মহিউদ্দীন আহমেদ

মহিউদ্দীন আহমেদের গল্প ‘ট্রিপল নাইন’
দরজা কিঞ্চিৎ খুলে পাঁচ টাকার একটি কয়েন ভিক্ষুকের উদ্দেশে বাড়িয়ে ধরতেই ওপাশ থেকে কেউ একজন লামিসার হাত টেনে ধরে। প্রচণ্ড ভয় ও ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠে লামিসা। নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বটে, কিন্তু ব্যর্থ হয়। তখন বাইরে থেকে ভিক্ষুকরূপী আগন্তুক ধাক্কা মেরে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়ে।
আকিব! লামিসা বিস্ফারিত চোখে আকিবের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘তুমি!’
আকিব বলে, ‘হ্যাঁ আমি। দেখতে এলাম তুমি কেমন সুখে আছ।’
লামিসা বলে, ‘তুমি কেন এসেছ? কেউ দেখে ফেললে আমার সর্বনাশ হয়ে যাবে। প্লিজ তুমি চলে যাও।’
আকিব বলে, ‘যাব তো অবশ্যই। তার আগে তোমার সুখের সংসারে আগুন জ্বালিয়ে যাব।’
লামিসা অসহায় দৃষ্টিতে আকিবের দিকে তাকিয়ে থাকে।
আকিব বলে, ‘কী হলো? থামলে কেন? জানতে চাও, কেন তোমার সংসারে আগুন জ্বালাব?’
লামিসা বলে, ‘এসব করে তোমার লাভ কী?’
‘আমি লাভ-ক্ষতির ঊর্ধ্বে আছি। এসব হিসাব করা তোমাদের মতো লোভী মেয়েদের কাজ। আমার সাথে এসব যায় না।’
‘আমি কীভাবে লোভী হলাম?’
‘সে ব্যাখ্যাও দিতে হবে? ঠিক আছে দিচ্ছি।’ দেয়ালে টানানো লামিসা-অন্তুর যুগল ছবির দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে আকিব বলে, ‘আমার সঙ্গে রিলেশন থাকা অবস্থায় তুমি এই অন্তু ভদ্রলোককে বিয়ে করেছ। কারণ, আমার চাকরি-বাকরি নেই। কিন্তু এই ভদ্রলোক বুয়েটের শিক্ষক। লোভী না হলে এমন কাজ কেউ করে?’
‘ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছ আকিব। আমি বিয়ে করিনি। আমার মা-বাবা আমাকে বিয়ে দিয়েছে।’
‘বাহ! কি সহজ উত্তর! তুমি বিয়ে করোনি। তোমার মা-বাবা তোমাকে জোর করে তার সঙ্গে বিয়ে দিয়েছে, এটাও বলো?’
‘যতটুকু সত্যি ততটুকুই বলেছি। আর মনে করে দেখ, বিয়ের আগে আমি তোমাকে সব বলেছিলাম। আমার বাবার কাছে প্রস্তাব পাঠাতে বলেছিলাম।’
‘প্রস্তাব কি পাঠাইনি? তোমার বাবা আমার বাবাকে অপমান করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল। ভুলে গেছ?’
‘না। সব মনে আছে। কিন্তু তখন আমার কী করার ছিল?’
‘তোমাকে আমি পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করতে বলেছিলাম।’
‘হ্যাঁ বলেছিলে। তখন আমি কী বলেছিলাম? বলেছিলাম, পালিয়ে বিয়ে করার মতো সাহস আমার নেই।’
‘তা থাকবে কেন? পালিয়ে গেলে কি এখন এমন সুন্দর বাসায় থাকতে পারতে? না। থাকতে হতো ভাঙা ঘরে। এক বেলা খাবার জুটত। অন্য বেলা জুটত না। এসব ভেবেই কবুল বলেছ। তোমার মতো লোভী আর স্বার্থপর মেয়েরাই কেবল এমনটা করতে পারে। কিন্তু যাদের মনে প্রেম আছে, যারা সত্যিকারে কাউকে ভালোবাসে, তারা এমনটা করতে পারে না।’
‘ঠিক আছে। আমি লোভী। আমি স্বার্থপর। আর কী বলবে, বলো?’
‘না। আর কিছু বলব না। অনেক বলেছি। এখন কিছু করব। তুমি চেয়ে চেয়ে দেখবে।’
দেয়ালে টানানো লামিসা-অন্তুর ছবিটা খুলে ছুড়ে মারে আকিব। প্রচণ্ড শব্দে সেটি ভেঙে খান খান হয়ে যায়। ফটোফ্রেম থেকে খুলে ছবিটা হাতে নেয় আকিব। পকেট থেকে গ্যাস লাইটার বের করে। আগুন ধরিয়ে দেয় ছবিটার এক কোনায়। ছবিটা পুড়ে ছাই হয়ে ঝরে পড়ে ফ্লোরে।
কাঁদতে থাকে লামিসা। থরথর করে কাঁপতে থাকে। নিজের অজান্তে ঝরা ফুলের মতো চুপটি করে বসে পড়ে সোফায়।
আকিব তেড়ে যায় লামিসার দিকে। তার কাঁধে দুহাত দিয়ে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দিয়ে বলে, ‘আমি একটা ছবি পোড়ালাম মাত্র। আর তুমি কী করেছ? আমার হৃদয় পুড়িয়েছ। আমি প্রতিদিন জ্বলছি। সারা জীবন জ্বলব।’
লামিসা ভয়ার্ত চোখে আকিবের দিকে তাকিয়ে থাকে।
‘কথা বলো। আমার হৃদয়ে তুমি আগুন জ্বালিয়ে দাওনি? উত্তর দাও?’
লামিসা আকিবের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। কিছু বলতে পারে না।
আকিব বলে, ‘আমি পুড়ে ছাই হয়ে গেছি। আমি খেতে পারি না, ঘুমাতে পারি না। চিন্তা করতে পারি না। আমার রাত-দিন সমান হয়ে গেছে। তুমি কি বুঝতে পারো, আমি কতটা যন্ত্রণার মধ্যে আছি? অথচ দাখো, তুমি দিব্বি সুখের জীবন কাটাচ্ছ।’
লামিসা উঠে দাঁড়ায়। আকিবের কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে। বলে, ‘না আকিব। তুমি যা ভাবছ, তা নয়। আমি সুখে নেই। বিশ্বাস করো, প্রতিটা মুহূর্ত তোমার কথা আমার মনে পড়ে। প্রতিটা মুহূর্ত আমি তোমার কথা ভাবি। হ্যাঁ, তুমি ঠিকই বলেছ। আমি স্বার্থপর। স্বার্থপর বলেই তো বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু রাজি হওয়ার আগে কী হয়েছিল তা কি জানো? জানো না। আমি আমার বাবার মুখের ওপর কথা বলেছিলাম। বলেছিলাম এ বিয়েতে আমি রাজি নই। তখন আমার বাবার হার্ট স্ট্রোক হয়েছিল। হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল তাকে। তুমিই বলো, এই পরিস্থিতিতে আমি আর কী করতে পারতাম?’
‘এসব ফিল্মি কাহিনি শুনে আমার লাভ নেই। যদি সত্যিই আমার কথা তোমার মনে পড়ে, যদি সত্যিই আমাকে ভালোবাসো তাহলে এক্ষুনি চলো আমার সাথে। আমরা এই শহর ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাব। কেউ আমাদের খুঁজে পাবে না।’
‘না। সেটা আর সম্ভব নয়।’
‘প্রমাণ হলো তো তুমি স্বার্থপর? আসলে তুমি এই সুখের সংসার রেখে কোথাও যাবে না।’
‘তুমি বুঝতে পারছ না আকিব। তোমার মাথা ঠিক নেই।’
‘হ্যাঁ, আমার মাথা ঠিক নেই। তুমি আমার মাথা ঠিক থাকতে দাওনি। তুমি প্রতিদিন ঘুমাও। আমি কি ঘুমাই? তুমি প্রতিদিন স্বামীর সাথে বসে চা খাও। আমি কি চা খাই?’
‘আমি সবকিছুর জন্য তোমার কাছে ক্ষমা চাই আকিব। তুমি এখন যাও। দোহাই তোমার। একটু পরেই ও চলে আসবে। এসে যদি তোমাকে দেখে তাহলে খুব কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।’
‘সে জন্যই তো আমি অপেক্ষা করছি। তোমার জামাইয়ের সাথে দেখা না করে যাব মনে করেছ? তোমাদের ছবিতে আগুন দিয়েছি সেটা তুমি অনায়াসে গোপন করে ফেলতে পারবে। কিন্তু তোমার জামাইয়ের সাথে দেখা হলে সব প্রকাশ পেয়ে যাবে। কিছুই আর গোপন থাকবে না।’
‘কেমন কথা বলছ তুমি? যাকে তুমি ভালোবাস তাকেই বিপদে ফেলতে চাইছ, এই নাকি তোমার ভালোবাসার নমুনা? এটা তো ভালোবাসা নয়। এটা হলো প্রতিশোধ।’
‘প্রতিশোধ হলে প্রতিশোধ।’—বলে সোফায় বসে পড়ে আকিব। তারপর বলে, ‘পানি খাব। পানি দাও।’
লামিসা এক গ্লাস পানি এনে দেয়।
আকিব ঢকঢক করে পানি খেয়ে গ্লাস ফেরত দেয়।
লামিসা বলে, ‘ফ্রিজে পায়েস আছে। খাবে?’
‘ওগুলো অন্তুদের খাবার। আকিবদের খাবার নয়।’—বলে রিমোট টিপে টিভি অন করে।
লামিসা বলে, ‘আহ কী করছ তুমি? টিভি ছাড়ছ কেন? অনেক হয়েছে। তুমি এখন যাও!’
‘বললাম না তোমার অন্তু জামাইয়ের সাথে দেখা না করে আমি যাব না।’
লামিসা আকিবের পাশে গিয়ে বসে। টিভি বন্ধ করে দেয়। তারপর বলে, ‘বুঝলাম, অন্তু তোমাকে দেখলে সত্যি সত্যি আমার সংসারে আগুন লাগবে। আমার সংসার পুড়ে যাবে। তাতে তোমার কী লাভটা হবে, বলো?’
‘আমার অনেক লাভ হবে। যা আমার ছিল আমি তা আবার ফিরে পাব। তুমি আমার হবে। একটুও কি বুঝতে পারছ না তোমাকে ছাড়া আমি কেমন আছি?’
‘মনে মনে আমি এখনো তোমারই আছি।’
‘মনে মনে থাকার কোনো বেইল নেই। তুমি যে আমার আছ সেটা আমি বাস্তবে দেখতে চাই।’
‘ঠিক আছে। আমাকে এক দিন সময় দাও।’
‘সময় দেওয়া যাবে না। সময় দিলে তুমি সাবধান হয়ে যাবে। আমি তোমার টিকিটিরও নাগাল পাব না।’—আকিব হঠাৎ উঠে লামিসার বেডরুমের দিকে যেতে থাকে।
বেডরুমে যাওয়ার পথে লম্বা প্যাসেজ। একপাশে ফ্রিজ। অন্য পাশে জুতোর বাক্স। দুপাশের দেয়ালে সুদৃশ্য পেইন্টিং।
আকিব একটি পেইন্টিং ভাঙে। জুতার বাক্সটি লাথি মেরে ফেলে দেয়।
বেলি ফুলের সুগন্ধ ভরা লামিসার আলো-আঁধারি শোবার ঘর। আকিব আলো জ্বালে। বিছানার দিকে তাকায়। আকাশি রঙের বেডশিটের ওপর দুটি বালিশ পাশাপাশি শুয়ে আছে। যেন তারা ফিসফিস করে কথা বলছে। আকিবের চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। সে অন্তু আর লামিসাকে দেখতে পায়। অন্তু রোমান্টিক ভঙ্গিতে কী যেন বলছে। লামিসা হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে।
আকিব সহ্য করতে পারে না। সে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে একটা শোপিস ছুড়ে মারে অন্তুর দিকে। কাচের শোপিস। সেটি ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে সারা ঘরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যায়।
কাচ ভাঙার শব্দে লামিসা দৌড়ে আসে। এসে দেখে আকিব একটার পর একটা জিনিসপত্র ভেঙে চলেছে। লামিসা চিৎকার করে বলে ওঠে, ‘এসব কী করছ আকিব? তুমি কি পাগল হয়ে গেছ?’
আকিব বলে, ‘হ্যাঁ। আমি পাগল হয়ে গেছি। আমি উন্মাদ হয়ে গেছি।’
‘না আকিব, এসব বন্ধ করো। সবকিছুর একটা লিমিট থাকে। তুমি অলরেডি লিমিট ক্রস করে ফেলেছ। ইটস নট ফেয়ার।’
‘আরে কেবল তো শুরু। আরো অনেক কিছু বাকি আছে। আস্তে আস্তে সব দেখতে পাবে।’
‘তুমি এক্ষুনি আমার ঘর থেকে বেরোও।’
লামিসা ঘরে ঢুকতে গেলে আকিব তাকে বাধা দিয়ে বলে, ‘না। তুমি আসবে না।’
লামিসা বলে, ‘এটা আমার ঘর। আমি আসব না তো কে আসবে?’
‘বাড়াবাড়ি করো না লামিসা। বাড়াবাড়ি করলে তুমি কিন্তু খুন হয়ে যাবে।’
লামিসা থমকে যায়। দাঁড়িয়ে পড়ে।
আকিব বালিশ ছুড়ে মারে। বেডশিট তুলে তোশক ফেলে দেয়। পর্দা ধরে টানাটানি করে।
লামিসা ঘরে ঢোকার সাহস পায় না। সরে যায়।
যেকোনো সময় অন্তু চলে আসবে। সবকিছু জেনে যাবে। অবশ্য আকিবের ব্যাপারটা অন্তু জানে। লামিসা তাকে বলেছে। এটুকুই রক্ষা।
তাই বলে বাসার বর্তমান পরিস্থিতি কি অন্তু মেনে নিতে পারবে? কেউ পারে? এসব ভাবতে ভাবতে লামিসা মোবাইল তুলে নেয়। ৯৯৯ নাম্বারে কল করে।

মহিউদ্দীন আহমেদের গল্প ‘ট্রিপল নাইন’
দরজা কিঞ্চিৎ খুলে পাঁচ টাকার একটি কয়েন ভিক্ষুকের উদ্দেশে বাড়িয়ে ধরতেই ওপাশ থেকে কেউ একজন লামিসার হাত টেনে ধরে। প্রচণ্ড ভয় ও ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠে লামিসা। নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বটে, কিন্তু ব্যর্থ হয়। তখন বাইরে থেকে ভিক্ষুকরূপী আগন্তুক ধাক্কা মেরে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়ে।
আকিব! লামিসা বিস্ফারিত চোখে আকিবের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘তুমি!’
আকিব বলে, ‘হ্যাঁ আমি। দেখতে এলাম তুমি কেমন সুখে আছ।’
লামিসা বলে, ‘তুমি কেন এসেছ? কেউ দেখে ফেললে আমার সর্বনাশ হয়ে যাবে। প্লিজ তুমি চলে যাও।’
আকিব বলে, ‘যাব তো অবশ্যই। তার আগে তোমার সুখের সংসারে আগুন জ্বালিয়ে যাব।’
লামিসা অসহায় দৃষ্টিতে আকিবের দিকে তাকিয়ে থাকে।
আকিব বলে, ‘কী হলো? থামলে কেন? জানতে চাও, কেন তোমার সংসারে আগুন জ্বালাব?’
লামিসা বলে, ‘এসব করে তোমার লাভ কী?’
‘আমি লাভ-ক্ষতির ঊর্ধ্বে আছি। এসব হিসাব করা তোমাদের মতো লোভী মেয়েদের কাজ। আমার সাথে এসব যায় না।’
‘আমি কীভাবে লোভী হলাম?’
‘সে ব্যাখ্যাও দিতে হবে? ঠিক আছে দিচ্ছি।’ দেয়ালে টানানো লামিসা-অন্তুর যুগল ছবির দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে আকিব বলে, ‘আমার সঙ্গে রিলেশন থাকা অবস্থায় তুমি এই অন্তু ভদ্রলোককে বিয়ে করেছ। কারণ, আমার চাকরি-বাকরি নেই। কিন্তু এই ভদ্রলোক বুয়েটের শিক্ষক। লোভী না হলে এমন কাজ কেউ করে?’
‘ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছ আকিব। আমি বিয়ে করিনি। আমার মা-বাবা আমাকে বিয়ে দিয়েছে।’
‘বাহ! কি সহজ উত্তর! তুমি বিয়ে করোনি। তোমার মা-বাবা তোমাকে জোর করে তার সঙ্গে বিয়ে দিয়েছে, এটাও বলো?’
‘যতটুকু সত্যি ততটুকুই বলেছি। আর মনে করে দেখ, বিয়ের আগে আমি তোমাকে সব বলেছিলাম। আমার বাবার কাছে প্রস্তাব পাঠাতে বলেছিলাম।’
‘প্রস্তাব কি পাঠাইনি? তোমার বাবা আমার বাবাকে অপমান করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল। ভুলে গেছ?’
‘না। সব মনে আছে। কিন্তু তখন আমার কী করার ছিল?’
‘তোমাকে আমি পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করতে বলেছিলাম।’
‘হ্যাঁ বলেছিলে। তখন আমি কী বলেছিলাম? বলেছিলাম, পালিয়ে বিয়ে করার মতো সাহস আমার নেই।’
‘তা থাকবে কেন? পালিয়ে গেলে কি এখন এমন সুন্দর বাসায় থাকতে পারতে? না। থাকতে হতো ভাঙা ঘরে। এক বেলা খাবার জুটত। অন্য বেলা জুটত না। এসব ভেবেই কবুল বলেছ। তোমার মতো লোভী আর স্বার্থপর মেয়েরাই কেবল এমনটা করতে পারে। কিন্তু যাদের মনে প্রেম আছে, যারা সত্যিকারে কাউকে ভালোবাসে, তারা এমনটা করতে পারে না।’
‘ঠিক আছে। আমি লোভী। আমি স্বার্থপর। আর কী বলবে, বলো?’
‘না। আর কিছু বলব না। অনেক বলেছি। এখন কিছু করব। তুমি চেয়ে চেয়ে দেখবে।’
দেয়ালে টানানো লামিসা-অন্তুর ছবিটা খুলে ছুড়ে মারে আকিব। প্রচণ্ড শব্দে সেটি ভেঙে খান খান হয়ে যায়। ফটোফ্রেম থেকে খুলে ছবিটা হাতে নেয় আকিব। পকেট থেকে গ্যাস লাইটার বের করে। আগুন ধরিয়ে দেয় ছবিটার এক কোনায়। ছবিটা পুড়ে ছাই হয়ে ঝরে পড়ে ফ্লোরে।
কাঁদতে থাকে লামিসা। থরথর করে কাঁপতে থাকে। নিজের অজান্তে ঝরা ফুলের মতো চুপটি করে বসে পড়ে সোফায়।
আকিব তেড়ে যায় লামিসার দিকে। তার কাঁধে দুহাত দিয়ে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দিয়ে বলে, ‘আমি একটা ছবি পোড়ালাম মাত্র। আর তুমি কী করেছ? আমার হৃদয় পুড়িয়েছ। আমি প্রতিদিন জ্বলছি। সারা জীবন জ্বলব।’
লামিসা ভয়ার্ত চোখে আকিবের দিকে তাকিয়ে থাকে।
‘কথা বলো। আমার হৃদয়ে তুমি আগুন জ্বালিয়ে দাওনি? উত্তর দাও?’
লামিসা আকিবের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। কিছু বলতে পারে না।
আকিব বলে, ‘আমি পুড়ে ছাই হয়ে গেছি। আমি খেতে পারি না, ঘুমাতে পারি না। চিন্তা করতে পারি না। আমার রাত-দিন সমান হয়ে গেছে। তুমি কি বুঝতে পারো, আমি কতটা যন্ত্রণার মধ্যে আছি? অথচ দাখো, তুমি দিব্বি সুখের জীবন কাটাচ্ছ।’
লামিসা উঠে দাঁড়ায়। আকিবের কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে। বলে, ‘না আকিব। তুমি যা ভাবছ, তা নয়। আমি সুখে নেই। বিশ্বাস করো, প্রতিটা মুহূর্ত তোমার কথা আমার মনে পড়ে। প্রতিটা মুহূর্ত আমি তোমার কথা ভাবি। হ্যাঁ, তুমি ঠিকই বলেছ। আমি স্বার্থপর। স্বার্থপর বলেই তো বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু রাজি হওয়ার আগে কী হয়েছিল তা কি জানো? জানো না। আমি আমার বাবার মুখের ওপর কথা বলেছিলাম। বলেছিলাম এ বিয়েতে আমি রাজি নই। তখন আমার বাবার হার্ট স্ট্রোক হয়েছিল। হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল তাকে। তুমিই বলো, এই পরিস্থিতিতে আমি আর কী করতে পারতাম?’
‘এসব ফিল্মি কাহিনি শুনে আমার লাভ নেই। যদি সত্যিই আমার কথা তোমার মনে পড়ে, যদি সত্যিই আমাকে ভালোবাসো তাহলে এক্ষুনি চলো আমার সাথে। আমরা এই শহর ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাব। কেউ আমাদের খুঁজে পাবে না।’
‘না। সেটা আর সম্ভব নয়।’
‘প্রমাণ হলো তো তুমি স্বার্থপর? আসলে তুমি এই সুখের সংসার রেখে কোথাও যাবে না।’
‘তুমি বুঝতে পারছ না আকিব। তোমার মাথা ঠিক নেই।’
‘হ্যাঁ, আমার মাথা ঠিক নেই। তুমি আমার মাথা ঠিক থাকতে দাওনি। তুমি প্রতিদিন ঘুমাও। আমি কি ঘুমাই? তুমি প্রতিদিন স্বামীর সাথে বসে চা খাও। আমি কি চা খাই?’
‘আমি সবকিছুর জন্য তোমার কাছে ক্ষমা চাই আকিব। তুমি এখন যাও। দোহাই তোমার। একটু পরেই ও চলে আসবে। এসে যদি তোমাকে দেখে তাহলে খুব কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।’
‘সে জন্যই তো আমি অপেক্ষা করছি। তোমার জামাইয়ের সাথে দেখা না করে যাব মনে করেছ? তোমাদের ছবিতে আগুন দিয়েছি সেটা তুমি অনায়াসে গোপন করে ফেলতে পারবে। কিন্তু তোমার জামাইয়ের সাথে দেখা হলে সব প্রকাশ পেয়ে যাবে। কিছুই আর গোপন থাকবে না।’
‘কেমন কথা বলছ তুমি? যাকে তুমি ভালোবাস তাকেই বিপদে ফেলতে চাইছ, এই নাকি তোমার ভালোবাসার নমুনা? এটা তো ভালোবাসা নয়। এটা হলো প্রতিশোধ।’
‘প্রতিশোধ হলে প্রতিশোধ।’—বলে সোফায় বসে পড়ে আকিব। তারপর বলে, ‘পানি খাব। পানি দাও।’
লামিসা এক গ্লাস পানি এনে দেয়।
আকিব ঢকঢক করে পানি খেয়ে গ্লাস ফেরত দেয়।
লামিসা বলে, ‘ফ্রিজে পায়েস আছে। খাবে?’
‘ওগুলো অন্তুদের খাবার। আকিবদের খাবার নয়।’—বলে রিমোট টিপে টিভি অন করে।
লামিসা বলে, ‘আহ কী করছ তুমি? টিভি ছাড়ছ কেন? অনেক হয়েছে। তুমি এখন যাও!’
‘বললাম না তোমার অন্তু জামাইয়ের সাথে দেখা না করে আমি যাব না।’
লামিসা আকিবের পাশে গিয়ে বসে। টিভি বন্ধ করে দেয়। তারপর বলে, ‘বুঝলাম, অন্তু তোমাকে দেখলে সত্যি সত্যি আমার সংসারে আগুন লাগবে। আমার সংসার পুড়ে যাবে। তাতে তোমার কী লাভটা হবে, বলো?’
‘আমার অনেক লাভ হবে। যা আমার ছিল আমি তা আবার ফিরে পাব। তুমি আমার হবে। একটুও কি বুঝতে পারছ না তোমাকে ছাড়া আমি কেমন আছি?’
‘মনে মনে আমি এখনো তোমারই আছি।’
‘মনে মনে থাকার কোনো বেইল নেই। তুমি যে আমার আছ সেটা আমি বাস্তবে দেখতে চাই।’
‘ঠিক আছে। আমাকে এক দিন সময় দাও।’
‘সময় দেওয়া যাবে না। সময় দিলে তুমি সাবধান হয়ে যাবে। আমি তোমার টিকিটিরও নাগাল পাব না।’—আকিব হঠাৎ উঠে লামিসার বেডরুমের দিকে যেতে থাকে।
বেডরুমে যাওয়ার পথে লম্বা প্যাসেজ। একপাশে ফ্রিজ। অন্য পাশে জুতোর বাক্স। দুপাশের দেয়ালে সুদৃশ্য পেইন্টিং।
আকিব একটি পেইন্টিং ভাঙে। জুতার বাক্সটি লাথি মেরে ফেলে দেয়।
বেলি ফুলের সুগন্ধ ভরা লামিসার আলো-আঁধারি শোবার ঘর। আকিব আলো জ্বালে। বিছানার দিকে তাকায়। আকাশি রঙের বেডশিটের ওপর দুটি বালিশ পাশাপাশি শুয়ে আছে। যেন তারা ফিসফিস করে কথা বলছে। আকিবের চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। সে অন্তু আর লামিসাকে দেখতে পায়। অন্তু রোমান্টিক ভঙ্গিতে কী যেন বলছে। লামিসা হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে।
আকিব সহ্য করতে পারে না। সে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে একটা শোপিস ছুড়ে মারে অন্তুর দিকে। কাচের শোপিস। সেটি ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে সারা ঘরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যায়।
কাচ ভাঙার শব্দে লামিসা দৌড়ে আসে। এসে দেখে আকিব একটার পর একটা জিনিসপত্র ভেঙে চলেছে। লামিসা চিৎকার করে বলে ওঠে, ‘এসব কী করছ আকিব? তুমি কি পাগল হয়ে গেছ?’
আকিব বলে, ‘হ্যাঁ। আমি পাগল হয়ে গেছি। আমি উন্মাদ হয়ে গেছি।’
‘না আকিব, এসব বন্ধ করো। সবকিছুর একটা লিমিট থাকে। তুমি অলরেডি লিমিট ক্রস করে ফেলেছ। ইটস নট ফেয়ার।’
‘আরে কেবল তো শুরু। আরো অনেক কিছু বাকি আছে। আস্তে আস্তে সব দেখতে পাবে।’
‘তুমি এক্ষুনি আমার ঘর থেকে বেরোও।’
লামিসা ঘরে ঢুকতে গেলে আকিব তাকে বাধা দিয়ে বলে, ‘না। তুমি আসবে না।’
লামিসা বলে, ‘এটা আমার ঘর। আমি আসব না তো কে আসবে?’
‘বাড়াবাড়ি করো না লামিসা। বাড়াবাড়ি করলে তুমি কিন্তু খুন হয়ে যাবে।’
লামিসা থমকে যায়। দাঁড়িয়ে পড়ে।
আকিব বালিশ ছুড়ে মারে। বেডশিট তুলে তোশক ফেলে দেয়। পর্দা ধরে টানাটানি করে।
লামিসা ঘরে ঢোকার সাহস পায় না। সরে যায়।
যেকোনো সময় অন্তু চলে আসবে। সবকিছু জেনে যাবে। অবশ্য আকিবের ব্যাপারটা অন্তু জানে। লামিসা তাকে বলেছে। এটুকুই রক্ষা।
তাই বলে বাসার বর্তমান পরিস্থিতি কি অন্তু মেনে নিতে পারবে? কেউ পারে? এসব ভাবতে ভাবতে লামিসা মোবাইল তুলে নেয়। ৯৯৯ নাম্বারে কল করে।

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫তৌহিদুল হক

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

দরজা কিঞ্চিৎ খুলে পাঁচ টাকার একটি কয়েন ভিক্ষুকের উদ্দেশে বাড়িয়ে ধরতেই ওপাশ থেকে কেউ একজন লামিসার হাত টেনে ধরে। প্রচণ্ড ভয় ও ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠে লামিসা। নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বটে, কিন্তু ব্যর্থ হয়। তখন বাইরে...
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

দরজা কিঞ্চিৎ খুলে পাঁচ টাকার একটি কয়েন ভিক্ষুকের উদ্দেশে বাড়িয়ে ধরতেই ওপাশ থেকে কেউ একজন লামিসার হাত টেনে ধরে। প্রচণ্ড ভয় ও ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠে লামিসা। নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বটে, কিন্তু ব্যর্থ হয়। তখন বাইরে...
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

দরজা কিঞ্চিৎ খুলে পাঁচ টাকার একটি কয়েন ভিক্ষুকের উদ্দেশে বাড়িয়ে ধরতেই ওপাশ থেকে কেউ একজন লামিসার হাত টেনে ধরে। প্রচণ্ড ভয় ও ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠে লামিসা। নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বটে, কিন্তু ব্যর্থ হয়। তখন বাইরে...
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫আজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

দরজা কিঞ্চিৎ খুলে পাঁচ টাকার একটি কয়েন ভিক্ষুকের উদ্দেশে বাড়িয়ে ধরতেই ওপাশ থেকে কেউ একজন লামিসার হাত টেনে ধরে। প্রচণ্ড ভয় ও ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠে লামিসা। নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বটে, কিন্তু ব্যর্থ হয়। তখন বাইরে...
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫