মন্টি বৈষ্ণব, ঢাকা

প্রকৃতির সঙ্গে সংগীতের রয়েছে অদ্ভুত এক সম্পর্ক। এই যে পানি বয়ে চলার শব্দ, পাখির কুহু কুহু ডাক, মেঘেদের ছুটে চলা, গাছ থেকে পাতা ঝরে পড়ার শব্দ—এসবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সংগীতের সুর। অথবা বলা যায়, এসবের মাঝেই খুঁজে পাওয়া যাবে সংগীতের সুর, তাল ও লয়।
আমাদের প্রতিদিনের কাজের অনেকাংশেই যুক্ত সংগীত। দিনে কিংবা রাতে গুন গুন করে গান করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। মানুষের সুখ-দুঃখে সংগীত বন্ধুর মতো কাজ করে। তাই সংগীতের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক হৃদয়ের।
সংগীতের সঙ্গে এই হৃদয়যোগের কথা কিন্তু একটুও বাড়িয়ে বলা নয়। ২০১৬ সালে জার্মান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের গবেষণা পত্রিকা ডয়চেস অ্যার্জটাব্লাট ইন্টারন্যাশনালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সংগীতের সঙ্গে সরাসরি রয়েছে হৃদয়ের যোগ। মোজার্টের মতো ধ্রুপদি সংগীতের প্রভাবে হৃদযন্ত্রের স্পন্দন তুলনামূলক নিয়ন্ত্রণে আসে। একই সঙ্গে কমে রক্তচাপ। অন্য সুর বা গানের ক্ষেত্রে কিন্তু এমন ফল পাওয়া যায়নি। বলে রাখা ভালো, ওই গবেষণায় মোজার্টের পাশাপাশি বিখ্যাত ব্যান্ড অ্যাবার গানও রাখা হয়েছিল। দুই ধরনের সংগীতের ক্ষেত্রে গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একই বছরে আরেক গবেষণা পত্রিকা প্লস ওয়ানে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, মানুষের মন, আবেগ ইত্যাদির ওপর সংগীতের রয়েছে বড় ধরনের প্রভাব। সংগীতের হৃদয়ঘটিত ব্যাপার-স্যাপার নিয়ে ২০১৫ সালে ক্রিটিক্যাল কেয়ার নামের জার্নালেও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। খুঁজলে এমন হাজারটা গবেষণার কথা জানা যাবে।
মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী অসুখ। অসুস্থতা থেকে সেরে উঠতে আমরা কতই না ওষুধ খেয়ে থাকি। চিকিৎসকদের মতে, রোগমুক্তির অনেকগুলো পন্থার মধ্যে একটি মাধ্যম হলো মিউজিক থেরাপি। অর্থাৎ, সুর দিয়ে রোগীকে রোগ থেকে দূরে রাখা। মানুষের শরীরের নিস্তেজ হয়ে যাওয়া স্নায়ুকে রিদমের (ছন্দ) মাধ্যমে জাগিয়ে তোলাই মিউজিক থেরাপির মূল কাজ। মিউজিক থেরাপি মূলত মানুষের মন, শরীর ও মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করে মানুষকে সুস্থ-স্বাভাবিক রাখতে সহযোগিতা করে।
মানবদেহে কানের মধ্য দিয়ে সুরতরঙ্গাকারে প্রবেশ করে। আর সেই সুর স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে প্রবাহিত হয় মস্তিষ্কে। সংগীত এমন এক মাধ্যম, যা মস্তিষ্কের সব অংশকেই উজ্জীবিত করে। সংগীতের সুর ও তাল বা বিট মস্তিষ্কের কার্যকলাপকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক করে তোলে। মানুষের হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিক করে। সংগীতের এই প্রভাবকেই চিকিৎসার কাজে লাগানোর নাম মিউজিক থেরাপি।
মিউজিক থেরাপি একদিকে যেমন মন ভালো রাখে, অন্যদিকে ভালো রাখে মস্তিষ্ক আর হৃদযন্ত্রকে। অনেক ক্ষেত্রে রোগীর অস্ত্রোপচারের সময়েও অনেক জায়গায় হালকা সুরের ব্যবস্থা রাখা হয়। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। ক্রিটিক্যাল কেয়ার নামের জার্নালে ২০১৫ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচার হয়েছে এমন কিছু লোকের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, ধ্রুপদি সংগীত সরাসরি কানে প্রবেশ করলে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি চোখ বুঁজে থাকলে তাদের ঘুমানোটা সহজ হয়। শুধু তাই নয়, ঘুমের সমস্যায় যাঁরা ভোগেন, তাঁরাও এই থেরাপি নিলে সহজে ঘুমাতে পারেন। অস্ত্রোপচারকক্ষে (ওটি) হালকা সুর চললে তা রোগীকে আশ্বস্ত করে। রোগী অনেক সময় ভয় ও ব্যথা থেকে দূরে থাকে। বিশেষ করে অ্যানেসথেসিয়ায় মিউজিক থেরাপির ভূমিকা প্রশংসনীয়। এমনকি ক্যানসার রোগীদের কেমোথেরাপিতেও মিউজিক থেরাপি রোগীর কষ্ট কমাতে সহযোগিতা করে।
মানুষের শরীরে সংগীতের বিস্তৃত প্রভাব রয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সেলিম হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মানুষ যখন মানসিকভাবে প্রচণ্ড চাপে থাকে, তখন তার মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলো বেশ আন্দোলিত হয়। সে সময় সংগীত শুনলে এর রিদম মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলোকে শান্ত হতে সহায়তা করে। যেমন—আপনি যদি শাহবাগ মোড়ে গিয়ে দাঁড়ান, তাহলে অনেক ধরনের শব্দ শুনতে পাবেন। এরপর আপনি এমন কোনো স্থানে গেলেন, যেখানে হালকা সংগীত চালু রয়েছে। সেখানে আপনা-আপনি আপনার মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আসবে।। এভাবে চিকিৎসার ক্ষেত্রে মিউজিক থেরাপি ব্যবহার করা হচ্ছে।’
অস্ত্রোপচারকক্ষে হালকা সুর চালানোর কারণ সম্পর্কে মো. সেলিম হোসেন বলেন, ‘অস্ত্রোপচারের জন্য মানুষকে যখন ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন রোগীর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনা খুব মুশকিল হয়ে পড়ে। এ কারণে রোগীকে ওটিতে নেওয়ার আগে অন্য এক কক্ষে নিয়ে তাঁর মন শান্ত রাখার জন্য শব্দবিহীন সুর শোনানো হয়। এতে রোগীর মস্তিষ্কের কার্যকলাপ আস্তে আস্তে শান্ত হয়।’
মিউজিকের রিদমকে কাজে লাগিয়ে রোগীকে রোগ থেকে দূরে রাখার বিষয়ে মো. সেলিম হোসেন বলেন, ‘হার্টবিট বেড়ে গেলে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে শরীরে কিছু সমস্যা তৈরি হয়। এ ক্ষেত্রে সংগীতকে যদি থেরাপি হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তাহলে হার্টবিট কমে যাবে। যেমন—রোগীর হার্টবিট বেশি ওঠানামা করলে, ডেলিভারিতে তার হার্টবিটের সঙ্গে মিল রেখে মিউজিকের রিদমকে সামঞ্জস্য করা হয়। কারও হার্টবিট বেশি বেড়ে গেলে সে ক্ষেত্রে শব্দবিহীন মিউজিকের মাধ্যমে আস্তে আস্তে রোগীর হার্টবিট কমানোর চেষ্টা করা হয়। এ ক্ষেত্রে রোগীর পছন্দ জানা থাকলে তার পছন্দের মিউজিক শোনানো হয়। জানা না থাকলে শুধু সুর শোনানোর চেষ্টা করা হয়। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রোগীকে স্থিতিশীল অবস্থায় আনা হয়। আর রোগীকে দীর্ঘ সময়ের জন্য সুস্থ রাখতে চাইলে প্রতিদিন সকাল-বিকেল রোগীর পছন্দের সুর বা গান শোনানোর ব্যবস্থা করা হয়। এতে রোগীর স্নায়ু শান্ত হয়। আর রোগী আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে ওঠে।’
স্মৃতিশক্তি ফিরিয়ে আনতেও কার্যকর সংগীত। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, চেনা বা পছন্দের সুর স্মৃতি ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে ভালো কাজে দেয়। স্মৃতি সংরক্ষণের সঙ্গে যুক্ত স্নায়ু সংগীতের মাধ্যমে উদ্দীপিত হয়। একই কথা বললেন মো. সেলিম হোসেনও। তিনি বলেন, ‘মানুষের স্মৃতিশক্তি ফিরিয়ে আনতে মিউজিক থেরাপির ভূমিকা অনেক বেশি। সংগীত এমন একটা বিষয়, যা শোনার পর আপনার মস্তিষ্কের সব অংশ একসঙ্গে ক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে। গান শোনার সঙ্গে সঙ্গে চিন্তাশক্তিও বাড়ে। চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, যাঁরা মিউজিক থেরাপি নেন, তাঁদের আলঝেইমার বা স্মৃতিশক্তি সম্পর্কিত রোগের আশঙ্কা কমে। ক্যানসারের ক্ষেত্রেও মিউজিক থেরাপির ভূমিকা অনবদ্য। ক্যানসারের জন্য দায়ী কোষের বৃদ্ধি কমাতে মিউজিক থেরাপি কাজ করে।’
এ ছাড়া স্ট্রোকের ক্ষেত্রে যদি রোগীকে হারমোনিয়াম, গিটার, পিয়ানো, বাঁশি, ভায়োলিনের মতো কোনো যন্ত্র বাজাতে দেওয়া হয়, এতে হারমোনিয়াম বা পিয়ানোতে রোগীর আঙুলের ব্যবহার মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে, যা মস্তিষ্ককে ক্রিয়াশীল করে। এ থেরাপি বিশ্বের বহু দেশেই এখন প্রচলিত। এমনকি আলঝেইমার রোগীদের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, তিনি হয়তো তাঁর একেবারে কাছের মানুষকেই চিনতে পারছেন না; কিন্তু ঠিকই পিয়ানো বাজাতে পারছেন। এটা সম্ভব হচ্ছে, পিয়ানো বা হারমোনিয়ামের রিডের স্মৃতি আর শুধু মস্তিষ্কে থাকে না, এটা পেশির স্মৃতিতেও চলে যায়। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন কথা বলা হয়েছে। মিউজিক থেরাপির কথা যদিও বাংলাদেশের খুব কম মানুষ জানে। সংগীত সাধারণভাবে বিনোদনের অংশ হিসেবেই এখানে বিবেচিত হয়। কিন্তু চাইলেই সুর ও সংগীতকে কাজে লাগিয়ে চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে যাওয়া যায়। বিশেষত মনোরোগের ক্ষেত্রে এই থেরাপি বেশ কাজে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘মানসিক সমস্যায় মানুষের স্বাভাবিক চিন্তা ও আচরণের ছন্দপতন হয়। এটি দীর্ঘস্থায়ী হলে তা মানসিক অসুস্থতায় রূপ নেয়। এই সময়ে মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর মধ্যে চলমান স্বাভাবিক নিউরাল নেটওয়ার্ক পরিবর্তিত হয়ে অসুস্থ নিউরাল নেটওয়ার্কে পরিণত হতে পারে। গ্রামের সবুজ মাঠে কোনাকুনি হাঁটতে থাকলে কিছুদিন পর সবুজ ঘাস মরে গিয়ে একটা মেঠো পথ তৈরি হয়। আবার সেই পথের গতি রোধ করলে আস্তে আস্তে ঘাস গজিয়ে মেঠো পথ বিলীন হয়ে সবুজ হয়ে যায়। ব্যাপারটা ঠিক সে রকম। মিউজিক থেরাপিতে ব্যক্তিকে সংগীতের মাধ্যমে এমনভাবে সম্পৃক্ত করা হয়, যাতে ব্যক্তি তার অসুস্থ নিউরাল নেটওয়ার্কে ফাটল ধরাতে পারে। এ কাজ করতে গিয়ে ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে একজন প্রশিক্ষিত থেরাপিস্ট সংগীত লেখা, তাতে সুর দেওয়া, বাদ্যযন্ত্র বাজানো অথবা শুধু পছন্দের গান শোনাতে পারেন। ফলে ব্যক্তি সুস্থ চিন্তা করার শক্তি পায়, যার বহিঃপ্রকাশ ইতিবাচক আচরণের মাধ্যমে ঘটে। এভাবে ধীরে ধীরে ব্যক্তি সুস্থতার দিকে ধাবিত হয়।’
মিউজিক থেরাপি বিষয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মেখলা সরকার বলেন, ‘সংগীতের সঙ্গে আমাদের আবেগ কাজ করে। যাদের স্মৃতি নষ্ট হয়ে যায়, তাদের পুরোনো স্মৃতি জমা থাকে। তারা নতুন কোনো স্মৃতি মনে রাখতে পারেন না। স্মৃতি নষ্ট হয়ে গেলে নতুন পরিবেশে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে তারা। সবকিছু অচেনা লাগে। এ ক্ষেত্রে যদি রোগীকে তার পছন্দের পুরোনো দিনের গান শোনানো হয়, রোগী সেই গান শুনে পুরোনো অনেক স্মৃতি মনে করতে পারে। এ ক্ষেত্রে রোগী গান শুনতে শুনতে পরিচিত পরিবেশের মধ্যে আছে মনে করে। এ ছাড়া সংগীতে একধরনের ছন্দ আছে, যা মনের অস্থিরতা, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, হতাশা দূর করে। তাই মানসিক প্রশান্তির জন্য গান হতে পারে চমৎকার একটি ওষুধ। আবার অনেক ক্ষেত্রে স্মৃতিশক্তি বাড়াতে নতুন গান শিখতে বলা হয়। নতুন গান বা সুর তৈরি করতে শিখলে মস্তিষ্কে নতুন নতুন সংযোগ তৈরি হয়। এতে মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি বাড়তে থাকে। এমনকি করোনার সংক্রমণ রোধেও মিউজিক থেরাপি প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে। এ ছাড়া নিয়মিত সংগীতের রেওয়াজ করলে বা গান শুনলে আমাদের হৃৎপিণ্ড এবং মস্তিষ্কের কার্যকলাপ অনেক ভালো থাকে।’

প্রকৃতির সঙ্গে সংগীতের রয়েছে অদ্ভুত এক সম্পর্ক। এই যে পানি বয়ে চলার শব্দ, পাখির কুহু কুহু ডাক, মেঘেদের ছুটে চলা, গাছ থেকে পাতা ঝরে পড়ার শব্দ—এসবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সংগীতের সুর। অথবা বলা যায়, এসবের মাঝেই খুঁজে পাওয়া যাবে সংগীতের সুর, তাল ও লয়।
আমাদের প্রতিদিনের কাজের অনেকাংশেই যুক্ত সংগীত। দিনে কিংবা রাতে গুন গুন করে গান করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। মানুষের সুখ-দুঃখে সংগীত বন্ধুর মতো কাজ করে। তাই সংগীতের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক হৃদয়ের।
সংগীতের সঙ্গে এই হৃদয়যোগের কথা কিন্তু একটুও বাড়িয়ে বলা নয়। ২০১৬ সালে জার্মান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের গবেষণা পত্রিকা ডয়চেস অ্যার্জটাব্লাট ইন্টারন্যাশনালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সংগীতের সঙ্গে সরাসরি রয়েছে হৃদয়ের যোগ। মোজার্টের মতো ধ্রুপদি সংগীতের প্রভাবে হৃদযন্ত্রের স্পন্দন তুলনামূলক নিয়ন্ত্রণে আসে। একই সঙ্গে কমে রক্তচাপ। অন্য সুর বা গানের ক্ষেত্রে কিন্তু এমন ফল পাওয়া যায়নি। বলে রাখা ভালো, ওই গবেষণায় মোজার্টের পাশাপাশি বিখ্যাত ব্যান্ড অ্যাবার গানও রাখা হয়েছিল। দুই ধরনের সংগীতের ক্ষেত্রে গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একই বছরে আরেক গবেষণা পত্রিকা প্লস ওয়ানে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, মানুষের মন, আবেগ ইত্যাদির ওপর সংগীতের রয়েছে বড় ধরনের প্রভাব। সংগীতের হৃদয়ঘটিত ব্যাপার-স্যাপার নিয়ে ২০১৫ সালে ক্রিটিক্যাল কেয়ার নামের জার্নালেও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। খুঁজলে এমন হাজারটা গবেষণার কথা জানা যাবে।
মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী অসুখ। অসুস্থতা থেকে সেরে উঠতে আমরা কতই না ওষুধ খেয়ে থাকি। চিকিৎসকদের মতে, রোগমুক্তির অনেকগুলো পন্থার মধ্যে একটি মাধ্যম হলো মিউজিক থেরাপি। অর্থাৎ, সুর দিয়ে রোগীকে রোগ থেকে দূরে রাখা। মানুষের শরীরের নিস্তেজ হয়ে যাওয়া স্নায়ুকে রিদমের (ছন্দ) মাধ্যমে জাগিয়ে তোলাই মিউজিক থেরাপির মূল কাজ। মিউজিক থেরাপি মূলত মানুষের মন, শরীর ও মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করে মানুষকে সুস্থ-স্বাভাবিক রাখতে সহযোগিতা করে।
মানবদেহে কানের মধ্য দিয়ে সুরতরঙ্গাকারে প্রবেশ করে। আর সেই সুর স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে প্রবাহিত হয় মস্তিষ্কে। সংগীত এমন এক মাধ্যম, যা মস্তিষ্কের সব অংশকেই উজ্জীবিত করে। সংগীতের সুর ও তাল বা বিট মস্তিষ্কের কার্যকলাপকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক করে তোলে। মানুষের হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিক করে। সংগীতের এই প্রভাবকেই চিকিৎসার কাজে লাগানোর নাম মিউজিক থেরাপি।
মিউজিক থেরাপি একদিকে যেমন মন ভালো রাখে, অন্যদিকে ভালো রাখে মস্তিষ্ক আর হৃদযন্ত্রকে। অনেক ক্ষেত্রে রোগীর অস্ত্রোপচারের সময়েও অনেক জায়গায় হালকা সুরের ব্যবস্থা রাখা হয়। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। ক্রিটিক্যাল কেয়ার নামের জার্নালে ২০১৫ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচার হয়েছে এমন কিছু লোকের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, ধ্রুপদি সংগীত সরাসরি কানে প্রবেশ করলে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি চোখ বুঁজে থাকলে তাদের ঘুমানোটা সহজ হয়। শুধু তাই নয়, ঘুমের সমস্যায় যাঁরা ভোগেন, তাঁরাও এই থেরাপি নিলে সহজে ঘুমাতে পারেন। অস্ত্রোপচারকক্ষে (ওটি) হালকা সুর চললে তা রোগীকে আশ্বস্ত করে। রোগী অনেক সময় ভয় ও ব্যথা থেকে দূরে থাকে। বিশেষ করে অ্যানেসথেসিয়ায় মিউজিক থেরাপির ভূমিকা প্রশংসনীয়। এমনকি ক্যানসার রোগীদের কেমোথেরাপিতেও মিউজিক থেরাপি রোগীর কষ্ট কমাতে সহযোগিতা করে।
মানুষের শরীরে সংগীতের বিস্তৃত প্রভাব রয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সেলিম হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মানুষ যখন মানসিকভাবে প্রচণ্ড চাপে থাকে, তখন তার মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলো বেশ আন্দোলিত হয়। সে সময় সংগীত শুনলে এর রিদম মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলোকে শান্ত হতে সহায়তা করে। যেমন—আপনি যদি শাহবাগ মোড়ে গিয়ে দাঁড়ান, তাহলে অনেক ধরনের শব্দ শুনতে পাবেন। এরপর আপনি এমন কোনো স্থানে গেলেন, যেখানে হালকা সংগীত চালু রয়েছে। সেখানে আপনা-আপনি আপনার মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আসবে।। এভাবে চিকিৎসার ক্ষেত্রে মিউজিক থেরাপি ব্যবহার করা হচ্ছে।’
অস্ত্রোপচারকক্ষে হালকা সুর চালানোর কারণ সম্পর্কে মো. সেলিম হোসেন বলেন, ‘অস্ত্রোপচারের জন্য মানুষকে যখন ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন রোগীর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনা খুব মুশকিল হয়ে পড়ে। এ কারণে রোগীকে ওটিতে নেওয়ার আগে অন্য এক কক্ষে নিয়ে তাঁর মন শান্ত রাখার জন্য শব্দবিহীন সুর শোনানো হয়। এতে রোগীর মস্তিষ্কের কার্যকলাপ আস্তে আস্তে শান্ত হয়।’
মিউজিকের রিদমকে কাজে লাগিয়ে রোগীকে রোগ থেকে দূরে রাখার বিষয়ে মো. সেলিম হোসেন বলেন, ‘হার্টবিট বেড়ে গেলে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে শরীরে কিছু সমস্যা তৈরি হয়। এ ক্ষেত্রে সংগীতকে যদি থেরাপি হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তাহলে হার্টবিট কমে যাবে। যেমন—রোগীর হার্টবিট বেশি ওঠানামা করলে, ডেলিভারিতে তার হার্টবিটের সঙ্গে মিল রেখে মিউজিকের রিদমকে সামঞ্জস্য করা হয়। কারও হার্টবিট বেশি বেড়ে গেলে সে ক্ষেত্রে শব্দবিহীন মিউজিকের মাধ্যমে আস্তে আস্তে রোগীর হার্টবিট কমানোর চেষ্টা করা হয়। এ ক্ষেত্রে রোগীর পছন্দ জানা থাকলে তার পছন্দের মিউজিক শোনানো হয়। জানা না থাকলে শুধু সুর শোনানোর চেষ্টা করা হয়। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রোগীকে স্থিতিশীল অবস্থায় আনা হয়। আর রোগীকে দীর্ঘ সময়ের জন্য সুস্থ রাখতে চাইলে প্রতিদিন সকাল-বিকেল রোগীর পছন্দের সুর বা গান শোনানোর ব্যবস্থা করা হয়। এতে রোগীর স্নায়ু শান্ত হয়। আর রোগী আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে ওঠে।’
স্মৃতিশক্তি ফিরিয়ে আনতেও কার্যকর সংগীত। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, চেনা বা পছন্দের সুর স্মৃতি ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে ভালো কাজে দেয়। স্মৃতি সংরক্ষণের সঙ্গে যুক্ত স্নায়ু সংগীতের মাধ্যমে উদ্দীপিত হয়। একই কথা বললেন মো. সেলিম হোসেনও। তিনি বলেন, ‘মানুষের স্মৃতিশক্তি ফিরিয়ে আনতে মিউজিক থেরাপির ভূমিকা অনেক বেশি। সংগীত এমন একটা বিষয়, যা শোনার পর আপনার মস্তিষ্কের সব অংশ একসঙ্গে ক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে। গান শোনার সঙ্গে সঙ্গে চিন্তাশক্তিও বাড়ে। চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, যাঁরা মিউজিক থেরাপি নেন, তাঁদের আলঝেইমার বা স্মৃতিশক্তি সম্পর্কিত রোগের আশঙ্কা কমে। ক্যানসারের ক্ষেত্রেও মিউজিক থেরাপির ভূমিকা অনবদ্য। ক্যানসারের জন্য দায়ী কোষের বৃদ্ধি কমাতে মিউজিক থেরাপি কাজ করে।’
এ ছাড়া স্ট্রোকের ক্ষেত্রে যদি রোগীকে হারমোনিয়াম, গিটার, পিয়ানো, বাঁশি, ভায়োলিনের মতো কোনো যন্ত্র বাজাতে দেওয়া হয়, এতে হারমোনিয়াম বা পিয়ানোতে রোগীর আঙুলের ব্যবহার মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে, যা মস্তিষ্ককে ক্রিয়াশীল করে। এ থেরাপি বিশ্বের বহু দেশেই এখন প্রচলিত। এমনকি আলঝেইমার রোগীদের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, তিনি হয়তো তাঁর একেবারে কাছের মানুষকেই চিনতে পারছেন না; কিন্তু ঠিকই পিয়ানো বাজাতে পারছেন। এটা সম্ভব হচ্ছে, পিয়ানো বা হারমোনিয়ামের রিডের স্মৃতি আর শুধু মস্তিষ্কে থাকে না, এটা পেশির স্মৃতিতেও চলে যায়। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন কথা বলা হয়েছে। মিউজিক থেরাপির কথা যদিও বাংলাদেশের খুব কম মানুষ জানে। সংগীত সাধারণভাবে বিনোদনের অংশ হিসেবেই এখানে বিবেচিত হয়। কিন্তু চাইলেই সুর ও সংগীতকে কাজে লাগিয়ে চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে যাওয়া যায়। বিশেষত মনোরোগের ক্ষেত্রে এই থেরাপি বেশ কাজে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘মানসিক সমস্যায় মানুষের স্বাভাবিক চিন্তা ও আচরণের ছন্দপতন হয়। এটি দীর্ঘস্থায়ী হলে তা মানসিক অসুস্থতায় রূপ নেয়। এই সময়ে মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর মধ্যে চলমান স্বাভাবিক নিউরাল নেটওয়ার্ক পরিবর্তিত হয়ে অসুস্থ নিউরাল নেটওয়ার্কে পরিণত হতে পারে। গ্রামের সবুজ মাঠে কোনাকুনি হাঁটতে থাকলে কিছুদিন পর সবুজ ঘাস মরে গিয়ে একটা মেঠো পথ তৈরি হয়। আবার সেই পথের গতি রোধ করলে আস্তে আস্তে ঘাস গজিয়ে মেঠো পথ বিলীন হয়ে সবুজ হয়ে যায়। ব্যাপারটা ঠিক সে রকম। মিউজিক থেরাপিতে ব্যক্তিকে সংগীতের মাধ্যমে এমনভাবে সম্পৃক্ত করা হয়, যাতে ব্যক্তি তার অসুস্থ নিউরাল নেটওয়ার্কে ফাটল ধরাতে পারে। এ কাজ করতে গিয়ে ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে একজন প্রশিক্ষিত থেরাপিস্ট সংগীত লেখা, তাতে সুর দেওয়া, বাদ্যযন্ত্র বাজানো অথবা শুধু পছন্দের গান শোনাতে পারেন। ফলে ব্যক্তি সুস্থ চিন্তা করার শক্তি পায়, যার বহিঃপ্রকাশ ইতিবাচক আচরণের মাধ্যমে ঘটে। এভাবে ধীরে ধীরে ব্যক্তি সুস্থতার দিকে ধাবিত হয়।’
মিউজিক থেরাপি বিষয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মেখলা সরকার বলেন, ‘সংগীতের সঙ্গে আমাদের আবেগ কাজ করে। যাদের স্মৃতি নষ্ট হয়ে যায়, তাদের পুরোনো স্মৃতি জমা থাকে। তারা নতুন কোনো স্মৃতি মনে রাখতে পারেন না। স্মৃতি নষ্ট হয়ে গেলে নতুন পরিবেশে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে তারা। সবকিছু অচেনা লাগে। এ ক্ষেত্রে যদি রোগীকে তার পছন্দের পুরোনো দিনের গান শোনানো হয়, রোগী সেই গান শুনে পুরোনো অনেক স্মৃতি মনে করতে পারে। এ ক্ষেত্রে রোগী গান শুনতে শুনতে পরিচিত পরিবেশের মধ্যে আছে মনে করে। এ ছাড়া সংগীতে একধরনের ছন্দ আছে, যা মনের অস্থিরতা, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, হতাশা দূর করে। তাই মানসিক প্রশান্তির জন্য গান হতে পারে চমৎকার একটি ওষুধ। আবার অনেক ক্ষেত্রে স্মৃতিশক্তি বাড়াতে নতুন গান শিখতে বলা হয়। নতুন গান বা সুর তৈরি করতে শিখলে মস্তিষ্কে নতুন নতুন সংযোগ তৈরি হয়। এতে মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি বাড়তে থাকে। এমনকি করোনার সংক্রমণ রোধেও মিউজিক থেরাপি প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে। এ ছাড়া নিয়মিত সংগীতের রেওয়াজ করলে বা গান শুনলে আমাদের হৃৎপিণ্ড এবং মস্তিষ্কের কার্যকলাপ অনেক ভালো থাকে।’

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

প্রকৃতির সঙ্গে সংগীতের রয়েছে অদ্ভুত এক সম্পর্ক। এই যে পানির বয়ে চলার শব্দ, পাখির কুহু কুহু ডাক, মেঘেদের ছুটে চলা, গাছ থেকে পাতা ঝরে পড়ার শব্দ—এসবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সংগীতের সুর। অথবা বলা যায়, এসবের মাঝেই খুঁজে পাওয়া যাবে সংগীতের সুর, তাল ও লয়।
০৮ জানুয়ারি ২০২২
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

প্রকৃতির সঙ্গে সংগীতের রয়েছে অদ্ভুত এক সম্পর্ক। এই যে পানির বয়ে চলার শব্দ, পাখির কুহু কুহু ডাক, মেঘেদের ছুটে চলা, গাছ থেকে পাতা ঝরে পড়ার শব্দ—এসবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সংগীতের সুর। অথবা বলা যায়, এসবের মাঝেই খুঁজে পাওয়া যাবে সংগীতের সুর, তাল ও লয়।
০৮ জানুয়ারি ২০২২
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

প্রকৃতির সঙ্গে সংগীতের রয়েছে অদ্ভুত এক সম্পর্ক। এই যে পানির বয়ে চলার শব্দ, পাখির কুহু কুহু ডাক, মেঘেদের ছুটে চলা, গাছ থেকে পাতা ঝরে পড়ার শব্দ—এসবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সংগীতের সুর। অথবা বলা যায়, এসবের মাঝেই খুঁজে পাওয়া যাবে সংগীতের সুর, তাল ও লয়।
০৮ জানুয়ারি ২০২২
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

প্রকৃতির সঙ্গে সংগীতের রয়েছে অদ্ভুত এক সম্পর্ক। এই যে পানির বয়ে চলার শব্দ, পাখির কুহু কুহু ডাক, মেঘেদের ছুটে চলা, গাছ থেকে পাতা ঝরে পড়ার শব্দ—এসবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সংগীতের সুর। অথবা বলা যায়, এসবের মাঝেই খুঁজে পাওয়া যাবে সংগীতের সুর, তাল ও লয়।
০৮ জানুয়ারি ২০২২
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে