আজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতের পররাষ্ট্রনীতি যে দীর্ঘদিন ধরেই একটি স্বকীয় পথের সন্ধান করছে, তার একটি উজ্জ্বল প্রমাণ হলো, স্বল্প বিরতিতে চীন, রাশিয়া এবং সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ নেতাদের দেশটিতে আতিথেয়তা দেওয়া। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ডিসেম্বরেই ভারতে আসার কথা। ইউক্রেন আক্রমণের পর এটি হবে তাঁর প্রথম ভারত সফর। আগামী বছর ব্রিকস সম্মেলনের আয়োজন করছে ভারত, সেখানে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের উপস্থিতিও প্রায় নিশ্চিত। এ বছরের কোয়াড সম্মেলন—যেখানে যুক্তরাষ্ট্রও সদস্য—এ মাসেই ভারতে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দেওয়ায় তা পিছিয়ে গেছে। নতুন তারিখ ঠিক হলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ভারতে আসতে পারেন।
কিন্তু এই গল্পের একটি অন্ধকার দিকও আছে। ভারতের সমদূরত্ব নীতি বা সবার সঙ্গে সমান দূরত্ব বজায় রাখা অনেক সময় ‘দূরবর্তী বা নিরাসক্ত’ আচরণ হিসেবে দেখা হয়। এর স্পষ্ট উদাহরণ দেখা গেল—ট্রাম্পের ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর সময়। তাঁর যুক্তি ছিল বাণিজ্যঘাটতি আর রাশিয়া থেকে ভারতের অপরিশোধিত তেল কেনা। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও বেশি বাণিজ্য উদ্বৃত্ত থাকা দেশগুলো বা রাশিয়ান জ্বালানির ওপর বেশি নির্ভরশীল দেশগুলো একই মাত্রার শাস্তি পায়নি। বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় চীনকে ছাড় দেওয়া হয়েছে, আর মার্কিন মিত্র হওয়ায় জাপান-তুরস্কও রেহাই পেয়েছে। এই বৈষম্য দেখায় যে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় ভারতের নিজস্ব কৌশলগত অপরিহার্য অবস্থান এখনো দুর্বল। ভারতের জন্য প্রধান শিক্ষা হলো—আত্মনির্ভর পররাষ্ট্রনীতিকে আরও উদ্যোগী ও দৃঢ় রূপে গড়ে তোলা।
২০২৫ সালটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য ২০১৪ সালের ক্ষমতায় আসার পর সবচেয়ে কঠিন কূটনৈতিক বছর হয়ে উঠেছে। এপ্রিলে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর মে মাসে চার দিনের ভারত-পাকিস্তান সংঘাত শুরু হয়। সময়ের দিক থেকে ছোট হলেও, গত কয়েক দশকের সবচেয়ে তীব্র মুখোমুখি অবস্থান ছিল এটি।
এই সংঘাত থেকেই ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের অবনতি শুরু হয়। ট্রাম্প দাবি করেন, তাঁর মধ্যস্থতাতেই দুই দেশের সংঘাত থেমেছে। দিল্লি এই দাবি অস্বীকার করে, কিন্তু ইসলামাবাদ তা আগ্রহ নিয়ে প্রচার করতে থাকে। পরিস্থিতিকে আরও বিব্রতকর করে তোলে ওয়াশিংটনের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা। সংঘাতের পরপরই পাকিস্তান সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে দুই দফা হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানানো হয়। জুনে মোদি ও ট্রাম্পের ফোনালাপে ট্রাম্প নাকি মোদি ও মুনিরকে একসঙ্গে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানানোর প্রস্তাব দেন। কাশ্মীরসহ ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ বরাবরই না মানার নীতি অনুসরণ করে মোদি তা প্রত্যাখ্যান করেন। এর পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্কে স্পষ্ট শীতলতা নেমে আসে। সেপ্টেম্বরে গিয়ে দুজন আবার কথা বলার আগপর্যন্ত তাঁরা আর যোগাযোগ করেননি।
মাঝখানের সময়টায় দুই দেশের সম্পর্কে দ্রুত অবনতি দেখা দেয়। আগস্টে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বাণিজ্যচুক্তি চূড়ান্ত করতে না পারা, তার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আরোপ করা সর্বোচ্চ শুল্কের ধাক্কা—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি তিক্ত হয়ে ওঠে। ট্রাম্প ভারতের অর্থনীতিকে ‘মৃত’ বলে কটাক্ষ করেন, দাবি করেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের ব্যবসা সামান্যই। তার সঙ্গে যোগ হয় তাঁর বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারোর তীক্ষ্ণ মন্তব্য—ভারত নাকি ‘ক্রেমলিনের লন্ড্রি।’ এসব মন্তব্য দুই দেশের আস্থার ভিত্তি আরও দুর্বল করে দেয়।
সাম্প্রতিক কালে দুই নেতার শান্ত সুর ইঙ্গিত দিচ্ছে, উত্তেজনা হয়তো কমছে, আর শেষমেশ একটি বাণিজ্যচুক্তিও হতে পারে। তবু দিল্লির আগের অযৌক্তিক উচ্ছ্বাস হারিয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দ্বিতীয় মেয়াদ নিয়ে ভারতীয়দের যে প্রবল আশাবাদ ছিল, তা আজ আর নেই। একই সঙ্গে মিলিয়ে গেছে সেই দাবি যে নরেন্দ্র মোদি ও ট্রাম্প নাকি বিশেষ কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্কে আবদ্ধ। মোদি দীর্ঘদিন ধরে ব্যক্তিনির্ভর পররাষ্ট্রনীতির গর্ব করেছেন, যেখানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বনেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ট্রাম্পের খামখেয়ালি ও লেনদেনভিত্তিক নীতির সামনে তা কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি।
আরও গভীরে, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো ভারতের পররাষ্ট্রনীতির বৃহত্তর সংকটগুলোই উন্মোচন করে। পররাষ্ট্রনীতিতে ভারত বহুদিন ধরে কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের যে নীতি ধরে রেখেছে, তা যেমন আশীর্বাদ, তেমনি দায়ও হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে, এর কারণে ভারতের হাতে রয়েছে নানা কূটনৈতিক পথ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা। ২০২০ সালে সীমান্ত সংঘর্ষের পর যখন চীন-ভারত সম্পর্ক তলানিতে যায়, তখনই এই নমনীয়তার ফল দেখা যায়। দিল্লি তখন ওয়াশিংটনের সঙ্গে সহযোগিতা আরও গভীর করে, বিশেষ করে কোয়াড কাঠামোয় ভারতের অংশগ্রহণ যেভাবে বাড়ানো হয়—তা তার স্পষ্ট উদাহরণ।
এমন বহুমাত্রিক ও বিস্তৃত পররাষ্ট্রনীতি ভারতের জন্য একটি পরিষ্কার সুবিধা এনে দেয়—কোনো এক দেশের ওপর নির্ভরশীল না হওয়া। ২০২৪ সালের মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, ভারতের উচিত প্রশংসিত হওয়া। কারণ, দেশটি পররাষ্ট্রনীতিতে ‘বহু বিকল্প’ পথ ধরে রেখেছে।
কিন্তু গত এক বছরের ঘটনাপ্রবাহ এই অবস্থানের সীমাবদ্ধতা প্রকাশ পেয়েছে। যখন বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর মধ্যে কোনো নির্দিষ্ট পক্ষকে বেছে নিতে হয়, তখন কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। ঠিক যেমনটা ঘটেছিল ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে ভারতের ওপর আরোপিত শুল্ক আরোপের সময়। ইউক্রেন ইস্যুতে মস্কোর ওপর চাপ তৈরি করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নেয়। রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে ফাটল ধরতেই দিল্লির মস্কো-সম্পর্ক ওয়াশিংটনের তীক্ষ্ণ নজরে পড়ে।
ভারতের কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের শিকড় আছে স্নায়ু যুদ্ধকালের জোট নিরপেক্ষতার ধারণায়। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর ঔপনিবেশিকতার ক্ষত ভারতকে এমন কোনো জালে জড়াতে দেয়নি, যা দেশটির স্বাধীনতা বা নীতিগত স্বায়ত্তশাসনকে বিপন্ন করতে পারে। জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে ভারত তখন নিরপেক্ষ পথ বেছে নেয়। এর মূল চেতনা ছিল স্বাধীনতা রক্ষা করা এবং বৈশ্বিক শক্তিগুলোর সঙ্গেই সুসম্পর্ক রাখা, কিন্তু কারও অধীন না হওয়া। আজকের কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনও সেই ঐতিহ্যেরই ধারাবাহিকতা, যার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে নমনীয়তা ও বহুমাত্রিক কূটনৈতিক বিকল্প ধরে রাখার বাসনা।
স্নায়ুযুদ্ধ যুগের নিরপেক্ষতার নীতি কাগজে যতই চকচকে দেখাক, বাস্তবে তা সব সময় টেকেনি। ভারতের ওপর যখনই অস্তিত্বগত সংকট নেমে এসেছে, কৌশলগত নমনীয়তা দ্রুত ক্ষয়ে গেছে এবং শেষ পর্যন্ত দেশটি বাধ্য হয়েছে দুই পরাশক্তির একটির শরণাপন্ন হতে। ১৯৬২ সালে চীন-ভারত যুদ্ধের তীব্রতম মুহূর্তে নয়াদিল্লি যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সামরিক সমন্বয়ের কথা ভাবছিল, তখনই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ১৯৭১ সালেও একই দৃশ্য। পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধের আগে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করে ভারত। কারণ, তখন ইসলামাবাদ হাত মিলিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে।
স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে কৌশলগত বাস্তবতা ভারতকে নিরপেক্ষতার নীতি ছাড়তে বাধ্য করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার পর নয়াদিল্লি বুঝতে পারে, হারিয়ে গেছে গুরুত্বপূর্ণ বাজার আর পণ্যবিনিময়ের বিশেষ সুবিধা। তাই বৈদেশিক সম্পর্ক নতুন করে সাজানো ছাড়া উপায় ছিল না। এই পরিস্থিতিই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের নতুন ঘনিষ্ঠতার পথ খুলে দেয়। তবে একই সঙ্গে ভারত বহুমুখী বা সর্বমুখী কূটনীতির নীতি বজায় রাখে। বরং স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী এক মেরু বিশ্বব্যবস্থা ম্লান হয়ে বহু-মেরু প্রতিযোগিতা ফিরে আসায় বিষয়টির গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কে যে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে, তা ভারতের জন্য আরও সক্রিয় কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের প্রয়োজনীয়তা সামনে নিয়ে আসে। দক্ষিণ আফ্রিকায় সাম্প্রতিক জি-২০ সম্মেলনে মোদির অংশগ্রহণ এবং অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় প্রযুক্তি-উদ্ভাবন অংশীদারত্বের ঘোষণা দেখায় যে নয়াদিল্লির লক্ষ্য হলো—গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠা, পশ্চিমের ঘনিষ্ঠ অংশীদার হওয়া এবং দুই পক্ষের মাঝে সেতুবন্ধন রচনা করা। মোদি সরকার ভারতকে ‘বিশ্বমিত্র’ বলেও আখ্যা দিয়েছে। তবে বিশ্বমিত্র হওয়া আর বিশ্বকে একে অপরের বন্ধু বানাতে সাহায্য করা—দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে।
রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি ইরান ও ইসরায়েলের সঙ্গেও সম্পর্ক রাখলেও সাম্প্রতিক ইউক্রেন যুদ্ধ কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত প্রশমনে নয়াদিল্লির সক্রিয় ভূমিকা ছিল সীমিত। অথচ কাতার, তুরস্ক, ব্রাজিল, এমনকি চীনও যে ভূমিকা নিয়েছে, ভারত সেই জায়গা থেকে অনেকটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। ভূমিকা নিলে তা ভারতের ঐতিহাসিক চরিত্রের সঙ্গেই মানানসই হতো। কারণ, তখন ভারত আজকের তুলনায় অনেক দুর্বল দেশ হয়েও মধ্যস্থতায় ছিল বেশ সক্রিয়। পঞ্চাশের দশকে কোরীয় যুদ্ধ থেকে তাইওয়ান প্রণালির সংকট—বহু আন্তর্জাতিক বিরোধে ভারতের কণ্ঠ ছিল বিশেষভাবে প্রভাবশালী।
ভারত বরং দূরেই থাকতে চেয়েছে। এর প্রমাণ মিলেছে নীরব এক অক্টোবরে। এই সময়ে মোদি দুটো গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে যাননি—শারম আল শেখে গাজা শান্তি সম্মেলন এবং কুয়ালালামপুরে পূর্ব এশিয়া সম্মেলন। দুটিতেই আমন্ত্রণ ছিল, তবু তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। পূর্ব ও পশ্চিম এশিয়া (মধ্যপ্রাচ্য) যেগুলোকে ভারত তার ‘বর্ধিত প্রতিবেশ’ বলে মনে করে, সেখানে এমন দুটি বৈঠকের আয়োজন ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতির দূরত্ব ও দুর্বলতাকেই স্পষ্ট করে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানই এখানে দেখাচ্ছে একপ্রকার সক্রিয় কূটনীতির পাঠ। ইসলামাবাদও নিজস্ব ধরনের কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন চর্চা করছে; চীন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইরান আর উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর সঙ্গে একযোগে সম্পর্ক জোরদার করছে। নয়াদিল্লি যেখানে ভূরাজনীতির জ্বলন্ত ইস্যুগুলো থেকে দূরে থাকতে চায়, সেখানে ইসলামাবাদ বরাবরই সেখানেই ঝাঁপিয়ে পড়ে। ষাটের দশকের শেষভাগে চীন-যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠতার মধ্যস্থতা থেকে শুরু করে আশির দশকে সোভিয়েত আগ্রাসন ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়া, দুই হাজারের দশকে সন্ত্রাসবিরোধী বৈশ্বিক যুদ্ধে অংশগ্রহণ, আর সম্প্রতি সৌদি আরবের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা কাঠামোয় অবদান—সবকিছুই সেই প্রবণতার অংশ।
পাকিস্তান কতটা টেকসইভাবে এই পথ ধরে এগোতে পারবে, সেটি অবশ্যই আলাদা প্রশ্ন। কারণ, দেশটির পররাষ্ট্রনীতির ভেতরেই রয়েছে বহু বৈপরীত্য। যেমন চীনের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রকেও একসঙ্গে বন্দর প্রকল্পের প্রস্তাব দেওয়া। অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা আর সীমান্তের টানাপোড়েনে জর্জরিত অবস্থায় ইসলামাবাদ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে কীভাবে বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেবে, সেটাও অজানা। তবুও, সক্রিয় ও উদ্যোগী কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন বলতে কী বোঝায়, তার একটি উদাহরণ ইসলামাবাদ দিয়েছে—যা নয়াদিল্লিতে সচরাচর দেখা যায় না।
বাড়তে থাকা বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার সময়ে ভারতকে নতুনভাবে ভাবতে হবে কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের ধারণাকে। এ বছর ভারত-মার্কিন সম্পর্কের শীতলতা দেখিয়ে দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ‘স্বাভাবিক মিত্র’ হিসেবে ভারতের মর্যাদা কোনোভাবেই নিশ্চিত নয়। দীর্ঘদিন যেসব সিদ্ধান্ত নিতে ভারত অনীহা দেখিয়েছে, এখন ক্রমাগত চাপ বাড়ছে সেসব বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করার। আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় নিজেকে আরও অপরিহার্য করে তুলতে পারলেই ভারত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রোষ অথবা অন্য যেকোনো দেশের খামখেয়ালি আচরণ থেকে বেশি সুরক্ষিত থাকবে। কপ-৩০ এবং সাম্প্রতিক জি-২০ সম্মেলনসহ বৈশ্বিক পরিসরে ট্রাম্প প্রশাসনের অনুপস্থিত কিংবা কখনো-সখনো অস্থিতিশীল ভূমিকা নেতৃত্বহীনতার এক শূন্যতা তৈরি করেছে। ভারত চাইলে ঠিক এই মুহূর্তটিই তার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হয়ে উঠতে পারে।
ফরেন পলিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ভারতের পররাষ্ট্রনীতি যে দীর্ঘদিন ধরেই একটি স্বকীয় পথের সন্ধান করছে, তার একটি উজ্জ্বল প্রমাণ হলো, স্বল্প বিরতিতে চীন, রাশিয়া এবং সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ নেতাদের দেশটিতে আতিথেয়তা দেওয়া। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ডিসেম্বরেই ভারতে আসার কথা। ইউক্রেন আক্রমণের পর এটি হবে তাঁর প্রথম ভারত সফর। আগামী বছর ব্রিকস সম্মেলনের আয়োজন করছে ভারত, সেখানে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের উপস্থিতিও প্রায় নিশ্চিত। এ বছরের কোয়াড সম্মেলন—যেখানে যুক্তরাষ্ট্রও সদস্য—এ মাসেই ভারতে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দেওয়ায় তা পিছিয়ে গেছে। নতুন তারিখ ঠিক হলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ভারতে আসতে পারেন।
কিন্তু এই গল্পের একটি অন্ধকার দিকও আছে। ভারতের সমদূরত্ব নীতি বা সবার সঙ্গে সমান দূরত্ব বজায় রাখা অনেক সময় ‘দূরবর্তী বা নিরাসক্ত’ আচরণ হিসেবে দেখা হয়। এর স্পষ্ট উদাহরণ দেখা গেল—ট্রাম্পের ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর সময়। তাঁর যুক্তি ছিল বাণিজ্যঘাটতি আর রাশিয়া থেকে ভারতের অপরিশোধিত তেল কেনা। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও বেশি বাণিজ্য উদ্বৃত্ত থাকা দেশগুলো বা রাশিয়ান জ্বালানির ওপর বেশি নির্ভরশীল দেশগুলো একই মাত্রার শাস্তি পায়নি। বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় চীনকে ছাড় দেওয়া হয়েছে, আর মার্কিন মিত্র হওয়ায় জাপান-তুরস্কও রেহাই পেয়েছে। এই বৈষম্য দেখায় যে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় ভারতের নিজস্ব কৌশলগত অপরিহার্য অবস্থান এখনো দুর্বল। ভারতের জন্য প্রধান শিক্ষা হলো—আত্মনির্ভর পররাষ্ট্রনীতিকে আরও উদ্যোগী ও দৃঢ় রূপে গড়ে তোলা।
২০২৫ সালটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য ২০১৪ সালের ক্ষমতায় আসার পর সবচেয়ে কঠিন কূটনৈতিক বছর হয়ে উঠেছে। এপ্রিলে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর মে মাসে চার দিনের ভারত-পাকিস্তান সংঘাত শুরু হয়। সময়ের দিক থেকে ছোট হলেও, গত কয়েক দশকের সবচেয়ে তীব্র মুখোমুখি অবস্থান ছিল এটি।
এই সংঘাত থেকেই ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের অবনতি শুরু হয়। ট্রাম্প দাবি করেন, তাঁর মধ্যস্থতাতেই দুই দেশের সংঘাত থেমেছে। দিল্লি এই দাবি অস্বীকার করে, কিন্তু ইসলামাবাদ তা আগ্রহ নিয়ে প্রচার করতে থাকে। পরিস্থিতিকে আরও বিব্রতকর করে তোলে ওয়াশিংটনের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা। সংঘাতের পরপরই পাকিস্তান সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে দুই দফা হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানানো হয়। জুনে মোদি ও ট্রাম্পের ফোনালাপে ট্রাম্প নাকি মোদি ও মুনিরকে একসঙ্গে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানানোর প্রস্তাব দেন। কাশ্মীরসহ ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ বরাবরই না মানার নীতি অনুসরণ করে মোদি তা প্রত্যাখ্যান করেন। এর পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্কে স্পষ্ট শীতলতা নেমে আসে। সেপ্টেম্বরে গিয়ে দুজন আবার কথা বলার আগপর্যন্ত তাঁরা আর যোগাযোগ করেননি।
মাঝখানের সময়টায় দুই দেশের সম্পর্কে দ্রুত অবনতি দেখা দেয়। আগস্টে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বাণিজ্যচুক্তি চূড়ান্ত করতে না পারা, তার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আরোপ করা সর্বোচ্চ শুল্কের ধাক্কা—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি তিক্ত হয়ে ওঠে। ট্রাম্প ভারতের অর্থনীতিকে ‘মৃত’ বলে কটাক্ষ করেন, দাবি করেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের ব্যবসা সামান্যই। তার সঙ্গে যোগ হয় তাঁর বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারোর তীক্ষ্ণ মন্তব্য—ভারত নাকি ‘ক্রেমলিনের লন্ড্রি।’ এসব মন্তব্য দুই দেশের আস্থার ভিত্তি আরও দুর্বল করে দেয়।
সাম্প্রতিক কালে দুই নেতার শান্ত সুর ইঙ্গিত দিচ্ছে, উত্তেজনা হয়তো কমছে, আর শেষমেশ একটি বাণিজ্যচুক্তিও হতে পারে। তবু দিল্লির আগের অযৌক্তিক উচ্ছ্বাস হারিয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দ্বিতীয় মেয়াদ নিয়ে ভারতীয়দের যে প্রবল আশাবাদ ছিল, তা আজ আর নেই। একই সঙ্গে মিলিয়ে গেছে সেই দাবি যে নরেন্দ্র মোদি ও ট্রাম্প নাকি বিশেষ কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্কে আবদ্ধ। মোদি দীর্ঘদিন ধরে ব্যক্তিনির্ভর পররাষ্ট্রনীতির গর্ব করেছেন, যেখানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বনেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ট্রাম্পের খামখেয়ালি ও লেনদেনভিত্তিক নীতির সামনে তা কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি।
আরও গভীরে, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো ভারতের পররাষ্ট্রনীতির বৃহত্তর সংকটগুলোই উন্মোচন করে। পররাষ্ট্রনীতিতে ভারত বহুদিন ধরে কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের যে নীতি ধরে রেখেছে, তা যেমন আশীর্বাদ, তেমনি দায়ও হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে, এর কারণে ভারতের হাতে রয়েছে নানা কূটনৈতিক পথ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা। ২০২০ সালে সীমান্ত সংঘর্ষের পর যখন চীন-ভারত সম্পর্ক তলানিতে যায়, তখনই এই নমনীয়তার ফল দেখা যায়। দিল্লি তখন ওয়াশিংটনের সঙ্গে সহযোগিতা আরও গভীর করে, বিশেষ করে কোয়াড কাঠামোয় ভারতের অংশগ্রহণ যেভাবে বাড়ানো হয়—তা তার স্পষ্ট উদাহরণ।
এমন বহুমাত্রিক ও বিস্তৃত পররাষ্ট্রনীতি ভারতের জন্য একটি পরিষ্কার সুবিধা এনে দেয়—কোনো এক দেশের ওপর নির্ভরশীল না হওয়া। ২০২৪ সালের মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, ভারতের উচিত প্রশংসিত হওয়া। কারণ, দেশটি পররাষ্ট্রনীতিতে ‘বহু বিকল্প’ পথ ধরে রেখেছে।
কিন্তু গত এক বছরের ঘটনাপ্রবাহ এই অবস্থানের সীমাবদ্ধতা প্রকাশ পেয়েছে। যখন বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর মধ্যে কোনো নির্দিষ্ট পক্ষকে বেছে নিতে হয়, তখন কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। ঠিক যেমনটা ঘটেছিল ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে ভারতের ওপর আরোপিত শুল্ক আরোপের সময়। ইউক্রেন ইস্যুতে মস্কোর ওপর চাপ তৈরি করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নেয়। রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে ফাটল ধরতেই দিল্লির মস্কো-সম্পর্ক ওয়াশিংটনের তীক্ষ্ণ নজরে পড়ে।
ভারতের কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের শিকড় আছে স্নায়ু যুদ্ধকালের জোট নিরপেক্ষতার ধারণায়। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর ঔপনিবেশিকতার ক্ষত ভারতকে এমন কোনো জালে জড়াতে দেয়নি, যা দেশটির স্বাধীনতা বা নীতিগত স্বায়ত্তশাসনকে বিপন্ন করতে পারে। জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে ভারত তখন নিরপেক্ষ পথ বেছে নেয়। এর মূল চেতনা ছিল স্বাধীনতা রক্ষা করা এবং বৈশ্বিক শক্তিগুলোর সঙ্গেই সুসম্পর্ক রাখা, কিন্তু কারও অধীন না হওয়া। আজকের কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনও সেই ঐতিহ্যেরই ধারাবাহিকতা, যার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে নমনীয়তা ও বহুমাত্রিক কূটনৈতিক বিকল্প ধরে রাখার বাসনা।
স্নায়ুযুদ্ধ যুগের নিরপেক্ষতার নীতি কাগজে যতই চকচকে দেখাক, বাস্তবে তা সব সময় টেকেনি। ভারতের ওপর যখনই অস্তিত্বগত সংকট নেমে এসেছে, কৌশলগত নমনীয়তা দ্রুত ক্ষয়ে গেছে এবং শেষ পর্যন্ত দেশটি বাধ্য হয়েছে দুই পরাশক্তির একটির শরণাপন্ন হতে। ১৯৬২ সালে চীন-ভারত যুদ্ধের তীব্রতম মুহূর্তে নয়াদিল্লি যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সামরিক সমন্বয়ের কথা ভাবছিল, তখনই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ১৯৭১ সালেও একই দৃশ্য। পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধের আগে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করে ভারত। কারণ, তখন ইসলামাবাদ হাত মিলিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে।
স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে কৌশলগত বাস্তবতা ভারতকে নিরপেক্ষতার নীতি ছাড়তে বাধ্য করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার পর নয়াদিল্লি বুঝতে পারে, হারিয়ে গেছে গুরুত্বপূর্ণ বাজার আর পণ্যবিনিময়ের বিশেষ সুবিধা। তাই বৈদেশিক সম্পর্ক নতুন করে সাজানো ছাড়া উপায় ছিল না। এই পরিস্থিতিই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের নতুন ঘনিষ্ঠতার পথ খুলে দেয়। তবে একই সঙ্গে ভারত বহুমুখী বা সর্বমুখী কূটনীতির নীতি বজায় রাখে। বরং স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী এক মেরু বিশ্বব্যবস্থা ম্লান হয়ে বহু-মেরু প্রতিযোগিতা ফিরে আসায় বিষয়টির গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কে যে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে, তা ভারতের জন্য আরও সক্রিয় কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের প্রয়োজনীয়তা সামনে নিয়ে আসে। দক্ষিণ আফ্রিকায় সাম্প্রতিক জি-২০ সম্মেলনে মোদির অংশগ্রহণ এবং অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় প্রযুক্তি-উদ্ভাবন অংশীদারত্বের ঘোষণা দেখায় যে নয়াদিল্লির লক্ষ্য হলো—গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠা, পশ্চিমের ঘনিষ্ঠ অংশীদার হওয়া এবং দুই পক্ষের মাঝে সেতুবন্ধন রচনা করা। মোদি সরকার ভারতকে ‘বিশ্বমিত্র’ বলেও আখ্যা দিয়েছে। তবে বিশ্বমিত্র হওয়া আর বিশ্বকে একে অপরের বন্ধু বানাতে সাহায্য করা—দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে।
রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি ইরান ও ইসরায়েলের সঙ্গেও সম্পর্ক রাখলেও সাম্প্রতিক ইউক্রেন যুদ্ধ কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত প্রশমনে নয়াদিল্লির সক্রিয় ভূমিকা ছিল সীমিত। অথচ কাতার, তুরস্ক, ব্রাজিল, এমনকি চীনও যে ভূমিকা নিয়েছে, ভারত সেই জায়গা থেকে অনেকটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। ভূমিকা নিলে তা ভারতের ঐতিহাসিক চরিত্রের সঙ্গেই মানানসই হতো। কারণ, তখন ভারত আজকের তুলনায় অনেক দুর্বল দেশ হয়েও মধ্যস্থতায় ছিল বেশ সক্রিয়। পঞ্চাশের দশকে কোরীয় যুদ্ধ থেকে তাইওয়ান প্রণালির সংকট—বহু আন্তর্জাতিক বিরোধে ভারতের কণ্ঠ ছিল বিশেষভাবে প্রভাবশালী।
ভারত বরং দূরেই থাকতে চেয়েছে। এর প্রমাণ মিলেছে নীরব এক অক্টোবরে। এই সময়ে মোদি দুটো গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে যাননি—শারম আল শেখে গাজা শান্তি সম্মেলন এবং কুয়ালালামপুরে পূর্ব এশিয়া সম্মেলন। দুটিতেই আমন্ত্রণ ছিল, তবু তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। পূর্ব ও পশ্চিম এশিয়া (মধ্যপ্রাচ্য) যেগুলোকে ভারত তার ‘বর্ধিত প্রতিবেশ’ বলে মনে করে, সেখানে এমন দুটি বৈঠকের আয়োজন ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতির দূরত্ব ও দুর্বলতাকেই স্পষ্ট করে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানই এখানে দেখাচ্ছে একপ্রকার সক্রিয় কূটনীতির পাঠ। ইসলামাবাদও নিজস্ব ধরনের কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন চর্চা করছে; চীন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইরান আর উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর সঙ্গে একযোগে সম্পর্ক জোরদার করছে। নয়াদিল্লি যেখানে ভূরাজনীতির জ্বলন্ত ইস্যুগুলো থেকে দূরে থাকতে চায়, সেখানে ইসলামাবাদ বরাবরই সেখানেই ঝাঁপিয়ে পড়ে। ষাটের দশকের শেষভাগে চীন-যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠতার মধ্যস্থতা থেকে শুরু করে আশির দশকে সোভিয়েত আগ্রাসন ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়া, দুই হাজারের দশকে সন্ত্রাসবিরোধী বৈশ্বিক যুদ্ধে অংশগ্রহণ, আর সম্প্রতি সৌদি আরবের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা কাঠামোয় অবদান—সবকিছুই সেই প্রবণতার অংশ।
পাকিস্তান কতটা টেকসইভাবে এই পথ ধরে এগোতে পারবে, সেটি অবশ্যই আলাদা প্রশ্ন। কারণ, দেশটির পররাষ্ট্রনীতির ভেতরেই রয়েছে বহু বৈপরীত্য। যেমন চীনের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রকেও একসঙ্গে বন্দর প্রকল্পের প্রস্তাব দেওয়া। অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা আর সীমান্তের টানাপোড়েনে জর্জরিত অবস্থায় ইসলামাবাদ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে কীভাবে বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেবে, সেটাও অজানা। তবুও, সক্রিয় ও উদ্যোগী কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন বলতে কী বোঝায়, তার একটি উদাহরণ ইসলামাবাদ দিয়েছে—যা নয়াদিল্লিতে সচরাচর দেখা যায় না।
বাড়তে থাকা বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার সময়ে ভারতকে নতুনভাবে ভাবতে হবে কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের ধারণাকে। এ বছর ভারত-মার্কিন সম্পর্কের শীতলতা দেখিয়ে দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ‘স্বাভাবিক মিত্র’ হিসেবে ভারতের মর্যাদা কোনোভাবেই নিশ্চিত নয়। দীর্ঘদিন যেসব সিদ্ধান্ত নিতে ভারত অনীহা দেখিয়েছে, এখন ক্রমাগত চাপ বাড়ছে সেসব বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করার। আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় নিজেকে আরও অপরিহার্য করে তুলতে পারলেই ভারত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রোষ অথবা অন্য যেকোনো দেশের খামখেয়ালি আচরণ থেকে বেশি সুরক্ষিত থাকবে। কপ-৩০ এবং সাম্প্রতিক জি-২০ সম্মেলনসহ বৈশ্বিক পরিসরে ট্রাম্প প্রশাসনের অনুপস্থিত কিংবা কখনো-সখনো অস্থিতিশীল ভূমিকা নেতৃত্বহীনতার এক শূন্যতা তৈরি করেছে। ভারত চাইলে ঠিক এই মুহূর্তটিই তার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হয়ে উঠতে পারে।
ফরেন পলিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

কিন্তু এই গল্পের একটি অন্ধকার দিকও আছে। ভারতের সমদূরত্ব নীতি বা সবার সঙ্গে সমান দূরত্ব বজায় রাখা অনেক সময় ‘দূরবর্তী বা নিরাসক্ত’ আচরণ হিসেবে দেখা হয়। এর স্পষ্ট উদাহরণ দেখা গেল—ট্রাম্পের ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর সময়। তাঁর যুক্তি ছিল বাণিজ্যঘাটতি আর রাশিয়া থেকে ভারতের অপরিশোধিত তেল কেনা।
২৭ নভেম্বর ২০২৫
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

কিন্তু এই গল্পের একটি অন্ধকার দিকও আছে। ভারতের সমদূরত্ব নীতি বা সবার সঙ্গে সমান দূরত্ব বজায় রাখা অনেক সময় ‘দূরবর্তী বা নিরাসক্ত’ আচরণ হিসেবে দেখা হয়। এর স্পষ্ট উদাহরণ দেখা গেল—ট্রাম্পের ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর সময়। তাঁর যুক্তি ছিল বাণিজ্যঘাটতি আর রাশিয়া থেকে ভারতের অপরিশোধিত তেল কেনা।
২৭ নভেম্বর ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

কিন্তু এই গল্পের একটি অন্ধকার দিকও আছে। ভারতের সমদূরত্ব নীতি বা সবার সঙ্গে সমান দূরত্ব বজায় রাখা অনেক সময় ‘দূরবর্তী বা নিরাসক্ত’ আচরণ হিসেবে দেখা হয়। এর স্পষ্ট উদাহরণ দেখা গেল—ট্রাম্পের ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর সময়। তাঁর যুক্তি ছিল বাণিজ্যঘাটতি আর রাশিয়া থেকে ভারতের অপরিশোধিত তেল কেনা।
২৭ নভেম্বর ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

কিন্তু এই গল্পের একটি অন্ধকার দিকও আছে। ভারতের সমদূরত্ব নীতি বা সবার সঙ্গে সমান দূরত্ব বজায় রাখা অনেক সময় ‘দূরবর্তী বা নিরাসক্ত’ আচরণ হিসেবে দেখা হয়। এর স্পষ্ট উদাহরণ দেখা গেল—ট্রাম্পের ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর সময়। তাঁর যুক্তি ছিল বাণিজ্যঘাটতি আর রাশিয়া থেকে ভারতের অপরিশোধিত তেল কেনা।
২৭ নভেম্বর ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে