জাহিদ হাসান, যশোর

যশোর শহরের কাজিপাড়ার কাঁঠালতলা মোড়। এখানে দাঁড়িয়ে উত্তর দিকে তাকালেই দেখা যাবে ভাঙা আর আগুনে পোড়া তিনতলা বাড়ি। তালাবদ্ধ এ বাড়িটির মালিক যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার। বাড়ির গা ঘেঁষেই সাদা রঙের একতলা ভবন। ভেতরে ভাঙচুর ও আগুনের ক্ষতচিহ্ন। এ ভবনটির মালিকও শাহীন। এটি তিনি ব্যক্তিগত, দলীয়, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করতেন।
গত বুধবার বিকেলে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি ভাঙা ও পোড়া বাড়িটি দেখছিলেন। তাঁর কাছে যেতেই বলে উঠলেন, ‘কয়েক দিন আগেও এখানে কত ক্ষমতা, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ হতো। চাকলাদারের কথায় কতজনের মায়ের কোল খালি হয়েছে! আর এখন বাড়িতে কেউ নেই। হাহাকার করছে। সবই সৃষ্টিকর্তার খেল!’
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৫ আগস্ট শাহীনের ওই বাড়ি ও পাশের অফিসে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে দুর্বৃত্তরা। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে আগেই তিনি পরিবার নিয়ে সটকে পড়েন। সরকার পতনের পর থেকে তাঁকে আর যশোরে দেখা যায়নি। শাহীন চাকলাদার গা ঢাকা দিলেও যশোরবাসীর কাছে তিনি আতঙ্কের নাম। তাঁর অপকর্মের বিষয়ে এখনো কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না।
দুর্নীতি দমন কমিশন তাঁর সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে। ইতিমধ্যে শাহীন চাকলাদার এবং তাঁর স্ত্রী ও সন্তানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগে হঠাৎ আগন্তুক শাহীন
দলীয় নেতা-কর্মী সূত্রে জানা যায়, নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকেও শাহীন চাকলাদার নিয়মিত পারিবারিক ওষুধের দোকানে বসতেন। হঠাৎ ২০০১ সালে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হন তিনি। ২০০৪ সালে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন শাহীন চাকলাদার। এর পাঁচ বছরের মাথায় তিনি আওয়ামী লীগ থেকে যশোর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে জয়ী হন। দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হন ২০১৪ সালে। এরপর ২০২০ সালে চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে উপনির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।
সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও পরাজিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে। কেশবপুরে দলীয় নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়ন, নিয়োগ-বাণিজ্যের কারণে তিনি হারেন বলে মন্তব্য করেন নেতারা।
এই পরাজয়ের আগে যশোরের সবকিছুতে একক নিয়ন্ত্রক ছিলেন শাহীন। জেলায় ২০০৯ থেকেই শুরু শাহীন চাকলাদারের একক আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতি। তাঁর এই পথে যাঁরা বাধা হয়েছিলেন তাঁদের সরাতে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন তিনি। একপর্যায়ে শাহীন চাকলাদার নিজেই সন্ত্রাসীদের গডফাদারে পরিণত হন। তিনি নিজেও সব সময় সন্ত্রাসী-আতঙ্কে থাকতেন। তাঁর বাড়ি ও অফিসে বসানো সিসি ক্যামেরা এবং চলাফেরার ধরন দেখেই এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়। নিরাপত্তার জন্য সরকার অনুমোদিত গানম্যান ছিল তাঁর। এর বাইরেও তিনি যখন চলাফেরা করতেন, তাঁর আগে-পিছে গোটাদশেক মোটরসাইকেলের বহর দেখা যেত।
‘অবৈধ’ সম্পদের পাহাড়
২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে শাহীন চাকলাদার অবৈধভাবে অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক হন। সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, শাহীন শহরের কাজিপাড়ায় পৈতৃক বাড়ির বাইরেও বহু স্থানে বানিয়েছেন বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শহরের চিত্রা মোড়ে ১৭ তলাবিশিষ্ট পাঁচতারকা হোটেল, কাঁঠালতলায় অত্যাধুনিক তিনতলা বাড়ি ও বড় বাজারে দোতলা বাড়ি। কিনেছেন যশোরের ঐতিহ্যবাহী পারভীনা হোটেল। আরবপুর মোড়ে রয়েছে পাঁচতলা বাড়ি, বিমান অফিসের পাশে রয়েছে বাড়িসহ জমি, মাইকপট্টিতে তাঁরই সহযোগী সাবেক কাউন্সিলর আলমগীর কবির সুমন ওরফে হাজী সুমনের সঙ্গে যৌথ নামে জমি, পেট্রলপাম্প, ধর্মতলায় জমি, ঢাকার কলাবাগান ও মহাখালীর ডিওএইচএসে ফ্ল্যাট।
দলীয় নেতা-কর্মীদের সূত্রে জানা যায়, আত্মীয়স্বজনের নামেও দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়েছেন শাহীন। সম্পত্তি গড়া ও আধিপত্য বিস্তারে অন্যকে দমন করে রাজনীতিসহ সব ক্ষেত্রে একক আধিপত্য বিস্তারে তিনি সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করতেন। জেলার রাজনীতি, টেন্ডার ব্যবসা, চাঁদাবাজি, চোরাচালান, দখলবাজিসহ সব ক্ষেত্রে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় চিহ্নিত অপরাধীদের নিয়ে তিনি গড়েন পৃথক বাহিনী। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহারুল ইসলাম, শাহীন চাকলাদারের চাচাতো ভাই সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু ওরফে ফন্টু চাকলাদার, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল এসব বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন। গত ৫ আগস্টের পর থেকে তাঁরা সবাই গা ঢাকা দেন।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, আনোয়ারা বেগম নামের এক স্কুলশিক্ষিকা শহরের চিত্রা মোড়ে তাঁর জমি দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করতে সহযোগিতার জন্য গিয়েছিলেন শাহীন চাকলাদারের কাছে। একপর্যায়ে কোটি টাকা মূল্যের ওই জমি থেকে আগের দখলদারের পাশাপাশি ওই শিক্ষিকাকেও উচ্ছেদ করে নিজেই দখল করে নেন শাহীন চাকলাদার। সেই জমিতে তিনি গড়ে তোলেন ১৭ তলাবিশিষ্ট ফাইভ স্টার হোটেল ‘জাবির ইন্টারন্যাশনাল’; যা জুয়া ও বড় বড় অনৈতিক কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ৫ আগস্ট ওই হোটেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে এক বিদেশিসহ ২৪ ব্যক্তির মৃত্যু হয়। অভিযোগ রয়েছে, হোটেলের পাশে গাজী ইলেকট্রিকের দোতলা মার্কেটের একটি বড় অংশও তিনি দখল করে নেন।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ২০০ বিঘার এড়োলের বিল, মাহিদিয়ায় ১০০ বিঘার বিলের জমি, জগহাটির একটি বিল, শহরের মাইকপট্টির সেলিম নামের এক ব্যক্তির মার্কেটের একাংশ, কাঁঠালতলা এলাকার ঈদগাহের একটি অংশ, শহরের ঘোষপাড়া এলাকার সাধন নামের এক ব্যক্তির ১৫ বিঘা জমি, বকচরে সরকারি জায়গা দখল করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ, যশোর-নড়াইল রোডের বীজ গোডাউনের সামনে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে শাহীন চাকলাদার ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে।
এ ছাড়া সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের নিলামে চাকলাদারের লোকজন ছাড়া কাউকে ভিড়তে দেওয়া হতো না। যশোরের ভূমি অফিস, রেজিস্ট্রি অফিস, পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ অফিস, সেটেলমেন্ট অফিস, বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকেরা শাহীনের লোকজনকে নিয়মিত চাঁদা দিতে বাধ্য হতেন। এমনকি কোচিং সেন্টারও তাঁদের চাঁদাবাজির বাইরে ছিল না। শহরের বিভিন্ন প্রবেশমুখ মুড়লি, চাঁচড়া চেকপোস্ট, পালবাড়ী, খাজুরা বাসস্ট্যান্ড ও মণিহারসহ মূল শহরের মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন যানবাহন থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলতেন চাকলাদারের ক্যাডাররা। এমনকি ইজিবাইক, রিকশা ও ভ্যানচালকেরাও চাঁদা দিতে বাধ্য হতেন।
যশোরের সব সরকারি দপ্তরের টেন্ডার নিয়ন্ত্রিত হতো শাহীন চাকলাদারের বাড়ি কাঁঠালতলা থেকে। চাকলাদারের প্রভাব খাটিয়ে তাঁর ভাই সাবেক পৌর মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু, কাউন্সিলর হাজী সুমন, মোস্তফা, সন্তোষ দত্ত, জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলন, চূড়ামনকাটি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মুন্না, মশিয়ার রহমান সাগর, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহারুল ইসলাম ও বিহারি ক্যাম্প এলাকার রবি নিরীহ মানুষের সম্পত্তি দখল করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
চাকলাদারের পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁর বাহিনী খুনোখুনিতেও ছিল বেপরোয়া। তাঁদের বিরুদ্ধে বহু হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।তাঁর বাহিনীর অনেকেই হত্যা মামলার চার্জশিটের (অভিযোগপত্র) আসামি। শাহীন চাকলাদার ক্ষমতায় থাকাকালে বিভিন্ন সমাবেশে বিরোধী রাজনৈতিক মত-পথের লোকজনকে প্রকাশ্যে দেখে নেওয়ার হুমকি দিতেন। আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাৎ-কর্মীরা বরাবরই তাঁর কাছে ছিলেন উপেক্ষিত।
যশোর সরকারি এমএম কলেজের দুটি ছাত্রাবাস ছিল শাহীন চাকলাদারের ক্যাডার বাহিনীর দখলে। এখান থেকে শহরের সব মেস নিয়ন্ত্রণ করা হতো। শিক্ষার্থীদের শাহীন চাকলাদারের মিছিলে যেতে বাধ্য করা হতো। ছাত্রলীগের নামধারীরা নিয়ন্ত্রণ করত সব ক্যাম্পাস।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনও চলতে বাধ্য হতো তাঁদের ইশারায়। কলেজের ৪টি পুকুর চাকলাদারের অনুসারী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী ও সাবেক সাধারণ আনোয়ার হোসেন বিপুল দখল করে বিনা ইজারায় মাছ চাষের ব্যবসা করেছেন।
কেশবপুরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-বাণিজ্য
যশোর-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের সঙ্গে শাহীন চাকলাদারের ছিল দা-কুমড়া সম্পর্ক। সদরে দলীয় মনোনয়ন নিয়েই মূলত দুজনের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে ছিল। যশোর-৬ আসনের (কেশবপুর) সাবেক এমপি ইসমাত আরা সাদেকের মৃত্যুর পর সেখানে উপনির্বাচনে দলীয় হাইকমান্ড শাহীন চাকলাদারকে প্রার্থী করে। ২০২০ সালের উপনির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।
অভিযোগ রয়েছে, তিন বছরের মেয়াদে কেশবপুরের তিন শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করেছেন তিনি। উপজেলার হিজলডাঙ্গা গ্রামে শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মাসুদ মেমোরিয়াল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মশিয়ুর রহমান ১৯ জনের নিয়োগ দেওয়ার জন্য ৬৪ লাখ টাকা দিতে অঙ্গীকারনামা দেন।
সেই অঙ্গীকারনামায় তিনি লিখেছেন, ‘কলেজের ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে চাকরিতে নজরুল ইসলামকে এমপিওভুক্ত করাতে ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য শাহীনের ব্যক্তিগত সহকারী আলমগীর সিদ্দিকীর কাছে দিয়েছেন তিনি।’ এটি গত তিন বছরের নিয়োগ-বাণিজ্যের একটি প্রমাণ। এ ব্যাপারে শাহীন চাকলাদারের ব্যক্তিগত সহকারী আলমগীর সিদ্দিকী বলেন, তিনি কোনো টাকা মশিয়ুর রহমানের কাছ থেকে নেননি। মশিয়ুর রহমান সরাসরি শাহীন চাকলাদারের কাছে টাকা দিয়েছেন।
শাহীন কেশবপুরে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে কখনো বসেননি। তিনি পৌরসভার মেয়রের কক্ষে বসতেন। এ বিষয়ে তখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ ছিলেন। কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফা বলেন, শেষ তিন বছরে দলের সঙ্গে শাহীন চাকলাদারের সম্পর্ক ছিল অনেকটা প্রভু-ভৃত্যের মতো। তাঁর কথাই ছিল শেষকথা।
এ ছাড়া সরকারি কাবিখা, কাবিটাসহ সব প্রকল্প সম্পন্ন করতেন মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে। ক্ষমতার দাপটে তিনি একের পর এক দখল করতে থাকেন সেখানকার সব মাছের ঘের। তাঁর অপকর্মে স্থানীয় রাজনীতিবিদসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। তাঁরই ফলে ২০২৪ সালের নির্বাচনে দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়েও একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী বয়সে তরুণ আজিজুল ইসলাম ওরফে খন্দকার আজিজের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন শাহীন।
শাহীন চাকলাদার দেশে না বিদেশে, এ নিয়ে দুই ধরনের তথ্য মিলছে। কেউ বলছেন, তাঁর ফাইভ স্টার হোটেলের ম্যানেজার কলকাতার বাসিন্দা হওয়ায় তাঁর মাধ্যমে তিনি পুটখালী সীমান্ত হয়ে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন। কেউবা বলছেন, জনগণ ও প্রশাসনের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে নিতে ভারতে যাওয়ার কথা প্রচার করে যশোরেই আত্মগোপনে আছেন তিনি। এ শহরে বসেই এখনো সব কার্যক্রম পরিচালনা করছেন শাহীন।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলার জন্য বহুবার চেষ্টা করেও শাহীন চাকলাদারের মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। হোয়াটস অ্যাপেও তাঁর সংযোগ পাওয়া যায়নি।
যশোর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু আজকের পত্রিকাকে বলেন, শাহীন দানবীয় রাজনীতি করেছেন, যশোরবাসীর আতঙ্কের নাম ছিল শাহীন চাকলাদার। যশোর সন্ত্রাসীর জনপদে রূপ নেয় তাঁর হাত ধরে। তাঁর বলপ্রয়োগের রাজনীতিতে ২০-৩০ জন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন। শহরের দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ হয়েছে তাঁর হাত ধরে। দল ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি হয়েছেন শত শত কোটি টাকার মালিক। তাঁর এই সম্পত্তি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়নি। তিনি এখন এ শহরে না থাকায় মানুষ স্বস্তিতে রয়েছেন।
যশোরের পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, যশোরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো। বিগত সময়ে নির্যাতিনের শিকার হওয়া ব্যক্তিরা অভিযোগ দিলে পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।

যশোর শহরের কাজিপাড়ার কাঁঠালতলা মোড়। এখানে দাঁড়িয়ে উত্তর দিকে তাকালেই দেখা যাবে ভাঙা আর আগুনে পোড়া তিনতলা বাড়ি। তালাবদ্ধ এ বাড়িটির মালিক যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার। বাড়ির গা ঘেঁষেই সাদা রঙের একতলা ভবন। ভেতরে ভাঙচুর ও আগুনের ক্ষতচিহ্ন। এ ভবনটির মালিকও শাহীন। এটি তিনি ব্যক্তিগত, দলীয়, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করতেন।
গত বুধবার বিকেলে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি ভাঙা ও পোড়া বাড়িটি দেখছিলেন। তাঁর কাছে যেতেই বলে উঠলেন, ‘কয়েক দিন আগেও এখানে কত ক্ষমতা, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ হতো। চাকলাদারের কথায় কতজনের মায়ের কোল খালি হয়েছে! আর এখন বাড়িতে কেউ নেই। হাহাকার করছে। সবই সৃষ্টিকর্তার খেল!’
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৫ আগস্ট শাহীনের ওই বাড়ি ও পাশের অফিসে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে দুর্বৃত্তরা। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে আগেই তিনি পরিবার নিয়ে সটকে পড়েন। সরকার পতনের পর থেকে তাঁকে আর যশোরে দেখা যায়নি। শাহীন চাকলাদার গা ঢাকা দিলেও যশোরবাসীর কাছে তিনি আতঙ্কের নাম। তাঁর অপকর্মের বিষয়ে এখনো কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না।
দুর্নীতি দমন কমিশন তাঁর সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে। ইতিমধ্যে শাহীন চাকলাদার এবং তাঁর স্ত্রী ও সন্তানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগে হঠাৎ আগন্তুক শাহীন
দলীয় নেতা-কর্মী সূত্রে জানা যায়, নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকেও শাহীন চাকলাদার নিয়মিত পারিবারিক ওষুধের দোকানে বসতেন। হঠাৎ ২০০১ সালে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হন তিনি। ২০০৪ সালে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন শাহীন চাকলাদার। এর পাঁচ বছরের মাথায় তিনি আওয়ামী লীগ থেকে যশোর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে জয়ী হন। দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হন ২০১৪ সালে। এরপর ২০২০ সালে চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে উপনির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।
সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও পরাজিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে। কেশবপুরে দলীয় নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়ন, নিয়োগ-বাণিজ্যের কারণে তিনি হারেন বলে মন্তব্য করেন নেতারা।
এই পরাজয়ের আগে যশোরের সবকিছুতে একক নিয়ন্ত্রক ছিলেন শাহীন। জেলায় ২০০৯ থেকেই শুরু শাহীন চাকলাদারের একক আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতি। তাঁর এই পথে যাঁরা বাধা হয়েছিলেন তাঁদের সরাতে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন তিনি। একপর্যায়ে শাহীন চাকলাদার নিজেই সন্ত্রাসীদের গডফাদারে পরিণত হন। তিনি নিজেও সব সময় সন্ত্রাসী-আতঙ্কে থাকতেন। তাঁর বাড়ি ও অফিসে বসানো সিসি ক্যামেরা এবং চলাফেরার ধরন দেখেই এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়। নিরাপত্তার জন্য সরকার অনুমোদিত গানম্যান ছিল তাঁর। এর বাইরেও তিনি যখন চলাফেরা করতেন, তাঁর আগে-পিছে গোটাদশেক মোটরসাইকেলের বহর দেখা যেত।
‘অবৈধ’ সম্পদের পাহাড়
২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে শাহীন চাকলাদার অবৈধভাবে অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক হন। সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, শাহীন শহরের কাজিপাড়ায় পৈতৃক বাড়ির বাইরেও বহু স্থানে বানিয়েছেন বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শহরের চিত্রা মোড়ে ১৭ তলাবিশিষ্ট পাঁচতারকা হোটেল, কাঁঠালতলায় অত্যাধুনিক তিনতলা বাড়ি ও বড় বাজারে দোতলা বাড়ি। কিনেছেন যশোরের ঐতিহ্যবাহী পারভীনা হোটেল। আরবপুর মোড়ে রয়েছে পাঁচতলা বাড়ি, বিমান অফিসের পাশে রয়েছে বাড়িসহ জমি, মাইকপট্টিতে তাঁরই সহযোগী সাবেক কাউন্সিলর আলমগীর কবির সুমন ওরফে হাজী সুমনের সঙ্গে যৌথ নামে জমি, পেট্রলপাম্প, ধর্মতলায় জমি, ঢাকার কলাবাগান ও মহাখালীর ডিওএইচএসে ফ্ল্যাট।
দলীয় নেতা-কর্মীদের সূত্রে জানা যায়, আত্মীয়স্বজনের নামেও দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়েছেন শাহীন। সম্পত্তি গড়া ও আধিপত্য বিস্তারে অন্যকে দমন করে রাজনীতিসহ সব ক্ষেত্রে একক আধিপত্য বিস্তারে তিনি সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করতেন। জেলার রাজনীতি, টেন্ডার ব্যবসা, চাঁদাবাজি, চোরাচালান, দখলবাজিসহ সব ক্ষেত্রে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় চিহ্নিত অপরাধীদের নিয়ে তিনি গড়েন পৃথক বাহিনী। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহারুল ইসলাম, শাহীন চাকলাদারের চাচাতো ভাই সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু ওরফে ফন্টু চাকলাদার, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল এসব বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন। গত ৫ আগস্টের পর থেকে তাঁরা সবাই গা ঢাকা দেন।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, আনোয়ারা বেগম নামের এক স্কুলশিক্ষিকা শহরের চিত্রা মোড়ে তাঁর জমি দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করতে সহযোগিতার জন্য গিয়েছিলেন শাহীন চাকলাদারের কাছে। একপর্যায়ে কোটি টাকা মূল্যের ওই জমি থেকে আগের দখলদারের পাশাপাশি ওই শিক্ষিকাকেও উচ্ছেদ করে নিজেই দখল করে নেন শাহীন চাকলাদার। সেই জমিতে তিনি গড়ে তোলেন ১৭ তলাবিশিষ্ট ফাইভ স্টার হোটেল ‘জাবির ইন্টারন্যাশনাল’; যা জুয়া ও বড় বড় অনৈতিক কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ৫ আগস্ট ওই হোটেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে এক বিদেশিসহ ২৪ ব্যক্তির মৃত্যু হয়। অভিযোগ রয়েছে, হোটেলের পাশে গাজী ইলেকট্রিকের দোতলা মার্কেটের একটি বড় অংশও তিনি দখল করে নেন।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ২০০ বিঘার এড়োলের বিল, মাহিদিয়ায় ১০০ বিঘার বিলের জমি, জগহাটির একটি বিল, শহরের মাইকপট্টির সেলিম নামের এক ব্যক্তির মার্কেটের একাংশ, কাঁঠালতলা এলাকার ঈদগাহের একটি অংশ, শহরের ঘোষপাড়া এলাকার সাধন নামের এক ব্যক্তির ১৫ বিঘা জমি, বকচরে সরকারি জায়গা দখল করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ, যশোর-নড়াইল রোডের বীজ গোডাউনের সামনে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে শাহীন চাকলাদার ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে।
এ ছাড়া সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের নিলামে চাকলাদারের লোকজন ছাড়া কাউকে ভিড়তে দেওয়া হতো না। যশোরের ভূমি অফিস, রেজিস্ট্রি অফিস, পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ অফিস, সেটেলমেন্ট অফিস, বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকেরা শাহীনের লোকজনকে নিয়মিত চাঁদা দিতে বাধ্য হতেন। এমনকি কোচিং সেন্টারও তাঁদের চাঁদাবাজির বাইরে ছিল না। শহরের বিভিন্ন প্রবেশমুখ মুড়লি, চাঁচড়া চেকপোস্ট, পালবাড়ী, খাজুরা বাসস্ট্যান্ড ও মণিহারসহ মূল শহরের মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন যানবাহন থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলতেন চাকলাদারের ক্যাডাররা। এমনকি ইজিবাইক, রিকশা ও ভ্যানচালকেরাও চাঁদা দিতে বাধ্য হতেন।
যশোরের সব সরকারি দপ্তরের টেন্ডার নিয়ন্ত্রিত হতো শাহীন চাকলাদারের বাড়ি কাঁঠালতলা থেকে। চাকলাদারের প্রভাব খাটিয়ে তাঁর ভাই সাবেক পৌর মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু, কাউন্সিলর হাজী সুমন, মোস্তফা, সন্তোষ দত্ত, জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলন, চূড়ামনকাটি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মুন্না, মশিয়ার রহমান সাগর, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহারুল ইসলাম ও বিহারি ক্যাম্প এলাকার রবি নিরীহ মানুষের সম্পত্তি দখল করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
চাকলাদারের পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁর বাহিনী খুনোখুনিতেও ছিল বেপরোয়া। তাঁদের বিরুদ্ধে বহু হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।তাঁর বাহিনীর অনেকেই হত্যা মামলার চার্জশিটের (অভিযোগপত্র) আসামি। শাহীন চাকলাদার ক্ষমতায় থাকাকালে বিভিন্ন সমাবেশে বিরোধী রাজনৈতিক মত-পথের লোকজনকে প্রকাশ্যে দেখে নেওয়ার হুমকি দিতেন। আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাৎ-কর্মীরা বরাবরই তাঁর কাছে ছিলেন উপেক্ষিত।
যশোর সরকারি এমএম কলেজের দুটি ছাত্রাবাস ছিল শাহীন চাকলাদারের ক্যাডার বাহিনীর দখলে। এখান থেকে শহরের সব মেস নিয়ন্ত্রণ করা হতো। শিক্ষার্থীদের শাহীন চাকলাদারের মিছিলে যেতে বাধ্য করা হতো। ছাত্রলীগের নামধারীরা নিয়ন্ত্রণ করত সব ক্যাম্পাস।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনও চলতে বাধ্য হতো তাঁদের ইশারায়। কলেজের ৪টি পুকুর চাকলাদারের অনুসারী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী ও সাবেক সাধারণ আনোয়ার হোসেন বিপুল দখল করে বিনা ইজারায় মাছ চাষের ব্যবসা করেছেন।
কেশবপুরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-বাণিজ্য
যশোর-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের সঙ্গে শাহীন চাকলাদারের ছিল দা-কুমড়া সম্পর্ক। সদরে দলীয় মনোনয়ন নিয়েই মূলত দুজনের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে ছিল। যশোর-৬ আসনের (কেশবপুর) সাবেক এমপি ইসমাত আরা সাদেকের মৃত্যুর পর সেখানে উপনির্বাচনে দলীয় হাইকমান্ড শাহীন চাকলাদারকে প্রার্থী করে। ২০২০ সালের উপনির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।
অভিযোগ রয়েছে, তিন বছরের মেয়াদে কেশবপুরের তিন শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করেছেন তিনি। উপজেলার হিজলডাঙ্গা গ্রামে শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মাসুদ মেমোরিয়াল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মশিয়ুর রহমান ১৯ জনের নিয়োগ দেওয়ার জন্য ৬৪ লাখ টাকা দিতে অঙ্গীকারনামা দেন।
সেই অঙ্গীকারনামায় তিনি লিখেছেন, ‘কলেজের ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে চাকরিতে নজরুল ইসলামকে এমপিওভুক্ত করাতে ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য শাহীনের ব্যক্তিগত সহকারী আলমগীর সিদ্দিকীর কাছে দিয়েছেন তিনি।’ এটি গত তিন বছরের নিয়োগ-বাণিজ্যের একটি প্রমাণ। এ ব্যাপারে শাহীন চাকলাদারের ব্যক্তিগত সহকারী আলমগীর সিদ্দিকী বলেন, তিনি কোনো টাকা মশিয়ুর রহমানের কাছ থেকে নেননি। মশিয়ুর রহমান সরাসরি শাহীন চাকলাদারের কাছে টাকা দিয়েছেন।
শাহীন কেশবপুরে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে কখনো বসেননি। তিনি পৌরসভার মেয়রের কক্ষে বসতেন। এ বিষয়ে তখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ ছিলেন। কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফা বলেন, শেষ তিন বছরে দলের সঙ্গে শাহীন চাকলাদারের সম্পর্ক ছিল অনেকটা প্রভু-ভৃত্যের মতো। তাঁর কথাই ছিল শেষকথা।
এ ছাড়া সরকারি কাবিখা, কাবিটাসহ সব প্রকল্প সম্পন্ন করতেন মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে। ক্ষমতার দাপটে তিনি একের পর এক দখল করতে থাকেন সেখানকার সব মাছের ঘের। তাঁর অপকর্মে স্থানীয় রাজনীতিবিদসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। তাঁরই ফলে ২০২৪ সালের নির্বাচনে দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়েও একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী বয়সে তরুণ আজিজুল ইসলাম ওরফে খন্দকার আজিজের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন শাহীন।
শাহীন চাকলাদার দেশে না বিদেশে, এ নিয়ে দুই ধরনের তথ্য মিলছে। কেউ বলছেন, তাঁর ফাইভ স্টার হোটেলের ম্যানেজার কলকাতার বাসিন্দা হওয়ায় তাঁর মাধ্যমে তিনি পুটখালী সীমান্ত হয়ে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন। কেউবা বলছেন, জনগণ ও প্রশাসনের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে নিতে ভারতে যাওয়ার কথা প্রচার করে যশোরেই আত্মগোপনে আছেন তিনি। এ শহরে বসেই এখনো সব কার্যক্রম পরিচালনা করছেন শাহীন।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলার জন্য বহুবার চেষ্টা করেও শাহীন চাকলাদারের মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। হোয়াটস অ্যাপেও তাঁর সংযোগ পাওয়া যায়নি।
যশোর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু আজকের পত্রিকাকে বলেন, শাহীন দানবীয় রাজনীতি করেছেন, যশোরবাসীর আতঙ্কের নাম ছিল শাহীন চাকলাদার। যশোর সন্ত্রাসীর জনপদে রূপ নেয় তাঁর হাত ধরে। তাঁর বলপ্রয়োগের রাজনীতিতে ২০-৩০ জন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন। শহরের দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ হয়েছে তাঁর হাত ধরে। দল ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি হয়েছেন শত শত কোটি টাকার মালিক। তাঁর এই সম্পত্তি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়নি। তিনি এখন এ শহরে না থাকায় মানুষ স্বস্তিতে রয়েছেন।
যশোরের পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, যশোরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো। বিগত সময়ে নির্যাতিনের শিকার হওয়া ব্যক্তিরা অভিযোগ দিলে পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।
জাহিদ হাসান, যশোর

যশোর শহরের কাজিপাড়ার কাঁঠালতলা মোড়। এখানে দাঁড়িয়ে উত্তর দিকে তাকালেই দেখা যাবে ভাঙা আর আগুনে পোড়া তিনতলা বাড়ি। তালাবদ্ধ এ বাড়িটির মালিক যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার। বাড়ির গা ঘেঁষেই সাদা রঙের একতলা ভবন। ভেতরে ভাঙচুর ও আগুনের ক্ষতচিহ্ন। এ ভবনটির মালিকও শাহীন। এটি তিনি ব্যক্তিগত, দলীয়, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করতেন।
গত বুধবার বিকেলে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি ভাঙা ও পোড়া বাড়িটি দেখছিলেন। তাঁর কাছে যেতেই বলে উঠলেন, ‘কয়েক দিন আগেও এখানে কত ক্ষমতা, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ হতো। চাকলাদারের কথায় কতজনের মায়ের কোল খালি হয়েছে! আর এখন বাড়িতে কেউ নেই। হাহাকার করছে। সবই সৃষ্টিকর্তার খেল!’
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৫ আগস্ট শাহীনের ওই বাড়ি ও পাশের অফিসে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে দুর্বৃত্তরা। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে আগেই তিনি পরিবার নিয়ে সটকে পড়েন। সরকার পতনের পর থেকে তাঁকে আর যশোরে দেখা যায়নি। শাহীন চাকলাদার গা ঢাকা দিলেও যশোরবাসীর কাছে তিনি আতঙ্কের নাম। তাঁর অপকর্মের বিষয়ে এখনো কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না।
দুর্নীতি দমন কমিশন তাঁর সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে। ইতিমধ্যে শাহীন চাকলাদার এবং তাঁর স্ত্রী ও সন্তানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগে হঠাৎ আগন্তুক শাহীন
দলীয় নেতা-কর্মী সূত্রে জানা যায়, নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকেও শাহীন চাকলাদার নিয়মিত পারিবারিক ওষুধের দোকানে বসতেন। হঠাৎ ২০০১ সালে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হন তিনি। ২০০৪ সালে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন শাহীন চাকলাদার। এর পাঁচ বছরের মাথায় তিনি আওয়ামী লীগ থেকে যশোর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে জয়ী হন। দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হন ২০১৪ সালে। এরপর ২০২০ সালে চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে উপনির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।
সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও পরাজিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে। কেশবপুরে দলীয় নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়ন, নিয়োগ-বাণিজ্যের কারণে তিনি হারেন বলে মন্তব্য করেন নেতারা।
এই পরাজয়ের আগে যশোরের সবকিছুতে একক নিয়ন্ত্রক ছিলেন শাহীন। জেলায় ২০০৯ থেকেই শুরু শাহীন চাকলাদারের একক আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতি। তাঁর এই পথে যাঁরা বাধা হয়েছিলেন তাঁদের সরাতে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন তিনি। একপর্যায়ে শাহীন চাকলাদার নিজেই সন্ত্রাসীদের গডফাদারে পরিণত হন। তিনি নিজেও সব সময় সন্ত্রাসী-আতঙ্কে থাকতেন। তাঁর বাড়ি ও অফিসে বসানো সিসি ক্যামেরা এবং চলাফেরার ধরন দেখেই এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়। নিরাপত্তার জন্য সরকার অনুমোদিত গানম্যান ছিল তাঁর। এর বাইরেও তিনি যখন চলাফেরা করতেন, তাঁর আগে-পিছে গোটাদশেক মোটরসাইকেলের বহর দেখা যেত।
‘অবৈধ’ সম্পদের পাহাড়
২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে শাহীন চাকলাদার অবৈধভাবে অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক হন। সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, শাহীন শহরের কাজিপাড়ায় পৈতৃক বাড়ির বাইরেও বহু স্থানে বানিয়েছেন বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শহরের চিত্রা মোড়ে ১৭ তলাবিশিষ্ট পাঁচতারকা হোটেল, কাঁঠালতলায় অত্যাধুনিক তিনতলা বাড়ি ও বড় বাজারে দোতলা বাড়ি। কিনেছেন যশোরের ঐতিহ্যবাহী পারভীনা হোটেল। আরবপুর মোড়ে রয়েছে পাঁচতলা বাড়ি, বিমান অফিসের পাশে রয়েছে বাড়িসহ জমি, মাইকপট্টিতে তাঁরই সহযোগী সাবেক কাউন্সিলর আলমগীর কবির সুমন ওরফে হাজী সুমনের সঙ্গে যৌথ নামে জমি, পেট্রলপাম্প, ধর্মতলায় জমি, ঢাকার কলাবাগান ও মহাখালীর ডিওএইচএসে ফ্ল্যাট।
দলীয় নেতা-কর্মীদের সূত্রে জানা যায়, আত্মীয়স্বজনের নামেও দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়েছেন শাহীন। সম্পত্তি গড়া ও আধিপত্য বিস্তারে অন্যকে দমন করে রাজনীতিসহ সব ক্ষেত্রে একক আধিপত্য বিস্তারে তিনি সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করতেন। জেলার রাজনীতি, টেন্ডার ব্যবসা, চাঁদাবাজি, চোরাচালান, দখলবাজিসহ সব ক্ষেত্রে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় চিহ্নিত অপরাধীদের নিয়ে তিনি গড়েন পৃথক বাহিনী। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহারুল ইসলাম, শাহীন চাকলাদারের চাচাতো ভাই সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু ওরফে ফন্টু চাকলাদার, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল এসব বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন। গত ৫ আগস্টের পর থেকে তাঁরা সবাই গা ঢাকা দেন।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, আনোয়ারা বেগম নামের এক স্কুলশিক্ষিকা শহরের চিত্রা মোড়ে তাঁর জমি দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করতে সহযোগিতার জন্য গিয়েছিলেন শাহীন চাকলাদারের কাছে। একপর্যায়ে কোটি টাকা মূল্যের ওই জমি থেকে আগের দখলদারের পাশাপাশি ওই শিক্ষিকাকেও উচ্ছেদ করে নিজেই দখল করে নেন শাহীন চাকলাদার। সেই জমিতে তিনি গড়ে তোলেন ১৭ তলাবিশিষ্ট ফাইভ স্টার হোটেল ‘জাবির ইন্টারন্যাশনাল’; যা জুয়া ও বড় বড় অনৈতিক কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ৫ আগস্ট ওই হোটেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে এক বিদেশিসহ ২৪ ব্যক্তির মৃত্যু হয়। অভিযোগ রয়েছে, হোটেলের পাশে গাজী ইলেকট্রিকের দোতলা মার্কেটের একটি বড় অংশও তিনি দখল করে নেন।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ২০০ বিঘার এড়োলের বিল, মাহিদিয়ায় ১০০ বিঘার বিলের জমি, জগহাটির একটি বিল, শহরের মাইকপট্টির সেলিম নামের এক ব্যক্তির মার্কেটের একাংশ, কাঁঠালতলা এলাকার ঈদগাহের একটি অংশ, শহরের ঘোষপাড়া এলাকার সাধন নামের এক ব্যক্তির ১৫ বিঘা জমি, বকচরে সরকারি জায়গা দখল করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ, যশোর-নড়াইল রোডের বীজ গোডাউনের সামনে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে শাহীন চাকলাদার ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে।
এ ছাড়া সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের নিলামে চাকলাদারের লোকজন ছাড়া কাউকে ভিড়তে দেওয়া হতো না। যশোরের ভূমি অফিস, রেজিস্ট্রি অফিস, পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ অফিস, সেটেলমেন্ট অফিস, বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকেরা শাহীনের লোকজনকে নিয়মিত চাঁদা দিতে বাধ্য হতেন। এমনকি কোচিং সেন্টারও তাঁদের চাঁদাবাজির বাইরে ছিল না। শহরের বিভিন্ন প্রবেশমুখ মুড়লি, চাঁচড়া চেকপোস্ট, পালবাড়ী, খাজুরা বাসস্ট্যান্ড ও মণিহারসহ মূল শহরের মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন যানবাহন থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলতেন চাকলাদারের ক্যাডাররা। এমনকি ইজিবাইক, রিকশা ও ভ্যানচালকেরাও চাঁদা দিতে বাধ্য হতেন।
যশোরের সব সরকারি দপ্তরের টেন্ডার নিয়ন্ত্রিত হতো শাহীন চাকলাদারের বাড়ি কাঁঠালতলা থেকে। চাকলাদারের প্রভাব খাটিয়ে তাঁর ভাই সাবেক পৌর মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু, কাউন্সিলর হাজী সুমন, মোস্তফা, সন্তোষ দত্ত, জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলন, চূড়ামনকাটি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মুন্না, মশিয়ার রহমান সাগর, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহারুল ইসলাম ও বিহারি ক্যাম্প এলাকার রবি নিরীহ মানুষের সম্পত্তি দখল করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
চাকলাদারের পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁর বাহিনী খুনোখুনিতেও ছিল বেপরোয়া। তাঁদের বিরুদ্ধে বহু হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।তাঁর বাহিনীর অনেকেই হত্যা মামলার চার্জশিটের (অভিযোগপত্র) আসামি। শাহীন চাকলাদার ক্ষমতায় থাকাকালে বিভিন্ন সমাবেশে বিরোধী রাজনৈতিক মত-পথের লোকজনকে প্রকাশ্যে দেখে নেওয়ার হুমকি দিতেন। আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাৎ-কর্মীরা বরাবরই তাঁর কাছে ছিলেন উপেক্ষিত।
যশোর সরকারি এমএম কলেজের দুটি ছাত্রাবাস ছিল শাহীন চাকলাদারের ক্যাডার বাহিনীর দখলে। এখান থেকে শহরের সব মেস নিয়ন্ত্রণ করা হতো। শিক্ষার্থীদের শাহীন চাকলাদারের মিছিলে যেতে বাধ্য করা হতো। ছাত্রলীগের নামধারীরা নিয়ন্ত্রণ করত সব ক্যাম্পাস।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনও চলতে বাধ্য হতো তাঁদের ইশারায়। কলেজের ৪টি পুকুর চাকলাদারের অনুসারী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী ও সাবেক সাধারণ আনোয়ার হোসেন বিপুল দখল করে বিনা ইজারায় মাছ চাষের ব্যবসা করেছেন।
কেশবপুরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-বাণিজ্য
যশোর-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের সঙ্গে শাহীন চাকলাদারের ছিল দা-কুমড়া সম্পর্ক। সদরে দলীয় মনোনয়ন নিয়েই মূলত দুজনের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে ছিল। যশোর-৬ আসনের (কেশবপুর) সাবেক এমপি ইসমাত আরা সাদেকের মৃত্যুর পর সেখানে উপনির্বাচনে দলীয় হাইকমান্ড শাহীন চাকলাদারকে প্রার্থী করে। ২০২০ সালের উপনির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।
অভিযোগ রয়েছে, তিন বছরের মেয়াদে কেশবপুরের তিন শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করেছেন তিনি। উপজেলার হিজলডাঙ্গা গ্রামে শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মাসুদ মেমোরিয়াল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মশিয়ুর রহমান ১৯ জনের নিয়োগ দেওয়ার জন্য ৬৪ লাখ টাকা দিতে অঙ্গীকারনামা দেন।
সেই অঙ্গীকারনামায় তিনি লিখেছেন, ‘কলেজের ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে চাকরিতে নজরুল ইসলামকে এমপিওভুক্ত করাতে ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য শাহীনের ব্যক্তিগত সহকারী আলমগীর সিদ্দিকীর কাছে দিয়েছেন তিনি।’ এটি গত তিন বছরের নিয়োগ-বাণিজ্যের একটি প্রমাণ। এ ব্যাপারে শাহীন চাকলাদারের ব্যক্তিগত সহকারী আলমগীর সিদ্দিকী বলেন, তিনি কোনো টাকা মশিয়ুর রহমানের কাছ থেকে নেননি। মশিয়ুর রহমান সরাসরি শাহীন চাকলাদারের কাছে টাকা দিয়েছেন।
শাহীন কেশবপুরে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে কখনো বসেননি। তিনি পৌরসভার মেয়রের কক্ষে বসতেন। এ বিষয়ে তখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ ছিলেন। কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফা বলেন, শেষ তিন বছরে দলের সঙ্গে শাহীন চাকলাদারের সম্পর্ক ছিল অনেকটা প্রভু-ভৃত্যের মতো। তাঁর কথাই ছিল শেষকথা।
এ ছাড়া সরকারি কাবিখা, কাবিটাসহ সব প্রকল্প সম্পন্ন করতেন মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে। ক্ষমতার দাপটে তিনি একের পর এক দখল করতে থাকেন সেখানকার সব মাছের ঘের। তাঁর অপকর্মে স্থানীয় রাজনীতিবিদসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। তাঁরই ফলে ২০২৪ সালের নির্বাচনে দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়েও একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী বয়সে তরুণ আজিজুল ইসলাম ওরফে খন্দকার আজিজের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন শাহীন।
শাহীন চাকলাদার দেশে না বিদেশে, এ নিয়ে দুই ধরনের তথ্য মিলছে। কেউ বলছেন, তাঁর ফাইভ স্টার হোটেলের ম্যানেজার কলকাতার বাসিন্দা হওয়ায় তাঁর মাধ্যমে তিনি পুটখালী সীমান্ত হয়ে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন। কেউবা বলছেন, জনগণ ও প্রশাসনের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে নিতে ভারতে যাওয়ার কথা প্রচার করে যশোরেই আত্মগোপনে আছেন তিনি। এ শহরে বসেই এখনো সব কার্যক্রম পরিচালনা করছেন শাহীন।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলার জন্য বহুবার চেষ্টা করেও শাহীন চাকলাদারের মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। হোয়াটস অ্যাপেও তাঁর সংযোগ পাওয়া যায়নি।
যশোর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু আজকের পত্রিকাকে বলেন, শাহীন দানবীয় রাজনীতি করেছেন, যশোরবাসীর আতঙ্কের নাম ছিল শাহীন চাকলাদার। যশোর সন্ত্রাসীর জনপদে রূপ নেয় তাঁর হাত ধরে। তাঁর বলপ্রয়োগের রাজনীতিতে ২০-৩০ জন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন। শহরের দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ হয়েছে তাঁর হাত ধরে। দল ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি হয়েছেন শত শত কোটি টাকার মালিক। তাঁর এই সম্পত্তি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়নি। তিনি এখন এ শহরে না থাকায় মানুষ স্বস্তিতে রয়েছেন।
যশোরের পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, যশোরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো। বিগত সময়ে নির্যাতিনের শিকার হওয়া ব্যক্তিরা অভিযোগ দিলে পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।

যশোর শহরের কাজিপাড়ার কাঁঠালতলা মোড়। এখানে দাঁড়িয়ে উত্তর দিকে তাকালেই দেখা যাবে ভাঙা আর আগুনে পোড়া তিনতলা বাড়ি। তালাবদ্ধ এ বাড়িটির মালিক যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার। বাড়ির গা ঘেঁষেই সাদা রঙের একতলা ভবন। ভেতরে ভাঙচুর ও আগুনের ক্ষতচিহ্ন। এ ভবনটির মালিকও শাহীন। এটি তিনি ব্যক্তিগত, দলীয়, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করতেন।
গত বুধবার বিকেলে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি ভাঙা ও পোড়া বাড়িটি দেখছিলেন। তাঁর কাছে যেতেই বলে উঠলেন, ‘কয়েক দিন আগেও এখানে কত ক্ষমতা, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ হতো। চাকলাদারের কথায় কতজনের মায়ের কোল খালি হয়েছে! আর এখন বাড়িতে কেউ নেই। হাহাকার করছে। সবই সৃষ্টিকর্তার খেল!’
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৫ আগস্ট শাহীনের ওই বাড়ি ও পাশের অফিসে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে দুর্বৃত্তরা। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে আগেই তিনি পরিবার নিয়ে সটকে পড়েন। সরকার পতনের পর থেকে তাঁকে আর যশোরে দেখা যায়নি। শাহীন চাকলাদার গা ঢাকা দিলেও যশোরবাসীর কাছে তিনি আতঙ্কের নাম। তাঁর অপকর্মের বিষয়ে এখনো কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না।
দুর্নীতি দমন কমিশন তাঁর সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে। ইতিমধ্যে শাহীন চাকলাদার এবং তাঁর স্ত্রী ও সন্তানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগে হঠাৎ আগন্তুক শাহীন
দলীয় নেতা-কর্মী সূত্রে জানা যায়, নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকেও শাহীন চাকলাদার নিয়মিত পারিবারিক ওষুধের দোকানে বসতেন। হঠাৎ ২০০১ সালে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হন তিনি। ২০০৪ সালে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন শাহীন চাকলাদার। এর পাঁচ বছরের মাথায় তিনি আওয়ামী লীগ থেকে যশোর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে জয়ী হন। দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হন ২০১৪ সালে। এরপর ২০২০ সালে চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে উপনির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।
সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও পরাজিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে। কেশবপুরে দলীয় নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়ন, নিয়োগ-বাণিজ্যের কারণে তিনি হারেন বলে মন্তব্য করেন নেতারা।
এই পরাজয়ের আগে যশোরের সবকিছুতে একক নিয়ন্ত্রক ছিলেন শাহীন। জেলায় ২০০৯ থেকেই শুরু শাহীন চাকলাদারের একক আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতি। তাঁর এই পথে যাঁরা বাধা হয়েছিলেন তাঁদের সরাতে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন তিনি। একপর্যায়ে শাহীন চাকলাদার নিজেই সন্ত্রাসীদের গডফাদারে পরিণত হন। তিনি নিজেও সব সময় সন্ত্রাসী-আতঙ্কে থাকতেন। তাঁর বাড়ি ও অফিসে বসানো সিসি ক্যামেরা এবং চলাফেরার ধরন দেখেই এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়। নিরাপত্তার জন্য সরকার অনুমোদিত গানম্যান ছিল তাঁর। এর বাইরেও তিনি যখন চলাফেরা করতেন, তাঁর আগে-পিছে গোটাদশেক মোটরসাইকেলের বহর দেখা যেত।
‘অবৈধ’ সম্পদের পাহাড়
২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে শাহীন চাকলাদার অবৈধভাবে অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক হন। সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, শাহীন শহরের কাজিপাড়ায় পৈতৃক বাড়ির বাইরেও বহু স্থানে বানিয়েছেন বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শহরের চিত্রা মোড়ে ১৭ তলাবিশিষ্ট পাঁচতারকা হোটেল, কাঁঠালতলায় অত্যাধুনিক তিনতলা বাড়ি ও বড় বাজারে দোতলা বাড়ি। কিনেছেন যশোরের ঐতিহ্যবাহী পারভীনা হোটেল। আরবপুর মোড়ে রয়েছে পাঁচতলা বাড়ি, বিমান অফিসের পাশে রয়েছে বাড়িসহ জমি, মাইকপট্টিতে তাঁরই সহযোগী সাবেক কাউন্সিলর আলমগীর কবির সুমন ওরফে হাজী সুমনের সঙ্গে যৌথ নামে জমি, পেট্রলপাম্প, ধর্মতলায় জমি, ঢাকার কলাবাগান ও মহাখালীর ডিওএইচএসে ফ্ল্যাট।
দলীয় নেতা-কর্মীদের সূত্রে জানা যায়, আত্মীয়স্বজনের নামেও দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়েছেন শাহীন। সম্পত্তি গড়া ও আধিপত্য বিস্তারে অন্যকে দমন করে রাজনীতিসহ সব ক্ষেত্রে একক আধিপত্য বিস্তারে তিনি সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করতেন। জেলার রাজনীতি, টেন্ডার ব্যবসা, চাঁদাবাজি, চোরাচালান, দখলবাজিসহ সব ক্ষেত্রে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় চিহ্নিত অপরাধীদের নিয়ে তিনি গড়েন পৃথক বাহিনী। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহারুল ইসলাম, শাহীন চাকলাদারের চাচাতো ভাই সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু ওরফে ফন্টু চাকলাদার, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল এসব বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন। গত ৫ আগস্টের পর থেকে তাঁরা সবাই গা ঢাকা দেন।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, আনোয়ারা বেগম নামের এক স্কুলশিক্ষিকা শহরের চিত্রা মোড়ে তাঁর জমি দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করতে সহযোগিতার জন্য গিয়েছিলেন শাহীন চাকলাদারের কাছে। একপর্যায়ে কোটি টাকা মূল্যের ওই জমি থেকে আগের দখলদারের পাশাপাশি ওই শিক্ষিকাকেও উচ্ছেদ করে নিজেই দখল করে নেন শাহীন চাকলাদার। সেই জমিতে তিনি গড়ে তোলেন ১৭ তলাবিশিষ্ট ফাইভ স্টার হোটেল ‘জাবির ইন্টারন্যাশনাল’; যা জুয়া ও বড় বড় অনৈতিক কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ৫ আগস্ট ওই হোটেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে এক বিদেশিসহ ২৪ ব্যক্তির মৃত্যু হয়। অভিযোগ রয়েছে, হোটেলের পাশে গাজী ইলেকট্রিকের দোতলা মার্কেটের একটি বড় অংশও তিনি দখল করে নেন।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ২০০ বিঘার এড়োলের বিল, মাহিদিয়ায় ১০০ বিঘার বিলের জমি, জগহাটির একটি বিল, শহরের মাইকপট্টির সেলিম নামের এক ব্যক্তির মার্কেটের একাংশ, কাঁঠালতলা এলাকার ঈদগাহের একটি অংশ, শহরের ঘোষপাড়া এলাকার সাধন নামের এক ব্যক্তির ১৫ বিঘা জমি, বকচরে সরকারি জায়গা দখল করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ, যশোর-নড়াইল রোডের বীজ গোডাউনের সামনে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে শাহীন চাকলাদার ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে।
এ ছাড়া সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের নিলামে চাকলাদারের লোকজন ছাড়া কাউকে ভিড়তে দেওয়া হতো না। যশোরের ভূমি অফিস, রেজিস্ট্রি অফিস, পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ অফিস, সেটেলমেন্ট অফিস, বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকেরা শাহীনের লোকজনকে নিয়মিত চাঁদা দিতে বাধ্য হতেন। এমনকি কোচিং সেন্টারও তাঁদের চাঁদাবাজির বাইরে ছিল না। শহরের বিভিন্ন প্রবেশমুখ মুড়লি, চাঁচড়া চেকপোস্ট, পালবাড়ী, খাজুরা বাসস্ট্যান্ড ও মণিহারসহ মূল শহরের মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন যানবাহন থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলতেন চাকলাদারের ক্যাডাররা। এমনকি ইজিবাইক, রিকশা ও ভ্যানচালকেরাও চাঁদা দিতে বাধ্য হতেন।
যশোরের সব সরকারি দপ্তরের টেন্ডার নিয়ন্ত্রিত হতো শাহীন চাকলাদারের বাড়ি কাঁঠালতলা থেকে। চাকলাদারের প্রভাব খাটিয়ে তাঁর ভাই সাবেক পৌর মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু, কাউন্সিলর হাজী সুমন, মোস্তফা, সন্তোষ দত্ত, জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলন, চূড়ামনকাটি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মুন্না, মশিয়ার রহমান সাগর, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহারুল ইসলাম ও বিহারি ক্যাম্প এলাকার রবি নিরীহ মানুষের সম্পত্তি দখল করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
চাকলাদারের পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁর বাহিনী খুনোখুনিতেও ছিল বেপরোয়া। তাঁদের বিরুদ্ধে বহু হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।তাঁর বাহিনীর অনেকেই হত্যা মামলার চার্জশিটের (অভিযোগপত্র) আসামি। শাহীন চাকলাদার ক্ষমতায় থাকাকালে বিভিন্ন সমাবেশে বিরোধী রাজনৈতিক মত-পথের লোকজনকে প্রকাশ্যে দেখে নেওয়ার হুমকি দিতেন। আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাৎ-কর্মীরা বরাবরই তাঁর কাছে ছিলেন উপেক্ষিত।
যশোর সরকারি এমএম কলেজের দুটি ছাত্রাবাস ছিল শাহীন চাকলাদারের ক্যাডার বাহিনীর দখলে। এখান থেকে শহরের সব মেস নিয়ন্ত্রণ করা হতো। শিক্ষার্থীদের শাহীন চাকলাদারের মিছিলে যেতে বাধ্য করা হতো। ছাত্রলীগের নামধারীরা নিয়ন্ত্রণ করত সব ক্যাম্পাস।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনও চলতে বাধ্য হতো তাঁদের ইশারায়। কলেজের ৪টি পুকুর চাকলাদারের অনুসারী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী ও সাবেক সাধারণ আনোয়ার হোসেন বিপুল দখল করে বিনা ইজারায় মাছ চাষের ব্যবসা করেছেন।
কেশবপুরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-বাণিজ্য
যশোর-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের সঙ্গে শাহীন চাকলাদারের ছিল দা-কুমড়া সম্পর্ক। সদরে দলীয় মনোনয়ন নিয়েই মূলত দুজনের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে ছিল। যশোর-৬ আসনের (কেশবপুর) সাবেক এমপি ইসমাত আরা সাদেকের মৃত্যুর পর সেখানে উপনির্বাচনে দলীয় হাইকমান্ড শাহীন চাকলাদারকে প্রার্থী করে। ২০২০ সালের উপনির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।
অভিযোগ রয়েছে, তিন বছরের মেয়াদে কেশবপুরের তিন শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করেছেন তিনি। উপজেলার হিজলডাঙ্গা গ্রামে শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মাসুদ মেমোরিয়াল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মশিয়ুর রহমান ১৯ জনের নিয়োগ দেওয়ার জন্য ৬৪ লাখ টাকা দিতে অঙ্গীকারনামা দেন।
সেই অঙ্গীকারনামায় তিনি লিখেছেন, ‘কলেজের ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে চাকরিতে নজরুল ইসলামকে এমপিওভুক্ত করাতে ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য শাহীনের ব্যক্তিগত সহকারী আলমগীর সিদ্দিকীর কাছে দিয়েছেন তিনি।’ এটি গত তিন বছরের নিয়োগ-বাণিজ্যের একটি প্রমাণ। এ ব্যাপারে শাহীন চাকলাদারের ব্যক্তিগত সহকারী আলমগীর সিদ্দিকী বলেন, তিনি কোনো টাকা মশিয়ুর রহমানের কাছ থেকে নেননি। মশিয়ুর রহমান সরাসরি শাহীন চাকলাদারের কাছে টাকা দিয়েছেন।
শাহীন কেশবপুরে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে কখনো বসেননি। তিনি পৌরসভার মেয়রের কক্ষে বসতেন। এ বিষয়ে তখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ ছিলেন। কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফা বলেন, শেষ তিন বছরে দলের সঙ্গে শাহীন চাকলাদারের সম্পর্ক ছিল অনেকটা প্রভু-ভৃত্যের মতো। তাঁর কথাই ছিল শেষকথা।
এ ছাড়া সরকারি কাবিখা, কাবিটাসহ সব প্রকল্প সম্পন্ন করতেন মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে। ক্ষমতার দাপটে তিনি একের পর এক দখল করতে থাকেন সেখানকার সব মাছের ঘের। তাঁর অপকর্মে স্থানীয় রাজনীতিবিদসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। তাঁরই ফলে ২০২৪ সালের নির্বাচনে দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়েও একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী বয়সে তরুণ আজিজুল ইসলাম ওরফে খন্দকার আজিজের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন শাহীন।
শাহীন চাকলাদার দেশে না বিদেশে, এ নিয়ে দুই ধরনের তথ্য মিলছে। কেউ বলছেন, তাঁর ফাইভ স্টার হোটেলের ম্যানেজার কলকাতার বাসিন্দা হওয়ায় তাঁর মাধ্যমে তিনি পুটখালী সীমান্ত হয়ে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন। কেউবা বলছেন, জনগণ ও প্রশাসনের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে নিতে ভারতে যাওয়ার কথা প্রচার করে যশোরেই আত্মগোপনে আছেন তিনি। এ শহরে বসেই এখনো সব কার্যক্রম পরিচালনা করছেন শাহীন।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলার জন্য বহুবার চেষ্টা করেও শাহীন চাকলাদারের মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। হোয়াটস অ্যাপেও তাঁর সংযোগ পাওয়া যায়নি।
যশোর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু আজকের পত্রিকাকে বলেন, শাহীন দানবীয় রাজনীতি করেছেন, যশোরবাসীর আতঙ্কের নাম ছিল শাহীন চাকলাদার। যশোর সন্ত্রাসীর জনপদে রূপ নেয় তাঁর হাত ধরে। তাঁর বলপ্রয়োগের রাজনীতিতে ২০-৩০ জন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন। শহরের দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ হয়েছে তাঁর হাত ধরে। দল ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি হয়েছেন শত শত কোটি টাকার মালিক। তাঁর এই সম্পত্তি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়নি। তিনি এখন এ শহরে না থাকায় মানুষ স্বস্তিতে রয়েছেন।
যশোরের পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, যশোরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো। বিগত সময়ে নির্যাতিনের শিকার হওয়া ব্যক্তিরা অভিযোগ দিলে পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম বলেছেন, ‘স্বাধীনতা যার জন্য, সেই মর্যাদা এখনো হয় নাই। এ দেশের মানুষ নির্বাচন চায়। ভালো নির্বাচন হয়নি বলেই শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। ভালো নির্বাচন হলে শেখ হাসিনা সরকারের এইভাবে নির্মম পতন হতো না।’
৫ মিনিট আগে
কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী মুফতি আমির হামজা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ১৯৭১ সালের যে ভূমিকা, এত দিন পর্যন্ত যে মিথ্যা রচনা, আপনারা বদরুদ্দীন উমরের ইতিহাস পড়বেন।’
৩১ মিনিট আগে
র্যাব আরও জানায়, গ্রেপ্তারকৃত আলতাফ ওরফে ঠোঁটকাটা আলতাফ একজন তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে দক্ষিণখান, বিমানবন্দর, উত্তরা পূর্ব ও পশ্চিম থানাসহ বিভিন্ন থানায় হত্যা, হত্যাচেষ্টা, অস্ত্র, মাদক, ডাকাতি, অগ্নিসংযোগসহ অন্তত ১৬টি মামলা রয়েছে।
১ ঘণ্টা আগে
সংগীতশিল্পী, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পাবনা জেলা সাংস্কৃতিক সম্পাদক প্রলয় চাকীকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আজ মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে শহরের পাথরতলা এলাকার নিজ বাড়ি থেকে তাঁকে আটক করা হয়।
১ ঘণ্টা আগেসাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম বলেছেন, ‘স্বাধীনতা যার জন্য, সেই মর্যাদা এখনো হয় নাই। এ দেশের মানুষ নির্বাচন চায়। ভালো নির্বাচন হয়নি বলেই শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। ভালো নির্বাচন হলে শেখ হাসিনা সরকারের এইভাবে নির্মম পতন হতো না।’
আজ মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এসব কথা বলেন।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘অধ্যাপক ইউনূসের সরকারের যে কর্মকাণ্ড, যাদের নিয়ে উনি ওঠেন বসেন, তারাই বাংলাদেশ না। তারা বাংলাদেশের হয়তো ২৫ ভাগও না। সেই জন্য সার্বিকভাবে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হলে আমরা অবশ্যই নির্বাচন করব। কিন্তু কোনো পাতানো নির্বাচনে আমরা যাব না।’ এ সময় দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা তাঁর সঙ্গে ছিলেন।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম বলেছেন, ‘স্বাধীনতা যার জন্য, সেই মর্যাদা এখনো হয় নাই। এ দেশের মানুষ নির্বাচন চায়। ভালো নির্বাচন হয়নি বলেই শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। ভালো নির্বাচন হলে শেখ হাসিনা সরকারের এইভাবে নির্মম পতন হতো না।’
আজ মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এসব কথা বলেন।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘অধ্যাপক ইউনূসের সরকারের যে কর্মকাণ্ড, যাদের নিয়ে উনি ওঠেন বসেন, তারাই বাংলাদেশ না। তারা বাংলাদেশের হয়তো ২৫ ভাগও না। সেই জন্য সার্বিকভাবে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হলে আমরা অবশ্যই নির্বাচন করব। কিন্তু কোনো পাতানো নির্বাচনে আমরা যাব না।’ এ সময় দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা তাঁর সঙ্গে ছিলেন।

যশোর শহরের কাজিপাড়ার কাঁঠালতলা মোড়। এখানে দাঁড়িয়ে উত্তর দিকে তাকালেই দেখা যাবে ভাঙা আর আগুনে পোড়া তিনতলা বাড়ি। তালাবদ্ধ এ বাড়িটির মালিক যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার।
২১ অক্টোবর ২০২৪
কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী মুফতি আমির হামজা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ১৯৭১ সালের যে ভূমিকা, এত দিন পর্যন্ত যে মিথ্যা রচনা, আপনারা বদরুদ্দীন উমরের ইতিহাস পড়বেন।’
৩১ মিনিট আগে
র্যাব আরও জানায়, গ্রেপ্তারকৃত আলতাফ ওরফে ঠোঁটকাটা আলতাফ একজন তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে দক্ষিণখান, বিমানবন্দর, উত্তরা পূর্ব ও পশ্চিম থানাসহ বিভিন্ন থানায় হত্যা, হত্যাচেষ্টা, অস্ত্র, মাদক, ডাকাতি, অগ্নিসংযোগসহ অন্তত ১৬টি মামলা রয়েছে।
১ ঘণ্টা আগে
সংগীতশিল্পী, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পাবনা জেলা সাংস্কৃতিক সম্পাদক প্রলয় চাকীকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আজ মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে শহরের পাথরতলা এলাকার নিজ বাড়ি থেকে তাঁকে আটক করা হয়।
১ ঘণ্টা আগেকুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী মুফতি আমির হামজা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ১৯৭১ সালের যে ভূমিকা, এত দিন পর্যন্ত যে মিথ্যা রচনা, আপনারা বদরুদ্দীন উমরের ইতিহাস পড়বেন। তাঁর লিখিত বইতে আমরা পড়েছি, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে সমস্ত কল্পকাহিনি লেখা, এগুলো ১০০ ভাগের ৯০ ভাগ মিথ্যা। সুতরাং জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ওই সময় যুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিল না, তারা ছিল ভারতের বিরুদ্ধে। এখন আমরা এটা জেনেছি। এত দিন আমাদের এই সত্য জানতে দেওয়া হয়নি।’
আজ মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে বিজয় দিবস উপলক্ষে কুষ্টিয়ায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত বিজয় র্যালিতে আমির হামজা এসব কথা বলেন।
আমির হামজা বলেন, ‘আজকের এই বিজয়ের র্যালি এই কারণে যে আমরা ১৯৭১ সালে এই দেশের স্বাধীনতার পক্ষে ছিলাম। ভারতের যে আগ্রাসন, এর বিরুদ্ধে ছিলাম এ কারণে আমাদের এরা বিরোধী বানিয়ে রেখেছিল। আগামীর বাংলাদেশকে আমরা ভারতের তাঁবেদারমুক্ত করব। আজকের এই র্যালির এটাই উদ্দেশ্য। আগামীতে দেশ ঐক্যবদ্ধ থাকবে, ইনশা আল্লাহ।’
জামায়াতের প্রার্থী আরও বলেন, ‘আমার মনে হয়, দল মত জাতি বর্ণ ধর্ম নির্বিশেষে এ দেশে যারাই জন্ম নেবে, তারাই যেহেতু সম্মানিত নাগরিক, সুতরাং সবাইকে নিয়ে আমরা আবার এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আমার মনে হয়, পেছনের ইতিহাস পেছন দিকে টানা ঠিক না। পেছনের সব ইতিহাস ভুলে আমরা নতুন ইতিহাস তৈরি করব। এখানে কোনো দল-মত না থাকাই ভালো, সবাই আমরা এক।’
এ সময় বিজয় র্যালিতে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সুজা উদ্দীন জোয়ার্দ্দার, সহকারী সেক্রেটারি মাজহারুল হক, শহর জামায়াতের আমির এনামুল হকসহ দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
এদিকে আমির হামজার এমন মন্তব্যের বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা ইউনিট কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার রফিকুল ইসলাম টুকু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাজনৈতিক বক্তব্য আমরা আমলে নিই না, আর এগুলো নিয়ে আমাদের সমালোচনা করারও প্রয়োজন পড়ে না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চিরসত্য, সেটা সবাই জানে। উনি নির্বাচনে জেতার জন্য অনেক কিছু বলেন, আবার ক্ষমাও চান।’

কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী মুফতি আমির হামজা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ১৯৭১ সালের যে ভূমিকা, এত দিন পর্যন্ত যে মিথ্যা রচনা, আপনারা বদরুদ্দীন উমরের ইতিহাস পড়বেন। তাঁর লিখিত বইতে আমরা পড়েছি, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে সমস্ত কল্পকাহিনি লেখা, এগুলো ১০০ ভাগের ৯০ ভাগ মিথ্যা। সুতরাং জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ওই সময় যুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিল না, তারা ছিল ভারতের বিরুদ্ধে। এখন আমরা এটা জেনেছি। এত দিন আমাদের এই সত্য জানতে দেওয়া হয়নি।’
আজ মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে বিজয় দিবস উপলক্ষে কুষ্টিয়ায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত বিজয় র্যালিতে আমির হামজা এসব কথা বলেন।
আমির হামজা বলেন, ‘আজকের এই বিজয়ের র্যালি এই কারণে যে আমরা ১৯৭১ সালে এই দেশের স্বাধীনতার পক্ষে ছিলাম। ভারতের যে আগ্রাসন, এর বিরুদ্ধে ছিলাম এ কারণে আমাদের এরা বিরোধী বানিয়ে রেখেছিল। আগামীর বাংলাদেশকে আমরা ভারতের তাঁবেদারমুক্ত করব। আজকের এই র্যালির এটাই উদ্দেশ্য। আগামীতে দেশ ঐক্যবদ্ধ থাকবে, ইনশা আল্লাহ।’
জামায়াতের প্রার্থী আরও বলেন, ‘আমার মনে হয়, দল মত জাতি বর্ণ ধর্ম নির্বিশেষে এ দেশে যারাই জন্ম নেবে, তারাই যেহেতু সম্মানিত নাগরিক, সুতরাং সবাইকে নিয়ে আমরা আবার এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আমার মনে হয়, পেছনের ইতিহাস পেছন দিকে টানা ঠিক না। পেছনের সব ইতিহাস ভুলে আমরা নতুন ইতিহাস তৈরি করব। এখানে কোনো দল-মত না থাকাই ভালো, সবাই আমরা এক।’
এ সময় বিজয় র্যালিতে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সুজা উদ্দীন জোয়ার্দ্দার, সহকারী সেক্রেটারি মাজহারুল হক, শহর জামায়াতের আমির এনামুল হকসহ দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
এদিকে আমির হামজার এমন মন্তব্যের বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা ইউনিট কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার রফিকুল ইসলাম টুকু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাজনৈতিক বক্তব্য আমরা আমলে নিই না, আর এগুলো নিয়ে আমাদের সমালোচনা করারও প্রয়োজন পড়ে না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চিরসত্য, সেটা সবাই জানে। উনি নির্বাচনে জেতার জন্য অনেক কিছু বলেন, আবার ক্ষমাও চান।’

যশোর শহরের কাজিপাড়ার কাঁঠালতলা মোড়। এখানে দাঁড়িয়ে উত্তর দিকে তাকালেই দেখা যাবে ভাঙা আর আগুনে পোড়া তিনতলা বাড়ি। তালাবদ্ধ এ বাড়িটির মালিক যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার।
২১ অক্টোবর ২০২৪
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম বলেছেন, ‘স্বাধীনতা যার জন্য, সেই মর্যাদা এখনো হয় নাই। এ দেশের মানুষ নির্বাচন চায়। ভালো নির্বাচন হয়নি বলেই শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। ভালো নির্বাচন হলে শেখ হাসিনা সরকারের এইভাবে নির্মম পতন হতো না।’
৫ মিনিট আগে
র্যাব আরও জানায়, গ্রেপ্তারকৃত আলতাফ ওরফে ঠোঁটকাটা আলতাফ একজন তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে দক্ষিণখান, বিমানবন্দর, উত্তরা পূর্ব ও পশ্চিম থানাসহ বিভিন্ন থানায় হত্যা, হত্যাচেষ্টা, অস্ত্র, মাদক, ডাকাতি, অগ্নিসংযোগসহ অন্তত ১৬টি মামলা রয়েছে।
১ ঘণ্টা আগে
সংগীতশিল্পী, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পাবনা জেলা সাংস্কৃতিক সম্পাদক প্রলয় চাকীকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আজ মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে শহরের পাথরতলা এলাকার নিজ বাড়ি থেকে তাঁকে আটক করা হয়।
১ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জুলাই রেভেলস সংগঠনের এক সদস্যকে হত্যাচেষ্টা মামলায় প্রধান আসামি আলতাফ ওরফে ঠোঁটকাটা আলতাফসহ (৪৬) তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১। গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব থানা এলাকার বিসিক শিল্পনগরী এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া অন্য দু’জন হলেন—সাইফুল ইসলাম (৩৭) ও মো. আমির হোসেন ফিরোজ (৪৭)।
র্যাব-১ এর মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাকিব হাসান জানান, শনিবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যার পর উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরের পাবলিক কলেজ-সংলগ্ন জুলাই রেভেলসের অফিসে সংগঠনটির প্রস্তাবিত সহসংগঠক ইউসুফ আলী রেদওয়ান ও সদস্য মো. ইয়াসিনকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনা ঘটে। ওই দিন রাত সাড়ে ৭টার দিকে উত্তরা পূর্ব থানাধীন ৬ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটে সংগঠনটির প্রধান কার্যালয়ের সামনে দেশীয় অস্ত্রসহ সংঘবদ্ধ হয়ে হামলা চালায় আসামিরা। একপর্যায়ে আলতাফ জুলাই রেভেলসের সদস্য ইউসুফ আলী রেদোয়ানের মাথায় আঘাত করে গুরুতর জখম করেন। এ সময় কার্যালয়ে ভাঙচুর ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের পর হামলাকারীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে আহত ইউসুফ আলী রেদোয়ান বাদী হয়ে উত্তরা পূর্ব থানায় একটি হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করেন। এর ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার দিবাগত রাতে র্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।
র্যাব আরও জানায়, গ্রেপ্তারকৃত আলতাফ ওরফে ঠোঁটকাটা আলতাফ একজন তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে দক্ষিণখান, বিমানবন্দর, উত্তরা পূর্ব ও পশ্চিম থানাসহ বিভিন্ন থানায় হত্যা, হত্যাচেষ্টা, অস্ত্র, মাদক, ডাকাতি, অগ্নিসংযোগসহ অন্তত ১৬টি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত তিনজনকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এর আগে গত ১৪ ডিসেম্বর মো. মাসুম ও ফাহিম খান নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। দক্ষিণখান ফায়দাবাদ এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

জুলাই রেভেলস সংগঠনের এক সদস্যকে হত্যাচেষ্টা মামলায় প্রধান আসামি আলতাফ ওরফে ঠোঁটকাটা আলতাফসহ (৪৬) তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১। গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব থানা এলাকার বিসিক শিল্পনগরী এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া অন্য দু’জন হলেন—সাইফুল ইসলাম (৩৭) ও মো. আমির হোসেন ফিরোজ (৪৭)।
র্যাব-১ এর মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাকিব হাসান জানান, শনিবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যার পর উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরের পাবলিক কলেজ-সংলগ্ন জুলাই রেভেলসের অফিসে সংগঠনটির প্রস্তাবিত সহসংগঠক ইউসুফ আলী রেদওয়ান ও সদস্য মো. ইয়াসিনকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনা ঘটে। ওই দিন রাত সাড়ে ৭টার দিকে উত্তরা পূর্ব থানাধীন ৬ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটে সংগঠনটির প্রধান কার্যালয়ের সামনে দেশীয় অস্ত্রসহ সংঘবদ্ধ হয়ে হামলা চালায় আসামিরা। একপর্যায়ে আলতাফ জুলাই রেভেলসের সদস্য ইউসুফ আলী রেদোয়ানের মাথায় আঘাত করে গুরুতর জখম করেন। এ সময় কার্যালয়ে ভাঙচুর ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের পর হামলাকারীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে আহত ইউসুফ আলী রেদোয়ান বাদী হয়ে উত্তরা পূর্ব থানায় একটি হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করেন। এর ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার দিবাগত রাতে র্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।
র্যাব আরও জানায়, গ্রেপ্তারকৃত আলতাফ ওরফে ঠোঁটকাটা আলতাফ একজন তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে দক্ষিণখান, বিমানবন্দর, উত্তরা পূর্ব ও পশ্চিম থানাসহ বিভিন্ন থানায় হত্যা, হত্যাচেষ্টা, অস্ত্র, মাদক, ডাকাতি, অগ্নিসংযোগসহ অন্তত ১৬টি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত তিনজনকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এর আগে গত ১৪ ডিসেম্বর মো. মাসুম ও ফাহিম খান নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। দক্ষিণখান ফায়দাবাদ এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

যশোর শহরের কাজিপাড়ার কাঁঠালতলা মোড়। এখানে দাঁড়িয়ে উত্তর দিকে তাকালেই দেখা যাবে ভাঙা আর আগুনে পোড়া তিনতলা বাড়ি। তালাবদ্ধ এ বাড়িটির মালিক যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার।
২১ অক্টোবর ২০২৪
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম বলেছেন, ‘স্বাধীনতা যার জন্য, সেই মর্যাদা এখনো হয় নাই। এ দেশের মানুষ নির্বাচন চায়। ভালো নির্বাচন হয়নি বলেই শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। ভালো নির্বাচন হলে শেখ হাসিনা সরকারের এইভাবে নির্মম পতন হতো না।’
৫ মিনিট আগে
কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী মুফতি আমির হামজা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ১৯৭১ সালের যে ভূমিকা, এত দিন পর্যন্ত যে মিথ্যা রচনা, আপনারা বদরুদ্দীন উমরের ইতিহাস পড়বেন।’
৩১ মিনিট আগে
সংগীতশিল্পী, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পাবনা জেলা সাংস্কৃতিক সম্পাদক প্রলয় চাকীকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আজ মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে শহরের পাথরতলা এলাকার নিজ বাড়ি থেকে তাঁকে আটক করা হয়।
১ ঘণ্টা আগেপাবনা প্রতিনিধি

সংগীতশিল্পী, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পাবনা জেলা সাংস্কৃতিক সম্পাদক প্রলয় চাকীকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আজ মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে শহরের পাথরতলা এলাকার নিজ বাড়ি থেকে তাঁকে আটক করা হয়। পাবনা ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাশিদুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রলয় চাকীর ছেলে সানী চাকী বলেন, ‘সকাল ৮টার দিকে ডিবি পুলিশের একটি দল বাড়িতে এসে বাবার খোঁজ করে। এরপর কোনো মামলা বা ওয়ারেন্ট ছাড়াই বাবাকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। এ সময় আটকের কারণ জানতে চাইলে সুনির্দিষ্ট করে কিছু না জানালেও ডেভিল হান্ট অভিযানে বাবাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে ডিবি পুলিশ জানায়।’
সানী আরও বলেন, ‘বাবা কখনোই রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করেননি। তাঁর নামে কোনো মামলাও নেই। সরকার পতনের পরেও তিনি বাড়িতেই ছিলেন। তিনি শারীরিকভাবে গুরুত্বর অসুস্থ। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ ও চোখের কর্নিয়ার রোগে ভুগছেন। তাঁকে অযথা হয়রানি করা হচ্ছে।’
পাবনা ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাশিদুল ইসলাম বলেন, সারা দেশে ডেভিল হান্ট অপারেশনের অংশ হিসেবে প্রলয় চাকীকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁর বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংগীতশিল্পী, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পাবনা জেলা সাংস্কৃতিক সম্পাদক প্রলয় চাকীকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আজ মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে শহরের পাথরতলা এলাকার নিজ বাড়ি থেকে তাঁকে আটক করা হয়। পাবনা ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাশিদুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রলয় চাকীর ছেলে সানী চাকী বলেন, ‘সকাল ৮টার দিকে ডিবি পুলিশের একটি দল বাড়িতে এসে বাবার খোঁজ করে। এরপর কোনো মামলা বা ওয়ারেন্ট ছাড়াই বাবাকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। এ সময় আটকের কারণ জানতে চাইলে সুনির্দিষ্ট করে কিছু না জানালেও ডেভিল হান্ট অভিযানে বাবাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে ডিবি পুলিশ জানায়।’
সানী আরও বলেন, ‘বাবা কখনোই রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করেননি। তাঁর নামে কোনো মামলাও নেই। সরকার পতনের পরেও তিনি বাড়িতেই ছিলেন। তিনি শারীরিকভাবে গুরুত্বর অসুস্থ। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ ও চোখের কর্নিয়ার রোগে ভুগছেন। তাঁকে অযথা হয়রানি করা হচ্ছে।’
পাবনা ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাশিদুল ইসলাম বলেন, সারা দেশে ডেভিল হান্ট অপারেশনের অংশ হিসেবে প্রলয় চাকীকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁর বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যশোর শহরের কাজিপাড়ার কাঁঠালতলা মোড়। এখানে দাঁড়িয়ে উত্তর দিকে তাকালেই দেখা যাবে ভাঙা আর আগুনে পোড়া তিনতলা বাড়ি। তালাবদ্ধ এ বাড়িটির মালিক যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার।
২১ অক্টোবর ২০২৪
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম বলেছেন, ‘স্বাধীনতা যার জন্য, সেই মর্যাদা এখনো হয় নাই। এ দেশের মানুষ নির্বাচন চায়। ভালো নির্বাচন হয়নি বলেই শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। ভালো নির্বাচন হলে শেখ হাসিনা সরকারের এইভাবে নির্মম পতন হতো না।’
৫ মিনিট আগে
কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী মুফতি আমির হামজা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ১৯৭১ সালের যে ভূমিকা, এত দিন পর্যন্ত যে মিথ্যা রচনা, আপনারা বদরুদ্দীন উমরের ইতিহাস পড়বেন।’
৩১ মিনিট আগে
র্যাব আরও জানায়, গ্রেপ্তারকৃত আলতাফ ওরফে ঠোঁটকাটা আলতাফ একজন তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে দক্ষিণখান, বিমানবন্দর, উত্তরা পূর্ব ও পশ্চিম থানাসহ বিভিন্ন থানায় হত্যা, হত্যাচেষ্টা, অস্ত্র, মাদক, ডাকাতি, অগ্নিসংযোগসহ অন্তত ১৬টি মামলা রয়েছে।
১ ঘণ্টা আগে