Ajker Patrika

‘চিকিৎসা বন্ধ থুইয়া ধর্মঘট করলে রোগী বাঁচপে কেমন করি’

  • বুধবার ও বৃহস্পতিবারও চলবে দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি।
  • দাবি আদায় না হলে রোববার থেকে কলেজ ও হাসপাতাল কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা।
  • ইনডোর-আউটডোরে প্রায় পাঁচ হাজার রোগীর দুর্ভোগ।
শিপুল ইসলাম, রংপুর 
রংপুর মেডিকেল কলেজের সদ্য পদায়ন পাওয়া অধ্যক্ষ ডা. মাহফুজার রহমানের পদত্যাগ দাবিতে আজ মঙ্গলবার কর্মবিরতি পালন করেন চিকিৎসকেরা। ফলে হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসকের চেম্বার ও টিকিট কাউন্টারে উপচে পড়া ভিড় হয়। দুর্ভোগে পড়ে রোগীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রংপুর মেডিকেল কলেজের সদ্য পদায়ন পাওয়া অধ্যক্ষ ডা. মাহফুজার রহমানের পদত্যাগ দাবিতে আজ মঙ্গলবার কর্মবিরতি পালন করেন চিকিৎসকেরা। ফলে হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসকের চেম্বার ও টিকিট কাউন্টারে উপচে পড়া ভিড় হয়। দুর্ভোগে পড়ে রোগীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

চিকিৎসক দেখাতে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে মঙ্গলবার ভোরে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে পৌঁছান কৃষক আয়নাল হোসেন (৪৫)। বহির্বিভাগে টিকিট কেটে চিকিৎসক দেখাবেন। কিন্তু ভোর থেকে সকাল হয়। টিকিট নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসকের চেম্বারে সামনে দাঁড়ান আয়নাল। বেলা বাড়ে, রোগীর ভিড় বাড়ে। কিন্তু চিকিৎসকের দেখা মেলে না। একপর্যায়ে দুপুর ১২টায় হাসপাতালের বারান্দায় বসে পড়েন।

কথা হলে আক্ষেপ করে আয়নাল হোসেন বলেন, ‘জীবন বাঁচার জন্য দেরিতে আসলে সিরিয়াল পাওয়া যায় না, ফেরত যেতে হয়। এ জন্য মেয়েটাক নিয়ে রাতে রওনা দিয়ে ভোরে হাসপাতালে আসছি। সকাল ৯টায় ডাক্টার বসার কথা থাকলেও ১২টা বাজে এখনও ডাক্টার নাই। শুনছি ডাক্তারদের নাকি ধর্মঘট চলছে। চিকিৎসা বন্ধ থুইয়া ধর্মঘট করলে রোগী বাঁচপে কেমন করি।’

অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর মাথায় ঘা, তাই রমেক হাসপাতালে চিকিৎসক দেখাতে এসেছেন তারাগঞ্জের গণি মিয়া। কিন্তু সকাল ৮টা থেকে অপেক্ষা করার পরও চিকিৎসক দেখাতে পারেনি। ৪ ঘণ্টা অপেক্ষার পর ভিড়ে অসুস্থ স্ত্রী আরও অবনতি হয়ে বাড়ি ফিরে যান তিনি।

গণি মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমার স্ত্রী খুব অসুস্থ রাত থেকে একটু ঘুমাতে পারিনি। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক দেখাব জন্য রাত থেকে অপেক্ষা করছি। এখানে এসে এখন যেটা মনে হচ্ছে, রাতে যে কষ্টটা হইছে দিনে তাঁর থেকে দ্বিগুণ কষ্ট হচ্ছে। চিকিৎসা বাদ দিয়া আন্দোলন করছে। ডাক্তারা যদি আন্দোলনের জন্য চিকিৎসা বন্ধ রাখে তাহলে আমাদের মতো মানুষ যাবে কোথায়? আন্দোলন, ধর্মঘটের তো আরও অনেক পথ আছে।’

তেঁতুলিয়ার আয়নাল হোসেন ও তারাগঞ্জের গণি মিয়াই নয়। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা নিতে আসা বহির্বিভাগ ও ভর্তি রোগীদের আজ মঙ্গলবার দুর্ভোগে পড়তে হয়। রংপুর মেডিকেল কলেজের নবনিযুক্ত অধ্যক্ষ ডা. মাহফুজার রহমানের পদত্যাগের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী পূর্ব ঘোষিত দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করলে এমন দুর্ভোগে পড়েন তাঁরা।

সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টার কর্মবিরতির ফলে এ সময় চিকিৎসকদের হাসপাতালের চেম্বারে বসতে দেখা যায়নি। এতে দুর্ভোগে পড়ে বিভাগের বিভিন্ন জেলা উপজেলা গ্রাম থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা। বাড়তে থাকে রোগীর ভিড়।

হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসকের চেম্বার ও টিকিট কাউন্টারে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসকের চেম্বার ও টিকিট কাউন্টারে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

তবে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীর কলেজ ক্যাম্পাসে অধ্যক্ষ মাহফুজার রহমানের পদত্যাগ দাবিতে সপ্তম দিনের মতো বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় বুধবারে দেওয়া কমপ্লিট শাটডাউন প্রত্যাহার করেন। অধ্যক্ষকে অপসারণ করা না হলে আগামী রোববার থেকে কমপ্লিট শাটডাউনের ঘোষণা দেন চিকিৎসকেরা। তবে দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে বলে জানা গেছে।

রমেকের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক, কর্মচারী, ছাত্র-জনতার মুখপাত্র শরিফুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, ‘অধ্যক্ষ মাহফুজার রহমানের অপসারণের দাবিতে আমরা যারা আন্দোলনের আছি, সবাই চিকিৎসা বান্ধব, রোগী বান্ধব। রোগীদের স্বার্থ বিবেচনা করে আমাদের শাটডাউন কর্মসূচিকে আমরা পিছিয়ে নিচ্ছি। আমরা আশা করব প্রশাসনের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে, আমাদের দাবি মেনে নিয়ে ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের দোসর মাহফুজারকে অধ্যক্ষ পদ থেকে থেকে প্রত্যাহার করে এই ক্যাম্পাসে শান্তি বজায় রাখার জন্য আমাদেরকে সাহায্য করবেন। তা না হলে বুধবার ও বৃহস্পতিবার কর্মবিরতি চলবে, রোববার কমপ্লিট শাটডাউন হবে।’

হাসপাতালের বহির্বিভাগে টিকিট কাউন্টারে রোগীদের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা ক্যাটাগরি: সারা দেশ, রংপুর
হাসপাতালের বহির্বিভাগে টিকিট কাউন্টারে রোগীদের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা ক্যাটাগরি: সারা দেশ, রংপুর

রমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এক হাজার শয্যার হাসপাতালটির ৪২টি ওয়ার্ডে প্রতিদিন ভর্তি রোগীর সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। এ ছাড়া বহির্বিভাগে দুই হাজার রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকে। কর্মবিরতি চলায় এসব রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে এসে ভোগান্তিতে পড়ছে।

মেডিসিন ওয়ার্ডে বারান্দায় কথা হয় নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে লাল চান মিয়ার সঙ্গে। অসুস্থ বাবাকে নিয়ে হাসপাতাল ছাড়ছেন তিনি। আক্ষেপ করে লাল চান বলেন, ‘সকাল থেকে কোনো ডাক্তার দেখে নাই। বাবার অবস্থা খুবই খারাপ, এই বুঝি জীবন যায়। ওই জন্য ক্লিনিক নিয়া যাওছি। সরকারি হাসপাতালে থাকলে বাবার জীবন বাঁচির নেয়।’

তবে সকাল ১০টার পর থেকেই চিকিৎসকেরা রোগী দেখছেন দাবি করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আ ম আখতারুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরাই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেন। তাদের কর্মসূচি চলায় সাময়িক সমস্যা হচ্ছে। এ সংকট খুব দ্রুত কেটে যাবে। সকাল ১০টার পর থেকেই চিকিৎসকেরা রোগী দেখছেন।

২৯ অক্টোবর অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান রংপুর মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মাহফুজার রহমান। এরপর দিন থেকেই তাঁকে অব্যাহতির দাবিতে আন্দোলনে নামে বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক, কর্মচারী ও ছাত্র-জনতা। অধ্যক্ষের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে অপসারণের ব্যানার টাঙিয়ে দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঘন কুয়াশায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ

রাজবাড়ী প্রতিনিধি
ঘন কুয়াশায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ। ছবি: সংগৃহীত
ঘন কুয়াশায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ। ছবি: সংগৃহীত

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌ-রুটে ফেরি চলাচল ঘন কুয়াশার কারণে বন্ধ করেছে বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১০টা থেকে নৌ দুর্ঘটনা এড়াতে এই রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয় বলে জানান বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন।

সালাহউদ্দিন বলেন, সন্ধ্যার পর থেকেই কুয়াশা পড়তে থাকে। রাত সাড়ে ১০টার সময় নদীপথ অস্পষ্ট হয়ে যায়। সে সময় নৌ দুর্ঘটনা এড়াতে এই নৌ-রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় ঘাট এলাকায় কিছু যানবাহন আটকা পড়েছে।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন আরও বলেন, কুয়াশা কেটে গেলে ফেরি চলাচল শুরু হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের ৯ শতাংশ নারী ধর্ষণের শিকার: বিএনপিএস

কক্সবাজার প্রতিনিধি
কক্সবাজার শহরের একটি হোটেলের সম্মেলনকক্ষে আজ বুধবার বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ আয়োজিত গোল টেবিল বৈঠক। ছবি: আজকের পত্রিকা
কক্সবাজার শহরের একটি হোটেলের সম্মেলনকক্ষে আজ বুধবার বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ আয়োজিত গোল টেবিল বৈঠক। ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে বসবাস করা ৫৫ শতাংশ নারী ও কন্যা শিশু প্রতিনিয়ত সুরক্ষা, শিক্ষা, পুষ্টি ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, আশ্রয়শিবিরগুলোয় ৯ শতাংশ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) কক্সবাজার শহরের একটি হোটেলের সম্মেলনকক্ষে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) আয়োজিত গোল টেবিল বৈঠকে এ তথ্য তুলে ধরে সংস্থাটি।

বিএনপিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সাল থেকে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানে তারা কক্সবাজারের ৩৩টি শিবিরে বসবাস করছে, যা বিশ্বে বৃহত্তম শরণার্থী আশ্রয়স্থলগুলোর একটি। এই জনগোষ্ঠীর ৫২ শতাংশের বেশি নারী ও কন্যা।

সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে আট বছরেরও বেশি সময়ে কক্সবাজারের প্রায় ৫ লাখ মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই দীর্ঘস্থায়ী সংকটের প্রভাবে স্থানীয় জনগোষ্ঠী জীবিকা, মজুরি, বন ও জলসম্পদ, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক সংহতির ওপর ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে পড়েছে। ফলে এটি শুধু শরণার্থী সংকট নয়; এটি মানবিকতা, উন্নয়ন এবং শান্তির এক যৌথ চ্যালেঞ্জ।

‘শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অধিকার ও দায়িত্ব’ শীর্ষক এ গোল টেবিল বৈঠক সঞ্চালনা করেন বিএনপিএসের উপপরিচালক নাসরিন বেগম। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (যুগ্ম সচিব) মোহাম্মদ শামসুদ্দৌজা নয়ন। এ ছাড়া শরণার্থী ত্রান ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এম এ সানোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ পরিবশে আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য হুমায়রা বেগমসহ সংশ্লিষ্টরা বক্তব্য রাখেন।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শামসুদ্দৌজা নয়ন বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আন্তর্জাতিক অর্থ সহায়তা কমে এসেছে। এর ফলে সামাজিক নিরাপত্তা সংকট তৈরি হচ্ছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নারীরা।

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপত্তা, খাদ্য, আশ্রয়, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং ও সহিংসতা থেকে সুরক্ষার অধিকার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কাঠামোর অধীনে নিশ্চিত করা নৈতিক ও আইনগত দায়িত্ব। একইভাবে, আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়েরও টেকসই উন্নয়ন, পরিবেশ সুরক্ষা, সম্মানজনক কাজ এবং জনসেবায় ন্যায্য প্রবেশাধিকারের জরুরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যবিপ্রবির প্রথম উপাচার্য রফিকুল ইসলাম মারা গেছেন

­যশোর প্রতিনিধি
মো. রফিকুল ইসলাম সরকার। ছবি: সংগৃহীত
মো. রফিকুল ইসলাম সরকার। ছবি: সংগৃহীত

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরকার মারা গেছেন (ইন্না...রাজিউন)। আজ বুধবার সকালে ঢাকার নিজ বাসা থেকে বের হয়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর তাঁকে একটি বেসরকারি বিশেষায়িত হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরকার যবিপ্রবি স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক। পরবর্তীতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। সেখানে তিনি কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি কৃষিবিদ গ্রুপের চেয়ারম্যান ও যবিপ্রবির রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এ ছাড়া তিনি একজন কৃষি বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলী হিসেবে দেশের কৃষি খাতের যান্ত্রিকীকরণ ও আধুনিকায়নে দীর্ঘ পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে কৃতিত্বের সঙ্গে অবদান রেখেছেন।

এদিকে, ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরকারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মজিদ ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হোসেন আল মামুন, রিজেন্টবোর্ড সদস্যবৃন্দসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার।

এক শোক বার্তায় যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মজিদ বলেন, রফিকুল ইসলাম সরকার ছিলেন একজন সৎ, মানবিক, ধর্মভীরু ও দায়িত্বশীল মানুষ। যবিপ্রবির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আজ অবধি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতিতে নিরলস পরিশ্রম করেছেন।

তিনি ছিলেন একজন দক্ষ প্রশাসক এবং বরেণ্য কৃষি বিজ্ঞানী। যবিপ্রবির সূচনালগ্নে তার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও দূরদর্শী পরিকল্পনা বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আজকের এই অবস্থানে পৌঁছাতে ভিত গড়ে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য হিসেবে তিনি শূন্য থেকে একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার যে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিলেন, তা যবিপ্রবি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১০ কিলোমিটার যানজট

সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ২৪
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে কাঁচপুর সেতু থেকে লাঙ্গলবন্দ পর্যন্ত ১০ কিলোমাটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে একটি ট্রাক দুর্ঘটনার পর দীর্ঘ সময় সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হওয়ায় এ যানজট তৈরি হয়।

এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে আটকে থেকে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক, ব্যক্তিগত যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। রাত সাড়ে ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মহাসড়কে যানজট দেখা গেছে।

কাঁচপুর হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী জানান, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে লাঙ্গলবন্দ ব্রিজ এলাকায় একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতুর রেলিংয়ে সজোরে আঘাত করে। ট্রাকটিতে প্রায় ২৭ টন মালামাল বোঝাই ছিল। দুর্ঘটনায় সেতুর রেলিং ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

তিনি আরও জানান, ট্রাকটিতে অতিরিক্ত মালামাল থাকায় রেকার দিয়ে সরানো সম্ভব হয়নি। ফলে প্রথমে অন্য একটি ট্রাকে মালামাল স্থানান্তরের কাজ শুরু করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সময় লাগায় দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাকটি বিকেলের আগে সরানো যায়নি। এর ফলে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রামমুখী লেনে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়েছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট। ছবি: আজকের পত্রিকা

পণ্যবাহী ট্রাকচালক শাহ আলম জানান, দুর্ঘটনার কারণে রাস্তা বন্ধ ছিল বুঝতে পারছি। কিন্তু এত সময় লাগবে ভাবিনি। মালামাল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এতে আর্থিক ক্ষতিও হচ্ছে।

আরেক যাত্রী আক্তার হোসেন বলেন, আমি চট্টগ্রামে যাচ্ছি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু তিন ঘণ্টা ধরে একই জায়গায় আটকে আছি। ছোট বাচ্চা নিয়ে খুব বিপদে পড়েছি।

কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুর্ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে পুলিশের একাধিক টিম কাজ শুরু করে। বিকেল নাগাদ মালামাল সরিয়ে ট্রাকটি সড়ক থেকে অপসারণ করা হলে ধীরে ধীরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

কাঁচপুর হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমাদের একাধিক টিম কাজ করছে। টানা তিন দিনের ছুটি থাকায় মহাসড়কে গাড়ির চাপ বেশি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত