Ajker Patrika

ট্রাম্পে আস্থা: গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে হামাস কি জুয়া খেলছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ০৯
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সিএএনএন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সিএএনএন

িলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একসময় ‘বর্ণবাদী’, ‘অরাজকতার রেসিপি’ এবং গাজা নিয়ে ‘অযৌক্তিক কল্পনা’ পোষণকারী ব্যক্তি বলে আখ্যা দিয়েছিল। তবু গত মাসে এক অবিশ্বাস্য ফোনকল হামাসকে এই বিশ্বাসে রাজি করিয়েছে যে, যুদ্ধের জিম্মিদের সবাইকে ছেড়ে দিলেও ট্রাম্প ইসরায়েলকে শান্তিচুক্তিতে বাধ্য করতে পারবেন। এমনটাই জানিয়েছেন দুই ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা।

ওই ফোনকলটি গত সেপ্টেম্বরের ঘটনা। ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে এক বৈঠকের পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে সঙ্গে নিয়ে কাতারের প্রধানমন্ত্রীকে ফোন দেন। উদ্দেশ্য ছিল—দোহায় হামাসের রাজনৈতিক নেতাদের বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত একটি আবাসিক কমপ্লেক্সে ইসরায়েলি হামলার জন্য ক্ষমা চাওয়া।

কাতারে ওই হামলায় মূল লক্ষ্যবস্তুদের কেউ নিহত হয়নি। ওই বাসভবনে হামাসের প্রধান আলোচক খালিল আল-হাইয়াও ছিলেন। কিন্তু এই ঘটনায় ট্রাম্পের ভূমিকা হামাসের মধ্যে বিশ্বাস তৈরি করে যে, তিনি নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধেও অবস্থান নিতে পারেন এবং গাজা যুদ্ধ থামাতে তিনি সত্যিই আগ্রহী।

এরপর, গত বুধবার ট্রাম্প-সমর্থিত এক যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে হামাস। তাতে তারা আবারও বিশ্বাস রেখেছে সেই মানুষটির ওপর, যিনি চলতি বছর গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে সেটিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে একটি সমুদ্র-রিসোর্ট বানানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

চুক্তি অনুযায়ী, গত শুক্রবার থেকে কার্যকর হওয়া এই যুদ্ধবিরতিতে হামাস জিম্মিদের মুক্তি দিতে রাজি হয়েছে। বিনিময়ে গাজা থেকে ইসরায়েলি পূর্ণ প্রত্যাহারের কোনো নিশ্চয়তা তারা পায়নি। হামাসের দুই কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, এটি বড় ধরনের এক ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ। এর পুরোটাই নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ওপর; তিনি যেন চুক্তি ভেস্তে যেতে না দেন।

এক হামাস কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, সংগঠনটি জানে তাদের এই ঝুঁকি উল্টো ফলও দিতে পারে। তাদের আশঙ্কা, জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার পর ইসরায়েল আবারও সামরিক অভিযান শুরু করতে পারে—যেমনটা হয়েছিল জানুয়ারির যুদ্ধবিরতির পর, যে চুক্তিতেও ট্রাম্পের দল ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিল।

তবুও মিসরের শারম আল-শেখে ইসরায়েলের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনায় অংশ নিতে যাওয়া হামাস নেতারা যথেষ্ট আশ্বস্ত বোধ করেন। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা এবং আঞ্চলিক শক্তিধর দেশগুলোর উপস্থিতি তাদের চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে উদ্বুদ্ধ করে—যদিও এতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাসহ তাদের বহু গুরুত্বপূর্ণ দাবি অপূর্ণ রয়ে গেছে।

হামাসের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘ওই কনফারেন্স সেন্টারে ট্রাম্পের আগ্রহ খুব স্পষ্ট ছিল।’ এক মার্কিন সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, ওই ম্যারাথন বৈঠকের সময় ট্রাম্প নিজে তিনবার ফোন করেন। তাঁর জামাতা জ্যারেড কুশনার ও দূত স্টিভ উইটকফ ইসরায়েলি ও কাতারি আলোচকদের মধ্যে দৌড়ঝাঁপ করছিলেন।

এই চুক্তি যুদ্ধের অবসান ঘটানোর পথ তৈরি করতে পারে—যা শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের মাধ্যমে। তবে ট্রাম্পের ঘোষিত ২০ দফা গাজা পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপগুলো আদৌ বাস্তবায়িত হবে কিনা, তা অনিশ্চিত।

তবে কাতার হামলা ও জুনে ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের ১২ দিনের যুদ্ধ বন্ধে ভূমিকা—দুই ঘটনাতেই ট্রাম্পের দৃঢ় পদক্ষেপ হামাস নেতাদের মনে করেছে, তিনি জিম্মি মুক্তির পরও ইসরায়েলকে যুদ্ধ চালাতে দেবেন না। এমন মন্তব্য করেছেন দুই ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা এবং আলোচনায় যুক্ত এক সূত্র।

ওয়াশিংটনের এক সূত্র জানিয়েছে, কাতার হামলা নিয়ে নেতানিয়াহুর ওপর ট্রাম্পের ক্ষোভই তাঁর দলের কাছে এক সুযোগ তৈরি করে—যা কাজে লাগিয়ে ইসরায়েলকে শান্তিচুক্তির কাঠামোয় আনতে চাপ দেওয়া হয়। এক হোয়াইট হাউস কর্মকর্তা জানান, ট্রাম্প উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখেন এবং কাতারের আমিরকে ব্যক্তিগতভাবে বন্ধু মনে করেন। তাই টেলিভিশনে হামলার ছবি দেখে তিনি ক্ষুব্ধ হন। ওই হামলাকে তিনি ‘আরব বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার মোড় ঘোরানো মুহূর্ত’ হিসেবে দেখেছিলেন।

ট্রাম্প প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন যে, কাতারে আর কোনো ইসরায়েলি হামলা হতে দেওয়া হবে না। হামাসসহ অন্যান্য আঞ্চলিক পক্ষের চোখে এতে তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে। গাজার এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বলেন, ‘তিনি কাতারকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছেন—এতে হামাসের মধ্যে বিশ্বাস তৈরি হয়েছে যে, যুদ্ধবিরতি টিকে থাকবে।’

ইসরায়েলের বার-ইলান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জোনাথন রেইনহোল্ড বলেন, ‘এই নিশ্চয়তা হামাসের আস্থা বাড়িয়েছে।’ গাজার আরেক কর্মকর্তা বলেন, ট্রাম্প ইরান ও ইসরায়েল উভয়কেই যুদ্ধ বন্ধের নির্দেশ দেন, যা হামাস গুরুত্বের সঙ্গে লক্ষ্য করেছে। জুনে ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধের সময় ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে ইসরায়েলি বিমান হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে লিখেছিলেন, ‘তাদের বিমানগুলো ঘুরে গিয়ে ঘরে ফিরে আসুক।’

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘নাটকীয় হলেও ট্রাম্প যা বলেন তা করেন।’ এতে হামাসের ধারণা হয়, তিনি ইসরায়েলকেও যুদ্ধবিরতি মানতে বাধ্য করতে পারেন। তবে হামাস জানে, এই বাজি উল্টেও যেতে পারে। জানুয়ারির যুদ্ধবিরতিতে ধাপে ধাপে জিম্মি মুক্তি ও ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের কথা ছিল। কিন্তু প্রক্রিয়ার মাঝেই ট্রাম্প ঘোষণা দেন—হামাস যেন একসঙ্গে সব জিম্মি ছেড়ে দেয়, নইলে তিনি চুক্তি বাতিল করবেন এবং ‘নরক নেমে আসবে’।

ফলে সেই চুক্তি ভেস্তে যায়। এর পরের যুদ্ধেই গাজা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের হিসেবে ১৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হন, ইসরায়েলি অবরোধে খাদ্য সহায়তা বন্ধ হয়ে যায় এবং বৈশ্বিক ক্ষুধা পর্যবেক্ষক সংস্থা গাজাকে দুর্ভিক্ষপীড়িত অঞ্চল ঘোষণা করে।

এক আঞ্চলিক কূটনীতিক বলেন, ইসরায়েল হয়তো আবারও হামাসকে টার্গেট করতে প্রলুব্ধ হতে পারে—বিশেষ করে যদি হামাস বা তার সহযোগী গোষ্ঠীগুলো ইসরায়েলে রকেট হামলার মতো পদক্ষেপ নেয়। তবে এবারের পরিস্থিতি আগের যুদ্ধবিরতি থেকে আলাদা বলে মনে করছেন হামাস কর্মকর্তারা। তাদের মতে, ইসরায়েল এবার আন্তরিকভাবে চুক্তিতে আসছে এবং মিশর, কাতার, তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের চাপ দুই পক্ষকেই আলোচনায় রাখছে।

চুক্তি বাস্তবায়নে আরও গতি আনবে ট্রাম্পের আসন্ন মধ্যপ্রাচ্য সফর—যা শুরু হবে রোববার থেকে। মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির আমন্ত্রণে তাঁর এই সফরকে এক আলোচনা সূত্র বলেছেন ‘অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপ।’

সূত্র: রয়টার্স

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...