Ajker Patrika

থ্রিলারে আগ্রহ তারুণ্যের

শরীফ নাসরুল্লাহ, ঢাকা
বাবার সঙ্গে অমর একুশে বইমেলায় আসা শিশু স্টলে খুঁজছে পছন্দের বই। গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাবার সঙ্গে অমর একুশে বইমেলায় আসা শিশু স্টলে খুঁজছে পছন্দের বই। গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাতিঘর প্রকাশনীর প্যাভিলিয়নের সামনে বেশ ভিড়। বই কেনার পাশাপাশি জটলাটা লেখক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনকে ঘিরে। অটোগ্রাফ আর সেলফি শিকারিদের কবলে পড়েছিলেন তিনি। একের পর এক নাম সই আর সেলফির আবদার মেটানো থেকে সাময়িক বিরতি নিয়ে কথা বললেন তিনি। জানালেন, বইমেলার শেষ দিকে কালই প্রথম মেলায় এসেছেন। এবার তাঁর দুটি বই এসেছে— ‘জুলাইর গল্প’ এবং আরেকটি থ্রিলার ‘দ্য ভিঞ্চি ক্লাব’। থ্রিলার বইটির কাহিনি তাঁর মাথায় আসে বছর পনেরো আগে। এত দিন পর তা বই হয়ে বাজারে এল।

থ্রিলার অর্থাৎ রোমাঞ্চ উপন্যাস ঘিরে তারুণ্যের উন্মাদনা চোখে পড়ে এবারের মেলার প্রথম থেকেই। শেষ দিকে এসেও তারুণ্যের আগ্রহের দিক থেকে এগিয়ে আছে জনপ্রিয় সাহিত্যের এ ধারা। বিভিন্ন প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মীদের ভাষ্য তা-ই বলে।

আফসার ব্রাদার্সের বিক্রয়কর্মী সাদিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের থ্রিলার আর সায়েন্স ফিকশন বেশি চলছে। মেলার প্রথম থেকেই তরুণেরা থ্রিলার, হরর এগুলো চাইছেন।’

মৌলিক কাহিনি হিসেবে মোসাদ্দেক মিনহাজের ক্রাইম থ্রিলার ‘নিঃশব্দ ঘাতক’ এবং কাজী রাহনুমা নূরের অনুবাদে রুথ ওয়্যারের ‘দ্য উইম্যান ইন কেবিন টেন’ বেশি চলছে শব্দশৈলী থেকে। শব্দশৈলীর বিক্রয়কর্মী আবু সুফিয়ান বলেন, বয়সভেদে প্রায় সব শ্রেণির পাঠকই কিনছেন থ্রিলার। তরুণেরা বেশি।

ইত্যাদি প্রকাশনের বিক্রয়কর্মী নাফিদ চৌধুরীও জানালেন, টিন এজ, ‘জেন-জিদের’ থ্রিলারে আকর্ষণ বেশি। প্রচলিত অন্যান্য উপন্যাসের পরই চলছে থ্রিলার। ইত্যাদি বের করেছে জামশেদ নাজিমের ‘মৃত্যু কখনো কখনো জরুরি হয়’ এবং সোহানী শিফার ক্রাইম থ্রিলার ‘৮৬ জনসন রোড’।

গতকাল মেলায় ভিড় ছিল মোটামুটি। তবে অনন্যা প্রকাশনীর কর্ণধার মনিরুল হকও কাল বললেন, ‘প্রচুর লোক এলেও পাঠক-ক্রেতা কম। আর এত প্রকাশকও কোথা থেকে এল বুঝতে পারছি না। বিক্রি কম। গত বছরের তুলনায় অর্ধেক।’

নতুন বইয়ের খোঁজে

চিত্রশিল্পী,লেখক ধ্রুব এষের নিজের জীবনকথা ‘ধ্রুব সত্য ধ্রুব মিথ্যা’ বেরিয়েছে বিদ্যাপ্রকাশ থেকে। বইটি নিয়ে লেখকের ভাষ্য: ‘আত্মজীবনী আমি লিখব না। বেয়াদবি হয়ে যাবে। তবে এই বইয়ের লেখাগুলো নিশ্চয় আমার আত্মজীবনীরই অংশ।’

লোকসংগীতের অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছেন এমন কথা-সুরের সাধককে নিয়ে তপন বাগচীর বই ‘লোকসংগীতের সতেরো সারথি’ এনেছে কথাপ্রকাশ। এই শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন অশ্বিনী গোসাঁই, মিরাশউদ্দিন, আবদুল খালেক দেওয়ান, আবদুল হাই মাশরেকী, বিজয় সরকার, হেমাঙ্গ বিশ্বাস, মাতাল রাজ্জাক, কছিমউদ্দিন, ক্বারী আমীরউদ্দিন প্রমুখ।

গৎবাঁধা নির্বাচনকেন্দ্রিক গণতন্ত্রের দোষত্রুটি ও প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই নিয়ে নূরুল কবীরের নিবন্ধের সংকলন ‘নৈর্বাচনিক স্বৈরতন্ত্র ও গণতন্ত্রের সংগ্রাম’ বইটির বর্ধিত কলেবরের দ্বিতীয় সংস্করণ বেরিয়েছে। এনেছে পাঠক সমাবেশ।

বাংলা একাডেমি বলছে, গতকাল মেলায় বই এসেছে ১০১টি। এ পর্যন্ত আসা মোট নতুন বইয়ের সংখ্যা ২৬২২টি।

আয়োজন

মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘গণঅভ্যুত্থান, গ্রাফিতি এবং অপরাপর ভিজুয়াল কালচার’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মুনেম ওয়াসিফ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন তাসলিমা আখতার এবং কামার আহমাদ সাইমন। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম।

মুনেম ওয়াসেফ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের গ্রাফিতিগুলো থেকে বোঝা যায়, গত এক দশকের বেশি সময় আমরা যে ক্ষমতার জাঁতাকলের মধ্যে বসবাস করেছি, তরুণ প্রজন্ম সেই ক্ষমতার কর্তৃত্বকে ছুড়ে ফেলে দিতে চেয়েছে। বেশির ভাগ গ্রাফিতি গতানুগতিক শিল্পধারা অনুসরণ করেনি। এ জন্যই সেগুলো এত অসাধারণ।

অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের গ্রাফিতিগুলোর শিল্পগত বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি আরও নানামাত্রিক আলোচনা হতে পারে। এর যে ব্যাখ্যাগত সম্ভাবনা দাঁড়াবে তা হবে অসীম ও অসামান্য।

‘লেখক বলছি’ মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি ও সম্পাদক শওকত হোসেন এবং কবি শামীমা চৌধুরী। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন মতিন বৈরাগী, শহীদুল্লাহ ফরায়জী, সুহিতা সুলতানা, শওকত হোসেন, কামাল মুস্তাফা এবং মীর তারিকুল ইসলাম। গতকাল ছিল আবৃত্তি সংগঠন ‘নজরুল আবৃত্তি সংসদ’ এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘নটনন্দন’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী রোজী আক্তার শেফালী, অন্তর সরকার, মনীন্দ্র দাস, ফকির আবুল হাশেম, শাহ আলম দেওয়ান, দেলোয়ার হোসেন বয়াতি, শিপ্রা ঘোষ, সনৎ কুমার বিশ্বাস, লুৎফর রহমান, রবিউল ইসলাম, মিন্টু বাউল, বিজন চন্দ্র রায় এবং আবদুল আউয়াল।

গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার ২০২৫

অমর একুশে বইমেলা ২০২৫ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি পরিচালিত চিত্তরঞ্জন সাহা, মুনীর চৌধুরী, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই ও শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করা হয় গতকাল।

২০২৪ সালে বিষয়ের বিচারে সর্বাধিকসংখ্যক মানসম্মত বই প্রকাশের জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কথাপ্রকাশ পাচ্ছে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০২৫।

২০২৪ সালে প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে গুণমান ও শৈল্পিক বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পাঠক সমাবেশ (প্লেটো: জীবন ও দর্শন—আমিনুল ইসলাম ভুইয়া), ঐতিহ্য (ভাষা শহীদ আবুল বরকত: নেপথ্য-কথা—বদরুদ্দোজা হারুন) এবং কথাপ্রকাশকে (গোরস্তানের পদ্য : স্মৃতি ও জীবনস্বপ্ন—সিরাজ সালেকীন) মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৫ দেওয়া হবে।

রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার পাচ্ছে কাকাতুয়া। ২০২৪ সালে গুণমান বিচারে সর্বাধিকসংখ্যক শিশুতোষ বই প্রকাশের জন্য এটি দেওয়া হয়।

স্টলের অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মাকতাবাতুল ইসলাম (১ ইউনিট); গ্রন্থিক প্রকাশন (২-৪ ইউনিট) ও বাতিঘর (প্যাভেলিয়ন)-কে কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৫ দেওয়া হবে। বাংলা একাডেমি জানিয়েছে মেলার শেষ দিন এই পুরস্কার সংশ্লিষ্টদের হাতে তুলে দেওয়া হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরিশালের ঐতিহ্যবাহী বিবির পুকুরে ভেসে উঠছে মরা মাছ, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
বিবির পুকুরে ভাসছে মরা মাছ। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিবির পুকুরে ভাসছে মরা মাছ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশাল নগরীর ঐতিহ্যবাহী বিবির পুকুরে ভেসে উঠেছে বিভিন্ন জাতের মরা মাছ। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পুকুরটিতে এই মরা মাছ ভাসতে দেখা যায়। স্থানীয়রা বলছেন, প্রায়ই পুকুরটিতে মাছ মরে ভেসে ওঠে। এতে চারপাশে পচা-গলা মাছের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। পুকুরপাড় দিয়ে নাক চেপে চলাচল করতে হয়। পরিবেশবাদীরা মনে করছেন, বাণিজ্যিকভাবে পুকুরটিতে মাছ চাষ করায় বিভিন্ন সময় মাছ মরার ঘটনা ঘটছে। এতে পুকুরের পানিতে দূষণ ঘটছে। দুর্গন্ধে চারপাশের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।

বিবির পুকুরের সঙ্গে অতীতে কীর্তনখোলা নদীর সংযোগ ছিল। বর্তমানে নদী থেকে পানিপ্রবাহ বন্ধ থাকাসহ ময়লা ফেলার কারণে পানি নষ্ট হয়ে গেছে। নীল রং ধারণ করা পানিতে একধরনের স্তর পড়ে গেছে।

জানা গেছে, বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) তত্ত্বাবধানে থাকা বিবির পুকুরটি ইজারা নিয়ে মাছচাষিরা বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করেন। বিভিন্ন সময় সেই মাছ মরে পচে ভেসে উঠে। এতে দুর্গন্ধে পুকুরপাড়ে আসা বিনোদনপ্রেমী ও পথচারীদের টেকা দায় হয়ে পড়ে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা বাহাউদ্দিন গোলাপ বলেন, পুকুরপাড়ে এসে মরা মাছের গন্ধে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। দ্রুত মরা মাছ অপসারণ করে পুকুরটির পানিদূষণ রোধে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বরিশালের সমন্বয়ক রফিকুল আলম বলেন, নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্পটে বিবির পুকুরটির অবস্থান। সেখানে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করায় নানা সময় মাছ মরে ভেসে উঠছে। এতে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। হয়তো পুকুরের পানির মান খারাপ হয়ে গেছে। সিটি করপোরেশনকে উচিত হবে, এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।

পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশালের পরিদর্শক রকিব উদ্দিন বলেন, বিবির পুকুরের পানিতে অক্সিজেন কমে গেছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পানির মান দেখতে হবে। তিনি বলেন, তাঁরা বিভিন্ন পুকুর, জলাশয় এবং নদীর পানির মানমাত্রা পরীক্ষা করেন। বিবির পুকুরের পরিস্থিতি পরিবেশ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী বলেন, মরা মাছ দ্রুত অপসারণের জন্য ইজারাদারকে বলা হচ্ছে। যদিও তাঁরা পুকুরের পানি দূষণ ঠেকাতে কিছু অংশ জাল দিয়ে আটকে দিয়েছেন। কিন্তু তাতে কাজ না হলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, বিবির পুকুর বরিশাল নগরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী জলাশয়। উনিশ শতকে জনসাধারণের জলকষ্ট দূর করতে জিন্নাত বিবি নামে এক মুসলিম নারীর উদ্যোগে পুকুরটি খনন করা হয়েছিল। প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো এই পুকুরটি সদর রোডের পূর্ব পাশে অবস্থিত এবং এটি বরিশাল নগরের সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি এখন আকর্ষণীয় বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঋণমুক্তির স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন সিয়াম, নিভে গেলেন হাতবোমায়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
মগবাজার ককটেল বিস্ফোরণে নিহত সিয়াম মজুমদার (২১)। ছবি: সংগৃহীত
মগবাজার ককটেল বিস্ফোরণে নিহত সিয়াম মজুমদার (২১)। ছবি: সংগৃহীত

পরিবারের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য ছোটবেলা থেকেই চেষ্টা করেছেন সিয়াম মজুমদার (২১)। তাই চার বছর আগে ঋণগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে খুলনা থেকে ঢাকায় আসেন তিনি। নিউ ইস্কাটনের একটি মোটরকার ডেকোরেশন দোকানে কাজ করে পরিবারকে সহায়তাও করতেন তিনি। ঋণ পরিশোধের পর দেশের বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনাও ছিল তাঁর।

কিন্তু গতকাল বুধবার সন্ধ্যার পর মগবাজার ফ্লাইওভার থেকে ছোড়া ককটেলের বিস্ফোরণে সিয়ামের সেই স্বপ্ন থেমে যায়। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ককটেলটি ওপর থেকে এসে তাঁর মাথায় লাগে।

সিয়ামের পরিবার জানায়, ঢাকায় এসে রিকশা চালানো শুরু করেন তাঁর বাবা আলী আকবর মজুমদার। মা সিজু বেগম বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কাজ নেন। ছোট ভাই সেজান মজুমদারও ইস্কাটন এলাকায় একটি গাড়ি ডেকোরেশনের দোকানে কাজ করেন। পরিবারের সবাই মিলে চেষ্টা করছিলেন ঋণমুক্ত হওয়ার।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নিউ ইস্কাটনের দুই হাজার গলির ভাড়া বাসায় গিয়ে দেখা যায়, শোকে ভেঙে পড়েছেন সিয়ামের মা সিজু বেগম। বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, ঢাকায় এসে তাঁদের সব শেষ হয়ে গেছে। ছেলের হত্যার সুষ্ঠু বিচার চান তিনি।

ছোট ভাই সেজান মজুমদার বলেন, পরিবারের আর্থিক সংকট কাটিয়ে ভাই বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ এই মৃত্যু পুরো পরিবারকে নিঃস্ব করে দিয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে আইনি প্রক্রিয়া শেষে ছেলের মরদেহ নিতে গিয়ে বাবা আলী আকবর মজুমদার বলেন, ভাগ্য বদলাতে ঢাকায় এসে ছেলেকে হারাতে হবে—এমনটা জানলে তিনি কখনোই ঢাকায় আসতেন না।

ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগ জানায়, গতকাল সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টা ১০ মিনিটে মগবাজার ফ্লাইওভার থেকে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীদের ছোড়া বিস্ফোরকদ্রব্যের আঘাতে সিয়াম মজুমদার নিহত হন। ঘটনার সময় তিনি মগবাজার-নিউ ইস্কাটন সড়কে কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

ঘটনাস্থলের চা-দোকানি মো. ফারুক আজ বিকেলে বলেন, চা বানানোর সময় বিকট শব্দ হয়। পরে দেখা যায়, সিয়াম মাটিতে পড়ে আছেন, মাথা থেকে রক্ত ঝরছে।

এ ঘটনায় সিয়ামের বাবা হাতিরঝিল থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন। হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মর্তুজা বলেন, এখনো কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। জড়িতদের চিহ্নিত করতে তদন্ত চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাস্টার্সের সনদ জাল: কলেজের সভাপতির পদ হারালেন সবুজ খাঁন

ভোলা প্রতিনিধি
মো. সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন। ছবি: সংগৃহীত
মো. সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন। ছবি: সংগৃহীত

‎মাস্টার্সের সনদ জাল প্রমাণিত হওয়ায় ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতির পদ হারালেন মো. সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সবুজ খাঁনের সভাপতির পদ বাতিল করে নতুন সভাপতি মনোনয়নের নির্দেশ দিয়েছে।‎

‎মো. সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন দক্ষিণ আইচা থানাধীন চরমানিকা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. আলী মিয়ার ছেলে।‎

স্থানীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, সবুজ খাঁন চলতি বছরের ২০ এপ্রিল ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে প্রাপ্ত মাস্টার্স ডিগ্রির সনদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে দক্ষিণ আইচা কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতির দায়িত্ব েনন। তবে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলে গত ১ নভেম্বর জনৈক ব্যক্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ সনদ যাচাই কার্যক্রম শুরু করে।‎

‎সূত্র আরও জানায়, যাচাই শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. এ কে এম শামসুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সবুজ খাঁনের দাখিল করা সনদে কোনো ক্রমিক নম্বর নেই, কোর্স কোডে অসংগতি রয়েছে এবং স্বাক্ষর ও তারিখেও গরমিল পাওয়া গেছে। এসব কারণে সনদ দুটিকে জাল হিসেবে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।‎

‎বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে তা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরে আসে। পরে গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে কলেজ পরিদর্শক মো. আব্দুল হাই সিদ্দিক সরকার স্বাক্ষরিত এক লিখিত নির্দেশনায় দক্ষিণ আইচা কলেজের অধ্যক্ষকে অবহিত করা হয়। সেই নির্দেশনায় বলা হয়, মো. সিরাজুল ইসলামের মাস্টার্স সনদ জাল প্রমাণিত হওয়ায় তাঁর সভাপতির দায়িত্ব আর বৈধ নয়। ফলে শূন্য ঘোষিত পদে অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য মাস্টার্স ডিগ্রিধারী যোগ্য তিনজন প্রার্থীর নাম শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।‎

‎এই আদেশ প্রকাশের পর কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা ও প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।‎

‎কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতির পদ থেকে সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁনের অব্যাহতিপত্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেইলে পাওয়ার কথা স্বীকার করে দক্ষিণ আইচা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, কলেজের সভাপতির সঙ্গে আলাপ করে এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমন একটি কথা শুনেছি। এখনো অফিশিয়ালি কোনো চিঠি পাইনি। তবে আমি এর প্রতিবাদ করব। প্রয়োজনে আইনি লড়াই করব।’ তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার বলেও জানান সবুজ খাঁন।

সবুজ খাঁন নিজেকে থানা বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচয় দিলেও দলের কোনো সাংগঠনিক পদে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চেক ডিজঅনারের মামলা: ফরিদপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কয়েদির মৃত্যু

ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ফরিদপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক কয়েদি মারা গেছে। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ২৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তিনি কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রিজন সেলে স্থানান্তর করা হয়।

ওই কয়েদির নাম বিমল কুমার দাস (৬২)। কয়েদি নম্বর ২৫২৫। তিনি মাদারীপুর সদর উপজেলার কদমতলী আমিরাবাদ গ্রামের গৌরাঙ্গ চন্দ্র দাসের ছেলে। তিনি একটি চেক ডিজঅনার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে সাজা ভোগ করছিলেন।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে সুরতহাল করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুরের জেল সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, একটি চেক ডিজঅনার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে তিনি কারাগারে সাজা ভোগ করছিলেন। তিনি মাদারীপুর কারাগারে ছিলেন। ওই হাজতি ডায়াবেটিসসহ বয়সের বিভিন্ন রোগে  ভুগছিলেন। মাদারীপুর কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়ায় ২৩ ডিসেম্বর তাঁকে মাদারীপুর কারাগার থেকে ফরিদপুর কারাগারে আনা হয়। ফরিদপুরে আসামাত্রই তাঁকে হাসপাতালের প্রিজন সেলে স্থানান্তর করা হয়।

জেল সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, আগামীকাল শুক্রবার (আজ) সকালে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত