Ajker Patrika

সরকারি কলেজ ভবনে দলীয় কার্যালয় করার অভিযোগ সাবেক এমপি নাসিরের বিরুদ্ধে 

যশোর ও ঝিকরগাছা প্রতিনিধি
আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২৪, ২২: ৪৫
সরকারি কলেজ ভবনে দলীয় কার্যালয় করার অভিযোগ সাবেক এমপি নাসিরের বিরুদ্ধে 

যশোর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. মো. নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে সরকারি শহীদ মশিয়ূর রহমান কলেজের একটি দ্বিতল ভবন দখল করে দলীয় কার্যালয় করার অভিযোগ উঠেছে। সংসদ সদস্য থাকাকালীন নাসির পাঁচ বছর ধরে ভবনটি সংসদ সদস্যের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলেন। বর্তমানে তিনি এটি তাঁর অনুসারীদের রাজনীতিক দলীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাবেক এই সংসদ সদস্যের ভায়রা এই ভবনটি পাঁচ বছরের জন্য ভাড়া নিলেও মূলত ব্যবহার করতেন নাসির উদ্দিন। ক্ষমতার প্রভাব খাঁটিয়ে চুক্তিনামা লঙ্ঘন করে পুরো পাঁচ বছরের একটি টাকাও পরিশোধ করেননি তাঁরা। ভবনটি উদ্ধারে বারবার বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিলেও ভবনটি বুঝে পায়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, ভবনটিতে শিক্ষার্থীদের জন্য আইসিটি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভবনটি বেদখল থাকাতে সেটি করতে পারছে না। যে কারণে শিক্ষার্থীরা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নাসির উদ্দিন যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনের একাদশ সংসদের সংসদ সদস্য ছিলেন।

আজ সোমবার দুপুরে যশোরের ঝিকরগাছা পৌর শহরের মিতালি হল সড়কসংলগ্ন ভবনটিতে দেখা যায় এটির মেইন গেট তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। ভেতরে বড় ব্যানারে লেখা ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ঝিকরগাছা উপজেলা শাখা, অস্থায়ী কার্যালয়’। পাশাপাশি আরেকটি সাইনবোর্ডে লেখা ‘কমিউনিটি পুলিশিং বুথ (কার্যালয়) ঝিকরগাছা থানা, যশোর’। ভবনটির দোতলায় খসে পড়ছে পলেস্তারা। ঝাপসাভাবে লেখা শহীদ মশিয়ূর রহমান কলেজের বিজ্ঞান ভবন। ভবনের দেয়ালে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা–কর্মীদের ছবি–সংবলিত বিভিন্ন দিবসের ব্যানার। প্রতিটি ব্যানারেই সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিনের ছবিও রয়েছে।

দলীয় নেতা-কর্মী সূত্রে জানা যায়, এ ভবনের নিচতলায় তিনটি রুম রয়েছে। একটি ব্যবহার করেন সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন, অন্যটি ব্যবহার করেন সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম রেজা। অন্য আরেকটি রুমের সামনে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সাইনবোর্ড থাকলেও সেটি সর্বদা বন্ধ পাওয়া যায়। ভবন ছাড়াও এখানে অনেক বড় খোলা জায়গা রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন সময়ে সভা–সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সরকারি কলেজের ভবন দখল করে নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্যের রাজনীতিক দলীয় কার্যালয় বানানোতে ক্ষুব্ধ উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা-কর্মী, স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষা অনুরাগীরা। কলেজ কর্তৃপক্ষ ভবন উদ্ধারে এত দিন কোনো পদক্ষেপ না নিলেও বর্তমানে সরব হয়েছে। চলতি বছরে তারা কয়েক দফা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় থানাতে লিখিত অভিযোগও দিয়েছে।

কলেজ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঝিকরগাছা মিতালি হল রোডের এই দ্বিতল ভবনটি ১৯৬৮ সালে নির্মাণ হয়। সেখানে ভবনসহ ক্যাম্পাস রয়েছে। সেটি একসময় বিজ্ঞান ভবন ও ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহৃত হতো। পরবর্তীকালে শহরের অন্য প্রান্তে সরকারি এম এল মডেল হাইস্কুলের পাশে নতুন ভবন নির্মাণ হলে এই ভবনটি অকেজো হয়ে পড়ে। তবে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক নেতারা এটি তাঁদের দখলে রাখেন। পরে সেটি উদ্ধার হলেও পাঁচ বছর আগে স্থানীয় সংসদ সদস্যের ভায়রা ব্যবসায়ী নুরুল আমিন দুদু পাঁচ বছরের জন্য মাসিক পাঁচ হাজার টাকার ভাড়ার চুক্তি করেন কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে।

ভবনটি ব্যবহার–সংক্রান্ত একটি চুক্তিনামায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাসিক পাঁচ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হবে। এ সময়ের মধ্যে অন্য কাউকে ঘর হস্তান্তর করতে পারবে না বলে চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এ নিয়ম না মেনেই সাবেক সংসদ সদস্য ভবনটি দখল নিয়ে আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন।

চুক্তিনামাতে উল্লেখ করা হয়, ভাড়াটিয়া পরপর ছয় মাসের ভাড়া দিতে ব্যর্থ হলে ভাড়া প্রদান করেই তাঁকে ভবনটি ছেড়ে দিতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী মোট ভাড়া তিন লাঁখ টাকা হলেও এখন পর্যন্ত এমপি নাসির কোনো ভাড়া পরিশোধ করেননি।

ঝিকরগাছা সরকারি শহীদ মশিয়ূর রহমান কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আলতাফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভবনটি লিখিত চুক্তির মাধ্যমে স্থানীয় ব্যবসায়ী নুরুল আমিন দুদুর কাছে ভাড়া দেওয়া হয়। তবে তিনি চুক্তি ভঙ্গ করে তাঁর ভায়রার কাছে ব্যবহার করতে দেন। তিনি ভবনটি রাজনীতিক কার্যালয় করেছে। ভাড়া নেওয়া থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত কোনো ভাড়ার টাকা পরিশোধ করেনি। দখলকারীরা জোরপূর্বক দখল করে রেখেছে। ভবনটিতে আমরা আইসিটি ট্রেনিং সেন্টার করতে চাই। কিন্তু করতে পারছি না ভবন বুঝে না পাওয়ার কারণে। ভবনটিতে অসামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা হয়। উদ্ধারে স্থানীয় ইউএনও ও থানাতে কয়েক দফা লিখিত অভিযোগ দিলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ পায়নি।’

ভবনটির ভাড়া নেওয়া নুরুল আমিন দুদু বলেন, ‘ভবনটি আমি ভাড়া নিয়েছিলাম। কিন্তু আমার কাছ থেকে আমরা ভায়রা সাবেক এমপি নাসির উদ্দিন তার কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করত। কিন্তু তিনি এবার নমিনেশন না পাওয়াতে বেশির ভাগ সময় ঢাকাতে থাকে। তার অফিস এখন তার অনুসারী সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম রেজা দখলে রেখেছে। তারা ব্যবহার করেছে, ফলে তারাই ভাড়া দেবে; কিন্তু দেয়নি। সর্বশেষ চলতি মাসে কলেজ পক্ষকে জানিয়েছি ওই ভবন ব্যবহার করব না। কিন্তু সেলিম রেজা জোর করে দখলে রেখেছে। উদ্ধারের জন্য আমি স্থানীয় থানা ও ইউএনওকেও লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’

এ বিষয়ে জানতে সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. মো. নাসির উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভবনটি কলেজের পরিত্যক্ত সম্পদ ছিল। মাদকের আখড়া ছিল। আমরা পরিষ্কার ও ২৫ লাখ টাকা খরচ করে ব্যবহার উপযোগী করেছি।’

তিনি আরও দাবি করেন, ‘আমরা ভাড়া নিয়েছি। ভাড়া না দেওয়ার কোনো কারণ নেই। যেহেতু ২৫ লাখ টাকা খরচ করেছি। ভাড়া থেকে সেই টাকা কাটবে, এটাই চুক্তিতেই লেখা। তারা যদি না লেখে আমাদের তো কিছু করার নেই।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘কলেজের অধ্যক্ষ এটা নিয়ে রাজনীতি করছেন একটি পক্ষের হয়ে। কলেজের অনেক সম্পত্তি বেদখল রয়েছে। সেগুলো আগে উদ্ধার করতে বলেন।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নারায়ণ চন্দ্র পাল বলেন, ‘ভবনটি উদ্ধারে কলেজ কর্তৃপক্ষ ও মূল ভাড়াটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। উপজেলা এসি ল্যান্ডকে তদন্ত করার নির্দেশনা দিয়েছি। তদন্ত শেষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরিশালের ঐতিহ্যবাহী বিবির পুকুরে ভেসে উঠছে মরা মাছ, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
বিবির পুকুরে ভাসছে মরা মাছ। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিবির পুকুরে ভাসছে মরা মাছ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশাল নগরীর ঐতিহ্যবাহী বিবির পুকুরে ভেসে উঠেছে বিভিন্ন জাতের মরা মাছ। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পুকুরটিতে এই মরা মাছ ভাসতে দেখা যায়। স্থানীয়রা বলছেন, প্রায়ই পুকুরটিতে মাছ মরে ভেসে ওঠে। এতে চারপাশে পচা-গলা মাছের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। পুকুরপাড় দিয়ে নাক চেপে চলাচল করতে হয়। পরিবেশবাদীরা মনে করছেন, বাণিজ্যিকভাবে পুকুরটিতে মাছ চাষ করায় বিভিন্ন সময় মাছ মরার ঘটনা ঘটছে। এতে পুকুরের পানিতে দূষণ ঘটছে। দুর্গন্ধে চারপাশের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।

বিবির পুকুরের সঙ্গে অতীতে কীর্তনখোলা নদীর সংযোগ ছিল। বর্তমানে নদী থেকে পানিপ্রবাহ বন্ধ থাকাসহ ময়লা ফেলার কারণে পানি নষ্ট হয়ে গেছে। নীল রং ধারণ করা পানিতে একধরনের স্তর পড়ে গেছে।

জানা গেছে, বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) তত্ত্বাবধানে থাকা বিবির পুকুরটি ইজারা নিয়ে মাছচাষিরা বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করেন। বিভিন্ন সময় সেই মাছ মরে পচে ভেসে উঠে। এতে দুর্গন্ধে পুকুরপাড়ে আসা বিনোদনপ্রেমী ও পথচারীদের টেকা দায় হয়ে পড়ে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা বাহাউদ্দিন গোলাপ বলেন, পুকুরপাড়ে এসে মরা মাছের গন্ধে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। দ্রুত মরা মাছ অপসারণ করে পুকুরটির পানিদূষণ রোধে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বরিশালের সমন্বয়ক রফিকুল আলম বলেন, নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্পটে বিবির পুকুরটির অবস্থান। সেখানে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করায় নানা সময় মাছ মরে ভেসে উঠছে। এতে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। হয়তো পুকুরের পানির মান খারাপ হয়ে গেছে। সিটি করপোরেশনকে উচিত হবে, এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।

পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশালের পরিদর্শক রকিব উদ্দিন বলেন, বিবির পুকুরের পানিতে অক্সিজেন কমে গেছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পানির মান দেখতে হবে। তিনি বলেন, তাঁরা বিভিন্ন পুকুর, জলাশয় এবং নদীর পানির মানমাত্রা পরীক্ষা করেন। বিবির পুকুরের পরিস্থিতি পরিবেশ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী বলেন, মরা মাছ দ্রুত অপসারণের জন্য ইজারাদারকে বলা হচ্ছে। যদিও তাঁরা পুকুরের পানি দূষণ ঠেকাতে কিছু অংশ জাল দিয়ে আটকে দিয়েছেন। কিন্তু তাতে কাজ না হলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, বিবির পুকুর বরিশাল নগরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী জলাশয়। উনিশ শতকে জনসাধারণের জলকষ্ট দূর করতে জিন্নাত বিবি নামে এক মুসলিম নারীর উদ্যোগে পুকুরটি খনন করা হয়েছিল। প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো এই পুকুরটি সদর রোডের পূর্ব পাশে অবস্থিত এবং এটি বরিশাল নগরের সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি এখন আকর্ষণীয় বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঋণমুক্তির স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন সিয়াম, নিভে গেলেন হাতবোমায়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
মগবাজার ককটেল বিস্ফোরণে নিহত সিয়াম মজুমদার (২১)। ছবি: সংগৃহীত
মগবাজার ককটেল বিস্ফোরণে নিহত সিয়াম মজুমদার (২১)। ছবি: সংগৃহীত

পরিবারের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য ছোটবেলা থেকেই চেষ্টা করেছেন সিয়াম মজুমদার (২১)। তাই চার বছর আগে ঋণগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে খুলনা থেকে ঢাকায় আসেন তিনি। নিউ ইস্কাটনের একটি মোটরকার ডেকোরেশন দোকানে কাজ করে পরিবারকে সহায়তাও করতেন তিনি। ঋণ পরিশোধের পর দেশের বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনাও ছিল তাঁর।

কিন্তু গতকাল বুধবার সন্ধ্যার পর মগবাজার ফ্লাইওভার থেকে ছোড়া ককটেলের বিস্ফোরণে সিয়ামের সেই স্বপ্ন থেমে যায়। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ককটেলটি ওপর থেকে এসে তাঁর মাথায় লাগে।

সিয়ামের পরিবার জানায়, ঢাকায় এসে রিকশা চালানো শুরু করেন তাঁর বাবা আলী আকবর মজুমদার। মা সিজু বেগম বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কাজ নেন। ছোট ভাই সেজান মজুমদারও ইস্কাটন এলাকায় একটি গাড়ি ডেকোরেশনের দোকানে কাজ করেন। পরিবারের সবাই মিলে চেষ্টা করছিলেন ঋণমুক্ত হওয়ার।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নিউ ইস্কাটনের দুই হাজার গলির ভাড়া বাসায় গিয়ে দেখা যায়, শোকে ভেঙে পড়েছেন সিয়ামের মা সিজু বেগম। বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, ঢাকায় এসে তাঁদের সব শেষ হয়ে গেছে। ছেলের হত্যার সুষ্ঠু বিচার চান তিনি।

ছোট ভাই সেজান মজুমদার বলেন, পরিবারের আর্থিক সংকট কাটিয়ে ভাই বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ এই মৃত্যু পুরো পরিবারকে নিঃস্ব করে দিয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে আইনি প্রক্রিয়া শেষে ছেলের মরদেহ নিতে গিয়ে বাবা আলী আকবর মজুমদার বলেন, ভাগ্য বদলাতে ঢাকায় এসে ছেলেকে হারাতে হবে—এমনটা জানলে তিনি কখনোই ঢাকায় আসতেন না।

ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগ জানায়, গতকাল সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টা ১০ মিনিটে মগবাজার ফ্লাইওভার থেকে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীদের ছোড়া বিস্ফোরকদ্রব্যের আঘাতে সিয়াম মজুমদার নিহত হন। ঘটনার সময় তিনি মগবাজার-নিউ ইস্কাটন সড়কে কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

ঘটনাস্থলের চা-দোকানি মো. ফারুক আজ বিকেলে বলেন, চা বানানোর সময় বিকট শব্দ হয়। পরে দেখা যায়, সিয়াম মাটিতে পড়ে আছেন, মাথা থেকে রক্ত ঝরছে।

এ ঘটনায় সিয়ামের বাবা হাতিরঝিল থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন। হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মর্তুজা বলেন, এখনো কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। জড়িতদের চিহ্নিত করতে তদন্ত চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাস্টার্সের সনদ জাল: কলেজের সভাপতির পদ হারালেন সবুজ খাঁন

ভোলা প্রতিনিধি
মো. সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন। ছবি: সংগৃহীত
মো. সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন। ছবি: সংগৃহীত

‎মাস্টার্সের সনদ জাল প্রমাণিত হওয়ায় ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতির পদ হারালেন মো. সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সবুজ খাঁনের সভাপতির পদ বাতিল করে নতুন সভাপতি মনোনয়নের নির্দেশ দিয়েছে।‎

‎মো. সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন দক্ষিণ আইচা থানাধীন চরমানিকা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. আলী মিয়ার ছেলে।‎

স্থানীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, সবুজ খাঁন চলতি বছরের ২০ এপ্রিল ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে প্রাপ্ত মাস্টার্স ডিগ্রির সনদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে দক্ষিণ আইচা কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতির দায়িত্ব েনন। তবে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলে গত ১ নভেম্বর জনৈক ব্যক্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ সনদ যাচাই কার্যক্রম শুরু করে।‎

‎সূত্র আরও জানায়, যাচাই শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. এ কে এম শামসুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সবুজ খাঁনের দাখিল করা সনদে কোনো ক্রমিক নম্বর নেই, কোর্স কোডে অসংগতি রয়েছে এবং স্বাক্ষর ও তারিখেও গরমিল পাওয়া গেছে। এসব কারণে সনদ দুটিকে জাল হিসেবে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।‎

‎বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে তা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরে আসে। পরে গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে কলেজ পরিদর্শক মো. আব্দুল হাই সিদ্দিক সরকার স্বাক্ষরিত এক লিখিত নির্দেশনায় দক্ষিণ আইচা কলেজের অধ্যক্ষকে অবহিত করা হয়। সেই নির্দেশনায় বলা হয়, মো. সিরাজুল ইসলামের মাস্টার্স সনদ জাল প্রমাণিত হওয়ায় তাঁর সভাপতির দায়িত্ব আর বৈধ নয়। ফলে শূন্য ঘোষিত পদে অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য মাস্টার্স ডিগ্রিধারী যোগ্য তিনজন প্রার্থীর নাম শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।‎

‎এই আদেশ প্রকাশের পর কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা ও প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।‎

‎কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতির পদ থেকে সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁনের অব্যাহতিপত্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেইলে পাওয়ার কথা স্বীকার করে দক্ষিণ আইচা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, কলেজের সভাপতির সঙ্গে আলাপ করে এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমন একটি কথা শুনেছি। এখনো অফিশিয়ালি কোনো চিঠি পাইনি। তবে আমি এর প্রতিবাদ করব। প্রয়োজনে আইনি লড়াই করব।’ তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার বলেও জানান সবুজ খাঁন।

সবুজ খাঁন নিজেকে থানা বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচয় দিলেও দলের কোনো সাংগঠনিক পদে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চেক ডিজঅনারের মামলা: ফরিদপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কয়েদির মৃত্যু

ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ফরিদপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক কয়েদি মারা গেছে। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ২৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তিনি কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রিজন সেলে স্থানান্তর করা হয়।

ওই কয়েদির নাম বিমল কুমার দাস (৬২)। কয়েদি নম্বর ২৫২৫। তিনি মাদারীপুর সদর উপজেলার কদমতলী আমিরাবাদ গ্রামের গৌরাঙ্গ চন্দ্র দাসের ছেলে। তিনি একটি চেক ডিজঅনার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে সাজা ভোগ করছিলেন।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে সুরতহাল করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুরের জেল সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, একটি চেক ডিজঅনার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে তিনি কারাগারে সাজা ভোগ করছিলেন। তিনি মাদারীপুর কারাগারে ছিলেন। ওই হাজতি ডায়াবেটিসসহ বয়সের বিভিন্ন রোগে  ভুগছিলেন। মাদারীপুর কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়ায় ২৩ ডিসেম্বর তাঁকে মাদারীপুর কারাগার থেকে ফরিদপুর কারাগারে আনা হয়। ফরিদপুরে আসামাত্রই তাঁকে হাসপাতালের প্রিজন সেলে স্থানান্তর করা হয়।

জেল সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, আগামীকাল শুক্রবার (আজ) সকালে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত