ফারজানা লিজা

স্বপ্নটা ঠিক ২০১৮ সাল থেকেই দেখে আসছিলাম, যখন আমার কাছের এক বন্ধু ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন হিসেবে ভারত ভ্রমণ করে আসে। ফিরে এসে নানা গল্প শুনিয়েছে, আমিও অনেক প্রশ্ন করেছি, সবশেষে বন্ধু আমার একটা কথাই বলল, ডেলিগেশন হিসেবে না গেলে কখনোই এর আনন্দটা অনুভব করতে পারবি না।
সেই ২০১৮ সাল থেকে অপেক্ষা করে আসছিলাম একটা সুযোগের জন্য। ২০১৯ সালে কবে পার হয়ে গেল খেয়ালই রাখিনি, ২০২০ ও ২০২১ করোনা মহামারির জন্য বন্ধ ছিল। দুই বছর পর আবার ২০২২ সালে ইন্ডিয়া হাইকমিশন ও বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশনের যৌথ আয়োজনে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন ২০২২।
তবে এবারের আবেদনের প্রক্রিয়া ভিন্ন রকমের। ইন্ডিয়া হাইকমিশনের ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করার পাশাপাশি দুই মিনিটের একটি ভিডিও আপলোড করতে হবে, তা-ও আবার নিজের ফেসবুক ওয়ালে পাবলিক পোস্ট। ভীষণ দ্বিধায় পড়ে গেলাম, কিছু বন্ধুর সঙ্গে কথা বলে সাহায্য চাইলাম। দুঃখজনক হলো, কোনো রকম সাহায্য পাইনি। নিজে নিজে সারা রাত ধরে রিসার্চ করে ইয়ুথ ডেলিগেশনের তথ্য খুঁজে বের করলাম। সমস্যা কিন্তু এখনো শেষ হয়নি। নিজের বলার মতো কিছুই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। সবাই সবার কত কত প্রতিভার কথা তুলে ধরেছেন। দেখতে দেখতে সময় গড়িয়ে শেষের দিকে চলে এসেছে, আমি এখনো ভিডিও বানাইনি।
এক বিকেলে চিন্তা করলাম, ভিডিওটা বানাব। ক্যামেরার সামনে গিয়ে কথা বলার অভ্যাস আমার একদমই নেই, তার পরও স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে সব আপত্তি রেখে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালাম। বারবার ভুল করছিলাম, রুমমেটরা বেশ হাসাহাসি করছিল, আমার জন্য বেশ আপত্তিকর একটা অবস্থা। রেগে গিয়ে ভিডিও বানানো বন্ধ করে দিলাম। কিছুক্ষণ চিন্তা করে দেখলাম যে স্বপ্নটা পূরণের জন্য এত দিন অপেক্ষা করে এলাম, এখন সুযোগ পেয়ে কীভাবে হাতছাড়া করে দিই!
আমি হারতে শিখিনি। শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যেতে চাই। এত সহজে হাল ছাড়ার মানুষ আমি নই। সবশেষে ভিডিওটা বানানো হলো, এডিট করে রাতে আপলোড করলাম, একের পর এক লাইক-কমেন্ট আসছিল। মনের মধ্যে সংশয়—শত শত মানুষ ভিডিওটা দেখছে, যদি সিলেক্ট না হই, ভীষণ লজ্জার ব্যাপার হবে।
নানা কাজের ব্যস্ততায় একদম শেষ দিনে আবেদন করি। তার পর থেকেই দিন গুনছিলাম ইন্ডিয়া হাইকমিশনারের উত্তরের আশায়। অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে গত ২৪ জুলাই বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন থেকে প্রথম সিলেকশন প্রসেসের মেইল আসে। মেইলটা দেখামাত্রই নিজের মধ্যে একধরনের আশার প্রদীপ জ্বলার মতো আনন্দ লাগছিল, ইন্ডিয়া কালচারাল সেন্টার গুলশান, আগামী ৯ আগস্ট অডিশন। সেই মুহূর্তে আমি স্টুডেন্টের বাসায় ছিলাম। বিষয়টা স্টুডেন্টের সঙ্গে শেয়ার করলাম। সে ভীষণ খুশি শুনে, আর আমাকে বেশ অনুপ্রাণিত করেছিল, মনে অনেক সাহস জুগিয়েছিল।
আস্তে আস্তে অডিশনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করলাম। ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিভাগে অডিশন হচ্ছে। তিনটা বিভাগে কত হাজার হাজার মানুষ অডিশন দিচ্ছে। ইয়ুথ ডেলিগেশনের পেইজে শুধু আপডেট দেখছিলাম—চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সবশেষে ঢাকা বিভাগের অডিশন। অনির্দিষ্ট কারণবশত ঢাকা অডিশনের তারিখটা একটু পরিবর্তন করে ১১ জুলাই দেওয়া হয়। অডিশনের দিন সকাল সকাল চলে গেলাম ইন্ডিয়া কালচারাল সেন্টার, গুলশান ২ নম্বরে। অনেকে বাইরে অপেক্ষা করছিল, আস্তে আস্তে সবার সঙ্গে পরিচিত হতে লাগলাম। প্রথমে পরিচিত হলাম নাহিদা খান সুর্মী, স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। হবিগঞ্জ জেলা থেকে এসেছে, পেশায় একজন আবৃত্তিশিল্পী, ২০২১ সালে অমর একুশে বইমেলায় তার একটি স্বরচিত কবিতার বই প্রকাশিত হয়। বেশ হাসিখুশি একটা মেয়ে। সেই সঙ্গে কাজ করছে হবিগঞ্জ জেলার শিল্পকলা একাডেমিতে আবৃত্তি শিক্ষক হিসেবে।
পরিচিত হলাম নীল নন্দিতা রিছিল আপুর সঙ্গে। তিনি একজন গারো আদিবাসী। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। তিনি চান তাঁর গারো ভাষাকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করে প্রসার বিস্তার করতে। নিজের ভাষা ও সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখতে এর থেকে ভালো উদ্যোগ হয়তো আর নেই।
সকাল ১০টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ইন্ডিয়া কালচারাল সেন্টারের ভেতরে প্রবেশের সুযোগ দিল। সবাই সারিবদ্ধ হয়ে ভেতরে গিয় রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আসন গ্রহণ করেছি। ফটোগ্রাফার, ভিডিওগ্রাফার বিভিন্ন সাইট থেকে ফুটেজ ও ছবি নিচ্ছে। ক্যামেরার শাটারের ষাট ষাট শব্দ কানে আসছে। অডিশনে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন জনপ্রিয় তরুণ অভিনেতা আরিফিন শুভ এবং আমাদের দেশের গর্ব, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় জাহানারা আলম। কালচারাল সেন্টারের ভেতরে একটা উন্মুক্ত জায়গায় সবার সঙ্গে পরিচিত হন এবং মতবিনিময় করেন। আরও উপস্থিত ছিলেন ইন্ডিয়া হাইকমিশন ও বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশনের সম্মানিত পদস্থ কর্মীরা। বাংলাদেশ ও ভারতের শিক্ষা, সংস্কৃতি, প্রযুক্তি, ভ্রমণসহ নানাবিদ বিষয় নিয়ে অনেক আলাপ-আলোচনা হলো। আশপাশের সবাই নিজেকে অবহিত করতে হাত বাড়িয়ে মাইক্রোফোন দিয়ে কথা বলছেন। নিজেকে সবার মাঝে তুলে ধরছেন। এ এক অন্যরকম অনুভূতি।
আমি শুধু চুপ করে বসে থেকে শুনছিলাম আর অনুধাবন করছিলাম। কেন জানি আমার কথা বলার থেকে শুনতে বেশি ভালো লাগে। হয়তো অন্যদের থেকে নতুন কিছু শিখতে পারব, জানতে পারব।
ঘণ্টাখানেক আলাপ-আলোচনা শেষে আমাদের আবার হলরুমের ভেতরে নিয়ে আসা হলো। শুরু হলো কালচারাল ও পারফরম্যান্স প্রোগ্রাম। যে যার খুশিমতো পারফরম্যান্স করছে, কেউ গান গাইছে, নাচ করছে, আবৃত্তি করছে, কেউবা কৌতুকের মজায় সবাইকে হাসির স্রোতে ভাসিয়ে দিচ্ছে। একেকজন নিজের দক্ষতার নিপুণ পরিচয় দিচ্ছিল। সবাই সবাইকে প্রসারিত করার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে।
ইতিমধ্যে অনেকে ভাইবা দিতে চলে গেছে। যারা ভাইভা দিয়ে ফিরে এসেছে, তাদের সবাই মৌমাছির মতো চারপাশ দিয়ে আঁকড়ে ধরেছে। কী কী প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছে, ভেতরে পরিবেশ কেমন ছিল, জাজেসরা কি আন্তরিক, নাকি কঠোর—নানা প্রশ্ন করছে। আমি আর আমার পাশে থাকা সুর্মি ও নন্দিতা মৌমাছির ভিড়ে না গিয়ে বসে বসে পারফরম্যান্স উপভোগ করছিলাম।
অনেক সময় বাদে আমার ভাইবার সিরিয়াল এল, একধরনের ভীতি কাজ করছিল। সবাইকে লাইন করে ভাইবা বোর্ডের সামনে বসিয়ে রাখা হলো, একেকজন করে ঢুকছে। পাশে দাঁড়ানো এক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করলাম ভেতরের অবস্থা কেমন। যিনি ভাইভা নিচ্ছেন, উনি কেমন। তারা জানালেন, উনি ইন্ডিয়ান, তবে বেশ নরম স্বভাবের মানুষ। বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি ভাষা নিয়ে একধরনের সংশয় কাজ করছে। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার জন্য দোয়া পড়তে থাকলাম।
খানিক বাদে আমার পালা এল। নম্রভাবে একটা সালাম দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলাম। প্রথমে আমাকে পরিচিত করার জন্য বলা হলো, ভাইবা হচ্ছিল সম্পূর্ণ ইংরেজিতে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পূর্ণ করার পরেও ইংরেজিতে একটা বড় ধরনের ভীতি রয়ে গেছে। চিন্তা করলাম, আমার নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে এটাই শেষ এবং উত্তম সুযোগ। যেভাবেই হোক, আমাকে সর্বোচ্চ প্রদর্শন করতে হবে। নিজের ভাষায় যতটা প্রাণবন্তভাবে কথা বলা যায়, অন্য ভাষায় সেটা কখনোই সম্ভব নয়। স্যারক বললাম, ‘স্যার, আমি কি বাংলায় কথা বলতে পারি?’ স্যার বেশ বিনয়ের সঙ্গে বললেন, ‘হ্যাঁ শিওর, আমি বাংলা বুঝি।’ মুহূর্তে আমার মাঝে একধরনের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন চলে এল। নিজের মাঝে বেশ আত্মবিশ্বাস অনুভব করতে লাগলাম। একটু নড়েচড়ে বসলাম, অনেকটা গোল টেবিলে আড্ডার মতো। এখন আপনি যা-ই প্রশ্ন করুন, আমি প্রস্তুত আছি। আমার শিক্ষাজীবন, কর্মজীবন, যে জায়গায় অবস্থান করছি—নানা বিষয় নিয়ে আমাকে অনেক প্রশ্ন করা হলো। সব প্রশ্নের উত্তর বেশ সাবলীলভাবে দিয়েছি। বাবা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি করার সুবাদে সেনাবাহিনী সম্পর্কিত বেশ প্রশ্ন করা হলো।
মজার বিষয় হলো, আমার আউটলুক, কথাবার্তা ও ভাবভঙ্গি দেখে উনি মনে করেছিলেন আমি হয়তো সেনাবাহিনীতে চাকরি করছি। ছোটবেলা থেকে আর্মি প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করার সুবাদে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্যে আর্মি মনোভাব প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব আদায়ে সহযোগী সংবাদমাধ্যমে কাজ করার সুবাদে বাংলাদেশ ও ভারতের রাজস্ব বিষয় নিয়ে বেশ কিছু আলাপ-আলোচনা হলো। বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন ও ইন্ডিয়া হাইকমিশন নিয়ে অনেক কথাবার্তা হলো, সবশেষে আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমার ভাইবা পর্ব শেষ হলো।
ভাইবা বোর্ড থেকে বের হয়ে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে বেশ স্বাভাবিক অনুভব করছিলাম। বাইরে আসার সঙ্গে সঙ্গে মৌমাছির মতো চারপাশ থেকে আঁকড়ে ধরেছে। এত সময় কী কথা বললাম, কী কী প্রশ্ন করল—নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হলাম। আসলে ভাইভা বিষয়টি একটা নির্ভরশীল ব্যাপার। আমাকে যা প্রশ্ন করেছে, আপনাকে সেগুলো না-ও করতে পারে, আপনাকে হয়তো আপনার পছন্দের জায়গা থেকে প্রশ্ন করা হবে। যেখান থেকেই করুক না কেন, সব সময় নিজের ভেতরে আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে, নিজেকে প্রমাণ করার জন্য নিজে চেষ্টা করতে হবে। এই নশ্বর প্রতিযোগী পৃথিবীতে কেউই আপনার সহযোগী নয়, সবাই প্রতিযোগী।
তারপর কালচারাল প্রোগ্রাম কিছু সময় দেখে বাড়ির পথে রওনা হলাম। গুলশান এরিয়া ভালো করে চেনা-জানা নেই, নন্দিতা আমাকে বারিধারা পর্যন্ত এগিয়ে দিল। বাকি পথ নিজেই চলে এসেছি। শুরু হয়ে গেল আরেক অপেক্ষার দিবস।
হোস্টেলে এসে চিন্তা করতে লাগলাম, যারা অডিশন দিতে এসেছে, সবাই সেরা। এখান থেকে ১০০ জন নেওয়া হবে। হয়তো আমি পারব না, নিজের মাঝে অসাধারণ কিছুই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। পড়াতে এসে স্টুডেন্টের সঙ্গে আজকের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। সে বেশ এক্সাইটেড, স্টুডেন্ট ও আন্টি দুজনই বেশ অনুপ্রেরণা দিয়েছে এবং বুঝিয়েছে যে নিজেকে কখনোই ছোট মনে করা উচিত নয়। প্রতিটা মানুষের ভেতরে অসীম সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে, শুধু বিকশিত করার অপেক্ষা। সেই সঙ্গে শুরু হলো আমার সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রতীক্ষা।
(চলবে)

স্বপ্নটা ঠিক ২০১৮ সাল থেকেই দেখে আসছিলাম, যখন আমার কাছের এক বন্ধু ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন হিসেবে ভারত ভ্রমণ করে আসে। ফিরে এসে নানা গল্প শুনিয়েছে, আমিও অনেক প্রশ্ন করেছি, সবশেষে বন্ধু আমার একটা কথাই বলল, ডেলিগেশন হিসেবে না গেলে কখনোই এর আনন্দটা অনুভব করতে পারবি না।
সেই ২০১৮ সাল থেকে অপেক্ষা করে আসছিলাম একটা সুযোগের জন্য। ২০১৯ সালে কবে পার হয়ে গেল খেয়ালই রাখিনি, ২০২০ ও ২০২১ করোনা মহামারির জন্য বন্ধ ছিল। দুই বছর পর আবার ২০২২ সালে ইন্ডিয়া হাইকমিশন ও বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশনের যৌথ আয়োজনে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন ২০২২।
তবে এবারের আবেদনের প্রক্রিয়া ভিন্ন রকমের। ইন্ডিয়া হাইকমিশনের ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করার পাশাপাশি দুই মিনিটের একটি ভিডিও আপলোড করতে হবে, তা-ও আবার নিজের ফেসবুক ওয়ালে পাবলিক পোস্ট। ভীষণ দ্বিধায় পড়ে গেলাম, কিছু বন্ধুর সঙ্গে কথা বলে সাহায্য চাইলাম। দুঃখজনক হলো, কোনো রকম সাহায্য পাইনি। নিজে নিজে সারা রাত ধরে রিসার্চ করে ইয়ুথ ডেলিগেশনের তথ্য খুঁজে বের করলাম। সমস্যা কিন্তু এখনো শেষ হয়নি। নিজের বলার মতো কিছুই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। সবাই সবার কত কত প্রতিভার কথা তুলে ধরেছেন। দেখতে দেখতে সময় গড়িয়ে শেষের দিকে চলে এসেছে, আমি এখনো ভিডিও বানাইনি।
এক বিকেলে চিন্তা করলাম, ভিডিওটা বানাব। ক্যামেরার সামনে গিয়ে কথা বলার অভ্যাস আমার একদমই নেই, তার পরও স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে সব আপত্তি রেখে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালাম। বারবার ভুল করছিলাম, রুমমেটরা বেশ হাসাহাসি করছিল, আমার জন্য বেশ আপত্তিকর একটা অবস্থা। রেগে গিয়ে ভিডিও বানানো বন্ধ করে দিলাম। কিছুক্ষণ চিন্তা করে দেখলাম যে স্বপ্নটা পূরণের জন্য এত দিন অপেক্ষা করে এলাম, এখন সুযোগ পেয়ে কীভাবে হাতছাড়া করে দিই!
আমি হারতে শিখিনি। শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যেতে চাই। এত সহজে হাল ছাড়ার মানুষ আমি নই। সবশেষে ভিডিওটা বানানো হলো, এডিট করে রাতে আপলোড করলাম, একের পর এক লাইক-কমেন্ট আসছিল। মনের মধ্যে সংশয়—শত শত মানুষ ভিডিওটা দেখছে, যদি সিলেক্ট না হই, ভীষণ লজ্জার ব্যাপার হবে।
নানা কাজের ব্যস্ততায় একদম শেষ দিনে আবেদন করি। তার পর থেকেই দিন গুনছিলাম ইন্ডিয়া হাইকমিশনারের উত্তরের আশায়। অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে গত ২৪ জুলাই বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন থেকে প্রথম সিলেকশন প্রসেসের মেইল আসে। মেইলটা দেখামাত্রই নিজের মধ্যে একধরনের আশার প্রদীপ জ্বলার মতো আনন্দ লাগছিল, ইন্ডিয়া কালচারাল সেন্টার গুলশান, আগামী ৯ আগস্ট অডিশন। সেই মুহূর্তে আমি স্টুডেন্টের বাসায় ছিলাম। বিষয়টা স্টুডেন্টের সঙ্গে শেয়ার করলাম। সে ভীষণ খুশি শুনে, আর আমাকে বেশ অনুপ্রাণিত করেছিল, মনে অনেক সাহস জুগিয়েছিল।
আস্তে আস্তে অডিশনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করলাম। ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিভাগে অডিশন হচ্ছে। তিনটা বিভাগে কত হাজার হাজার মানুষ অডিশন দিচ্ছে। ইয়ুথ ডেলিগেশনের পেইজে শুধু আপডেট দেখছিলাম—চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সবশেষে ঢাকা বিভাগের অডিশন। অনির্দিষ্ট কারণবশত ঢাকা অডিশনের তারিখটা একটু পরিবর্তন করে ১১ জুলাই দেওয়া হয়। অডিশনের দিন সকাল সকাল চলে গেলাম ইন্ডিয়া কালচারাল সেন্টার, গুলশান ২ নম্বরে। অনেকে বাইরে অপেক্ষা করছিল, আস্তে আস্তে সবার সঙ্গে পরিচিত হতে লাগলাম। প্রথমে পরিচিত হলাম নাহিদা খান সুর্মী, স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। হবিগঞ্জ জেলা থেকে এসেছে, পেশায় একজন আবৃত্তিশিল্পী, ২০২১ সালে অমর একুশে বইমেলায় তার একটি স্বরচিত কবিতার বই প্রকাশিত হয়। বেশ হাসিখুশি একটা মেয়ে। সেই সঙ্গে কাজ করছে হবিগঞ্জ জেলার শিল্পকলা একাডেমিতে আবৃত্তি শিক্ষক হিসেবে।
পরিচিত হলাম নীল নন্দিতা রিছিল আপুর সঙ্গে। তিনি একজন গারো আদিবাসী। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। তিনি চান তাঁর গারো ভাষাকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করে প্রসার বিস্তার করতে। নিজের ভাষা ও সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখতে এর থেকে ভালো উদ্যোগ হয়তো আর নেই।
সকাল ১০টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ইন্ডিয়া কালচারাল সেন্টারের ভেতরে প্রবেশের সুযোগ দিল। সবাই সারিবদ্ধ হয়ে ভেতরে গিয় রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আসন গ্রহণ করেছি। ফটোগ্রাফার, ভিডিওগ্রাফার বিভিন্ন সাইট থেকে ফুটেজ ও ছবি নিচ্ছে। ক্যামেরার শাটারের ষাট ষাট শব্দ কানে আসছে। অডিশনে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন জনপ্রিয় তরুণ অভিনেতা আরিফিন শুভ এবং আমাদের দেশের গর্ব, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় জাহানারা আলম। কালচারাল সেন্টারের ভেতরে একটা উন্মুক্ত জায়গায় সবার সঙ্গে পরিচিত হন এবং মতবিনিময় করেন। আরও উপস্থিত ছিলেন ইন্ডিয়া হাইকমিশন ও বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশনের সম্মানিত পদস্থ কর্মীরা। বাংলাদেশ ও ভারতের শিক্ষা, সংস্কৃতি, প্রযুক্তি, ভ্রমণসহ নানাবিদ বিষয় নিয়ে অনেক আলাপ-আলোচনা হলো। আশপাশের সবাই নিজেকে অবহিত করতে হাত বাড়িয়ে মাইক্রোফোন দিয়ে কথা বলছেন। নিজেকে সবার মাঝে তুলে ধরছেন। এ এক অন্যরকম অনুভূতি।
আমি শুধু চুপ করে বসে থেকে শুনছিলাম আর অনুধাবন করছিলাম। কেন জানি আমার কথা বলার থেকে শুনতে বেশি ভালো লাগে। হয়তো অন্যদের থেকে নতুন কিছু শিখতে পারব, জানতে পারব।
ঘণ্টাখানেক আলাপ-আলোচনা শেষে আমাদের আবার হলরুমের ভেতরে নিয়ে আসা হলো। শুরু হলো কালচারাল ও পারফরম্যান্স প্রোগ্রাম। যে যার খুশিমতো পারফরম্যান্স করছে, কেউ গান গাইছে, নাচ করছে, আবৃত্তি করছে, কেউবা কৌতুকের মজায় সবাইকে হাসির স্রোতে ভাসিয়ে দিচ্ছে। একেকজন নিজের দক্ষতার নিপুণ পরিচয় দিচ্ছিল। সবাই সবাইকে প্রসারিত করার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে।
ইতিমধ্যে অনেকে ভাইবা দিতে চলে গেছে। যারা ভাইভা দিয়ে ফিরে এসেছে, তাদের সবাই মৌমাছির মতো চারপাশ দিয়ে আঁকড়ে ধরেছে। কী কী প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছে, ভেতরে পরিবেশ কেমন ছিল, জাজেসরা কি আন্তরিক, নাকি কঠোর—নানা প্রশ্ন করছে। আমি আর আমার পাশে থাকা সুর্মি ও নন্দিতা মৌমাছির ভিড়ে না গিয়ে বসে বসে পারফরম্যান্স উপভোগ করছিলাম।
অনেক সময় বাদে আমার ভাইবার সিরিয়াল এল, একধরনের ভীতি কাজ করছিল। সবাইকে লাইন করে ভাইবা বোর্ডের সামনে বসিয়ে রাখা হলো, একেকজন করে ঢুকছে। পাশে দাঁড়ানো এক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করলাম ভেতরের অবস্থা কেমন। যিনি ভাইভা নিচ্ছেন, উনি কেমন। তারা জানালেন, উনি ইন্ডিয়ান, তবে বেশ নরম স্বভাবের মানুষ। বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি ভাষা নিয়ে একধরনের সংশয় কাজ করছে। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার জন্য দোয়া পড়তে থাকলাম।
খানিক বাদে আমার পালা এল। নম্রভাবে একটা সালাম দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলাম। প্রথমে আমাকে পরিচিত করার জন্য বলা হলো, ভাইবা হচ্ছিল সম্পূর্ণ ইংরেজিতে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পূর্ণ করার পরেও ইংরেজিতে একটা বড় ধরনের ভীতি রয়ে গেছে। চিন্তা করলাম, আমার নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে এটাই শেষ এবং উত্তম সুযোগ। যেভাবেই হোক, আমাকে সর্বোচ্চ প্রদর্শন করতে হবে। নিজের ভাষায় যতটা প্রাণবন্তভাবে কথা বলা যায়, অন্য ভাষায় সেটা কখনোই সম্ভব নয়। স্যারক বললাম, ‘স্যার, আমি কি বাংলায় কথা বলতে পারি?’ স্যার বেশ বিনয়ের সঙ্গে বললেন, ‘হ্যাঁ শিওর, আমি বাংলা বুঝি।’ মুহূর্তে আমার মাঝে একধরনের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন চলে এল। নিজের মাঝে বেশ আত্মবিশ্বাস অনুভব করতে লাগলাম। একটু নড়েচড়ে বসলাম, অনেকটা গোল টেবিলে আড্ডার মতো। এখন আপনি যা-ই প্রশ্ন করুন, আমি প্রস্তুত আছি। আমার শিক্ষাজীবন, কর্মজীবন, যে জায়গায় অবস্থান করছি—নানা বিষয় নিয়ে আমাকে অনেক প্রশ্ন করা হলো। সব প্রশ্নের উত্তর বেশ সাবলীলভাবে দিয়েছি। বাবা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি করার সুবাদে সেনাবাহিনী সম্পর্কিত বেশ প্রশ্ন করা হলো।
মজার বিষয় হলো, আমার আউটলুক, কথাবার্তা ও ভাবভঙ্গি দেখে উনি মনে করেছিলেন আমি হয়তো সেনাবাহিনীতে চাকরি করছি। ছোটবেলা থেকে আর্মি প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করার সুবাদে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্যে আর্মি মনোভাব প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব আদায়ে সহযোগী সংবাদমাধ্যমে কাজ করার সুবাদে বাংলাদেশ ও ভারতের রাজস্ব বিষয় নিয়ে বেশ কিছু আলাপ-আলোচনা হলো। বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন ও ইন্ডিয়া হাইকমিশন নিয়ে অনেক কথাবার্তা হলো, সবশেষে আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমার ভাইবা পর্ব শেষ হলো।
ভাইবা বোর্ড থেকে বের হয়ে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে বেশ স্বাভাবিক অনুভব করছিলাম। বাইরে আসার সঙ্গে সঙ্গে মৌমাছির মতো চারপাশ থেকে আঁকড়ে ধরেছে। এত সময় কী কথা বললাম, কী কী প্রশ্ন করল—নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হলাম। আসলে ভাইভা বিষয়টি একটা নির্ভরশীল ব্যাপার। আমাকে যা প্রশ্ন করেছে, আপনাকে সেগুলো না-ও করতে পারে, আপনাকে হয়তো আপনার পছন্দের জায়গা থেকে প্রশ্ন করা হবে। যেখান থেকেই করুক না কেন, সব সময় নিজের ভেতরে আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে, নিজেকে প্রমাণ করার জন্য নিজে চেষ্টা করতে হবে। এই নশ্বর প্রতিযোগী পৃথিবীতে কেউই আপনার সহযোগী নয়, সবাই প্রতিযোগী।
তারপর কালচারাল প্রোগ্রাম কিছু সময় দেখে বাড়ির পথে রওনা হলাম। গুলশান এরিয়া ভালো করে চেনা-জানা নেই, নন্দিতা আমাকে বারিধারা পর্যন্ত এগিয়ে দিল। বাকি পথ নিজেই চলে এসেছি। শুরু হয়ে গেল আরেক অপেক্ষার দিবস।
হোস্টেলে এসে চিন্তা করতে লাগলাম, যারা অডিশন দিতে এসেছে, সবাই সেরা। এখান থেকে ১০০ জন নেওয়া হবে। হয়তো আমি পারব না, নিজের মাঝে অসাধারণ কিছুই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। পড়াতে এসে স্টুডেন্টের সঙ্গে আজকের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। সে বেশ এক্সাইটেড, স্টুডেন্ট ও আন্টি দুজনই বেশ অনুপ্রেরণা দিয়েছে এবং বুঝিয়েছে যে নিজেকে কখনোই ছোট মনে করা উচিত নয়। প্রতিটা মানুষের ভেতরে অসীম সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে, শুধু বিকশিত করার অপেক্ষা। সেই সঙ্গে শুরু হলো আমার সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রতীক্ষা।
(চলবে)

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫তৌহিদুল হক

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

স্বপ্নটা ঠিক ২০১৮ সাল থেকেই দেখে আসছিলাম, যখন আমার কাছের এক বন্ধু ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন হিসেবে ভারত ভ্রমণ করে আসে। ফিরে এসে নানা গল্প শুনিয়েছে, আমিও অনেক প্রশ্ন করেছি, সবশেষে বন্ধু আমার একটা কথাই বলল, ডেলিগেশন হিসেবে না গেলে কখনোই এর আনন্দটা অনুভব করতে পারবি না।
২৭ নভেম্বর ২০২২
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

স্বপ্নটা ঠিক ২০১৮ সাল থেকেই দেখে আসছিলাম, যখন আমার কাছের এক বন্ধু ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন হিসেবে ভারত ভ্রমণ করে আসে। ফিরে এসে নানা গল্প শুনিয়েছে, আমিও অনেক প্রশ্ন করেছি, সবশেষে বন্ধু আমার একটা কথাই বলল, ডেলিগেশন হিসেবে না গেলে কখনোই এর আনন্দটা অনুভব করতে পারবি না।
২৭ নভেম্বর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

স্বপ্নটা ঠিক ২০১৮ সাল থেকেই দেখে আসছিলাম, যখন আমার কাছের এক বন্ধু ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন হিসেবে ভারত ভ্রমণ করে আসে। ফিরে এসে নানা গল্প শুনিয়েছে, আমিও অনেক প্রশ্ন করেছি, সবশেষে বন্ধু আমার একটা কথাই বলল, ডেলিগেশন হিসেবে না গেলে কখনোই এর আনন্দটা অনুভব করতে পারবি না।
২৭ নভেম্বর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫আজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

স্বপ্নটা ঠিক ২০১৮ সাল থেকেই দেখে আসছিলাম, যখন আমার কাছের এক বন্ধু ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন হিসেবে ভারত ভ্রমণ করে আসে। ফিরে এসে নানা গল্প শুনিয়েছে, আমিও অনেক প্রশ্ন করেছি, সবশেষে বন্ধু আমার একটা কথাই বলল, ডেলিগেশন হিসেবে না গেলে কখনোই এর আনন্দটা অনুভব করতে পারবি না।
২৭ নভেম্বর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫