Ajker Patrika

গাজীপুরে বাবার আদর্শ নিয়ে নির্বাচনী মাঠে তিন কন্যা ও এক ছেলে

গাজীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ জানুয়ারি ২০২৪, ২০: ০২
গাজীপুরে বাবার আদর্শ নিয়ে নির্বাচনী মাঠে তিন কন্যা ও এক ছেলে

রাজধানী লাগোয়া শিল্প নগরী গাজীপুরকে দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ ও আওয়ামী লীগের ঘাঁটি মনে করা হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে এ দেশের গণমানুষের অধিকার আদায়ের লড়াই সংগ্রাম এবং উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আওয়ামী লীগের রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। দলটির ইতিহাসের অংশীদার আওয়ামী লীগের প্রয়াত অনেক নেতার মধ্যে গাজীপুরে রয়েছেন চারজন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের পাঁচটি সংসদীয় আসনের মধ্যে চারটিতেই আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছেন বাবাদের আদর্শের অনুসারী তিন কন্যা ও এক ছেলে। তাঁরা বাবার আদর্শ বাস্তবায়ন এবং উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে নৌকা মার্কায় ভোট প্রার্থনা করে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

অপরদিকে জেলার পাঁচটি আসনের মধ্যে তিনটিতেই নারী প্রার্থী পেয়ে ভোটারদের মধ্যে রয়েছে আলাদা উৎসাহ।

এবারের নির্বাচনে বাবার উত্তরসূরি হিসাবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীরা হলেন—গাজীপুর-৩ আসনে রোমানা আলি টুসি, গাজীপুর-৪ আসনে সিমিন হোসেন রিমি, গাজীপুর-৫ আসনে মেহের আফরোজ চুমকি ও গাজীপুর-২ আসনে মো. জাহিদ হাসান রাসেল।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আসনগুলো বরাবরই আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে। এ চার উত্তরসূরির মধ্যে তিনজন সরাসরি ভোটে নির্বাচিত এবং একজন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এবার নির্বাচনে বিরোধী দল না থাকলেও আসনগুলোতে এসব প্রার্থীরা দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়েছেন। এসব কারণে আসনগুলোতে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা জমে উঠেছে। ভোটারদের মধ্যেও সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা।

গাজীপুর-২:

এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন শ্রমিক লীগের কিংবদন্তি নেতা, ভাওয়াল বীর, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের উত্তরসূরি মো. জাহিদ আহসান রাসেল। তিনি এ আসনের ৪ বারের সংসদ সদস্য এবং সরকারের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এবারের নির্বাচনে তাঁর সঙ্গে আরও ৬ জন প্রার্থী থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী আলিম উদ্দিন বুদ্দিনের (ট্রাক) সঙ্গে।

কাজী আলিম উদ্দিন বুদ্দিন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। এর আগে গাজীপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হয়েছিলেন। তিনি আগে কখনো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছিলেন না।

এ আসনটি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড (গাজীপুর সদর) ও ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড (টঙ্গী) এলাকা এবং গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট (গাজীপুর সদর) এলাকা নিয়ে গঠিত। জাহিদ আহসান রাসেলের বাড়ি টঙ্গী। কাজী আলিম উদ্দিন বুদ্দিনের বাড়ি গাজীপুর অংশে। টঙ্গীর ভোট ভাগ না হলে রাসেল জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এখানে কাজী আলিম উদ্দিন বুদ্দিনকে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম সমর্থন দিয়ে ব্যাপক প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। ফলে এখানে নির্বাচনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

গাজীপুর-৩:

আসনটিতে দীর্ঘদিনে আওয়ামী লীগের তুমুল জনপ্রিয় নেতা ছিলেন প্রয়াত অ্যাডভোকেট রহমত আলী। তিনি আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের উদ্ভাবক ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। পিতার আদর্শের পথ ধরে এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন রহমত আলীর কন্যা অধ্যাপক রুমানা আলী টুসি। তিনি বর্তমান সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য।

টুসি কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক। নৌকা পাওয়ার পর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুলি জলিল, বর্তমান পৌর মেয়র আনিছুর রহমানসহ রহমত আলীর অনুসারী নেতা-কর্মীরা বিপুল উৎসাহে টুসির পক্ষে রয়েছেন।

এখানে আরও প্রার্থী আছেন ৬ জন। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজের (ট্রাক) সঙ্গে। মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে এ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি এবার মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী। তিনি গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক ও সাবেক শ্রীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান। এখানে বর্তমানে আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি তাঁর হাতে গড়া। এ কারণে অধিকাংশ নেতা তার প্রতি বিশ্বস্ত। ফলে এখানে জয়ের লড়াই হবে তীব্র।

রুমানা আলী টুসি বলেন, ‘আমার বাবা স্বাধীনতার পর বহুদিন এ এলাকার মানুষের সেবা করেছেন, জাতীয় রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা শেখ হাসিনার পাশে থেকেছেন। আমি জয়ী হলে পিতার আদর্শ নিয়ে সব সময় মানুষের পাশে থাকব।

গাজীপুর-৪:

কাপাসিয়া আসন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সংগঠক, প্রথম প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমেদের জন্মভূমি। তাঁর প্রতি কাপাসিয়ার মানুষের রয়েছে গভীর শ্রদ্ধা, মমতা ও ভালোবাসা। এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন তাজউদ্দীন আহমদের উত্তরসূরি সিমিন হোসেন রিমি। রিমি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। রিমির ছোট ভাই সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ পদত্যাগ করলে ২০১২ সালের উপনির্বাচনে তিনি প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর থেকে তিনি এখানকার সংসদ সদস্য। এবারও দল তার প্রতি আস্থা রেখে নৌকা তুলে দিয়েছে।

এখানে আরও প্রার্থী আছেন ৪ জন। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে তাজউদ্দীন আহমদের ভাগিনা, শিল্পপতি, বাংলাদেশ কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা আলম আহমেদের সঙ্গে। আলম আহমেদ দলীয় মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

আলম আহমেদ বাছাইকালে ঋণ খেলাপির কারণে মনোনয়ন হারান। পরে উচ্চ আদালতের রায় নিয়ে প্রতীক বরাদ্দের একদিন পর নির্বাচনী লড়াইয়ে ফিরে আসেন। আলম আহমেদ প্রতীক নিয়েছেন ঈগল। পরে রিমি নিজে পক্ষভুক্ত হয়ে ফুপাতো ভাইয়ের পক্ষে উচ্চ আদালতের দেওয়া রায় বাতিলের আবেদন করলে গত ২ জানুয়ারি উচ্চ আদালতের ফুল বেঞ্চ রিমির আবেদন না মঞ্জুর করেন। নির্বাচনী প্রচারণায় এটি এখন মূল ইস্যু। এখানে চলছে তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে ও ভাগিনার লড়াই। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন মোল্লাসহ আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত একটি অংশ আলমের পক্ষে।

সিমিন হোসেন রিমি বলেন, ‘আমি আমার বাবা, জাতির পিতা ও আওয়ামী লীগের আদর্শ ধারণ করে রাজনীতি করে যাচ্ছি। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর পিছিয়ে পড়া এলাকার উন্নয়নে গতি এনেছি। সঙ্গে মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমানো, বাল্য বিয়েমুক্ত এলাকা গড়ে তোলা, সবার জন্য স্বাস্থ্য-শিক্ষার সুযোগ ও মাদকমুক্ত এলাকা গঠনে কাজ করেছি। এবার লক্ষ্য স্মার্ট দেশ গঠনে কাজ করা। এ লক্ষ্যে আমি আবারও নৌকা প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করছি।’

গাজীপুর-৫:

গাজীপুর-৫ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের শহীদ অ্যাড. ময়েজ উদ্দিনের উত্তরসূরি মেহের আফরোজ চুমকি। চুমকি ১৯৯৬ সালে সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য ছিলেন। পরে ২০০৯,২০১৪ এবং ২০১৮ সালে এই আসনে নৌকার প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত হন। তিনি মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন দুই মেয়াদে। চুমকি এখানকার বর্তমান সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি বাবার পরিচয়ে রাজনীতিতে এলেও রাজনীতির মাঠে বিশ্বস্ত নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। এখানে আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল কমিটি তার হাতে গড়া। কালীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রসহ প্রায় সকল পদধারী নেতা তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত। তিনি এলাকায় শান্তি কন্যা হিসাবে পরিচিত।

এখানে আরও প্রার্থী আছেন পাঁচজন। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারউজ্জামানের (ট্রাক) সঙ্গে। আখতারউজ্জামান এখানকার সাবেক সংসদ সদস্য, গাজীপুর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, ডাকসুর সাবেক ভিপি-জিএস। তিনি এখাসকার মানুষের কাছে বেশ প্রিয়। এ কারণে কালীগঞ্জের প্রবীণ নাগরিক, সিনিয়র নেতা-কর্মী যারা বিভিন্ন সময়ে অবহেলিত হয়েছেন, তারা আখতারউজ্জামানের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন।

মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, ‘বাবার দেখানো পথেই রাজনীতির মাঠে বিচরণ করে চলছি। আমৃত্যু আওয়ামী লীগের আদর্শ ধারণ করতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে নারীদের সঙ্গে নিয়ে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গঠনে কাজ করতে চাই।’

এ ছাড়া গাজীপুর-৫ আসনটি কালীগঞ্জ উপজেলা, গাজীপুর সিটির ৩টি ওয়ার্ড ও সদর উপজেলার বাড়ীয়া ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এখানে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম আখতারউজ্জামানকে সমর্থন দিয়ে তার পক্ষে ব্যাপক প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। এ আসনে তাদের উভয়ের প্রচারণায় ব্যাপক জন সমাগম দেখা যায়। এ আসনে বর্তমান ও সাবেক দুই এমপির তীব্র লড়াই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অটোরিকশাকে চাপা দিল বাস, প্রাণ গেল তিনজনের

ফরিদপুর প্রতিনিধি
বাসচাপায় অটোরিকশাটি ভেঙেচুরে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাসচাপায় অটোরিকশাটি ভেঙেচুরে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বাসের চাপায় একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় শিশুসহ আরও চারজন আহত হয়। আজ শুক্রবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল মহাসড়কের কৈডুবী সদরদি রেলক্রসিং এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সোহেল মিয়া এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন নারী ও একজন পুরুষ। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।

খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার অভিযান চালান। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে।  

হাইওয়ে থানার এসআই সোহেল মিয়া বলেন, অটোরিকশাটি ভাঙ্গা থেকে টেকেরহাটের উদ্দেশে যাচ্ছিল। কৈডুবী সদরদি রেলক্রসিং এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা নিউ মডার্ন পরিবহনের একটি বাস অটোরিকশাটিকে চাপা দেয়। এই ঘটনায় বাসটি আটক করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে এখনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি ভারত: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

রংপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ৫৪
রংপুরে সার্কিট হাউসে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
রংপুরে সার্কিট হাউসে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ‘শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে ভারত এখনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। ট্রাইব্যুনালের রায় নিয়ে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে, আমরাও তাদের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় আছি।’

আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে রংপুর সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। রংপুর অঞ্চলে চার দিনের সফরে এসেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা তো চেয়েছি যে তাঁকে (শেখ হাসিনাকে) ফেরত পাঠানো হোক। যেহেতু উনি একজন কনভিক্টেড, যেহেতু সর্বোচ্চ বিচারিক সংস্থা তাঁকে একটি শাস্তি দিয়েছে। কিন্তু আমরা ইতিবাচক কোনো সাড়া এখন পর্যন্ত পাইনি। এটা নিয়ে আমার মনে হয় স্পেকুলেট না করাই ভালো। দেখা যাক কী হয়। আমরা তো চেয়েছি খুব, এ ধরনের ঘটনায় তো ঝট করে এক দিনে, সাত দিনে কোনো পরিবর্তন ঘটে না। আমরা অপেক্ষা করব, দেখি, ভারতের পক্ষ থেকে কী আসছে রিঅ্যাকশন।’

তৌহিদ হোসেন বলেন, একটা রিঅ্যাকশন আমরা দেখেছি যেটা, সেটা হলো তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে, এ রকম একটা কথা আসছে আমাদের। দেখুক তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরে কোনো তথ্য নেই বলে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘তারেক সাহেব কখন আসবেন, এই সম্বন্ধে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। উনার স্ত্রী সম্ভবত আসছেন বা পৌঁছে গেছেন হয়তো ইতিমধ্যে। আজকে সকালে পৌঁছার কথা ছিল। বেগম জিয়াকে আজকে নেওয়া হচ্ছে না, আমি ঢাকা থেকে আজকে সকালে জানলাম যে আজকে নেওয়া হচ্ছে না। একটু টেকনিক্যাল প্রবলেম দেখা দিয়েছে ওই এয়ারক্র্যাফট নিয়ে। সে ক্ষেত্রে হয়তো এক-আধ দিন দেরি হতে পারে।’

আরাকান আর্মি বাংলাদেশিদের ধরে নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আরাকান আর্মির সাথে আমাদের দ্বিপক্ষীয় আলোচনা সম্ভব নয়। তারা একটা নন-স্টেট অ্যাক্টর। আমরা স্টেট হিসেবে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা যেমন মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ, থাইল্যান্ড বা ভারতের সাথে করতে পারি, সেটা তাদের সাথে করতে পারি না। তবে আমাদের স্বার্থ যেহেতু আছে, আমাদের দেখতে হবে। এই ঘটনা যাতে কমে বা আদৌ না ঘটে, এটার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’

এ ছাড়াও নীলফামারীতে প্রস্তাবিত চীনা হাসপাতালের কার্যক্রম অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত শুরু করে যেতে চায় বলেও জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। একই সঙ্গে নির্বাচিত সরকার এলে এই কাজ সমাপ্ত করবে বলেও আশা তার। এ সময় পিছিয়ে পড়া রংপুরের প্রত্নতাত্ত্বিকসহ সব ক্ষেত্রে নেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সরকারের সদিচ্ছার কথা জানান তৌহিদ হোসেন।

এরপর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সপরিবার রংপুর জমিদার বাড়ি তাজহাটে পরিদর্শনে যান। এ ছাড়াও বিকেলে রংপুর সার্কিট হাউসে চা-চক্রের কথা রয়েছে তৌহিদ হোসেনের। আগামীকাল রংপুরের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং রংপুরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জিলা স্কুল পরিদর্শন করার কথাও রয়েছে তাঁর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাতিয়ায় ৫৬০০ কেজি জাটকা ইলিশ জব্দ, এতিমখানায় বিতরণ

­হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
কোস্ট গার্ডের অভিযানে জব্দ জাটকা ইলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
কোস্ট গার্ডের অভিযানে জব্দ জাটকা ইলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

নোয়াখালীর হাতিয়ার জাগলার চর এলাকার মেঘনা নদীতে অভিযান চালিয়েছে কোস্ট গার্ড। এ সময় একটি নৌকা থেকে ৫ হাজার ৬০০ কেজি জাটকা ইলিশ জব্দ করা হয়। এই ঘটনায় আটক কয়েকজন মাঝিমাল্লার কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে কোস্ট গার্ড হাতিয়ার একটি দল এই অভিযান চালায়। জব্দ করা জাটকাগুলোর মূল্য প্রায় ২৮ লাখ টাকা।

কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট মো. আবুল কাশেম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মেঘনা নদীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কোস্ট গার্ড। অভিযানে মেঘনা নদীর জাগলার চর এলাকায় একটি কাঠের নৌকায় তল্লাশি করা হয়। ওই নৌকা থেকে ৫ হাজার ৬০০ কেজি জাটকা জব্দ করা হয়। এ সময় মাঝিদের মুচলেকা নিয়ে নৌকা ছেড়ে দেওয়া হয়। জব্দ মাছগুলো মৎস্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এতিমখানা ও দুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। মৎস্য সম্পদ রক্ষায় কোস্ট গার্ডের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মাঠে পড়ে ছিল মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের সালথায় উৎপল সরকার (৩৫) নামের এক মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের গৌরদিয়া এলাকার কালীতলা ব্রিজ-সংলগ্ন মাঠ থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় মাঠ-সংলগ্ন সেতু থেকে চোখ বাঁধা অবস্থায় থাকা ফিরোজ মোল্যা নামের এক ভ্যানচালককে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন।

নিহত উৎপল ফরিদপুর জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের রনকাইল গ্রামের অজয় সরকারের ছেলে। তাঁর স্ত্রী ও আড়াই বছর বয়সী এক শিশুসন্তান রয়েছে।

থানা-পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ ভোরে সড়কের পাশে ফাঁকা মাঠে রক্তাক্ত অবস্থায় একটি লাশ দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন। পাশেই একটি সেতুর সঙ্গে একই গ্রামের ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় বেঁধে রাখা হয়েছিল। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি খুলে বলেন তিনি।

ভ্যানচালকের বরাত দিয়ে রনকাইল গ্রামের বাসিন্দা ও প্রতিবেশী কাজী শাহীন বলেন, উৎপল সরকার ব্যাটারিচালিত ভ্যানে করে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে মাছ কিনতে যাচ্ছিলেন। পথে অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চার ব্যক্তি দেশীয় অস্ত্রের মুখে ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে ব্রিজের রেলিংয়ে বেঁধে ফেলে। তারা উৎপলের সঙ্গে থাকা টাকাপয়সা লুট করে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সালথা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কে এম মারুফ হাসান রাসেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুই থেকে তিনজন দুর্বৃত্ত ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে এটাকে ডাকাতি বলা যায় না। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষে মূল কারণ বলা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত