Ajker Patrika

‘জাল রিপোর্টে’ কারাবাস

  • হত্যাচেষ্টার মামলায় ২৬ দিন কারাভোগ ব্যবসায়ীর
  • বাদীপক্ষ জাল সিটি স্ক্যান রিপোর্টের মাধ্যমে ‘গুরুতর আঘাতের’ সনদ জমা দেওয়ার অভিযোগ
  • চিকিৎসা সনদ খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি
সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৮: ৩৪
নজরুল ইসলাম।
নজরুল ইসলাম।

কিশোরগঞ্জে মাথায় কোপ দিয়ে হত্যাচেষ্টার একটি মামলায় আদালতের আদেশে ২৬ দিন কারাভোগ করেছেন নজরুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী। তাঁর অভিযোগ, বাদীপক্ষ সিটি স্ক্যানের জাল রিপোর্টের মাধ্যমে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা সনদ নিয়ে আদালতে দাখিল করেন। যেখানে গুরুতর আঘাত উল্লেখ করা হয়েছে। ওই মিথ্যা সনদের কারণে তাঁকে ২৬ দিন কারাভোগ করতে হয়েছে।

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক বোর্ডের সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যসচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন নজরুল ইসলাম। একই দিনে তিনি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।

এর আগের দিন গত বুধবার চিকিৎসা সনদ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী নজরুল। তাঁর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের কমিটি করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

অভিযোগকারী নজরুল ইসলাম কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার জয়কা ইউনিয়নের উত্তর কান্দাইল কুকিমাদল গ্রামের বাসিন্দা। তিনি গত ২৮ মে কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিনের আবেদন করলে শুনানি শেষে বিচারক আরিফুল ইসলাম তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। ২৬ দিন কারাভোগের পর গত ২৩ জুন তিনি জামিন পান।

আসামি ও বাদীপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি সকালে করিমগঞ্জের কুকিমাদল গ্রামের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম তাঁর এক সন্তানকে অপহরণের অভিযোগ তোলেন। ওই দিন দুপুরে তাঁর সন্তান উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিলেও মামলা নেয়নি পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েক দিন আদালতে মামলা করার জন্য আইনি পরামর্শ নিতে গেলে প্রতিপক্ষের লোকজন গত ১ মার্চ নজরুলকে মারধর, তাঁর বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে লুটপাট চালান।

পরদিন গত ২ মার্চ নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে কিশোরগঞ্জ আদালতে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লুটপাটের অভিযোগে মামলার আরজি করেন। ৩ মার্চ আদালতে অপহরণের অভিযোগে মামলার আরজি করেন নজরুলের স্ত্রী মোছা. রোকেয়া। একই দিন নজরুল ইসলামকে মারধরের অভিযোগেও আদালতে আরেকটি মামলা করেন রোকেয়া।

মামলার পর গত ৬ মার্চ নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে করিমগঞ্জ থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা করেন প্রতিপক্ষ জয়কা ইউনিয়নের এমদাদুল হকের স্ত্রী মোছা. হোসনা। এতে নজরুলসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ৩ মার্চ সন্ধ্যায় এমদাদুল হককে রামদা দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় কোপ দিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। তাঁকে চিকিৎসার জন্য কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার চাহিদাপত্রের (রিকুইজিশন) পরিপ্রেক্ষিতে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও চিকিৎসা কর্মকর্তা দিলরুবা সুলতানা শোভা রোগীকে গত ২৪ মার্চ মেডিকেল সনদ দেন। জখম নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়ে তিনি এই সনদ দেন। যেখানে সাধারণ জখমের কথা উল্লেখ করা হয়। পরে গত ২৫ এপ্রিল রোগীর স্বজনেরা মেডিস্ক্যান স্পেশালাইজড ইমেজিং সেন্টার থেকে সিটি স্ক্যানের আরেকটি রিপোর্ট জমা দিলে মেডিকেল বোর্ড থেকে আঘাতের ধরন ‘গুরুতর’ উল্লেখ করে সংশোধিত সনদ দেওয়া হয়; যা পরবর্তীকালে আসামিপক্ষ আদালতে উপস্থাপন করে।

নজরুল ইসলাম বলেন, জাল রিপোর্টের ভিত্তিতে জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডে গুরুতর ‘আঘাত’ উল্লেখ করে পুনরায় মেডিকেল সনদ ইস্যু করা হয়। এ ছাড়া ওই সিটি স্ক্যান রিপোর্টে রোগী পুরুষ হওয়া সত্ত্বেও ‘স্ত্রী লিঙ্গ’ লেখা ছিল।

নজরুলের স্ত্রী রোকেয়া আক্তার বলেন, ‘সন্তানকে অপহরণ ও স্বামীর ওপর হামলার বিচার পাইনি, উল্টো জাল সিটি স্ক্যান রিপোর্টের ভিত্তিতে স্বামীকে জেলে যেতে হয়েছে। পুলিশও যাচাই না করে অভিযোগপত্র দিয়েছে।’

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আদালতে অপহরণের মামলার আইনি পরামর্শ নেওয়ার সময় আমাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা করে প্রতিপক্ষ। পরে মিথ্যা মামলায় আমাকে জেলে পাঠানো হয়। এখনো পরিবার নিয়ে ভয়ে থাকতে হচ্ছে। আমাদের সন্তান ভয়ে স্কুলেও যেতে পারছে না।’

অভিযোগের বিষয়ে এমদাদুল হকের সঙ্গে কথা বলতে মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার ছোট ভাই বলতে পারবে।’

এরপর এমদাদুল হকের ছোট ভাই মোকাররমকে কল দিলে তিনি বলেন, ‘তাঁরা (আসামিপক্ষ) বলতেই পারেন, সার্টিফিকেট জাল। চিকিৎসক সার্টিফিকেট দিয়েছেন, তা জাল না সঠিক—চিকিৎসক বলতে পারবেন। আর বিষয়টি দেখার দায়িত্ব জজ সাহেবের।’

করিমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব মোরশেদ বলেন, ‘মেডিকেল সনদের ভিত্তিতে আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।

আর অপহরণ মামলায় যথাযথ তদন্তের পর আসামিদের অব্যাহতি দেওয়া হয়।’

অভিযোগের বিষয়ে মেডিস্ক্যান স্পেশালাইজড ইমেজিং সেন্টারের পরিচালক এ এস এম নুরুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের কাছে রিপোর্টগুলো পাঁচ বছর পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকে। তাঁরা রিপোর্ট নিয়ে কী করেছেন, তা আমাদের জানা নেই। যথাযথ কর্তৃপক্ষ তদন্ত করলে সত্য বেরিয়ে আসবে।’

কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ও মেডিকেল বোর্ডের সদস্যসচিব দেবাশীষ ভৌমিক বলেন, ‘সিটি স্ক্যান রিপোর্টটি জাল বলে আগেই সন্দেহ হয়েছিল। যাঁদের দিয়ে যাচাই করিয়েছি, তাঁরা মিথ্যা বলেছেন। প্রয়োজনে আমি আদালতে গিয়ে বলব।’

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি আমি দেখব।’

সিভিল সার্জন অভিজিৎ শর্মা আজকের পত্রিকা'কে বলেন, ‘কিশোরগঞ্জ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বরাবর চিঠি দিয়েছি তিন সদস্যের কমিটি করে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য। প্রতিবেদন যদি ঠিক না থাকে, তাহলে আমরা আমাদের পক্ষ থেকে তদন্ত করব।’

কিশোরগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. জালাল উদ্দিন বলেন, ‘কোনো চিকিৎসক যদি ভুয়া মেডিকেল রিপোর্ট ইস্যু করেন এবং বিষয়টি আদালতকে জানালে তাঁর রেজিস্ট্রেশন বাতিলসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চাঁদপুরে হেফাজতে নির্যাতন, ৪ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা

চাঁদপুর প্রতিনিধি
চাঁদপুরে হেফাজতে নির্যাতন, ৪ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থানায় পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ এনে অজ্ঞাতনামা চার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী ও ডাকাতি মামলার আসামি মো. খোকন (৩৯)। গত শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) তিনি ফরিদগঞ্জ থানায় মামলাটি করেন।

এর আগে ফরিদগঞ্জ থানায় গত ২৮ নভেম্বর চাঞ্চল্যকর ডাকাতি মামলায় আসামির দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণকালে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় ফরিদগঞ্জ আমলি আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট শাহাদাতুল হাসান আল মুরাদ নির্যাতনের ঘটনায় মামলা করার নির্দেশ দেন।

আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির ফখরুদ্দিন আহমেদ স্বপন।

মামলার কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অধীন ফরিদগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট একটি ডাকাতি মামলায় (জি আর নং-৩১৫/২৫) ১৬ ডিসেম্বর তিনজন অজ্ঞাতনামা আসামিকে হাজির করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবিরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এজাহারে অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে উল্লেখিত খোকনের দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ডের সময় আসামি পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের বিস্তারিত বর্ণনা দেন।

আসামির গ্রেপ্তারের সময় গ্রেপ্তারের স্মারকপত্রে আসামি সুস্থ ও পুলিশ ফরওয়ার্ডিংয়ে কোনো জখমের উল্লেখ না থাকায় ম্যাজিস্ট্রেট আসামিকে পরীক্ষা করে নির্যাতনের অভিযোগ তাৎক্ষণিকভাবে লিপিবদ্ধ করেন। একই সঙ্গে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন অনুযায়ী সাত কার্যদিবসের মধ্যে চাঁদপুরের পুলিশ সুপারকে মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আসামিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে নির্দেশ দেন।

যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ ডিসেম্বর চাঁদপুর সদর হাসপাতাল থেকে আসামিকে পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেন চিকিৎসক রানা সাহা ও আসিবুল হাসান চৌধুরী। হাসপাতালের মেডিকেল পরীক্ষার প্রতিবেদনে দেখা যায়, আসামির উভয় পায়ের ঊরুর ওপর একাধিক নীলাফুলা জখম রয়েছে। যদিও চিকিৎসা সনদে উল্লেখ করা হয়, আসামির বর্ণনামতে এই জখম প্রায় চার দিন আগের।

এদিকে আদালতের মামলা করার নির্দেশের পর ২৩ ডিসেম্বর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) মুকুর চাকমা ঘটনার গুরুত্ব ও স্পর্শকাতরতার কথা উল্লেখ করে ১৫ দিনের তদন্তের সময় প্রার্থনা করেন। তবে ম্যাজিস্ট্রেট সময় বিবেচনা না করে তাৎক্ষণিকভাবে মামলা করার আগের আদেশ বহাল রাখেন।

আদালতের আদেশ পর্যালোচনায় দেখা যায়, নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধসমূহ আমলযোগ্য। ফলে আইনানুযায়ী এ ধরনের অপরাধে মামলা করা ছাড়া তদন্ত পরিচালনার কোনো সুযোগ নেই।

সর্বশেষ ২৭ ডিসেম্বর আদালতের নির্দেশ মোতাবেক ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হেলাল উদ্দিন নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা করেন। ওই মামলার তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয় থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আরিফ ইফতেখারকে।

মামলার বাদী মো. খোকন ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুপ্টি সরদার বাড়ির শাহজাহানের ছেলে। বিভিন্ন অপরাধে ফরিদগঞ্জ থানায় চার মামলার আসামি খোকন। সর্বশেষ গত রোববার (২৮ নভেম্বর) ডাকাতির ঘটনায় ফরিদগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা সাতজনকে আসামি করে মামলা করেন উপজেলার গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের সাইসাঙ্গা গ্রামের মিজি বাড়ির রহিম বাদশার স্ত্রী পেয়ারা বেগম। ওই মামলায় গ্রেপ্তার হন আসামি খোকন।

এ বিষয়ে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. রবিউল হাসান বলেন, আদালতের আদেশের পর ফরিদগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে বাড়ানো হলো মেট্রোরেলের ট্রিপ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮: ২৬
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বিএনপির সদ্যপ্রয়াত চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নেওয়ার সুবিধার্থে আগামীকাল বুধবার মেট্রোরেলের ট্রিপের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) পরিচালক (প্রশাসন) এ কে এম খায়রুল আলমের সই করা নোটিশে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, যাত্রীসাধারণের যাতায়াত নির্বিঘ্ন রাখতে বিশেষ এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

উদ্যোগের বিষয়ে ডিএমটিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) মোহাম্মদ ইফতিখার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, সরকার ৩১ ডিসেম্বর সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় ছুটির দিনের সময়সূচি অনুযায়ী ট্রেন চলাচলের কথা থাকলেও খালেদা জিয়ার জানাজার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মেট্রোরেলের ট্রিপের সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, যাত্রীদের চাপ সামাল দিতে প্রয়োজন অনুযায়ী মেট্রোরেল সেবা সমন্বয় করা হবে। যাতায়াত স্বাভাবিক রাখতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে ডিএমটিসিএল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি 
মাওলানা মুখলিছুর রহমান (চিতল মুখলিছ)। ছবি: সংগৃহীত
মাওলানা মুখলিছুর রহমান (চিতল মুখলিছ)। ছবি: সংগৃহীত

দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রকাশ্যে আপত্তিকর মন্তব্য করায় হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে মাওলানা মুখলিছুর রহমান (চিতল মুখলিছ) নামের এক ব্যক্তিকে গণপিটুনি দিয়েছে স্থানীয় জনতা। তিনি শেখ হাসিনাকে চিতল মাছ ও হিরো আলমকে নোয়া গাড়ি উপহার দিয়ে ‘চিতল মুখলিছ’ নামে পরিচিতি পান। মুখলিছুর রহমান পরে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) বেলা ২টার দিকে চুনারুঘাট পৌর শহরের থানা রোডে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুপুরে থানার গেট এলাকায় দাঁড়িয়ে মাওলানা মুখলিছুর রহমান বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ ও আপত্তিকর মন্তব্য করেন। বিষয়টি বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের কানে গেলে তাঁরা তাঁকে আটক করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তিনি পালানোর চেষ্টা করলে উত্তেজিত জনতা তাঁকে ধরে মারধর করে। পরে স্থানীয় মুরব্বিদের হস্তক্ষেপে মাওলানা মুখলিছুর রহমান প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

যুবদল নেতা সাদ্দাম হোসেন বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে আটক করে গণপিটুনি দিয়েছে।

উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব মারুফ আহমেদ বলেন, থানার গেট এলাকায় বসে তিনি কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করছিলেন। বিষয়টি জানাজানি হলে উত্তেজিত জনতা তাঁকে কিছু মারধর করে। পরে উপস্থিত মুরব্বিদের হস্তক্ষেপে মাওলানা মুখলিছুর রহমান প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়। তবে পুলিশ পৌঁছানোর আগেই বিষয়টি মীমাংসা হয়ে যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদি হত্যা মামলা: সিবিউন-সঞ্জয়ের তৃতীয় দফায় রিমান্ড, ফয়সাল নামে আরও একজন রিমান্ডে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮: ০২
হাদি হত্যা মামলা: সিবিউন-সঞ্জয়ের তৃতীয় দফায় রিমান্ড, ফয়সাল নামে আরও একজন রিমান্ডে

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করে হত্যার মামলায় প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানকে ভারতে পালাতে সাহায্যকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিমকে তৃতীয় দফা রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের পর অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার ফয়সাল নামে একজনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলাম প্রত্যেককে তিন দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর গোয়েন্দা পুলিশ তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেন।

দুই আদিবাসী সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিম এবং ফয়সালকে আজ কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। প্রত্যেকের সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার পৃথক দুটি আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ। শুনানি শেষে আদালত কারাগারে প্রত্যেকের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আদালতের অতিরিক্ত পিপি মুহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

২৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফা রিমান্ড শেষে সিবিউন ও সঞ্জয়কে কারাগারে পাঠানো হয়। ২১ ডিসেম্বর দুজনকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। ১৮ ডিসেম্বর তাঁদের তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।

এর আগে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া ও হালুয়াঘাট থেকে এই দুজনকে আটক করে ডিবি পুলিশ।

সিবিউন ও সঞ্জয়ের রিমান্ড আবেদনে বলা হয়েছে, সীমান্তে পারাপারকারী চক্রের হোতা জনৈক ফিলিপ নামক ব্যক্তির অবস্থান শনাক্ত, গ্রেপ্তার, ফিলিপ ব্যতীত আর কারও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না, ফিলিপের সঙ্গে কিলিং মিশনের কে বা কারা যোগাযোগ করেছে তা জানার জন্য, কিলিং মিশনের ইন্ধনদাতা এবং অর্থদাতাদের শনাক্ত করার জন্য সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিমকে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।

অন্যদিকে ফয়সালের রিমান্ড আবেদন থেকে জানা যায়, ১৬ ডিসেম্বর র‍্যাব-১১-এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নরসিংদী জেলার সদর থানাধীন তরুয়া এলাকার মোল্লার বাড়ির সামনে তরুয়ার বিলে অভিযান চালিয়ে ফয়সালকে আটক করে। অভিযানের সময় বিলের পানিতে ফেলে দেওয়া হাদি হত্যায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়। পরে তাঁকে অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।

তাঁর রিমান্ড আবেদনে বলা হয়েছে, হাদি হত্যা মামলা একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা। মামলার এজাহারনামীয় ও পলাতক আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়ার তথ্য অনুযায়ী, আসামি ফয়সালের দেখানো মতে নরসিংদী সদরের তরোয়া বিল থেকে ১৬ ডিসেম্বর রাত ১১টার দিকে পিস্তল ও গুলি উদ্ধার করে। নরসিংদী সদর মডেল থানায় অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়।

তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, ফয়সালের তথ্যানুযায়ী উদ্ধার হওয়া অস্ত্র ও গুলি পল্টনে চাঞ্চল্যকর ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়েছে। অস্ত্রের উৎস ও সরবরাহকারী সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ, হত্যার মোটিভ উদ্ধার, ইন্ধনদাতাদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার, পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য ফয়সালকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।

১২ ডিসেম্বর দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে বিজয়নগর এলাকায় রিকশায় করে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করা হয়। মোটরসাইকেল করে এসে রিকশার পাশ থেকে করা গুলিতে হাদি মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন। ঘটনার পরপর তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নেওয়ার হলে সেখানে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর মারা যান হাদি।

১৪ ডিসেম্বর রাতে ফয়সালকে আসামি করে পল্টন থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন ইনকিলাব মঞ্চের যুগ্ম সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের। হাদির মৃত্যুর পর তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপ নেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত