আব্দুর রহমান

‘পশ্চিমা বিশ্বের উন্নয়নের ধারণার বিকল্প অনুসন্ধান ও নতুন ধরনের সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করে বহুপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ে তোলার’ স্লোগান নিয়ে ১৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত হলো একাদশ মস্কো আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সম্মেলন। এই সম্মেলনে অংশ নিয়ে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করে তৃতীয় দেশগুলোর ক্ষতির কথা তুলে ধরেছে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক রাজনীতির মেরুকরণ যখন অনেকটাই জটিল আকার ধারণ করেছে, তখন নির্বাচন সামনে রেখে পশ্চিমা তৎপরতার মধ্যে বাংলাদেশের এই বার্তা গুরুত্বপূর্ণ।
এই সম্মেলন নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণের পর থেকেই পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়াকে ‘একঘরে’ করার চেষ্টা করেছে। এই লক্ষ্যে তারা রাশিয়ার ওপর নানাবিধ নিষেধাজ্ঞা ও অবরোধ আরোপ করেছে। তবে এর ঠিক আগে চীনে অনুষ্ঠিত ২০২২ সালের শীতকালীন অলিম্পিকের সময় চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বেইজিং-মস্কোর সম্পর্ককে ‘সীমাহীন’ বলে ঘোষণা দেন। এরপর থেকেই দুটি দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। বিপরীতে তাইওয়ান ইস্যু এবং সেমিকন্ডাক্টর শিল্প নিয়ে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে তিক্ততা এসেছে।
এই প্রেক্ষাপটে সংগত কারণেই রাশিয়া ও চীন বহু বছর ধরেই বিশ্বব্যবস্থার নতুন মেরুকরণের কথা বলছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে উজবেকিস্তানের প্রাচীন শহর সমরখন্দে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) সম্মেলনে পুতিন সিকে বলেন, ‘পশ্চিমারা বিশ্বে এককেন্দ্রিক ব্যবস্থা চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করছে। এটা অত্যন্ত আপত্তিকর। যেকোনো দেশের বিকাশের পথে এটা বাধা।’
পুতিন আরও বলেন, ‘বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে পশ্চিমাদের নিজেদের সুরক্ষার জন্য ব্যবহার, অবৈধ নিষেধাজ্ঞা ও অর্থনৈতিক স্বার্থপরতা অত্যন্ত ভয়াবহ। তবে সুখবর হলো, পশ্চিমাদের বাইরে ক্ষমতার নতুন নতুন কেন্দ্রে গড়ে উঠছে। নতুন কেন্দ্রগুলো নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াচ্ছে।’
রুশ প্রেসিডেন্টের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, তাঁরা পশ্চিমাদের আরোপিত বিশ্বব্যবস্থা নিয়ে বিরক্ত। তাদের চাওয়া নতুন একটি ব্যবস্থা। পশ্চিমারাও চীন ও রাশিয়াকে তাদের নিরাপত্তা ও স্বার্থের জন্য হুমকি হিসেবেই বিবেচনা করছে। গত বছরের জুলাইয়ে প্রকাশিত পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সর্বশেষ কৌশলগত ধারণাপত্রে জোটটি শত্রু-প্রতিপক্ষ নির্ধারণের ক্ষেত্রে বেশ স্পষ্টবাদিতার পরিচয় দিয়েছে। জোটটি চীনকে ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে এবং রাশিয়াকে ‘উল্লেখযোগ্য ও সরাসরি হুমকি’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। চীনকে এভাবে চিহ্নিত করার পেছনে ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে মস্কো-বেইজিং ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতাকেই কারণ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, চীনকে এভাবে চিহ্নিত করার ফলে বিশ্বে অস্থির অবস্থা তৈরি হতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে গত প্রায় দেড় দশকের মধ্যে চীন-রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরাম নামে পশ্চিমাদের অনুদানের ওপর নির্ভরতা কমেছে। আওয়ামী লীগের চলমান সরকার বিভিন্ন খাতে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বেশ জোরদার করেছে। পরাশক্তিগুলোর মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা ছিল খুবই দৃশ্যমান। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ। এ ছাড়া বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীতেও রাশিয়ার যুদ্ধবিমান ও বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার হয়ে থাকে।
এর বাইরে বেসামরিক খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়ার বাণিজ্যের পরিমাণও খুব বড় আকারের না হলেও একেবারে নগণ্য নয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে রাশিয়া থেকে ৬৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার আমদানি করেছে বাংলাদেশ। বিপরীতে দেশটিতে রপ্তানি করেছে ৫৯ কোটি ৪০ লাখ ডলারের বেশি। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো গভীর করার আলোচনাও চলছে। এমনকি রাশিয়া থেকে এলএনজি এবং অপরিশোধিত জ্বালানি কেনার কথাও শোনা গিয়েছিল একবার।
বাংলাদেশ ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন ও ভারতের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে। এই যুদ্ধের কারণে রাশিয়া পশ্চিমা নানা নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে। দেশটির বিরুদ্ধে জাতিসংঘে একাধিকবার প্রস্তাব উঠলেও বাংলাদেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তির মুখে বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালবাহী রুশ জাহাজ বন্দরে ভিড়তে না দেওয়ায় কিছুটা নাখোশ ছিল মস্কো। তার অর্থ এই নয় যে, যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করতে অতি আগ্রহী বাংলাদেশ। বরং, বাণিজ্যিক কারণে কিছুটা চাপের মুখেই রাশিয়াকে বেজার করতে হয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে ‘মস্কো কনফারেন্স অন ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে’ যোগ দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যখন বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের পদচারণা শুরু হয়েছে। পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে এখানে চীন ও রাশিয়ার অবস্থান অনেকটাই দ্বান্দ্বিক। যেখানে পশ্চিমা বিশ্ব বাংলাদেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে এবং বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সতর্কতামূলক ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে।
তবে চীন ও রাশিয়া এমন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি আরোপের পরপরই গত ২২ জুন চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন জানান, আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতি ও জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশের হস্তক্ষেপ করা অনুচিত। তারও আগে, জুনের মাঝামাঝি সময়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন ‘জাতিসংঘ সনদ’ মেনে ‘আধিপত্যবাদ ও ক্ষমতার রাজনীতির বিরুদ্ধে’ বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর কথা জানান। যদিও বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে চীন ‘হস্তক্ষেপ করবে না’ বলে আসছে বারবার।
কেবল চীন নয়, বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপকেও ইতিবাচকভাবে নেয়নি রাশিয়া। বাংলাদেশের রুশ দূতাবাস গত বছরের ২০ ডিসেম্বর এক বিবৃতিতে ১৯৬৫ সালের জাতিসংঘের ঘোষণার কথা তুলে ধরে ‘কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক যা-ই হোক না কেন, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করার অধিকার অন্য কোনো রাষ্ট্রের নেই’—এই নীতির কথা মনে করিয়ে দেয়। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে (বিশেষত, স্নায়ুযুদ্ধ শেষের পর থেকে) হস্তক্ষেপ না করার নীতিটি প্রায় লঙ্ঘন করা হচ্ছে। বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা মনে করে, নিজেদের স্বার্থে ওই নীতি লঙ্ঘন করা যায়।
রুশ দূতাবাস আরও বলেছে, যেসব দেশ নিজেদের বিশ্বের শাসক বলে মনে করে, তারা ‘গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের’ অজুহাতে নিজেদের মত ও সিদ্ধান্ত বিভিন্ন দেশের ওপর চাপিয়ে দিতে চায়। এর পরিণতিতে স্থিতিশীলতার পরিবর্তে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে নৈরাজ্যের পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ ইস্যুতে পশ্চিমা বিশ্ব এবং চীন-রাশিয়ার অবস্থান যে বিপরীত মেরুতে তা আর অস্পষ্ট কোনো বিষয় এক নয়। এমন পরিস্থিতিতে মস্কোর আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সম্মেলনে বাংলাদেশের যোগ দেওয়ার বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। আগের দুই বছরও বাংলাদেশ এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছে। গতবারের মতো এবারো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক এতে যোগ দেন।
রাশিয়া বাংলাদেশের ছোট বাণিজ্যিক অংশীদার হলেও চীন মোটেও ছোট আকারের নয়। ২০২২ সালে বাংলাদেশে যে পরিমাণ সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে সেখানে তালিকার দ্বিতীয়তে আছে চীন। ২০২২ সালে চীন বাংলাদেশে ৪৬৫ দশমিক ১৭ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। যা মোট সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের সাড়ে ১৩ শতাংশ। দেশটি বাংলাদেশের সামরিক খাতের অন্যতম বড় সরবরাহকারী দেশ। বাংলাদেশের নৌবহরে থাকা দুটি সাবমেরিনই চীন থেকে কেনা। এমনকি কক্সবাজারে শেখ হাসিনা নৌঘাঁটিও চীনেরই করে দেওয়া। এর বাইরেও চট্টগ্রাম এবং মোংলা বন্দরের উন্নয়নকাজে চীনের অংশগ্রহণ রয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো পদ্মা সেতু চীনের সহায়তায় নির্মিত হয়েছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চীনের হিস্যা একেবারে সামান্য নয়।
তবে বাংলাদেশে বিনিয়োগ এবং বৈদেশিক সহায়তার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এখনো এককভাবে শীর্ষে। ২০২২ সালে দেশে যত সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে তার ১৯ দশমিক ২ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রের। দেশটি সে বছর বাংলাদেশে ৬৬১ দশমিক ১২ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছিল। এর বাইরেও কোভিড মহামারির সময় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ভ্যাকসিন দিয়ে সহায়তা করেছিল। সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বাংলাদেশের একটি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকার সমান সহায়তা দিয়েছে।
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক মূল্যায়ন করতে গিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, বাংলাদেশের জন্য যা কিছু গুরুত্বপূর্ণ সে সবই এই সম্পর্কের ভিত্তি হওয়া উচিত। চীন, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যদের সঙ্গে বাংলাদেশ বেশ ভালোভাবে এই সম্পর্কগুলো রক্ষা করেছে। বাংলাদেশ সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে নিজের পছন্দ বেছে নেওয়ার সক্ষমতা যেন বজায় রাখতে পারে।
তবে এসব কূটনৈতিক কৌশলী মন্তব্য বাদ দিলে আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের উপর যুক্তরাষ্ট্র যে চাপ অব্যাহত রাখতে চায় তা কর্মকাণ্ডে স্পষ্ট। তবে বিশ্ব রাজনীতিতে দেড় দশক আগেও যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রভাব ছিল ততটা এখন আর নেই। যদিও সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা বেড়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ সফর করে গেছে ডোনাল্ড লু, উজরা জেয়া, রিচার্ড নেফিউ এবং দুই কংগ্রেসম্যানসহ একাধিক শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তা। পিটার হাস নিজেও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলছেন। এর সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য- নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশকে মার্কিন বলয়ে নিয়ে যাওয়া।
কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষে কোনো নির্দিষ্ট বলয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। আমদানি নির্ভর হওয়ায় ও সামরিক খাতে নিজস্ব শিল্প বিকশিত না হওয়ায় বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশের ওপরই নির্ভরশীল। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নিরবচ্ছিন্ন অর্থনৈতিক উন্নয়ন জরুরি। এসব নিশ্চিত করতে পশ্চিমাদের বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের সঙ্গে যেমন সম্পর্ক রাখছে তেমনিন চীনা নেতৃত্বের নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকেরও সদস্য হয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া উদীয়মান দেশগুলোর জোট ব্রিকসের সদস্য হতে বাংলাদেশ আবেদন করে রেখেছে। তবে ‘যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী জোটে পরিণত হওয়ার ভয়ে’ ভারত এর সম্প্রসারণ চায় না। তার সঙ্গে যোগ দিয়েছে ব্রাজিলও।
এমন পরিস্থিতিতে একাদশ মস্কো জাতীয় নিরাপত্তা সম্মেলনে আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল মূলত ‘বহুমেরুর বিশ্ব ব্যবস্থা’ এবং ‘এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা’। আলোচনার বিষয়বস্তু থেকে স্পষ্ট, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা প্রভাব বলয়ের বাইরে নতুন বলয় সৃষ্টিতে নাছোড়বান্দা রাশিয়া। এই সম্মেলনে চীন যোগ দেওয়ার মাধ্যমে মূলত রাশিয়ার অবস্থান সমর্থন করেছে।
এই সম্মেলনে সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। ‘পশ্চিমা বিশ্বের তৈরি করা উন্নয়ন বোঝাপড়ার বাইরে বিকল্প উন্নয়নের ধারণা এবং নতুন ধরনের সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করে বহুপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ে তোলার’ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বিশ্বে একটি মাত্র দেশ বা একদল দেশের প্রভাব বিস্তারের যে সম্ভাবনা ছিল তা এরই মধ্যে শূন্যে মিলিয়ে গেছে।’ লাভরভের এই বক্তব্য এবং উন্নয়নের নতুন ধারণা প্রবর্তনের যে প্রচেষ্টা তা নিঃসন্দেহে যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্বকে বাইপাস করার চেষ্টা।
বাংলাদেশ এই প্রেক্ষাপটে চূড়ান্ত কোনো অবস্থান নেবে কিনা- তা দেখার বিষয়। তবে সম্মেলনের ‘এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের নিরাপত্তা’ শীর্ষক এক প্লেনারি সেশনে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা বলেছেন, ‘রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে দুঃখ-দুর্দশা ডেকে এনেছে। এটি অবশ্যই একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই পরিস্থিতির কারণেও আমাদের দেশ বড় ধরনের সংকটের মধ্যে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে এসে আমাদের কাছে এটি পরিষ্কার যে, নিষেধাজ্ঞা কারোরই উপকারে আসবে না এবং আমরাই এর প্রধান ভুক্তভোগী।’
ইউক্রেন যুদ্ধের পর জ্বালানি সংকট ও চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধের কথা তুলে ধরে ‘ভূ-রাজনীতি নিয়ে বৈরিতা’র ছাপিয়ে সুষম অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ‘নিরাপত্তা কাঠামো’ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
সম্মেলনে তারিক আহমেদ সিদ্দিক যা বলেছেন তা বাংলাদেশের জন্য ভারসাম্যমূলক অবস্থান ব্যক্ত করে। একই সঙ্গে তা আঞ্চলিক রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণও বটে। তবে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং অন্যান্য উদীয়মান দেশগুলো যেভাবে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের খেলা নেমেছে সেখানে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখাই যথেষ্ঠ চ্যালেঞ্জের। বাংলাদেশ আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে কীভাবে ভূরাজনৈতিক অঙ্কের জটিল সমীকরণ ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে- সেটাই দেখার অপেক্ষা।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, তাস, আরটি এবং রয়টার্স

‘পশ্চিমা বিশ্বের উন্নয়নের ধারণার বিকল্প অনুসন্ধান ও নতুন ধরনের সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করে বহুপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ে তোলার’ স্লোগান নিয়ে ১৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত হলো একাদশ মস্কো আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সম্মেলন। এই সম্মেলনে অংশ নিয়ে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করে তৃতীয় দেশগুলোর ক্ষতির কথা তুলে ধরেছে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক রাজনীতির মেরুকরণ যখন অনেকটাই জটিল আকার ধারণ করেছে, তখন নির্বাচন সামনে রেখে পশ্চিমা তৎপরতার মধ্যে বাংলাদেশের এই বার্তা গুরুত্বপূর্ণ।
এই সম্মেলন নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণের পর থেকেই পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়াকে ‘একঘরে’ করার চেষ্টা করেছে। এই লক্ষ্যে তারা রাশিয়ার ওপর নানাবিধ নিষেধাজ্ঞা ও অবরোধ আরোপ করেছে। তবে এর ঠিক আগে চীনে অনুষ্ঠিত ২০২২ সালের শীতকালীন অলিম্পিকের সময় চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বেইজিং-মস্কোর সম্পর্ককে ‘সীমাহীন’ বলে ঘোষণা দেন। এরপর থেকেই দুটি দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। বিপরীতে তাইওয়ান ইস্যু এবং সেমিকন্ডাক্টর শিল্প নিয়ে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে তিক্ততা এসেছে।
এই প্রেক্ষাপটে সংগত কারণেই রাশিয়া ও চীন বহু বছর ধরেই বিশ্বব্যবস্থার নতুন মেরুকরণের কথা বলছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে উজবেকিস্তানের প্রাচীন শহর সমরখন্দে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) সম্মেলনে পুতিন সিকে বলেন, ‘পশ্চিমারা বিশ্বে এককেন্দ্রিক ব্যবস্থা চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করছে। এটা অত্যন্ত আপত্তিকর। যেকোনো দেশের বিকাশের পথে এটা বাধা।’
পুতিন আরও বলেন, ‘বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে পশ্চিমাদের নিজেদের সুরক্ষার জন্য ব্যবহার, অবৈধ নিষেধাজ্ঞা ও অর্থনৈতিক স্বার্থপরতা অত্যন্ত ভয়াবহ। তবে সুখবর হলো, পশ্চিমাদের বাইরে ক্ষমতার নতুন নতুন কেন্দ্রে গড়ে উঠছে। নতুন কেন্দ্রগুলো নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াচ্ছে।’
রুশ প্রেসিডেন্টের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, তাঁরা পশ্চিমাদের আরোপিত বিশ্বব্যবস্থা নিয়ে বিরক্ত। তাদের চাওয়া নতুন একটি ব্যবস্থা। পশ্চিমারাও চীন ও রাশিয়াকে তাদের নিরাপত্তা ও স্বার্থের জন্য হুমকি হিসেবেই বিবেচনা করছে। গত বছরের জুলাইয়ে প্রকাশিত পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সর্বশেষ কৌশলগত ধারণাপত্রে জোটটি শত্রু-প্রতিপক্ষ নির্ধারণের ক্ষেত্রে বেশ স্পষ্টবাদিতার পরিচয় দিয়েছে। জোটটি চীনকে ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে এবং রাশিয়াকে ‘উল্লেখযোগ্য ও সরাসরি হুমকি’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। চীনকে এভাবে চিহ্নিত করার পেছনে ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে মস্কো-বেইজিং ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতাকেই কারণ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, চীনকে এভাবে চিহ্নিত করার ফলে বিশ্বে অস্থির অবস্থা তৈরি হতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে গত প্রায় দেড় দশকের মধ্যে চীন-রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরাম নামে পশ্চিমাদের অনুদানের ওপর নির্ভরতা কমেছে। আওয়ামী লীগের চলমান সরকার বিভিন্ন খাতে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বেশ জোরদার করেছে। পরাশক্তিগুলোর মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা ছিল খুবই দৃশ্যমান। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ। এ ছাড়া বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীতেও রাশিয়ার যুদ্ধবিমান ও বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার হয়ে থাকে।
এর বাইরে বেসামরিক খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়ার বাণিজ্যের পরিমাণও খুব বড় আকারের না হলেও একেবারে নগণ্য নয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে রাশিয়া থেকে ৬৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার আমদানি করেছে বাংলাদেশ। বিপরীতে দেশটিতে রপ্তানি করেছে ৫৯ কোটি ৪০ লাখ ডলারের বেশি। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো গভীর করার আলোচনাও চলছে। এমনকি রাশিয়া থেকে এলএনজি এবং অপরিশোধিত জ্বালানি কেনার কথাও শোনা গিয়েছিল একবার।
বাংলাদেশ ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন ও ভারতের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে। এই যুদ্ধের কারণে রাশিয়া পশ্চিমা নানা নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে। দেশটির বিরুদ্ধে জাতিসংঘে একাধিকবার প্রস্তাব উঠলেও বাংলাদেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তির মুখে বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালবাহী রুশ জাহাজ বন্দরে ভিড়তে না দেওয়ায় কিছুটা নাখোশ ছিল মস্কো। তার অর্থ এই নয় যে, যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করতে অতি আগ্রহী বাংলাদেশ। বরং, বাণিজ্যিক কারণে কিছুটা চাপের মুখেই রাশিয়াকে বেজার করতে হয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে ‘মস্কো কনফারেন্স অন ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে’ যোগ দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যখন বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের পদচারণা শুরু হয়েছে। পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে এখানে চীন ও রাশিয়ার অবস্থান অনেকটাই দ্বান্দ্বিক। যেখানে পশ্চিমা বিশ্ব বাংলাদেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে এবং বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সতর্কতামূলক ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে।
তবে চীন ও রাশিয়া এমন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি আরোপের পরপরই গত ২২ জুন চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন জানান, আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতি ও জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশের হস্তক্ষেপ করা অনুচিত। তারও আগে, জুনের মাঝামাঝি সময়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন ‘জাতিসংঘ সনদ’ মেনে ‘আধিপত্যবাদ ও ক্ষমতার রাজনীতির বিরুদ্ধে’ বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর কথা জানান। যদিও বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে চীন ‘হস্তক্ষেপ করবে না’ বলে আসছে বারবার।
কেবল চীন নয়, বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপকেও ইতিবাচকভাবে নেয়নি রাশিয়া। বাংলাদেশের রুশ দূতাবাস গত বছরের ২০ ডিসেম্বর এক বিবৃতিতে ১৯৬৫ সালের জাতিসংঘের ঘোষণার কথা তুলে ধরে ‘কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক যা-ই হোক না কেন, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করার অধিকার অন্য কোনো রাষ্ট্রের নেই’—এই নীতির কথা মনে করিয়ে দেয়। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে (বিশেষত, স্নায়ুযুদ্ধ শেষের পর থেকে) হস্তক্ষেপ না করার নীতিটি প্রায় লঙ্ঘন করা হচ্ছে। বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা মনে করে, নিজেদের স্বার্থে ওই নীতি লঙ্ঘন করা যায়।
রুশ দূতাবাস আরও বলেছে, যেসব দেশ নিজেদের বিশ্বের শাসক বলে মনে করে, তারা ‘গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের’ অজুহাতে নিজেদের মত ও সিদ্ধান্ত বিভিন্ন দেশের ওপর চাপিয়ে দিতে চায়। এর পরিণতিতে স্থিতিশীলতার পরিবর্তে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে নৈরাজ্যের পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ ইস্যুতে পশ্চিমা বিশ্ব এবং চীন-রাশিয়ার অবস্থান যে বিপরীত মেরুতে তা আর অস্পষ্ট কোনো বিষয় এক নয়। এমন পরিস্থিতিতে মস্কোর আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সম্মেলনে বাংলাদেশের যোগ দেওয়ার বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। আগের দুই বছরও বাংলাদেশ এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছে। গতবারের মতো এবারো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক এতে যোগ দেন।
রাশিয়া বাংলাদেশের ছোট বাণিজ্যিক অংশীদার হলেও চীন মোটেও ছোট আকারের নয়। ২০২২ সালে বাংলাদেশে যে পরিমাণ সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে সেখানে তালিকার দ্বিতীয়তে আছে চীন। ২০২২ সালে চীন বাংলাদেশে ৪৬৫ দশমিক ১৭ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। যা মোট সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের সাড়ে ১৩ শতাংশ। দেশটি বাংলাদেশের সামরিক খাতের অন্যতম বড় সরবরাহকারী দেশ। বাংলাদেশের নৌবহরে থাকা দুটি সাবমেরিনই চীন থেকে কেনা। এমনকি কক্সবাজারে শেখ হাসিনা নৌঘাঁটিও চীনেরই করে দেওয়া। এর বাইরেও চট্টগ্রাম এবং মোংলা বন্দরের উন্নয়নকাজে চীনের অংশগ্রহণ রয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো পদ্মা সেতু চীনের সহায়তায় নির্মিত হয়েছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চীনের হিস্যা একেবারে সামান্য নয়।
তবে বাংলাদেশে বিনিয়োগ এবং বৈদেশিক সহায়তার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এখনো এককভাবে শীর্ষে। ২০২২ সালে দেশে যত সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে তার ১৯ দশমিক ২ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রের। দেশটি সে বছর বাংলাদেশে ৬৬১ দশমিক ১২ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছিল। এর বাইরেও কোভিড মহামারির সময় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ভ্যাকসিন দিয়ে সহায়তা করেছিল। সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বাংলাদেশের একটি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকার সমান সহায়তা দিয়েছে।
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক মূল্যায়ন করতে গিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, বাংলাদেশের জন্য যা কিছু গুরুত্বপূর্ণ সে সবই এই সম্পর্কের ভিত্তি হওয়া উচিত। চীন, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যদের সঙ্গে বাংলাদেশ বেশ ভালোভাবে এই সম্পর্কগুলো রক্ষা করেছে। বাংলাদেশ সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে নিজের পছন্দ বেছে নেওয়ার সক্ষমতা যেন বজায় রাখতে পারে।
তবে এসব কূটনৈতিক কৌশলী মন্তব্য বাদ দিলে আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের উপর যুক্তরাষ্ট্র যে চাপ অব্যাহত রাখতে চায় তা কর্মকাণ্ডে স্পষ্ট। তবে বিশ্ব রাজনীতিতে দেড় দশক আগেও যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রভাব ছিল ততটা এখন আর নেই। যদিও সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা বেড়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ সফর করে গেছে ডোনাল্ড লু, উজরা জেয়া, রিচার্ড নেফিউ এবং দুই কংগ্রেসম্যানসহ একাধিক শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তা। পিটার হাস নিজেও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলছেন। এর সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য- নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশকে মার্কিন বলয়ে নিয়ে যাওয়া।
কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষে কোনো নির্দিষ্ট বলয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। আমদানি নির্ভর হওয়ায় ও সামরিক খাতে নিজস্ব শিল্প বিকশিত না হওয়ায় বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশের ওপরই নির্ভরশীল। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নিরবচ্ছিন্ন অর্থনৈতিক উন্নয়ন জরুরি। এসব নিশ্চিত করতে পশ্চিমাদের বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের সঙ্গে যেমন সম্পর্ক রাখছে তেমনিন চীনা নেতৃত্বের নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকেরও সদস্য হয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া উদীয়মান দেশগুলোর জোট ব্রিকসের সদস্য হতে বাংলাদেশ আবেদন করে রেখেছে। তবে ‘যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী জোটে পরিণত হওয়ার ভয়ে’ ভারত এর সম্প্রসারণ চায় না। তার সঙ্গে যোগ দিয়েছে ব্রাজিলও।
এমন পরিস্থিতিতে একাদশ মস্কো জাতীয় নিরাপত্তা সম্মেলনে আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল মূলত ‘বহুমেরুর বিশ্ব ব্যবস্থা’ এবং ‘এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা’। আলোচনার বিষয়বস্তু থেকে স্পষ্ট, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা প্রভাব বলয়ের বাইরে নতুন বলয় সৃষ্টিতে নাছোড়বান্দা রাশিয়া। এই সম্মেলনে চীন যোগ দেওয়ার মাধ্যমে মূলত রাশিয়ার অবস্থান সমর্থন করেছে।
এই সম্মেলনে সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। ‘পশ্চিমা বিশ্বের তৈরি করা উন্নয়ন বোঝাপড়ার বাইরে বিকল্প উন্নয়নের ধারণা এবং নতুন ধরনের সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করে বহুপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ে তোলার’ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বিশ্বে একটি মাত্র দেশ বা একদল দেশের প্রভাব বিস্তারের যে সম্ভাবনা ছিল তা এরই মধ্যে শূন্যে মিলিয়ে গেছে।’ লাভরভের এই বক্তব্য এবং উন্নয়নের নতুন ধারণা প্রবর্তনের যে প্রচেষ্টা তা নিঃসন্দেহে যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্বকে বাইপাস করার চেষ্টা।
বাংলাদেশ এই প্রেক্ষাপটে চূড়ান্ত কোনো অবস্থান নেবে কিনা- তা দেখার বিষয়। তবে সম্মেলনের ‘এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের নিরাপত্তা’ শীর্ষক এক প্লেনারি সেশনে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা বলেছেন, ‘রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে দুঃখ-দুর্দশা ডেকে এনেছে। এটি অবশ্যই একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই পরিস্থিতির কারণেও আমাদের দেশ বড় ধরনের সংকটের মধ্যে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে এসে আমাদের কাছে এটি পরিষ্কার যে, নিষেধাজ্ঞা কারোরই উপকারে আসবে না এবং আমরাই এর প্রধান ভুক্তভোগী।’
ইউক্রেন যুদ্ধের পর জ্বালানি সংকট ও চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধের কথা তুলে ধরে ‘ভূ-রাজনীতি নিয়ে বৈরিতা’র ছাপিয়ে সুষম অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ‘নিরাপত্তা কাঠামো’ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
সম্মেলনে তারিক আহমেদ সিদ্দিক যা বলেছেন তা বাংলাদেশের জন্য ভারসাম্যমূলক অবস্থান ব্যক্ত করে। একই সঙ্গে তা আঞ্চলিক রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণও বটে। তবে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং অন্যান্য উদীয়মান দেশগুলো যেভাবে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের খেলা নেমেছে সেখানে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখাই যথেষ্ঠ চ্যালেঞ্জের। বাংলাদেশ আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে কীভাবে ভূরাজনৈতিক অঙ্কের জটিল সমীকরণ ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে- সেটাই দেখার অপেক্ষা।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, তাস, আরটি এবং রয়টার্স

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
১০ ঘণ্টা আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
১৯ ঘণ্টা আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৪ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

একাদশ মস্কো আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা অংশ নিয়ে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করে তৃতীয় দেশগুলোর ক্ষতির কথা তুলে ধরেছে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক রাজনীতির মেরুকরণ যখন অনেকটাই জটিল আকার ধারণ করেছে তখন নির্বাচন সামনে রেখে পশ্চিমা তৎপরতার মধ্যে বাংলাদেশের এই বার্তা গুরুত্বপূর্ণ।
১৭ আগস্ট ২০২৩
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
১৯ ঘণ্টা আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৪ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

একাদশ মস্কো আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা অংশ নিয়ে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করে তৃতীয় দেশগুলোর ক্ষতির কথা তুলে ধরেছে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক রাজনীতির মেরুকরণ যখন অনেকটাই জটিল আকার ধারণ করেছে তখন নির্বাচন সামনে রেখে পশ্চিমা তৎপরতার মধ্যে বাংলাদেশের এই বার্তা গুরুত্বপূর্ণ।
১৭ আগস্ট ২০২৩
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
১০ ঘণ্টা আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৪ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

একাদশ মস্কো আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা অংশ নিয়ে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করে তৃতীয় দেশগুলোর ক্ষতির কথা তুলে ধরেছে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক রাজনীতির মেরুকরণ যখন অনেকটাই জটিল আকার ধারণ করেছে তখন নির্বাচন সামনে রেখে পশ্চিমা তৎপরতার মধ্যে বাংলাদেশের এই বার্তা গুরুত্বপূর্ণ।
১৭ আগস্ট ২০২৩
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
১০ ঘণ্টা আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
১৯ ঘণ্টা আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

একাদশ মস্কো আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা অংশ নিয়ে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করে তৃতীয় দেশগুলোর ক্ষতির কথা তুলে ধরেছে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক রাজনীতির মেরুকরণ যখন অনেকটাই জটিল আকার ধারণ করেছে তখন নির্বাচন সামনে রেখে পশ্চিমা তৎপরতার মধ্যে বাংলাদেশের এই বার্তা গুরুত্বপূর্ণ।
১৭ আগস্ট ২০২৩
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
১০ ঘণ্টা আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
১৯ ঘণ্টা আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৪ দিন আগে