Ajker Patrika

মাদ্রাসার খাবার নষ্টের ঘটনায় বিএনপি নেতাকে শোকজ, দলীয় কোন্দল প্রকাশ্যে

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি 
বুধবার বিকালে শালিস বৈঠকে বক্তব্য দেন অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বুধবার বিকালে শালিস বৈঠকে বক্তব্য দেন অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিএনপির নেতা-কর্মীদের দাওয়াত না দেওয়ায় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের আয়োজিত সব খাবার খেয়ে ও নষ্ট করে ফেলার ঘটনায় জড়িত গুলিশাখালী ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি মাহবুব কাজীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে আমতলী উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম মামুন ভিপি ও সদস্যসচিব তুহিন মৃধার স্বাক্ষরিত এক পত্রে তাঁকে এই নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশে ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সশরীর উপস্থিত হয়ে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

অপর দিকে ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি জসিম উদ্দিন দায়সারা সালিসের ব্যবস্থা করেছেন বলেও অভিযোগ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. আলী হোসেনের।

জানা গেছে, আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ন ম ম আমজাদিয়া আলিয়া মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটি ৪ সেপ্টেম্বর গঠন করা হয়। ওই কমিটির প্রথম সভা ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। সভা উপলক্ষে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ৫০ জন আমন্ত্রিত অতিথির জন্য ওই দিন দুপুরের খাবারের আয়োজন করে।

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. আলী হোসেনের অভিযোগ, কমিটি গঠনের আগে ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন তাঁকে কমিটির সভাপতি করার নির্দেশ দেন। কিন্তু তাঁকে সভাপতি না করায় তিনি ক্ষুব্ধ হন। এর প্রতিশোধ নিতে তিনি তাঁর সহযোগী মাহবুব কাজী ও রিপন কাজীর নেতৃত্বে ৩০-৩৫ জন নেতা-কর্মীকে মাদ্রাসায় পাঠান। তাঁরা মাদ্রাসার খাবার খেয়ে চলে যান। অবশিষ্ট খাবার যাতে অতিথিরা খেতে না পারেন, সে জন্য খাবারের পাতিলে টিস্যু ও উচ্ছিষ্ট ফেলে রেখে যান। পরে তাঁরা শিক্ষক, কর্মচারী ও সভায় আমন্ত্রিত অতিথিদের হুমকি দিয়ে চলে যান—এমন অভিযোগ শিক্ষকদের। তাঁদের ভয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা নিতে সাহস পায়নি।

ঘটনার পর গুলিশাখালী ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি রিপন কাজী তাঁর ফেসবুক আইডি থেকে মাদ্রাসার খাবারের ছবি দিয়ে ‘পিকনিকের কিছু স্মৃতি’ লিখে পোস্ট করলে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

ঘটনার চার দিন পর আজকের পত্রিকায় ‘দাওয়াত না দেওয়ায় মাদ্রাসার সব খাবার খেয়ে গেলেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা’ শিরোনামে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ঘটনার নিন্দা জানিয়ে জড়িত বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আইনগত ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ওঠে। এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে বুধবার বিকেলে ঘটনার অন্তরালে কলকাঠি নাড়া গুলিশাখালী ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন ও বিএনপি নেতা ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মো. ফারুক আকন মাদ্রাসায় সালিস বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠকে তাঁরা মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে মিলেমিশে থাকার নির্দেশ দেন। কিন্তু মাদ্রাসার অধ্যক্ষ তাঁদের সিদ্ধান্ত না মেনে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

ন ম ম আমজাদিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. আলী হোসেন বলেন, ‘গত বুধবার অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন, ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) ফারুক আকন মাদ্রাসায় এসে সালিস বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠকে তিনি (জসিম) আমাকে কিছুই ঘটেনি মর্মে ভিডিওতে বক্তব্য দিতে বলেন; কিন্তু আমি তা না দিয়ে আসরের নামাজ পড়তে চলে যাই।’

এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. জহিরুল ইসলাম মামুন (ভিপি) ও সদস্যসচিব তুহিন মৃধার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য মাহবুব কাজীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

গুলিশাখালী ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি মাহবুব কাজী বলেন, ‘আমি কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশ পাইনি। তবে মৌখিকভাবে নোটিশের কথা শুনেছি।’

গুলিশাখালী ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক এবং বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি জসিম উদ্দিন তাঁর সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘মাদ্রাসার সভাপতি মো. ফজলুল হক আমাকে মাদ্রাসার ঝামেলা নিরসনে যেতে অনুরোধ করেন। তাঁর অনুরোধে মাদ্রাসায় গিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা।’

আমতলী উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব তুহিন মৃধা বলেন, মাহবুব কাজী একটি মাদ্রাসায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে না মর্মে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সশরীর উপস্থিত হয়ে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। না হলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়কের সালিস বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁর এমন কাজ করা ঠিক হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাসার দরজা ভেঙে চবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

চবি প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ওমর ফারুক সুমন নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকার একটি বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

ওমর ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যরা জানান, সুমন খুলশীতে তাঁর মামার বাসায় থাকতেন। তাঁর বড় ভাইও সেখানে থাকেন। দুই দিন আগে সুমনের মামা পুরো পরিবার নিয়ে তুরস্কে বেড়াতে যান। বাসায় সুমন ও তাঁর বড় ভাই ছিলেন। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সুমন। ফোনে তাঁর বড় ভাই কখন বাসায় ফিরবেন জানতে চান সুমন। বড় ভাই জানান যে তাঁর আসতে একটু দেরি হবে। এর কিছুক্ষণ পর বড় ভাই সুমনকে ফোন করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। পরে বাড়ি থেকে সুমনের মা ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতে না পেরে বিষয়টি বড় ভাইকে জানান। এতে উদ্বেগ দেখা দিলে বড় ভাই বিল্ডিংয়ের দারোয়ানকে দিয়ে বাসা চেক করান।

দারোয়ান কলিংবেল বাজিয়েও কোনো সাড়া না পেয়ে বড় ভাইকে জানালে তিনি দ্রুত বাসায় এসে সুমনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে চিরকুট মিলেছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘আমি সুমন, ওমর ফারুক সুমন। আমার কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা নেই। আর আমার কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। সবাই ভালো থাকবেন।’ এর আগে ১ ডিসেম্বর লেখা আরেকটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল—‘আশাই জীবন, আশাই মরণ, ব্যর্থতা হতাশা-অন্ধকারে নিয়ে যায়।’

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর জামান বলেন, ‘সুমন ও তাঁর বড় ভাই একসঙ্গে মামার বাসায় থাকতেন। মামা ও মামি বর্তমানে বিদেশে আছেন। বড় ভাই সন্ধ্যায় বাইরে যান। সে সময় সুমন বাসায় একা ছিলেন। বড় ভাই বাসায় ফিরে এসে বারবার ডাকলেও ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে সুমনের মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যা মনে হলেও আমরা সব সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখছি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বদলি নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ শিক্ষক নেতার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ

সহকর্মী এবং নিজের বদলি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘আমাকে সাড়ে ৪০০ মাইল দূরে বদলি করা হয়েছে। এতে আমি বিচলিত নই।’

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দেওয়া শতাধিক শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা এবং বিভাগে। আরও অনেককে বদলি করা হতে পারে। এ নিয়ে কেউ বিচলিত হবেন না। প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে যাব। তবে আন্দোলন থেকে সরে আসব না। আপনাদের পাশে রয়েছি। অবিলম্বে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। সে জন্য যদি জেলেও যেতে হয়, প্রস্তুত রয়েছি।’

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেমের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

৪ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মাহফুজা খাতুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে বরিশাল সদরের চরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমনের বাম্পার ফলনেও মুখে হাসি নেই কৃষকের, বাজারে ধানের দাম কমায় হতাশা

মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফসল ঘরে তুলতে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। তবে বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। তাই ফলন ভালো হওয়ার পরও বাজারে ধানের যথার্থ মূল্য না পাওয়ায় লোকসানে পড়ছেন তাঁরা।

কৃষকেরা জানান, চলতি আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম অনেক কম। গত বছর বাজারে যেখানে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছে, এই বছর মাঝারি শুকনা ধান ৯০০ ও শুকনা ধান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বীজতলা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার আগপর্যন্ত অনেক শ্রম ও টাকা খরচ করতে হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। এর থেকে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৯০ টন ধান উৎপাদন হবে। আর এই ধান থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে ৬৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আমন ধানের শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকেরা।

বাজারে আমন ধানের দাম কম হলেও সরকারিভাবে ভালো দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে প্রতি কেজি আমন ধান ৩৪ টাকা মূল্যে ৭৯০ টন, সেদ্ধ চাল ৫০ টাকা কেজি মূল্যে ২ হাজার ৬৭৭ টন ও আতপ চাল ৪৯ টাকা কেজি মূল্যে ৫ হাজার ৬৪৬ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার আমনখেত ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা পাকা আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত। অনেক এলাকায় দ্রুত সময়ে কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ একসঙ্গে সেরে নিচ্ছেন কৃষকেরা। এতে সময়, খরচ ও কষ্ট কম করতে হচ্ছে। আবার কেউ কাজের লোক এনে ধান কেটে ফসলের মাঠেই মাড়াই করে সেদ্ধ দিচ্ছেন। অনেক কৃষক মাঠের মধ্যে রাত জেগে ধান সেদ্ধ করছেন। তবে সবকিছু ঠিক থাকলেও ধানের দাম কম থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন কৃষকেরা।

কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়ন কৃষক আনোয়ার খান বলেন, ‘গত বছর আমাদের ধান একেবারেই হয়নি। এ বছর অনেক ভালো ধান হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম অনেক কম। প্রতি মণ ধান মাত্র ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মিলন কান্তি চাকমা বলেন, ‘আমাদের ধান-চাল সংগ্রহের কার্যক্রম ২০ নভেম্বর শুরু হয়েছে; চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সরকারিভাবে ধানের দাম গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ১ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। একটা সময় আমরা ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারতাম না; তবে এখন ধান-চালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। আশা করি, চলতি মৌসুমে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘জেলায় এ বছর খুব ভালো আমন ধান হয়েছে। কৃষকেরা অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে ধান ঘরে তুলছেন। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা হয়ে যাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও দিনের বেলা কুয়াশা না থাকায় সহজে কৃষকেরা ধান কাটা, মাড়াই ও সেদ্ধ করতে পারছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা
হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা

উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ে ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে তাপমাত্রার পারদ। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯২ শতাংশ।

গত কয়েক দিন পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৩ ডিগ্রির ঘরে থাকছে। ফলে বাড়ছে শীতের প্রকোপ। আজ শুক্রবার সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। সুনসান নীরবতায় গরম কাপড় পরে প্রয়োজনীয় কাজে বের হয়েছে লোকজন। কেউ কেউ মাঠে করছেন হালচাষ। এরই মধ্যে পূর্ব আকাশে সূর্য দেখা দিলেও নেই প্রখর রোদ।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার তালমা এলাকার গৃহবধূ নাজমা বেগম বলেন, ‘সকাল-বিকেল খুব ঠান্ডা পড়ে। ঘর থেকে বের হলেই যেন বাতাসে শরীর কেঁপে ওঠে। বাচ্চাদের নিয়ে সবচেয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। ঠান্ডা লাগলে হাসপাতালে যেতে হয় বারবার।’

একই এলাকার দিনমজুর মিজানুর রহমান বলেন, ‘শীতে কাজ পাওয়া কষ্ট হয়ে গেছে। সকালে কুয়াশায় কিছু দেখা যায় না, হাত-পা জমে থাকে। ঠান্ডায় শরীর ঠিকমতো সাড়া না দেওয়ায় কাজের গতি কমে গেছে।’

স্কুলছাত্রী তানজিলা আক্তার বলে, ‘সকালে কলেজ ও প্রাইভেটে যেতে খুব সমস্যা হয়। ঠান্ডা এমন যে হাতে গ্লাভস ছাড়া সাইকেল চালানো যায় না। শীত যেমন বাড়ছে, তেমনি অসুস্থ হওয়ার ভয়ও বাড়ছে।’

জেলার আশপাশ এলাকায় বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগী। এতে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তনজনিত অ্যালার্জিতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, দিন-রাতের তাপমাত্রার এই বড় পার্থক্য শরীরের ওপর চাপ ফেলে। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ বেশি ঝুঁকিতে থাকে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ চিকিৎসকের।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় জানান, শীত ধীরে ধীরে নামছে। আজ ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। সামনে শীত আরও তীব্র হতে পারে। শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত