Ajker Patrika

হিট অফিসার বুশরা কি পারবেন ঢাকাকে শীতল করতে

আপডেট : ১২ জুলাই ২০২৩, ১৬: ৪০
হিট অফিসার বুশরা কি পারবেন ঢাকাকে শীতল করতে

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে রেকর্ড তাপমাত্রার সঙ্গে লড়াই করা বাংলাদেশের রাজধানীতে কোটি মানুষের ত্রাণকর্তা হতে এসেছেন নতুন এক হিট অফিসার। আশা করা হচ্ছে—এই নগরীর বাসিন্দাদের শীতল রাখার জন্য শৈশবের হারানো লেক, জলাশয় আর গাছপালা ফিরিয়ে আনবেন তিনি। 

গত এপ্রিলেই ঢাকার তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছিল; যা কিনা কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। গণমাধ্যমের তথ্যমতে, এমন গরমে নগরীতে অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। জলবাহিত রোগের কারণে হাসপাতালগুলোতে উপচে পড়েছিল রোগী। 

বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বাংলাদেশ ও ভারতের ক্ষেত্রে অন্তত ৩০ গুণ বেশি তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এ ছাড়া ইইউর কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে গত জুনকে সবচেয়ে উষ্ণতম মাস হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। 

চলতি বছর ঢাকায় তাপপ্রবাহের প্রকৃত অবস্থা প্রাপ্ত তথ্যের চেয়েও অনেক বেশি গুরুতর ছিল বলে মনে করেন অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু গবেষক ইমরান হোসেন। 

এ অবস্থায় ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশন দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিতদের ওপর ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার প্রভাব সমন্বয় করতেই সাবেক সমাজকল্যাণ নির্বাহী বুশরা আফরিনকে হিট অফিসার হিসেবে নিযুক্ত করেছে। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বুশরাই প্রথম এ ধরনের পদে অভিষিক্ত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক Arsht-Rockefeller Climate Resilience Center-এর সমর্থনে এই নিয়োগ প্রদান করা হয়। সংস্থাটি বিশ্বজুড়ে শহরগুলোর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে কাজ করছে। 

থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে বুশরা আফরিন বলেন, ‘শৈশবে আমার দেখা ঢাকা এখন সম্পূর্ণ আলাদা।’ 

তিনি বলেন, ‘শহরটি সেভাবে গড়ে ওঠেনি। একসময় এখানে প্রচুর পুকুর আর জলাশয় ছিল, গাছ ছিল সর্বত্র।’ 

তাপমাত্রার বড় ভুক্তভোগী দরিদ্ররা

 ২৯ বছর বয়সী হিট অফিসার বুশরার আরেকটি পরিচয় হলো তিনি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামে মেয়ে। এ জন্য তাঁর নিয়োগ নিয়ে সমালোচকেরা প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁরা দাবি করছেন, এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পদে বুশরার অভিজ্ঞতা বা দক্ষতার অভাব রয়েছে। 

বুশরা এর আগে তাঁর বাবার মালিকানাধীন একটি গার্মেন্টস ব্যবসা এবং খালার পরিচালিত একটি দাতব্য ফাউন্ডেশনে সামাজিক কল্যাণ নির্বাহী হিসেবে কাজ করেছিলেন। তিনি চান পারিবারিক সম্পর্কের ভিত্তিতে যেন কেউ তাঁকে চাকরির অযোগ্য না ভাবে। 

বুশরা বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই কাজ করছি। এটি আমাকে জলবায়ু পরিবর্তনের বহুমুখী প্রভাব সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা ও অন্তর্দৃষ্টির সুযোগ করে দিয়েছে।’ 

দুই মাস আগে নিয়োগের পর থেকে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, উন্নয়ন সংস্থা ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর সঙ্গে একের পর এক বৈঠক করছেন বুশরা। 

তিনি দাবি করেন, ঢাকার কালাচানপুরের মতো আশপাশের দরিদ্র এলাকগুলোতেই বেশি ফোকাস করবেন। কারণ এসব এলাকার বেশির ভাগ মানুষের শীতাতপযন্ত্র ব্যবহারের সামর্থ্য নেই। বিশেষজ্ঞরাও মনে করেন, শহুরে দরিদ্ররা ঘরের বাইরে গিয়ে কাজ করেন। গরমে তাই সন্তানসহ মা, বয়স্ক ও শিশুরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 

ঢাকায় তাপ সম্পর্কিত ঝুঁকি নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছেন সায়মা বীথি নামে ২৬ বছর বয়সী রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির এক কর্মী। তিনি জানান, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোর টিনশেড ঘরে দরিদ্ররা বাস করেন। সেখানে অসহনীয় গরম অনুভূত হয় এবং বিদ্যুদ্বিভ্রাটে অনেক সময় ফ্যান না চলার কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায়। এ ছাড়া বিশুদ্ধ পানি ও সাশ্রয়ী মূল্যে সেবা না পাওয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকিও বেড়ে যায়। 

হিট অফিসার বুশরা জানিয়েছেন, নগর কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে ১০০টি পানির বুথ স্থাপন করেছে, যেন মানুষ সহজে পানি পান করতে পারে। বর্তমানে তিনি একটি মানচিত্র তৈরির কাজ করছেন, যেন তাপমাত্রা বাড়লে পিপাসার্ত মানুষ সহজেই বুঝতে পারেন তাঁকে কোথায় যেতে হবে। 

বুশরার অন্যান্য পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে—পানিসহ শীতল অঞ্চল, পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল এবং ছায়াযুক্ত বসার জায়গা স্থাপনের মতো কিছু বিষয়। 

এদিকে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে মানুষকে রক্ষার পাশাপাশি শহরগুলোকে শীতল রাখার জন্য আরও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা নেওয়ারও আহ্বান জানাচ্ছেন পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে—ঢাকায় পার্ক, পুকুর, খাল ও নদীগুলোর মতো সবুজ স্থান দ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তাপ আটকে পড়ছে। বলা হয়েছে, ঢাকায় বর্তমানে সবুজ জায়গা মাত্র ৭ শতাংশ আর জলাশয় রয়েছে ৩ শতাংশেরও কম। 

এসএম ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী আহসান বলেন, ‘নগর কর্তৃপক্ষের উচিত পার্ক ও জলাশয়ের মতো অত্যাবশ্যক অবকাঠামো নিয়ে ভাবা। এগুলো শহরকে শীতল এবং বাসযোগ্য রাখে। যদিও ঢাকা দক্ষিণ অংশের কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি একটি রাস্তা প্রশস্ত করতে পরিবেশ কর্মীদের প্রতিবাদ উপেক্ষা করেই শত শত গাছ কেটে ফেলেছে।’ 

তবে ঢাকা উত্তরের কর্তৃপক্ষ গাছ লাগানোর এবং পার্ক তৈরি করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে এবং যারা ছাদে বাগান করবে তাদের প্রণোদনারও পরিকল্পনা করেছে। 

বুশরা বলেন, সবুজ বেষ্টনী এবং শহুরে বন নগরীতে ‘শীতল জোন’ গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। 

পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ

প্রতিবেশী ভারতে বিভিন্ন শহর, জেলা এবং রাজ্যগুলোর দ্বারা গৃহীত অর্ধশতাধিক তাপ প্রতিরোধক কর্ম পরিকল্পনা দেখা গেছে। 

দিল্লিভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক ‘সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ’-এর ফেলো আদিত্য ভ্যালিয়াথান পিল্লাই বলেন, ‘তাপ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সরকারি বিভাগকে সুশীল সমাজ এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে একত্রে কাজ করতে হবে। আর ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে এ ধরনের প্রচেষ্টাকে বাস্তবায়ন করতে পারেন একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।’ 

বাংলাদেশে তাপমাত্রার ঝুঁকি কমানোর জন্য কাজ করছে বেশ কয়েকটি দল। এর মধ্যে আইসিএলইআই নামে একটি আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি জুবায়ের রশিদ জানিয়েছেন, তাঁরা টেকসই উন্নয়নের প্রচার করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে কাজ করছেন। 

এদিকে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জার্মান ও ডেনিশ রেডক্রসের সঙ্গে এক হয়ে তাপ মোকাবিলার আরও ভালো উপায় খুঁজে বের করতে শহুরে শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে কাজ করছে। 

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্টের জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার পরিচালক এম এ হালিম জানান, তাঁরা ঝুঁকিপূর্ণ এমন পরিবারগুলোকে স্বাস্থ্যসেবা এবং নগদ অনুদান প্রদান করবেন, যাঁরা গরমের কারণে আয় থেকে বঞ্চিত হন এবং হাসপাতালের ব্যায় বহন করতে পারেন না। 

বিভিন্ন ডেটা সহায়তার মাধ্যমে এ ধরনের সংস্থাই সরকারি বিভিন্ন প্রচেষ্টার পরিপূরক হতে পারে বলে মত দিয়েছিলেন পিল্লাই। 

আর বুশরাও বলেছিলেন—নগর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে সক্ষম করা তার অগ্রাধিকারে আছে। 

নতুন হিট অফিসার বলেন, ‘সর্বশেষ লক্ষ্য হলো—হস্তক্ষেপগুলোকে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই করা এবং যাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তাদের সাহায্য করা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরিশালের ঐতিহ্যবাহী বিবির পুকুরে ভেসে উঠছে মরা মাছ, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
বিবির পুকুরে ভাসছে মরা মাছ। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিবির পুকুরে ভাসছে মরা মাছ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশাল নগরীর ঐতিহ্যবাহী বিবির পুকুরে ভেসে উঠেছে বিভিন্ন জাতের মরা মাছ। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পুকুরটিতে এই মরা মাছ ভাসতে দেখা যায়। স্থানীয়রা বলছেন, প্রায়ই পুকুরটিতে মাছ মরে ভেসে ওঠে। এতে চারপাশে পচা-গলা মাছের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। পুকুরপাড় দিয়ে নাক চেপে চলাচল করতে হয়। পরিবেশবাদীরা মনে করছেন, বাণিজ্যিকভাবে পুকুরটিতে মাছ চাষ করায় বিভিন্ন সময় মাছ মরার ঘটনা ঘটছে। এতে পুকুরের পানিতে দূষণ ঘটছে। দুর্গন্ধে চারপাশের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।

বিবির পুকুরের সঙ্গে অতীতে কীর্তনখোলা নদীর সংযোগ ছিল। বর্তমানে নদী থেকে পানিপ্রবাহ বন্ধ থাকাসহ ময়লা ফেলার কারণে পানি নষ্ট হয়ে গেছে। নীল রং ধারণ করা পানিতে একধরনের স্তর পড়ে গেছে।

জানা গেছে, বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) তত্ত্বাবধানে থাকা বিবির পুকুরটি ইজারা নিয়ে মাছচাষিরা বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করেন। বিভিন্ন সময় সেই মাছ মরে পচে ভেসে উঠে। এতে দুর্গন্ধে পুকুরপাড়ে আসা বিনোদনপ্রেমী ও পথচারীদের টেকা দায় হয়ে পড়ে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা বাহাউদ্দিন গোলাপ বলেন, পুকুরপাড়ে এসে মরা মাছের গন্ধে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। দ্রুত মরা মাছ অপসারণ করে পুকুরটির পানিদূষণ রোধে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বরিশালের সমন্বয়ক রফিকুল আলম বলেন, নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্পটে বিবির পুকুরটির অবস্থান। সেখানে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করায় নানা সময় মাছ মরে ভেসে উঠছে। এতে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। হয়তো পুকুরের পানির মান খারাপ হয়ে গেছে। সিটি করপোরেশনকে উচিত হবে, এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।

পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশালের পরিদর্শক রকিব উদ্দিন বলেন, বিবির পুকুরের পানিতে অক্সিজেন কমে গেছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পানির মান দেখতে হবে। তিনি বলেন, তাঁরা বিভিন্ন পুকুর, জলাশয় এবং নদীর পানির মানমাত্রা পরীক্ষা করেন। বিবির পুকুরের পরিস্থিতি পরিবেশ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী বলেন, মরা মাছ দ্রুত অপসারণের জন্য ইজারাদারকে বলা হচ্ছে। যদিও তাঁরা পুকুরের পানি দূষণ ঠেকাতে কিছু অংশ জাল দিয়ে আটকে দিয়েছেন। কিন্তু তাতে কাজ না হলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, বিবির পুকুর বরিশাল নগরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী জলাশয়। উনিশ শতকে জনসাধারণের জলকষ্ট দূর করতে জিন্নাত বিবি নামে এক মুসলিম নারীর উদ্যোগে পুকুরটি খনন করা হয়েছিল। প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো এই পুকুরটি সদর রোডের পূর্ব পাশে অবস্থিত এবং এটি বরিশাল নগরের সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি এখন আকর্ষণীয় বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঋণমুক্তির স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন সিয়াম, নিভে গেলেন হাতবোমায়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
মগবাজার ককটেল বিস্ফোরণে নিহত সিয়াম মজুমদার (২১)। ছবি: সংগৃহীত
মগবাজার ককটেল বিস্ফোরণে নিহত সিয়াম মজুমদার (২১)। ছবি: সংগৃহীত

পরিবারের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য ছোটবেলা থেকেই চেষ্টা করেছেন সিয়াম মজুমদার (২১)। তাই চার বছর আগে ঋণগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে খুলনা থেকে ঢাকায় আসেন তিনি। নিউ ইস্কাটনের একটি মোটরকার ডেকোরেশন দোকানে কাজ করে পরিবারকে সহায়তাও করতেন তিনি। ঋণ পরিশোধের পর দেশের বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনাও ছিল তাঁর।

কিন্তু গতকাল বুধবার সন্ধ্যার পর মগবাজার ফ্লাইওভার থেকে ছোড়া ককটেলের বিস্ফোরণে সিয়ামের সেই স্বপ্ন থেমে যায়। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ককটেলটি ওপর থেকে এসে তাঁর মাথায় লাগে।

সিয়ামের পরিবার জানায়, ঢাকায় এসে রিকশা চালানো শুরু করেন তাঁর বাবা আলী আকবর মজুমদার। মা সিজু বেগম বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কাজ নেন। ছোট ভাই সেজান মজুমদারও ইস্কাটন এলাকায় একটি গাড়ি ডেকোরেশনের দোকানে কাজ করেন। পরিবারের সবাই মিলে চেষ্টা করছিলেন ঋণমুক্ত হওয়ার।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নিউ ইস্কাটনের দুই হাজার গলির ভাড়া বাসায় গিয়ে দেখা যায়, শোকে ভেঙে পড়েছেন সিয়ামের মা সিজু বেগম। বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, ঢাকায় এসে তাঁদের সব শেষ হয়ে গেছে। ছেলের হত্যার সুষ্ঠু বিচার চান তিনি।

ছোট ভাই সেজান মজুমদার বলেন, পরিবারের আর্থিক সংকট কাটিয়ে ভাই বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ এই মৃত্যু পুরো পরিবারকে নিঃস্ব করে দিয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে আইনি প্রক্রিয়া শেষে ছেলের মরদেহ নিতে গিয়ে বাবা আলী আকবর মজুমদার বলেন, ভাগ্য বদলাতে ঢাকায় এসে ছেলেকে হারাতে হবে—এমনটা জানলে তিনি কখনোই ঢাকায় আসতেন না।

ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগ জানায়, গতকাল সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টা ১০ মিনিটে মগবাজার ফ্লাইওভার থেকে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীদের ছোড়া বিস্ফোরকদ্রব্যের আঘাতে সিয়াম মজুমদার নিহত হন। ঘটনার সময় তিনি মগবাজার-নিউ ইস্কাটন সড়কে কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

ঘটনাস্থলের চা-দোকানি মো. ফারুক আজ বিকেলে বলেন, চা বানানোর সময় বিকট শব্দ হয়। পরে দেখা যায়, সিয়াম মাটিতে পড়ে আছেন, মাথা থেকে রক্ত ঝরছে।

এ ঘটনায় সিয়ামের বাবা হাতিরঝিল থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন। হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মর্তুজা বলেন, এখনো কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। জড়িতদের চিহ্নিত করতে তদন্ত চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাস্টার্সের সনদ জাল: কলেজের সভাপতির পদ হারালেন সবুজ খাঁন

ভোলা প্রতিনিধি
মো. সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন। ছবি: সংগৃহীত
মো. সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন। ছবি: সংগৃহীত

‎মাস্টার্সের সনদ জাল প্রমাণিত হওয়ায় ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতির পদ হারালেন মো. সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সবুজ খাঁনের সভাপতির পদ বাতিল করে নতুন সভাপতি মনোনয়নের নির্দেশ দিয়েছে।‎

‎মো. সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন দক্ষিণ আইচা থানাধীন চরমানিকা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. আলী মিয়ার ছেলে।‎

স্থানীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, সবুজ খাঁন চলতি বছরের ২০ এপ্রিল ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে প্রাপ্ত মাস্টার্স ডিগ্রির সনদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে দক্ষিণ আইচা কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতির দায়িত্ব েনন। তবে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলে গত ১ নভেম্বর জনৈক ব্যক্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ সনদ যাচাই কার্যক্রম শুরু করে।‎

‎সূত্র আরও জানায়, যাচাই শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. এ কে এম শামসুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সবুজ খাঁনের দাখিল করা সনদে কোনো ক্রমিক নম্বর নেই, কোর্স কোডে অসংগতি রয়েছে এবং স্বাক্ষর ও তারিখেও গরমিল পাওয়া গেছে। এসব কারণে সনদ দুটিকে জাল হিসেবে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।‎

‎বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে তা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরে আসে। পরে গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে কলেজ পরিদর্শক মো. আব্দুল হাই সিদ্দিক সরকার স্বাক্ষরিত এক লিখিত নির্দেশনায় দক্ষিণ আইচা কলেজের অধ্যক্ষকে অবহিত করা হয়। সেই নির্দেশনায় বলা হয়, মো. সিরাজুল ইসলামের মাস্টার্স সনদ জাল প্রমাণিত হওয়ায় তাঁর সভাপতির দায়িত্ব আর বৈধ নয়। ফলে শূন্য ঘোষিত পদে অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য মাস্টার্স ডিগ্রিধারী যোগ্য তিনজন প্রার্থীর নাম শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।‎

‎এই আদেশ প্রকাশের পর কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা ও প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।‎

‎কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতির পদ থেকে সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁনের অব্যাহতিপত্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেইলে পাওয়ার কথা স্বীকার করে দক্ষিণ আইচা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, কলেজের সভাপতির সঙ্গে আলাপ করে এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমন একটি কথা শুনেছি। এখনো অফিশিয়ালি কোনো চিঠি পাইনি। তবে আমি এর প্রতিবাদ করব। প্রয়োজনে আইনি লড়াই করব।’ তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার বলেও জানান সবুজ খাঁন।

সবুজ খাঁন নিজেকে থানা বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচয় দিলেও দলের কোনো সাংগঠনিক পদে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চেক ডিজঅনারের মামলা: ফরিদপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কয়েদির মৃত্যু

ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ফরিদপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক কয়েদি মারা গেছে। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ২৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তিনি কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রিজন সেলে স্থানান্তর করা হয়।

ওই কয়েদির নাম বিমল কুমার দাস (৬২)। কয়েদি নম্বর ২৫২৫। তিনি মাদারীপুর সদর উপজেলার কদমতলী আমিরাবাদ গ্রামের গৌরাঙ্গ চন্দ্র দাসের ছেলে। তিনি একটি চেক ডিজঅনার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে সাজা ভোগ করছিলেন।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে সুরতহাল করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুরের জেল সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, একটি চেক ডিজঅনার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে তিনি কারাগারে সাজা ভোগ করছিলেন। তিনি মাদারীপুর কারাগারে ছিলেন। ওই হাজতি ডায়াবেটিসসহ বয়সের বিভিন্ন রোগে  ভুগছিলেন। মাদারীপুর কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়ায় ২৩ ডিসেম্বর তাঁকে মাদারীপুর কারাগার থেকে ফরিদপুর কারাগারে আনা হয়। ফরিদপুরে আসামাত্রই তাঁকে হাসপাতালের প্রিজন সেলে স্থানান্তর করা হয়।

জেল সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, আগামীকাল শুক্রবার (আজ) সকালে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত