Ajker Patrika

আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে ‘পদের লোভ দেখিয়ে’ নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ার অভিযোগ

গাজীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২২, ১৪: ১৫
আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে ‘পদের লোভ দেখিয়ে’ নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ার অভিযোগ

গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান মাস্টারের বিরুদ্ধে পদ-পদবির লোভ দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করার অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী এক নারী। 

গতকাল বুধবার গাজীপুর মহানগরীর জয়দেবপুর শিববাড়ী এলাকায় ইউরো বাংলা রেস্টুরেন্টে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ তোলেন তিনি। 

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, ‘মহানগরীর কোনাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান মাস্টার আমাকে যুব মহিলা লীগের পদ-পদবির প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করেন। এরপর থেকে তিনি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।’ 

এ ঘটনায় অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান মাস্টারের দলীয় সব পদ থেকে বহিষ্কার এবং তাঁকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানান ভুক্তভোগী ওই নারী। 

প্রসঙ্গত, গত মাসে কোনাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই নারীর সঙ্গে আব্দুর রহমান মাস্টারের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ভিডিও ভাইরালের পর সম্মেলন শেষ হলেও এখনো কোনাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। 

ভিডিও প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘কোনাবাড়ী যুব মহিলা লীগের কমিটিতে নেওয়া হবে এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। আমার সঙ্গে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কও করেন। কিন্তু আওয়ামী যুব মহিলা লীগের কমিটিতে আমাকে রাখা হয়নি। যেহেতু তিনি তাঁর কমিটমেন্ট রক্ষা করেননি, তাই আমি তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করছি।’ 

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘আপনারা যাঁরা ভিডিওটি দেখেছেন, তাতে দেখবেন আমি স্বেচ্ছায় তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক করতে চাইনি। তিনি জোর-জবরদস্তি করে আমার সঙ্গে সম্পর্ক করেছেন।’ 

সংবাদ সম্মেলনে ওই নারী অভিযোগ করে বলেন, ‘আব্দুর রহমান মাস্টার আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে আছেন। অনেক বড় নেতাদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ আছে। তিনি আমার মতো অনেক নারীকে বিভিন্ন কমিটিতে জায়গা করে দেবেন, পদ দেবেন—এসব লোভ দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করতেন। ওনার কথা না শুনলে আমাদের ওনার যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে, সেখানে ডেকে নিয়ে জোর-জবরদস্তি করতেন, শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করতেন। তাঁর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পেছনে একটি পাঁচতলা বাসা আছে, সেখানে উনি আমার মতো যারা আছে, তাদের নিয়ে যান, কমিটির লোভ দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করেন। এমনকি উত্তরায় তাঁর যে বাসা আছে, সেখানেও মেয়েদের নিয়ে যান, আমারও যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু আমি যাইনি।’ 

আমার পরিবার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, রাজনীতিতে আগ্রহ রয়েছে উল্লেখ করে ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘আমি আমার পড়াশোনার পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রোগ্রাম করতাম। ওই সব প্রোগ্রামে যেতে যেতে তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তিনি আমাকে বলতেন, তুমি তো দেখি অনেক ভালো, তুমি তো অনেক অ্যাকটিভ, আমি যদি তোমাকে কোনো পদে নিই, কোনো কমিটিতে রাখি, তাহলে তো তোমার আপত্তি নেই? তোমার তো কোনো সমস্যা নেই? সেই সূত্রে তিনি আমার ফোন নম্বর নেন, আমার সঙ্গে কথা বলেন। তারপর থেকে কোনো প্রোগ্রামে আমাকে ডাকলে আমি যেতাম। সেভাবেই ওনার সঙ্গে সম্পর্ক হয়ে ওঠে। যেহেতু আমারও রাজনীতি ভালো লাগে আর রাজনীতিতে আমার আগ্রহ আছে, তাই আমি ওনার কথামতো চলতাম।’ 

কোনাবাড়ী থানায় জিডি নেওয়া হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি কোনাবাড়ী থানায় জিডি করতে গিয়েছি, কিন্তু পুলিশ ওই মাস্টারের নাম শোনার পর আমার জিডি নেয়নি।’

ভিডিও ভাইরালের আগে ১০-১৫ বার শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার অবাক লাগে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো জায়গায় তিনি কীভাবে এসব কাজ করেন। আর শেষে যে ভিডিও আমার ভাইরাল হয়েছে, তাতে আপনারা দেখবেন, যখন আমাকে প্রস্তাব দেয় তখন আমি না বলছিলাম। আমি বলেছিলাম ভাইয়া আমি পারব না, আমি অসুস্থ আমি বাসায় চলে যাব। কিন্তু তিনি আমার কথা শোনেননি। তিনি অনেক বাজে ভাষায় আমাকে গালিগালাজ করেন এবং আমাকে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করেন। ওই ভিডিওর ভেতরে সবকিছু আছে, আপনারা দয়া করে শুনে নেবেন।’ 

ভিডিওতে নারীকে স্পষ্ট দেখা যায়নি, তাহলে কি মাস্টারকে ফাঁসানোর জন্য এই ভিডিও ভাইরাল করা হয়েছে—এমন প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, ‘না, মাস্টারকে ফাঁসানোর জন্য এটি করা হয়নি। আমি মাস্টারের সামনে গিয়ে কথা বলতে পারব। উনি রাজনীতি নিয়ে যে একটা বাজে খেলা খেলছেন, আমাকে কমিটিতে রাখার কথা ছিল এবং উনি আমাকে বলেছিলেন, যখন যুব মহিলা লীগের কমিটি দেওয়া হবে, তখন সেখানে তোমাকে রাখা হবে। কিন্তু সম্প্রতি যুব মহিলা লীগের কমিটি সম্মেলন হলো, কমিটি দেওয়া হলো, তখন আমাকে রাখার কথা ছিল। তিনি আমাকে রাখেননি। তিনি আমাকে বলেন আমি ছোট। আমি যদি ছোট হই, তাহলে আমার সঙ্গে কেন এমন অন্যায় করা হলো?’ 

ভাইরাল হওয়া ভিডিওর বিষয়ে কোনাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী বলেন, ‘এমন অনৈতিক কাজ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তবে ব্যক্তি আবদুর রহমানের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের দায় আওয়ামী লীগ নেবে না। এর দায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকেই নিতে হবে।’ 

এ বিষয়ে কোনাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান মাস্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এটিকে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র দাবি করে বলেন, তিনি দেখা করে কথা বলতে চান। 

জিএমপির কোনাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ আবু সিদ্দিক বলেন, ‘বিষয়টি আপনাদের কাছ থেকে শুনেছি। তবে কেউ অভিযোগ করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ময়মনসিংহের নান্দাইল: নদীর জায়গা দখল করে আ.লীগ নেতার মার্কেট

  • নরসুন্দা নদীর পাড় দখলের অভিযোগ
  • কর্তৃপক্ষ বলছে, সওজের জমি। নিজস্ব সম্পত্তি দাবি বাচ্চুর
নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
নরসুন্দা নদীর পাড় দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে দ্বিতল ভবন। ময়মনসিংহের নান্দাইলের তারের ঘাট বাজার এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
নরসুন্দা নদীর পাড় দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে দ্বিতল ভবন। ময়মনসিংহের নান্দাইলের তারের ঘাট বাজার এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ময়মনসিংহের নান্দাইলে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতা হাবিবুর রহমান বাচ্চুর বিরুদ্ধে নরসুন্দা নদীর পাড় দখল করে পাকা ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। মুশুল্লি ইউনিয়নের তারের ঘাট বাজারসংলগ্ন নদীর জায়গা দখল করে দোতলা মার্কেট নির্মাণ করছেন তিনি।

হাবিবুর রহমান বাচ্চু মুশুল্লি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তিনি তারের ঘাট বাজার পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক।

সরেজমিনে দেখা যায়, তারের ঘাট বাজারে নরসুন্দা নদীর ওপর সড়ক ও জনপথ বিভাগের একটি সেতু রয়েছে। সেতুর পশ্চিম পাশে নদীর উপরে নির্মাণ হচ্ছে পাকা ভবন। সাংবাদিকেরা ছবি তুলতে গেলে হাবিবুর রহমান বাচ্চুর ছেলে মো. ফয়সাল ছবি তোলার কারণ জানতে যান। এ সময় তিনি দাবি করেন, নদীর ওপর কোনো মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে না। নিজেদের জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগ আমলে সাবেক এমপি তুহিনের প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেছেন হাবিবুর রহমান বাচ্চু। অবৈধভাবে পাথর ব্যবসার পাশাপাশি দখল করেছেন সরকারি জায়গা। ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান হতে চেয়েছিলেন। তবে সরকার পতনের পর ভোল বদলে ফেলেন।

নদীর জায়গায় ভবন নির্মাণের বিষয়ে হাবিবুর রহমান বাচ্চু বলেন, ‘এই জমি আমার নিজস্ব সম্পত্তি। নদীর পাড়ের ভেতরে আমার আরও প্রায় ৫০ ফুট জমি আছে।’ তবে মুশুল্লি ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘নির্মাণাধীন স্থাপনাটি কোনো ব্যক্তিগত জমিতে নয়। এটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধিগ্রহণ করা জমির মধ্যে পড়ে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী বিজয় চন্দ্র বসাক বলেন, ‘সড়ক ও সেতুর দুই পাশে সওজের নিজস্ব জমি রয়েছে। সওজের জায়গায় স্থাপনা নির্মাণ করা হলে তদন্তের মাধ্যমে অপসারণ করা হবে।’

নান্দাইলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাতেমা জান্নাত বলেন, অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আপাতত নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কোন্দল, তবু আশাবাদী বিএনপি

  • চার আসনের দুটিতে বিভক্ত বিএনপি
  • ভোটারদের কাছে ছুটছেন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থীরা
  • তৎপর এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন
  • এবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ
হাসান মাতুব্বর, ফরিদপুর
কোন্দল, তবু আশাবাদী বিএনপি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুরের চারটি আসনের সব কটিতে প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। নেতা-কর্মীদের নিয়ে এলাকায় ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছেন উভয় দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তৎপর এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মতো দলগুলোও। আগামী নির্বাচনে জেলায় অন্তত ৩০ জন প্রার্থী হবেন। তাঁদের মধ্যে হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদসহ অন্তত ছয়জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন।

চার আসনের দুটিতেই বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। তবে চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠার ব্যাপারে আশাবাদী জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ কে এম কিবরিয়া স্বপন। তিনি বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ভোটে প্রভাব ফেলবে না। বিভেদ ভুলে

সবাই ধানের শীষের পক্ষেই কাজ করবে।’ জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমির মুহাম্মাদ বদরুদ্দীন বলেন, ‘চার আসনেই আমাদের ভালো অবস্থান রয়েছে। এখন ইসলামি সমমনা ৮ দলের বিষয়ে কেন্দ্র যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেটি মেনে নেওয়া হবে।’

ফরিদপুর-১

আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী ও মধুখালী উপজেলা নিয়ে ফরিদপুর-১ আসন। তিন উপজেলার মধ্যে বোয়ালমারী ও মধুখালীতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ভোট প্রায় সমান। আলফাডাঙ্গায় প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগ সমর্থক। ৫ আগস্টের পর বিএনপির প্রভাব বাড়লেও দলটির অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরমে। উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর সঙ্গে কৃষক দলের সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলামের বিবাদে নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েন। গত ৭ নভেম্বর উপজেলা সদরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। এর মধ্যে ৪ ডিসেম্বর সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে খন্দকার নাসিরুল ইসলামের নাম ঘোষণা করে বিএনপি। এ ঘোষণায় ক্ষুব্ধ শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর সমর্থকেরা।

খন্দকার নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে বহুদিন পরে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের সুযোগ এসেছে। এটি কাজে লাগাতে দলে কোনো ভেদাভেদ না রেখে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার চেষ্টা করছি।’ শামসুদ্দীন মিয়া বলেন, ‘খন্দকার নাসিরকে মনোনয়ন দিয়ে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করা হয়েছে। তাঁর কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই, এলাকায় তাঁর কোনো ভোট নেই। যারা দলকে আজকের পর্যায়ে এনেছে, তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। সমর্থকদের নিয়ে বসে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।’

জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মো. ইলিয়াস মোল্যা। নেতা-কর্মীদের নিয়ে এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। দলের জেলা আমির মুহাম্মদ বদরুদ্দীন বলেন, একজন হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে এলাকায় ইলিয়াস মোল্যার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ভোটারদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া মিলছে।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম থেকে মুফতি মো. জাকির হুসাইন কাসেমী, খেলাফত মজলিস থেকে মুফতি শারাফাত হুসাইন ও ইসলামী আন্দোলন থেকে ওয়ালিউর রহমান প্রার্থী হতে পারেন। এনসিপির মনোনয়ন পেতে পারেন হাসিবুর রহমান অপু। সাবেক ছাত্রদল নেতা আবুল বাসার খান ও সাংবাদিক আরিফুর রহমান দোলন স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

ফরিদপুর-২

সালথা ও নগরকান্দা উপজেলা নিয়ে ফরিদপুর-২ আসন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে এখান থেকে নির্বাচিত হন বিএনপির সাবেক মহাসচিব কে এম ওবায়দুর রহমান। এবার বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন তাঁর মেয়ে শামা ওবায়েদ। নির্বাচনী প্রচারে বাবার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী নগরকান্দা উপজেলা আমির সোহরাব হোসেন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হতে পারেন শাহ আকরাম আলী। ফরিদপুরে তিনি সর্বজনশ্রদ্ধেয় মুরব্বি হিসেবে পরিচিত। ইসলামি বক্তা হিসেবেও তাঁর জনপ্রিয়তা রয়েছে। শাহ আকরাম আলী বলেন, ‘আমাদের এলাকায় আলেম-ওলামাদের সমর্থক বেশি। সেই হিসেবে চেষ্টা করছি ইসলামি দলগুলোর একক প্রার্থী হতে। সভা-সমাবেশে যেভাবে সাড়া পাচ্ছি, তাতে আমি বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।’

ফরিদপুর-৩

ফরিদপুর সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা নিয়ে ফরিদপুর-৩ আসন। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আসনটি ছিল বিএনপির সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের দখলে। এবার এখানে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তাঁর মেয়ে চৌধুরী নায়াব ইউসুফ। তবে তাঁকে মেনে নিতে রাজি নন আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মোদাররেছ আলী ইছার অনুসারীরা। চৌধুরী নায়াব ইউসুফের প্রাথমিক মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সমাবেশও করেছেন তাঁরা। চৌধুরী নায়াব ইউসুফ বলেন, ‘আমার বাবা এখান থেকে বারবার নির্বাচিত হয়েছেন। এটা প্রমাণিত যে ফরিদপুর সদরের মানুষ বিএনপিকে ভালোবাসে। মানুষ গত ১৫ বছর ভোট দিতে পারেনি। তারা আবার বিএনপির শাসন ফেরাতে চায়।’

জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী আবদুত তাওয়াব নেতা-কর্মীদের নিয়ে এলাকায় ব্যাপক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রচারে দখল বাণিজ্য ও চাঁদাবাজিমুক্ত একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তিনি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ। স্বতন্ত্র হলেও তাঁকে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ২০২৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি প্রায় ৬০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন। তবে গত ১৯ অক্টোবর তাঁর গণসংযোগে বিএনপি সমর্থকদের হামলার পর তাঁকে আর মাঠে দেখা যায়নি।

খেলাফত মজলিস থেকে আমজাদ হোসাইন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম থেকে কামরুজ্জামান ও ইসলামী আন্দোলন থেকে কে এম সারোয়ার মনোনয়ন পেতে পারেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন মোর্শেদুল ইসলাম আসিফ নামের এক তরুণ। হাতেনাতে চাঁদাবাজ ধরে পুলিশে সোপর্দ করে এলাকায় আলোচনার জন্ম দিয়েছেন তিনি। ফরিদপুর পৌরসভায় নিজ উদ্যোগে মশকনিধন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

ফরিদপুর-৪

ভাঙ্গা, চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলা নিয়ে ফরিদপুর-৪ আসন। এখানে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবলু। তাঁর পৈতৃক বাড়ি ফরিদপুর-২ আসনে হলেও দল তাঁকে এখানে প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়েছে। তাঁর বিভিন্ন সমাবেশ ও উঠান বৈঠকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পদধারী নেতাদের দেখা গেছে। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী ভাঙ্গা উপজেলা আমির সরোয়ার হোসেন। সভা-সমাবেশের মাধ্যমে ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন তিনি। খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হতে পারেন মো. মিজানুর রহমান মোল্যা। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালাচ্ছেন স্থপতি মুজাহিদ বেগ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দিপুকে পিটিয়ে হত্যার পর লাশে আগুন

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
দিপু চন্দ্র দাস। ছবি: সংগৃহীত
দিপু চন্দ্র দাস। ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহের ভালুকায় দিপু চন্দ্র দাস নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার পর তাঁর লাশে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার ডুবালিয়াপাড়া এলাকার পাইওনিয়ার নিট কম্পোজিট কারখানা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, দিপু যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন সেই প্রতিষ্ঠানের সহকর্মীরাই তাঁকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, কারখানায় কর্মরত ওই শ্রমিকের বিরুদ্ধে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি জানাজানি হলে সেখানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে তাঁর মরদেহ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে গাছে ঝুলিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং এলাকায় চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং অর্ধদগ্ধ মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

দিপু চন্দ্র দাস দুই বছর ধরে ভালুকার জামিরদিয়া এলাকার পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেডে কাজ করছিলেন। তিনি জেলার তারাকান্দা উপজেলার রবি চন্দ্র দাসের ছেলে।

ভালুকা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে দিপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বিপুলসংখ্যক মানুষের কারণে তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়।’

এদিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর নিহত দিপুর স্ত্রী মেঘনা রানী বলেন, ‘আমার একমাত্র সন্তান আজ বাবা-হারা। অভাবের সংসার নিয়ে কোথায় যাব, বুঝতে পারছি না। এই হত্যার বিচার চাই।’

আর দিপু চন্দ্র দাসের বোন চম্পা দাস বিলাপ করে বলেন, ‘আমার ভাই বিএ পাস। সে সাধারণ বাটন মোবাইল ব্যবহার করত। ধর্ম নিয়ে তার যথেষ্ট জ্ঞান ছিল। মহানবীকে (সা.) নিয়ে কটূক্তি করার মতো মানুষ সে নয়। উৎপাদন বাড়ানো নিয়ে শ্রমিক ও মালিকপক্ষের সঙ্গে তার বিরোধ ছিল—এমন কথা শুনেছি। সেই কারণেই তাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, কোম্পানির লোকজন চাইলে তাঁকে জনতার হাতে তুলে না দিয়ে পুলিশের কাছে দিতে পারতেন। তাহলে এমন নির্মম মৃত্যু হতো না।

নিহত দিপুর বাবা রবি চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমার ছেলে ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করলে দেশে আইন আছে, আইনের মাধ্যমেই বিচার হতো। আমরা গরিব বলে ছেলের জীবন রক্ষা করতে পারিনি।’

এদিকে এই ঘটনার জেরে গতকাল শুক্রবার নিহত দিপুর ছোট ভাই অপু চন্দ্র দাস বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নামে ভালুকা মডেল থানায় অভিযোগ করেছেন। গতকাল বিকেলে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন ভালুকা মডেল থানার ওসি জাহেদুল ইসলাম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৭ ঘণ্টা পর ঝালকাঠির অবরোধ প্রত্যাহার, যান চলাচল স্বাভাবিক

ঝালকাঠি প্রতিনিধি  
বরিশাল–খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের ঝালকাঠি অংশে অবরোধ সাত ঘণ্টা পর প্রত্যাহার করে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
বরিশাল–খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের ঝালকাঠি অংশে অবরোধ সাত ঘণ্টা পর প্রত্যাহার করে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ইনকিলাব মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা ও মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যার প্রতিবাদে এবং খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে তাঁর নিজ জেলা ঝালকাঠিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র-জনতা। সাত ঘণ্টা পর পুলিশের অনুরোধে আজ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করা হলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

আজ জুমার নামাজ শেষে বেলা আড়াইটার দিকে বরিশাল–খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের ঝালকাঠি কলেজ মোড় এলাকায় অবরোধ শুরু করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। অবরোধ চলাকালে মহাসড়কের উভয় পাশে বিপুলসংখ্যক যানবাহন আটকে পড়ে। ফলে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তবে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, জরুরি ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় কাঁচামাল বহনকারী যান চলাচলের সুযোগ দেওয়া হয়।

অবরোধ কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণঅধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। এ সময় মহাসড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করা হয়।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন এনসিপির ঝালকাঠি জেলা আহ্বায়ক মাইনুল ইসলাম মান্না, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঝালকাঠি জেলা আহ্বায়ক আল তৌফিক লিখন, যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াসিন ফেরদৌস ইফতি, সদস্যসচিব রাইয়ান বিন কামাল, গণঅধিকার পরিষদ ঝালকাঠি জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঝালকাঠি-২ আসনের মনোনীত প্রার্থী মাহমুদুল ইসলাম সাগরসহ অন্য নেতারা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঝালকাঠি জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াসিন ফেরদৌস ইফতি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একজন গুরুত্বপূর্ণ সহযোদ্ধাকে দুর্বৃত্তরা গুলি করে হত্যা করেছে। তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। হামলাকারীদের ইন্টারপোলের মাধ্যমে দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

ঝালকাঠি সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) বেলায়েত হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, বেলা আড়াইটায় অবরোধ শুরু হওয়ায় বরিশাল–খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি শান্ত করা হলে তাঁরা রাত সাড়ে ৯টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহারে সম্মত হন। পরে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত