামলার শিকার হয়েছেন।

নিহত ব্যক্তির ভাই কাজল মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত অটোরিকশা চালিয়ে তারপর নদীর পাড়ে বসে মাছ শিকার করে বাড়ি ফিরত ভাই। কিন্তু গতকাল রাতে আর বাড়ি ফেরেনি। সকালে খবর পেয়ে নদীর পাড়ে এসে ভাইয়ের মরদেহ দেখতে পাই।’

নিহত ব্যক্তির ছেলে হৃদয় বলেন, ‘রাতে বাড়ি না ফেরায় কল দিলে ফোন বন্ধ পাই। সকালে খবর শুনে নদীর পাড়ে এসে বাবার মরদেহ, মোবাইল ও অটোরিকশা পড়ে থাকতে দেখি।’

বেলাব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাসির উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি পিবিআইকে জানানো হয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৬৭ বছর পর রামেক হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

অবশেষে ৬৮ বছরে পা দিতে চলা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ মনোরোগ ওয়ার্ড চালু হলো। হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানসিক রোগী চিকিৎসা নিতে এলেও ভর্তির সুযোগ ছিল না। গুরুতর রোগীদের কিছু ক্ষেত্রে মেডিসিন বিভাগে রাখা হলেও, পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ডের অভাবে এতদিন অনেককেই ফিরিয়ে দিতে হতো।

হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ৬৭ বছর পর এই প্রথম ২৫ শয্যার একটি সুসজ্জিত মনোরোগ ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। হাসপাতালটির পুরাতন আইসিইউ ভবনে এই নতুন ওয়ার্ডটি গড়ে তোলা হয়েছে।

এই ওয়ার্ডে রোগী ভর্তির জন্য নির্দিষ্ট বিন্যাস রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ১০টি, নারীদের জন্য ৭ টি, শিশু-কিশোরদের জন্য ৫টি এবং উচ্চ পর্যবেক্ষণের জন্য ৩টি শয্যা সংরক্ষিত রয়েছে। এ ছাড়া রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার জন্য থেরাপি ও কাউন্সেলিং রুমসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওয়ার্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মোস্তফা আলী।

এই ওয়ার্ডটি চালুর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল কলেজের স্বীকৃতি বজায় রাখা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী মার্চ মাসেই ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশন (ডব্লিউএফএমই) থেকে একটি প্রতিনিধি দল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ পরিদর্শনে আসবে। পরিদর্শনকালে মনোরোগ বিভাগের ওয়ার্ড না পেলে কলেজের পয়েন্ট কমে যাওয়ার এবং অ্যাক্রিডিটেশনে বড় ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এতে করে এই কলেজের শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা বা পড়াশোনা করার সুযোগ কমে যেত। এ ছাড়া এফসিপিএস এবং ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্যও এমন একটি ওয়ার্ড জরুরি ছিল।

কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুরোধ শুনে সদ্যবিদায়ী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ দ্রুত এই ওয়ার্ড চালুর উদ্যোগ নেন এবং গত বুধবার এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের সময় তাঁর সঙ্গে নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামসহ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালে যে ৬৭ বছরেও মানসিক রোগীদের জন্য ওয়ার্ড চালু হয়নি, এটি সত্যিই অবাক হওয়ার মতো বিষয়। আমরা প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি চালু করেছি। এখন থেকে এ অঞ্চলের মানসিক রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি থেকেও উন্নত চিকিৎসা নিতে পারবেন।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি রামেক হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর উদ্যোগেগত ২৩ অক্টোবর শুধু সাপে কাটা রোগীদের জন্য বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালু করা হয়।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে একজনও সাপে কাটা রোগীর মৃত্যু হয়নি, যেখানে আগে প্রায় প্রতিদিনই এই রোগে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতো। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত