Ajker Patrika

এক শামিয়ানার নিচে ৫ ছেলের শ্রাদ্ধ, কেমনে সইবেন মৃণালিনী

মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
এক শামিয়ানার নিচে ৫ ছেলের শ্রাদ্ধ, কেমনে সইবেন মৃণালিনী

তিন বছরের আয়ুশ্রী সুশীল এদিক-সেদিক তাকাচ্ছে। চোখে তার উৎসুক দৃষ্টি। তার দিকে তাকানোর সুযোগ বাড়ির কারোর নেই। পাশেই মা দেবী সুশীল হাতের শাঁখা খুলে মাথার সিঁদুর মুছে সাদা শাড়ি পরেছেন। বাড়ির দরজায় দাদি ও চার কাকিমা একই বেশে দাঁড়িয়েছেন। সঙ্গে জ্যেঠাত ভাইয়েরাও সাদা থান কাপড় পরা। সবাই শোকে পাথর। 

আজ শুক্রবার দুপুরের এই বেদনাদায়ক দৃশ্য আয়ুশ্রীর ছোট জীবনে যেমন নতুন এক অভিজ্ঞতা, তেমনি বাড়ির উঠানে সমবেত লোকজনের মাঝেও নতুন। একটি বাড়িতে এক শামিয়ানার নিচে পাঁচজনের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান অতীতে এ গ্রামের কেউ দেখেনি। 
 
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাট হাসিনাপাড়া গ্রামে অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য পরিদর্শক সুরেশ চন্দ্র সুশীলের পুরোনো টিনশেড বাড়ি। এ বাড়িতেই পাঁচ ভাইয়ের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।  

এই শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের শামিয়ানা টাঙানো হয়েছিল মূলত সুরেশ চন্দ্রের জন্য। তিনি ৩০ জানুয়ারি মারা যান। বাবার শ্রাদ্ধ করতে যার যার কর্মস্থল থেকে বাড়ি এসেছিলেন তাঁর নয় সন্তান। গত মঙ্গলবার ভোরে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার একটি অংশ পালন করতে গিয়ে বেপরোয়া পিকআপ ভ্যানের চাপায় পাঁচ ভাই প্রাণ হারান। এক ভাই ও এক বোন এখনো হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা থেকে অক্ষত ফেরা প্লাবন সুশীল (১৯) মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
 
আজ সকাল থেকে পাড়াপড়শি ও আত্মীয়-স্বজন পাঁচ ভাইয়ের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে আসতে শুরু করে। বাড়ির উঠানে বাবার শ্রাদ্ধের জন্য টাঙানো শামিয়ানার নিচে পাঁচ ছেলেরও শ্রাদ্ধের সব আয়োজন করেন পুরোহিত। এখানেই গতকাল বৃহস্পতিবার বাবা সুরেশের শ্রাদ্ধ হয়েছে। 
 
এক শামিয়ানার নিচে পাঁচ ভাইয়ের শ্রাদ্ধবেলা ১১টায় গিয়ে দেখা যায়, প্যান্ডেলের এক পাশে পাঁচ ভাইয়ের ছবি রাখা। ছবিতে ফুলের মালা পরানো। সামনে এসে একে একে বসছেন অসময়ে বাবা হারানো সন্তান ও সদ্য বিধবা পাঁচ বধূ। পুরোহিত ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা সারছেন। পাশে রান্নাবান্নার আয়োজন চলছে। 

পাঁচ সন্তান ও স্বামীকে হারিয়ে শোকে পাথর মৃণালিনী সুশীল মানু (৬৫)। এ অবস্থাতেই জামাই খগেশ চন্দ্র খোকনকে সঙ্গে নিয়ে সবকিছু দেখভাল করছেন।  

মানু সুশীল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিন সন্তানের জন্য সবাইকে প্রার্থনা করার জন্য অনুরোধ করছেন। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তার কাছে একটাই প্রার্থনা এই বিপর্যয় যেন আর কোনো পরিবারে না আসে। ভগবান এ কেমন পরীক্ষায় ফেললেন! দুবছর আগে এক ছেলেকে অকালে হারালাম, স্বামী হারার ১০ দিনের মধ্যে সব হারালাম। এখন ভগবান ছাড়া আমাদের দেখার কেউই থাকল না।’ 

মুন্নী সুশীলের স্বামী খগেশ চন্দ্র খোকন। তিনি বলেন, ‘শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান শেষে ১ হাজার মানুষকে খাওয়ানো হবে। সাদা ভাতের সঙ্গে নিরামিষ।’ 

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ভোরে বাড়ির অদূরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে পিকআপ ভ্যানের চাপায় পাঁচ ভাই অনুপম সুশীল (৪৬), নিরুপম সুশীল (৪০), দীপক সুশীল (৩৫), চম্পক সুশীল (৩০) ও স্মরণ সুশীল (২৮) নিহত হন। আহত হন তাঁদের আরও তিন ভাই–বোন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ