খান মুহাম্মদ রুমেল

আসমানে উড়ছে একটা নীল বক। আর আসমানটা একেবারে ধবধবে সাদা—যেন এইমাত্র লন্ড্রি থেকে ধুয়ে এনে একটি সাদা চাদর ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে চরাচরজুড়ে। নীল বকটা নিঃশব্দ নয়। উড়ছে তীব্র শো শো শব্দে। তার পাখায় ঝিলিক দিচ্ছে নীলাভ আভা। বকটা উড়তে উড়তে একসময় নেমে আসে তীক্ষ্ণ তিরের ফলার মতো—একেবারে চোখবরাবর। যেন সুচালো নখের আঁচড়ে তুলে নেবে চোখ জোড়া। অথবা ঠুকরে ঠুকরে খাবে। তীব্র আতঙ্ক নিয়ে অপেক্ষা করতে হয় তখন। চাইলেও সরে যাওয়া যায় না। পা দুটো যেন জমে পাথর হয়ে যায়। অথবা মনে হয় মাঠের বয়সী জামগাছটার শক্ত শেকড়ের মতো মাটির অনেক গভীরে দেবে গেছে পা জোড়া। ধারালো নখের তীব্র আক্রমণের জন্য ঠায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। বকটা নেমে আসছে…শো শো শব্দ বেড়েই চলেছে!
তুহিনের বালিশের পাশে ঘোঁত ঘোঁত শব্দ তুলে কাঁপছে তার সেলফোনটা। খ্যাপা লাল ষাঁড়কে আঁটোদড়িতে বেঁধে রাখলে বাঁধন ছেঁড়ার জন্য পাক খেয়ে যেমন ঘুরতে থাকে—চরম কাঁপুনির সঙ্গে সঙ্গে সেই রকম করে ঘুরছে ফোনটা। কিন্তু বেশি দূর যেতেও পারছে না। ঘুম ভেঙে যায় তুহিনের। স্বপ্ন দেখছিল সে। সেই পুরোনো স্বপ্ন। বেশ কিছুদিন ধরেই স্বপ্নটা দেখছে সে। বেশির ভাগ সময় ভোরের দিকে, না হয় সকালের দিকেই স্বপ্নটা দেখে সে। কিন্তু স্বপ্নের শেষটা আজ পর্যন্ত দেখা হলো না। কোনো না কোনো বাগড়া বাধেই। আজ যেমন ফোনের কাঁপুনিতে ঘুম ভেঙে গেল। কোনো দিন হয়তো পেপারওয়ালা এসে কলবেল বাজায়। কোনো দিন হয়তো নিচের রাস্তায় চেঁচিয়ে ওঠে তালাচাবিওয়ালা! কিংবা কোনো দিন দেখা যায় একটা মাইক নিয়ে নেমে পড়েছে কেউ। ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প অথবা কোনো রাজনৈতিক সভার প্রচার চালাচ্ছে গলা ফাটিয়ে!
এদিকে অনেকক্ষণ কেঁপে কেঁপে থেমে গেছে ফোনটা। হাতে নিয়ে তুহিন দেখে সাতটা মিসড কল। তিনটা অফিস কলিগদের। অথচ আজকে ছুটির দিন। অফিস থেকে কেন ফোন আসবে? খুব বিরক্ত লাগে তার। বাকি চারটা ফোন আবিদের। আবিদ তার ইউনিভার্সিটি জীবনের বন্ধু। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় খুব মাখামাখি বন্ধুত্ব ছিল। পরে ক্যাম্পাস ছেড়ে আসার পর কোথায় যেন তাল কেটে গেছে। একই শহরে থেকেও যোগাযোগটা কেমন আলগা হয়ে গেছে। তবে দীর্ঘ বিরতিতে যখনই কথা হয়, পুরোনো সেই উচ্ছ্বাসটা ঠিকই ফিরে ফিরে আসে। কিন্তু আজকে এই ছুটির দিনের ভোরে আবিদ হঠাৎ কেন এতবার ফোন করল, ভেবে পায় না তুহিন। ঘড়ির কাঁটা সাড়ে এগারোর ঘরে! এত বেলা হয়ে গেছে? নিজের কাছেই কিছুটা লজ্জা লাগে তার। অনেক বেলা হয়ে গেছে। সাধারণত এত বেলা পর্যন্ত ঘুমায় না সে। যত রাত করেই ঘুমাক, ঠিকই সকাল সাতটা সাড়ে সাতটার মধ্যে উঠে পড়ে সে।
বিছানায় শুয়েই আবিদকে ফোন করে তুহিন। রিং হয়। একবার, দুবার, তিনবারের মাথায় ফোন রিসিভ করে আবিদ।
হ্যালো
কী রে! সেই কখন থেকে ফোন দিয়ে যাচ্ছি। তোর কোনো খবরই নাই।
ঘুমাচ্ছিলাম দোস্ত।
এত বেলা পর্যন্ত ঘুমাস? তোর না আগে ভোরে ওঠার অভ্যাস ছিল!
এত সকালে ফোন দিয়েছিলি কেন?
একটা খারাপ খবর আছে দোস্ত।
কতটা খারাপ? হয়েছে কী, বল তো?
দোস্ত, তুলি মারা গেছে!
তুলি? কোন তুলি? সমাজবিজ্ঞানের?
হুম।
হায় আল্লাহ, কী বলিস? কীভাবে মারা গেল?
আত্মহত্যা করেছে!
কী বলছিস এসব? তুলি কেন আত্মহত্যা করতে যাবে? কী যা-তা বলছিস?
এত কথা বলতে পারব না। আমি আছি তুলির বাসায়। তুই পারলে আয়।
ফোন কেটে দেয় আবিদ। নিস্তব্ধ-নিঃসঙ্গ পাথরের মতো বসে থাকে তুহিন। এটা কেমন কথা। তুলি কেন মরে যাবে? কেন আত্মহত্যা করবে তুলির মতো একটা মেয়ে। খরস্রোতা নদীর মতো সারাক্ষণ কলকল করে বয়ে চলা তুলি, জোছনার নরম আলোর মতো মায়া হয়ে ছড়িয়ে থাকা তুলি, ঝরনাজলের মতো প্রবল বেগে আছড়ে পড়া তুলি কেন নিজেকে শেষ করে দেবে? কেন তার কাছে এই দুনিয়াটাকে নরক মনে হবে? কেন মনে হবে এখানে আর থাকা যাবে না? কেন সে জীবনের ছেদবিন্দু টেনে দেবে এই অসময়ে? মেলে না, কিছুতেই হিসাব মেলে না তুহিনের।
তুহিনরা পড়ত রাষ্ট্রবিজ্ঞানে। তুলি সমাজবিজ্ঞানে। ফিলোসফির সাবসিডিয়ারি কোর্সে দেখা হতো তাদের। সেখান থেকে বন্ধুত্ব। গভীর বন্ধুত্ব। পুরো ক্যাম্পাসজীবনের তুলিকে দেখেছে তারা অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী হিসেবে। প্রাণোচ্ছল একটা মেয়ে। প্রায়ই হল থেকে তাদের জন্য এটা-সেটা রান্না করে নিয়ে আসত তুলি। খুব ভালো রান্না করত মেয়েটা। তবে একদিন দুষ্টুমি করে রসি বলেছিল—কী সব রান্না করে আনিস, মুখে দেয়া যায় না! তখন তুলি কোনো কথা বলেনি। হেসেছে বরং। কিন্তু পরে তারা শুনেছে ইফফাতের কাছে—কমনরুমে গিয়ে নাকি কেঁদে ভাসিয়েছে তুলি। হল প্রভোস্টের চোখ ফাঁকি দিয়ে রুমের হিটার জ্বালিয়ে বন্ধুদের জন্য শখ করে রান্না করে আনে সে—আর এটা নিয়ে বন্ধুরা এমন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করল? না হয় তার রান্না খারাপই! তাই বলে মুখের ওপর এমন করে বলবে? তুলি ভেতরে ভেতরে অনেক অভিমানী ছিল। সেই অভিমানটা টের পেত না বেশির ভাগ মানুষ। আসলে এমনই হয়। আমরা সবাই বাইরের মানুষটাকে দেখি। একটা মানুষের ভেতরের আনন্দ, বেদনা, বিরহ, যাতনা—এসব আমরা খতিয়ে দেখি না বা দেখার চেষ্টা করি না। বোঝার-জানার চেষ্টা করি না।
দ্রুত রেডি হয়ে ঘর থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছে তুহিন। রাই বাসায় নেই অনেক দিন হলো। সেই যে এক বিকেলে বের হয়ে গেছে বাড়ি থেকে আর আসার নাম নেই। এর আগেও এমন হয়েছে—রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে বাবার বাড়ি চলে গেছে রাই। কিন্তু ফিরে এসেছে দুয়েক দিন পরই। এবার প্রায় এক মাস হয়ে গেছে তবু ফেরার নাম নেই। রাই চলে যাওয়ার এক দিন পরই ফোন করে তাকে ফেরার অনুরোধ করেছে তুহিন। কিন্তু কিছুতেই কাজ না হলে এক সন্ধ্যায় হাজির হয়েছিল রাইদের ধানমন্ডির বাসায়। রাই খুব হেসে হেসে কথা বলেছে তুহিনের সঙ্গে। আদর-যত্ন করে রাতের খাবার খাইয়েছে। কিন্তু যেই তুহিন বাসায় ফেরার কথা বলেছে—ওমনি বেঁকে বসেছে রাই। কিছুতেই ফিরবে না সে। রাইয়ের মাকে বলেছে তুহিন—ওকে আমার সঙ্গে আসতে বলেন আম্মা। তোমাদের ব্যাপার তোমরাই বোঝো, আমি এখানে কী বলব, বলো?—এটুকু বলেই কথা সেরেছেন সাবেরা বেগম। ফলে আর কথা বাড়ায়নি তুহিন। চলে এসেছে নীরবে। শুধু ফেরার পথে কী মনে করে তাকিয়েছে পেছন ফিরে। চোখে পড়েছে দোতলার বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে রাই। কেমন যেন ক্লান্ত-অলস লাগে রাইকে। একবার মনে হয়েছে ফিরে গিয়ে আবার অনুরোধ করে রাইকে। কিন্তু আর দাঁড়ায়নি তুহিন। চলে এসেছে দ্রুত পায়ে। এখন রাইয়ের অনুপস্থিতিতে কিছুই ঠিকঠাক মতো খুঁজে পাচ্ছে না সে। সকালের নাশতাও বাদ গেল মাসখানেক ধরে। আর আজকে তো নাশতা করে সময় নষ্ট করার প্রশ্নই আসে না। ছুটির দিনের সকালের রাস্তা বেশ ফাঁকা। সহজেই একটা রিকশা পেয়ে যায়। মোবাইল ফোনে আবিদের এসএমএস। তুলির বাসার ঠিকানা লেখা। আদাবরে পৌঁছে বাসাটা খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয় না। একটা সুন্দরী স্মার্ট মেয়ে মারা গেছে, আত্মহত্যা করেছে গত রাতের কোনো এক সময়—এটা এলাকার কারও জানতে বাকি নেই। ভাড়া দিয়ে ধীরপায়ে রিকশা থেকে নামে তুহিন। এগিয়ে আসে আবিদ। পাঁচতলা বিল্ডিংয়ের দোতলায় থাকত তুলি। তার ছোট্ট ফ্ল্যাটটা এখন পুলিশের দখলে। মৃত্যুর কারণ খোঁজার চেষ্টা করছে তারা। লাশের সুরতহাল করা হবে এখন। তারপর ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হবে তুলিকে। সাততলা বাড়িটার সামনে অনেকটা খোলা জায়গা। জটলা করে আছেন দুনিয়ার মানুষ। সেই ভিড়ের এক কোনায় বন্ধুদের দেখতে পায় তুহিন। একটা নিচু দেয়ালের ওপর স্থবির হয়ে বসে আছে সুতপা। তার ঠিক পাশে রাস্তার ওপর পা ছড়িয়ে বসে আছে রফিক। অন্য বন্ধুরা আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। আবিদকে দেখা যায় না কোথাও। ধীরপায়ে সেদিকে এগিয়ে যায় তুহিন। সুতপার চোখে জল। লাল হয়ে আছে রফিকের চোখ। তুহিনকে দেখেই ডুকরে কেঁদে ওঠে সুতপা। তার পাশে বসে আলতো করে হাত রাখে তুহিন বন্ধুর কাঁধে। সুতপার কান্না আরও বেড়ে যায়। পৃথিবীর সব জল যেন আজ নেমে আসবে সুতপার চোখ বেয়ে। কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে সুতপা—গতকাল বিকেলেও অনেকক্ষণ কথা হয়েছিল তুলির সঙ্গে। আমাদের আজ সকালে একটা জায়গায় যাওয়ার কথা ছিল। সেটি নিয়ে আলাপ করার জন্য রাতে আবার ফোন দিয়েছিলাম। কিন্তু কয়েকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেনি তুলি। তারপর সকালবেলা ওর বাসায় এসে বারবার নক করার পরও দরজা খুলছিল না সে। তখন দারোয়ানকে ডেকে আনা হয়। দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। এরপর পুলিশ ডেকে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকলে ঝুলতে দেখা যায় তুলিকে। ফ্যানের সঙ্গে। মাথা ঘুরে পড়ে যায় সুতপা। আমাদের তুলি, কেন এভাবে চলে যাবে? কী এমন কষ্ট ছিল রে তুলি তোর মনে? আরও জোরে জোরে কাঁদতে থাকে সুতপা। ওর কান্না দেখে চোখ মোছে অন্য বন্ধুরা। আশপাশে জড়ো হওয়া কারও কারও চোখেও দেখা যায় জল। তুহিনের কেবল কান্না পায় না। চোখে জল নামে না। তবে ভেঙে যেতে থাকে বুকের ভেতরটা। চোখের সামনে ভেসে ওঠে দশ বছর আগের এক ঝলমলে সকাল। না গরম, না শীতের সেই সকালটায় সূর্যিত-রাঙা হয়েছিল চারপাশ। শেষ রাতের শিশির পড়ে গাছের পাতাগুলো ছিল ভেজা ভেজা। তুহিনরা দাঁড়িয়ে ছিল কলাভবনের করিডরে। ফিলোসফি সাবসিডিয়ারি ক্লাসের জন্য অপেক্ষা। তুহিন, আবিদ এবং রসি দাঁড়িয়ে গুলতানি মারছিল। এমন সময় কলকল-ছলছল করতে করতে এসেছিল সুতপা আর তুলি। প্রথম দিনের ক্লাসে তুহিনদের সঙ্গে বসেছিল তারা দুজন। প্রথম দিনেই বন্ধুত্ব হয়ে যায় তাদের। এরপর সেই বন্ধুত্বের গাছ বড় হয়েছে দিনে দিনে। ডালপালা মেলেছে ক্যাম্পাসজুড়ে। বন্ধুত্বের মালায় যোগ হয়েছে নতুন নতুন নাম। এরপর কত অর্থহীন আড্ডায়, কত কাজে-অকাজে, কত জানা-অজানায়, কত রাগে-অনুরাগে, কত মান-অভিমানে, কত ঝগড়া-বিষাদে, কত আনন্দ-দুঃখে, কত ব্যথা-অনুভবে, কত হর্ষ-উল্লাসে কেটেছে তাদের একেকটি দিন। ভোর থেকে শুরু হওয়া যাত্রা কত দিন মাঝরাত ছুঁয়েছে। কত দিন একসঙ্গে বৃষ্টিতে ভিজেছি, রোদে পুড়েছি, শীতে কেঁপেছি। আজ আমাদের সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেল তুলি! কেন চলে যেতে হলো তাকে—ভাবনার ঝড় চলে তুহিনের মনের ভেতর।
আবিদ কখন এসে দাঁড়িয়েছে পাশে, টের পায় না তুহিন। কিছুক্ষণ পর দেখা যায় সুতপাকে রুহীর কাছে রেখে তারা দুজন একটু দূরে গিয়ে বসে। কিছুটা সময় কাটে চুপচাপ। একপর্যায়ে কথা বলে তুহিন—তুলির বাসায় আর কে কে থাকে?
তুলি একাই! ছোট্ট উত্তর আবিদের।
তবে আমরা জানি, তুলির সঙ্গে তার বরের ডিভোর্স হয়ে গিয়েছিল চার বছর আগে। এরপর থেকে তুলি একাই থাকত বাসায়। মাঝে মাঝে ছোট ভাইটা এসে থাকত তার সঙ্গে। তুলি একটা ভালো চাকরি করত। একার জীবনে টাকাপয়সার কোনো সমস্যা হতো না তার। কিন্তু করোনার সময় আচমকা তার চাকরিটা চলে যায়। তবে একবারে অথই সাগরে পড়েনি তুলি। জমানো টাকা দিয়ে অনলাইন ব্যবসা শুরু করেছিল সে। বন্ধুদের মধ্যে সুতপার সঙ্গে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ছিল তুলি। তুলির পেটের খবর সব ওর জানা। সুতপাও বলছে তুলিকে কখনো হতাশ, বিষাদগ্রস্ত মনে হয়নি তার। তবুও কেন এমন অসময়ে স্বেচ্ছায় চলে গেল সে? এই প্রশ্নের উত্তর তো একমাত্র দিতে পারত তুলিই। কিন্তু সে তো এখন শুয়ে আছে নিঃসাড় নিজের ঘরের মেঝেতে। একটি সাদা ব্যাগে মুড়ে একটু পর তাকে নামিয়ে আনা হবে নিচে। অন্ধকার হিমঘরে থাকবে হয়তো সারা রাত। অথচ তুলিটা অন্ধকার বড় ভয় পেত।
অনেক রাতের পরে তুলিকে হিমঘরে রেখে তারা সবাই বাড়ির দিকে যাত্রা করে। এর মধ্যে চলে এসেছে তুলির ছোট ভাইটা। এসেছে অন্য স্বজনেরাও। খবর পেয়ে যশোর থেকে রওনা দিয়েছেন তুলির বাবা-মা। সুতপাকে নিতে আসে তার বর। তাদের সঙ্গে যায় রুহী। বাকি বন্ধুরাও যে যার মতো চলে যায়, সকালে আবার আসবে বলে! কী মনে করে যেন তুহিন ফোন করে রাইকে। রিং হয় একবার, দুবার, তিনবার। ফোন রিসিভ করে না রাই। আবিদ কি কিছু বুঝতে পারে?
দোস্ত, চল, আজকে তোর সঙ্গে থাকব। অনেক দিন মন খুলে কথা বলি না আমরা।
আবিদের প্রস্তাবে রাজি হয় তুহিন। দুই বন্ধু হাঁটতে থাকে শহরের পথ ধরে। আদাবর থেকে হাতিরপুল অনেকটা পথ। তারা দুজন হাঁটছে ধীরপায়ে। আকাশে সেদিন চাঁদ ছিল না। একেবারে নিকষ কালো আকাশে ছিল না কোনো তারাও।
প্রায় শেষরাতের দিকে আবিদ আর তুহিনকে দেখা যায় বসে আছে বারান্দায়। বেতের চেয়ারটাতে বসে একটু একটু করে দুলছে আবিদ। তুহিন বসে আছে একটা মোড়ায়।
পাভেলের কথা মনে আছে তোর? আবিদের কথার উত্তরে কিছু না বলে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে তুহিন।
তারপর দুজনেই অনেকক্ষণ চুপ। শেষ রাতের এই সময়টাতে আকাশের গুমোট কেটে গিয়ে বসেছে লক্ষ তারার মেলা। বাতাস বইছে ধীরে। একটু ঠান্ডা ঠান্ডা লাগে।
পাভেল যেদিন মারা গেল, সেদিনও আজকের মতোই ফোন দিয়ে ঘুম ভাঙিয়েছিলি তুই। রাতের নীরবতা ভেঙে কথাটা বলে তুহিন। আবিদ কিছুই বলে না। শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বহু দূরে তাকিয়ে থাকে শূন্য চোখে।
আমরা জানি, তাদের প্রিয় বন্ধু পাভেল অনার্স শেষের পরই চলে গিয়েছিল নিউইয়র্ক। অল্প সময়ের মধ্যেই বেশ ভালো জমিয়ে তুলেছিল। কিন্তু কী করে যেন মার্কিন মুলুকে কিডনির রোগ বাঁধিয়ে ফেলে পাভেল। অবশেষে দীর্ঘ চিকিৎসার পর কোনো এক গভীর রাতে নিউইয়র্কের কোনো এক হাসপাতালে নীরব-নিঃসঙ্গ মৃত্যু হয় তার।
আচ্ছা আবিদ তুই কি জানিস, পাভেল তুলিকে খুব ভালোবাসত? প্রেম ছিল তাদের দুজনের!
হুম জানি। এ-ও জানি, এক দুপুরে তারা ঠিক করেছিল—বিয়ে করে ফেলবে। এরপর সেই সারাটা দুপুর তারা পুরো নিউমার্কেট চষে ঘর-গৃহস্থালির জিনিস কিনেছিল। রাতুলের কাছ থেকে বেশ কিছু টাকাও ধার নিয়েছিল পাভেল। বিয়ের সময় কিছু টাকাপয়সা হাতে রাখা দরকার। কিন্তু কী কারণে জানি পরে আর বিয়েটা হয়নি।
সমবয়সীকে বিয়ে করবে তুলি—এটা তার বাবা মা কিছুতেই চায়নি। আর বাবা-মায়ের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে কোনো মতেই রাজি হয়নি তুলি।
দুই বন্ধুর আলাপ এরপর আর এগোয় না। যেন তাদের সব কথা শেষ হয়ে গেছে। অথবা কোনো অচেনা স্টেশনে বসে আছে দুজন অপরিচিত কোনো লোক। যেন তুহিন আর আবিদ কেউ কাউকে চেনে না। অথবা তারা দুজন মানুষ সম্পূর্ণ বোবা মানুষ। তাদের কোনো ভাষা নেই। এভাবে কাটে অনেকটা সময়। দূরের কোনো মসজিদ থেকে ভেসে আসছে ফজরের আজান। এরপর কাছের মসজিদগুলো থেকেও একের পর আসতে থাকে আজানের সুমধুর সুর।
এই সময় আমরা দেখি আজন্মের নীরবতা ভেঙে গলা ছেড়ে কাঁদছে আবিদ আর তুহিন। তুমুল তারুণ্যের বিশ্ববিদ্যালয়জীবন দশ বছর আগেই পেছনে ফেলে এসেছে তারা। অথচ সেই সব দিনের স্মৃতি একের পর পর সতেজ-সজীব-জীবন্ত হয়ে ভাসছে তাদের চোখে। বুক ভেসে যায় দুজনের অকাল মৃত দুই বন্ধুর জন্য। যারা পরস্পরকে ভালোবেসেছিল কিন্তু কেউ কারও হয়নি। আর তিন বছরের ব্যবধানে জীবন-মৃত্যুর ভেদরেখা মুছে দুজনেই আকাশের তারা হয়ে গেছে। আহারে তুলি! আহারে পাভেল!
জীবন কেন সব সময় জয়ের বন্দরে ভেড়ে না!

আসমানে উড়ছে একটা নীল বক। আর আসমানটা একেবারে ধবধবে সাদা—যেন এইমাত্র লন্ড্রি থেকে ধুয়ে এনে একটি সাদা চাদর ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে চরাচরজুড়ে। নীল বকটা নিঃশব্দ নয়। উড়ছে তীব্র শো শো শব্দে। তার পাখায় ঝিলিক দিচ্ছে নীলাভ আভা। বকটা উড়তে উড়তে একসময় নেমে আসে তীক্ষ্ণ তিরের ফলার মতো—একেবারে চোখবরাবর। যেন সুচালো নখের আঁচড়ে তুলে নেবে চোখ জোড়া। অথবা ঠুকরে ঠুকরে খাবে। তীব্র আতঙ্ক নিয়ে অপেক্ষা করতে হয় তখন। চাইলেও সরে যাওয়া যায় না। পা দুটো যেন জমে পাথর হয়ে যায়। অথবা মনে হয় মাঠের বয়সী জামগাছটার শক্ত শেকড়ের মতো মাটির অনেক গভীরে দেবে গেছে পা জোড়া। ধারালো নখের তীব্র আক্রমণের জন্য ঠায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। বকটা নেমে আসছে…শো শো শব্দ বেড়েই চলেছে!
তুহিনের বালিশের পাশে ঘোঁত ঘোঁত শব্দ তুলে কাঁপছে তার সেলফোনটা। খ্যাপা লাল ষাঁড়কে আঁটোদড়িতে বেঁধে রাখলে বাঁধন ছেঁড়ার জন্য পাক খেয়ে যেমন ঘুরতে থাকে—চরম কাঁপুনির সঙ্গে সঙ্গে সেই রকম করে ঘুরছে ফোনটা। কিন্তু বেশি দূর যেতেও পারছে না। ঘুম ভেঙে যায় তুহিনের। স্বপ্ন দেখছিল সে। সেই পুরোনো স্বপ্ন। বেশ কিছুদিন ধরেই স্বপ্নটা দেখছে সে। বেশির ভাগ সময় ভোরের দিকে, না হয় সকালের দিকেই স্বপ্নটা দেখে সে। কিন্তু স্বপ্নের শেষটা আজ পর্যন্ত দেখা হলো না। কোনো না কোনো বাগড়া বাধেই। আজ যেমন ফোনের কাঁপুনিতে ঘুম ভেঙে গেল। কোনো দিন হয়তো পেপারওয়ালা এসে কলবেল বাজায়। কোনো দিন হয়তো নিচের রাস্তায় চেঁচিয়ে ওঠে তালাচাবিওয়ালা! কিংবা কোনো দিন দেখা যায় একটা মাইক নিয়ে নেমে পড়েছে কেউ। ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প অথবা কোনো রাজনৈতিক সভার প্রচার চালাচ্ছে গলা ফাটিয়ে!
এদিকে অনেকক্ষণ কেঁপে কেঁপে থেমে গেছে ফোনটা। হাতে নিয়ে তুহিন দেখে সাতটা মিসড কল। তিনটা অফিস কলিগদের। অথচ আজকে ছুটির দিন। অফিস থেকে কেন ফোন আসবে? খুব বিরক্ত লাগে তার। বাকি চারটা ফোন আবিদের। আবিদ তার ইউনিভার্সিটি জীবনের বন্ধু। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় খুব মাখামাখি বন্ধুত্ব ছিল। পরে ক্যাম্পাস ছেড়ে আসার পর কোথায় যেন তাল কেটে গেছে। একই শহরে থেকেও যোগাযোগটা কেমন আলগা হয়ে গেছে। তবে দীর্ঘ বিরতিতে যখনই কথা হয়, পুরোনো সেই উচ্ছ্বাসটা ঠিকই ফিরে ফিরে আসে। কিন্তু আজকে এই ছুটির দিনের ভোরে আবিদ হঠাৎ কেন এতবার ফোন করল, ভেবে পায় না তুহিন। ঘড়ির কাঁটা সাড়ে এগারোর ঘরে! এত বেলা হয়ে গেছে? নিজের কাছেই কিছুটা লজ্জা লাগে তার। অনেক বেলা হয়ে গেছে। সাধারণত এত বেলা পর্যন্ত ঘুমায় না সে। যত রাত করেই ঘুমাক, ঠিকই সকাল সাতটা সাড়ে সাতটার মধ্যে উঠে পড়ে সে।
বিছানায় শুয়েই আবিদকে ফোন করে তুহিন। রিং হয়। একবার, দুবার, তিনবারের মাথায় ফোন রিসিভ করে আবিদ।
হ্যালো
কী রে! সেই কখন থেকে ফোন দিয়ে যাচ্ছি। তোর কোনো খবরই নাই।
ঘুমাচ্ছিলাম দোস্ত।
এত বেলা পর্যন্ত ঘুমাস? তোর না আগে ভোরে ওঠার অভ্যাস ছিল!
এত সকালে ফোন দিয়েছিলি কেন?
একটা খারাপ খবর আছে দোস্ত।
কতটা খারাপ? হয়েছে কী, বল তো?
দোস্ত, তুলি মারা গেছে!
তুলি? কোন তুলি? সমাজবিজ্ঞানের?
হুম।
হায় আল্লাহ, কী বলিস? কীভাবে মারা গেল?
আত্মহত্যা করেছে!
কী বলছিস এসব? তুলি কেন আত্মহত্যা করতে যাবে? কী যা-তা বলছিস?
এত কথা বলতে পারব না। আমি আছি তুলির বাসায়। তুই পারলে আয়।
ফোন কেটে দেয় আবিদ। নিস্তব্ধ-নিঃসঙ্গ পাথরের মতো বসে থাকে তুহিন। এটা কেমন কথা। তুলি কেন মরে যাবে? কেন আত্মহত্যা করবে তুলির মতো একটা মেয়ে। খরস্রোতা নদীর মতো সারাক্ষণ কলকল করে বয়ে চলা তুলি, জোছনার নরম আলোর মতো মায়া হয়ে ছড়িয়ে থাকা তুলি, ঝরনাজলের মতো প্রবল বেগে আছড়ে পড়া তুলি কেন নিজেকে শেষ করে দেবে? কেন তার কাছে এই দুনিয়াটাকে নরক মনে হবে? কেন মনে হবে এখানে আর থাকা যাবে না? কেন সে জীবনের ছেদবিন্দু টেনে দেবে এই অসময়ে? মেলে না, কিছুতেই হিসাব মেলে না তুহিনের।
তুহিনরা পড়ত রাষ্ট্রবিজ্ঞানে। তুলি সমাজবিজ্ঞানে। ফিলোসফির সাবসিডিয়ারি কোর্সে দেখা হতো তাদের। সেখান থেকে বন্ধুত্ব। গভীর বন্ধুত্ব। পুরো ক্যাম্পাসজীবনের তুলিকে দেখেছে তারা অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী হিসেবে। প্রাণোচ্ছল একটা মেয়ে। প্রায়ই হল থেকে তাদের জন্য এটা-সেটা রান্না করে নিয়ে আসত তুলি। খুব ভালো রান্না করত মেয়েটা। তবে একদিন দুষ্টুমি করে রসি বলেছিল—কী সব রান্না করে আনিস, মুখে দেয়া যায় না! তখন তুলি কোনো কথা বলেনি। হেসেছে বরং। কিন্তু পরে তারা শুনেছে ইফফাতের কাছে—কমনরুমে গিয়ে নাকি কেঁদে ভাসিয়েছে তুলি। হল প্রভোস্টের চোখ ফাঁকি দিয়ে রুমের হিটার জ্বালিয়ে বন্ধুদের জন্য শখ করে রান্না করে আনে সে—আর এটা নিয়ে বন্ধুরা এমন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করল? না হয় তার রান্না খারাপই! তাই বলে মুখের ওপর এমন করে বলবে? তুলি ভেতরে ভেতরে অনেক অভিমানী ছিল। সেই অভিমানটা টের পেত না বেশির ভাগ মানুষ। আসলে এমনই হয়। আমরা সবাই বাইরের মানুষটাকে দেখি। একটা মানুষের ভেতরের আনন্দ, বেদনা, বিরহ, যাতনা—এসব আমরা খতিয়ে দেখি না বা দেখার চেষ্টা করি না। বোঝার-জানার চেষ্টা করি না।
দ্রুত রেডি হয়ে ঘর থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছে তুহিন। রাই বাসায় নেই অনেক দিন হলো। সেই যে এক বিকেলে বের হয়ে গেছে বাড়ি থেকে আর আসার নাম নেই। এর আগেও এমন হয়েছে—রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে বাবার বাড়ি চলে গেছে রাই। কিন্তু ফিরে এসেছে দুয়েক দিন পরই। এবার প্রায় এক মাস হয়ে গেছে তবু ফেরার নাম নেই। রাই চলে যাওয়ার এক দিন পরই ফোন করে তাকে ফেরার অনুরোধ করেছে তুহিন। কিন্তু কিছুতেই কাজ না হলে এক সন্ধ্যায় হাজির হয়েছিল রাইদের ধানমন্ডির বাসায়। রাই খুব হেসে হেসে কথা বলেছে তুহিনের সঙ্গে। আদর-যত্ন করে রাতের খাবার খাইয়েছে। কিন্তু যেই তুহিন বাসায় ফেরার কথা বলেছে—ওমনি বেঁকে বসেছে রাই। কিছুতেই ফিরবে না সে। রাইয়ের মাকে বলেছে তুহিন—ওকে আমার সঙ্গে আসতে বলেন আম্মা। তোমাদের ব্যাপার তোমরাই বোঝো, আমি এখানে কী বলব, বলো?—এটুকু বলেই কথা সেরেছেন সাবেরা বেগম। ফলে আর কথা বাড়ায়নি তুহিন। চলে এসেছে নীরবে। শুধু ফেরার পথে কী মনে করে তাকিয়েছে পেছন ফিরে। চোখে পড়েছে দোতলার বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে রাই। কেমন যেন ক্লান্ত-অলস লাগে রাইকে। একবার মনে হয়েছে ফিরে গিয়ে আবার অনুরোধ করে রাইকে। কিন্তু আর দাঁড়ায়নি তুহিন। চলে এসেছে দ্রুত পায়ে। এখন রাইয়ের অনুপস্থিতিতে কিছুই ঠিকঠাক মতো খুঁজে পাচ্ছে না সে। সকালের নাশতাও বাদ গেল মাসখানেক ধরে। আর আজকে তো নাশতা করে সময় নষ্ট করার প্রশ্নই আসে না। ছুটির দিনের সকালের রাস্তা বেশ ফাঁকা। সহজেই একটা রিকশা পেয়ে যায়। মোবাইল ফোনে আবিদের এসএমএস। তুলির বাসার ঠিকানা লেখা। আদাবরে পৌঁছে বাসাটা খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয় না। একটা সুন্দরী স্মার্ট মেয়ে মারা গেছে, আত্মহত্যা করেছে গত রাতের কোনো এক সময়—এটা এলাকার কারও জানতে বাকি নেই। ভাড়া দিয়ে ধীরপায়ে রিকশা থেকে নামে তুহিন। এগিয়ে আসে আবিদ। পাঁচতলা বিল্ডিংয়ের দোতলায় থাকত তুলি। তার ছোট্ট ফ্ল্যাটটা এখন পুলিশের দখলে। মৃত্যুর কারণ খোঁজার চেষ্টা করছে তারা। লাশের সুরতহাল করা হবে এখন। তারপর ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হবে তুলিকে। সাততলা বাড়িটার সামনে অনেকটা খোলা জায়গা। জটলা করে আছেন দুনিয়ার মানুষ। সেই ভিড়ের এক কোনায় বন্ধুদের দেখতে পায় তুহিন। একটা নিচু দেয়ালের ওপর স্থবির হয়ে বসে আছে সুতপা। তার ঠিক পাশে রাস্তার ওপর পা ছড়িয়ে বসে আছে রফিক। অন্য বন্ধুরা আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। আবিদকে দেখা যায় না কোথাও। ধীরপায়ে সেদিকে এগিয়ে যায় তুহিন। সুতপার চোখে জল। লাল হয়ে আছে রফিকের চোখ। তুহিনকে দেখেই ডুকরে কেঁদে ওঠে সুতপা। তার পাশে বসে আলতো করে হাত রাখে তুহিন বন্ধুর কাঁধে। সুতপার কান্না আরও বেড়ে যায়। পৃথিবীর সব জল যেন আজ নেমে আসবে সুতপার চোখ বেয়ে। কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে সুতপা—গতকাল বিকেলেও অনেকক্ষণ কথা হয়েছিল তুলির সঙ্গে। আমাদের আজ সকালে একটা জায়গায় যাওয়ার কথা ছিল। সেটি নিয়ে আলাপ করার জন্য রাতে আবার ফোন দিয়েছিলাম। কিন্তু কয়েকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেনি তুলি। তারপর সকালবেলা ওর বাসায় এসে বারবার নক করার পরও দরজা খুলছিল না সে। তখন দারোয়ানকে ডেকে আনা হয়। দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। এরপর পুলিশ ডেকে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকলে ঝুলতে দেখা যায় তুলিকে। ফ্যানের সঙ্গে। মাথা ঘুরে পড়ে যায় সুতপা। আমাদের তুলি, কেন এভাবে চলে যাবে? কী এমন কষ্ট ছিল রে তুলি তোর মনে? আরও জোরে জোরে কাঁদতে থাকে সুতপা। ওর কান্না দেখে চোখ মোছে অন্য বন্ধুরা। আশপাশে জড়ো হওয়া কারও কারও চোখেও দেখা যায় জল। তুহিনের কেবল কান্না পায় না। চোখে জল নামে না। তবে ভেঙে যেতে থাকে বুকের ভেতরটা। চোখের সামনে ভেসে ওঠে দশ বছর আগের এক ঝলমলে সকাল। না গরম, না শীতের সেই সকালটায় সূর্যিত-রাঙা হয়েছিল চারপাশ। শেষ রাতের শিশির পড়ে গাছের পাতাগুলো ছিল ভেজা ভেজা। তুহিনরা দাঁড়িয়ে ছিল কলাভবনের করিডরে। ফিলোসফি সাবসিডিয়ারি ক্লাসের জন্য অপেক্ষা। তুহিন, আবিদ এবং রসি দাঁড়িয়ে গুলতানি মারছিল। এমন সময় কলকল-ছলছল করতে করতে এসেছিল সুতপা আর তুলি। প্রথম দিনের ক্লাসে তুহিনদের সঙ্গে বসেছিল তারা দুজন। প্রথম দিনেই বন্ধুত্ব হয়ে যায় তাদের। এরপর সেই বন্ধুত্বের গাছ বড় হয়েছে দিনে দিনে। ডালপালা মেলেছে ক্যাম্পাসজুড়ে। বন্ধুত্বের মালায় যোগ হয়েছে নতুন নতুন নাম। এরপর কত অর্থহীন আড্ডায়, কত কাজে-অকাজে, কত জানা-অজানায়, কত রাগে-অনুরাগে, কত মান-অভিমানে, কত ঝগড়া-বিষাদে, কত আনন্দ-দুঃখে, কত ব্যথা-অনুভবে, কত হর্ষ-উল্লাসে কেটেছে তাদের একেকটি দিন। ভোর থেকে শুরু হওয়া যাত্রা কত দিন মাঝরাত ছুঁয়েছে। কত দিন একসঙ্গে বৃষ্টিতে ভিজেছি, রোদে পুড়েছি, শীতে কেঁপেছি। আজ আমাদের সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেল তুলি! কেন চলে যেতে হলো তাকে—ভাবনার ঝড় চলে তুহিনের মনের ভেতর।
আবিদ কখন এসে দাঁড়িয়েছে পাশে, টের পায় না তুহিন। কিছুক্ষণ পর দেখা যায় সুতপাকে রুহীর কাছে রেখে তারা দুজন একটু দূরে গিয়ে বসে। কিছুটা সময় কাটে চুপচাপ। একপর্যায়ে কথা বলে তুহিন—তুলির বাসায় আর কে কে থাকে?
তুলি একাই! ছোট্ট উত্তর আবিদের।
তবে আমরা জানি, তুলির সঙ্গে তার বরের ডিভোর্স হয়ে গিয়েছিল চার বছর আগে। এরপর থেকে তুলি একাই থাকত বাসায়। মাঝে মাঝে ছোট ভাইটা এসে থাকত তার সঙ্গে। তুলি একটা ভালো চাকরি করত। একার জীবনে টাকাপয়সার কোনো সমস্যা হতো না তার। কিন্তু করোনার সময় আচমকা তার চাকরিটা চলে যায়। তবে একবারে অথই সাগরে পড়েনি তুলি। জমানো টাকা দিয়ে অনলাইন ব্যবসা শুরু করেছিল সে। বন্ধুদের মধ্যে সুতপার সঙ্গে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ছিল তুলি। তুলির পেটের খবর সব ওর জানা। সুতপাও বলছে তুলিকে কখনো হতাশ, বিষাদগ্রস্ত মনে হয়নি তার। তবুও কেন এমন অসময়ে স্বেচ্ছায় চলে গেল সে? এই প্রশ্নের উত্তর তো একমাত্র দিতে পারত তুলিই। কিন্তু সে তো এখন শুয়ে আছে নিঃসাড় নিজের ঘরের মেঝেতে। একটি সাদা ব্যাগে মুড়ে একটু পর তাকে নামিয়ে আনা হবে নিচে। অন্ধকার হিমঘরে থাকবে হয়তো সারা রাত। অথচ তুলিটা অন্ধকার বড় ভয় পেত।
অনেক রাতের পরে তুলিকে হিমঘরে রেখে তারা সবাই বাড়ির দিকে যাত্রা করে। এর মধ্যে চলে এসেছে তুলির ছোট ভাইটা। এসেছে অন্য স্বজনেরাও। খবর পেয়ে যশোর থেকে রওনা দিয়েছেন তুলির বাবা-মা। সুতপাকে নিতে আসে তার বর। তাদের সঙ্গে যায় রুহী। বাকি বন্ধুরাও যে যার মতো চলে যায়, সকালে আবার আসবে বলে! কী মনে করে যেন তুহিন ফোন করে রাইকে। রিং হয় একবার, দুবার, তিনবার। ফোন রিসিভ করে না রাই। আবিদ কি কিছু বুঝতে পারে?
দোস্ত, চল, আজকে তোর সঙ্গে থাকব। অনেক দিন মন খুলে কথা বলি না আমরা।
আবিদের প্রস্তাবে রাজি হয় তুহিন। দুই বন্ধু হাঁটতে থাকে শহরের পথ ধরে। আদাবর থেকে হাতিরপুল অনেকটা পথ। তারা দুজন হাঁটছে ধীরপায়ে। আকাশে সেদিন চাঁদ ছিল না। একেবারে নিকষ কালো আকাশে ছিল না কোনো তারাও।
প্রায় শেষরাতের দিকে আবিদ আর তুহিনকে দেখা যায় বসে আছে বারান্দায়। বেতের চেয়ারটাতে বসে একটু একটু করে দুলছে আবিদ। তুহিন বসে আছে একটা মোড়ায়।
পাভেলের কথা মনে আছে তোর? আবিদের কথার উত্তরে কিছু না বলে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে তুহিন।
তারপর দুজনেই অনেকক্ষণ চুপ। শেষ রাতের এই সময়টাতে আকাশের গুমোট কেটে গিয়ে বসেছে লক্ষ তারার মেলা। বাতাস বইছে ধীরে। একটু ঠান্ডা ঠান্ডা লাগে।
পাভেল যেদিন মারা গেল, সেদিনও আজকের মতোই ফোন দিয়ে ঘুম ভাঙিয়েছিলি তুই। রাতের নীরবতা ভেঙে কথাটা বলে তুহিন। আবিদ কিছুই বলে না। শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বহু দূরে তাকিয়ে থাকে শূন্য চোখে।
আমরা জানি, তাদের প্রিয় বন্ধু পাভেল অনার্স শেষের পরই চলে গিয়েছিল নিউইয়র্ক। অল্প সময়ের মধ্যেই বেশ ভালো জমিয়ে তুলেছিল। কিন্তু কী করে যেন মার্কিন মুলুকে কিডনির রোগ বাঁধিয়ে ফেলে পাভেল। অবশেষে দীর্ঘ চিকিৎসার পর কোনো এক গভীর রাতে নিউইয়র্কের কোনো এক হাসপাতালে নীরব-নিঃসঙ্গ মৃত্যু হয় তার।
আচ্ছা আবিদ তুই কি জানিস, পাভেল তুলিকে খুব ভালোবাসত? প্রেম ছিল তাদের দুজনের!
হুম জানি। এ-ও জানি, এক দুপুরে তারা ঠিক করেছিল—বিয়ে করে ফেলবে। এরপর সেই সারাটা দুপুর তারা পুরো নিউমার্কেট চষে ঘর-গৃহস্থালির জিনিস কিনেছিল। রাতুলের কাছ থেকে বেশ কিছু টাকাও ধার নিয়েছিল পাভেল। বিয়ের সময় কিছু টাকাপয়সা হাতে রাখা দরকার। কিন্তু কী কারণে জানি পরে আর বিয়েটা হয়নি।
সমবয়সীকে বিয়ে করবে তুলি—এটা তার বাবা মা কিছুতেই চায়নি। আর বাবা-মায়ের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে কোনো মতেই রাজি হয়নি তুলি।
দুই বন্ধুর আলাপ এরপর আর এগোয় না। যেন তাদের সব কথা শেষ হয়ে গেছে। অথবা কোনো অচেনা স্টেশনে বসে আছে দুজন অপরিচিত কোনো লোক। যেন তুহিন আর আবিদ কেউ কাউকে চেনে না। অথবা তারা দুজন মানুষ সম্পূর্ণ বোবা মানুষ। তাদের কোনো ভাষা নেই। এভাবে কাটে অনেকটা সময়। দূরের কোনো মসজিদ থেকে ভেসে আসছে ফজরের আজান। এরপর কাছের মসজিদগুলো থেকেও একের পর আসতে থাকে আজানের সুমধুর সুর।
এই সময় আমরা দেখি আজন্মের নীরবতা ভেঙে গলা ছেড়ে কাঁদছে আবিদ আর তুহিন। তুমুল তারুণ্যের বিশ্ববিদ্যালয়জীবন দশ বছর আগেই পেছনে ফেলে এসেছে তারা। অথচ সেই সব দিনের স্মৃতি একের পর পর সতেজ-সজীব-জীবন্ত হয়ে ভাসছে তাদের চোখে। বুক ভেসে যায় দুজনের অকাল মৃত দুই বন্ধুর জন্য। যারা পরস্পরকে ভালোবেসেছিল কিন্তু কেউ কারও হয়নি। আর তিন বছরের ব্যবধানে জীবন-মৃত্যুর ভেদরেখা মুছে দুজনেই আকাশের তারা হয়ে গেছে। আহারে তুলি! আহারে পাভেল!
জীবন কেন সব সময় জয়ের বন্দরে ভেড়ে না!

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫তৌহিদুল হক

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

আসমানে উড়ছে একটা নীল বক। আর আসমানটা একেবারে ধবধবে সাদা—যেন এইমাত্র লন্ড্রি থেকে ধুয়ে এনে একটি সাদা চাদর ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে চরাচরজুড়ে। নীল বকটা নিঃশব্দ নয়। উড়ছে তীব্র শো শো শব্দে।
০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

আসমানে উড়ছে একটা নীল বক। আর আসমানটা একেবারে ধবধবে সাদা—যেন এইমাত্র লন্ড্রি থেকে ধুয়ে এনে একটি সাদা চাদর ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে চরাচরজুড়ে। নীল বকটা নিঃশব্দ নয়। উড়ছে তীব্র শো শো শব্দে।
০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

আসমানে উড়ছে একটা নীল বক। আর আসমানটা একেবারে ধবধবে সাদা—যেন এইমাত্র লন্ড্রি থেকে ধুয়ে এনে একটি সাদা চাদর ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে চরাচরজুড়ে। নীল বকটা নিঃশব্দ নয়। উড়ছে তীব্র শো শো শব্দে।
০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫আজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

আসমানে উড়ছে একটা নীল বক। আর আসমানটা একেবারে ধবধবে সাদা—যেন এইমাত্র লন্ড্রি থেকে ধুয়ে এনে একটি সাদা চাদর ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে চরাচরজুড়ে। নীল বকটা নিঃশব্দ নয়। উড়ছে তীব্র শো শো শব্দে।
০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫