বিজয়নগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি

মুদির দোকানে কিছুক্ষণ বসে থাকলে একটা অদ্ভুত গন্ধ নাকে লাগে। তেলের গন্ধ, তিসির গন্ধ, ডালের গন্ধ, বস্তার গন্ধ, মালামালভর্তি কার্টনের গন্ধ। এসব গন্ধ একদম ভালো লাগে না সিয়ামের। দোকানের ভেতরে বসলে এই গন্ধে তার মাথা ধরে আসে। আজও মাথাটা ধরেছে। কিন্তু এখন সেই গন্ধ থেকে কীভাবে মনোযোগ সরাবে, তা বসে বসে ভাবতে থাকে সে। দোকানের পেছন দিকের র্যাকের নিচে বড় একটি মাকড়সা জালে আটকা পড়েছে। তাই দেখে মজা লাগে সিয়ামের। জালে আটকানো মাকড়সার দিকে তাকিয়ে দেখতে থাকে, কীভাবে মাকড়সাটা জাল কেটে বেরিয়ে যাচ্ছে।
চণ্ডীপুর বাজারের এই হাফিজ স্টোরে সিয়ামের বয়সী একটি ছেলেও কাজ করে। ওর নাম জাকির। বাজারের প্রায় সব দোকানেই এ রকম একটি করে ছেলে আছে। সিয়ামের সঙ্গে জাকিরের তেমন ভাব নেই। জাকিরের আদবকেতা সিয়ামের পছন্দ না। জাকির কোনো খদ্দেরকে স্যার ডাকে না। গত ঈদের ছুটিতে নাটোরে মামার বাড়িতে গিয়ে সিয়াম দেখে এসেছে, কেউ জিনিস কিনতে এলে দোকানের ছেলেরা তাদের স্যার ডাকে। ফিরে এসে সে কথা জাকিরকে বলেছে। জাকির তার কথা বিশ্বাস করেনি। উল্টো বলেছে, যারা জিনিস কিনতে আসে, তারা কি স্কুলের মাস্টার? জাকির সারা দিন দোকানের ভেতরে স্যান্ডো গেঞ্জি পরে বসে থাকে, সেটাও সিয়ামের পছন্দ না। তা ছাড়া জাকির ব্র্যাকের স্কুলে ভর্তি হয়ে পালিয়ে এসেছে। এখন সারা দিন দোকানেই কাজ করে।
সুবাস মলম কোম্পানির একজন বিক্রয় প্রতিনিধি এসেছে বাজারে। তাকে নিয়ে ব্যস্ত হাফিজ স্টোরের মালিক হাফিজ উদ্দিন। আগেরবারের পাওনা নিয়ে হিসাব-নিকাশ করছে। হাফিজের টাকা গোনা দেখে স্কুলের মজিদ স্যারের কথা মনে পড়ে সিয়ামের। স্যার একদিন ক্লাসে ‘আমি যদি কোটিপতি হতাম’ রচনা লিখতে দিয়েছিলেন সবাইকে। তাতে সবাই অকাতরে মিথ্যা কথা উগরে দিয়েছিল। সিয়ামের এক বন্ধু মজা করে বলেছিল, এক কোটি টাকা হাতে পেলে সে সব টাকা মানুষকে দান করে বান্দরবানে গুহাবাসী হবে। তাই নিয়ে ক্লাসে কত হাসাহাসি। আরেক বন্ধু স্যারকে বলেছিল, ‘আমি যদি কোটিপতি হতাম’-এর বদলে ‘কোটিপতি হওয়ার সহজ উপায়’ লিখে দিয়েছে সে। তাই শুনে স্যার খেপে গিয়ে বলেছিলেন, ‘ব্যাটা, রবীন্দ্রনাথ হয়েছ, বেতায়ে পাছার ছাল তুলে দেব।’
মলম কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধির হাতে খান পাঁচেক ক্যালেন্ডার। সেগুলোর একটি হাফিজের হাতে দিয়ে চলে গেল। হাফিজ ক্যালেন্ডারটি জাকিরকে দিয়ে বলল, র্যাকে ঝুলায় দে। জাকির সেটা হাতে নিয়ে খুলে ধরে। এক পাতার বাংলা ক্যালেন্ডার। দুটি পাখি ঠোঁট ছুঁয়ে আছে, পেছনে দিগন্তবিস্তৃত ধানখেত। সিয়াম ক্যালেন্ডারটা দেখতে চায়। কিন্তু জাকির তাকে দেখতে না দিয়ে দোকানের মাঝের একটি র্যাকে ঝুলিয়ে দেয়।
হাফিজ স্টোরে সিয়ামের বসে থাকা দেড় ঘণ্টা হয়ে গেছে। আরও অনেক সময় থাকতে হবে। এতক্ষণ দোকানে বসে থাকতে তার একদম ভালো লাগে না। তবু প্রতি শনিবার তাকে এভাবে এই দোকানে বসে অপেক্ষা করতে হয়। সিয়ামের এই কাজ নিয়ে বন্ধুরা ঠাট্টা-তামাশা করে। দালালের বাচ্চা দালাল। তোর বাপ বড় দালাল আর তুই ছোট দালাল। দালাল শব্দটি শুনে খুব মন খারাপ হয় সিয়ামের।
চণ্ডীপুর বাজারে প্রতি শনিবার গরুর হাট বসে। সিয়ামের বাবা আলিম উদ্দিন সেই হাটে গরু কেনাবেচার দালাল। সিয়ামের কাজ গরু কেনাবেচায় বাবাকে সাহায্য করা। গত শনিবারও গরুর হাট বসেছিল, সিয়াম হাটে আসেনি। বাবা হাট থেকে বাড়ি ফিরে অনেক বকাঝকা করেছে। মায়ের কাছে বলেছে, সিয়াম হাটে থাকলে টাকা আরও বেশি হতো।
সিয়ামের বাবা আলিম উদ্দিন আগে পুঠিয়ার একটি সেমাই কারখানায় কাজ করত। করোনার কারণে কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর দুই বছর ধরে নানা চেষ্টা-তদবির করেও কাজ জোটেনি। পরে গরু কেনাবেচাকে পেশা হিসেবে নিয়েছে। গ্রামের লোকেরা তাকে গরুর দালাল বলে তামাশা করে। তাতে কোনো রা করে না আলিম উদ্দিন; বরং অন্যের মুখের ওপর শুনিয়ে দেয়, ‘কাজ করে খাই, চুরি তো করি না।’
আলিমের দুটোই ছেলে। ছোটটি কোলের। সিয়াম বড়, সে এইটে পড়ে। এমনিতে স্কুলে তার পড়াশোনায় অনেক চাপ। তার পরও প্রতি শনিবার বাবার সঙ্গে হাটে আসতে হয়। শনিবারের টিফিনের পর একটা ক্লাস থাকে। সেই ক্লাস করা হয় না সিয়ামের। প্রতিবারই ক্লাস ফাঁকি দিয়ে তাকে হাটে আসতে হয়।
হাটের এই মুদিদোকানি হাফিজ উদ্দিন সিয়ামের বাবার বন্ধু। ছেলে স্কুল থেকে এসে যাতে কিছু সময় অপেক্ষা করতে পারে, সে জন্য হাফিজকে বলে দিয়েছে সিয়ামের বাবা। সিয়াম এখন স্কুল থেকে সোজা হাটে এসে হাফিজের দোকানে বসে বাবার জন্য অপেক্ষা করে।
আজ সিয়ামের টিফিনের পরে অঙ্কের ক্লাস ছিল। অঙ্কের শিক্ষক শাহজাহান আলী খুবই কড়া। অঙ্ক না পারলে পরের দিন ক্লাসে দাঁড় করিয়ে রাখবেন। সিয়ামের আজ হাটে আসার কোনো ইচ্ছে ছিল না, কিন্তু মা বারবার সিয়ামকে বলে দিয়েছে, তার বাবার শরীরটা খুব খারাপ। বুকে ব্যথা করছে দুদিন ধরে। সিয়াম হাটে গেলে বাবাকে সাহায্য করার পাশাপাশি দেখাশোনা করতে পারবে। বাবার শরীর খারাপের কথা সিয়ামের কাছে অঙ্কের না মেলা সূত্রের মতো বড় গোলমেলে লাগে।
সকালে স্কুলে আসার সময় বাবাকে বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখেছে সিয়াম। বাবা এ সময় কখনো শুয়ে থাকে না। সিয়ামকে মা বলেছিল, ‘তোর বাপের শরীরডা খুব খারাপ।’ সিয়াম এ কথা শুনে প্রথমে খুশিই হয়েছিল; ভেবেছিল, আজ তাকে হাটে যেতে হবে না। হাটের এই কাজটা সিয়ামের একদম পছন্দ না। কিন্তু সেটা কখনো কারও কাছে বলেনি, মায়ের কাছেও না। বাবার কথামতো কাজটা খুব গোপনে করে সিয়াম। বাবা-ছেলের এই গোপন চুক্তি যাতে ফাঁস না হয়, সে ব্যাপারে সিয়ামও বেশ সতর্ক।
গরুর হাটের দিনে বেশির ভাগ সময় সিয়াম হাফিজের দোকানে বসে থাকে। শুধু দরকার হলেই বাবা তাকে ডেকে পাঠায়। এরপর সিয়াম হাটের ভেতরে ঢুকে যায়। হাটের ভেতরে তার কাজও খুব সামান্য। তবে কাজটা বড় অদ্ভুত। অবশ্য সব হাটবারে তাকে এ কাজ করতেও হয় না।
গরুর হাটে দুই ধরনের ক্রেতা আসে। বেশির ভাগ ক্রেতা আসে ঢাকাসহ বিভিন্ন মোকাম থেকে। তারা ট্রাক সঙ্গে নিয়ে আসে। এরা গরুর বড় ব্যাপারী। গরু কিনে তারা ট্রাকে করে ঢাকায় নিয়ে যায়। আর আসে গেরস্ত ধরনের ক্রেতা। তারা গরু কেনে কোরবানি দেওয়া বা বাড়িতে রাখার জন্য। গরুর ব্যাপারীদের চোখ থাকে সীমান্তের ওপার থেকে আসা ভারতীয় বড় আকৃতির গরুর দিকে। সরাসরি করিডর থেকে এসব গরু হাটে আসে। মাংস ব্যবসায়ীদের জন্য করিডরের গরুতে পড়তা বেশি। কিন্তু যারা কোরবানি দেওয়া বা বাড়িতে রাখার জন্য গরু কেনে, তাদের চোখ থাকে গেরস্ত বাড়ির দেশি গরুর দিকে। এসব গরুর দামও তুলনামূলক বেশি। কাজেই সীমান্তের ওপার থেকে আনা ছোট গরুকে দেশি গরু বলে চালালেই লাভ, তাতে বেশি দাম পাওয়া যাবে। গরু কেনাবেচার এই ব্যবসায় আলিম উদ্দিন এই সামান্য চালাকিটুকু করে। এতে তার বেশ লাভ হয়।
প্রথম প্রথম আলিম উদ্দিনের নিজের কাছেও কাজটা খারাপ মনে হতো। মনে মনে ভেবেছিল, এসব ছেড়ে দেবে। কিন্তু খবরের কাগজে দেখেছে, কত মানুষ ব্যাংকের টাকা মেরে দিয়ে বিদেশে বাড়ি-গাড়ি করে আরামে আছে। অভাবের সংসারে এই সামান্য চালাকিকে বড় কোনো পাপ মনে হয়নি তার। তার চেয়ে লাভ বাড়াতে সিয়ামকেও এ কাজে নামিয়েছে। এখন বেশ ভালোই চলছে। মাসে দু-একটা হাট না করলেও দিব্যি সংসার চলে যায়। আলিমের স্ত্রী মাবিয়া খাতুনও স্বামীর এই আয়-রোজগারে বেশ খুশি।
এখন হাটের দিন করিডরের পাইকারদের কাছ থেকে বেছে বেছে ছোট আকারের গরু কেনে আলিম উদ্দিন। তার লক্ষ্য থাকে করিডরের গরুকে যেন গেরস্তের বাড়িতে পোষা গরু বলে খদ্দেরের হাতে গছিয়ে দেওয়া যায়। এই কাজ খুব সতর্কতার সঙ্গে করে আলিম, যাতে কেউ সন্দেহ না করে। আবার খুব চেনা লোক হলেও এসব কাজ করা যায় না। সে জন্য ক্রেতা এলে সব বুঝেশুনে ছেলেকে দরকারমতো কাজে লাগায় আলিম উদ্দিন। শুধু অচেনা খদ্দের হাটে এলেই এই সামান্য চালাকিটা করে সে।
গত শনিবারও হাটে এ রকম দুটি বকনা গরু বিক্রি করেছে আলিম। কপাল ভালো ছিল। দুজন খদ্দেরই অচেনা। সব বাদ দিয়েও ৪ হাজার করে লাভ হয়েছে। হাট শেষে হাফিজের দোকানে সদাই করে সিয়ামকে সঙ্গে করে বাড়ি ফিরেছে আলিম উদ্দিন।
সেদিনও সিয়াম আগের মতো হাফিজের দোকানে বসে ছিল। খদ্দেরের সঙ্গে দামদর ঠিক হওয়ার উপক্রম হতেই হাফিজের ফোনে মিসড কল দিয়েছে আলিম। হাফিজের ইশারা পেয়ে হাটের ভেতরে চলে যায় সিয়াম। সিয়ামের কাজ হলো বিক্রি হওয়ার আগেই গরুর রশি ধরে কান্নাকাটি করা। কথা যা বলার আলিমই বলে। সিয়াম শুধু গরুর রশি ধরে নীরবে কাঁদতে থাকে। আলিম খদ্দেরদের কাছে ছেলের কান্নার বিশদ বিবরণ দেয়। বলে, গেরস্তের বাড়ির গরু সন্তান ছাড়া কিছুই না। সন্তানের মতো সেই গরু বাড়িতে লালন-পালন করা হয়েছে। বাড়ির সবার মতো তার ছোট ছেলেটারও গরুর প্রতি মায়া পড়েছে। সেই গরু বিক্রি করা হচ্ছে বলে স্কুল থেকে দৌড়ে হাটে এসেছে। খদ্দেরকে দেখিয়ে বলে, দেখেন ভাই, গরুটা বেচা হচ্ছে দেখে ছেলেটা কেমন কান্নাকাটি করছে। এতে ক্রেতার মন গলতে থাকে। কেউ কেউ বলে, এত ছোট বাচ্চা ছেলেকে কষ্ট দিয়ে গরু বেচবেন কেন? বাড়ির পোষা গরু বাড়িতেই নিয়ে যান। কিন্তু আলিম উদ্দিনের সেই এক জবাব, ভাই, অভাবের সংসার। গরু না বেচলে চলবে কী করে? আলিমের আচরণ এমন যে নিতান্তই অভাবে পড়ে এই গরু হাটে তুলেছে। দরকার হলে গৃহিণীর প্রসঙ্গও টেনে আনা হয়। বউয়ের ইচ্ছা ছিল পোষা গরু নিজের হাতে কোরবানি দেবে। কিন্তু বেচতে হচ্ছে অভাবের কারণে। সিয়ামকে খুব বেশিক্ষণ কান্নাকাটির অভিনয় করতে হয় না। আলিম এই সময়ে ছেলেকে বুঝ মানানোর নানা চেষ্টার অভিনয় করে। এরপর তাকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে এমন ভান করে। সিয়ামকে সব আগে থেকে শেখানো আছে। সে-ও গরুর রশি ছেড়ে সহজে যেতে চায় না। কখনো কখনো গরুর গলা জড়িয়ে ধরে আদর করার ভান করে। তবে গরুর গলা জড়িয়ে ধরা সিয়ামের ভালোই লাগে। গরু বেয়াড়া হলে একটু সমস্যা হয়। একবার এক গরু তাকে শিং দিয়ে গুঁতো দিয়েছিল। পায়ের সেই দাগ এখনো মেলেনি।
এই সামান্য অভিনয় করার ক্ষেত্রেও এত দিনে বাবার সব ইশারা বুঝে গেছে সিয়াম। খদ্দেরের মন গলছে বুঝতে পারলেই ছেলেকে ইশারা করে আলিম উদ্দিন। সেই ইশারা পেয়ে বাধ্য ছেলের মতো হাটের ভেতর থেকে আস্তে করে চলে আসে সিয়াম। আলিমের কাছে ছেলের এই অভিনয়টুকুর অনেক দাম। ক্রেতারা মনে করে, এটা সত্যিই গেরস্তের বাড়ির পোষা গরু। তখন দাম নিয়ে আর কোনো সমস্যা হয় না। বাগে ফেলতে পারলে ক্রেতার কাছ থেকে বাড়তি ৪-৫ হাজার টাকাও আদায় করা যায়।
সিয়াম একবার বাবার কাছে বলেছিল, তার মনে হয়েছে, এই কাজটা ঠিক হচ্ছে না। আলিম ছেলের ওপর রাগ না করে বলেছে, বড়লোকেরা কত রকম অন্যায় করে, জানিস? সে তুলনায় এটা কোনো অন্যায়ই না। ছেলের মন রাখতে নতুন জামা কিনে দেওয়ার কথাও তুলেছিল আলিম। সিয়ামও আর কথা বাড়ায়নি।
হাটের ভেতরের এই অভিনয়টুকু শেষ হওয়ার পর সিয়ামকে আবার অপেক্ষা করতে হয় হাফিজের দোকানে। গরু কেনাবেচা শেষ হলে আলিম ফিরে আসে হাফিজের মুদিদোকানে। সংসারের জন্য সদাইপাতি নিয়ে ছেলেসমেত বাড়ি ফেরে। সিয়ামের মাঝেমধ্যে নানা জিনিসের আবদার থাকে। বাড়িতে তার ছোট ভাই আছে। দুই ভাইয়ের জন্য সবই কিনে দেয় আলিম। গেল হাটে আবুলের দোকানের গরম জিলাপি চেয়েছিল সিয়াম। বাড়িতে যাওয়ার পর মা সেই জিলাপি দেখে অনেক খুশি। হাটের গুড়ের জিলাপি তারও ভারি পছন্দের।
আজ দোকানে বসে থাকতে সিয়ামের আর ভালো লাগছে না। অনেক সময় হয়েছে, কিন্তু হাটের ভেতর থেকে কোনো ডাক আসেনি। দোকানি হাফিজের মাথায়ও বিষয়টা ঢুকেছে। হাফিজ একবার সিয়ামকে বলেছে, ‘আজ কী হইছে রে, মিস কল আসে না যে!’ সিয়াম কিছু বলেনি। তার একবার ইচ্ছে করছে হাটের ভেতরে গিয়ে দেখে আসার। কিন্তু বাবার কড়া বারণ আছে, না ডাকলে যাওয়া যাবে না।
সিয়াম অপেক্ষা করতে থাকে, কিন্তু তার মনটা ছটফট করে। মা বলেছিল, তোর বাবার শরীরটা ভালো না। বুকের বাঁ দিকে দুদিন ধরে চিনচিন করছে। মায়ের কথা খুব মনে পড়ে সিয়ামের। হাফিজ একবার সিয়ামকে বলেছে, ‘চিন্তা করিস না। পেচ্ছাব লাগলে হাটের ভেতরটাও ঘুরে আসব।’ তবু সিয়াম বাবার মিসড কলের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।
বেলা পড়ে গেলেই গরুর হাটের কেনাবেচা শেষ হয়। এখন প্রায় সন্ধ্যা। একটু পরে আজান হবে। তবু হাট শেষ হচ্ছে না। সিয়ামের কাছে সবকিছু বিরক্তিকর লাগে। সে দোকানের ভেতর থেকে বাইরে আসে। হাটের দিকে উঁকি দিতেই একজনকে দৌড়ে আসতে দেখে। ঝড়ের বেগে আসা লোকটা হাফিজকে বলে, ‘তোর বন্ধু হাটের মধ্যে ফিট হয়ে গ্যাছে, আমি ডাক্তার নিয়ে আসি।’ মুহূর্তে হাফিজের মুখ শুকিয়ে যায়। ‘এই সিয়াম আয় তো’—বলেই সিয়ামের হাতে জোরে টান মেরে হাটের দিকে দৌড়াতে থাকে। সিয়াম কিছু না বুঝেই হাফিজের পিছে দৌড় দেয়।
হাটের ভেতরে অনেক মানুষের ভিড়। হাটের ইজারাদার যেখানে বসে হাসিল আদায় করে, সেই চরাটের ওপরে একজনকে শোয়ানো। চারপাশে অনেক মানুষ। হাফিজ ভিড় ঠেলে এগিয়ে যায়। সিয়ামকে টেনে ভেতরে নিয়ে বলে, ‘দেখ তো, বাপের কী হইছে’। সিয়াম কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। তাকিয়ে দেখে, তার বাবা নীরব-নিস্তব্ধ হয়ে শুয়ে আছে। সিয়াম আব্বা আব্বা বলে ডাকে, কোনো সাড়া মেলে না।
একটু পরে ‘সরো সরো’ বলে হাটের ভেতর থেকে এগিয়ে আসেন পল্লিচিকিৎসক ফজলু মিয়া। সবাইকে সরতে বলে আলিমের বাঁ হাত একটু উঁচু করে ধরেন ফজলু। কিছুক্ষণ পালস বোঝার চেষ্টা করেন। স্টেথিস্কোপটা বুকের ওপর ঠেসে ধরেন। কয়েক মিনিট নীরব থেকে বলে ওঠেন, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। সঙ্গে সঙ্গে শোরগোল পড়ে যায়। ‘ও আল্লা রে...’ বলে সিয়ামকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে হাফিজ। সেই কান্না সংক্রমিত হয় হাটের লোকেদের মধ্যে। সিয়াম অবাক হয়ে হাফিজের দিকে তাকিয়ে থাকে। সে কিছুই বুঝতে পারে না।
সিয়াম জানে না, এরপর কী হবে। শুয়ে থাকা লোকটি ঘিরে হাটের মানুষের ভিড় বাড়তেই থাকে। সবাই বলতে থাকে, আলিম দালাল মারা গেছে। এভাবে বেশ কিছু সময় চলে যায়। ইজারাদার আরিফ উদ্দিন একটু পরে এসে হাফিজকে ফাঁকে ডেকে নেয়। আস্তে আস্তে বলে, লাশটি বাড়ি নিয়ে যাও, হাটে বিদেশি ব্যাপারী আছে। এই বলে সে একজনকে হাঁক দিয়ে বলে, ‘এই মফিজ, একটা ভ্যান ডাক’। একটু পরে তিন চাকার একটি ভ্যান নিয়ে আসে মফিজ। সবাই ধরাধরি করে আলিমের মৃতদেহ সেই ভ্যানে তুলে দেয়। ইজারাদার হাফিজকে বলে, সে তো তোমার বন্ধু, ছেলেটাকে নিয়ে ভ্যানের সামনে বসো। এরপর সিয়ামের হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে বলে, ‘বাবা, এই টাকাটা মায়ের হাতে দিয়ো।’ ইজারাদার ভ্যানচালককে ধমক দিয়ে বলে, ‘লাশটায় একটু বান্ধন দাও, রাস্তা খারাপ তো।’ ইজারাদারের ধমক খেয়ে ভ্যানচালক রশির এক মাথায় একটি প্যাঁচ দিয়ে সিয়ামকে বলে, বাবা, রশির এই মাথাটা শক্ত করে ধরো।
শত শত মানুষের ভিড় ঠেলে ভরা হাটের ভেতর থেকে লাশবাহী ভ্যান বেরিয়ে যায়। হাট থেকে মূল সড়কে ওঠার মুখে সিয়াম দেখতে পায়, জাকির রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে কাঁদছে। এই প্রথম জাকিরকে তার খুব আপন মনে হয়। জাকিরকে দেখে খ্যাক করে ওঠে হাফিজ, ‘তুই এখানে, দোকানে কেউ নাই? যা যা, দোকানে যা’। ভ্যান রাস্তায় উঠে চলতে থাকে।
ভ্যানের ওপরে বাবার লাশ বাঁধা রশির একটা প্রান্ত ধরে বসে থাকে সিয়াম। প্রতি শনিবার হাটে এভাবে গরুর রশি ধরে কেঁদেছে সিয়াম, অনিচ্ছায় বহুদিন কান্নার অভিনয় করেছে। কিন্তু আজ তার সত্যিই খুব কাঁদতে ইচ্ছে করে। তবু কাঁদতে পারছে না। নিজের কী হয়েছে কিছুই বুঝতে পারে না সে। বাড়ি গিয়ে মাকে কী বলবে, ছোট ভাইকে কী বলবে, কোনো কিছুই ঠিক করতে পারে না সিয়াম।
হাফিজ ভ্যানচালককে তাড়া দিয়ে বলে, আন্ধার হয়ে আসছে, একটু জোরে পা চালাও...। মাগরিবের নামাজ শেষ হয়েছে, চরাচরে অন্ধকার ধেয়ে আসছে। সিয়াম দেখতে থাকে, তার সামনের পথও বড় অন্ধকার, যে অন্ধকারের দিকে ক্রমশ সে তলিয়ে যাচ্ছে।

মুদির দোকানে কিছুক্ষণ বসে থাকলে একটা অদ্ভুত গন্ধ নাকে লাগে। তেলের গন্ধ, তিসির গন্ধ, ডালের গন্ধ, বস্তার গন্ধ, মালামালভর্তি কার্টনের গন্ধ। এসব গন্ধ একদম ভালো লাগে না সিয়ামের। দোকানের ভেতরে বসলে এই গন্ধে তার মাথা ধরে আসে। আজও মাথাটা ধরেছে। কিন্তু এখন সেই গন্ধ থেকে কীভাবে মনোযোগ সরাবে, তা বসে বসে ভাবতে থাকে সে। দোকানের পেছন দিকের র্যাকের নিচে বড় একটি মাকড়সা জালে আটকা পড়েছে। তাই দেখে মজা লাগে সিয়ামের। জালে আটকানো মাকড়সার দিকে তাকিয়ে দেখতে থাকে, কীভাবে মাকড়সাটা জাল কেটে বেরিয়ে যাচ্ছে।
চণ্ডীপুর বাজারের এই হাফিজ স্টোরে সিয়ামের বয়সী একটি ছেলেও কাজ করে। ওর নাম জাকির। বাজারের প্রায় সব দোকানেই এ রকম একটি করে ছেলে আছে। সিয়ামের সঙ্গে জাকিরের তেমন ভাব নেই। জাকিরের আদবকেতা সিয়ামের পছন্দ না। জাকির কোনো খদ্দেরকে স্যার ডাকে না। গত ঈদের ছুটিতে নাটোরে মামার বাড়িতে গিয়ে সিয়াম দেখে এসেছে, কেউ জিনিস কিনতে এলে দোকানের ছেলেরা তাদের স্যার ডাকে। ফিরে এসে সে কথা জাকিরকে বলেছে। জাকির তার কথা বিশ্বাস করেনি। উল্টো বলেছে, যারা জিনিস কিনতে আসে, তারা কি স্কুলের মাস্টার? জাকির সারা দিন দোকানের ভেতরে স্যান্ডো গেঞ্জি পরে বসে থাকে, সেটাও সিয়ামের পছন্দ না। তা ছাড়া জাকির ব্র্যাকের স্কুলে ভর্তি হয়ে পালিয়ে এসেছে। এখন সারা দিন দোকানেই কাজ করে।
সুবাস মলম কোম্পানির একজন বিক্রয় প্রতিনিধি এসেছে বাজারে। তাকে নিয়ে ব্যস্ত হাফিজ স্টোরের মালিক হাফিজ উদ্দিন। আগেরবারের পাওনা নিয়ে হিসাব-নিকাশ করছে। হাফিজের টাকা গোনা দেখে স্কুলের মজিদ স্যারের কথা মনে পড়ে সিয়ামের। স্যার একদিন ক্লাসে ‘আমি যদি কোটিপতি হতাম’ রচনা লিখতে দিয়েছিলেন সবাইকে। তাতে সবাই অকাতরে মিথ্যা কথা উগরে দিয়েছিল। সিয়ামের এক বন্ধু মজা করে বলেছিল, এক কোটি টাকা হাতে পেলে সে সব টাকা মানুষকে দান করে বান্দরবানে গুহাবাসী হবে। তাই নিয়ে ক্লাসে কত হাসাহাসি। আরেক বন্ধু স্যারকে বলেছিল, ‘আমি যদি কোটিপতি হতাম’-এর বদলে ‘কোটিপতি হওয়ার সহজ উপায়’ লিখে দিয়েছে সে। তাই শুনে স্যার খেপে গিয়ে বলেছিলেন, ‘ব্যাটা, রবীন্দ্রনাথ হয়েছ, বেতায়ে পাছার ছাল তুলে দেব।’
মলম কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধির হাতে খান পাঁচেক ক্যালেন্ডার। সেগুলোর একটি হাফিজের হাতে দিয়ে চলে গেল। হাফিজ ক্যালেন্ডারটি জাকিরকে দিয়ে বলল, র্যাকে ঝুলায় দে। জাকির সেটা হাতে নিয়ে খুলে ধরে। এক পাতার বাংলা ক্যালেন্ডার। দুটি পাখি ঠোঁট ছুঁয়ে আছে, পেছনে দিগন্তবিস্তৃত ধানখেত। সিয়াম ক্যালেন্ডারটা দেখতে চায়। কিন্তু জাকির তাকে দেখতে না দিয়ে দোকানের মাঝের একটি র্যাকে ঝুলিয়ে দেয়।
হাফিজ স্টোরে সিয়ামের বসে থাকা দেড় ঘণ্টা হয়ে গেছে। আরও অনেক সময় থাকতে হবে। এতক্ষণ দোকানে বসে থাকতে তার একদম ভালো লাগে না। তবু প্রতি শনিবার তাকে এভাবে এই দোকানে বসে অপেক্ষা করতে হয়। সিয়ামের এই কাজ নিয়ে বন্ধুরা ঠাট্টা-তামাশা করে। দালালের বাচ্চা দালাল। তোর বাপ বড় দালাল আর তুই ছোট দালাল। দালাল শব্দটি শুনে খুব মন খারাপ হয় সিয়ামের।
চণ্ডীপুর বাজারে প্রতি শনিবার গরুর হাট বসে। সিয়ামের বাবা আলিম উদ্দিন সেই হাটে গরু কেনাবেচার দালাল। সিয়ামের কাজ গরু কেনাবেচায় বাবাকে সাহায্য করা। গত শনিবারও গরুর হাট বসেছিল, সিয়াম হাটে আসেনি। বাবা হাট থেকে বাড়ি ফিরে অনেক বকাঝকা করেছে। মায়ের কাছে বলেছে, সিয়াম হাটে থাকলে টাকা আরও বেশি হতো।
সিয়ামের বাবা আলিম উদ্দিন আগে পুঠিয়ার একটি সেমাই কারখানায় কাজ করত। করোনার কারণে কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর দুই বছর ধরে নানা চেষ্টা-তদবির করেও কাজ জোটেনি। পরে গরু কেনাবেচাকে পেশা হিসেবে নিয়েছে। গ্রামের লোকেরা তাকে গরুর দালাল বলে তামাশা করে। তাতে কোনো রা করে না আলিম উদ্দিন; বরং অন্যের মুখের ওপর শুনিয়ে দেয়, ‘কাজ করে খাই, চুরি তো করি না।’
আলিমের দুটোই ছেলে। ছোটটি কোলের। সিয়াম বড়, সে এইটে পড়ে। এমনিতে স্কুলে তার পড়াশোনায় অনেক চাপ। তার পরও প্রতি শনিবার বাবার সঙ্গে হাটে আসতে হয়। শনিবারের টিফিনের পর একটা ক্লাস থাকে। সেই ক্লাস করা হয় না সিয়ামের। প্রতিবারই ক্লাস ফাঁকি দিয়ে তাকে হাটে আসতে হয়।
হাটের এই মুদিদোকানি হাফিজ উদ্দিন সিয়ামের বাবার বন্ধু। ছেলে স্কুল থেকে এসে যাতে কিছু সময় অপেক্ষা করতে পারে, সে জন্য হাফিজকে বলে দিয়েছে সিয়ামের বাবা। সিয়াম এখন স্কুল থেকে সোজা হাটে এসে হাফিজের দোকানে বসে বাবার জন্য অপেক্ষা করে।
আজ সিয়ামের টিফিনের পরে অঙ্কের ক্লাস ছিল। অঙ্কের শিক্ষক শাহজাহান আলী খুবই কড়া। অঙ্ক না পারলে পরের দিন ক্লাসে দাঁড় করিয়ে রাখবেন। সিয়ামের আজ হাটে আসার কোনো ইচ্ছে ছিল না, কিন্তু মা বারবার সিয়ামকে বলে দিয়েছে, তার বাবার শরীরটা খুব খারাপ। বুকে ব্যথা করছে দুদিন ধরে। সিয়াম হাটে গেলে বাবাকে সাহায্য করার পাশাপাশি দেখাশোনা করতে পারবে। বাবার শরীর খারাপের কথা সিয়ামের কাছে অঙ্কের না মেলা সূত্রের মতো বড় গোলমেলে লাগে।
সকালে স্কুলে আসার সময় বাবাকে বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখেছে সিয়াম। বাবা এ সময় কখনো শুয়ে থাকে না। সিয়ামকে মা বলেছিল, ‘তোর বাপের শরীরডা খুব খারাপ।’ সিয়াম এ কথা শুনে প্রথমে খুশিই হয়েছিল; ভেবেছিল, আজ তাকে হাটে যেতে হবে না। হাটের এই কাজটা সিয়ামের একদম পছন্দ না। কিন্তু সেটা কখনো কারও কাছে বলেনি, মায়ের কাছেও না। বাবার কথামতো কাজটা খুব গোপনে করে সিয়াম। বাবা-ছেলের এই গোপন চুক্তি যাতে ফাঁস না হয়, সে ব্যাপারে সিয়ামও বেশ সতর্ক।
গরুর হাটের দিনে বেশির ভাগ সময় সিয়াম হাফিজের দোকানে বসে থাকে। শুধু দরকার হলেই বাবা তাকে ডেকে পাঠায়। এরপর সিয়াম হাটের ভেতরে ঢুকে যায়। হাটের ভেতরে তার কাজও খুব সামান্য। তবে কাজটা বড় অদ্ভুত। অবশ্য সব হাটবারে তাকে এ কাজ করতেও হয় না।
গরুর হাটে দুই ধরনের ক্রেতা আসে। বেশির ভাগ ক্রেতা আসে ঢাকাসহ বিভিন্ন মোকাম থেকে। তারা ট্রাক সঙ্গে নিয়ে আসে। এরা গরুর বড় ব্যাপারী। গরু কিনে তারা ট্রাকে করে ঢাকায় নিয়ে যায়। আর আসে গেরস্ত ধরনের ক্রেতা। তারা গরু কেনে কোরবানি দেওয়া বা বাড়িতে রাখার জন্য। গরুর ব্যাপারীদের চোখ থাকে সীমান্তের ওপার থেকে আসা ভারতীয় বড় আকৃতির গরুর দিকে। সরাসরি করিডর থেকে এসব গরু হাটে আসে। মাংস ব্যবসায়ীদের জন্য করিডরের গরুতে পড়তা বেশি। কিন্তু যারা কোরবানি দেওয়া বা বাড়িতে রাখার জন্য গরু কেনে, তাদের চোখ থাকে গেরস্ত বাড়ির দেশি গরুর দিকে। এসব গরুর দামও তুলনামূলক বেশি। কাজেই সীমান্তের ওপার থেকে আনা ছোট গরুকে দেশি গরু বলে চালালেই লাভ, তাতে বেশি দাম পাওয়া যাবে। গরু কেনাবেচার এই ব্যবসায় আলিম উদ্দিন এই সামান্য চালাকিটুকু করে। এতে তার বেশ লাভ হয়।
প্রথম প্রথম আলিম উদ্দিনের নিজের কাছেও কাজটা খারাপ মনে হতো। মনে মনে ভেবেছিল, এসব ছেড়ে দেবে। কিন্তু খবরের কাগজে দেখেছে, কত মানুষ ব্যাংকের টাকা মেরে দিয়ে বিদেশে বাড়ি-গাড়ি করে আরামে আছে। অভাবের সংসারে এই সামান্য চালাকিকে বড় কোনো পাপ মনে হয়নি তার। তার চেয়ে লাভ বাড়াতে সিয়ামকেও এ কাজে নামিয়েছে। এখন বেশ ভালোই চলছে। মাসে দু-একটা হাট না করলেও দিব্যি সংসার চলে যায়। আলিমের স্ত্রী মাবিয়া খাতুনও স্বামীর এই আয়-রোজগারে বেশ খুশি।
এখন হাটের দিন করিডরের পাইকারদের কাছ থেকে বেছে বেছে ছোট আকারের গরু কেনে আলিম উদ্দিন। তার লক্ষ্য থাকে করিডরের গরুকে যেন গেরস্তের বাড়িতে পোষা গরু বলে খদ্দেরের হাতে গছিয়ে দেওয়া যায়। এই কাজ খুব সতর্কতার সঙ্গে করে আলিম, যাতে কেউ সন্দেহ না করে। আবার খুব চেনা লোক হলেও এসব কাজ করা যায় না। সে জন্য ক্রেতা এলে সব বুঝেশুনে ছেলেকে দরকারমতো কাজে লাগায় আলিম উদ্দিন। শুধু অচেনা খদ্দের হাটে এলেই এই সামান্য চালাকিটা করে সে।
গত শনিবারও হাটে এ রকম দুটি বকনা গরু বিক্রি করেছে আলিম। কপাল ভালো ছিল। দুজন খদ্দেরই অচেনা। সব বাদ দিয়েও ৪ হাজার করে লাভ হয়েছে। হাট শেষে হাফিজের দোকানে সদাই করে সিয়ামকে সঙ্গে করে বাড়ি ফিরেছে আলিম উদ্দিন।
সেদিনও সিয়াম আগের মতো হাফিজের দোকানে বসে ছিল। খদ্দেরের সঙ্গে দামদর ঠিক হওয়ার উপক্রম হতেই হাফিজের ফোনে মিসড কল দিয়েছে আলিম। হাফিজের ইশারা পেয়ে হাটের ভেতরে চলে যায় সিয়াম। সিয়ামের কাজ হলো বিক্রি হওয়ার আগেই গরুর রশি ধরে কান্নাকাটি করা। কথা যা বলার আলিমই বলে। সিয়াম শুধু গরুর রশি ধরে নীরবে কাঁদতে থাকে। আলিম খদ্দেরদের কাছে ছেলের কান্নার বিশদ বিবরণ দেয়। বলে, গেরস্তের বাড়ির গরু সন্তান ছাড়া কিছুই না। সন্তানের মতো সেই গরু বাড়িতে লালন-পালন করা হয়েছে। বাড়ির সবার মতো তার ছোট ছেলেটারও গরুর প্রতি মায়া পড়েছে। সেই গরু বিক্রি করা হচ্ছে বলে স্কুল থেকে দৌড়ে হাটে এসেছে। খদ্দেরকে দেখিয়ে বলে, দেখেন ভাই, গরুটা বেচা হচ্ছে দেখে ছেলেটা কেমন কান্নাকাটি করছে। এতে ক্রেতার মন গলতে থাকে। কেউ কেউ বলে, এত ছোট বাচ্চা ছেলেকে কষ্ট দিয়ে গরু বেচবেন কেন? বাড়ির পোষা গরু বাড়িতেই নিয়ে যান। কিন্তু আলিম উদ্দিনের সেই এক জবাব, ভাই, অভাবের সংসার। গরু না বেচলে চলবে কী করে? আলিমের আচরণ এমন যে নিতান্তই অভাবে পড়ে এই গরু হাটে তুলেছে। দরকার হলে গৃহিণীর প্রসঙ্গও টেনে আনা হয়। বউয়ের ইচ্ছা ছিল পোষা গরু নিজের হাতে কোরবানি দেবে। কিন্তু বেচতে হচ্ছে অভাবের কারণে। সিয়ামকে খুব বেশিক্ষণ কান্নাকাটির অভিনয় করতে হয় না। আলিম এই সময়ে ছেলেকে বুঝ মানানোর নানা চেষ্টার অভিনয় করে। এরপর তাকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে এমন ভান করে। সিয়ামকে সব আগে থেকে শেখানো আছে। সে-ও গরুর রশি ছেড়ে সহজে যেতে চায় না। কখনো কখনো গরুর গলা জড়িয়ে ধরে আদর করার ভান করে। তবে গরুর গলা জড়িয়ে ধরা সিয়ামের ভালোই লাগে। গরু বেয়াড়া হলে একটু সমস্যা হয়। একবার এক গরু তাকে শিং দিয়ে গুঁতো দিয়েছিল। পায়ের সেই দাগ এখনো মেলেনি।
এই সামান্য অভিনয় করার ক্ষেত্রেও এত দিনে বাবার সব ইশারা বুঝে গেছে সিয়াম। খদ্দেরের মন গলছে বুঝতে পারলেই ছেলেকে ইশারা করে আলিম উদ্দিন। সেই ইশারা পেয়ে বাধ্য ছেলের মতো হাটের ভেতর থেকে আস্তে করে চলে আসে সিয়াম। আলিমের কাছে ছেলের এই অভিনয়টুকুর অনেক দাম। ক্রেতারা মনে করে, এটা সত্যিই গেরস্তের বাড়ির পোষা গরু। তখন দাম নিয়ে আর কোনো সমস্যা হয় না। বাগে ফেলতে পারলে ক্রেতার কাছ থেকে বাড়তি ৪-৫ হাজার টাকাও আদায় করা যায়।
সিয়াম একবার বাবার কাছে বলেছিল, তার মনে হয়েছে, এই কাজটা ঠিক হচ্ছে না। আলিম ছেলের ওপর রাগ না করে বলেছে, বড়লোকেরা কত রকম অন্যায় করে, জানিস? সে তুলনায় এটা কোনো অন্যায়ই না। ছেলের মন রাখতে নতুন জামা কিনে দেওয়ার কথাও তুলেছিল আলিম। সিয়ামও আর কথা বাড়ায়নি।
হাটের ভেতরের এই অভিনয়টুকু শেষ হওয়ার পর সিয়ামকে আবার অপেক্ষা করতে হয় হাফিজের দোকানে। গরু কেনাবেচা শেষ হলে আলিম ফিরে আসে হাফিজের মুদিদোকানে। সংসারের জন্য সদাইপাতি নিয়ে ছেলেসমেত বাড়ি ফেরে। সিয়ামের মাঝেমধ্যে নানা জিনিসের আবদার থাকে। বাড়িতে তার ছোট ভাই আছে। দুই ভাইয়ের জন্য সবই কিনে দেয় আলিম। গেল হাটে আবুলের দোকানের গরম জিলাপি চেয়েছিল সিয়াম। বাড়িতে যাওয়ার পর মা সেই জিলাপি দেখে অনেক খুশি। হাটের গুড়ের জিলাপি তারও ভারি পছন্দের।
আজ দোকানে বসে থাকতে সিয়ামের আর ভালো লাগছে না। অনেক সময় হয়েছে, কিন্তু হাটের ভেতর থেকে কোনো ডাক আসেনি। দোকানি হাফিজের মাথায়ও বিষয়টা ঢুকেছে। হাফিজ একবার সিয়ামকে বলেছে, ‘আজ কী হইছে রে, মিস কল আসে না যে!’ সিয়াম কিছু বলেনি। তার একবার ইচ্ছে করছে হাটের ভেতরে গিয়ে দেখে আসার। কিন্তু বাবার কড়া বারণ আছে, না ডাকলে যাওয়া যাবে না।
সিয়াম অপেক্ষা করতে থাকে, কিন্তু তার মনটা ছটফট করে। মা বলেছিল, তোর বাবার শরীরটা ভালো না। বুকের বাঁ দিকে দুদিন ধরে চিনচিন করছে। মায়ের কথা খুব মনে পড়ে সিয়ামের। হাফিজ একবার সিয়ামকে বলেছে, ‘চিন্তা করিস না। পেচ্ছাব লাগলে হাটের ভেতরটাও ঘুরে আসব।’ তবু সিয়াম বাবার মিসড কলের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।
বেলা পড়ে গেলেই গরুর হাটের কেনাবেচা শেষ হয়। এখন প্রায় সন্ধ্যা। একটু পরে আজান হবে। তবু হাট শেষ হচ্ছে না। সিয়ামের কাছে সবকিছু বিরক্তিকর লাগে। সে দোকানের ভেতর থেকে বাইরে আসে। হাটের দিকে উঁকি দিতেই একজনকে দৌড়ে আসতে দেখে। ঝড়ের বেগে আসা লোকটা হাফিজকে বলে, ‘তোর বন্ধু হাটের মধ্যে ফিট হয়ে গ্যাছে, আমি ডাক্তার নিয়ে আসি।’ মুহূর্তে হাফিজের মুখ শুকিয়ে যায়। ‘এই সিয়াম আয় তো’—বলেই সিয়ামের হাতে জোরে টান মেরে হাটের দিকে দৌড়াতে থাকে। সিয়াম কিছু না বুঝেই হাফিজের পিছে দৌড় দেয়।
হাটের ভেতরে অনেক মানুষের ভিড়। হাটের ইজারাদার যেখানে বসে হাসিল আদায় করে, সেই চরাটের ওপরে একজনকে শোয়ানো। চারপাশে অনেক মানুষ। হাফিজ ভিড় ঠেলে এগিয়ে যায়। সিয়ামকে টেনে ভেতরে নিয়ে বলে, ‘দেখ তো, বাপের কী হইছে’। সিয়াম কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। তাকিয়ে দেখে, তার বাবা নীরব-নিস্তব্ধ হয়ে শুয়ে আছে। সিয়াম আব্বা আব্বা বলে ডাকে, কোনো সাড়া মেলে না।
একটু পরে ‘সরো সরো’ বলে হাটের ভেতর থেকে এগিয়ে আসেন পল্লিচিকিৎসক ফজলু মিয়া। সবাইকে সরতে বলে আলিমের বাঁ হাত একটু উঁচু করে ধরেন ফজলু। কিছুক্ষণ পালস বোঝার চেষ্টা করেন। স্টেথিস্কোপটা বুকের ওপর ঠেসে ধরেন। কয়েক মিনিট নীরব থেকে বলে ওঠেন, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। সঙ্গে সঙ্গে শোরগোল পড়ে যায়। ‘ও আল্লা রে...’ বলে সিয়ামকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে হাফিজ। সেই কান্না সংক্রমিত হয় হাটের লোকেদের মধ্যে। সিয়াম অবাক হয়ে হাফিজের দিকে তাকিয়ে থাকে। সে কিছুই বুঝতে পারে না।
সিয়াম জানে না, এরপর কী হবে। শুয়ে থাকা লোকটি ঘিরে হাটের মানুষের ভিড় বাড়তেই থাকে। সবাই বলতে থাকে, আলিম দালাল মারা গেছে। এভাবে বেশ কিছু সময় চলে যায়। ইজারাদার আরিফ উদ্দিন একটু পরে এসে হাফিজকে ফাঁকে ডেকে নেয়। আস্তে আস্তে বলে, লাশটি বাড়ি নিয়ে যাও, হাটে বিদেশি ব্যাপারী আছে। এই বলে সে একজনকে হাঁক দিয়ে বলে, ‘এই মফিজ, একটা ভ্যান ডাক’। একটু পরে তিন চাকার একটি ভ্যান নিয়ে আসে মফিজ। সবাই ধরাধরি করে আলিমের মৃতদেহ সেই ভ্যানে তুলে দেয়। ইজারাদার হাফিজকে বলে, সে তো তোমার বন্ধু, ছেলেটাকে নিয়ে ভ্যানের সামনে বসো। এরপর সিয়ামের হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে বলে, ‘বাবা, এই টাকাটা মায়ের হাতে দিয়ো।’ ইজারাদার ভ্যানচালককে ধমক দিয়ে বলে, ‘লাশটায় একটু বান্ধন দাও, রাস্তা খারাপ তো।’ ইজারাদারের ধমক খেয়ে ভ্যানচালক রশির এক মাথায় একটি প্যাঁচ দিয়ে সিয়ামকে বলে, বাবা, রশির এই মাথাটা শক্ত করে ধরো।
শত শত মানুষের ভিড় ঠেলে ভরা হাটের ভেতর থেকে লাশবাহী ভ্যান বেরিয়ে যায়। হাট থেকে মূল সড়কে ওঠার মুখে সিয়াম দেখতে পায়, জাকির রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে কাঁদছে। এই প্রথম জাকিরকে তার খুব আপন মনে হয়। জাকিরকে দেখে খ্যাক করে ওঠে হাফিজ, ‘তুই এখানে, দোকানে কেউ নাই? যা যা, দোকানে যা’। ভ্যান রাস্তায় উঠে চলতে থাকে।
ভ্যানের ওপরে বাবার লাশ বাঁধা রশির একটা প্রান্ত ধরে বসে থাকে সিয়াম। প্রতি শনিবার হাটে এভাবে গরুর রশি ধরে কেঁদেছে সিয়াম, অনিচ্ছায় বহুদিন কান্নার অভিনয় করেছে। কিন্তু আজ তার সত্যিই খুব কাঁদতে ইচ্ছে করে। তবু কাঁদতে পারছে না। নিজের কী হয়েছে কিছুই বুঝতে পারে না সে। বাড়ি গিয়ে মাকে কী বলবে, ছোট ভাইকে কী বলবে, কোনো কিছুই ঠিক করতে পারে না সিয়াম।
হাফিজ ভ্যানচালককে তাড়া দিয়ে বলে, আন্ধার হয়ে আসছে, একটু জোরে পা চালাও...। মাগরিবের নামাজ শেষ হয়েছে, চরাচরে অন্ধকার ধেয়ে আসছে। সিয়াম দেখতে থাকে, তার সামনের পথও বড় অন্ধকার, যে অন্ধকারের দিকে ক্রমশ সে তলিয়ে যাচ্ছে।

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫তৌহিদুল হক

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

চণ্ডীপুর বাজারের এই হাফিজ স্টোরে সিয়ামের বয়সী একটি ছেলেও কাজ করে। ওর নাম জাকির। বাজারের প্রায় সব দোকানেই এ রকম একটি করে ছেলে আছে। সিয়ামের সঙ্গে জাকিরের তেমন ভাব নেই। জাকিরের আদবকেতা সিয়ামের পছন্দ না। জাকির কোনো খদ্দেরকে স্যার ডাকে না। গত ঈদের ছুটিতে নাটোরে মামার বাড়িতে গিয়ে সিয়াম দেখে এসেছে, কেউ জিন
০২ সেপ্টেম্বর ২০২২
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

চণ্ডীপুর বাজারের এই হাফিজ স্টোরে সিয়ামের বয়সী একটি ছেলেও কাজ করে। ওর নাম জাকির। বাজারের প্রায় সব দোকানেই এ রকম একটি করে ছেলে আছে। সিয়ামের সঙ্গে জাকিরের তেমন ভাব নেই। জাকিরের আদবকেতা সিয়ামের পছন্দ না। জাকির কোনো খদ্দেরকে স্যার ডাকে না। গত ঈদের ছুটিতে নাটোরে মামার বাড়িতে গিয়ে সিয়াম দেখে এসেছে, কেউ জিন
০২ সেপ্টেম্বর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

চণ্ডীপুর বাজারের এই হাফিজ স্টোরে সিয়ামের বয়সী একটি ছেলেও কাজ করে। ওর নাম জাকির। বাজারের প্রায় সব দোকানেই এ রকম একটি করে ছেলে আছে। সিয়ামের সঙ্গে জাকিরের তেমন ভাব নেই। জাকিরের আদবকেতা সিয়ামের পছন্দ না। জাকির কোনো খদ্দেরকে স্যার ডাকে না। গত ঈদের ছুটিতে নাটোরে মামার বাড়িতে গিয়ে সিয়াম দেখে এসেছে, কেউ জিন
০২ সেপ্টেম্বর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫আজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

চণ্ডীপুর বাজারের এই হাফিজ স্টোরে সিয়ামের বয়সী একটি ছেলেও কাজ করে। ওর নাম জাকির। বাজারের প্রায় সব দোকানেই এ রকম একটি করে ছেলে আছে। সিয়ামের সঙ্গে জাকিরের তেমন ভাব নেই। জাকিরের আদবকেতা সিয়ামের পছন্দ না। জাকির কোনো খদ্দেরকে স্যার ডাকে না। গত ঈদের ছুটিতে নাটোরে মামার বাড়িতে গিয়ে সিয়াম দেখে এসেছে, কেউ জিন
০২ সেপ্টেম্বর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫