Ajker Patrika

গণপিটুনিতে শ্বশুর-জামাইয়ের মৃত্যু: যে কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দুষছেন স্থানীয়রা

শিপুল ইসলাম, রংপুর 
আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২৫, ০৯: ২৫
ভিড়ের মধ্যে দুই হাতজোড় করে বাঁচার আকুতি জানান গণপিটুনির শিকার রূপলাল দাস ও প্রদীপ লাল। ছবি: আজকের পত্রিকা
ভিড়ের মধ্যে দুই হাতজোড় করে বাঁচার আকুতি জানান গণপিটুনির শিকার রূপলাল দাস ও প্রদীপ লাল। ছবি: আজকের পত্রিকা

রংপুরের তারাগঞ্জে গণপিটুনিতে শ্বশুর রূপলাল দাস (৪৫) ও জামাই প্রদীপ লালের (৩৫) প্রাণহানির পেছনে আইনশৃঙ্খলাহীনতাকে দুষছেন স্থানীয় লোকজন। তাঁরা বলছেন, গত কয়েক দিনের চুরি, ছিনতাই ও হত্যাকাণ্ড-সংশ্লিষ্ট অপরাধের কারণে স্থানীয় জনতার ভেতর মবের মনোভাব তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশও সেভাবে তৎপর নয়। এসব কারণেই শ্বশুর-জামাইয়ের এমন করুণ পরিণতি ঠেকানো যায়নি।

এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত রোববার অজ্ঞাতনামা ৭০০ জনকে আসামি করে তারাগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে। এ মামলায় গতকাল সোমবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

নিরাপত্তাহীনতায় বেড়েছে ক্ষোভ, মব-মনোভাব

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র বলেছে, উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের দোলাপাড়া গ্রামে গত ২৫ জুলাই রাতে গোলাম মোস্তফার পরিবারের সদস্যদের বেঁধে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মোটরসাইকেল নিয়ে যায় ডাকাতেরা। এর পরপরই ২৮ জুলাই বকশিপাড়া গ্রামের সফিকুল ইসলামের পঞ্চম শ্রেণিপড়ুয়া ছেলে ইরফান বাবুকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা ভ্যান নিয়ে যায়। ২ আগস্ট দীঘলটারী গ্রামের মফিজার রহমানের তিনটি ও পাটোয়ারী পাড়া গ্রামের হুমায়ন আহমেদের দুটি গরু চুরি হয়। এর আগেও ওই এলাকা থেকে কয়েক দফায় অচেতন করে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন স্থানীয় লোকজন। ৩ আগস্ট থেকে চোর ধরতে এলাকাবাসী রাত জেগে পাহারা শুরু করেন।

কাজীরহাট-বুড়িরহাট-তারাগঞ্জ সড়কের বটতলা এলাকায় গত শনিবার রাত ৯টায় অবস্থান করছিলেন কয়েকজন যুবক। সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন রূপলাল দাসের ভাগিনা জামাই মিঠাপুকুরের ছড়ান বালুয়া এলাকার প্রদীপ লাল। সে পথ ভুলে যাওয়ায় তাঁকে এগিয়ে আনতে যান রূপলাল।

শ্বশুর-জামাই মিলে রোববার তাঁর মেয়ের বিয়ের দিন ঠিক করার কথা ছিল। এ জন্য বাড়িতে উৎসবে খাওয়ার জন্য প্রদীপ লাল তাঁর ভ্যানে একটি বস্তায় ছোট ছোট স্পিরিটের খালি বোতলে বাংলা মদ (তাড়ি) ভরে আনেন। বটতলা এলাকায় পৌঁছালে ওই যুবকেরা তাঁদের পথ রোধ করেন।

নিহত রূপলালের ছেলে জয় দাসের অভিযোগ, উৎসবে তাঁরা বাংলা মদ খান। শ্যালিকার বিয়ে উপলক্ষে প্রদীপ লাল ছোট বোতলে করে সেগুলো নিয়ে আসছিলেন। বটতলায় তাঁর বাবা ও দুলা ভাইকে আল-আমিন, এবাদতসহ কয়েকজন আটক করে সেই বোতলগুলো ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে পথচারীরা জড়ো হন। তিনি বলেন, ‘লোকজন জড়ো হলে তারা বাবা আর দুলাভাইকে চোর বলে। আর বলে, এরাই কয়েক দিন আগে শিশুর গলা কেটে হত্যা করে ভ্যান ছিনতাই করেছে। এরপর লোকজন মারধর শুরু করে। পাশের ফরিদাবাদ গ্রামের মেহেদী হাসান বস্তা থেকে বোতল বের করে কাগ না খুলেই নাকে নিয়ে অজ্ঞান হওয়ার অভিনয় করেন। এরপর উত্তেজিত লোকজন বাবা-দুলা ভাইকে মারধর করে মেরে ফেলে।’

বুড়িরহাট এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম বলেন, বটতলা স্থানটি তিন রাস্তার মোড় ও নির্জন এলাকায়। ওই জায়গা অপরাধপ্রবণ। ওই জায়গায় মাদকের হাতবদল হয়। সেখানেই ওই দুজনকে আটক করেছিল স্থানীয় যুবকেরা।

পুলিশ এসে ফিরে যায়

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, যখন বুড়িরহাট উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে রূপলাল দাস ও প্রদীপ লালকে নেওয়া হয়, তখনো তাঁরা জীবিত ছিলেন। চোর ধরা পড়েছে খবর ছড়িয়ে পড়লে সেখানে মুহূর্তে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়। এর কিছুক্ষণ পরে বুড়িরহাট বাজারে পুলিশের দুটি ভ্যান আসে। তাঁরা রূপলাল ও প্রদীপকে উদ্ধার না করে ফিরে যায়। এরপর প্রায় এক ঘণ্টা পর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর তিনটি গাড়ি পৌঁছায়।

প্রত্যক্ষদর্শী বুড়িরহাট বাজারের সবজি বিক্রেতা খোকন মিয়া বলেন, ‘জনগণ দৌড়াচ্ছে। শুনলাম চোর ধরা পড়ছে। এর কিছুক্ষণ পর দুইটা পুলিশের গাড়ি আসে। কিন্তু অনেক লোক দেখে তারা ফেরত যায়। আবার ঘণ্টাখানেক পর পুলিশ, সেনাবাহিনীর তিনটা গাড়ি আসে। তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়।’

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী দামোদরপুর পণ্ডিতপাড়ার ভ্যানচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘স্কুলের মাঠে যায়া দেখি ওই দুজনকে ভ্যানচোরা হিসেবে পাবলিকেরা ডাংগায়ছে। পরে পুলিশ আসি বাঁশি ফুকায় কিন্তু জনগণ সারে না। আবার তারা চলি যায়।’

বুড়িরহাট বাজারে কথা হলে সয়ার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুল হামিদ বলেন, ‘প্রশাসন কিসের জন্য? পুলিশ আসছিল, লোকগুলাক সেফ (রক্ষা) করবে না? কিন্তু পুলিশ আসিয়া দেখিয়া ঘুরি যায়। যখনে লোকগুলা পুলিশের কথা শুনছে, লোকগুলা নাকি উঠি বসছে। পুলিশ চাইলে লোক দুইটাক বাঁচার পারত।’ তিনি বলেন, এলাকায় চুরি-ডাকাতি বেড়েছে। গত মাসের শেষে ইরফান নামের একজনকে গলা কেটে হত্যার পর মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছিল, যার বহিঃপ্রকাশ শনিবারের ঘটনা।

জানতে চাইলে তারাগঞ্জ থানার ওসি এম এ ফারুক বলেন, ‘থানা থেকে বুড়িরহাট অনেক দূর। যখন মব তৈরি হয়, তখন স্কুল মাঠে তিন-চার হাজার লোক। তাদের ডিঙিয়ে ওদের সেফ করা পুলিশের পক্ষে সম্ভব হয়নি আসলে।’

হাতজোড় করে বাঁচার আকুতি

রংপুরের তারাগঞ্জে গণপিটুনির শিকার রূপলাল দাস ও প্রদীপ লাল মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন। হাতজোড় করে ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে রূপলাল বলেছিলেন, ‘আমি চোর না, ডাকাত না।’ তবু শেষ রক্ষা হয়নি রূপলাল ও প্রদীপের। তাঁদের সেই মর্মস্পর্শী আকুতির ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, যা দেখে অনেকে শিউরে উঠছে।

ভিডিওতে দেখা গেছে, স্থানীয় কয়েকজন বটতলা এলাকায় ভ্যান থামিয়ে রূপলাল ও প্রদীপকে আটক করে। ভ্যান থেকে বের করা হয় একটি প্লাস্টিকের বস্তা। নাম-পরিচয় জিজ্ঞেস করলে তাঁরা চুপ ছিলেন। একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে কয়েকজন তাঁদের মারতে যায়। কিন্তু মেহেদী হাসান নামের এক যুবক মারধরে বাধা দেন এবং পুলিশে খবর দেওয়ার কথা বলেন। এ সময় রূপলাল উত্তর দেন, ‘আমি চোর না, ডাকাতও না। মুচি, তারাগঞ্জ বাজারে জুতা সেলাই করি।’ কিন্তু ভিড়ের মধ্যে কেউ উচ্চ স্বরে বলে ওঠে, ‘তুই চোর-ডাকাইতের বাপ।’ এ সময় রূপলাল প্রস্রাবের কথা বললেও পালিয়ে যাবেন ভেবে তাঁকে সুযোগ দেয়নি উত্তেজিত জনতা। হঠাৎ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন, আর ভ্যানের ওপরে বসা প্রদীপকে লক্ষ্য করে লোকজন বলতে থাকে, ‘মাল খেয়ে আসছে; অভিনয় করছে।’

এ সময় ভ্যানে থাকা বস্তা থেকে প্লাস্টিকের বোতল বের করে নাকের কাছে নিয়ে গন্ধ শোঁকেন মেহেদী হাসান। কিছুক্ষণ পর তিনি ‘এ ভাই, দয়া করে আমাকে ধরো’ বলে মাটিতে পড়ে যান। দুজন তাঁকে ধরে সরিয়ে নেন। তখন ক্ষুব্ধ জনতা রূপলাল ও প্রদীপকে মারধর শুরু করে।

পরে রাত ১১টার দিকে পুলিশ দুজনকে উদ্ধার করে তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। চিকিৎসক রূপলালকে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত প্রদীপকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে ভোর ৪টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। পরে রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রূপলালের লাশ বাড়িতে এলে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

বুড়িরহাট গ্রামের আব্দুল হাকিম বলেন, ‘রাত আনুমানিক ৯টার দিকে খবর পাই, অজ্ঞান করে ভ্যান ছিনতাই করা চোর ধরা পড়েছে। গিয়ে দেখি, শত শত মানুষের ভিড়। পরে একটা ভিডিওতে দেখি, ওই দুজন হাতজোড় করছিল বাঁচার জন্য। কিন্তু তাদের কথা শোনেনি।’

নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪

এ ঘটনায় গ্রেপ্তার চারজন হলেন সয়ার ইউনিয়নের বালাপুর এলাকার এবাদত হোসেন (২৭), বুড়িরহাট এলাকার আক্তারুল ইসলাম (৪৫) ও রফিকুল ইসলাম (৩৩) এবং রহিমাপুরের মিজানুর রহমান (২২)। এর আগে রোববার দুপুরে তারাগঞ্জ থানায় মামলা করেন নিহত রূপলালের স্ত্রী ভারতী রানী। মামলায় অজ্ঞাতনামা ৭০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

তারাগঞ্জ থানার ওসি এম এ ফারুক বলেন, চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার এবাদত মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। তাঁর ও অন্যান্য আসামির তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাসার দরজা ভেঙে চবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

চবি প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ওমর ফারুক সুমন নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকার একটি বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

ওমর ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যরা জানান, সুমন খুলশীতে তাঁর মামার বাসায় থাকতেন। তাঁর বড় ভাইও সেখানে থাকেন। দুই দিন আগে সুমনের মামা পুরো পরিবার নিয়ে তুরস্কে বেড়াতে যান। বাসায় সুমন ও তাঁর বড় ভাই ছিলেন। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সুমন। ফোনে তাঁর বড় ভাই কখন বাসায় ফিরবেন জানতে চান সুমন। বড় ভাই জানান যে তাঁর আসতে একটু দেরি হবে। এর কিছুক্ষণ পর বড় ভাই সুমনকে ফোন করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। পরে বাড়ি থেকে সুমনের মা ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতে না পেরে বিষয়টি বড় ভাইকে জানান। এতে উদ্বেগ দেখা দিলে বড় ভাই বিল্ডিংয়ের দারোয়ানকে দিয়ে বাসা চেক করান।

দারোয়ান কলিংবেল বাজিয়েও কোনো সাড়া না পেয়ে বড় ভাইকে জানালে তিনি দ্রুত বাসায় এসে সুমনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে চিরকুট মিলেছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘আমি সুমন, ওমর ফারুক সুমন। আমার কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা নেই। আর আমার কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। সবাই ভালো থাকবেন।’ এর আগে ১ ডিসেম্বর লেখা আরেকটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল—‘আশাই জীবন, আশাই মরণ, ব্যর্থতা হতাশা-অন্ধকারে নিয়ে যায়।’

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর জামান বলেন, ‘সুমন ও তাঁর বড় ভাই একসঙ্গে মামার বাসায় থাকতেন। মামা ও মামি বর্তমানে বিদেশে আছেন। বড় ভাই সন্ধ্যায় বাইরে যান। সে সময় সুমন বাসায় একা ছিলেন। বড় ভাই বাসায় ফিরে এসে বারবার ডাকলেও ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে সুমনের মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যা মনে হলেও আমরা সব সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখছি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বদলি নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ শিক্ষক নেতার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ

সহকর্মী এবং নিজের বদলি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘আমাকে সাড়ে ৪০০ মাইল দূরে বদলি করা হয়েছে। এতে আমি বিচলিত নই।’

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দেওয়া শতাধিক শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা এবং বিভাগে। আরও অনেককে বদলি করা হতে পারে। এ নিয়ে কেউ বিচলিত হবেন না। প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে যাব। তবে আন্দোলন থেকে সরে আসব না। আপনাদের পাশে রয়েছি। অবিলম্বে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। সে জন্য যদি জেলেও যেতে হয়, প্রস্তুত রয়েছি।’

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেমের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

৪ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মাহফুজা খাতুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে বরিশাল সদরের চরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমনের বাম্পার ফলনেও মুখে হাসি নেই কৃষকের, বাজারে ধানের দাম কমায় হতাশা

মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফসল ঘরে তুলতে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। তবে বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। তাই ফলন ভালো হওয়ার পরও বাজারে ধানের যথার্থ মূল্য না পাওয়ায় লোকসানে পড়ছেন তাঁরা।

কৃষকেরা জানান, চলতি আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম অনেক কম। গত বছর বাজারে যেখানে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছে, এই বছর মাঝারি শুকনা ধান ৯০০ ও শুকনা ধান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বীজতলা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার আগপর্যন্ত অনেক শ্রম ও টাকা খরচ করতে হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। এর থেকে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৯০ টন ধান উৎপাদন হবে। আর এই ধান থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে ৬৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আমন ধানের শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকেরা।

বাজারে আমন ধানের দাম কম হলেও সরকারিভাবে ভালো দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে প্রতি কেজি আমন ধান ৩৪ টাকা মূল্যে ৭৯০ টন, সেদ্ধ চাল ৫০ টাকা কেজি মূল্যে ২ হাজার ৬৭৭ টন ও আতপ চাল ৪৯ টাকা কেজি মূল্যে ৫ হাজার ৬৪৬ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার আমনখেত ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা পাকা আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত। অনেক এলাকায় দ্রুত সময়ে কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ একসঙ্গে সেরে নিচ্ছেন কৃষকেরা। এতে সময়, খরচ ও কষ্ট কম করতে হচ্ছে। আবার কেউ কাজের লোক এনে ধান কেটে ফসলের মাঠেই মাড়াই করে সেদ্ধ দিচ্ছেন। অনেক কৃষক মাঠের মধ্যে রাত জেগে ধান সেদ্ধ করছেন। তবে সবকিছু ঠিক থাকলেও ধানের দাম কম থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন কৃষকেরা।

কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়ন কৃষক আনোয়ার খান বলেন, ‘গত বছর আমাদের ধান একেবারেই হয়নি। এ বছর অনেক ভালো ধান হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম অনেক কম। প্রতি মণ ধান মাত্র ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মিলন কান্তি চাকমা বলেন, ‘আমাদের ধান-চাল সংগ্রহের কার্যক্রম ২০ নভেম্বর শুরু হয়েছে; চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সরকারিভাবে ধানের দাম গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ১ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। একটা সময় আমরা ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারতাম না; তবে এখন ধান-চালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। আশা করি, চলতি মৌসুমে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘জেলায় এ বছর খুব ভালো আমন ধান হয়েছে। কৃষকেরা অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে ধান ঘরে তুলছেন। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা হয়ে যাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও দিনের বেলা কুয়াশা না থাকায় সহজে কৃষকেরা ধান কাটা, মাড়াই ও সেদ্ধ করতে পারছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা
হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা

উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ে ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে তাপমাত্রার পারদ। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯২ শতাংশ।

গত কয়েক দিন পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৩ ডিগ্রির ঘরে থাকছে। ফলে বাড়ছে শীতের প্রকোপ। আজ শুক্রবার সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। সুনসান নীরবতায় গরম কাপড় পরে প্রয়োজনীয় কাজে বের হয়েছে লোকজন। কেউ কেউ মাঠে করছেন হালচাষ। এরই মধ্যে পূর্ব আকাশে সূর্য দেখা দিলেও নেই প্রখর রোদ।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার তালমা এলাকার গৃহবধূ নাজমা বেগম বলেন, ‘সকাল-বিকেল খুব ঠান্ডা পড়ে। ঘর থেকে বের হলেই যেন বাতাসে শরীর কেঁপে ওঠে। বাচ্চাদের নিয়ে সবচেয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। ঠান্ডা লাগলে হাসপাতালে যেতে হয় বারবার।’

একই এলাকার দিনমজুর মিজানুর রহমান বলেন, ‘শীতে কাজ পাওয়া কষ্ট হয়ে গেছে। সকালে কুয়াশায় কিছু দেখা যায় না, হাত-পা জমে থাকে। ঠান্ডায় শরীর ঠিকমতো সাড়া না দেওয়ায় কাজের গতি কমে গেছে।’

স্কুলছাত্রী তানজিলা আক্তার বলে, ‘সকালে কলেজ ও প্রাইভেটে যেতে খুব সমস্যা হয়। ঠান্ডা এমন যে হাতে গ্লাভস ছাড়া সাইকেল চালানো যায় না। শীত যেমন বাড়ছে, তেমনি অসুস্থ হওয়ার ভয়ও বাড়ছে।’

জেলার আশপাশ এলাকায় বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগী। এতে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তনজনিত অ্যালার্জিতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, দিন-রাতের তাপমাত্রার এই বড় পার্থক্য শরীরের ওপর চাপ ফেলে। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ বেশি ঝুঁকিতে থাকে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ চিকিৎসকের।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় জানান, শীত ধীরে ধীরে নামছে। আজ ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। সামনে শীত আরও তীব্র হতে পারে। শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত