Ajker Patrika

ফেলানী হত্যার ১৪ বছর: বিচার পাওয়ার আশায় তার পরিবার ও স্বজনেরা

ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
কাঁটাতারে ঝুলন্ত ফেলানীর লাশ। ছবি: সংগৃহীত
কাঁটাতারে ঝুলন্ত ফেলানীর লাশ। ছবি: সংগৃহীত

ফেলানী খাতুন (১৪) হত্যার ১৪ বছর আজ। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের উত্তর অনন্তপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে তার মৃত্যু হয়। ফেলানীর বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের দক্ষিণ রামখানা কলোনিটারী গ্রামে।

সেদিন বাবার সঙ্গে ৯৪৭ নম্বর আন্তর্জাতিক পিলারের ৩ নম্বর সাব-পিলারের পাশ দিয়ে মই বেয়ে কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে দেশে ফিরছিল ফেলানী। এ সময় ভারতের কোচবিহারের সাহেবগঞ্জ থানার চৌধুরীহাট ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ গুলি করে তাকে হত্যা করে। এ ঘটনার পর তার লাশ ৪ ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে থাকে। ১৪ বছরেও এ হত্যাকাণ্ডের বিচার পায়নি তার পরিবার।

সরেজমিনে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, দিনটিকে ঘিরে ফেলানীর কবর পরিষ্কার করছে তার পরিবারের সদস্যরা। কথা হয় তার বাবা নূরুল ইসলাম ও মা জাহানারার সঙ্গে। তাঁরা বলেন, ‘১৪ বছরেও সেদিনের দুঃসহ স্মৃতির কথা ভুলতে পারিনি আমরা। আজও গভীর রাতে ঘুম ভেঙে যায় আমাদের। দুই চোখে পানি ঝরে। মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে মানবাধিকার সংস্থাসহ বহুজনের কাছে গিয়েছি; কিন্তু আজও বিচার পেলাম না।’

২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট কোচবিহার জেলার বিএসএফের ১৮১ সদর দপ্তরে স্থাপিত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যার বিচারকাজ শুরু হয়। ৫ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করেন সে দেশের আদালত। রায় প্রত্যাখ্যান করে ১১ সেপ্টেম্বর ফেলানীর বাবা ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে সে দেশের সরকারকে ন্যায়বিচারের আশায় চিঠি দেন। ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনঃ বিচার কার্যক্রম শুরু হলেও বিভিন্ন কারণে তা মুখ থুবড়ে পড়ে।

ফেলানীর কবর পরিষ্কার করছেন তার স্বজনেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফেলানীর কবর পরিষ্কার করছেন তার স্বজনেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

২০১৫ সালে আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ আরেকটি ক্ষতিপূরণ মামলা করে। ৩১ আগস্ট ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সে দেশের সরকারকে ফেলানীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫ লাখ রুপি প্রদানের অনুরোধ করেন। জবাবে সে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলামকে দায়ী করে বক্তব্য দেয়। এরপর ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে কয়েক দফা শুনানি পেছায়। ২০২০ সালের ১৮ মার্চ শুনানির দিন ধার্য হয়; কিন্তু সেই শুনানি আজও হয়নি।

২০১৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ফেলানী হত্যার ঘটনায় স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিচার এবং ক্ষতিপূরণ আদায়ে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম প্রথম ও বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী দ্বিতীয় বাদী হয়ে আইন ও বিচারবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের (ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া) সচিব এবং বিএসএফের মহাপরিচালককে বিবাদী করে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট নয়াদিল্লিতে ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩২ অনুযায়ী একটি ফৌজদারি মামলা করেন। তারা ২০১৫ সালের ২১ জুলাই ফেলানীর বাবার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন ক্ষতিপূরণ চেয়ে আরও একটি আবেদন করেন।

ফেলানীর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে তার মা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফেলানীর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে তার মা। ছবি: আজকের পত্রিকা

এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সালমা আলী মোবাইল ফোনে জানান, মামলাটি ভারতের সুপ্রিমকোর্টে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে রয়েছে।

এদিকে কয়েক বছর থেকে ৭ জানুয়ারিকে ফেলানী দিবস ঘোষণা, হত্যার বিচার, ফেলানীর পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বারিধারা পার্ক রোডের নাম ‘ফেলানী সরণি’ রাখার দাবিতে কর্মসূচি পালন করে আসছে ঢাকার নাগরিক পরিষদ।

নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দীন বলেন, বিশ্বব্যাপী সীমান্ত হত্যা বন্ধ ও ৭ জানুয়ারি ফেলানী দিবস পালনের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে ২০১৫ সালে তাঁরা একটি স্মারকলিপি দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, এটি বাস্তবায়নের জন্য জাতিসংঘের সদস্য যেকোনো রাষ্ট্রকে প্রস্তাব আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। তাঁরা সে উদ্যোগের অপেক্ষায়। এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে এবার ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় শুধু স্টিকার লাগানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেলানী হত্যা মামলার বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের সদস্য মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা এ হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার পাইনি। বিচার পেলে মানবাধিকার সুরক্ষার পথ সুগম হতো।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শিক্ষকদের ঢুকতে না দিয়ে পরীক্ষা নিলেন অভিভাবকেরা

এনসিপি, এবি পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন মিলে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’, মুখপাত্র নাহিদ ইসলাম

সাংবাদিক শওকত মাহমুদকে বাসার সামনে থেকে তুলে নিয়ে গেল ডিবি

২০৯৮ পর্যন্ত কবে কোন দেশ বিশ্বকাপ নেবে—ভবিষ্যদ্বাণী করল গ্রোক এআই

বরিশালে ব্যারিস্টার ফুয়াদের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাগ্‌বিতণ্ডা, ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ স্লোগানে ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাতিয়ার চরআতাউর: সুপেয় পানির তীব্র সংকট, বাসিন্দাদের ভোগান্তি

­হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
চরআতাউরে গর্তের পানিতে ধোয়ার কাজ সারছেন এক নারী। ছবি: আজকের পত্রিকা
চরআতাউরে গর্তের পানিতে ধোয়ার কাজ সারছেন এক নারী। ছবি: আজকের পত্রিকা

পুকুর শুকিয়ে গেছে। গভীর নলকূপগুলোও বিকল। উপায় না দেখে ঘরের সামনে পুকুরে বড় গর্ত খুঁড়ে রাখা হয়েছে। তারপর সেখানে জমা হওয়া পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে। এদিকে নদীতে পানি থাকলেও তা লোনা। কেউ কেউ সেই লোনা পানি ব্যবহার করায় দেখা দিচ্ছে নানা রোগব্যাধি। ফলে বাসিন্দারা নিজেদের ব্যবহারের পানিসংকটের পাশাপাশি গৃহপালিত পশু-পাখি নিয়েও চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

এমন পরিস্থিতি নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার বিচ্ছিন্ন চরআতাউরে। এই চরে দুটি গুচ্ছগ্রাম ও একটি ব্যারাক হাউসে প্রায় চার শ লোকের বসবাস। তাদের সুবিধার্থে সরকারিভাবে দুটি বড় পুকুর খনন করা হয়। অস্বাভাবিক জোয়ারে পুকুরের পাড় ভেঙে পানি ঢুকে পড়ে। তাতে পলি জমে জমে পুকুরগুলো সমতলের মতো হয়ে গেছে। ফলে এখন আর পানি জমে না এই পুকুরগুলোতে। এ ছাড়া এখানকার বাসিন্দাদের ব্যবহারের জন্য চারটি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে তিনটি অনেক আগে থেকেই বিকল। একটি থেকে কোনোমতে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করা যায়। কিন্তু দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য মানুষজনকে নদীর লোনা পানিসহ বিকল্প উৎস খুঁজতে হয়।

সরেজমিনে তরুবীথি গুচ্ছ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এক গৃহিণী ঘরের সামনের গর্তে জমে থাকা ঘোলা পানিতে থালাবাসন পরিষ্কার করছেন। অল্প পানিতে ভালোভাবে পরিষ্কার হয় কি না—প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘কিছুই করার নেই। নদীর লোনা পানির চেয়ে অনেক ভালো গর্তের এই পানি। লোনা পানি ব্যবহারে শরীরে অ্যালার্জিসহ নানা রোগ দেখা দিয়েছে। এ জন্য ঘরের সামনে পুকুরের মধ্যে গর্ত তৈরি করে নিয়েছি। তা দিয়ে দৈনন্দিন গোসল, রান্নার কাজে ব্যবহারসহ বিভিন্ন প্রয়োজন মেটাতে হয়।’

গুচ্ছগ্রামের উত্তর পাড়ে বসবাস করেন লিপি রানী দাস নামের একজন। তিনি বলেন, এখন শীত মৌসুম শুরু হয়েছে। বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিছুদিন পর গর্তের পানি শুকিয়ে যাবে। তখন গরু-ছাগল ও নিজেদের প্রয়োজন মেটানো অনেক কঠিন হয়ে যাবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু লিপি, আফিয়া বা হাজেরা নয়। তরুবীথি ও ছায়াবীথি দুটি গুচ্ছ গ্রামের অনেকে নিজেদের প্রয়োজনে ঘরের সামনে গর্ত করে নিয়েছেন। সেই গর্তের পানি তাঁদের একমাত্র ভরসা।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে সেখানে নতুন একটি পুকুর খননের জন্য চিন্তা করতেছি। এ ছাড়া আগের পুকুরগুলো পুনরায় খনন করা যায় কি না তাও দেখতেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শিক্ষকদের ঢুকতে না দিয়ে পরীক্ষা নিলেন অভিভাবকেরা

এনসিপি, এবি পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন মিলে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’, মুখপাত্র নাহিদ ইসলাম

সাংবাদিক শওকত মাহমুদকে বাসার সামনে থেকে তুলে নিয়ে গেল ডিবি

২০৯৮ পর্যন্ত কবে কোন দেশ বিশ্বকাপ নেবে—ভবিষ্যদ্বাণী করল গ্রোক এআই

বরিশালে ব্যারিস্টার ফুয়াদের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাগ্‌বিতণ্ডা, ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ স্লোগানে ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সড়ক সংস্কারে অনিয়ম

ইউএনওর বদলির রাতে কাজ ঠিকাদার বিএনপির নেতা

নূরুন্নবী ফারুকী, ধামইরহাট (নওগাঁ) 
হাত দিয়ে একটু ঘষা দিলেই উঠে যাচ্ছে পিচসহ পাথর। দেখাচ্ছেন এক পথচারী। সম্প্রতি নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলা পরিষদ চত্বরে। ছবি: আজকের পত্রিকা
হাত দিয়ে একটু ঘষা দিলেই উঠে যাচ্ছে পিচসহ পাথর। দেখাচ্ছেন এক পথচারী। সম্প্রতি নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলা পরিষদ চত্বরে। ছবি: আজকের পত্রিকা

নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলায় রাতের অন্ধকারে করা সড়ক সংস্কারকাজের (সিল কোট) অনিয়ম ভোরের আলোতেই ফাঁস হয়ে গেছে। সদ্য সিল কোট দেওয়া সড়কে আঙুল বোলালেই উঠে আসছে পিচ আর পাথর। গতকাল রোববার সকালে উপজেলা পরিষদ চত্বর এলাকার সড়কে এই চিত্র দেখা গেছে।

সড়ক সংস্কারে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সাবেক পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহরিয়ার রহমান এবং ঠিকাদার, পৌর বিএনপির সভাপতি শহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে। এসব অনিয়মে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, সাবেক পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহরিয়ার রহমান গত শুক্রবার ধামইরহাট থেকে বদলি হন। তার আগের দিন (বৃহস্পতিবার) রাতে তড়িঘড়ি করে যেনতেনভাবে সড়ক সংস্কারকাজ করেন ঠিকাদার। অভিযোগ রয়েছে, বদলি হওয়ার আগে অনেকটা ‘জোর করে’ প্রকল্প নিয়ে ঠিকাদারকে দিয়ে কাজটি করান পৌর প্রশাসক শাহরিয়ার রহমান।

পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে পৌরসভার অধীনে রিকোয়েস্ট ফর কোটেশন (আরএফকিউ) টেন্ডারের মধ্য দিয়ে ৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকা ব্যয়ে উপজেলা পরিষদ চত্বরের ৩৯৫ মিটার সড়ক সংস্কারের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শহিদুর ট্রেডার্স। তবে অতিরিক্ত আরও ৪৫৬ মিটার সড়ক সিল কোট করে প্রতিষ্ঠানটি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা পরিষদ চত্বর এলাকায় সদ্য সংস্কার করা সড়কে আঙুল বা পা দিয়ে সামান্য ঘষা দিলেই পিচসহ পাথর উঠে আসছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কাজের মান অত্যন্ত নিম্নমানের। এমনটি রোলারও নিয়মমাফিক ব্যবহার করা হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, অনিয়ম ও দুর্নীতির পেছনে ঠিকাদার শহিদুর রহমান, সাবেক ইউএনও এবং কয়েকজন প্রভাবশালী জড়িত। তদন্ত হলে সবকিছু বের হয়ে আসবে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার ও পৌর বিএনপির সভাপতি শহিদুর রহমান বলেন, ‘আমার লাইসেন্স ব্যবহার করে কাজ করা হয়েছে ঠিক। তবে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতির সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা নেই।’

এ বিষয়ে পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী সজল কুমার অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, গত বৃহস্পতিবার তৎকালীন ইউএনও শাহরিয়ার রহমান অনেকটা জোর করে ৪৫৬ মিটার সিল কোট সড়ক নির্মাণকাজের দায়িত্ব নেন। সেদিন ছুটি থাকায় এবং রাতের অন্ধকারে কাজ হওয়ায় পৌরসভা তা তদারকি করতে পারেনি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম এ ওয়াদুদ বলেন, পৌর বিএনপির সভাপতি শহিদুরের বিরুদ্ধে কিছু লোক অপপ্রচার চালাচ্ছে। এমন ঘটনার কোনো সত্যতা নেই। সত্যতা প্রমাণিত হলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে বদলির কারণে পৌর প্রশাসক ও ইউএনও শাহরিয়ার রহমানের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শিক্ষকদের ঢুকতে না দিয়ে পরীক্ষা নিলেন অভিভাবকেরা

এনসিপি, এবি পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন মিলে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’, মুখপাত্র নাহিদ ইসলাম

সাংবাদিক শওকত মাহমুদকে বাসার সামনে থেকে তুলে নিয়ে গেল ডিবি

২০৯৮ পর্যন্ত কবে কোন দেশ বিশ্বকাপ নেবে—ভবিষ্যদ্বাণী করল গ্রোক এআই

বরিশালে ব্যারিস্টার ফুয়াদের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাগ্‌বিতণ্ডা, ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ স্লোগানে ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নড়াইলের ২ আসন: বিএনপি-জামায়াত সমানে সমান, আশাবাদী প্রার্থীরা

  • হাল ছাড়তে রাজি নন বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত নেতা।
  • কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের একাংশের ভোট পেতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
  • বিএনপি ও জামায়াত উভয় দলই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
নড়াইল প্রতিনিধি 
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২: ৪৯
বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম, মনিরুল ইসলাম, এম সাজ্জাদ হোসেন, ওবায়দুল্লাহ কায়সার, আতাউর রহমান বাচ্চু ও তাজুল ইসলাম। ফাইল ছবি
বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম, মনিরুল ইসলাম, এম সাজ্জাদ হোসেন, ওবায়দুল্লাহ কায়সার, আতাউর রহমান বাচ্চু ও তাজুল ইসলাম। ফাইল ছবি

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নড়াইলের দুটি সংসদীয় আসনে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। নড়াইল-১ আসনে বিএনপি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলমকে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করলেও হাল ছাড়তে রাজি নন আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী বি এম নাগিব হোসেন। এ ছাড়া কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের একাংশের ভোট পেতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম সাজ্জাদ হোসেন। নড়াইল-২ আসনে বিএনপির মো. মনিরুল ইসলাম এবং জামায়াতের আতাউর রহমান বাচ্চু; দুজনেই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।

নড়াইল-১ (সদরের একাংশ ও কালিয়া) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম। এখানে বিএনপির আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক বি এম নাগিব হোসেন। তিনিও হাল ছাড়তে রাজি নন। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা সেক্রেটারি ওবায়দুল্লাহ কায়সার। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হতে পারেন আব্দুল আজিজ। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) এস এম সাজ্জাদ হোসেন। তিনি কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের একাংশের ভোট পেতে পারেন। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘নির্বাচনী এলাকায় নিয়মিত মিছিল, সমাবেশসহ গণসংযোগ করছি। ভোটারদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি।’ ওবায়দুল্লাহ কায়সার বলেন, ‘আমাদের নীতি ও আদর্শের প্রতি জনগণ ব্যাপকভাবে সাড়া দিচ্ছে। নির্বাচিত হলে সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত কালিয়া গড়ব।’

নড়াইল-২ (লোহাগড়া-সদরের একাংশ) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা সেক্রেটারি মো. মনিরুল ইসলাম। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা আমির অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান বাচ্চু। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হতে পারেন তাজুল ইসলাম। গণঅধিকার পরিষদের সম্ভাব্য প্রার্থী নুর ইসলাম।

আতাউর রহমান বাচ্চু বলেন, ‘আমরা একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করছি। আপামর জনসাধারণের কাছে যাচ্ছি, তাদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।’ মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘দল করতে গিয়ে হামলা-মামলার শিকার হয়েছি। কারাবরণ করেছি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নে মাঠে-ময়দানে কাজ করছি।’ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নিয়মিত সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শিক্ষকদের ঢুকতে না দিয়ে পরীক্ষা নিলেন অভিভাবকেরা

এনসিপি, এবি পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন মিলে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’, মুখপাত্র নাহিদ ইসলাম

সাংবাদিক শওকত মাহমুদকে বাসার সামনে থেকে তুলে নিয়ে গেল ডিবি

২০৯৮ পর্যন্ত কবে কোন দেশ বিশ্বকাপ নেবে—ভবিষ্যদ্বাণী করল গ্রোক এআই

বরিশালে ব্যারিস্টার ফুয়াদের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাগ্‌বিতণ্ডা, ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ স্লোগানে ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গদখালীর ফুলবাজার: ফুলের গায়ে ভোটের হাওয়া

  • দিগন্তজোড়া মাঠে শোভা পাচ্ছে বাহারি রঙের ফুল।
  • এই মৌসুমে লক্ষ্য ৫০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি।
  • নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হলে লোকসানের শঙ্কা।
জাহিদ হাসান, যশোর 
ফুলের বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক। সম্প্রতি যশোরের গদখালীতে। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফুলের বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক। সম্প্রতি যশোরের গদখালীতে। ছবি: আজকের পত্রিকা

যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশে গদখালী বাজার লোকারণ্য। বাইসাইকেল বা ভ্যানে করে বাহারি সব ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন চাষিরা। সকাল হতে হতে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরাও হাজির। দামে মিললেই কিনে নিয়ে ছুটছেন গন্তব্যে। এমন দৃশ্য এখন নিত্যদিনের। চাষিরা জানান, বছরজুড়ে ফুলের চাষ হলেও জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ফুলের চাহিদা বেশি থাকে। তবে ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন থাকবে, এ নিয়ে ভাবনায় রয়েছেন তাঁরা।

বছরে ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকার ফুল হাতবদল হয় এ বাজারে। চলতি বছর অতিবৃষ্টির কারণে দেরিতে চাষাবাদ শুরু হলেও চাষিদের নিবিড় পরিচর্যায় মাঠে মাঠে এখন শোভা পাচ্ছে গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, গোলাপ, জারবেরা, গ্লাডিওলাসসহ নানা ধরনের ফুল। গাছে গাঁদা ফুল ধরে রাখতে চলছে ভিটামিন ও বালাইনাশক স্প্রে। এর মধ্যে বাড়তে শুরু করেছে সব ধরনের ফুলের দামও। বিজয় দিবসের আগে এ দাম আরও বাড়বে বলে আশা চাষিদের।

গদখালীর ফুলচাষি ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘প্রতিবছর আমরা শীতের মৌসুমের বিশেষ দিবসগুলো ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে থাকি। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহের জন্য চাষিরা কয়েক মাস আগে থেকে খেত পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এবারও আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। কিন্তু মৌসুমের শুরুতে ফুলের দাম কম হলেও বিশেষ দিবসগুলোতে দাম বাড়বে বলে আশা রয়েছে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে ফুলের বাজার।’

গদখালী মোকামে ফুল বিক্রি করতে আসা চাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শীতকালে ফুলের উৎপাদন ও বিক্রি বাড়ে। এ বছরও আমরা ফুল বিক্রির প্রস্তুতি নিয়েছি। আজকে বাজারে প্রতিটি গোলাপ বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ তিন টাকা। বর্তমানে বাজারে গোলাপ ও গাঁদার দাম সবচেয়ে কম। আশা করছি, বিজয় দিবস উপলক্ষে সব ধরনের ফুলের দাম বাড়বে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে ফুলের বাজার। দেশের পরিবেশ স্থিতিশীল থাকলে ফুলের বাজার চাঙা হবে।’

বৃহস্পতিবার গদখালী বাজারে প্রতিটি গোলাপ বিক্রি হয়েছে ৩-৪ টাকা, রজনীগন্ধা ৮-১৫ টাকা, জারবেরা ৮-১০ টাকা, গাঁদা প্রতি হাজার ১০০ টাকা। গ্লাডিওলাস ৬-৮ টাকা, জারবেরা ৭-৮ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা ২-৩ টাকা। কৃষকেরা জানান, এখন গোলাপ ও রজনীগন্ধা ছাড়া সব ফুলের দাম ঊর্ধ্বমুখী। আগামী সপ্তাহ থেকে এই দুটি ফুলের দামও বাড়বে বলে জানান তাঁরা।

ঝিকরগাছার কুলিয়া গ্রামের চাষি আরিজুল ইসলাম বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে রজনীগন্ধা চাষ করেছি। প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় দুই লাখ টাকার ফুল বিক্রি করেছি। আশা করছি, আরও প্রায় তিন লাখ টাকার ফুল বিক্রি হবে। মৌসুমের শুরুতে ফুলের দাম ভালো পাচ্ছি। বর্তমানে ১০-১২ টাকা দরে প্রতিটি রজনীগন্ধার স্টিক বিক্রি করলেও এ মৌসুমে সর্বোচ্চ ২১ টাকা দরেও রজনীগন্ধা বিক্রি করেছি।’

পটুয়াপাড়া গ্রামের চাষি তৈয়ব আলী বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে গোপাল চাষে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গোলাপ ফুলের উৎপাদন বেশি। বাজারে গোলাপের সরবরাহ বেশি হওয়ায় দাম কমেছে। গাঁদা ফুলের দামেও ধস নেমেছে। আশা করছি, বিজয় দিবসের আগে আবার ফুলের দাম বাড়বে। এই মৌসুমে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লাভবান হতে পারব।’

ফুল চাষ ও বিপণনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিবছর বিজয় দিবস, ২৫ ডিসেম্বর ক্রিসমাস ডে, খ্রিষ্টীয় নববর্ষ, ১৩ ফেব্রুয়ারি বসন্তবরণ উৎসব, পরদিন ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন ডে, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অনুষ্ঠান উপলক্ষে ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

এ বছরও ৫০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্য রয়েছে বলে জানিয়েছেন যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, ‘দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না থাকলে অনুষ্ঠান বা জাতীয় দিবসগুলো জাঁকজমকপূর্ণভাবে হয় না। তাই আমাদের ফুলের চাহিদা ও বিক্রি কমে যায়। তারপরও বাজার ধরার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। আশা করি, দিবসগুলোতে ফুলের দাম আরও বাড়বে।’

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, যশোরে প্রায় সাড়ে ৬০০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ১৩ ধরনের ফুলের চাষ হয়েছে। এ ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত লক্ষাধিক মানুষ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শিক্ষকদের ঢুকতে না দিয়ে পরীক্ষা নিলেন অভিভাবকেরা

এনসিপি, এবি পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন মিলে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’, মুখপাত্র নাহিদ ইসলাম

সাংবাদিক শওকত মাহমুদকে বাসার সামনে থেকে তুলে নিয়ে গেল ডিবি

২০৯৮ পর্যন্ত কবে কোন দেশ বিশ্বকাপ নেবে—ভবিষ্যদ্বাণী করল গ্রোক এআই

বরিশালে ব্যারিস্টার ফুয়াদের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাগ্‌বিতণ্ডা, ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ স্লোগানে ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত