Ajker Patrika

আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজে সবদিকে ঘাটতি, শুধু আসন বাড়তি

  • চার শিক্ষাবর্ষে আসন বেড়েছে ৮০ শতাংশ।
  • আইন অনুযায়ী ঘাটতি অন্তত ১০ বিষয়ে।
  • রাজনৈতিক আনুকূল্য পাওয়ার অভিযোগ।
  • অনুমোদন নিয়ে শিক্ষকদের উদ্বেগ।
মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা ও সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ
আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫: ১৪
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকা থেকে ৭০ মাইল দূরে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে ১০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বেসরকারি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়টি। মাত্র দুই বছরের মধ্যে শিক্ষার্থীদের আসন বাড়ে ২০ শতাংশ। এর পর থেকে অব্যাহতভাবে বেড়ে চার শিক্ষাবর্ষের মধ্যেই আসন বৃদ্ধি পায় ৮০ শতাংশ। অথচ সরকারি বিধিবিধান অনুযায়ী মেডিকেল কলেজটির অন্তত ১০টি মৌলিক ঘাটতি রয়েছে।

কলেজটির কর্তৃপক্ষ বরাবর সাবেক সরকারের কাছে যা-ই দাবি করেছে, কার্যত তা-ই পেয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এসবই সম্ভব হয়েছে কলেজটি কিশোরগঞ্জের প্রভাবশালী রাজনীতিক তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের নামে বলে। আওয়ামী লীগের এই নেতা দীর্ঘদিন সংসদ সদস্য এবং স্পিকারও ছিলেন।

প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ নামের চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়টি নিয়মিত পরিদর্শন করেছে সরকারের সংশ্লিষ্ট কমিটি। তবে তাদের প্রতিবেদনে কলেজের ঘাটতি বা ত্রুটিগুলোর খুব কমই তুলে ধরা হয়েছে। পরিণতিতে কলেজ কর্তৃপক্ষের চাহিদামতোই আসন বৃদ্ধি অনুমোদন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

আজ থেকে দুই বছর আগে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ আইন ২০২২ কার্যকর করে সরকার। এ আইনটি কার্যকর হওয়ার আগে বেসরকারি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়গুলো ‘বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা ২০১১ (সংশোধিত)’ অনুযায়ী পরিচালিত হওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল। আইন কার্যকর হওয়ার আগে ২০১১ সালের নীতিমালাও মেনে চলেনি প্রেসিডেন্ট আবদুল হমিদ মেডিকেল কলেজ।

আসন বৃদ্ধিতে রেকর্ড

দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে আসন বৃদ্ধির রেকর্ড করেছে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের নভেম্বরে কলেজটি এমবিবিএস ডিগ্রির জন্য ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন পায়। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ১০টি আসন বৃদ্ধির অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে বাড়ে আরও ১০টি আসন। এর পরের বছর এক ধাপে আসন বাড়ে আরও ২০টি। দেশে বর্তমানে ৬৭টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এগুলোর কোনোটিতেই এত কম সময়ে ৮০ শতাংশ আসন বৃদ্ধির রেকর্ড নেই।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে জানান, সর্বশেষ ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে আসন বাড়িয়ে ৯০টি করা হলে অধিদপ্তর থেকে আপত্তি জানানো হয়। কিন্তু তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতির নামে কলেজ। এখানে কোনো আপত্তি দেওয়া যাবে না।

হাসপাতালের শয্যা ও ভর্তির হারে শর্ত

সর্বশেষ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে কলেজটি পরিদর্শন করে সাত সদস্যের সরকারি পরিদর্শন কমিটি। আইন অনুযায়ী, ৫০ শিক্ষার্থীবিশিষ্ট মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কার্যক্রমের জন্য ১ লাখ বর্গফুট ও হাসপাতাল পরিচালনার জন্য স্বতন্ত্র ভবনে ১ লাখ বর্গফুট ফ্লোর স্পেস থাকতে হবে। তবে আকারের দিক থেকে আবদুল হামিদ কলেজের একাডেমিক ভবনে ৩৮ হাজার ও হাসপাতালে ৯১ হাজার বর্গফুট কম রয়েছে। প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামোসহ হাসপাতালের শয্যায় রোগী ভর্তির হার ৭০ শতাংশ থাকার কথা। তবে তাতে ঘাটতি রয়েছে ৪৭ শতাংশ।

প্রশিক্ষণের জন্য শিক্ষার্থীপ্রতি পাঁচটি শয্যা থাকার কথা। তাতে শয্যাসংখ্যা হবে ৪৫০টি। পরিদর্শন কমিটি শয্যা পেয়েছে মাত্র ২৮৮টি।

কলেজ ভবনেই অন্য স্থাপনা

আইন বলছে, মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরের বেসরকারি মেডিকেল কলেজের জন্য অন্তত চার একর জমিতে স্বতন্ত্র ভবনে কলেজ ও হাসপাতাল হতে হবে।

গত সপ্তাহে ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, তিনতলা হাসপাতাল ভবনের ওপরের তলায় এখনো নির্মাণকাজ চলছে। বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যাও আপাতদৃষ্টিতে বেশ কম দেখা যায়। সাততলাবিশিষ্ট কলেজ ভবনের নিচ থেকে তিনটি তলা পর্যন্ত চলে একাডেমিক কার্যক্রম। চার থেকে ছয়তলা পর্যন্ত ছাত্রী হোস্টেল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সপ্তম তলায় রয়েছে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ নার্সিং ইনস্টিটিউট। অথচ আইন অনুযায়ী, একাডেমিক ভবনে অন্য কার্যক্রম চালানো নিষেধ।

অনুমোদন ও নিবন্ধনের ঘাটতি

প্রতি শিক্ষাবর্ষে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নিবন্ধন থাকার কথা থাকলেও সর্বশেষ নিবন্ধিত শিক্ষাবর্ষটি হলো ২০১৭-১৮। আসনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রথম শিক্ষার্থী ভর্তির পাঁচ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর নিয়মমতো অধিভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। বিএমডিসি প্রতি শিক্ষাবর্ষের অনুমোদন না দিলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ডিগ্রি শেষে ইন্টার্নি করতে পারবেন না। তাঁরা চিকিৎসক হিসেবে নিবন্ধনও পাবেন না।

বিএমডিসির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. লিয়াকত হোসেন আজকের পত্রিকাকে সম্প্রতি এ বিষয়ে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছে। শিগগিরই বিএমডিসি থেকে কলেজটি পরিদর্শনে যাওয়ার কথা রয়েছে। তবে ওই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যে পঞ্চম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষার পর ফলাফলের অপেক্ষায় আছে।’

যা বলছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা

অন্তত পাঁচজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী বলেছেন, একাডেমিক উৎকর্ষের তুলনায় কলেজের কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক যোগসূত্রকে গুরুত্ব দিয়েছে। তবে তাঁদের কেউ নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। মন্তব্যকারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বক্তব্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির মান বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সারির শেষ দিকে। কলেজ কর্তৃপক্ষ ল্যাব উন্নত করা ও শিক্ষক ঘাটতির সমাধানসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে একাডেমিক মানোন্নয়নে চেষ্টা করেনি। প্রতি ১০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও সেখানে ঘাটতি রয়েছে। এসব দিকে মনোযোগ না দিয়ে কর্তৃপক্ষ প্রায় প্রতিবছর আসন বৃদ্ধিতে বেশি মনোযোগ দিয়েছে।

কলেজটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আ ন ম নওশাদ খান সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের শ্যালক। কলেজসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ও এলাকাবাসী মনে করেন, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক গুরুত্ব পাওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের নামে কলেজটির নাম রাখা হয়।

কলেজের একজন শিক্ষক আজকের পত্রিকাকে অনুমোদন নিয়ে তাঁদের উদ্বেগের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা যদি বিএমডিসির অনুমোদন না পায়, তাহলে তারা ইন্টার্নশিপ করতে পারবে না।’

চিকিৎসা শিক্ষা নিয়েই উদ্বেগ

চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে গত দুই দশকে চিকিৎসা শিক্ষার মানকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। মেডিকেল কলেজের সংখ্যা নির্বিচারে বেড়েছে। সার্বিকভাবে বেসরকারি মেডিকেলগুলোর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মান নিম্নমুখী। যথাযথ শিক্ষাদানের জন্য যা প্রয়োজন, সেদিকে নজর দেওয়া হয়নি। এতে মানসম্মত চিকিৎসক তৈরি হচ্ছে না। এতে বাংলাদেশের চিকিৎসকেরা ভবিষ্যতে ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের (ডব্লিউএফএমই) স্বীকৃতি পাবেন না। তাহলে তাঁরা বিশ্বের অন্য কোনো দেশে কাজের সুযোগ ও স্বীকৃতিও পাবেন না।

ডব্লিউএফএমইর সাবেক জ্যেষ্ঠ পরামর্শক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শর্ত বিবেচনা না করে আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজের আসন যেভাবে বাড়ানো হয়েছে, তাতে নিয়মের চরম লঙ্ঘন হয়েছে। প্রায় সব মেডিকেল কলেজের অবস্থা এক। এতে চিকিৎসা শিক্ষার মান খুবই নিচে থাকছে। খুব অল্পসংখ্যক কলেজই মান ধরে রাখতে পেরেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে চিকিৎসা শিক্ষার মান সর্বকালের সর্বনিম্নে রয়েছে।’

কলেজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য

প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অভিযোগের জবাবে বলেছেন, কলেজের সমস্যা অস্বীকার করা যাচ্ছে না। তবে তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে।

অধ্যক্ষ অধ্যাপক নওশাদ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শয্যাসংখ্যা এখন বেড়েছে। তবে শিক্ষার্থী অনুপাতে এখনো কিছু ঘাটতি রয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে তার সমাধান হয়ে যাবে।’

আসন বৃদ্ধিতে রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করেছে কি না এমন প্রশ্নে অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমরা নিজেরা রাজনৈতিক কোনো প্রভাব খাটাইনি। মন্ত্রণালয়ের কাছে আসন বাড়াতে আবেদন করেছি, তারা অনুমতি দিয়েছে। শিক্ষক আগের তুলনায় বেড়েছে। ছাত্রী হোস্টেল সরিয়ে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছি।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বারবার শর্ত পূরণের জন্য বলা হলেও পদক্ষেপ না নেওয়ার বিষয়ে নওশাদ খান বলেন, তাঁদের ‘চেষ্টার ত্রুটি নেই’।

সরকারি কর্তৃপক্ষ যা বললেন

আইন অনুযায়ী, বেসরকারি মেডিকেল বা ডেন্টাল কলেজগুলো প্রতিষ্ঠার পর বিধিবিধান মানছে কি না তা যাচাইয়ে প্রথম পাঁচ বছরে অন্তত একবার পরিদর্শন করবে সরকারি কমিটি। আর প্রথম পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রতি দুই বছরে একবার পরিদর্শন করতে হবে। গত দুটি কমিটির অন্তত তিনজন সদস্য আজকের পত্রিকাকে জানান, তাঁরা আইন অনুযায়ী কাজের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তৎকালীন রাষ্ট্রপতির নামে কলেজটি হওয়ায় এবং ‘ওপরমহলের চাপে’ তারা ‘শক্তভাবে’ প্রতিবেদন তৈরি করতে পারেননি।

স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী এ বিষয়ে বলেন, ‘কমিটির সুপারিশে মন্ত্রণালয় কলেজের আসন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয় বাস্তবায়ন করে। আসন বৃদ্ধি কমিটির সভাপতি থাকেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ওই কলেজটির আসন নিয়ম অনুযায়ী বেড়েছে কি না তা এখন বলতে পারছি না। এ বিষয়ে খোঁজ নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

জেপির মঞ্জুর পর নির্বাচন বর্জন করলেন রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশীদ

প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন তাসনিম জারা

এনসিপিতে আসিফ মাহমুদ, হলেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হারিয়ে যাওয়া কনাই নদ উদ্ধার উদ্‌যাপন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আবদুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ থেকে বাউনিয়া খাল পর্যন্ত ৩ দশমিক ১৮ কিলোমিটার খননের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার হওয়া কনাই নদ। ছবি: আজকের পত্রিকা
আবদুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ থেকে বাউনিয়া খাল পর্যন্ত ৩ দশমিক ১৮ কিলোমিটার খননের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার হওয়া কনাই নদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানীর হারিয়ে যাওয়া কনাই নদ উদ্ধার করে আবারও প্রবাহ ফিরিয়ে এনেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এ উপলক্ষে গতকাল সোমবার দুপুরে উত্তরায় ডিএনসিসি আয়োজন করে ‘হারিয়ে যাওয়া কনাই নদ উদ্ধার উদ্‌যাপন অনুষ্ঠান’।

অনুষ্ঠানে ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘আমরা হারিয়ে যাওয়া কনাই নদ উদ্ধার করে দেখিয়ে দিয়েছি যে চাইলেই ঢাকার ভেতরে ওয়াটারওয়ে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’ তিনি বলেন, ডিএনসিসির পক্ষ থেকে কনাই নদ উদ্ধার করে নৌচলাচল উপযোগী ৯ কিলোমিটার নদে প্রবাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আগে ফিল্ড স্টাডি ও পরে উচ্ছেদ এবং পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে।

উত্তরাবাসীর পক্ষে বক্তব্যে কাজী মোহাম্মদ ফেরদাউস ডিএনসিসির প্রশাসকের এই উদ্যোগকে প্রশংসনীয় উল্লেখ করে হারিয়ে যাওয়া কনাই নদের প্রবাহ ফিরিয়ে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।

পাউবোর বোর্ড সদস্য আমিনুর রসুল বলেন, নতুন করে ৯ কিলোমিটার নৌপথ যুক্ত হলো। এখন এটি রক্ষার দায়িত্ব এলাকাবাসীর।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, ‘আমরা থাইল্যান্ডে ফ্লোটিং মার্কেট দেখতে যাই, অথচ ঢাকার চারপাশের নদ-নদীগুলো উদ্ধার করে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুললে এর চেয়েও সুন্দর পর্যটন এলাকা তৈরি করা সম্ভব।’

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর এ বি এম শামসুল আলমসহ ডিএনসিসির কর্মকর্তারা।

উল্লেখ্য, ঢাকা গ্যাজেটিয়ার এবং ১৯৬০ সালের ঢাকা ম্যাপে রাজধানীর ভেতরে কনাই, নড়াই, দেবদোলাই, জিরানি প্রভৃতি নদ-নদীর অস্তিত্বের উল্লেখ থাকলেও সময়ের ব্যবধানে এসব নদী হারিয়ে যায়। ডিএনসিসির উদ্যোগে আবদুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ থেকে বাউনিয়া খাল পর্যন্ত ৩ দশমিক ১৮ কিলোমিটার নদ খনন কার্যক্রমের মাধ্যমে মোট ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ কনাই নদ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয়দের কাছে নদটি ‘খিদির খাল’ নামে পরিচিত। কনাই নদ আবদুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ থেকে গড়ান চটবাড়ি হয়ে দ্বিগুণ খাল অতিক্রম করে তুরাগ নদে মিলিত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

জেপির মঞ্জুর পর নির্বাচন বর্জন করলেন রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশীদ

প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন তাসনিম জারা

এনসিপিতে আসিফ মাহমুদ, হলেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খাগড়াছড়ির পানছড়ি: নিয়ন্ত্রণহীন অটোরিকশায় তীব্র যানজট, ভোগান্তি

মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান অলি, পানছড়ি (খাগড়াছড়ি) 
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আর ইজিবাইকের ভিড়ে যানজটে ভোগান্তি। যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করানোসহ কোনো নিয়মই মানেন না চালকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আর ইজিবাইকের ভিড়ে যানজটে ভোগান্তি। যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করানোসহ কোনো নিয়মই মানেন না চালকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

খাগড়াছড়ির পানছড়ির বাজারে ঢুকলেই থেমে যায় যানবাহনের গতি। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আর ইজিবাইকের ভিড়ে যানজটে প্রতিদিনই অচল হয়ে পড়ছে সড়ক। অনুমোদনহীন যান, প্রশিক্ষণহীন চালক আর যত্রতত্র পার্কিংয়ে সীমান্তঘেঁষা এই মফস্বল শহরের বাজার এলাকা এখন স্থায়ী যানজটের ফাঁদে বন্দী। এতে শিক্ষার্থী থেকে রোগী, ব্যবসায়ী থেকে কর্মজীবী—সবাই ভোগান্তির শিকার।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে পানছড়ি উপজেলায় এক হাজারের বেশি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। এর মধ্যে চারটি অটোরিকশা সমিতির আওতায় নিবন্ধিত রয়েছে সাত শতাধিক যান। বাকি অটোরিকশাগুলো নিয়মবহির্ভূতভাবে রাস্তায় চলাচল করায় নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

অটোরিকশাচালকদের অনেকেই স্বীকার করেছেন, বিকল্প কর্মসংস্থানের অভাবে তাঁরা এ পেশায় এসেছেন। চালক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘কাজ না থাকায় ইজিবাইক চালাতে বাধ্য হয়েছি। প্রশিক্ষণ না থাকায় অনেকেই নিয়ম না জেনে গাড়ি চালান।’

আরেক চালক তাজুল ইসলাম বলেন, লাইসেন্স, নিবন্ধন ও নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড থাকলে চালকদেরও সুবিধা হতো। সরকার যদি সহজভাবে লাইসেন্সের ব্যবস্থা করে, তাহলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

বাজারের ব্যবসায়ী আবুল খায়ের বলেন, দোকানে পণ্য আনা-নেওয়ায় মারাত্মক সমস্যা হয়। হাটের দিনগুলোতে বাজার এলাকায় চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। পানছড়ি বাজার উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কমল বিকাশ চাকমা জানায়, মাত্র ১০ মিনিটের পথ অটোরিকশার ভিড়ে অনেক সময় আধা ঘণ্টা লেগে যায়। হাটের দিনে বাজার এলাকা দিয়ে যাতায়াত করা খুবই কষ্টকর।

স্থানীয়দের দাবি, অটোরিকশার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, চালকদের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা, নিবন্ধন কার্যকর করা এবং বাজার এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা জোরদার না হলে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঝুঁকি আরও বাড়বে।

জানতে চাইলে পানছড়ি বাজার উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন, অধিকাংশ চালকেরই কোনো প্রশিক্ষণ নেই এবং সড়ক আইন সম্পর্কে ধারণাও সীমিত। যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করানোসহ কোনো নিয়মই তাঁরা মানেন না। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অনুতোষ চাকমা বলেন, পানছড়িতে অটোরিকশার সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা সভায় বারবার বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে। কখনো কখনো জরুরি রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সও যানজটে আটকে থাকে, অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ সময়।

এ বিষয়ে পানছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাজার এলাকায় পুলিশ বক্স থেকে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা, নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড নির্ধারণ এবং অটোরিকশা সমিতির সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে শৃঙ্খলা ফেরাতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। নিয়ম না মানলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

জেপির মঞ্জুর পর নির্বাচন বর্জন করলেন রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশীদ

প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন তাসনিম জারা

এনসিপিতে আসিফ মাহমুদ, হলেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চট্টগ্রামে সংসদ নির্বাচন: তিন আসনে বিএনপির প্রার্থী নিয়ে উত্তেজনা

  • রাউজানে গিয়াস উদ্দিন কাদের ও গোলাম আকবর খোন্দকারকে মনোনয়ন।
  • চন্দনাইশে আ.লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিতি জসিম উদ্দিনকে প্রার্থী।
সবুর শুভ, চট্টগ্রাম    
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম জেলার ১৬টি আসনের মধ্যে তিন আসনে বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন ঘিরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এগুলোর মধ্যে ‘রক্তাক্ত জনপদ’ হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে দীর্ঘদিনের একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও গোলাম আকবর খোন্দকার—দুজনকেই বিএনপির দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। যদিও এই সিদ্ধান্তকে দলীয় কৌশল হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

অপরদিকে চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে বিগত সরকারের সুবিধাভোগী ও আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত জসিম উদ্দিন আহমেদকে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। সাবেক এই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের ব্যবসায়িক সহযোগী হিসেবে থাকারও অভিযোগ তুলেছেন দলের নেতা-কর্মীরা। ফলে জসিম উদ্দিন আহমেদকে মনোনয়ন দেওয়ায় বিএনপির অনেকে এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এ ছাড়া চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন বাঁশখালীর গন্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) থেকে পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক লেয়াকত আলী। এ জন্য তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আসনটিতে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী ছেলে দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা।

আসন তিনটিতে এই পাঁচজনই মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। ফলে নির্বাচন ঘিরে দলীয় অন্তর্কোন্দলের শঙ্কা করছেন স্থানীয় ভোটাররা।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রার্থী মনোনয়নের বর্তমান দৃশ্য দেখে মনে হয়, ফুটন্ত উনুন থেকে জ্বলন্ত কড়াইয়ে পড়েছি আমরা। বিপ্লবের পরও আগের একই চেহারা দেখা যাচ্ছে প্রার্থী মনোনয়নে।’

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ মাসে রাউজান উপজেলায় ১৮ জন খুন হয়েছেন। এর মধ্যে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ১৩টি। যাঁরা খুন হয়েছেন, তাঁরা বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান (বর্তমানে পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী অথবা দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী ছিলেন। আধিপত্য বিস্তার এবং বালুমহাল ও পাহাড় কাটার মাটি নিয়ে দ্বন্দ্বে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটে। এ ছাড়া গত ১৬ মাসে গুলিবিনিময়ের ৩২টি ঘটনায় অর্ধশত লোক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

আসনটিতে প্রথম দফায় বিএনপির কোনো প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪ ডিসেম্বর গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। সর্বশেষ ২৮ ডিসেম্বর মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়েছে গোলাম আকবর খোন্দকারকেও।

গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, ‘রাউজানে আরেকজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া কিংবা আমাকে বাদ দেওয়াসংক্রান্ত দলীয় নতুন কোনো সিদ্ধান্ত আমাকে জানানো হয়নি। আমার জানামতে, আমিই রাউজানে বিএনপির প্রার্থী।’

জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘রাউজানে দুজনকেই মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়েছে। আপাতত উভয়ে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে থাকবেন। প্রত্যাহারের সময় একজনকে রেখে আরেকজনকে প্রত্যাহার করতে বলা হবে।’

এদিকে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের প্রার্থী লেয়াকত আলী বলেন, ‘দলের দুঃসময়ে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ছিলাম। মামলা-হামলায় জর্জরিত হয়ে জেল-জুলুমের শিকার হয়েছি। আগামী নির্বাচনে বিএনপির অধিকাংশ ভোটার আমাকে ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’

বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার পর সমালোচনার মুখে পড়া চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনের প্রার্থী জসিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি একজন ব্যবসায়ী। বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে আমার ছবি থাকতেই পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

জেপির মঞ্জুর পর নির্বাচন বর্জন করলেন রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশীদ

প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন তাসনিম জারা

এনসিপিতে আসিফ মাহমুদ, হলেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পেট্রোলিয়াম করপোরেশন: দেড় বছরেও চালু হয়নি ৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

  • ঠিকাদার নিয়োগ না হওয়ায় অলস পড়ে আছে প্রকল্প।
  • দীর্ঘদিন ব্যবহৃত না হওয়ায় যন্ত্রাংশের কার্যকারিতা নিয়ে শঙ্কা।
  • চালু হলে বছরে সাশ্রয় হবে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা।
 আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বড় জাহাজ থেকে সরাসরি জ্বালানি তেল খালাস করে সময় ও ব্যয় কমাতে নেওয়া হয়েছে ‘সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইদ ডাবল পাইপলাইন’ প্রকল্প। ৮ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে দেড় বছর আগে। কিন্তু পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ না হওয়ায় অলস পড়ে আছে বৃহৎ এই জ্বালানি অবকাঠামো প্রকল্প।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) উদ্যোগে কক্সবাজারের মহেশখালীতে বাস্তবায়িত প্রকল্পটির কাজ শেষ হয় ২০২৪ সালের আগস্টে। এর পর থেকে এটি চালুর অপেক্ষায় রয়েছে। তবে দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় যন্ত্রাংশের কার্যকারিতা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের (পরিকল্পনা-২) উপসচিব আসমা আরা বেগম বলেন, ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট আগে নির্মাণ করা হলে এসপিএম প্রকল্পটি দ্রুত কাজে লাগানো যেত। শোধনাগার সম্প্রসারণের কাজ আগে হলে এখন আর এটি বসিয়ে রাখতে হতো না।

প্রকল্পের আওতায় মহেশখালীর দক্ষিণ-পশ্চিমে গভীর সাগরে একটি ভাসমান মুরিং (বিশেষায়িত বয়া) বসানো হয়েছে। সেখান থেকে সাগরের তলদেশ দিয়ে মহেশখালী স্টোরেজ ট্যাংক হয়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ইস্টার্ন রিফাইনারি পর্যন্ত প্রায় ১১০ কিলোমিটার দীর্ঘ দুটি পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। একটিতে অপরিশোধিত, অন্যটিতে পরিশোধিত তেল পরিবহনের ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি পাম্পিং স্টেশন, বুস্টার পাম্প, জেনারেটর ও একাধিক স্টোরেজ ট্যাংকও নির্মাণ করা হয়েছে।

প্রকল্পটি চালু না হওয়ায় এখনো সনাতন পদ্ধতিতে সাগর থেকে জ্বালানি তেল খালাস করা হচ্ছে। বর্তমানে বড় ট্যাংকার থেকে প্রথমে ছোট ট্যাংকারে তেল স্থানান্তর করা হয়। এরপর সেগুলো জেটিতে এনে পাইপের মাধ্যমে খালাস করা হয়। এতে সময় যেমন বেশি লাগে, তেমনি দুর্ঘটনার ঝুঁকিও থাকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসপিএম চালু হলে এক লাখ টন জ্বালানি তেলবাহী ট্যাংকার থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তেল খালাস করা সম্ভব হতো। সনাতন পদ্ধতিতে সেখানে সময় লাগে ১০ থেকে ১১ দিন। ইতিপূর্বে এই পদ্ধতিতে তেল খালাস করতে গিয়ে ট্যাংকারে বিস্ফোরণের মতো ঘটনাও ঘটেছে।

বিপিসির পক্ষে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল)। তবে এটি এখনো পেট্রোলিয়াম ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (পিটিপিএলসি) কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। ফলে পরিচালনার দায় নিতে রাজি নয় প্রতিষ্ঠানটি। পিটিপিএলসির উপমহাব্যবস্থাপক তৌফিকুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পটি এখনো তাঁদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি।

প্রকল্পের নির্মাণকাজের ঠিকাদার ছিল চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড (সিপিপিইসি)। অপারেশন ও মেইনটেন্যান্সের দায়িত্বও তাদের দেওয়ার কথা ছিল। তবে জুলাই অভ্যুত্থানের পর উদ্ভূত বাস্তবতায় সেই প্রক্রিয়া থেমে যায়। দরপত্রের মাধ্যমে নতুন ঠিকাদার নিয়োগের উদ্যোগ নেয় বিপিসি।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বিপিসির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসানের সঙ্গে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর সাড়া মেলেনি। প্রকল্প পরিচালক ও ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ হাসনাতকেও ফোনে পাওয়া যায়নি।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের (পরিকল্পনা) অতিরিক্ত সচিব মো. এরফানুল হক বলেন, প্রকল্পটি অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স ঠিকাদার নিয়োগের অপেক্ষায় রয়েছে। সম্প্রতি ঠিকাদার নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে দেশে বছরে গড়ে প্রায় ৬৫ লাখ টন জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টন অপরিশোধিত তেল আমদানি করা হয়, যা ইস্টার্ন রিফাইনারিতে পরিশোধন করা হয়। প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের মতে, অপরিশোধিত তেল আমদানি ও মজুত সক্ষমতা না বাড়ালে এসপিএম প্রকল্প পূর্ণ সক্ষমতায় ব্যবহার করা সম্ভব হবে না।

প্রকল্পটি পুরোপুরি চালু হলে বছরে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হওয়ার কথা। পরিবহন, তেল খালাসের খরচ ও নানা অপচয় কমে এ অর্থ সাশ্রয় হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

জেপির মঞ্জুর পর নির্বাচন বর্জন করলেন রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশীদ

প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন তাসনিম জারা

এনসিপিতে আসিফ মাহমুদ, হলেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত