বরিশালে শতাধিক ভাটায় পুড়ছে গাছ

  • হাইকোর্টের নির্দেশনা উপেক্ষা করেই চলছে ইটভাটা
  • মাঝেমধ্যে অভিযান চলে ইটভাটায়, আবারও চালু হয়
  • জেলায় এখন শতাধিক অবৈধ ইটভাটা
  • জেলার চরাঞ্চলে রয়েছে সবচেয়ে বেশি ইটভাটা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬: ৫৭
Thumbnail image
বরিশালের বাকেরগঞ্জের কলসকাঠী এলাকার অবৈধ একটি ইটভাটায় পোড়ানোর জন্য রাখা কাঠ। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশালে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই বাড়ছে ইটভাটা। সেসব ভাটায় কাঠ দিয়ে পোড়ানো হচ্ছে ইট। এতে উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এখনো শতাধিক অবৈধ ইটভাটা রয়েছে বরিশাল জেলায়। মাঝেমধ্যে এসব ভাটা বন্ধে অভিযান চালানো হয়, জরিমানাও করা হয়। তবে এরপরও থামে না ভাটার কার্যক্রম।

অবৈধ ইটভাটা বন্ধ বা উচ্ছেদের নির্দেশনা চেয়ে পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে ২০২২ সালে একটি রিট করা হয়। এই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের মার্চে হাইকোর্ট একটি নির্দেশনা দেন। গত বছরের ১৫ মার্চের ওই নির্দেশনা অনুসারে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা ও বরিশাল বিভাগে অবৈধ ১ হাজার ৮৪টি ইটভাটা বন্ধ বা অপসারণ করতে হবে। ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক ও বিভাগীয় কমিশনারদের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এই নির্দেশনা পর্যন্তই। মাঝেমধ্যে অভিযান চালানো হয়, কয়েক দিন উৎপাদন বন্ধ থাকে। এরপর সরকারের বিভিন্ন দপ্তরকে ম্যানেজ করে আবারও শুরু হয় ইট উৎপাদন।

বরিশালে সবচেয়ে অবৈধভাবে ইট পোড়ানো হয় চর এলাকার ভাটায়। জেলায় গত এক সপ্তাহে ১১টি অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

গত বৃহস্পতিবার বরিশাল সদর উপজেলার চারটি অবৈধ ইটভাটা থেকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। পাশাপাশি চারটি ইটভাটার কিলন ও চিমনি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়, ধ্বংস করা কাঁচা ইট। পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুলতানা সালেহা সুমীর নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

এর আগে গত বুধবার মেহেন্দীগঞ্জের প্রত্যন্ত চরে তিনটি এবং বাকেরগঞ্জের কলসকাঠীর পাঁচটি অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। গত তিন দিনে ১১টি ইটভাটা ভেঙে ফেলার পাশাপাশি জরিমানা করা হয়েছে ৭ লাখ টাকা। কিন্তু এরপরও থেমে নেই প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাঠ পোড়ানো। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় ১১১টি অবৈধ ইটভাটা ছিল। এর মধ্যে ১১টি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখনো ১০০টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে হিজলায়, ২০টি। এরপর জেলা সদরে ১১টি।

জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল জেলার সহকারী পরিচালক কাজী সাইফুদ্দিন বলেন, ড্রাম চিমনি একবার ভাঙলে আবার মালিকেরা গড়ে তোলেন। বিশেষ করে প্রত্যন্ত চরের ইটভাটার মালিকেরা এ বিষয়ে বেপরোয়া। ওইসব এলাকায় ভয়ের কারণও আছে। অবৈধ আরও শতাধিক ভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর কথা জানিয়েছেন তাঁরা।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বরিশালের সমন্বয়ক রফিকুল আলম বলেন, ইটভাটা বাতাসে কার্বনের মানমাত্রা বাড়িয়ে দূষণ ঘটায়। এগুলো প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমনভাবে গজিয়ে উঠেছে যে, ভাঙলেও আবার গড়ে ওঠে। পরিবেশ অধিদপ্তরের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় উচ্ছেদ ধীরগতিতে হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত