মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা ও সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ

রাজধানী ঢাকা থেকে ৭০ মাইল দূরে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে ১০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বেসরকারি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়টি। মাত্র দুই বছরের মধ্যে শিক্ষার্থীদের আসন বাড়ে ২০ শতাংশ। এর পর থেকে অব্যাহতভাবে বেড়ে চার শিক্ষাবর্ষের মধ্যেই আসন বৃদ্ধি পায় ৮০ শতাংশ। অথচ সরকারি বিধিবিধান অনুযায়ী মেডিকেল কলেজটির অন্তত ১০টি মৌলিক ঘাটতি রয়েছে।
কলেজটির কর্তৃপক্ষ বরাবর সাবেক সরকারের কাছে যা-ই দাবি করেছে, কার্যত তা-ই পেয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এসবই সম্ভব হয়েছে কলেজটি কিশোরগঞ্জের প্রভাবশালী রাজনীতিক তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের নামে বলে। আওয়ামী লীগের এই নেতা দীর্ঘদিন সংসদ সদস্য এবং স্পিকারও ছিলেন।
প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ নামের চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়টি নিয়মিত পরিদর্শন করেছে সরকারের সংশ্লিষ্ট কমিটি। তবে তাদের প্রতিবেদনে কলেজের ঘাটতি বা ত্রুটিগুলোর খুব কমই তুলে ধরা হয়েছে। পরিণতিতে কলেজ কর্তৃপক্ষের চাহিদামতোই আসন বৃদ্ধি অনুমোদন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
আজ থেকে দুই বছর আগে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ আইন ২০২২ কার্যকর করে সরকার। এ আইনটি কার্যকর হওয়ার আগে বেসরকারি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়গুলো ‘বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা ২০১১ (সংশোধিত)’ অনুযায়ী পরিচালিত হওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল। আইন কার্যকর হওয়ার আগে ২০১১ সালের নীতিমালাও মেনে চলেনি প্রেসিডেন্ট আবদুল হমিদ মেডিকেল কলেজ।
আসন বৃদ্ধিতে রেকর্ড
দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে আসন বৃদ্ধির রেকর্ড করেছে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের নভেম্বরে কলেজটি এমবিবিএস ডিগ্রির জন্য ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন পায়। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ১০টি আসন বৃদ্ধির অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে বাড়ে আরও ১০টি আসন। এর পরের বছর এক ধাপে আসন বাড়ে আরও ২০টি। দেশে বর্তমানে ৬৭টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এগুলোর কোনোটিতেই এত কম সময়ে ৮০ শতাংশ আসন বৃদ্ধির রেকর্ড নেই।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে জানান, সর্বশেষ ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে আসন বাড়িয়ে ৯০টি করা হলে অধিদপ্তর থেকে আপত্তি জানানো হয়। কিন্তু তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতির নামে কলেজ। এখানে কোনো আপত্তি দেওয়া যাবে না।
হাসপাতালের শয্যা ও ভর্তির হারে শর্ত
সর্বশেষ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে কলেজটি পরিদর্শন করে সাত সদস্যের সরকারি পরিদর্শন কমিটি। আইন অনুযায়ী, ৫০ শিক্ষার্থীবিশিষ্ট মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কার্যক্রমের জন্য ১ লাখ বর্গফুট ও হাসপাতাল পরিচালনার জন্য স্বতন্ত্র ভবনে ১ লাখ বর্গফুট ফ্লোর স্পেস থাকতে হবে। তবে আকারের দিক থেকে আবদুল হামিদ কলেজের একাডেমিক ভবনে ৩৮ হাজার ও হাসপাতালে ৯১ হাজার বর্গফুট কম রয়েছে। প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামোসহ হাসপাতালের শয্যায় রোগী ভর্তির হার ৭০ শতাংশ থাকার কথা। তবে তাতে ঘাটতি রয়েছে ৪৭ শতাংশ।
প্রশিক্ষণের জন্য শিক্ষার্থীপ্রতি পাঁচটি শয্যা থাকার কথা। তাতে শয্যাসংখ্যা হবে ৪৫০টি। পরিদর্শন কমিটি শয্যা পেয়েছে মাত্র ২৮৮টি।
কলেজ ভবনেই অন্য স্থাপনা
আইন বলছে, মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরের বেসরকারি মেডিকেল কলেজের জন্য অন্তত চার একর জমিতে স্বতন্ত্র ভবনে কলেজ ও হাসপাতাল হতে হবে।
গত সপ্তাহে ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, তিনতলা হাসপাতাল ভবনের ওপরের তলায় এখনো নির্মাণকাজ চলছে। বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যাও আপাতদৃষ্টিতে বেশ কম দেখা যায়। সাততলাবিশিষ্ট কলেজ ভবনের নিচ থেকে তিনটি তলা পর্যন্ত চলে একাডেমিক কার্যক্রম। চার থেকে ছয়তলা পর্যন্ত ছাত্রী হোস্টেল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সপ্তম তলায় রয়েছে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ নার্সিং ইনস্টিটিউট। অথচ আইন অনুযায়ী, একাডেমিক ভবনে অন্য কার্যক্রম চালানো নিষেধ।
অনুমোদন ও নিবন্ধনের ঘাটতি
প্রতি শিক্ষাবর্ষে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নিবন্ধন থাকার কথা থাকলেও সর্বশেষ নিবন্ধিত শিক্ষাবর্ষটি হলো ২০১৭-১৮। আসনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রথম শিক্ষার্থী ভর্তির পাঁচ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর নিয়মমতো অধিভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। বিএমডিসি প্রতি শিক্ষাবর্ষের অনুমোদন না দিলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ডিগ্রি শেষে ইন্টার্নি করতে পারবেন না। তাঁরা চিকিৎসক হিসেবে নিবন্ধনও পাবেন না।
বিএমডিসির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. লিয়াকত হোসেন আজকের পত্রিকাকে সম্প্রতি এ বিষয়ে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছে। শিগগিরই বিএমডিসি থেকে কলেজটি পরিদর্শনে যাওয়ার কথা রয়েছে। তবে ওই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যে পঞ্চম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষার পর ফলাফলের অপেক্ষায় আছে।’
যা বলছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা
অন্তত পাঁচজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী বলেছেন, একাডেমিক উৎকর্ষের তুলনায় কলেজের কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক যোগসূত্রকে গুরুত্ব দিয়েছে। তবে তাঁদের কেউ নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। মন্তব্যকারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বক্তব্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির মান বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সারির শেষ দিকে। কলেজ কর্তৃপক্ষ ল্যাব উন্নত করা ও শিক্ষক ঘাটতির সমাধানসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে একাডেমিক মানোন্নয়নে চেষ্টা করেনি। প্রতি ১০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও সেখানে ঘাটতি রয়েছে। এসব দিকে মনোযোগ না দিয়ে কর্তৃপক্ষ প্রায় প্রতিবছর আসন বৃদ্ধিতে বেশি মনোযোগ দিয়েছে।
কলেজটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আ ন ম নওশাদ খান সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের শ্যালক। কলেজসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ও এলাকাবাসী মনে করেন, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক গুরুত্ব পাওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের নামে কলেজটির নাম রাখা হয়।
কলেজের একজন শিক্ষক আজকের পত্রিকাকে অনুমোদন নিয়ে তাঁদের উদ্বেগের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা যদি বিএমডিসির অনুমোদন না পায়, তাহলে তারা ইন্টার্নশিপ করতে পারবে না।’
চিকিৎসা শিক্ষা নিয়েই উদ্বেগ
চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে গত দুই দশকে চিকিৎসা শিক্ষার মানকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। মেডিকেল কলেজের সংখ্যা নির্বিচারে বেড়েছে। সার্বিকভাবে বেসরকারি মেডিকেলগুলোর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মান নিম্নমুখী। যথাযথ শিক্ষাদানের জন্য যা প্রয়োজন, সেদিকে নজর দেওয়া হয়নি। এতে মানসম্মত চিকিৎসক তৈরি হচ্ছে না। এতে বাংলাদেশের চিকিৎসকেরা ভবিষ্যতে ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের (ডব্লিউএফএমই) স্বীকৃতি পাবেন না। তাহলে তাঁরা বিশ্বের অন্য কোনো দেশে কাজের সুযোগ ও স্বীকৃতিও পাবেন না।
ডব্লিউএফএমইর সাবেক জ্যেষ্ঠ পরামর্শক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শর্ত বিবেচনা না করে আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজের আসন যেভাবে বাড়ানো হয়েছে, তাতে নিয়মের চরম লঙ্ঘন হয়েছে। প্রায় সব মেডিকেল কলেজের অবস্থা এক। এতে চিকিৎসা শিক্ষার মান খুবই নিচে থাকছে। খুব অল্পসংখ্যক কলেজই মান ধরে রাখতে পেরেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে চিকিৎসা শিক্ষার মান সর্বকালের সর্বনিম্নে রয়েছে।’
কলেজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অভিযোগের জবাবে বলেছেন, কলেজের সমস্যা অস্বীকার করা যাচ্ছে না। তবে তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে।
অধ্যক্ষ অধ্যাপক নওশাদ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শয্যাসংখ্যা এখন বেড়েছে। তবে শিক্ষার্থী অনুপাতে এখনো কিছু ঘাটতি রয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে তার সমাধান হয়ে যাবে।’
আসন বৃদ্ধিতে রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করেছে কি না এমন প্রশ্নে অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমরা নিজেরা রাজনৈতিক কোনো প্রভাব খাটাইনি। মন্ত্রণালয়ের কাছে আসন বাড়াতে আবেদন করেছি, তারা অনুমতি দিয়েছে। শিক্ষক আগের তুলনায় বেড়েছে। ছাত্রী হোস্টেল সরিয়ে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছি।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বারবার শর্ত পূরণের জন্য বলা হলেও পদক্ষেপ না নেওয়ার বিষয়ে নওশাদ খান বলেন, তাঁদের ‘চেষ্টার ত্রুটি নেই’।
সরকারি কর্তৃপক্ষ যা বললেন
আইন অনুযায়ী, বেসরকারি মেডিকেল বা ডেন্টাল কলেজগুলো প্রতিষ্ঠার পর বিধিবিধান মানছে কি না তা যাচাইয়ে প্রথম পাঁচ বছরে অন্তত একবার পরিদর্শন করবে সরকারি কমিটি। আর প্রথম পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রতি দুই বছরে একবার পরিদর্শন করতে হবে। গত দুটি কমিটির অন্তত তিনজন সদস্য আজকের পত্রিকাকে জানান, তাঁরা আইন অনুযায়ী কাজের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তৎকালীন রাষ্ট্রপতির নামে কলেজটি হওয়ায় এবং ‘ওপরমহলের চাপে’ তারা ‘শক্তভাবে’ প্রতিবেদন তৈরি করতে পারেননি।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী এ বিষয়ে বলেন, ‘কমিটির সুপারিশে মন্ত্রণালয় কলেজের আসন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয় বাস্তবায়ন করে। আসন বৃদ্ধি কমিটির সভাপতি থাকেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ওই কলেজটির আসন নিয়ম অনুযায়ী বেড়েছে কি না তা এখন বলতে পারছি না। এ বিষয়ে খোঁজ নেব।’

রাজধানী ঢাকা থেকে ৭০ মাইল দূরে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে ১০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বেসরকারি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়টি। মাত্র দুই বছরের মধ্যে শিক্ষার্থীদের আসন বাড়ে ২০ শতাংশ। এর পর থেকে অব্যাহতভাবে বেড়ে চার শিক্ষাবর্ষের মধ্যেই আসন বৃদ্ধি পায় ৮০ শতাংশ। অথচ সরকারি বিধিবিধান অনুযায়ী মেডিকেল কলেজটির অন্তত ১০টি মৌলিক ঘাটতি রয়েছে।
কলেজটির কর্তৃপক্ষ বরাবর সাবেক সরকারের কাছে যা-ই দাবি করেছে, কার্যত তা-ই পেয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এসবই সম্ভব হয়েছে কলেজটি কিশোরগঞ্জের প্রভাবশালী রাজনীতিক তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের নামে বলে। আওয়ামী লীগের এই নেতা দীর্ঘদিন সংসদ সদস্য এবং স্পিকারও ছিলেন।
প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ নামের চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়টি নিয়মিত পরিদর্শন করেছে সরকারের সংশ্লিষ্ট কমিটি। তবে তাদের প্রতিবেদনে কলেজের ঘাটতি বা ত্রুটিগুলোর খুব কমই তুলে ধরা হয়েছে। পরিণতিতে কলেজ কর্তৃপক্ষের চাহিদামতোই আসন বৃদ্ধি অনুমোদন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
আজ থেকে দুই বছর আগে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ আইন ২০২২ কার্যকর করে সরকার। এ আইনটি কার্যকর হওয়ার আগে বেসরকারি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়গুলো ‘বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা ২০১১ (সংশোধিত)’ অনুযায়ী পরিচালিত হওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল। আইন কার্যকর হওয়ার আগে ২০১১ সালের নীতিমালাও মেনে চলেনি প্রেসিডেন্ট আবদুল হমিদ মেডিকেল কলেজ।
আসন বৃদ্ধিতে রেকর্ড
দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে আসন বৃদ্ধির রেকর্ড করেছে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের নভেম্বরে কলেজটি এমবিবিএস ডিগ্রির জন্য ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন পায়। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ১০টি আসন বৃদ্ধির অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে বাড়ে আরও ১০টি আসন। এর পরের বছর এক ধাপে আসন বাড়ে আরও ২০টি। দেশে বর্তমানে ৬৭টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এগুলোর কোনোটিতেই এত কম সময়ে ৮০ শতাংশ আসন বৃদ্ধির রেকর্ড নেই।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে জানান, সর্বশেষ ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে আসন বাড়িয়ে ৯০টি করা হলে অধিদপ্তর থেকে আপত্তি জানানো হয়। কিন্তু তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতির নামে কলেজ। এখানে কোনো আপত্তি দেওয়া যাবে না।
হাসপাতালের শয্যা ও ভর্তির হারে শর্ত
সর্বশেষ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে কলেজটি পরিদর্শন করে সাত সদস্যের সরকারি পরিদর্শন কমিটি। আইন অনুযায়ী, ৫০ শিক্ষার্থীবিশিষ্ট মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কার্যক্রমের জন্য ১ লাখ বর্গফুট ও হাসপাতাল পরিচালনার জন্য স্বতন্ত্র ভবনে ১ লাখ বর্গফুট ফ্লোর স্পেস থাকতে হবে। তবে আকারের দিক থেকে আবদুল হামিদ কলেজের একাডেমিক ভবনে ৩৮ হাজার ও হাসপাতালে ৯১ হাজার বর্গফুট কম রয়েছে। প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামোসহ হাসপাতালের শয্যায় রোগী ভর্তির হার ৭০ শতাংশ থাকার কথা। তবে তাতে ঘাটতি রয়েছে ৪৭ শতাংশ।
প্রশিক্ষণের জন্য শিক্ষার্থীপ্রতি পাঁচটি শয্যা থাকার কথা। তাতে শয্যাসংখ্যা হবে ৪৫০টি। পরিদর্শন কমিটি শয্যা পেয়েছে মাত্র ২৮৮টি।
কলেজ ভবনেই অন্য স্থাপনা
আইন বলছে, মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরের বেসরকারি মেডিকেল কলেজের জন্য অন্তত চার একর জমিতে স্বতন্ত্র ভবনে কলেজ ও হাসপাতাল হতে হবে।
গত সপ্তাহে ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, তিনতলা হাসপাতাল ভবনের ওপরের তলায় এখনো নির্মাণকাজ চলছে। বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যাও আপাতদৃষ্টিতে বেশ কম দেখা যায়। সাততলাবিশিষ্ট কলেজ ভবনের নিচ থেকে তিনটি তলা পর্যন্ত চলে একাডেমিক কার্যক্রম। চার থেকে ছয়তলা পর্যন্ত ছাত্রী হোস্টেল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সপ্তম তলায় রয়েছে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ নার্সিং ইনস্টিটিউট। অথচ আইন অনুযায়ী, একাডেমিক ভবনে অন্য কার্যক্রম চালানো নিষেধ।
অনুমোদন ও নিবন্ধনের ঘাটতি
প্রতি শিক্ষাবর্ষে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নিবন্ধন থাকার কথা থাকলেও সর্বশেষ নিবন্ধিত শিক্ষাবর্ষটি হলো ২০১৭-১৮। আসনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রথম শিক্ষার্থী ভর্তির পাঁচ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর নিয়মমতো অধিভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। বিএমডিসি প্রতি শিক্ষাবর্ষের অনুমোদন না দিলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ডিগ্রি শেষে ইন্টার্নি করতে পারবেন না। তাঁরা চিকিৎসক হিসেবে নিবন্ধনও পাবেন না।
বিএমডিসির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. লিয়াকত হোসেন আজকের পত্রিকাকে সম্প্রতি এ বিষয়ে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছে। শিগগিরই বিএমডিসি থেকে কলেজটি পরিদর্শনে যাওয়ার কথা রয়েছে। তবে ওই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যে পঞ্চম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষার পর ফলাফলের অপেক্ষায় আছে।’
যা বলছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা
অন্তত পাঁচজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী বলেছেন, একাডেমিক উৎকর্ষের তুলনায় কলেজের কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক যোগসূত্রকে গুরুত্ব দিয়েছে। তবে তাঁদের কেউ নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। মন্তব্যকারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বক্তব্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির মান বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সারির শেষ দিকে। কলেজ কর্তৃপক্ষ ল্যাব উন্নত করা ও শিক্ষক ঘাটতির সমাধানসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে একাডেমিক মানোন্নয়নে চেষ্টা করেনি। প্রতি ১০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও সেখানে ঘাটতি রয়েছে। এসব দিকে মনোযোগ না দিয়ে কর্তৃপক্ষ প্রায় প্রতিবছর আসন বৃদ্ধিতে বেশি মনোযোগ দিয়েছে।
কলেজটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আ ন ম নওশাদ খান সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের শ্যালক। কলেজসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ও এলাকাবাসী মনে করেন, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক গুরুত্ব পাওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের নামে কলেজটির নাম রাখা হয়।
কলেজের একজন শিক্ষক আজকের পত্রিকাকে অনুমোদন নিয়ে তাঁদের উদ্বেগের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা যদি বিএমডিসির অনুমোদন না পায়, তাহলে তারা ইন্টার্নশিপ করতে পারবে না।’
চিকিৎসা শিক্ষা নিয়েই উদ্বেগ
চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে গত দুই দশকে চিকিৎসা শিক্ষার মানকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। মেডিকেল কলেজের সংখ্যা নির্বিচারে বেড়েছে। সার্বিকভাবে বেসরকারি মেডিকেলগুলোর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মান নিম্নমুখী। যথাযথ শিক্ষাদানের জন্য যা প্রয়োজন, সেদিকে নজর দেওয়া হয়নি। এতে মানসম্মত চিকিৎসক তৈরি হচ্ছে না। এতে বাংলাদেশের চিকিৎসকেরা ভবিষ্যতে ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের (ডব্লিউএফএমই) স্বীকৃতি পাবেন না। তাহলে তাঁরা বিশ্বের অন্য কোনো দেশে কাজের সুযোগ ও স্বীকৃতিও পাবেন না।
ডব্লিউএফএমইর সাবেক জ্যেষ্ঠ পরামর্শক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শর্ত বিবেচনা না করে আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজের আসন যেভাবে বাড়ানো হয়েছে, তাতে নিয়মের চরম লঙ্ঘন হয়েছে। প্রায় সব মেডিকেল কলেজের অবস্থা এক। এতে চিকিৎসা শিক্ষার মান খুবই নিচে থাকছে। খুব অল্পসংখ্যক কলেজই মান ধরে রাখতে পেরেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে চিকিৎসা শিক্ষার মান সর্বকালের সর্বনিম্নে রয়েছে।’
কলেজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অভিযোগের জবাবে বলেছেন, কলেজের সমস্যা অস্বীকার করা যাচ্ছে না। তবে তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে।
অধ্যক্ষ অধ্যাপক নওশাদ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শয্যাসংখ্যা এখন বেড়েছে। তবে শিক্ষার্থী অনুপাতে এখনো কিছু ঘাটতি রয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে তার সমাধান হয়ে যাবে।’
আসন বৃদ্ধিতে রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করেছে কি না এমন প্রশ্নে অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমরা নিজেরা রাজনৈতিক কোনো প্রভাব খাটাইনি। মন্ত্রণালয়ের কাছে আসন বাড়াতে আবেদন করেছি, তারা অনুমতি দিয়েছে। শিক্ষক আগের তুলনায় বেড়েছে। ছাত্রী হোস্টেল সরিয়ে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছি।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বারবার শর্ত পূরণের জন্য বলা হলেও পদক্ষেপ না নেওয়ার বিষয়ে নওশাদ খান বলেন, তাঁদের ‘চেষ্টার ত্রুটি নেই’।
সরকারি কর্তৃপক্ষ যা বললেন
আইন অনুযায়ী, বেসরকারি মেডিকেল বা ডেন্টাল কলেজগুলো প্রতিষ্ঠার পর বিধিবিধান মানছে কি না তা যাচাইয়ে প্রথম পাঁচ বছরে অন্তত একবার পরিদর্শন করবে সরকারি কমিটি। আর প্রথম পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রতি দুই বছরে একবার পরিদর্শন করতে হবে। গত দুটি কমিটির অন্তত তিনজন সদস্য আজকের পত্রিকাকে জানান, তাঁরা আইন অনুযায়ী কাজের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তৎকালীন রাষ্ট্রপতির নামে কলেজটি হওয়ায় এবং ‘ওপরমহলের চাপে’ তারা ‘শক্তভাবে’ প্রতিবেদন তৈরি করতে পারেননি।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী এ বিষয়ে বলেন, ‘কমিটির সুপারিশে মন্ত্রণালয় কলেজের আসন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয় বাস্তবায়ন করে। আসন বৃদ্ধি কমিটির সভাপতি থাকেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ওই কলেজটির আসন নিয়ম অনুযায়ী বেড়েছে কি না তা এখন বলতে পারছি না। এ বিষয়ে খোঁজ নেব।’
মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা ও সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ

রাজধানী ঢাকা থেকে ৭০ মাইল দূরে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে ১০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বেসরকারি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়টি। মাত্র দুই বছরের মধ্যে শিক্ষার্থীদের আসন বাড়ে ২০ শতাংশ। এর পর থেকে অব্যাহতভাবে বেড়ে চার শিক্ষাবর্ষের মধ্যেই আসন বৃদ্ধি পায় ৮০ শতাংশ। অথচ সরকারি বিধিবিধান অনুযায়ী মেডিকেল কলেজটির অন্তত ১০টি মৌলিক ঘাটতি রয়েছে।
কলেজটির কর্তৃপক্ষ বরাবর সাবেক সরকারের কাছে যা-ই দাবি করেছে, কার্যত তা-ই পেয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এসবই সম্ভব হয়েছে কলেজটি কিশোরগঞ্জের প্রভাবশালী রাজনীতিক তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের নামে বলে। আওয়ামী লীগের এই নেতা দীর্ঘদিন সংসদ সদস্য এবং স্পিকারও ছিলেন।
প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ নামের চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়টি নিয়মিত পরিদর্শন করেছে সরকারের সংশ্লিষ্ট কমিটি। তবে তাদের প্রতিবেদনে কলেজের ঘাটতি বা ত্রুটিগুলোর খুব কমই তুলে ধরা হয়েছে। পরিণতিতে কলেজ কর্তৃপক্ষের চাহিদামতোই আসন বৃদ্ধি অনুমোদন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
আজ থেকে দুই বছর আগে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ আইন ২০২২ কার্যকর করে সরকার। এ আইনটি কার্যকর হওয়ার আগে বেসরকারি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়গুলো ‘বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা ২০১১ (সংশোধিত)’ অনুযায়ী পরিচালিত হওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল। আইন কার্যকর হওয়ার আগে ২০১১ সালের নীতিমালাও মেনে চলেনি প্রেসিডেন্ট আবদুল হমিদ মেডিকেল কলেজ।
আসন বৃদ্ধিতে রেকর্ড
দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে আসন বৃদ্ধির রেকর্ড করেছে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের নভেম্বরে কলেজটি এমবিবিএস ডিগ্রির জন্য ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন পায়। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ১০টি আসন বৃদ্ধির অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে বাড়ে আরও ১০টি আসন। এর পরের বছর এক ধাপে আসন বাড়ে আরও ২০টি। দেশে বর্তমানে ৬৭টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এগুলোর কোনোটিতেই এত কম সময়ে ৮০ শতাংশ আসন বৃদ্ধির রেকর্ড নেই।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে জানান, সর্বশেষ ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে আসন বাড়িয়ে ৯০টি করা হলে অধিদপ্তর থেকে আপত্তি জানানো হয়। কিন্তু তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতির নামে কলেজ। এখানে কোনো আপত্তি দেওয়া যাবে না।
হাসপাতালের শয্যা ও ভর্তির হারে শর্ত
সর্বশেষ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে কলেজটি পরিদর্শন করে সাত সদস্যের সরকারি পরিদর্শন কমিটি। আইন অনুযায়ী, ৫০ শিক্ষার্থীবিশিষ্ট মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কার্যক্রমের জন্য ১ লাখ বর্গফুট ও হাসপাতাল পরিচালনার জন্য স্বতন্ত্র ভবনে ১ লাখ বর্গফুট ফ্লোর স্পেস থাকতে হবে। তবে আকারের দিক থেকে আবদুল হামিদ কলেজের একাডেমিক ভবনে ৩৮ হাজার ও হাসপাতালে ৯১ হাজার বর্গফুট কম রয়েছে। প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামোসহ হাসপাতালের শয্যায় রোগী ভর্তির হার ৭০ শতাংশ থাকার কথা। তবে তাতে ঘাটতি রয়েছে ৪৭ শতাংশ।
প্রশিক্ষণের জন্য শিক্ষার্থীপ্রতি পাঁচটি শয্যা থাকার কথা। তাতে শয্যাসংখ্যা হবে ৪৫০টি। পরিদর্শন কমিটি শয্যা পেয়েছে মাত্র ২৮৮টি।
কলেজ ভবনেই অন্য স্থাপনা
আইন বলছে, মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরের বেসরকারি মেডিকেল কলেজের জন্য অন্তত চার একর জমিতে স্বতন্ত্র ভবনে কলেজ ও হাসপাতাল হতে হবে।
গত সপ্তাহে ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, তিনতলা হাসপাতাল ভবনের ওপরের তলায় এখনো নির্মাণকাজ চলছে। বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যাও আপাতদৃষ্টিতে বেশ কম দেখা যায়। সাততলাবিশিষ্ট কলেজ ভবনের নিচ থেকে তিনটি তলা পর্যন্ত চলে একাডেমিক কার্যক্রম। চার থেকে ছয়তলা পর্যন্ত ছাত্রী হোস্টেল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সপ্তম তলায় রয়েছে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ নার্সিং ইনস্টিটিউট। অথচ আইন অনুযায়ী, একাডেমিক ভবনে অন্য কার্যক্রম চালানো নিষেধ।
অনুমোদন ও নিবন্ধনের ঘাটতি
প্রতি শিক্ষাবর্ষে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নিবন্ধন থাকার কথা থাকলেও সর্বশেষ নিবন্ধিত শিক্ষাবর্ষটি হলো ২০১৭-১৮। আসনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রথম শিক্ষার্থী ভর্তির পাঁচ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর নিয়মমতো অধিভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। বিএমডিসি প্রতি শিক্ষাবর্ষের অনুমোদন না দিলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ডিগ্রি শেষে ইন্টার্নি করতে পারবেন না। তাঁরা চিকিৎসক হিসেবে নিবন্ধনও পাবেন না।
বিএমডিসির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. লিয়াকত হোসেন আজকের পত্রিকাকে সম্প্রতি এ বিষয়ে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছে। শিগগিরই বিএমডিসি থেকে কলেজটি পরিদর্শনে যাওয়ার কথা রয়েছে। তবে ওই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যে পঞ্চম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষার পর ফলাফলের অপেক্ষায় আছে।’
যা বলছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা
অন্তত পাঁচজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী বলেছেন, একাডেমিক উৎকর্ষের তুলনায় কলেজের কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক যোগসূত্রকে গুরুত্ব দিয়েছে। তবে তাঁদের কেউ নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। মন্তব্যকারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বক্তব্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির মান বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সারির শেষ দিকে। কলেজ কর্তৃপক্ষ ল্যাব উন্নত করা ও শিক্ষক ঘাটতির সমাধানসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে একাডেমিক মানোন্নয়নে চেষ্টা করেনি। প্রতি ১০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও সেখানে ঘাটতি রয়েছে। এসব দিকে মনোযোগ না দিয়ে কর্তৃপক্ষ প্রায় প্রতিবছর আসন বৃদ্ধিতে বেশি মনোযোগ দিয়েছে।
কলেজটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আ ন ম নওশাদ খান সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের শ্যালক। কলেজসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ও এলাকাবাসী মনে করেন, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক গুরুত্ব পাওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের নামে কলেজটির নাম রাখা হয়।
কলেজের একজন শিক্ষক আজকের পত্রিকাকে অনুমোদন নিয়ে তাঁদের উদ্বেগের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা যদি বিএমডিসির অনুমোদন না পায়, তাহলে তারা ইন্টার্নশিপ করতে পারবে না।’
চিকিৎসা শিক্ষা নিয়েই উদ্বেগ
চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে গত দুই দশকে চিকিৎসা শিক্ষার মানকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। মেডিকেল কলেজের সংখ্যা নির্বিচারে বেড়েছে। সার্বিকভাবে বেসরকারি মেডিকেলগুলোর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মান নিম্নমুখী। যথাযথ শিক্ষাদানের জন্য যা প্রয়োজন, সেদিকে নজর দেওয়া হয়নি। এতে মানসম্মত চিকিৎসক তৈরি হচ্ছে না। এতে বাংলাদেশের চিকিৎসকেরা ভবিষ্যতে ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের (ডব্লিউএফএমই) স্বীকৃতি পাবেন না। তাহলে তাঁরা বিশ্বের অন্য কোনো দেশে কাজের সুযোগ ও স্বীকৃতিও পাবেন না।
ডব্লিউএফএমইর সাবেক জ্যেষ্ঠ পরামর্শক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শর্ত বিবেচনা না করে আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজের আসন যেভাবে বাড়ানো হয়েছে, তাতে নিয়মের চরম লঙ্ঘন হয়েছে। প্রায় সব মেডিকেল কলেজের অবস্থা এক। এতে চিকিৎসা শিক্ষার মান খুবই নিচে থাকছে। খুব অল্পসংখ্যক কলেজই মান ধরে রাখতে পেরেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে চিকিৎসা শিক্ষার মান সর্বকালের সর্বনিম্নে রয়েছে।’
কলেজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অভিযোগের জবাবে বলেছেন, কলেজের সমস্যা অস্বীকার করা যাচ্ছে না। তবে তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে।
অধ্যক্ষ অধ্যাপক নওশাদ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শয্যাসংখ্যা এখন বেড়েছে। তবে শিক্ষার্থী অনুপাতে এখনো কিছু ঘাটতি রয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে তার সমাধান হয়ে যাবে।’
আসন বৃদ্ধিতে রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করেছে কি না এমন প্রশ্নে অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমরা নিজেরা রাজনৈতিক কোনো প্রভাব খাটাইনি। মন্ত্রণালয়ের কাছে আসন বাড়াতে আবেদন করেছি, তারা অনুমতি দিয়েছে। শিক্ষক আগের তুলনায় বেড়েছে। ছাত্রী হোস্টেল সরিয়ে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছি।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বারবার শর্ত পূরণের জন্য বলা হলেও পদক্ষেপ না নেওয়ার বিষয়ে নওশাদ খান বলেন, তাঁদের ‘চেষ্টার ত্রুটি নেই’।
সরকারি কর্তৃপক্ষ যা বললেন
আইন অনুযায়ী, বেসরকারি মেডিকেল বা ডেন্টাল কলেজগুলো প্রতিষ্ঠার পর বিধিবিধান মানছে কি না তা যাচাইয়ে প্রথম পাঁচ বছরে অন্তত একবার পরিদর্শন করবে সরকারি কমিটি। আর প্রথম পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রতি দুই বছরে একবার পরিদর্শন করতে হবে। গত দুটি কমিটির অন্তত তিনজন সদস্য আজকের পত্রিকাকে জানান, তাঁরা আইন অনুযায়ী কাজের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তৎকালীন রাষ্ট্রপতির নামে কলেজটি হওয়ায় এবং ‘ওপরমহলের চাপে’ তারা ‘শক্তভাবে’ প্রতিবেদন তৈরি করতে পারেননি।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী এ বিষয়ে বলেন, ‘কমিটির সুপারিশে মন্ত্রণালয় কলেজের আসন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয় বাস্তবায়ন করে। আসন বৃদ্ধি কমিটির সভাপতি থাকেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ওই কলেজটির আসন নিয়ম অনুযায়ী বেড়েছে কি না তা এখন বলতে পারছি না। এ বিষয়ে খোঁজ নেব।’

রাজধানী ঢাকা থেকে ৭০ মাইল দূরে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে ১০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বেসরকারি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়টি। মাত্র দুই বছরের মধ্যে শিক্ষার্থীদের আসন বাড়ে ২০ শতাংশ। এর পর থেকে অব্যাহতভাবে বেড়ে চার শিক্ষাবর্ষের মধ্যেই আসন বৃদ্ধি পায় ৮০ শতাংশ। অথচ সরকারি বিধিবিধান অনুযায়ী মেডিকেল কলেজটির অন্তত ১০টি মৌলিক ঘাটতি রয়েছে।
কলেজটির কর্তৃপক্ষ বরাবর সাবেক সরকারের কাছে যা-ই দাবি করেছে, কার্যত তা-ই পেয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এসবই সম্ভব হয়েছে কলেজটি কিশোরগঞ্জের প্রভাবশালী রাজনীতিক তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের নামে বলে। আওয়ামী লীগের এই নেতা দীর্ঘদিন সংসদ সদস্য এবং স্পিকারও ছিলেন।
প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ নামের চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়টি নিয়মিত পরিদর্শন করেছে সরকারের সংশ্লিষ্ট কমিটি। তবে তাদের প্রতিবেদনে কলেজের ঘাটতি বা ত্রুটিগুলোর খুব কমই তুলে ধরা হয়েছে। পরিণতিতে কলেজ কর্তৃপক্ষের চাহিদামতোই আসন বৃদ্ধি অনুমোদন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
আজ থেকে দুই বছর আগে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ আইন ২০২২ কার্যকর করে সরকার। এ আইনটি কার্যকর হওয়ার আগে বেসরকারি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়গুলো ‘বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা ২০১১ (সংশোধিত)’ অনুযায়ী পরিচালিত হওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল। আইন কার্যকর হওয়ার আগে ২০১১ সালের নীতিমালাও মেনে চলেনি প্রেসিডেন্ট আবদুল হমিদ মেডিকেল কলেজ।
আসন বৃদ্ধিতে রেকর্ড
দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে আসন বৃদ্ধির রেকর্ড করেছে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের নভেম্বরে কলেজটি এমবিবিএস ডিগ্রির জন্য ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন পায়। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ১০টি আসন বৃদ্ধির অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে বাড়ে আরও ১০টি আসন। এর পরের বছর এক ধাপে আসন বাড়ে আরও ২০টি। দেশে বর্তমানে ৬৭টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এগুলোর কোনোটিতেই এত কম সময়ে ৮০ শতাংশ আসন বৃদ্ধির রেকর্ড নেই।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে জানান, সর্বশেষ ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে আসন বাড়িয়ে ৯০টি করা হলে অধিদপ্তর থেকে আপত্তি জানানো হয়। কিন্তু তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতির নামে কলেজ। এখানে কোনো আপত্তি দেওয়া যাবে না।
হাসপাতালের শয্যা ও ভর্তির হারে শর্ত
সর্বশেষ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে কলেজটি পরিদর্শন করে সাত সদস্যের সরকারি পরিদর্শন কমিটি। আইন অনুযায়ী, ৫০ শিক্ষার্থীবিশিষ্ট মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কার্যক্রমের জন্য ১ লাখ বর্গফুট ও হাসপাতাল পরিচালনার জন্য স্বতন্ত্র ভবনে ১ লাখ বর্গফুট ফ্লোর স্পেস থাকতে হবে। তবে আকারের দিক থেকে আবদুল হামিদ কলেজের একাডেমিক ভবনে ৩৮ হাজার ও হাসপাতালে ৯১ হাজার বর্গফুট কম রয়েছে। প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামোসহ হাসপাতালের শয্যায় রোগী ভর্তির হার ৭০ শতাংশ থাকার কথা। তবে তাতে ঘাটতি রয়েছে ৪৭ শতাংশ।
প্রশিক্ষণের জন্য শিক্ষার্থীপ্রতি পাঁচটি শয্যা থাকার কথা। তাতে শয্যাসংখ্যা হবে ৪৫০টি। পরিদর্শন কমিটি শয্যা পেয়েছে মাত্র ২৮৮টি।
কলেজ ভবনেই অন্য স্থাপনা
আইন বলছে, মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরের বেসরকারি মেডিকেল কলেজের জন্য অন্তত চার একর জমিতে স্বতন্ত্র ভবনে কলেজ ও হাসপাতাল হতে হবে।
গত সপ্তাহে ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, তিনতলা হাসপাতাল ভবনের ওপরের তলায় এখনো নির্মাণকাজ চলছে। বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যাও আপাতদৃষ্টিতে বেশ কম দেখা যায়। সাততলাবিশিষ্ট কলেজ ভবনের নিচ থেকে তিনটি তলা পর্যন্ত চলে একাডেমিক কার্যক্রম। চার থেকে ছয়তলা পর্যন্ত ছাত্রী হোস্টেল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সপ্তম তলায় রয়েছে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ নার্সিং ইনস্টিটিউট। অথচ আইন অনুযায়ী, একাডেমিক ভবনে অন্য কার্যক্রম চালানো নিষেধ।
অনুমোদন ও নিবন্ধনের ঘাটতি
প্রতি শিক্ষাবর্ষে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নিবন্ধন থাকার কথা থাকলেও সর্বশেষ নিবন্ধিত শিক্ষাবর্ষটি হলো ২০১৭-১৮। আসনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রথম শিক্ষার্থী ভর্তির পাঁচ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর নিয়মমতো অধিভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। বিএমডিসি প্রতি শিক্ষাবর্ষের অনুমোদন না দিলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ডিগ্রি শেষে ইন্টার্নি করতে পারবেন না। তাঁরা চিকিৎসক হিসেবে নিবন্ধনও পাবেন না।
বিএমডিসির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. লিয়াকত হোসেন আজকের পত্রিকাকে সম্প্রতি এ বিষয়ে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছে। শিগগিরই বিএমডিসি থেকে কলেজটি পরিদর্শনে যাওয়ার কথা রয়েছে। তবে ওই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যে পঞ্চম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষার পর ফলাফলের অপেক্ষায় আছে।’
যা বলছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা
অন্তত পাঁচজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী বলেছেন, একাডেমিক উৎকর্ষের তুলনায় কলেজের কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক যোগসূত্রকে গুরুত্ব দিয়েছে। তবে তাঁদের কেউ নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। মন্তব্যকারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বক্তব্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির মান বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সারির শেষ দিকে। কলেজ কর্তৃপক্ষ ল্যাব উন্নত করা ও শিক্ষক ঘাটতির সমাধানসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে একাডেমিক মানোন্নয়নে চেষ্টা করেনি। প্রতি ১০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও সেখানে ঘাটতি রয়েছে। এসব দিকে মনোযোগ না দিয়ে কর্তৃপক্ষ প্রায় প্রতিবছর আসন বৃদ্ধিতে বেশি মনোযোগ দিয়েছে।
কলেজটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আ ন ম নওশাদ খান সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের শ্যালক। কলেজসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ও এলাকাবাসী মনে করেন, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক গুরুত্ব পাওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের নামে কলেজটির নাম রাখা হয়।
কলেজের একজন শিক্ষক আজকের পত্রিকাকে অনুমোদন নিয়ে তাঁদের উদ্বেগের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা যদি বিএমডিসির অনুমোদন না পায়, তাহলে তারা ইন্টার্নশিপ করতে পারবে না।’
চিকিৎসা শিক্ষা নিয়েই উদ্বেগ
চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে গত দুই দশকে চিকিৎসা শিক্ষার মানকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। মেডিকেল কলেজের সংখ্যা নির্বিচারে বেড়েছে। সার্বিকভাবে বেসরকারি মেডিকেলগুলোর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মান নিম্নমুখী। যথাযথ শিক্ষাদানের জন্য যা প্রয়োজন, সেদিকে নজর দেওয়া হয়নি। এতে মানসম্মত চিকিৎসক তৈরি হচ্ছে না। এতে বাংলাদেশের চিকিৎসকেরা ভবিষ্যতে ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের (ডব্লিউএফএমই) স্বীকৃতি পাবেন না। তাহলে তাঁরা বিশ্বের অন্য কোনো দেশে কাজের সুযোগ ও স্বীকৃতিও পাবেন না।
ডব্লিউএফএমইর সাবেক জ্যেষ্ঠ পরামর্শক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শর্ত বিবেচনা না করে আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজের আসন যেভাবে বাড়ানো হয়েছে, তাতে নিয়মের চরম লঙ্ঘন হয়েছে। প্রায় সব মেডিকেল কলেজের অবস্থা এক। এতে চিকিৎসা শিক্ষার মান খুবই নিচে থাকছে। খুব অল্পসংখ্যক কলেজই মান ধরে রাখতে পেরেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে চিকিৎসা শিক্ষার মান সর্বকালের সর্বনিম্নে রয়েছে।’
কলেজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অভিযোগের জবাবে বলেছেন, কলেজের সমস্যা অস্বীকার করা যাচ্ছে না। তবে তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে।
অধ্যক্ষ অধ্যাপক নওশাদ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শয্যাসংখ্যা এখন বেড়েছে। তবে শিক্ষার্থী অনুপাতে এখনো কিছু ঘাটতি রয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে তার সমাধান হয়ে যাবে।’
আসন বৃদ্ধিতে রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করেছে কি না এমন প্রশ্নে অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমরা নিজেরা রাজনৈতিক কোনো প্রভাব খাটাইনি। মন্ত্রণালয়ের কাছে আসন বাড়াতে আবেদন করেছি, তারা অনুমতি দিয়েছে। শিক্ষক আগের তুলনায় বেড়েছে। ছাত্রী হোস্টেল সরিয়ে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছি।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বারবার শর্ত পূরণের জন্য বলা হলেও পদক্ষেপ না নেওয়ার বিষয়ে নওশাদ খান বলেন, তাঁদের ‘চেষ্টার ত্রুটি নেই’।
সরকারি কর্তৃপক্ষ যা বললেন
আইন অনুযায়ী, বেসরকারি মেডিকেল বা ডেন্টাল কলেজগুলো প্রতিষ্ঠার পর বিধিবিধান মানছে কি না তা যাচাইয়ে প্রথম পাঁচ বছরে অন্তত একবার পরিদর্শন করবে সরকারি কমিটি। আর প্রথম পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রতি দুই বছরে একবার পরিদর্শন করতে হবে। গত দুটি কমিটির অন্তত তিনজন সদস্য আজকের পত্রিকাকে জানান, তাঁরা আইন অনুযায়ী কাজের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তৎকালীন রাষ্ট্রপতির নামে কলেজটি হওয়ায় এবং ‘ওপরমহলের চাপে’ তারা ‘শক্তভাবে’ প্রতিবেদন তৈরি করতে পারেননি।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী এ বিষয়ে বলেন, ‘কমিটির সুপারিশে মন্ত্রণালয় কলেজের আসন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয় বাস্তবায়ন করে। আসন বৃদ্ধি কমিটির সভাপতি থাকেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ওই কলেজটির আসন নিয়ম অনুযায়ী বেড়েছে কি না তা এখন বলতে পারছি না। এ বিষয়ে খোঁজ নেব।’

স্ট্যাটাসে দলীয় হাইকমান্ডের প্রতি প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, তৃণমূল নেতা-কর্মীদের আবেগ ও অনুভূতির কোনো মূল্য দেওয়া হচ্ছে না। ফেব্রুয়ারি ২০২৬ সালের নির্বাচনের জন্য মাগুরা-২ আসনে প্রাথমিক প্রার্থী ঘোষণার পর তৃণমূলে যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে, তা দীর্ঘদিনের অবহেলা ও বঞ্চনার ফল।
১৬ মিনিট আগে
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে এক যুবকের দুই হাত ও এক পা জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা কেটে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গুরুতর আহত অবস্থায় এই যুবক ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। পুলিশ জামায়াতে ইসলামীর দুই কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। আহত যুবকের নাম আবু সুফিয়ান ওরফে সিজু (২২)।
৩০ মিনিট আগে
সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় আনোয়ার হোসেন নামে কিশোরগঞ্জের এক যুবক নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত ১০টার দিকে সৌদি আরবের দাম্মাম শহরে স্কুটি চালিয়ে যাওয়ার সময় পেছন দিক থেকে একটি গাড়ি ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
১ ঘণ্টা আগে
যশোর থেকে অ্যাম্বুলেন্সে রোগী নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মনিরামপুরের একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহত তিনজন সম্পর্কে ভাই-বোন ও ভগ্নিপতি। তাঁদের বাড়ি ঝাঁপা ইউনিয়ন পরিষদের পেছনে রাজগঞ্জ বাজার এলাকায়। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ভাঙ্গা-খুলনা মহাসড়কের মনসুরাবাদ...
২ ঘণ্টা আগেমহম্মদপুর (মাগুরা) প্রতিনিধি

মাগুরা-২ (মহম্মদপুর-শালিখা-সদরের চার ইউনিয়ন) সংসদীয় আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী সালিমুল হক কামাল রাজনীতি ও ভবিষ্যতে সব ধরনের নির্বাচন থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১২টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ ঘোষণা দেন তিনি।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে কাজী সালিমুল হক কামাল জানান, দীর্ঘ সাত বছর কারাবাস, রাজনৈতিক অবহেলা এবং পরিবারের চরম ভোগান্তির কারণে তিনি আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবেন না এবং সক্রিয় রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছেন। জীবনের বাকি সময় পরিবার নিয়ে শান্তিতে কাটাতে চান বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
কাজী সালিমুল হক কামাল তাঁর স্ট্যাটাসে স্মৃতিচারণা করেন, ২০০৮ সালের পর তিনি রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন। ২০১৭ সালে একটি মিথ্যা মামলায় কারাবরণ করতে হয় তাঁকে। দীর্ঘ কারাবাস শেষে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর অসুস্থ শরীরে তিনি ২২ আগস্ট কারাগার থেকে মুক্তি পান। মুক্তির দিন নেতা-কর্মীদের ভালোবাসা ও আবেগ তাঁকে গভীরভাবে স্পর্শ করে।
সালিমুল হক কামাল জানান, মুক্তির পর গত ১৬ মাসে মাত্র চারবার মাগুরায় আসেন এবং প্রতিবারই নেতা-কর্মীদের চোখে ভালোবাসার পাশাপাশি দীর্ঘদিনের কষ্ট ও বেদনা দেখেছেন। ১৬ বছর ধরে মাগুরার ত্যাগী নেতা-কর্মীরা মামলা, হামলা, জেল ও নির্যাতন সহ্য করেও বিএনপির পতাকা আঁকড়ে ধরে রেখেছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
স্ট্যাটাসে দলীয় হাইকমান্ডের প্রতি প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, তৃণমূল নেতা-কর্মীদের আবেগ ও অনুভূতির কোনো মূল্য দেওয়া হচ্ছে না। ফেব্রুয়ারি ২০২৬ সালের নির্বাচনের জন্য মাগুরা-২ আসনে প্রাথমিক প্রার্থী ঘোষণার পর তৃণমূলে যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে, তা দীর্ঘদিনের অবহেলা ও বঞ্চনার ফল।
সালিমুল হক কামাল দাবি করেন, মাগুরা-২ আসনের ৫১৩ জন দায়িত্বশীল নেতার মধ্যে ৫০১ জন, ১৯টি ইউনিয়নের ১৮ জন সাবেক চেয়ারম্যান এবং দুজন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান লিখিতভাবে ওই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন। তবে তৃণমূলের সেই মতামতকে কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
কাজী সালিমুল হক কামাল আরও বলেন, ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিয়ে বিতর্কিতদের পুনর্বাসনের চেষ্টা দলকে আদর্শিকভাবে দুর্বল করছে। এতে ভবিষ্যতে দলের ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে পড়তে পারে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
আড়পাড়ার এক প্রতিবাদ সভার প্রসঙ্গ টেনে কাজী সালিমুল হক কামাল বলেন, তিনি কখনো নিজের জন্য মনোনয়ন চাননি। তৃণমূলের পছন্দ অনুযায়ী অন্য কোনো যোগ্য প্রার্থী দিলেও নেতা-কর্মীরা মেনে নিতেন। তবে দলের বর্তমান অনড় অবস্থান দেখে তিনি উপলব্ধি করেছেন, এখানে তৃণমূলের যুক্তি বা আবেগের কোনো মূল্য নেই।
স্ট্যাটাসের শেষাংশে তিনি নেতা-কর্মীদের সংযত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ক্ষোভ থাকলেও এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়, যাতে ব্যক্তিগত রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তরুণদের সামনে রাজনীতিতে এগিয়ে যাওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের ইতি টেনে সালিমুল হক কামাল লেখেন, তারুণ্যের জয় হোক। তবে মনে রাখবেন, কর্মীদের চোখের পানি কখনো দলের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না।
উল্লেখ্য, কাজী সালিমুল হক কামাল ১৯৯৪ সালের বহুল আলোচিত উপনির্বাচনে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট শফিকুজ্জামান বাচ্চুকে পরাজিত করে নিজের রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করেন। ওয়ান-ইলেভেন সময়ে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় তিনি ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাভোগ করেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের ২৩ আগস্ট তিনি কারামুক্ত হন।
সালিমুল হক কামালের অবসর ঘোষণাকে কেন্দ্র করে মাগুরা-২ আসনে বিএনপির রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনা ও প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

মাগুরা-২ (মহম্মদপুর-শালিখা-সদরের চার ইউনিয়ন) সংসদীয় আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী সালিমুল হক কামাল রাজনীতি ও ভবিষ্যতে সব ধরনের নির্বাচন থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১২টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ ঘোষণা দেন তিনি।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে কাজী সালিমুল হক কামাল জানান, দীর্ঘ সাত বছর কারাবাস, রাজনৈতিক অবহেলা এবং পরিবারের চরম ভোগান্তির কারণে তিনি আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবেন না এবং সক্রিয় রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছেন। জীবনের বাকি সময় পরিবার নিয়ে শান্তিতে কাটাতে চান বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
কাজী সালিমুল হক কামাল তাঁর স্ট্যাটাসে স্মৃতিচারণা করেন, ২০০৮ সালের পর তিনি রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন। ২০১৭ সালে একটি মিথ্যা মামলায় কারাবরণ করতে হয় তাঁকে। দীর্ঘ কারাবাস শেষে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর অসুস্থ শরীরে তিনি ২২ আগস্ট কারাগার থেকে মুক্তি পান। মুক্তির দিন নেতা-কর্মীদের ভালোবাসা ও আবেগ তাঁকে গভীরভাবে স্পর্শ করে।
সালিমুল হক কামাল জানান, মুক্তির পর গত ১৬ মাসে মাত্র চারবার মাগুরায় আসেন এবং প্রতিবারই নেতা-কর্মীদের চোখে ভালোবাসার পাশাপাশি দীর্ঘদিনের কষ্ট ও বেদনা দেখেছেন। ১৬ বছর ধরে মাগুরার ত্যাগী নেতা-কর্মীরা মামলা, হামলা, জেল ও নির্যাতন সহ্য করেও বিএনপির পতাকা আঁকড়ে ধরে রেখেছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
স্ট্যাটাসে দলীয় হাইকমান্ডের প্রতি প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, তৃণমূল নেতা-কর্মীদের আবেগ ও অনুভূতির কোনো মূল্য দেওয়া হচ্ছে না। ফেব্রুয়ারি ২০২৬ সালের নির্বাচনের জন্য মাগুরা-২ আসনে প্রাথমিক প্রার্থী ঘোষণার পর তৃণমূলে যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে, তা দীর্ঘদিনের অবহেলা ও বঞ্চনার ফল।
সালিমুল হক কামাল দাবি করেন, মাগুরা-২ আসনের ৫১৩ জন দায়িত্বশীল নেতার মধ্যে ৫০১ জন, ১৯টি ইউনিয়নের ১৮ জন সাবেক চেয়ারম্যান এবং দুজন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান লিখিতভাবে ওই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন। তবে তৃণমূলের সেই মতামতকে কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
কাজী সালিমুল হক কামাল আরও বলেন, ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিয়ে বিতর্কিতদের পুনর্বাসনের চেষ্টা দলকে আদর্শিকভাবে দুর্বল করছে। এতে ভবিষ্যতে দলের ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে পড়তে পারে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
আড়পাড়ার এক প্রতিবাদ সভার প্রসঙ্গ টেনে কাজী সালিমুল হক কামাল বলেন, তিনি কখনো নিজের জন্য মনোনয়ন চাননি। তৃণমূলের পছন্দ অনুযায়ী অন্য কোনো যোগ্য প্রার্থী দিলেও নেতা-কর্মীরা মেনে নিতেন। তবে দলের বর্তমান অনড় অবস্থান দেখে তিনি উপলব্ধি করেছেন, এখানে তৃণমূলের যুক্তি বা আবেগের কোনো মূল্য নেই।
স্ট্যাটাসের শেষাংশে তিনি নেতা-কর্মীদের সংযত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ক্ষোভ থাকলেও এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়, যাতে ব্যক্তিগত রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তরুণদের সামনে রাজনীতিতে এগিয়ে যাওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের ইতি টেনে সালিমুল হক কামাল লেখেন, তারুণ্যের জয় হোক। তবে মনে রাখবেন, কর্মীদের চোখের পানি কখনো দলের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না।
উল্লেখ্য, কাজী সালিমুল হক কামাল ১৯৯৪ সালের বহুল আলোচিত উপনির্বাচনে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট শফিকুজ্জামান বাচ্চুকে পরাজিত করে নিজের রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করেন। ওয়ান-ইলেভেন সময়ে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় তিনি ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাভোগ করেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের ২৩ আগস্ট তিনি কারামুক্ত হন।
সালিমুল হক কামালের অবসর ঘোষণাকে কেন্দ্র করে মাগুরা-২ আসনে বিএনপির রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনা ও প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

রাজধানী ঢাকা থেকে ৭০ মাইল দূরে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে ১০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বেসরকারি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়টি। মাত্র দুই বছরের মধ্যে শিক্ষার্থীদের আসন বাড়ে ২০ শতাংশ। এর পর থেকে অব্যাহতভাবে বেড়ে চার শিক্ষাবর্ষের মধ্যেই আসন বৃদ্ধি পায় ৮০ শতাংশ। অথচ সরকারি বিধিবিধান অনুযায়ী মেডিকেল কলেজটির অন্তত...
২০ জানুয়ারি ২০২৫
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে এক যুবকের দুই হাত ও এক পা জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা কেটে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গুরুতর আহত অবস্থায় এই যুবক ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। পুলিশ জামায়াতে ইসলামীর দুই কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। আহত যুবকের নাম আবু সুফিয়ান ওরফে সিজু (২২)।
৩০ মিনিট আগে
সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় আনোয়ার হোসেন নামে কিশোরগঞ্জের এক যুবক নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত ১০টার দিকে সৌদি আরবের দাম্মাম শহরে স্কুটি চালিয়ে যাওয়ার সময় পেছন দিক থেকে একটি গাড়ি ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
১ ঘণ্টা আগে
যশোর থেকে অ্যাম্বুলেন্সে রোগী নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মনিরামপুরের একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহত তিনজন সম্পর্কে ভাই-বোন ও ভগ্নিপতি। তাঁদের বাড়ি ঝাঁপা ইউনিয়ন পরিষদের পেছনে রাজগঞ্জ বাজার এলাকায়। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ভাঙ্গা-খুলনা মহাসড়কের মনসুরাবাদ...
২ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে এক যুবকের দুই হাত ও এক পা জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা কেটে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গুরুতর আহত অবস্থায় এই যুবক ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। পুলিশ জামায়াতে ইসলামীর দুই কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।
আহত যুবকের নাম আবু সুফিয়ান ওরফে সিজু (২২)। বাবার নাম রবিউল ইসলাম। শিবগঞ্জ উপজেলার বাজিতপুর বাহাদুর মোড়লের টোলা গ্রামে তাঁর বাড়ি। আবু সুফিয়ানের ওপর হামলার ঘটনাটি ঘটে ২৪ ডিসেম্বর শিবগঞ্জ উপজেলার উমরপুর ঘাট এলাকায়। সেদিন আবু সুফিয়ানকে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে ফেলা হয়েছিল। এরপর দুই হাত ও এক পা কেটে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে স্বজনেরা জানান, সুফিয়ানের বাঁ হাতের রগ কেটে গেছে। এই হাত কেটে ফেলতে হবে। ডান হাতটি রক্ষার চেষ্টা করছেন চিকিৎসকেরা। মাথা ও দুই পায়েও গুরুতর জখম আছে। চোখের ওপর হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল। কালশিরা পড়ে চোখ এখনো ফুলে আছে।
এই ঘটনায় গ্রেপ্তার দুজন হলেন শাহ আলম ও তাঁর ভাই আব্দুর রাজ্জাক। তাঁদের বাড়ি উপজেলার শ্যামপুর খোঁচপাড়া গ্রামে। তাঁরা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী। তাঁদের মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। উমরপুর ঘাটে তাঁর ওষুধের দোকান আছে। সেই দোকানের সামনেই ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ এজাহারভুক্ত এই দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র ও জরুরি বিভাগের ইনচার্জ শংকর কে বিশ্বাস বলেন, ভর্তির পর রাতেই আবু সুফিয়ানকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
আহত আবু সুফিয়ানের মা সুফিয়া খাতুন জানান, সুফিয়ানের এক নাবালিকা ভাতিজিকে কিছুদিন আগে এক যুবক অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ নিয়ে মামলা করলে পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার করে। ছেলেটিকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কিন্তু জামিনে আসার পর থেকে ছেলেটি আবার মেয়েটিকে বিরক্ত করছিল।
এ জন্য ২৪ ডিসেম্বর বিকেলে আবু সুফিয়ান উমরপুর ঘাটে ওই ছেলেটিকে ডেকে তাঁর ভাতিজিকে বিরক্ত না করার জন্য শাসাচ্ছিলেন। তখন বদিউর রহমান, আব্দুর রাজ্জাক, শাহ আলমসহ জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা ওই ছেলেটির পক্ষ নেন এবং আবু সুফিয়ানকে মারতে শুরু করেন। একপর্যায়ে যোগ দেন শিবিরের কর্মী আনোয়ার হোসেন ও নুর আলী। তাঁরা রাজ্জাকের দোকানের সামনে বিদ্যুতের খুঁটিতে সুফিয়ানকে বেঁধে ফেলেন। এরপর লাঠি ও হাতুড়ি দিয়ে তাঁকে পেটানো হয়। পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর দুই হাত ও পা কেটে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে দেন। খবর পেয়ে আত্মীয়স্বজন ও পরিবারের সদস্যরা সুফিয়ানকে উদ্ধার করে প্রথমে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যান। সেখান থেকে চিকিৎসকেরা তাঁকে দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। পরে রাতেই তাঁকে ঢাকায় নেওয়া হয়।
সুফিয়া খাতুন বলেন, তাঁর ছেলেকে জামায়াতের মিছিলে ডাকা হয়েছিল। সুফিয়ান তাদের মিছিলে না গিয়ে বিএনপির মিছিলে যেত। এই রাগে তার হাত-পা এভাবে কেটে দেওয়া হতে পারে। তিনি জানান, ঘটনার পর তার ছেলে মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে থাকলেও জামায়াত-শিবিরের ভয়ে কেউ হাসপাতালে নিয়ে যাননি। এমনকি কোনো গাড়িও তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিল না। পরে তারা অ্যাম্বুলেন্স ডেকে সুফিয়ানকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
আহত আবু সুফিয়ান বলেন, জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের তিনি বোঝাতে চেষ্টা করেছিলেন, ওই ছেলেটি তাঁর ভাতিজিকে বিরক্ত করছে। কিন্তু কোনো কথা না শুনে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা তাঁকেই বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে হাত-পা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে দেন।
জামায়াতের কর্মী শাহ আলম ও আব্দুর রাজ্জাক গ্রেপ্তার হওয়ায় তাঁদের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। আর অভিযুক্ত শিবিরের কর্মী নূর আলীর মোবাইলে সংযোগ পাওয়া যায়নি। এই ঘটনায় দুজন কর্মী গ্রেপ্তার হলেও জামায়াত-শিবির এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকে না বলে দাবি করেছেন উপজেলা জামায়াতের আমির সাদিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার শাহ আলম ও আব্দুর রাজ্জাক আমাদের কর্মী। তবে জামায়াত-শিবির হাত-পা কাটার রাজনীতি করে না। এই ঘটনায় তাঁরা জড়িত বলেও আমরা মনে করি না। তাই সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
এ বিষয়ে শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ঘটনার পর রাতেই তিনজনের নামে মামলা করেন আবু সুফিয়ানের বাবা। এরপর আমরা দুজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে এক যুবকের দুই হাত ও এক পা জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা কেটে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গুরুতর আহত অবস্থায় এই যুবক ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। পুলিশ জামায়াতে ইসলামীর দুই কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।
আহত যুবকের নাম আবু সুফিয়ান ওরফে সিজু (২২)। বাবার নাম রবিউল ইসলাম। শিবগঞ্জ উপজেলার বাজিতপুর বাহাদুর মোড়লের টোলা গ্রামে তাঁর বাড়ি। আবু সুফিয়ানের ওপর হামলার ঘটনাটি ঘটে ২৪ ডিসেম্বর শিবগঞ্জ উপজেলার উমরপুর ঘাট এলাকায়। সেদিন আবু সুফিয়ানকে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে ফেলা হয়েছিল। এরপর দুই হাত ও এক পা কেটে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে স্বজনেরা জানান, সুফিয়ানের বাঁ হাতের রগ কেটে গেছে। এই হাত কেটে ফেলতে হবে। ডান হাতটি রক্ষার চেষ্টা করছেন চিকিৎসকেরা। মাথা ও দুই পায়েও গুরুতর জখম আছে। চোখের ওপর হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল। কালশিরা পড়ে চোখ এখনো ফুলে আছে।
এই ঘটনায় গ্রেপ্তার দুজন হলেন শাহ আলম ও তাঁর ভাই আব্দুর রাজ্জাক। তাঁদের বাড়ি উপজেলার শ্যামপুর খোঁচপাড়া গ্রামে। তাঁরা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী। তাঁদের মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। উমরপুর ঘাটে তাঁর ওষুধের দোকান আছে। সেই দোকানের সামনেই ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ এজাহারভুক্ত এই দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র ও জরুরি বিভাগের ইনচার্জ শংকর কে বিশ্বাস বলেন, ভর্তির পর রাতেই আবু সুফিয়ানকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
আহত আবু সুফিয়ানের মা সুফিয়া খাতুন জানান, সুফিয়ানের এক নাবালিকা ভাতিজিকে কিছুদিন আগে এক যুবক অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ নিয়ে মামলা করলে পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার করে। ছেলেটিকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কিন্তু জামিনে আসার পর থেকে ছেলেটি আবার মেয়েটিকে বিরক্ত করছিল।
এ জন্য ২৪ ডিসেম্বর বিকেলে আবু সুফিয়ান উমরপুর ঘাটে ওই ছেলেটিকে ডেকে তাঁর ভাতিজিকে বিরক্ত না করার জন্য শাসাচ্ছিলেন। তখন বদিউর রহমান, আব্দুর রাজ্জাক, শাহ আলমসহ জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা ওই ছেলেটির পক্ষ নেন এবং আবু সুফিয়ানকে মারতে শুরু করেন। একপর্যায়ে যোগ দেন শিবিরের কর্মী আনোয়ার হোসেন ও নুর আলী। তাঁরা রাজ্জাকের দোকানের সামনে বিদ্যুতের খুঁটিতে সুফিয়ানকে বেঁধে ফেলেন। এরপর লাঠি ও হাতুড়ি দিয়ে তাঁকে পেটানো হয়। পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর দুই হাত ও পা কেটে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে দেন। খবর পেয়ে আত্মীয়স্বজন ও পরিবারের সদস্যরা সুফিয়ানকে উদ্ধার করে প্রথমে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যান। সেখান থেকে চিকিৎসকেরা তাঁকে দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। পরে রাতেই তাঁকে ঢাকায় নেওয়া হয়।
সুফিয়া খাতুন বলেন, তাঁর ছেলেকে জামায়াতের মিছিলে ডাকা হয়েছিল। সুফিয়ান তাদের মিছিলে না গিয়ে বিএনপির মিছিলে যেত। এই রাগে তার হাত-পা এভাবে কেটে দেওয়া হতে পারে। তিনি জানান, ঘটনার পর তার ছেলে মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে থাকলেও জামায়াত-শিবিরের ভয়ে কেউ হাসপাতালে নিয়ে যাননি। এমনকি কোনো গাড়িও তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিল না। পরে তারা অ্যাম্বুলেন্স ডেকে সুফিয়ানকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
আহত আবু সুফিয়ান বলেন, জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের তিনি বোঝাতে চেষ্টা করেছিলেন, ওই ছেলেটি তাঁর ভাতিজিকে বিরক্ত করছে। কিন্তু কোনো কথা না শুনে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা তাঁকেই বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে হাত-পা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে দেন।
জামায়াতের কর্মী শাহ আলম ও আব্দুর রাজ্জাক গ্রেপ্তার হওয়ায় তাঁদের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। আর অভিযুক্ত শিবিরের কর্মী নূর আলীর মোবাইলে সংযোগ পাওয়া যায়নি। এই ঘটনায় দুজন কর্মী গ্রেপ্তার হলেও জামায়াত-শিবির এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকে না বলে দাবি করেছেন উপজেলা জামায়াতের আমির সাদিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার শাহ আলম ও আব্দুর রাজ্জাক আমাদের কর্মী। তবে জামায়াত-শিবির হাত-পা কাটার রাজনীতি করে না। এই ঘটনায় তাঁরা জড়িত বলেও আমরা মনে করি না। তাই সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
এ বিষয়ে শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ঘটনার পর রাতেই তিনজনের নামে মামলা করেন আবু সুফিয়ানের বাবা। এরপর আমরা দুজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’

রাজধানী ঢাকা থেকে ৭০ মাইল দূরে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে ১০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বেসরকারি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়টি। মাত্র দুই বছরের মধ্যে শিক্ষার্থীদের আসন বাড়ে ২০ শতাংশ। এর পর থেকে অব্যাহতভাবে বেড়ে চার শিক্ষাবর্ষের মধ্যেই আসন বৃদ্ধি পায় ৮০ শতাংশ। অথচ সরকারি বিধিবিধান অনুযায়ী মেডিকেল কলেজটির অন্তত...
২০ জানুয়ারি ২০২৫
স্ট্যাটাসে দলীয় হাইকমান্ডের প্রতি প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, তৃণমূল নেতা-কর্মীদের আবেগ ও অনুভূতির কোনো মূল্য দেওয়া হচ্ছে না। ফেব্রুয়ারি ২০২৬ সালের নির্বাচনের জন্য মাগুরা-২ আসনে প্রাথমিক প্রার্থী ঘোষণার পর তৃণমূলে যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে, তা দীর্ঘদিনের অবহেলা ও বঞ্চনার ফল।
১৬ মিনিট আগে
সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় আনোয়ার হোসেন নামে কিশোরগঞ্জের এক যুবক নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত ১০টার দিকে সৌদি আরবের দাম্মাম শহরে স্কুটি চালিয়ে যাওয়ার সময় পেছন দিক থেকে একটি গাড়ি ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
১ ঘণ্টা আগে
যশোর থেকে অ্যাম্বুলেন্সে রোগী নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মনিরামপুরের একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহত তিনজন সম্পর্কে ভাই-বোন ও ভগ্নিপতি। তাঁদের বাড়ি ঝাঁপা ইউনিয়ন পরিষদের পেছনে রাজগঞ্জ বাজার এলাকায়। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ভাঙ্গা-খুলনা মহাসড়কের মনসুরাবাদ...
২ ঘণ্টা আগেহোসেনপুর সংবাদদাতা

সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় আনোয়ার হোসেন নামে কিশোরগঞ্জের এক যুবক নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত ১০টার দিকে সৌদি আরবের দাম্মাম শহরে স্কুটি চালিয়ে যাওয়ার সময় পেছন দিক থেকে একটি গাড়ি ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।/
নিহত আনোয়ার জেলার হোসেনপুর উপজেলার উত্তর গোবিন্দপুর গ্রামের আলমাস খানের বড় ছেলে। নিহত ব্যক্তির প্রতিবেশী প্রবাসী শফিক জানান, দুই মাস পর আনোয়ারের দেশে ফিরে বিয়ে করার কথা ছিল।
গোবিন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. চান মিয়া মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পরিবারের বরাত দিয়ে তিনি জানান, নিহত আনোয়ার ১০-১২ বছর আগে সৌদি আরবে গেছেন। সেখানে ফ্রি ভিসায় কাজ করতেন তিনি। গতকাল রাতে তাঁর পরিবার মৃত্যুর খবর পায়।

সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় আনোয়ার হোসেন নামে কিশোরগঞ্জের এক যুবক নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত ১০টার দিকে সৌদি আরবের দাম্মাম শহরে স্কুটি চালিয়ে যাওয়ার সময় পেছন দিক থেকে একটি গাড়ি ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।/
নিহত আনোয়ার জেলার হোসেনপুর উপজেলার উত্তর গোবিন্দপুর গ্রামের আলমাস খানের বড় ছেলে। নিহত ব্যক্তির প্রতিবেশী প্রবাসী শফিক জানান, দুই মাস পর আনোয়ারের দেশে ফিরে বিয়ে করার কথা ছিল।
গোবিন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. চান মিয়া মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পরিবারের বরাত দিয়ে তিনি জানান, নিহত আনোয়ার ১০-১২ বছর আগে সৌদি আরবে গেছেন। সেখানে ফ্রি ভিসায় কাজ করতেন তিনি। গতকাল রাতে তাঁর পরিবার মৃত্যুর খবর পায়।

রাজধানী ঢাকা থেকে ৭০ মাইল দূরে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে ১০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বেসরকারি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়টি। মাত্র দুই বছরের মধ্যে শিক্ষার্থীদের আসন বাড়ে ২০ শতাংশ। এর পর থেকে অব্যাহতভাবে বেড়ে চার শিক্ষাবর্ষের মধ্যেই আসন বৃদ্ধি পায় ৮০ শতাংশ। অথচ সরকারি বিধিবিধান অনুযায়ী মেডিকেল কলেজটির অন্তত...
২০ জানুয়ারি ২০২৫
স্ট্যাটাসে দলীয় হাইকমান্ডের প্রতি প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, তৃণমূল নেতা-কর্মীদের আবেগ ও অনুভূতির কোনো মূল্য দেওয়া হচ্ছে না। ফেব্রুয়ারি ২০২৬ সালের নির্বাচনের জন্য মাগুরা-২ আসনে প্রাথমিক প্রার্থী ঘোষণার পর তৃণমূলে যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে, তা দীর্ঘদিনের অবহেলা ও বঞ্চনার ফল।
১৬ মিনিট আগে
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে এক যুবকের দুই হাত ও এক পা জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা কেটে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গুরুতর আহত অবস্থায় এই যুবক ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। পুলিশ জামায়াতে ইসলামীর দুই কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। আহত যুবকের নাম আবু সুফিয়ান ওরফে সিজু (২২)।
৩০ মিনিট আগে
যশোর থেকে অ্যাম্বুলেন্সে রোগী নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মনিরামপুরের একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহত তিনজন সম্পর্কে ভাই-বোন ও ভগ্নিপতি। তাঁদের বাড়ি ঝাঁপা ইউনিয়ন পরিষদের পেছনে রাজগঞ্জ বাজার এলাকায়। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ভাঙ্গা-খুলনা মহাসড়কের মনসুরাবাদ...
২ ঘণ্টা আগেমনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি

যশোর থেকে অ্যাম্বুলেন্সে রোগী নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মনিরামপুরের একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহত তিনজন সম্পর্কে ভাই-বোন ও ভগ্নিপতি। তাঁদের বাড়ি ঝাঁপা ইউনিয়ন পরিষদের পেছনে রাজগঞ্জ বাজার এলাকায়। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ভাঙ্গা-খুলনা মহাসড়কের মনসুরাবাদ এলাকায় ট্রাক ও রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সের মুখোমুখি সংঘর্ষে তাঁরা নিহত হন।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন রাজগঞ্জ বাজার এলাকার রহমতউল্লাহর ছেলে নিশান (২৩), মেয়ে নীলা (২৫) ও মেয়ের স্বামী মিজানুর রহমান (৩৫)।
নিহত মিজানুর রহমান একটি বেসরকারি ঋণদান সংস্থার শাখা ব্যবস্থাপক ছিলেন। তাঁর বাড়ি কেশবপুর উপজেলার ভাল্লুকঘর এলাকায়। আর নিশান রাজগঞ্জ বাজারে একটি কিন্ডারগার্টেনের সহকারী শিক্ষক ও তাঁর বোন নীলা গৃহিণী ছিলেন।
নিহত নীলা-মিজানুর রহমান দম্পতির ছয় ও চার বছর বয়সী দুটি ছেলে রয়েছে। এই ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের বাড়িতে মাতম চলছে। শোক নেমে এসেছে গ্রামজুড়ে।
নিহত ব্যক্তিদের প্রতিবেশী হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘মিজানুর রহমান ব্রেন স্ট্রোক করে এক মাস ধরে অসুস্থ হয়ে যশোরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় আজ সকালে একটি অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন স্ত্রী নীলা ও শ্যালক নিশান। তাঁরা ফরিদপুরের ভাঙ্গায় পৌঁছালে একটি ট্রাকের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে মিজানুর রহমান, নিশান ও তাঁর বোন নীলা নিহত হন।’
মনিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রজিউল্লাহ খান বলেন, ‘ফরিদপুরের ভাঙ্গায় সড়ক দুর্ঘটনায় মনিরামপুরের একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যুর খবর আমাদের কেউ জানায়নি। নিহত ব্যক্তিদের পরিবার কোনো আইনি সহায়তা চাইলে সহযোগিতা করব।’

যশোর থেকে অ্যাম্বুলেন্সে রোগী নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মনিরামপুরের একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহত তিনজন সম্পর্কে ভাই-বোন ও ভগ্নিপতি। তাঁদের বাড়ি ঝাঁপা ইউনিয়ন পরিষদের পেছনে রাজগঞ্জ বাজার এলাকায়। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ভাঙ্গা-খুলনা মহাসড়কের মনসুরাবাদ এলাকায় ট্রাক ও রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সের মুখোমুখি সংঘর্ষে তাঁরা নিহত হন।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন রাজগঞ্জ বাজার এলাকার রহমতউল্লাহর ছেলে নিশান (২৩), মেয়ে নীলা (২৫) ও মেয়ের স্বামী মিজানুর রহমান (৩৫)।
নিহত মিজানুর রহমান একটি বেসরকারি ঋণদান সংস্থার শাখা ব্যবস্থাপক ছিলেন। তাঁর বাড়ি কেশবপুর উপজেলার ভাল্লুকঘর এলাকায়। আর নিশান রাজগঞ্জ বাজারে একটি কিন্ডারগার্টেনের সহকারী শিক্ষক ও তাঁর বোন নীলা গৃহিণী ছিলেন।
নিহত নীলা-মিজানুর রহমান দম্পতির ছয় ও চার বছর বয়সী দুটি ছেলে রয়েছে। এই ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের বাড়িতে মাতম চলছে। শোক নেমে এসেছে গ্রামজুড়ে।
নিহত ব্যক্তিদের প্রতিবেশী হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘মিজানুর রহমান ব্রেন স্ট্রোক করে এক মাস ধরে অসুস্থ হয়ে যশোরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় আজ সকালে একটি অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন স্ত্রী নীলা ও শ্যালক নিশান। তাঁরা ফরিদপুরের ভাঙ্গায় পৌঁছালে একটি ট্রাকের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে মিজানুর রহমান, নিশান ও তাঁর বোন নীলা নিহত হন।’
মনিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রজিউল্লাহ খান বলেন, ‘ফরিদপুরের ভাঙ্গায় সড়ক দুর্ঘটনায় মনিরামপুরের একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যুর খবর আমাদের কেউ জানায়নি। নিহত ব্যক্তিদের পরিবার কোনো আইনি সহায়তা চাইলে সহযোগিতা করব।’

রাজধানী ঢাকা থেকে ৭০ মাইল দূরে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে ১০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বেসরকারি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়টি। মাত্র দুই বছরের মধ্যে শিক্ষার্থীদের আসন বাড়ে ২০ শতাংশ। এর পর থেকে অব্যাহতভাবে বেড়ে চার শিক্ষাবর্ষের মধ্যেই আসন বৃদ্ধি পায় ৮০ শতাংশ। অথচ সরকারি বিধিবিধান অনুযায়ী মেডিকেল কলেজটির অন্তত...
২০ জানুয়ারি ২০২৫
স্ট্যাটাসে দলীয় হাইকমান্ডের প্রতি প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, তৃণমূল নেতা-কর্মীদের আবেগ ও অনুভূতির কোনো মূল্য দেওয়া হচ্ছে না। ফেব্রুয়ারি ২০২৬ সালের নির্বাচনের জন্য মাগুরা-২ আসনে প্রাথমিক প্রার্থী ঘোষণার পর তৃণমূলে যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে, তা দীর্ঘদিনের অবহেলা ও বঞ্চনার ফল।
১৬ মিনিট আগে
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে এক যুবকের দুই হাত ও এক পা জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা কেটে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গুরুতর আহত অবস্থায় এই যুবক ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। পুলিশ জামায়াতে ইসলামীর দুই কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। আহত যুবকের নাম আবু সুফিয়ান ওরফে সিজু (২২)।
৩০ মিনিট আগে
সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় আনোয়ার হোসেন নামে কিশোরগঞ্জের এক যুবক নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত ১০টার দিকে সৌদি আরবের দাম্মাম শহরে স্কুটি চালিয়ে যাওয়ার সময় পেছন দিক থেকে একটি গাড়ি ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
১ ঘণ্টা আগে