Ajker Patrika

‘জাল রিপোর্টে’ কারাবাস

  • হত্যাচেষ্টার মামলায় ২৬ দিন কারাভোগ ব্যবসায়ীর
  • বাদীপক্ষ জাল সিটি স্ক্যান রিপোর্টের মাধ্যমে ‘গুরুতর আঘাতের’ সনদ জমা দেওয়ার অভিযোগ
  • চিকিৎসা সনদ খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি
সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৮: ৩৪
নজরুল ইসলাম।
নজরুল ইসলাম।

কিশোরগঞ্জে মাথায় কোপ দিয়ে হত্যাচেষ্টার একটি মামলায় আদালতের আদেশে ২৬ দিন কারাভোগ করেছেন নজরুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী। তাঁর অভিযোগ, বাদীপক্ষ সিটি স্ক্যানের জাল রিপোর্টের মাধ্যমে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা সনদ নিয়ে আদালতে দাখিল করেন। যেখানে গুরুতর আঘাত উল্লেখ করা হয়েছে। ওই মিথ্যা সনদের কারণে তাঁকে ২৬ দিন কারাভোগ করতে হয়েছে।

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক বোর্ডের সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যসচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন নজরুল ইসলাম। একই দিনে তিনি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।

এর আগের দিন গত বুধবার চিকিৎসা সনদ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী নজরুল। তাঁর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের কমিটি করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

অভিযোগকারী নজরুল ইসলাম কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার জয়কা ইউনিয়নের উত্তর কান্দাইল কুকিমাদল গ্রামের বাসিন্দা। তিনি গত ২৮ মে কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিনের আবেদন করলে শুনানি শেষে বিচারক আরিফুল ইসলাম তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। ২৬ দিন কারাভোগের পর গত ২৩ জুন তিনি জামিন পান।

আসামি ও বাদীপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি সকালে করিমগঞ্জের কুকিমাদল গ্রামের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম তাঁর এক সন্তানকে অপহরণের অভিযোগ তোলেন। ওই দিন দুপুরে তাঁর সন্তান উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিলেও মামলা নেয়নি পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েক দিন আদালতে মামলা করার জন্য আইনি পরামর্শ নিতে গেলে প্রতিপক্ষের লোকজন গত ১ মার্চ নজরুলকে মারধর, তাঁর বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে লুটপাট চালান।

পরদিন গত ২ মার্চ নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে কিশোরগঞ্জ আদালতে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লুটপাটের অভিযোগে মামলার আরজি করেন। ৩ মার্চ আদালতে অপহরণের অভিযোগে মামলার আরজি করেন নজরুলের স্ত্রী মোছা. রোকেয়া। একই দিন নজরুল ইসলামকে মারধরের অভিযোগেও আদালতে আরেকটি মামলা করেন রোকেয়া।

মামলার পর গত ৬ মার্চ নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে করিমগঞ্জ থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা করেন প্রতিপক্ষ জয়কা ইউনিয়নের এমদাদুল হকের স্ত্রী মোছা. হোসনা। এতে নজরুলসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ৩ মার্চ সন্ধ্যায় এমদাদুল হককে রামদা দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় কোপ দিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। তাঁকে চিকিৎসার জন্য কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার চাহিদাপত্রের (রিকুইজিশন) পরিপ্রেক্ষিতে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও চিকিৎসা কর্মকর্তা দিলরুবা সুলতানা শোভা রোগীকে গত ২৪ মার্চ মেডিকেল সনদ দেন। জখম নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়ে তিনি এই সনদ দেন। যেখানে সাধারণ জখমের কথা উল্লেখ করা হয়। পরে গত ২৫ এপ্রিল রোগীর স্বজনেরা মেডিস্ক্যান স্পেশালাইজড ইমেজিং সেন্টার থেকে সিটি স্ক্যানের আরেকটি রিপোর্ট জমা দিলে মেডিকেল বোর্ড থেকে আঘাতের ধরন ‘গুরুতর’ উল্লেখ করে সংশোধিত সনদ দেওয়া হয়; যা পরবর্তীকালে আসামিপক্ষ আদালতে উপস্থাপন করে।

নজরুল ইসলাম বলেন, জাল রিপোর্টের ভিত্তিতে জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডে গুরুতর ‘আঘাত’ উল্লেখ করে পুনরায় মেডিকেল সনদ ইস্যু করা হয়। এ ছাড়া ওই সিটি স্ক্যান রিপোর্টে রোগী পুরুষ হওয়া সত্ত্বেও ‘স্ত্রী লিঙ্গ’ লেখা ছিল।

নজরুলের স্ত্রী রোকেয়া আক্তার বলেন, ‘সন্তানকে অপহরণ ও স্বামীর ওপর হামলার বিচার পাইনি, উল্টো জাল সিটি স্ক্যান রিপোর্টের ভিত্তিতে স্বামীকে জেলে যেতে হয়েছে। পুলিশও যাচাই না করে অভিযোগপত্র দিয়েছে।’

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আদালতে অপহরণের মামলার আইনি পরামর্শ নেওয়ার সময় আমাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা করে প্রতিপক্ষ। পরে মিথ্যা মামলায় আমাকে জেলে পাঠানো হয়। এখনো পরিবার নিয়ে ভয়ে থাকতে হচ্ছে। আমাদের সন্তান ভয়ে স্কুলেও যেতে পারছে না।’

অভিযোগের বিষয়ে এমদাদুল হকের সঙ্গে কথা বলতে মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার ছোট ভাই বলতে পারবে।’

এরপর এমদাদুল হকের ছোট ভাই মোকাররমকে কল দিলে তিনি বলেন, ‘তাঁরা (আসামিপক্ষ) বলতেই পারেন, সার্টিফিকেট জাল। চিকিৎসক সার্টিফিকেট দিয়েছেন, তা জাল না সঠিক—চিকিৎসক বলতে পারবেন। আর বিষয়টি দেখার দায়িত্ব জজ সাহেবের।’

করিমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব মোরশেদ বলেন, ‘মেডিকেল সনদের ভিত্তিতে আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।

আর অপহরণ মামলায় যথাযথ তদন্তের পর আসামিদের অব্যাহতি দেওয়া হয়।’

অভিযোগের বিষয়ে মেডিস্ক্যান স্পেশালাইজড ইমেজিং সেন্টারের পরিচালক এ এস এম নুরুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের কাছে রিপোর্টগুলো পাঁচ বছর পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকে। তাঁরা রিপোর্ট নিয়ে কী করেছেন, তা আমাদের জানা নেই। যথাযথ কর্তৃপক্ষ তদন্ত করলে সত্য বেরিয়ে আসবে।’

কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ও মেডিকেল বোর্ডের সদস্যসচিব দেবাশীষ ভৌমিক বলেন, ‘সিটি স্ক্যান রিপোর্টটি জাল বলে আগেই সন্দেহ হয়েছিল। যাঁদের দিয়ে যাচাই করিয়েছি, তাঁরা মিথ্যা বলেছেন। প্রয়োজনে আমি আদালতে গিয়ে বলব।’

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি আমি দেখব।’

সিভিল সার্জন অভিজিৎ শর্মা আজকের পত্রিকা'কে বলেন, ‘কিশোরগঞ্জ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বরাবর চিঠি দিয়েছি তিন সদস্যের কমিটি করে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য। প্রতিবেদন যদি ঠিক না থাকে, তাহলে আমরা আমাদের পক্ষ থেকে তদন্ত করব।’

কিশোরগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. জালাল উদ্দিন বলেন, ‘কোনো চিকিৎসক যদি ভুয়া মেডিকেল রিপোর্ট ইস্যু করেন এবং বিষয়টি আদালতকে জানালে তাঁর রেজিস্ট্রেশন বাতিলসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গুলিবিদ্ধ হাদির মৃত্যু: গঙ্গাচড়ায় ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিল

 গঙ্গাচড়া (রংপুর) প্রতিনিধি
বিক্ষোভ মিছিল শেষে হাদির আত্মার মাগফিরাত কামনা করে সংক্ষিপ্ত দোয়া করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিক্ষোভ মিছিল শেষে হাদির আত্মার মাগফিরাত কামনা করে সংক্ষিপ্ত দোয়া করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবরে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে গঙ্গাচড়া বাজারের জিরো পয়েন্ট থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আবার জিরো পয়েন্টে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।

সমাবেশে অংশ নেওয়া বিক্ষোভকারীরা হাদির হত্যাকারীদের দ্রুত বিচারের দাবি জানান। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের বিচার কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন তাঁরা। সমাবেশ শেষে হাদির আত্মার মাগফিরাত কামনা করে সংক্ষিপ্ত দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া পরিচালনা করেন উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাহেব আলী।

বিক্ষোভ মিছিলে উপজেলা নাগরিক পার্টির প্রধান সমন্বয়কারী রিফাতুজ্জামান, উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাহেব আলী, গঙ্গাচড়া পশ্চিম থানা ছাত্রশিবিরের সভাপতি শোয়াইবুর রহমান, উপজেলা সেক্রেটারি নাজমুল ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপজেলা সংগঠক মোহাইমিনুল ইসলাম আহাদ, আলী আল রাদিত রেশান, সোহান, উপজেলা নাগরিক পার্টির যুগ্ম সমন্বয়কারী জাহানুরুর রহমান, জীবন মিয়া, তৈয়ব আলীসহ স্থানীয় শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, শরিফ ওসমান হাদি জুলাই অভ্যুত্থান ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় গণসংযোগের সময় হামলার শিকার হন হাদি। চলন্ত রিকশায় থাকা অবস্থায় একটি মোটরসাইকেল থেকে তাঁকে গুলি করা হয়। গুলিটি তাঁর মাথায় লাগে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং অস্ত্রোপচারের পর ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকেরা তখন তাঁর অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বলে জানান।

পরে সোমবার দুপুরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়। সেখানকার সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদির মৃত্যুতে গ্রামের বাড়িতে শোকের ছায়া, হত্যাকারীকে গ্রেপ্তারের দাবি

ঝালকাঠি প্রতিনিধি
মৃত্যুর খবর শোনামাত্রই আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও শুভানুধ্যায়ীরা হাদির বাড়িতে ছুটে আসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
মৃত্যুর খবর শোনামাত্রই আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও শুভানুধ্যায়ীরা হাদির বাড়িতে ছুটে আসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর তাঁর গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলা শহরের খাসমহল এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। খবর শোনামাত্রই আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও শুভানুধ্যায়ীরা তাঁর বাড়িতে ছুটে আসেন। তবে নিরাপত্তার কারণে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত পরিবারের কোনো সদস্য সাংবাদিক বা আগত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেননি। পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার সকালে পরিবারের সদস্যরা সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন।

বর্তমানে হাদির বাসায় অবস্থান করছেন তাঁর বোন মাছুমা সুলতানা বিন হাদি ও ভগ্নিপতি আমির হোসেন।

হাদির মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তাঁর প্রতিবেশী, সহপাঠী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। হাদির স্মৃতি স্মরণ করতে গিয়ে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।

স্থানীয় বাসিন্দারা প্রশ্ন তুলেছেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর হাদির মতো একজন সক্রিয় কর্মীকে কেন পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তাঁরা।

এদিকে ঘটনার পর এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হাদির মৃত্যুতে যবিপ্রবিতে বিক্ষোভ

­যশোর প্রতিনিধি
বিক্ষোভ মিছিল শেষে হাদির আত্মার মাগফিরাত কামনা করে সংক্ষিপ্ত দোয়া করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিক্ষোভ মিছিল শেষে হাদির আত্মার মাগফিরাত কামনা করে সংক্ষিপ্ত দোয়া করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবরে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। খবর পাওয়ার পরপরই বৃহস্পতিবার রাতে ক্যাম্পাসে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়।

বিক্ষোভকারীরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে যশোর-চৌগাছা সড়কে অবস্থান নেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষার্থীরা ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’; ‘হাদি ভাই কবরে, খুনি কেন ভারতে?’; ‘যে ভারত খুনি পালে, সেই ভারত ভেঙে দাও’; ‘ভারতীয় আধিপত্য ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’; ‘ছাত্রলীগের আস্তানা ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’; ‘ইনকিলাব ইনকিলাব—জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’; ‘আপস না সংগ্রাম—সংগ্রাম সংগ্রাম’ এবং ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ এমন বিভিন্ন স্লোগান দেন।

প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ শেষে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য দেন ইএসটি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ওসামা, জিইবিটি বিভাগের শিক্ষার্থী জালিস মাহমুদ, পিইএসএস বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সাফি এবং আইপিই বিভাগের শিক্ষার্থী সিয়াম মিনহাজ।

সমাবেশে ইএসটি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ওসামা বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই ভারত পরিকল্পিতভাবে এই দেশের ওপর আগ্রাসন চালিয়ে আসছে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে শরিফ ওসমান হাদিকেও পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘আগামী দিনে কেউ যদি বাংলাদেশকে ভারতের কলোনি বানাতে চায়, তবে বাংলাদেশের যুবসমাজ তা মেনে নেবে না। আগামী দিনের বাংলাদেশ হবে বাংলাদেশিদের বাংলাদেশ।’

এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি। এনসিপি স্বাস্থ্য সেলের প্রধান ও হাদির চিকিৎসায় নিয়োজিত ডা. আহাদ এক ভিডিও বার্তায় তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ওসমান হাদির খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ফেনীতে বিক্ষোভ

ফেনী প্রতিনিধি
গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফেনী শহরের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য’-এর ব্যানারে মিছিল বের করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফেনী শহরের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য’-এর ব্যানারে মিছিল বের করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবরে ফেনীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ছাত্র-জনতা। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে শহরের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য’-এর ব্যানারে মিছিলটি বের করা হয়। মিছিলটি শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে ফেনী প্রেসক্লাব, কেন্দ্রীয় বড় মসজিদ, ট্যাংক রোড ও ফেনী মডেল থানা প্রদক্ষিণ করে খেজুর চত্বরে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।

মিছিল চলাকালে বিক্ষোভকারীরা ‘আমি কে, তুমি কে? হাদি হাদি’; ‘আমরা সবাই হাদি হবো, গুলির মুখে কথা কবো’; ‘হাদি হত্যার বিচার চাই’; ‘শেম শেম, ইন্টেরিম ইন্টেরিম’; ‘ভারতীয় আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে’; ‘আর নয় প্রতিরোধ, এবার হবে প্রতিশোধ’; ‘দিল্লি যাদের মামাবাড়ি, বাংলা ছাড়ো তাড়াতাড়ি’; ‘পেতে চাইলে মুক্তি, ছাড়ো ভারতভক্তি’; ‘সুশীলতার দিন শেষ, বিচার চাই বাংলাদেশ’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।

সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাবেক জেলা সমন্বয়ক আবদুল আজিজ বলেন, ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী আন্দোলনে হাদি আমাদের যে পথ দেখিয়েছেন, সেই পথে হাঁটতে আমরা লাখো হাদি প্রস্তুত। যত দিন এ দেশে ভারতীয় আধিপত্য থাকবে, তত দিন রাজপথে আমাদের লড়াই চলবে। হাদির খুনিরা যেখানেই থাকুক, অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠক ওসমান গনি রাসেল বলেন, ‘ওসমান হাদিকে প্রকাশ্যে গুলি করার এক সপ্তাহ পার হলেও প্রশাসন এখনো প্রধান সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। জুলাইয়ের সম্মুখ যোদ্ধারা আজ জীবনের হুমকির মুখে। প্রশাসনের নির্লিপ্ততায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা এখনো আশপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দ্রুত ফ্যাসিবাদের দোসরদের আইনের আওতায় না আনলে নির্বাচনের আগে আরও বহু “হাদি” হত্যার আশঙ্কা রয়েছে।’

সমাবেশে জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মুফতি আবদুল হান্নান বলেন, ‘শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকারীদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।’

এর আগে বক্তারা অন্তর্বর্তী সরকারের কাঙ্ক্ষিত সংস্কার দাবি করেন এবং শরিফ ওসমান হাদি হত্যার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, এনসিপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ ছাত্র-জনতা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত