Ajker Patrika

সেই পাহাড়িয়াদের পাশে অনেকে

‘এখন আমরা সাহস পাচ্ছি’

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
রাজশাহীর মোল্লাপাড়ায় মালপাহাড়িয়া সম্প্রদায়ের বসতবাড়ি রক্ষার দাবিতে শুক্রবার সকালে মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজশাহীর মোল্লাপাড়ায় মালপাহাড়িয়া সম্প্রদায়ের বসতবাড়ি রক্ষার দাবিতে শুক্রবার সকালে মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহীর মোল্লাপাড়ায় মালপাহাড়িয়া সম্প্রদায়ের পরিবারগুলো নিরাপত্তা চেয়েছে পুলিশের কাছে। তাঁরা থাকতে চান নিজেদের ৫৩ বছরের পুরোনো বসতবাড়িতেই। এ অবস্থায় তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন অনেকে। খোঁজ নিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও। তিনি দলের স্থানীয় নেতাদের পাহাড়িয়াদের পাশে থাকতে বলেছেন।

এদিকে শুক্রবার পাহাড়িয়াদের মহল্লায় খাসি জবাই করে খাইয়ে-দাইয়ে যখন তাঁদের ‘বিদায়’ দেওয়ার কথা ছিল, ঠিক তখন সেখানে গিয়ে মানববন্ধন করেছেন রাজশাহীর বিক্ষুব্ধ নাগরিক, মানবাধিকারকর্মী, আদিবাসী সংগঠনের নেতা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বলেছেন, এই জমি পাহাড়িয়াদের দিতে হবে, যাতে কেউ দখল করতে না পারে।

ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের এই মহল্লার ১৬ কাঠা জমিতে ৫৩ বছর আগে বাড়ি করার সুযোগ পায় মালপাহাড়িয়া জনগোষ্ঠীর ছয়টি পরিবার। তিন প্রজন্মে বাড়ি বেড়ে হয় ১৬টি। সম্প্রতি সাজ্জাদ আলী নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি দাবি তোলেন, ১৯৯৪ সালে তিনি এ জমি কিনেছেন। এখন দখল নেবেন। এ জন্য তিনি ভয় দেখিয়ে পাহাড়িয়াদের ১৬টি পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা দিয়েছেন। শুক্রবার খাসি জবাই করে তাঁদের খাওয়ানোর কথা ছিল। তিনটি পরিবার ইতিমধ্যে চলে গেছে। আগামীকাল রোববার বাকিদের যেতে হতো।

এ অবস্থায় আজকের পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। বৃহস্পতিবার পুলিশ গিয়ে জানিয়ে দেয়, কোনো খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন হবে না। পাহাড়িয়ারা তাঁদের জমিতেই থাকবেন। আর সাজ্জাদ আলীর দলিল যাচাই-বাছাই করা হবে। পুলিশ সেখানে থাকা পাহাড়িয়াদের ১৩টি পরিবারের ১৩ জন ও সাজ্জাদ আলীকে বৃহস্পতিবার বিকেলে কাশিয়াডাঙ্গা জোনের উপপুলিশ কমিশনারের (ডিসি) কার্যালয়ে ডেকেছিল। পাহাড়িয়ারা গেলেও সেখানে যাননি সাজ্জাদ আলী। তাঁকে শহরের বড়কুঠি ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেনও ডেকেছিলেন। সাজ্জাদ গিয়েছিলেন ভূমি অফিসে।

পাহাড়িয়াদের মনে ভয়: পাহাড়িয়া জনগোষ্ঠীর পরিবারগুলো নিজেদের নিরাপত্তা চেয়ে বৃহস্পতিবার রাতে নগরের কাশিয়াডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে আবেদন করেছেন। এতে বলা হয়, সাজ্জাদ আলী তাঁদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বসতবাড়ি থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করছেন। তাঁরা খুবই ভয়ের মধ্যে জীবনযাপন করছেন। তাঁরা চরমভাবে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। এ জন্য তাঁরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে শুক্রবার দুপুরে সাজ্জাদ আলী বলেন, ‘আমি কোনো ভয় দেখাচ্ছি না। আমি সুন্দরভাবেই বিদায় দিতে চেয়েছিলাম। জমি আমার, আমি এটা ভূমি অফিসকে বলেছি। তারা আমাকে কিছু জানায়নি। তারা কী করছে, সেটা আমি কিছু জানি না।’

পাহাড়িয়াদের পাশে অনেকে: সংকটের কথা জেনে পাহাড়িয়াদের পাশে দাঁড়িয়েছেন অনেকে। রাজশাহী জেলা বিএনপির এক নেতা জানান, বিষয়টি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নজরে এসেছে। তিনি দলটির স্থানীয় নেতাদের এ বিষয়ে খোঁজখবর নিতে বলেছেন। পাহাড়িয়াদের যাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন না হয়, সেটি নিশ্চিত করতেও স্থানীয় নেতাদের বলেছেন তিনি।

রাজশাহীর মোল্লাপাড়ায় মালপাহাড়িয়া সম্প্রদায়ের বসতবাড়ি রক্ষার দাবিতে শুক্রবার সকালে মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজশাহীর মোল্লাপাড়ায় মালপাহাড়িয়া সম্প্রদায়ের বসতবাড়ি রক্ষার দাবিতে শুক্রবার সকালে মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা

পাশে দাঁড়িয়েছে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি)। দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক কৈলাশ চন্দ্র রবিদাস জানিয়েছেন, তাঁর দলের প্রধান মো. নাহিদ ইসলামও বিষয়টি অবগত। তিনিও পাহাড়িয়াদের পাশে থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। জেলা সমন্বয়ক কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী শামীমা সুলতানা মায়া সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন।

আইনি সহায়তা দিতে পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)। সংস্থার রাজশাহী ইউনিটের সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট সামিনা বেগম তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ ছাড়া জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, আদিবাসী গবেষণা পরিষদ, সিসিবিভিও, পাহাড়িয়া ছাত্র পরিষদ, বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরাম, জুলাই-৩৬ পরিষদসহ নানা সংগঠন পাশে থাকার কথা জানিয়েছে।

পাহাড়িয়াদের বসতবাড়ি রক্ষা এবং তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে শুক্রবার সকালে ওই মহল্লায় মানববন্ধন হয়। সেখানে বক্তব্য দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম সারোয়ার, আদিবাসী গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, বাসদের জেলা কমিটির সদস্যসচিব শামসুল আবেদীন ডন, এনসিপির নেত্রী শামীমা সুলতানা মায়া, মানবাধিকারকর্মী আরিফ ইথার, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হেমব্রম, দপ্তর সম্পাদক প্রদীপ লাকড়া, পাহাড়িয়া ছাত্র পরিষদের উত্তম সিংহ প্রমুখ।

এ ছাড়াও অংশ নেন আদিবাসী গবেষক রতন টপ্পো, সিসিবিভিওর প্রতিনিধি বিপ্লব মুর্মু, সাংস্কৃতিককর্মী সাগর হোসেন, বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনুপম প্রান্ত টুডু, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুশান্ত হেমব্রম, এডিশন মিনজ, তৃতীয় লিঙ্গের আবুল হাসনা পলি এবং পাহাড়িয়া জনগোষ্ঠীর নারী-পুরুষ।

মানববন্ধনে এক পাহাড়িয়া নারী বলেন, ‘আমাদের দাবি আমরা এখানেই থাকতে চাই। এই জায়গা আমরা ছাড়তে চাই না।’ আরেক তরুণী বলেন, ‘আগে আমরা ভয় পেয়েছিলাম, তাই জায়গা ছেড়ে দিচ্ছিলাম। সংবাদ প্রকাশের পর সবাই এসেছেন। এখন আমরা সাহস পাচ্ছি।’

আদিবাসী গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে পাহাড়িয়ারা ৫৩ বছর ধরে বাস করছে। একদল ভূমিদস্যু এটা দখল করতে চায়। আমরা মনে করি, এই জমি তাদের, তারা এখানে থাকবে। তাদের উচ্ছেদ আমরা মানব না। আমরা দলমত সবকিছুর ঊর্ধ্ব উঠে সবাই এসেছি। এই জমি পাহাড়িয়াদের, এখানেই তারা থাকবে।’

আরিফ ইথার বলেন, ‘এখানে পাহাড়িয়ারা ৫৩ বছর ধরে বাস করছেন। তাঁরা থাকা অবস্থায় ১৯৯৪ সালে এ জমি বিক্রি হয় কী করে? যদি বিক্রি হয়ও তাহলে সাজ্জাদ এত দিন কোথায় ছিলেন? এত দিন পর কেন দখলে নিতে আসতে হচ্ছে? কেন তিনি নিজের জমি নিতে টাকা দেবেন? কাগজ ঠিক থাকলে তিনি কেন পুলিশের ডাকে গেলেন না? এসব প্রশ্নের উত্তর চাই।’

সংবাদ প্রকাশ করায় আজকের পত্রিকাকে ধন্যবাদ জানিয়ে উন্নয়নকর্মী জোসেফ হাঁসদা বলেন, ‘আজকের পত্রিকার নিউজের মাধ্যমেই আমরা খবরটা পেয়েছি। এখন আমাদের দাবি—এ মানুষগুলো যেন নির্ভয়ে জীবনযাপন করতে পারেন, সেটা যেন প্রশাসন নিশ্চিত করে।’

জানতে চাইলে কাশিয়াডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল বারী বলেন, ‘নিরাপত্তা চেয়ে পাহাড়িয়ারা আমাদের কাছে আবেদন করেছেন। তাঁদের নিরাপত্তার আপাতত সংকট নেই। আমরা আছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হবিগঞ্জে রত্না বেইলি সেতু ভেঙে ট্রাক আটকা, দুর্ভোগে যাত্রীরা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

হবিগঞ্জ-বানিয়াচং আঞ্চলিক সড়কের রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে ওই পথে সব ধরনের যান চলাচল। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে শতাধিক যাত্রী ও ওই পথে চলাচলকারীরা। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, জাফলং থেকে ছেড়ে আসা বানিয়াচংগামী পাথরবোঝাই একটি ট্রাক ব্রিজের ওপর ওঠামাত্রই ব্রিজের দুটি পাটাতন ভেঙে যায়। মুহূর্তেই ট্রাকের পেছনের দুটি চাকা ধসে পড়ে এবং পুরো ট্রাকটি ব্রিজে আটকে যায়।

এতে দীর্ঘ লাইনে আটকা পড়ে যাত্রীবাহী বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, টমটম, প্রাইভেট কারসহ অসংখ্য যানবাহন। বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, রোগী এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ব্যবসায়ীরা।

দুর্ঘটনার পর ব্রিজের একপাশ থেকে অন্যপাশে যাওয়ার জন্য যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে ভাঙা অংশ অতিক্রম করছে। এতে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘ট্রাকটি ব্রিজে উঠতেই জোরে শব্দ হয়। একটু পরই দেখি পাটাতন নিচে ধসে গেছে। ভাগ্য ভালো যে ট্রাকটি পুরোপুরি নিচে পড়ে যায়নি। তবে এখন তো ও পথে চলাচলকারীরা আটকা পড়ে আছে।’

যাত্রীরা জানান, রত্না বেইলি ব্রিজটি বহুদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভারী যানবাহনের অতিরিক্ত চাপের কারণে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে—এমন আশঙ্কা দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। এদিকে যাত্রীদের দাবি, এখানে যেন বেইলি ব্রিজের পরিবর্তে দ্রুত স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হয়, যাতে প্রতিদিনের এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, ‘ব্রিজটি দ্রুত মেরামত করার কাজ চলছে। পাথরবোঝাই ট্রাকটিতে বেশি লোড থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার

নরসিংদী প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে আব্দুর রশিদ (৪০) নামের এক অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর তীর থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

আব্দুর রশিদ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের দক্ষিণ লোহাজুরী গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি ছিলেন অটোরিকশাচালক; তবে নিয়মিত আড়িয়াল খাঁ নদে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করা ছিল তাঁর নেশা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৬টার দিকে ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর পাড়ে রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেন। লাশের পাশেই মোবাইল ফোন ও অটোরিকশাটি ছিল। পরে স্বজনেরা এসে লাশ শনাক্ত করেন। আব্দুর রশিদের মাথা ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করছে, তিনি দুষ্কৃতকারীর হামলার শিকার হয়েছেন।

নিহত ব্যক্তির ভাই কাজল মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত অটোরিকশা চালিয়ে তারপর নদীর পাড়ে বসে মাছ শিকার করে বাড়ি ফিরত ভাই। কিন্তু গতকাল রাতে আর বাড়ি ফেরেনি। সকালে খবর পেয়ে নদীর পাড়ে এসে ভাইয়ের মরদেহ দেখতে পাই।’

নিহত ব্যক্তির ছেলে হৃদয় বলেন, ‘রাতে বাড়ি না ফেরায় কল দিলে ফোন বন্ধ পাই। সকালে খবর শুনে নদীর পাড়ে এসে বাবার মরদেহ, মোবাইল ও অটোরিকশা পড়ে থাকতে দেখি।’

বেলাব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাসির উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি পিবিআইকে জানানো হয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৬৭ বছর পর রামেক হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

অবশেষে ৬৮ বছরে পা দিতে চলা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ মনোরোগ ওয়ার্ড চালু হলো। হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানসিক রোগী চিকিৎসা নিতে এলেও ভর্তির সুযোগ ছিল না। গুরুতর রোগীদের কিছু ক্ষেত্রে মেডিসিন বিভাগে রাখা হলেও, পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ডের অভাবে এতদিন অনেককেই ফিরিয়ে দিতে হতো।

হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ৬৭ বছর পর এই প্রথম ২৫ শয্যার একটি সুসজ্জিত মনোরোগ ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। হাসপাতালটির পুরাতন আইসিইউ ভবনে এই নতুন ওয়ার্ডটি গড়ে তোলা হয়েছে।

এই ওয়ার্ডে রোগী ভর্তির জন্য নির্দিষ্ট বিন্যাস রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ১০টি, নারীদের জন্য ৭ টি, শিশু-কিশোরদের জন্য ৫টি এবং উচ্চ পর্যবেক্ষণের জন্য ৩টি শয্যা সংরক্ষিত রয়েছে। এ ছাড়া রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার জন্য থেরাপি ও কাউন্সেলিং রুমসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওয়ার্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মোস্তফা আলী।

এই ওয়ার্ডটি চালুর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল কলেজের স্বীকৃতি বজায় রাখা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী মার্চ মাসেই ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশন (ডব্লিউএফএমই) থেকে একটি প্রতিনিধি দল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ পরিদর্শনে আসবে। পরিদর্শনকালে মনোরোগ বিভাগের ওয়ার্ড না পেলে কলেজের পয়েন্ট কমে যাওয়ার এবং অ্যাক্রিডিটেশনে বড় ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এতে করে এই কলেজের শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা বা পড়াশোনা করার সুযোগ কমে যেত। এ ছাড়া এফসিপিএস এবং ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্যও এমন একটি ওয়ার্ড জরুরি ছিল।

কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুরোধ শুনে সদ্যবিদায়ী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ দ্রুত এই ওয়ার্ড চালুর উদ্যোগ নেন এবং গত বুধবার এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের সময় তাঁর সঙ্গে নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামসহ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালে যে ৬৭ বছরেও মানসিক রোগীদের জন্য ওয়ার্ড চালু হয়নি, এটি সত্যিই অবাক হওয়ার মতো বিষয়। আমরা প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি চালু করেছি। এখন থেকে এ অঞ্চলের মানসিক রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি থেকেও উন্নত চিকিৎসা নিতে পারবেন।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি রামেক হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর উদ্যোগেগত ২৩ অক্টোবর শুধু সাপে কাটা রোগীদের জন্য বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালু করা হয়।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে একজনও সাপে কাটা রোগীর মৃত্যু হয়নি, যেখানে আগে প্রায় প্রতিদিনই এই রোগে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতো। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজমিস্ত্রির বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
অভিযানে পাওয়া অস্ত্রসামগ্রী। ছবি: আজকের পত্রিকা
অভিযানে পাওয়া অস্ত্রসামগ্রী। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সোহাগ হোসেন নামের এক রাজমিস্ত্রির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমানপুর কলপাড়া গ্রামে এই অভিযান চালান সেনাসদস্যরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সেনাক্যাম্পের রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি দল ওসমানপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন নামের এক যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে দুটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, গুলি, দেশীয় চাকু ও হাঁসুয়া পাওয়া যায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সোহাগ হোসেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর বাবার নাম আশরাফ হোসেন।

পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্র থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত