Ajker Patrika

যশোরে সহকারী অধ্যাপকের বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে লাখো টাকা হাতানোর অভিযোগ

যশোর প্রতিনিধি
আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩: ৫৫
যশোরে সহকারী অধ্যাপকের বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে লাখো টাকা হাতানোর অভিযোগ

যশোর সরকারি সিটি কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতানোর অভিযোগ উঠেছে। ইংরেজি কোচিং করতে আসা অসংখ্য শিক্ষার্থীর সঙ্গে জাকির হোসেন এসব প্রতারণা করেছেন বলে জানা গেছে।  

এ ছাড়া সহকর্মীকে জিম্মাদার দেখিয়ে বেসরকারি একটি ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। সেই টাকাও এখন ব্যাংকে পরিশোধ করছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জাকির হোসেন সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হিজলদী গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে তিনি সপরিবার যশোর শহরে বসবাস করেন। প্রতারণার টাকায় তিনি ব্যক্তিগত গাড়ি কিনেছেন বলেও তাঁর সহকর্মীরা জানিয়েছেন। সেই গাড়ি করে তিনি কলেজে যাতায়াত করেন। 

যশোর সদর উপজেলার নুরপুর গ্রামের পিকুল হোসেনের অভিযোগ, কাস্টমস অফিসে চাকরি দেওয়ার কথা বলে তাঁর কাছ থেকে দুই দফায় পাঁচ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন জাকির হোসেন। কিন্তু চার বছরেও পিকুলকে চাকরি দিতে পারেননি। টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না। উল্টো প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। 

এ ঘটনায় পিকুল হোসেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালকের (কলেজ-১) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। 

শুধু পিকুল হোসেন নয়; ইংরেজি কোচিং করতে আসা অসংখ্য শিক্ষার্থীকে সরকারি চাকরি দেওয়ার কথা বলে এভাবেই লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার লিখিত অভিযোগ রয়েছে জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে। 

এদিকে সরকারি সিটি কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকর্মী ও সহকারী অধ্যাপক হাবিবুর রহমানকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে তাঁর কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি ও কাগজে স্বাক্ষর নেন জাকির হোসেন। এসব নথি দেখিয়ে হাবিবুর রহমানকে পার্সোনাল গ্রান্টার (ব্যক্তিগত জিম্মাদার) দেখিয়ে সিটি ব্যাংকের যশোর শাখা থেকে ১০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। সেই টাকা এখন আর পরিশোধ করছেন না। ব্যাংক থেকে হাবিবুর রহমানকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অর্থ ঋণ আদালতে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। 

এ বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমি সিটি কলেজে প্রভাষক হিসেবে নতুন যোগদান করেছি। তখন আমার সিনিয়র সহকর্মী জাকির হোসেন বেসরকারি একটি ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড উত্তোলনের কথা বলে আমার জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি ও স্বাক্ষর নেন। কিন্তু পরবর্তীকালে তিনি আমার স্বাক্ষর জাল করে আমাকে পার্সোনাল গ্রান্টার হিসেবে দেখিয়ে সিটি ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা ঋণ নেন। এখন তিনি ওই ঋণের টাকা পরিশোধ করছেন না। এদিকে ওই ব্যাংক থেকে আমাকে প্রতিনিয়ত ফোন দিচ্ছে। যা আমার জন্য খুবই বিব্রতকর।’ 

এ ঘটনায় জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে হাবিবুর রহমান মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক অধ্যাপক ওয়াহিদুজ্জামানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। 

এদিকে চাকরি দেওয়ার নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অধিদপ্তর থেকে উপপরিচালক অধ্যাপক ওহেদুজ্জামান ও সহকারী পরিচালক (কলেজ-২) তানভির হাসানকে সরেজমিন তদন্ত পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত ৭ মে অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করে অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদল। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধিদপ্তরের উপপরিচালক অধ্যাপক ওহেদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা সরেজমিন তদন্ত পরিচালনা করেছি। অভিযুক্ত ব্যক্তি, অভিযোগকারী ও সাক্ষীদের বক্তব্য শুনেছি ও লিখিত নিয়েছি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া হবে।’ 

তদন্তের তিন মাসের মধ্যেও প্রতিবেদন দাখিল হলো না কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ওহেদুজ্জামান বলেন, ‘কত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে—সেটা চিঠিতে বলা নেই। তবে সরেজমিন তদন্ত শেষে আমি হজব্রত পালনের জন্য সৌদি আরবে ছিলাম। এ জন্য তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে দেরি হচ্ছে।’ 

অভিযোগকারী পিকুল হোসেন বলেন, ‘২০১৮ সালে যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজে পড়ার সময়ে ইংরেজির কোচিং করতে গিয়ে জাকির হোসেন স্যারের সঙ্গে পরিচয়। তখন তিনি জানান, ওপর মহলে তাঁর যোগাযোগ আছে, পাঁচ লাখ টাকা দিলে যশোর কাস্টমস চাকরি দেওয়া যাবে।

‘ওই সময় অনেক কষ্ট করে দুই দফায় ব্যাংক চেকের মাধ্যমে জাকির স্যারকে পাঁচ লাখ টাকা দিই। কিন্তু চার বছরের মধ্যেও স্যার আমার চাকরি দিতে পারেননি। এরপর টাকা চাইতে গেলে জাকির স্যার হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। খারাপ আচরণ করছেন। এ বিষয়ে অভিযোগ করার পর অধিদপ্তরের তদন্ত দল আমাকে ডেকে বক্তব্য নিয়ে গেছে।’

জাকির হোসেনের প্রতারণা স্বীকার হয়েছেন আরও অনেকে। তাঁদের মধ্যে যশোরের কেশবপুর উপজেলার বরণডালি গ্রামের শওকত হোসেন একজন। তিনি প্রতারণার শিকার হয়ে ২০২২ সালের ৩ জুন জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে সিটি কলেজের অধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। 

ওই অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ‘আমার তিন মেয়ে সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজে পড়ার সময় জাকির হোসেনের কাছে ইংরেজি পড়ত। তখন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দিতেন জাকির হোসেন। এরপর ২০১৮ সালে জাকির হোসেনকে নগদ ছয় লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি কারও চাকরি দিতে পারেননি। টাকাও ফেরত দিচ্ছে না।’

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আবদুল মালেকের কাছ থেকেও জাকির হোসেন সাত লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আবদুল মালেক এ বিষয়ে ২০২১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর যশোর সিটি কলেজের অধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। 

ওই অভিযোগপত্রে বলা আছে, ‘স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে পূর্ণ সচিব পদমর্যাদার এক কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে জাকির হোসেন প্রায় আসতেন। ওই কর্মকর্তা আমার স্যার ছিলেন। এ জন্য জাকির হোসেনের সঙ্গে পরিচয় ও সম্পর্ক হয়। তিনি আমাকে জানান, সামনে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে নিয়োগ পরীক্ষা আছে। আপনার কোনো লোক থাকলে নিয়োগ করা যাবে। তখন আমি তার ওপর বিশ্বাস রেখে আমার আত্মীয়-স্বজনদের জানাই। আত্মীয়রা জমি বন্ধক রেখে ধারদেনা করে সাত লাখ টাকা দেন। ওই নগদ টাকা তার কাছে দিয়েছি। চাকরি তো হয়নি বরং ঋণের বোঝা নিয়ে ভুক্তোভুগীরা হতাশায় দিন দিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।’ 

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে আজ রোববার কয়েক দফা যশোর সরকারি সিটি কলেজের সহকারী অধ্যাপক জাকির হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এমনকি এই প্রতিবেদকের নাম ও পরিচয় দিয়ে তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি। 

এ বিষয়ে সরকারি সিটি কলেজের অধ্যক্ষ মো. জামশেদ আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জাকিরের প্রতারণার শত শত ভুক্তভোগী আমাকেসহ বিভিন্ন দপ্তরে শত শত অভিযোগ দিয়েছেন। যা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবরাও তদন্ত করেছে।’

অধ্যক্ষ জামশেদ আলী আরও বলেন, ‘প্রতিদিনই কোনো না ভুক্তভোগী আমার কলেজে আসে তার খোঁজ নিতে। নিঃস্ব হওয়া অনেক ব্যক্তিকে ক্যাম্পাসে তার কাছে আকুতি-মিনতি করতেও দেখা গেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার জানাজায় এসে মারা যাওয়া নিরব জনকণ্ঠের সাবেক কর্মী

বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি 
মো. নিরব হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
মো. নিরব হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে এসে মারা যাওয়া মো. নিরব হোসেন (৫৬) দৈনিক জনকণ্ঠের সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তাঁর বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বড় ডালিমা গ্রামে। রাজধানীর বড় মগবাজারে তিনি পরিবারসহ বসবাস করতেন। মৃতের বড় ভাই মো. বাহাদুর হোসেন আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বাহাদুর হোসেন জানান, খালেদা জিয়ার জানাজায় শরিক হতে নিরব হোসেন তাঁর এক বন্ধুকে নিয়ে রাজধানীর জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় যান। জানাজার সময় অতিরিক্ত মানুষের ভিড়ের চাপে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হলেও ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।

জানা গেছে, কর্মজীবনে মো. নিরব হোসেন ১৯৯৮ সাল থেকে পাঁচ বছরের বেশি সময় দৈনিক জনকণ্ঠে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

চব্বিশের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে নিরব হোসেন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছিলেন। পরে সরকারিভাবে চিকিৎসার জন্য তাঁকে থাইল্যান্ড পাঠানো হয় এবং চিকিৎসা শেষে সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরে এসেছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘আমি সই না করলে ইউএনও সই করবে না’—এলজিইডি প্রকৌশলীর ভিডিও ভাইরাল

ফরিদপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ১১
প্রকৌশলী আব্দুল খালেক । ছবি: সংগৃহীত
প্রকৌশলী আব্দুল খালেক । ছবি: সংগৃহীত

‘আমি সই না করলে ইউএনও (ফাইলে) সই করবে না’—ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) প্রকৌশলী আব্দুল খালেকের কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে চাহিদামতো ঘুষের টাকা না পেয়ে ওই প্রকৌশলীকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির (ঠিকাদার প্রতিনিধি) সঙ্গে এমন কথা বলতে শোনা গেছে।

৩১ সেকেন্ডের ভিডিওটি গোপনে তাঁর কার্যালয় থেকে ধারণ করা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিডিওটি প্রথম পোস্ট করা হয় স্থানীয় সাংবাদিক নিজাম নকিবের ‘নগদ খবর’ নামের ফেসবুক আইডি থেকে।

জানতে চাইলে নিজাম নকিব জানান, গত মঙ্গলবার এক ব্যক্তি তাঁকে ভিডিওটি পাঠিয়েছেন এবং এটি আজকে ধারণ করা বলে জানান তিনি। তবে ওই ব্যক্তি নিজের নাম ইমতিয়াজ আসিফ বললেও অন্য পরিচয় গোপন রাখেন।

ভিডিওতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির (ঠিকাদার প্রতিনিধি) সঙ্গে কথা বলার আগে কাজের বিলের ফাইল স্বাক্ষর করার সময় ৪৫ হাজার টাকা নেওয়ার বিষয়টিও উঠে আসে। এ ছাড়া নতুন করে আরও পাঁচ হাজার টাকা না দেওয়ায় গড়িমসি করতে থাকেন ওই প্রকৌশলী। একপর্যায়ে তাঁকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিয়ে পকেটে রাখতে দেখা যায়।

নগরকান্দা এলজিইডি প্রকৌশলী। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
নগরকান্দা এলজিইডি প্রকৌশলী। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

এ সময় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ‘স্যার, রাখেন এইটা স্যার, বিলের ফাইল ছাড়ার সময় ৪৫ হাজার টাকা নিলেনই আপনি আমার কাছ থেকে। রাখেন স্যার, তিন হাজার টাকা রাখেন, পাঁচ হাজার টাকা নাই।’

পরে প্রকৌশলী আব্দুল খালেক বলেন, ‘আমি সই করব, তারপর ইউএনও সই করবে। আমি সই না করলে ইউএনও (ফাইলে) সই করবে না।’

ভিডিওটির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকৌশলী আব্দুল খালেক মোবাইল ফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এক বদমাশ ভিডিওটি করেছে। আমি তাকে চিনিও না, জানিও না। আন্দাজে কী কয় কী হয়, যা পারে করুক। এগুলো নিয়ে এখন আর কিছু বলার নেই।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহরাজ শারবীন বলেন, ‘ভিডিওটি পূর্বের, আমি দেখেছি। এ ছাড়া আমি নতুন এসেছি। এসব বিষয়ে তাদের ডিপার্টমেন্ট (এলজিইডি) থেকে লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আনোয়ারায় সড়কের পাশ থেকে উদ্ধার দুই শিশুর পরিচয় মিলেছে, বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে মামলা

কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি 
আনোয়ারায় দুই শিশুকে উদ্ধার করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আনোয়ারায় দুই শিশুকে উদ্ধার করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কনকনে শীতের মধ্যে সড়কের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া দুই শিশুর পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। তাদের বাড়ি খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলায়। আজ বুধবার দুপুরে খোরশেদ আলম নামের এক ব্যক্তি নিজেকে ওই শিশুদের বাবা দাবি করে আনোয়ারার ইউএনও ও থানার ওসির সঙ্গে দেখা করেন। এ ছাড়া আদালতের নির্দেশে দুই শিশুর বাবা ও মায়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছে প্রশাসন।

এর আগে গত রোববার সন্ধ্যায় আনোয়ারা উপজেলার বারখাইন ইউনিয়নের মাজারগেট এলাকা থেকে আয়শা (৪) ও মোরশেদ (২) নামের শিশু দুটিকে উদ্ধার করে নিজের হেফাজতে রাখেন সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক মহিম উদ্দিন। গত সোমবার সারা দিন আনোয়ারা থানা ও উপজেলা প্রশাসন ওই শিশুদের পরিবার ও অভিভাবকদের তথ্য পেতে চেষ্টা করে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ওই দুই শিশুকে নিয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের কাছে যান আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার। জেলা প্রশাসক তাদের চিকিৎসা ও যাবতীয় খরচের দায়িত্ব নেন। পরে দুই শিশুর মধ্যে আয়শাকে সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকের জিম্মায় তুলে দেওয়া হয়। গুরুতর অসুস্থ মোরশেদকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

আজ দুপুরে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিশুদের বাবা খোরশেদ। বর্তমানে তিনি পুলিশের হেফাজতে আছেন বলে নিশ্চিত করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুনায়েদ চৌধুরী।

পুলিশের হেফাজতে থাকা খোরশেদ আলমের বরাতে পুলিশ জানায়, খোরশেদ পেশায় একজন অটোরিকশাচালক। পাশাপাশি বাঁশখালীর একটি ভাঙারির দোকানেও কাজ করেন। খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার মহামনি এলাকায় তাঁর বাড়ি। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাঁশখালীর মিয়ার বাজার লস্করপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। তাঁর স্ত্রীর বাড়ি সাতকানিয়া। ৫-৬ মাস আগে তাঁর স্ত্রী দুই সন্তানকে নিয়ে ঘর থেকে পালিয়ে যান। স্ত্রী তাঁর ছোট প্রতিবন্ধী শিশুটিকে দিয়ে ভিক্ষা করাতেন। এটা নিয়েও স্বামী-স্ত্রীর একাধিকবার ঝগড়া হয়েছিল।

এদিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে শিশু দুটিকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি আমলে নিয়ে আজ চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাখাওয়াত হোসেন আনোয়ারা থানাকে মামলা নেওয়ার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আনোয়ারা থানার শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা শিশু আইন-২০১৩-এর বিধান অনুযায়ী কী ব্যবস্থা নিয়েছেন, সে সম্পর্কে ৫ জানুয়ারির মধ্যে লিখিত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

আদালতের আদেশ পাওয়ার কথা স্বীকার করে আনোয়ারা থানার ওসি মো. জুনায়েত চৌধুরী বলেন, ‘আমরা শিশুদের বাবার খোঁজ পেয়েছি। বিস্তারিত জানার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘আদালত জানতে চেয়েছেন শিশুদের ব্যাপারে আমরা কী কী পদক্ষেপ নিয়েছি।’

ইউএনও তাহমিনা আক্তার বলেন, সড়কের পাশে পাওয়া দুই শিশুর দায়িত্ব নিয়েছেন জেলা প্রশাসক। তাদের একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং বড় শিশুকে আশ্রয়দানকারী মহিম উদ্দিনের হেফাজতে রাখা হয়। তিনি বলেন, আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মামলা নেওয়ার নির্দেশ দেন এবং প্রশাসন স্বামী-স্ত্রী দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জামায়াত প্রার্থী মাসুদের বাড়ি নেই, পেশা ব্যবসা ও পরামর্শক

পটুয়াখালী প্রতিনিধি
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। ছবি: সংগৃহীত
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। ছবি: সংগৃহীত

পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের প্রার্থী ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি জেনারেল ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের কোনো বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট নেই। পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী ও পরামর্শক। বছরে আয় ১০ লাখ ১২ হাজার ৮৩০ টাকা।

নির্বাচনী হলফনামা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

হলফনামা অনুযায়ী, ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের মোট সম্পদের পরিমাণ ৪৪ লাখ ৭৭ হাজার ৯৬৪ টাকা। তাঁর বার্ষিক আয় ১০ লাখ ১২ হাজার ৮৩০ টাকা। এর বিপরীতে তিনি ৪৫ হাজার ৪২৫ টাকা আয়কর পরিশোধ করেছেন।

হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁর হাতে নগদ রয়েছে ৪৩ হাজার ২৫০ টাকা। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডে তাঁর জমা রয়েছে ১৬ লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ টাকা। পেশা হিসেবে তিনি নিজেকে পরামর্শক উল্লেখ করেছেন।

এ ছাড়া বন্ড, ঋণপত্র এবং শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাঁর ৩ লাখ ৫ হাজার টাকার শেয়ার রয়েছে।

হলফনামায় আরও বলা হয়েছে, ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের নামে কোনো জমি, বাড়ি কিংবা অ্যাপার্টমেন্ট নেই। তবে তাঁর পরিবারের মোট ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

তাঁর স্ত্রী পেশায় একজন চিকিৎসক। সর্বশেষ আয়কর বিবরণী অনুযায়ী, তাঁর স্ত্রীর বার্ষিক আয় ৬ লাখ ৪১ হাজার ৮৭৫ টাকা এবং মোট সম্পদের পরিমাণ ১২ লাখ ২৩ হাজার ৪৪৩ টাকা।

ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের মালিকানায় রয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকার বৈদ্যুতিকসামগ্রী এবং ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকার আসবাবপত্র। তবে তাঁর বা তাঁর পরিবারের নামে কোনো যানবাহন বা ব্যক্তিগত গাড়ি নেই।

হলফনামা অনুযায়ী, তাঁর আয়ের প্রধান উৎস ব্যবসা ও পরামর্শক পেশা। ব্যবসা থেকে তাঁর বার্ষিক আয় ৫ লাখ ২ হাজার ৮৩০ টাকা এবং পরামর্শক পেশা থেকে আয় ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য খাত থেকে তাঁর আয় রয়েছে ৩০ হাজার টাকা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত