Ajker Patrika

নোয়াখালীর হাতিয়া

ইলিশের আকাল, হতাশ জেলে

  • নিষেধাজ্ঞা শেষে ১ জুলাই শুরু হয়েছে ইলিশ শিকারের মৌসুম। চলবে আগস্ট পর্যন্ত।
  • হাতিয়ার বড় ২০টি ঘাটের ছোট-বড় প্রায় ১০ হাজার নৌকা নদীতে বিচরণ করে ইলিশ ধরতে।
  • এখন দিনে ৩০-৪০টি ট্রলার নদীতে যায়।
ইসমাইল হোসেন কিরন,  হাতিয়া (নোয়াখালী)  
আপডেট : ২২ জুলাই ২০২৫, ০৭: ৪৬
নোয়াখালীর হাতিয়ায় নদীতে ইলিশ না পাওয়ায় ঘাটের খালে ভিড়িয়ে রাখা হয়েছে নৌকা। সম্প্রতি সূর্যমুখী ঘাট এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
নোয়াখালীর হাতিয়ায় নদীতে ইলিশ না পাওয়ায় ঘাটের খালে ভিড়িয়ে রাখা হয়েছে নৌকা। সম্প্রতি সূর্যমুখী ঘাট এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঘাটে নেই চিরচেনা হাঁকডাক। চায়ের দোকানে উচ্চ স্বরে বাজছে না গান। পাওয়া যাচ্ছে না বরফ ভাঙার আওয়াজ। জেলে, শ্রমিক, ব্যাপারী, আড়তদার—সবাই ঝিমিয়ে আছেন। চোখেমুখে হতাশার চাপ। কারণ, শিকারের মৌসুমে ইলিশের আকাল চলছে। নদীতে যাওয়া জেলে নৌকাগুলো শূন্য হাতে ফিরে আসছে। নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ২০টি বড় ঘাটে এখন এই মন্দা অবস্থা চলছে।

ইলিশ শিকার ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞা শেষে ১ জুলাই থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে ইলিশের ভরা মৌসুম। চলবে আগস্ট পর্যন্ত। প্রতিবছর এ সময় দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার জেলেরা নদীতে রুপালি ইলিশ শিকারে ব্যস্ত সময় পার করেন। এখানকার নিঝুম দ্বীপ, বন্দরটিলা, সুইজের ঘাট, মোক্তারিয়া, দানারদোল, সূর্যমুখী, কাজিরবাজার, বাংলাবাজার, চেয়ারম্যান ঘাটসহ বড় ২০টি ঘাটের ছোট-বড় প্রায় ১০ হাজার জেলে নৌকা নদীতে বিচরণ করে ইলিশ ধরতে।

জেলেরা জানান, এ বছর জালে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। প্রতিদিন প্রায় শূন্য হাতে ঘাটে ফিরতে হচ্ছে তাঁদের। মৌসুমের প্রায় অর্ধেক সময় চলে গেলেও এখনো লাভের মুখ দেখেননি তাঁরা। নদীতে নামতে গিয়ে দিন দিন দেনার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সূর্যমুখী ঘাটের দক্ষিণে খালপাড়ে বসে ছিলেন সবুর আলী (৫৫)। বাড়ি ভোলার দৌলতখানে। ভালো মাছ পাওয়ার আশায় গত সপ্তাহে এখানে এলেও এখনো সেই আশা পূরণ হয়নি। সবুর জানান, প্রতিদিন দেনা করে নদীতে গেলেও শূন্য হাতে ফিরতে হয়। এ কারণে গত চার দিন নদীতে না গিয়ে ঘাটে বেকার বসে আছেন। বাড়ি থেকে আসার সময় সংসার খরচ চালানোর জন্য এক টাকাও দিয়ে আসতে পারেননি। পরিকল্পনা ছিল, নদীতে মাছ ধরে বাড়িতে টাকা পাঠাবেন। এখন সেই পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।

সবুরের মতো অনেকে নদীতে না গিয়ে ঘাট এলাকায় বেকার সময় কাটাচ্ছেন। আব্দুর রব মাঝি জানান, তাঁর ইঞ্জিনচালিত নৌকায় আটজন কাজ করেন। মাছ না পাওয়ায় তিনি ইতিমধ্যে দেড় লাখ টাকা দেনার মধ্যে পড়ে গেছেন। তাঁর দুই লোক কাউকে কিছু না বলে গোপনে চট্টগ্রাম চলে গেছেন। এখন নৌকাটি ঘাটে পড়ে আছে।

রব মাঝির তথ্য অনুযায়ী, সূর্যমুখী ঘাটে স্থানীয় ও বাইরের মিলিয়ে ৫ শতাধিক ট্রলার রয়েছে। দিনে ৩০-৪০টি ট্রলার নদীতে যায়। মাছ না থাকায় অন্যরা ঘাটে বেকার সময় পার করছেন।

ঘাটের শ্রমিক সর্দার নূর ইসলাম জানান, তাঁর অধীনে ৮৫ শ্রমিক কাজ করেন। কোনো নৌকা বা ট্রলার ভিড়লে তাঁরা সেখান থেকে মাছ টুকরিতে করে নিলামের বাক্সে এনে দেন। প্রতিদিন যে টাকা পান তা ভাগ করে নেন ৮৫ জন। এ বছর প্রতিদিন কাজ শেষে ভাগে প্রত্যেকে ৩০-৪০ টাকা করে পাচ্ছেন। এতে নিজেদের চা-নাশতার খরচই হচ্ছে না। সংসার চলছে দেনা করে।

এ নিয়ে কথা হলে সূর্যমুখী ঘাট মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফয়েজুর রহমান নান্টু বলেন, ‘১৯৯৩ সাল থেকে আমি মাছ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু এই বছরের মতো এত কঠিন অবস্থা আর কখনো দেখিনি। মৌসুমের প্রথম থেকেই মাছ নেই। অনেকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে অন্যত্র চলে গেছেন। ঘাটে পড়ে থাকা অসংখ্য নৌকার জেলেরা পালিয়ে গেছেন। ঘাটে সবার মুখে হতাশা।

শুধু সূর্যমুখী ঘাটে নয়, একই অবস্থা হাতিয়ার ২০টি ঘাটে। মাছ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সবাই অনেকটা দেউলিয়া হয়ে পড়েছেন।’

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফাহাদ হাসান ভরা মৌসুমে ইলিশ না পাওয়ার কারণ হিসেবে জাটকা নিধন, মা ইলিশ ধরা ছাড়াও নদীতে ডুবোচর ও জলবায়ুর পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করেন। এ ছাড়া তিনি জানান, কলকারখানার বর্জ্য নদীতে আসায় সেখানে মাছের বিচরণ অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। এ জন্য নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তিনি আশা করছেন, মৌসুমের সামনের সময়গুলোতে আশানুরূপ ইলিশ পাওয়া যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘গুলি কর’ বলে কাস্টমস কর্মকর্তাদের ওপর হামলার ঘটনায় ২ ভাড়াটে গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান খান ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) বদরুল আরেফিন ভূঁইয়ার গাড়িতে হামলার ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা (পশ্চিম) বিভাগ।

বান্দরবান সদর উপজেলার সিকদারপাড়া এলাকা থেকে আজ বৃহস্পতিবার ভোরে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন কাজী মো. ইমন হোসেন (২৩) ও মো. সুজন (২৪)। তাঁরা নগরের আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায় বসবাস করেন বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ পশ্চিম জোনের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ মাহবুব আলম খান জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার দুজন এবং পলাতক একজনসহ মোট তিনজন হামলার ঘটনায় জড়িত। কাস্টমস কর্মকর্তাদের ওপর হামলার জন্য তাঁদের ভাড়া করা হয়েছিল।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে পুলিশ জানিয়েছে, কাস্টমস কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি দেখানোর জন্য ‘এক ব্যক্তি’ টাকার বিনিময়ে ওই তিনজনকে ভাড়া করে এই ঘটনায় ঘটান। কী কারণে এবং কত টাকায় ওই ব্যক্তিদের ভাড়া করা হয়েছিল, সে বিষয়ে জানতে পুলিশ তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে।

পুলিশ ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, গত ৪ ডিসেম্বর সকালে প্রাইভেট কারে চড়ে অফিসে যাচ্ছিলেন আসাদুজ্জামান খান ও বদরুল আরেফিন ভূঁইয়া। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁরা নগরের ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায় পৌঁছালে তিন ব্যক্তি মোটরসাইকেলে এসে হঠাৎ সামনে থেকে তাঁদের গতি রোধ করে। মুহূর্তের মধ্যে গাড়িতে হামলা ও কাচ ভাঙচুর শুরু করে তারা। তাদের একজনের হাতে চাপাতি ছিল। গাড়ির কাছে এসে প্রথমে চাপাতি দিয়ে গাড়িতে কোপ দেয় একজন। এ সময় তারা ‘গুলি কর, গুলি কর’ বলে চিৎকার করতে থাকে। হামলা ও গুলি করার হুমকির মুখে ওই দুই কর্মকর্তা কোনোমতে গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে পাশের একটি গলিতে আশ্রয় নেন।

হামলার পর কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান খান ডবলমুরিং থানায় অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলা হওয়ার পরই মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের একটি দল ঘটনার সূত্র উদ্‌ঘাটন এবং হামলাকারীদের শনাক্তে কাজ শুরু করে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে বান্দরবানের সিকদারপাড়া এলাকা থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা হামলার দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করেছে। পরিকল্পনা করে এই হামলা চালানো হয়েছে।

ডিসি মোহাম্মদ মাহবুব আলম খান বলেন, ‘গ্রেপ্তার দুজনের সঙ্গে কাস্টমস কর্মকর্তাদের কোনো পূর্বশত্রুতা ছিল না। হামলাকারীদের কত টাকায় ভাড়া করা হয়েছিল, আমরা এখনো জানতে পারিনি। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তবে যিনি ভাড়া করেছিলেন, তাঁর বিষয়ে তথ্য পেয়েছি। হামলার সময় যে মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি ওই (ভাড়া করা) ব্যক্তির। তদন্তের স্বার্থে তাঁর পরিচয় এই মুহূর্তে প্রকাশ করা যাচ্ছে না।’

এদিকে হামলার পর কাস্টমস কর্মকর্তারা বলেছিলেন, অবৈধভাবে পণ্য খালাসে বাধা দেওয়ার কারণেই চট্টগ্রামে কাস্টমসের দুই কর্মকর্তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটতে পারে বলে তাঁদের ধারণা। প্রায় ৪০ কোটি টাকা মূল্যের দুটি চালান জব্দ করার কারণে একটি সংঘবদ্ধ মহল তাঁদের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকায় মা-মেয়ে খুন: আগের চুরির সূত্র ধরেই গ্রেপ্তার হন আয়েশা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আয়েশা আক্তার
আয়েশা আক্তার

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যাকাণ্ডের আসামি গৃহকর্মী আয়েশা আক্তার গ্রেপ্তার হয়েছেন পাঁচ মাস আগের এক জিডিতে উল্লেখ থাকা গলায় পোড়া দাগের তথ্যের সূত্র ধরে। আয়েশার পরিচয় লুকানোর চেষ্টার কারণে সূত্রহীন ছিল পুলিশ। শেষ পর্যন্ত গলায় পোড়া দাগের তথ্যের সূত্র ধরে হত্যাকাণ্ডের দুদিন পর গত বুধবার দুপুরে ঝালকাঠির নলছিটি থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে তাঁকে। গ্রেপ্তার হয়েছেন তাঁর স্বামী রাব্বীও।

মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ এই জোড়া খুনের মামলায় গতকাল বৃহস্পতিবার গৃহকর্মী আয়েশাকে ৬ দিন ও তাঁর স্বামীকে ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে।

মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের একটি ১৪ তলা ভবনের সপ্তম তলার নিজেদের ফ্ল্যাটে গত সোমবার সকালে খুন হন গৃহকর্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তাঁর একমাত্র সন্তান নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫)। এ ঘটনায় সেদিন রাতে গৃহকর্মী আয়েশাকে একমাত্র আসামি করে মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত লায়লার স্বামী স্কুলশিক্ষক আ জ ম আজিজুল ইসলাম। খুনের মাত্র চার দিন আগে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ওই বাসায় কাজ নিয়েছিলেন আয়েশা।

পুলিশের সূত্র জানায়, ঘটনার পর ভবনের সিসি ক্যামেরা ফুটেজে সোমবার সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে বোরকা পরে আয়েশার ভবনে প্রবেশ এবং সকাল ৯টার পর স্কুলড্রেস ও মাস্ক পরে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে একজনের বের হওয়ার তথ্য মেলে। তবে তাঁর মুখ ছিল ঢাকা। আয়েশার মোবাইল নম্বর, ছবি, চেহারার বর্ণনা, ঠিকানা—কিছুই ছিল না পুলিশের কাছে। ফলে তদন্তের শুরুতেই অন্ধকারে হাতড়াতে হয়েছে।

তদন্তকারীরা জানান, আয়েশার চুরির অভ্যাস নতুন নয়। এর আগে জুলাইয়ে কাছাকাছি আরেকটি বাসায় ৮ হাজার টাকা চুরির ঘটনায় গৃহকর্মীর বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল মোহাম্মদপুর থানায়। সেখানে অভিযুক্তের গলায় পোড়া দাগ থাকার তথ্য ছিল।

ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার এস এন মো. নজরুল ইসলাম জানান, আগের একটি জিডির নথি ঘেঁটে পুলিশ জানতে পারে জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় এমন এক গৃহকর্মীর নাম আয়েশা, যাঁর গলায় পোড়া দাগ রয়েছে। সেখান থেকেই পাওয়া যায় একটি পুরোনো মোবাইল নম্বর, যার সূত্রে সামনে আসে রাব্বী নামের একজন যুবক। তাঁর দেওয়া তথ্য মিলিয়ে দেখা যায়, রাব্বীর স্ত্রীই আয়েশা, যিনি গৃহকর্মীর কাজ করেন এবং জেনেভা ক্যাম্পের ভাড়া বাসায় থাকেন। এই সূত্র ধরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নিশ্চিত হয় পুলিশ।

পুলিশ জানায়, আয়েশা ও রাব্বীর সম্ভাব্য অবস্থান ধরে সাভারের হেমায়েতপুর, পটুয়াখালীর দুমকী হয়ে শেষ পর্যন্ত ঝালকাঠির নলছিটিতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। উদ্ধার হয় ওই বাসা থেকে খোয়া যাওয়া ল্যাপটপ।

তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আয়েশা হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন। বাসায় কাজ শুরুর দ্বিতীয় দিনে তিনি ২ হাজার টাকা চুরি করেন। এ নিয়ে গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে তাঁর তর্ক-বিতর্ক হয়; তাঁকে পুলিশের দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। চতুর্থ দিন কাজে যাওয়ার সময় তিনি সঙ্গে করে একটি সুইচ গিয়ার চাকু নেন। চুরির বিষয়টি নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডা ও ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তিনি লায়লা আফরোজকে ছুরিকাঘাত করেন। নাফিসা এগিয়ে এলে তাকেও ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে নিজের রক্তাক্ত পোশাক বদলে নাফিসার স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে বেরিয়ে যান আয়েশা। এরপর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে পোশাক পাল্টে সাভারের দিকে যান। পথে সিঙ্গাইর সেতু থেকে ফেলে দেন রক্তমাখা কাপড় ও চুরি করা মোবাইল।

ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান বলেন, ঘটনার সময় নাফিসা ঘুমাচ্ছিল। ধস্তাধস্তির শব্দে জেগে উঠে নিরাপত্তাকর্মীকে জানাতে ইন্টারকম ধরতেই তাকে আক্রমণ করেন আয়েশা।

পুলিশের ধারণা, কেবল ২ হাজার টাকার বিষয় নয়, আগে থেকেই আয়েশার চুরির পরিকল্পনা ছিল। ধরা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় জোড়া খুন করেছেন।

পুলিশ বলছে, আয়েশার স্বামী রাব্বীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁকে পালাতে সহায়তা করার অভিযোগে। গৃহকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি এবং বিশ্বাসযোগ্য দু-একজনের যোগাযোগ নম্বর সংরক্ষণের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।

এদিকে গতকাল আয়েশা ও রাব্বীকে এই হত্যা মামলায় আদালতে হাজির করে মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক মো. সহিদুল ওসমান মাসুম প্রত্যেকের ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলম শুনানি শেষে আয়েশার ৬ দিন ও তাঁর স্বামীর ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালতে তাঁদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।

আদালতের সহকারী পিপি হারুন-অর-রশিদ রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, গৃহকর্মী আয়েশা খুনের সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকার করেছেন। তবে খুনের মূল রহস্য কী, তা খুঁজে বের করতে এবং এ ঘটনার পেছনে আরও কেউ জড়িত রয়েছে কি না, তা উদ্ঘাটনের জন্য তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন। রাব্বীও এই ঘটনায় জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সব চেষ্টা—আকুতি বিফলে, মায়ের কোলে মৃত সাজিদ

  • দুই বছরের শিশু সাজিদ গর্তে পড়ে যায় বুধবার দুপুরে।
  • উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাজিদকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৩৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর তানোরে শিশু সাজিদ যে গর্তে পড়ে গিয়েছিল, সেই গর্তের গভীরতা ছিল ৩০-৩৫ ফুট। এমনটা বলা হচ্ছিল এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৪৫ ফুট পর্যন্ত খোঁড়া হয়। তখনো মেলে না সাজিদের সন্ধান। তবে থামেনি উদ্ধারকাজ। অবশেষে রাত ৯টার দিকে তার সন্ধান মেলে। ৩২ ঘণ্টা পর সাজিদের লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস।

গত বুধবার তানোর উপজেলার কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামে গভীর নলকূপের জন্য খনন করা ওই গর্তে পড়ে যায় সাজিদ। এরপর বেলা ২টা ৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল উদ্ধার অভিযান শুরু করে। অভিযানে একে একে যোগ দেয় আটটি ইউনিট। উদ্ধারকাজ শেষে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘রাত ৯টায় শিশুটিকে আমরা উদ্ধার করেছি। পরে শিশুটিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে চিকিৎসকেরা জানাবেন।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথেও ফায়ার সার্ভিস আশা করেছিল, সাজিদ বেঁচে আছে। তবে স্বাস্থ্য পরীক্ষার খবর আসে, সে আর বেঁচে নেই।

সাজিদ যে গর্তে পড়ে গিয়েছিল, সেটির ব্যাসার্ধ ছিল ৮ ইঞ্চি। সরু গর্তে অক্সিজেন পাঠানো সম্ভব না হওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয় অক্সিজেন সরবরাহ। এতে খানিকটা হতাশ হয়ে পড়েন উদ্ধারকর্মীরা। তবে আশার আলো নিভে গেলেও কয়েক হাজার মানুষ অপেক্ষা করে ঘটনাস্থলে।

গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে সাংবাদিকদের সামনে এসে চোখের ভাষা লুকোতে পারেননি ফায়ার সার্ভিসের অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স বিভাগের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী। জানান, গর্তে ক্যামেরা নামিয়ে দেখেছেন—৩০ ফুটের পর জমে আছে মাটি আর খড়ের স্তূপ। স্থানীয়রা শিশুটিকে তোলার চেষ্টা করতে গিয়ে অজান্তেই সেসব ঠেলে দিয়েছেন ভেতরে।

শিশু সাজিদের বাড়ি রাজশাহীর তানোর উপজেলার কোয়েলহাট পূর্বপাড়ায়। বাবা রাকিবুল ইসলাম, মা রুনা খাতুন। সন্তানটিকে একবার দেখা, বুকে জড়িয়ে ধরার আশায় ছিলেন তাঁরা। সাজিদের মা রুনা খাতুন দুপুরে ঘরে বসে ছিলেন। বললেন, ‘কছির উদ্দিন তিন জায়গা খুঁড়েছিল...দুই বছর ধরে গর্ত বন্ধ না করে রেখেছিল। কেন রেখেছিল? আমি তার বিচার চাই...কছিরের শাস্তি চাই।’

শিশুটি যে গর্তে পড়ে গেছে, সেটিসহ পাশে একই জায়গায় আরও দুই জায়গায় গভীর নলকূপের জন্য গর্ত করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা ও জমির মালিক কছির উদ্দিন। পানি না পেয়ে সব গর্তই খোলা ফেলে রেখেছিলেন দুই বছর ধরে। আর সেই অবহেলার বলি হলো দুই বছরের সাজিদ। লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, গর্তটি খোঁড়া হয়েছিল ৯০ ফুট পর্যন্ত।

এত গভীরতা পর্যন্ত খনন করতে হয়নি ফায়ার সার্ভিসকে। রাত ৯টায় উদ্ধারকাজ শেষ হয়। শেষ হয় শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান। সাজিদের সন্ধান মিলল ঠিকই। তবে মৃত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মাদক সেবনের টাকা না পেয়ে ঘরে আগুন দিলেন যুবক

 টঙ্গিবাড়ী (মুন্সিগঞ্জ) প্রতিনিধি
মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় মাদক সেবনের টাকা না পেয়ে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক যুবক নিজেদের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় মাদক সেবনের টাকা না পেয়ে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক যুবক নিজেদের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় মাদক সেবনের জন্য টাকা চেয়ে না পেয়ে ক্ষোভে এক যুবক নিজেদের ঘরে আগুন দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাঁর নাম মহসিন মাদবর (২৬)। আজ বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার কাঠাদিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত মহসিন মাদক সেবনের জন্য বাবার কাছে টাকা দাবি করে আসছিলেন। ঘটনার দিন তিনি আবারও টাকা চান। বাবা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ক্ষিপ্ত হয়ে নিজের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেন মহসিন। স্থানীয়রা দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও ঘরের বেশ কিছু আসবাব পুড়ে যায়।

মহসিন মাদবর ওই গ্রামের হোসেন মাদবরের ছেলে। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে আসে। মহসিনকে আটকের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

টঙ্গিবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জাহিদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, মাদকাসক্ত এক যুবক মাদকের টাকার জন্য নিজেদের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেন। স্থানীয়দের সহযোগিতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। তাঁকে পাওয়া যায়নি, তবে আটকের চেষ্টা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত