Ajker Patrika

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি কবিতা ও কিছু কথা

প্রশান্ত মৃধা
আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২২: ০৫
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি কবিতা ও কিছু কথা

উনিশে বিধবা মেয়ে কায়ক্লেশে উনতিরিশে এসে
গর্ভবতী হলো, তার মোমের আলোর মতো দেহ
কাঁপালো প্রাণান্ত লজ্জা, বাতাসের কুটিল সন্দেহ
সমস্ত শরীরে মিশে, বিন্দু বিন্দু রক্ত অবশেষে
যন্ত্রণার বন্যা এলো, অন্ধ হলো চক্ষু, দশ দিক, 
এবং আড়ালে বলি, আমিই সে সুচতুর গোপন প্রেমিক। 
 
দিবাসার্ধ পায়ে হেঁটে ফিরি আমি জীবিকার দাসত্ব-ভিখারি
ক্লান্ত লাগে সারা রাত, ক্লান্তি যেন অন্ধকার নারী। 
একদা অসহ্য হলে বাহুর বন্ধনে পড়ে ধরা
যন্ত্রণায় জর্জরিতা দুঃখিনী সে আলোর স্বরূপে
মাংসের শরীর তার শুভক্ষণে সব ক্লান্তিহরা
মন্ডুকের মতো আমি মগ্ন হই সে কন্দর্প-কূপে। 
 
তার সব ব্যর্থ হলো, দীর্ঘশ্বাসে ভরালো পৃথিবী
যদিও নিয়মনিষ্ঠা, স্বামী নামে স্বল্প চেনা লোকটির ছবি
শিয়রেতে ত্রুটিহীন, তবু তার দুই শঙ্খ স্তনে
পূজার বন্দনা বাজে আ-দিগন্ত রাত্রির নির্জনে। 
 
সে তার শরীর থেকে ঝরিয়েছে কান্নার সাগর
আমার নির্মম হাতে সঁপেছে বুকের উপকূল, 
তারপর শান্ত হলে সুখে-দুঃখে কামনার ঝড়
গর্ভের প্রাণের বৃন্তে ফুটে উঠলো সর্বনাশ-ফুল। 
 
বাঁচাতে পারবে না তাকে ঊনবিংশ শতাব্দীর বীরসিংহ শিশু
হবিষ্যান্নপুষ্ট দেহ ভবিষ্যের ভারে হলো মরণসম্ভবা
আফিম, ঘুমের দ্রব্য, বেছে নেবে আগুন, অথবা
দোষ নেই দায়ে পড়ে যদি-বা ভজনা করে যীশু।

[বিবৃতি, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়]

এমন না যে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বহুখ্যাত আর আবৃত্তি উপযোগী কবিতা হিসেবে এই কবিতাটি কখনো শুনেছিলাম। কেউ কখনো বলেওনি এই কবিতাটির কথা। তখন পর্যন্ত পড়িনি, যত দিন না তাঁর শ্রেষ্ঠ কবিতার সংকলনটি হাতে এসেছে। হাতে এলেও যে পৃষ্ঠা উলটেই এটি পড়ার কথাও না, যতই এই বইয়ের দ্বিতীয় কবিতা হোক। বরং, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতার বাংলাদেশি সংস্করণটি প্রথম যেদিন হাতে নিয়েছিলাম, সেদিন প্রথমেই পড়েছিলাম অনেকের আবৃত্তির কারণে বহুদিন ধরে শোনা কবিতাগুলোই। তার একটি একটি ওলটাই আর পড়ি। ‘কেউ কথা রাখেনি’। নিজের তেত্রিশ বছর বয়স তখন অনেক দূরে, প্রায় অর্ধেক বয়স তখন, কিন্তু পড়ার ভেতর দিয়ে সেই বয়সের ভার ও এর দীর্ঘশ্বাস কিছু বুঝে নিতে চাই। যেমন, ‘কবির মৃত্যু: লোরকা স্মরণে’ এক অর্থে লোরকাকে ভালোমতো চিনে ওঠার আগেই পড়া। ‘খুনঝরা বিয়ে’ নামক লোরকার বিশ্বখ্যাত নাটকটির একটি অনুবাদ একটুখানি পড়তে পড়তে বইটি হাতছাড়া হয়ে গেছে, তাই তাঁর নাম জানি, কিন্তু তাঁর কবি ও নাট্যকার পরিচয়ের ধাঁধা তাতে তেমন কাটেনি। পাবলো নেরুদার সঙ্গে তাঁর নামসহ উচ্চারিত, কিন্তু বাড়িঘর স্পেনে কি লাতিন আমেরিকার কোনো দেশে সে হিসেবে সব সময় ঠিক থাকে না, তালগোল পাকিয়ে যায়। কিন্তু একবার শুনে মনে থাকে এই কবিতার দুটো পঙ্ক্তি, দুজন খসখসে সবুজ উর্দিপরা সিপাহি টানতে টানতে কবিকে নিয়ে গেল। তাঁর মৃত্যু মুহূর্তে সমাবেশের পেছন থেকে একজন ছাত্র একটি লম্বা লোককে বলল, ‘মাথাটা পকেটে পুরুন দাদা!’ তখন কোনো ভিড়ে সামনে দীর্ঘদেহী কোনো মানুষ সামনে থাকলে পঙ্ক্তিটি খুব মনে পড়ত। আর, নির্বাসন দিলে সুনীলের চাই সাড়ে তিন হাত জমি কিংবা ‘ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি’ কবিতায় ইন্দিরার মতো লৌহমানবীকে যখন দুষ্টুমিভরে লক্ষ্মীমেয়ে বলে বিমানের জানালা থেকে জলপাইগুড়ির বন্যা দেখে যদি তিনি অস্ফুট বলে বসেন বাঃ কী সুন্দর! সুনীল লিখেছেন, ‘তোমার শুকনো ঠোঁট, কত দিন সেখানে চুম্বনের দাগ পড়েনি’—এমন পঙ্ক্তি খুব মনে থাকে। এগুলোর কোনো কোনোটিতে বয়সজনিত ভালো লাগা লেগে আছে বুঝতে পারি, ওই প্রায় একবার শোনায় মনে থাকার আর কী কারণ থাকতে পারে? যদিও শ্রেষ্ঠ কবিতার পৃষ্ঠা ওলটাতে ওলটাতে কোনো নবীন কিশোরকে যে ভুবনডাঙার মেঘলা আকাশ দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা যেখানে তীব্র সেই কবিতাটির কাছে যেন ঘটে খুব সহজ এক প্রবেশাধিকার। কিন্তু তখনো পর্যন্ত কে কোনোভাবে একটু মনোযোগে রবীন্দ্রনাথ পড়েছি? জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’সহ আরও কিছু কবিতা, তার চেয়ে বরং চুল তার কবেকার অন্ধকার—এমন ধ্বনির অনুপ্রাসঘটিত সাম্যেই তা বারবার উচ্চারিত। তা-ও বনলতা সেনকে নিয়ে, এই কল্পিত নায়িকার খোঁজ নিয়ে, জীবনানন্দ দাশের জীবনে নারী নিয়ে উৎসাহের শেষ নেই। যেমন, ওই সময়ে খ্যাতির গনগনে আকাশে থাকা সুনীল-শক্তি ও তাঁদের অন্য কবিতা সহযাত্রীদের জীবনে নারী প্রসঙ্গও তাই তাঁদের কবিতা পড়ার উৎসাহের পাশে খুব ভর করে। ফলে, নীরা ও নীরাসংক্রান্ত কবিতাগুলোর ভেতর দিয়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবনে নারী ইত্যাদি বিষয় সেই সব নিজস্ব বৃত্তের আলোচনা তার কাব্যপাঠে জায়গা পায়। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতায় তেমন ‘নায়িকা’ নেই, নেই শঙ্খ ঘোষে, যদিও তাঁর ‘যমুনবতী’—সেই শোনা ও পড়ার জগতের খুব প্রিয় কবিতা।

ফলে, এই পরিমণ্ডলে, এই কাব্য পাঠের জায়গায়, এই সচল আয়তনে, এই নিজস্ব বৃত্তে, বইটার ওপর মাঝবয়সী সুনীলের ছবি দেখে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে পড়ে নিতে নিতে, সেখানে নিখিলেশের কাছে পেচ্ছাপ আর কান্নার মিল খোঁজা নিয়ে এই অনাকাঙ্ক্ষিত মানব জন্ম, কিংবা বন্ধু নিখিলেশের মতনই এক নারী নীরা যার কাছে মন ভালো নেই বলা যায়, যে নারীর মন খারাপ হলে কলকাতা নগরীর মন খারাপকে মিলিয়ে নিজের মন খারাপের চৌহদ্দি নির্মিত হয়। সেখানে একেবারে শুরুর দিককার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি কবিতা ‘বিবৃতি’ কোনোভাবেই চোখে পড়েনি। চোখে পড়ার কথা নয়। এতক্ষণ তাই জানালাম যে চোখে পড়ার আগে কানে শোনার এক ভার তৈরি হয়ে গিয়েছিল, সেটাকেই হাতে আসা বইয়ের পৃষ্ঠায় মিলিয়ে, স্থিরীকৃত আগ্রহকে যেন বইয়ের পৃষ্ঠায় সঙ্গে প্রত্যক্ষ আর নিজের স্মৃতিধার্যতার সঙ্গে পরোক্ষে মিলিয়ে নেওয়াই আসল উদ্দেশ্য। সে কাজটি সারি। নিজের পড়ার ভেতর দিয়ে আবিষ্কারের যে যাত্রা তা কোনোভাবেই এর ভেতর দিয়ে সম্পন্ন হয় না। হওয়ার কথা নয়। নিজের স্থানান্তর ইত্যাদি কারণে প্রথম দেখা সেই শ্রেষ্ঠ কবিতাটি তখন হাতছাড়া হয়ে গেছে।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কিন্তু এরপর, হয়তো একেবারে নির্দিষ্ট করে ভাবিনি সেই মুহূর্তেই আবার পড়ব সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা। অথবা, সংকলনভুক্ত শ্রেষ্ঠ কবিতা। ‘দেশ’সহ অন্যান্য পত্রিকায় তাঁর নতুন কবিতা পড়ি। কবিতায় কাহিনিকথনে অসামন্যে হাত তাঁর। অত অল্প জায়গায় একটি পূর্ণাঙ্গ গল্পই যেন পড়া হয়। যা তাঁর কবিতার এক চিরকালীন স্বভাব, অথবা মুদ্রাগুণ। কিন্তু তাতেও তাঁর সেই সব সাম্প্রতিক কবিতা পাঠে কোনোভাবে আগেকার কবিতার কোনোটির বিস্মৃতি ঘটে না। এমনকি এই সাম্প্রতিকের কোনোটি প্রায় স্মৃতিতে হানাও দেয় না, কেননা তা স্মৃতিতে জায়গা পায় না। ফলে, নিজের কাছে এই সাম্প্রতিক সুনীল নতুন কবিতা নিয়েও পুরোনো কবিতায়ই যেন অস্তিত্বশীল। এমন একটা সময়ে যখন দে’জ প্রকাশিত তাঁর শ্রেষ্ঠ কবিতা হাতে এল তখন একেবারে শুরু থেকে, শুরু বলতে শুরুই, যেন সূচি থেকেই পড়ার এক প্রয়াসে দেখি প্রথম কাব্য 'একা এবং কয়েকজন', যে নামে তাঁর একটি উপন্যাস—কাহিনিগদ্যের সচল চলমানতায় পড়েছি—সে-কাব্যের ছয়টি কবিতা গ্রন্থিত 'শ্রেষ্ঠ কবিতা'য়। মূল বইটি আজও দেখিনি, কিন্তু হিসাব মেলাই, এই বইয়ের কবিতা মাত্র ছয়টি কিন্তু পরের বই ‘আমি কীরকমভাবে বেঁচে আছি’র এতগুলো! প্রথমটির প্রকাশ সাল ১৩৬৫, দ্বিতীয়টির ১৩৭২—সাত বছরে কবির পরিণত হাতের আত্মবিশ্বাস! সেখানে আছে, ‘হঠাৎ নীবার জন্য’, ‘আমি কীরকমভাবে বেঁচে আছি’, ‘এই হাত ছুঁয়েছিল’—এইভাবে ভাবি। এই তুলনায় শ্রেষ্ঠ কবিতায় ‘একা এবং কয়েকজন’ এর প্রথম কবিতা ‘প্রার্থনা’ পড়ে পৃষ্ঠা উলটে ‘বিবৃতি’তে গিয়ে চোখ থমকায়। এ যেন আমারই জানা জগতের গল্প। সেই জানা জগতের বাস্তব এখানে মিলেমিশে বেশ থমকে আছে। হয়তো কবির বয়ানের ‘আমি’ এখানে আমি নই, কিন্তু এই গোপন প্রেমিক ‘আমি’কে চিনি আমি। 

এক নিশ্বাসে কবিতাটা আবার পড়ি। যেকোনো লেখা পাঠে যে জিনিসটি যেকোনো পাঠকের ক্ষেত্রে সবচেয়ে তীব্রভাবে ঘটে, তা হলো, যদি কবিতায় বা কাহিনিতে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতাকে কি চেনা জগৎকে খুব কাছ থেকে দেখা যায়, আর অন্যদিক দিয়ে যদি ওই লেখা এক অনন্ত রহস্যের ভেতর দিয়ে নিয়ে যায়, যে রহস্য কোনোভাবেই নিজের কাছে সমাধানযোগ্য নয়—কল্পনায় সেই রহস্যকে এক কল্পিত সমাধান দেওয়ার মধ্যে ওই লেখা বারবার পড়া। পড়ে নিতে নিজের ভেতরে আরও একটি কখনো স্পষ্ট কখনো অস্পষ্ট জগৎ তৈরি হয়। যেমন, এই মুহূর্তে কবিতা হিসেবে রবীন্দ্রনাথের ‘স্বপ্ন’ কিংবা জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’কে ভেবে নিতে পারি। 

 ‘বিবৃতি’ পড়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে নিজের কাছে এক পরিচিত জগতের বিবৃতিময় বয়ান মনে হলো। মনে হলো, এই যে একটি বিধবা মেয়ের অন্ধকারাচ্ছন্ন জগতের কথা বলছেন কবি, এমন জগৎ আমার চেনা। খুব কাছ থেকে না হলেও, একটু দূর থেকে হলেও তার চলাচলকে জেনেছি। যে বয়সে জেনেছি, যখন দেখেছি, তখন তাকে ভেবে উঠতে পারিনি, কোনো কিছুর সঙ্গে মিলিয়ে নিতে পারিনি, কিন্তু আজ এ কথা সেই জানা অতীতকে এই মুহূর্তে আগেকার দেখার অভিজ্ঞতার সঙ্গে ক্ষণমাত্র অপেক্ষা না করেই মিলিয়ে নিতে পারলাম।

পড়ি: ‘উনিশে বিধবা মেয়ে কায়ক্লেশে উনতিরিশে এসে/গর্ভবতী হলো, তার মোমের আলোর মতো দেহ’। আমি মেলাই। তিনজন বিধবাকে দেখেছি খুব কাছ থেকে। একেবারে শৈশব ও বাল্যে আর কৈশোরেও। একজন বালবিধবা, বিয়ে হয়েছিল শৈশবে। কোন্ সুদূর অতীত তার বিয়ে হয়েছিল, তিনি নিজেই তা মনে করতে পারেন না। তারপর সেই শৈশব কি বাল্য কৈশোরকে ছুঁতে না ছুঁতেই তিনি বিধবা হন। তখন তিনি বাপের বাড়ি। সংবাদ শুনে এসে স্বামীর মৃতদেহ দেখেছিলেন। সধবা থেকে বিধবার বেশ ধরেছিলেন, আর এরপর আর কোনো দিন ফিরে যাননি বাপের বাড়ি। স্বামীর বাড়ি, শ্বশুরবাড়িতে দেওর ও দেওরপোর সংসারে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। সম্পর্কে আমার মায়ের এক ঠাকুমা। যখন দেখেছি তাঁকে, তাঁর তখন শেষজীবন। তাঁর সম্পর্কে যা জেনেছি, সবাই মা ও দিদিমার কাছ থেকে। কোনো দিন আর বিয়ের তো প্রশ্নই ওঠেনি, বাপের বাড়িতে ফিরে যাওয়াও সম্ভব। এই ভাবে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। তাঁর সেই শেষ জীবনে, এক প্যাঁচে পরা সাদা শাড়ি পেঁচানো শরীর, মুখে হাসি—সবই মনে করতে পারি। কিন্তু বোঝার বয়সে তাঁর সারাটা জীবনব্যাপী কষ্টের কোনো সীমা-পরিসীমা এই শোনায় সত্যি নিজের মধ্যে কল্পনা করে উঠতে পারি না। শুনে, শিউরেও ওঠা সম্ভব নয়। কিন্তু ‘বিবৃতি’ পাঠমাত্রই ওই জায়গাটুকু, যেখানে একজন বিধবা মেয়ের শরীরী বর্ণনায় জানাচ্ছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, ‘তার মোমের আলোর মতো দেহ’—উপমার এই জায়গাটা খুব চোখে আটকাল। ওই সেই, প্রায় আজ থেকে এক শতকের বেশি আগে জন্মানো ওই নারীর শরীরের বর্ণের সঙ্গে মোমের আলোর রং খুব মেলে। পড়ামাত্র সেটুকু কল্পনা করে নিতে নিজের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার আয়াসের প্রয়োজন হলো না। কেননা, জীবনে তিনিই আমার দেখা প্রথম বিধবা। কিন্তু শোনা কথার সঙ্গে মেলানো অভিজ্ঞতায় তার সঙ্গে আর তো কিছুই মেলে না। সেই নারী তাঁর সেই রূপ নিয়ে চলে গেছেন দূরে। কল্পনায় শুধু তাঁর সব দুঃখের প্রদীপকে জ্বলতে দেখি। আর কী? 

কিন্তু, পাঠক তো কত কিছুকেই একসঙ্গে মেলায়। মিলিয়ে কল্পনার প্রয়োজনীয় জগৎ তৈরি করে। সেই কল্পনা কোনোক্রমেই যদি না মেলে রচয়িতার কোনোমতে চিন্তার সঙ্গে, তাতে তাঁর কোনো বাধকতা নেই, দায়ও নেই। ফলে চেনা জগৎকে বিস্তৃত করে মিলিয়ে নিলাম। যখন পড়ি: ‘কাঁপালো প্রাণান্ত লজ্জা, বাতাসে কুটিল সন্দেহ,/সমস্ত শরীরে মিশে, বিন্দু বিন্দু রক্ত অবশেষে/যন্ত্রণার সমস্ত বন্যা এলো, অন্ধ হলো চক্ষু, দশ দিক,/এবং আড়ালে বলি, আমি সে সুচতুর গোপন প্রেমিক।’ এই, ‘এবং অবশেষে আড়ালে বলি, আমি সে সুচতুর গোপন প্রেমিক।’ —এই পঙ্ক্তিতে এসে সে মেলানো জগতের হিসাবটা নিজের কাছে অন্যভাবে উলটে গেল যেন। আরও দুজন বিধবাকে মনে পড়ল আমার, এই পঙ্ক্তি পাঠমাত্র। এমন তো নয়, এই তিনজন ছাড়া আর বিধবা দেখিনি জীবনে। কিন্তু সেই জানা ও দেখা এই পাঠের সঙ্গে কোনোভাবে কোনোক্রমে প্রাসঙ্গিক নয়। এই পাঠের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক বলেই বাকি দুজনের কথা মনে এল। কিন্তু মোমের আলোর মতো শরীরেও তাঁরা প্রাসঙ্গিক ছিলেন না। তাঁদের একজন, আমার এক আত্মীয় বাড়ির প্রতিবেশিনী। কিশোরী বয়সে বিধবা। একটি ছেলে, ছেলেটি কথা শেখার আগেই তার বাবা মরেছে। আত্মীয়বাড়িতেই থাকতেন তিনি। কখনো ছেলেসহ, কখনো একলা। তবে তার ঊন্তিরিশ বছর বয়সেই তাঁর ছেলে নিজেদের বাড়িতে একলা থাকে। প্রয়োজনে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে আসে। অন্যজনকেও একই বাড়িতে দেখা। একই বয়সে তিনিও বিধবা। একটি মেয়ে আছে। এখানে কাজে এসেছে, অন্য শরীকি ঘরে। কাজে আসা বলতে গোটা সংসার সামলে রাখা। গৃহকর্তা সেখানে একলাই থাকেন। স্ত্রী-সন্তান দূরে, কখনো কখনো সেখানে যান। এই বিষয়সম্পত্তি আগলে রাখাই তাঁর কাজ। বয়স হয়েছে। এই নারীরা অথবা কন্যাসহ এই নারী একই সঙ্গে প্রায় গৃহকর্ত্রীর ভূমিকা পালন করবে, অঙ্কশায়িনী হবেন কর্তার। এমন রীতি প্রায় প্রকাশ্য। রাখঢাক ওপরে থাকলেও, সেই প্রকাশ্য অথচ গোপন ভেতরে ব্যবস্থা প্রায় তাই। 

চারপাশ থেকে জানতে শুনতে জেনেছিলাম এই নারীদের একজন, ছেলেটি তার প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই গর্ভবর্তী হয়েছিল। সমাজের তো সেখানে রীতিবন্ধন বড় দৃঢ়। আঁটুনি বড় বজ্র, ভেতরের গেরো যত ফস্কাই হোক। তখন গৃহকর্তার সেই অনুপ্রবেশকে পড়ি: ‘একদা অসহ্য হলে বাহুর বন্ধনে পড়ে ধরা’। বুঝি এই বন্ধনে ধরা পড়ায় কোনো পিছুটান নেই। আপত্তি নেই। শরীর জড়িয়ে নিয়েছে তার মধ্যে প্রয়োজনীয় শরীরকে। এমন না যে, আশ্রিত তাই এই নারী বাধ্য। বরং, ওই নারীর শরীরই নিজের প্রয়োজনে সেখানে নিজের অর্গল খুলে দিয়েছে। হয়তো খুলে নিয়েছে একাধিক জায়গায় অক্লেশে, অন্তর্গত অনুমোদনে। সেখানে গৃহকর্তার সে ভঙ্গিকে ভেবে নিই: ‘মাংসের শরীর তার শুভক্ষণে সব ক্লান্তিহারা/মুণ্ডুকের মতো আমি মগ্ন হই সে কন্দর্প-কূপে’।

ফলে, সেই সমাজ যখন জানল, সব দোষ সেই নারীর। ওই গোপন অথচ প্রকাশ্য প্রেমিক তাকে তো বাধ্য করায় বা সে নিজেও বাধ্য ওই ‘শরীর থেকে’ ঝরিয়ে দিতে ‘কান্নার সাগর’। কেননা, ‘গর্ভের প্রাণের বৃত্তে’ ফুটে উঠছে ‘সর্বনাশা ফুল’। তাই স্বাভাবিক। সে কাজ যেন প্রকাশ্যেই প্রায় সমাধা হলো। যদি তা না-ই হবে, তাহলে আমার কান পর্যন্ত ঘটনা পৌঁছাল কীভাবে? ঘটনার প্রকাশ্য অবস্থা তো এই—সেই নারীর কিশোর ছেলেটি জেনেছিল সে কথা। এমনকি সেই গৃহকর্তার সন্তানেরাও। কিন্তু তাতে দিনে দিনে কোনো কিছুরই কোনো ব্যতিক্রম ঘটেনি। পরে, ধারণা করি, অথবা, যা জেনেছি, তাদের সম্পর্ক আবার একই জায়গায় পৌঁছেছিল। হয়তো তা-ই ছিল স্বাভাবিক।

‘বিবৃতি’র শেষাংশ তাই তাঁদের সঙ্গে মেলে না। কিন্তু একটি জায়গায় মেলে এই সব প্রায় বালবিধবাদের বা এরপরেরও, অথবা স্বামী পরিত্যক্তাদের ওই সমাজে এই জীবন থেকে তাঁদের বাঁচাতে পারেনি কেউ। জীবনে বেঁচে ছিলেন তাঁরা। একদিন মরেও গেছেন। কিন্তু, যে বীরসিংহশিশু ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কথা বলা হয়েছে, তিনি এই প্রত্যন্ত পল্লি থেকে অনেক দূরে। সেখানে সংস্কারে কোনো উদ্যোগ কোনো দিন ছিল। আজও নেই। আমাদের জানা আছে, সেই সময়ের কারণেই শুধু নয়, বাঙালির উনিশশতকী সমাজ জাগরণের অংশ হিসেবে বিদ্যাসাগরের প্রতি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পক্ষপাত, সেটি এখানে বিষয়ও নয়, কিন্তু কবির বিবৃতিতে সেই কথা স্পষ্ট করা আর আমার কাছ মিলিয়ে নেওয়া যে এত চেষ্টা এত কিছুর পরও এই নারীরা ঈশ্বরচন্দ্রের মৃত্যুর অন্তত পঁচিশ কি পঞ্চাশ কি পঁচাত্তর বছর পরও সেই সমাজে সেখানে অনড়। গোপন প্রেমিকই একমাত্র ভরসা। ফলে যিশু যতই ভজনা করুক, লাভ নেই, কুমারী কি বিধবা মাতার স্থান নেই। সেখানে, ‘আফিম, ঘুমের দ্রব্য, বেছে নেবে আগুন’, অথবা যিশুর মতো সমাজের ক্রুশকাঠে বিদ্ধ হওয়া। ফলে, ‘তার সব ব্যর্থ হলো’ সে, ‘দীর্ঘশ্বাসে ভরালো পৃথিবী’।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের তারুণ্যে লেখা ‘বিবৃতি’ পড়ে তাই নিজে উনিশে বিধবা মেয়ের উনতিরিশের গোপন প্রেমিক না হয়েও নিজের পরিপার্শ্বকে দেখে নিলাম। এই দেখাই হয়তো বারবার ওই কবিতা পড়ায়। আর, বহু দিন আগে দেখা সেই সব বিধবার মুখ চোখে ভাসে!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তৌহিদুল হকের গুচ্ছ কবিতা

তৌহিদুল হক
তৌহিদুল হকের গুচ্ছ কবিতা

রক্ত লাল

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে

গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়

ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের

জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।

যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে

রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে

প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা

উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।

কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত

শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।

এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়

দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব

মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।

এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ

ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার

অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে

ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে

বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।

যত দেখি

যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে

জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা

শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।

যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।

হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।

যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।

ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত

করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!

সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।

জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ

আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।

তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে

অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই

কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার

প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।

এ যেন কেমন

গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে

চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে

একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির

মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে

এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ

কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা

আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।

সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে

নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার

অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।

জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?

চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার

যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।

চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?

যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!

চলে আসুন সবজি বাজারে

মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু

যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার

উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে

হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।

প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো

পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?

হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে

যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!

চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা

ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।

যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।

আহা! দেখার কেউ নেই!

এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।

কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ

কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?

কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।

চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।

ইতিহাস

আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই

নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব

ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।

আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---

আমি নই কারও!

সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম

ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে

অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ

ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু

এক মুখচ্ছবি।

আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে

হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার

কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।

কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।

দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!

আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না

হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে

ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে

সবকিছুর-ই সময় থাকে---

এরপর---ইতিহাস!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

বিদায় নেওয়া হুমায়ূন এখনো আছেন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
হুমায়ূন আহমেদ
হুমায়ূন আহমেদ

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’

‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’

হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,

‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।

হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।

তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’

ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’

হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘হীরক রাজার দেশে’ মঞ্চস্থ করল স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।

মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্‌যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।

হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।

নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।

শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গবেষণায় বেরিয়ে এল আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’র গল্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।

প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।

কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’

গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।

ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’

মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’

মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত