আব্দুর রহমান

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর থেকেই আলোচনায় মধ্যপ্রাচ্য, চীন ও ইউক্রেন ইস্যু। তিনি আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের পর যেসব বিষয় অগ্রাধিকারভিত্তিতে সমাধানের চেষ্টা করবেন, তার একটি হলো ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ। এ ক্ষেত্রে রাশিয়া এরই মধ্যে ইউক্রেনের যেসব ভূখণ্ড দখল করেছে, সেগুলো ফেরত পাওয়া আশা হয়তো ইউক্রেনকে ছেড়ে দিতে হবে।
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প মনোনীত দূত সাবেক মার্কিন জেনারেল কিথ কেলোগের পরিকল্পনা থেকেও এমনটাই ইঙ্গিত মিলেছে। এমনকি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইদানীং যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন, সেখানেও রাশিয়া অধিকৃত ভূখণ্ড নিয়ে কোনো বক্তব্য নেই। অথচ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে জেলেনস্কি রাশিয়ার সঙ্গে যেকোনো শান্তি আলোচনার প্রধান শর্ত হিসেবে দখল করা ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গেই উল্লেখ করছিলেন।
চলতি বছরের এপ্রিলে কেলোগ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি এনএসএ–এর সাবেক চিফ অব স্টাফ ফ্রেড ফ্লেইটজ একটি কৌশলপত্র প্রকাশ করেন। সেখানে তাঁরা যুক্তি দেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা করা। এই কৌশলপত্রটি প্রকাশ করেছে আমেরিকা ফার্স্ট পলিসি ইনস্টিটিউট (এএফপিআই)। ২০২১ সালে তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা এই থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন।
এই কৌশলপত্রে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনকে ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার জন্য দায়ী করা হয়েছে। বিশেষত, ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্ত এবং রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ব্যর্থ হওয়ার কথা তারা উল্লেখ করেছে। এতে আরও অভিযোগ আনা হয়েছে যে, বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেনের মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে একটি ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।
কেলোগের লেখায় উল্লেখ করা হয়েছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিপরীতে একজন শক্তিশালী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ প্রেসিডেন্ট থাকলে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার হামলা ঠেকানো যেত। মূলত ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রতিধ্বনিই করেছেন কেলোগে।
অবশ্য বাইডেনকে দুর্বল মনে করার কারণেই পুতিনের ইউক্রেন আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন—কেলোগ ও ফ্লেইটজের এমন দাবি সপক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।
কেলোগের পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধ শেষ করার একটি আনুষ্ঠানিক নীতি প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে, যেখানে যুদ্ধবিরতি ও আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধান খোঁজার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনার মূল বিষয়গুলো হলো—যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখবে। তবে ভবিষ্যতে এই সামরিক সহায়তা নির্ভর করবে ইউক্রেন রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অংশ নেবে কিনা তার ওপর। পুতিনকে আলোচনায় রাজি করানোর জন্য ন্যাটো নেতারা ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার প্রস্তাব দিতে পারেন।
কেলোগ–ফ্লেইটজের কৌশলপত্রে আরও যেসব মূল বিষয় তুলে ধরা হয়েছে সেগুলো হলো—রাশিয়া যদি একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে, তবে কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা বিবেচনা করা হবে। এ ছাড়া, রাশিয়ার জ্বালানি বিক্রিতে শুল্ক আরোপ করে সেই অর্থ ইউক্রেন পুনর্গঠনের কাজে ব্যবহারেরও প্রস্তাব রাখা হয়েছে এই কৌশলপত্রে।
রাশিয়া ২০১৪ সালেই ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল করে নিজেদের ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ ছাড়া, ইউক্রেনের দনবাসের প্রায় ৮০ শতাংশ—যা দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক নিয়ে গঠিত এবং জাপোরিঝিয়া ও খেরসনের ৭০ শতাংশেরও বেশি, এর পাশাপাশি মাইকোলাইভ ও খারকিভের কিছু অংশ এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে।
মোট কথা, এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দল যে ধারণা হাজির করেছে, সেখানে ইউক্রেনকে তার হারানো ভূখণ্ড ছাড় দেওয়ারই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। সম্ভবত, জেলেনস্কিও বিষয়টি অনেকটা মেনে নিয়েছেন। কিছুদিন আগে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি আলোচনার জন্য প্রস্তুত। যদিও তিনি এখনো ন্যাটো সদস্যপদ নিয়ে আগ্রহী। তবে চলতি সপ্তাহে তিনি বলেছেন, দখলকৃত কিছু অঞ্চল ফিরে পাওয়ার জন্য কূটনৈতিক সমাধান খুঁজতে হবে।
অধিকৃত ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ ফেরত পাওয়ার প্রসঙ্গে জেলেনস্কির বক্তব্যে আর তেমন জোর নেই। যেখানে তাঁকে প্রতিনিয়ত জনবল সংকট এবং নতুন নতুন ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হওয়ার পাশাপাশি, অনেক অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব কষতে হচ্ছে।
সর্বশেষ গত রোববার (৮ ডিসেম্বর) ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন এলিসি প্রাসাদে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিয়ে জেলেনস্কি বলেছেন, ‘আমরা সবাই শান্তি চাই। তবে আমাদের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ...যে, এই শান্তি যেন সবার জন্য ন্যায়সংগত হয় এবং রাশিয়া, পুতিন বা অন্য কোনো আগ্রাসী কখনোই ফিরে আসার সুযোগ না পায়।’ জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘এবং এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—একটি ন্যায়সংগত শান্তি এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা, ইউক্রেনের জন্য শক্তিশালী নিরাপত্তার নিশ্চয়তা।’
ট্রাম্প বরাবরই ইউক্রেনের পেছনে সামরিক সহায়তার নামে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচের বিরোধী। এ নিয়ে তিনি সব সময়ই বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা করে এসেছেন। তিনি বরং দ্রুত সমঝোতার মাধ্যম যুদ্ধ বন্ধ করার কথা বলে আসছেন।
এলিসি প্রাসাদে বৈঠক শেষে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘জেলেনস্কি এবং ইউক্রেন একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে এবং এই পাগলামি থামাতে চাচ্ছেন। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি হওয়া উচিত এবং আলোচনার শুরু করা উচিত।’
পোস্টে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ইঙ্গিত করে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ভ্লাদিমিরকে ভালোভাবে চিনি। এটাই তাঁর জন্য কাজ করার সময়। চীন সহায়তা করতে পারে। বিশ্ব অপেক্ষায় আছে!’
এই দুই নেতার বক্তব্য থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, এলিসি প্রাসাদের আলোচনায় সেই অর্থে ইউক্রেনের হারানো ভূখণ্ডের বিষয়টি অতটা গুরুত্ব পায়নি। অথবা হতে পারে, রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে বসাতে এখনই বিষয়টি সামনে আনা হচ্ছে না।
কিন্তু ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের জন্য মনোনীত পরিকল্পনা এবং জেলেনস্কির সাম্প্রতিক বক্তব্যগুলো থেকে একটি বিষয় অনুমান করা যায় যে, ইউক্রেন হয়তো হারানো ভূখণ্ডের বিষয়টি আলোচনার শর্ত হিসেবে জোরালো ভাবে হাজির করতে পারবে না।
এর একটি কারণ হতে পারে, রণক্ষেত্রে কিয়েভের দুর্বল অবস্থান। পাশাপাশি আলোচনায় নিজেদের সুবিধাজনক অবস্থানে বা আপার হ্যান্ডে রাখার জন্য ইউক্রেন রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চল দখলে যে অভিযান পরিচালনা করেছিল তা এক প্রকার ব্যর্থ হয়েছে। রুশ বাহিনী কুরস্ক অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয়দের প্রায় তাড়িয়েই দিয়েছে এবং গত নভেম্বরে তারা ইউক্রেনে অন্তত ৬০০ বর্গকিলোমিটার নতুন করে দখল করেছে।
এখানে আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ—রণক্ষেত্রে জীবনবাজি রাখা ইউক্রেনীয়দের ভবিষ্যৎ আসলে কী? এই অসম যুদ্ধের বাস্তবতা তাঁরা এতদিনে টের পেয়ে গেছেন। সম্মুখযোদ্ধারা মূলত পশ্চিমা পরাশক্তিদের পক্ষে লড়ছেন। যে যুদ্ধে তাঁদের বিজয় প্রায় অসম্ভব। তাঁদের হাতে এখন দুটি অপশন—হয় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া, নয়তো মৃত্যু। স্বাধীনতা এখানে অপ্রাসঙ্গিক। এই বাস্তবতায় ইউক্রেনের প্রশাসনে দুর্নীতি বন্ধ হয়নি বরং বেড়েছে। ইউক্রেনীয়রা এরই মধ্যে ক্লান্ত, হতাশ।
এই অবস্থায় রাশিয়া যে, আলোচনার শর্ত নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে সেটি চোখ বন্ধ করে বলা যায়। এ বিষয়ে বিশ্লেষক এবং সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রাম্পের জন্য পুতিনকে আলোচনায় রাজি করানো কঠিন হতে পারে। কারণ, পুতিন এরই মধ্যে ইউক্রেনকে চাপের মুখে ফেলেছেন এবং আরও ভূমি দখলের মাধ্যমে লাভবান হতে পারেন—এমন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার রাশিয়া–বিষয়ক সাবেক শীর্ষ বিশ্লেষক এবং বর্তমানে কার্নেগি এন্ডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস থিংক ট্যাংকের সঙ্গে যুক্ত ইউজিন রুমার বলেন, ‘পুতিনের কোনো তাড়া নেই। যতক্ষণ না ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার প্রচেষ্টা পরিত্যাগ করে এবং চারটি অঞ্চল রাশিয়ার অংশ হিসেবে মেনে না নেয়—ততক্ষণ পর্যন্ত পুতিন যুদ্ধবিরতি এবং আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত নন।’
রুমার আরও বলেন, ‘পুতিন সম্ভবত সময় নিয়ে আরও ভূখণ্ড দখল করবেন এবং ট্রাম্প কী ধরনের ছাড় দেন, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করবেন।’
বার্তা সংস্থা রয়টার্স গত মে মাসে জানিয়েছিল, পুতিন একটি সমঝোতার যুদ্ধবিরতিতে যেতে প্রস্তুত, তবে ইউক্রেনকে হারানো ভূখণ্ড ফেরত দেওয়া হবে না। কিয়েভ এবং পশ্চিমা বিশ্ব সাড়া না দিলে লড়াই চালিয়ে যেতে প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন পুতিন।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এমন কোনো অবস্থানে নেই যেখান থেকে তিনি অধিকৃত অঞ্চল ফেরত পাওয়ার জন্য শক্তভাবে দাবি তুলতে পারেন। আপাতদৃষ্টিতে ট্রাম্পের দলের পরিকল্পনাও বলে যে, ট্রাম্পের নতুন প্রশাসন ইউক্রেনকে ভূখণ্ড হারানোর বিষয়টি মেনে নিতে চাপ দিতে পারে যাতে, প্রায় ৩ বছর ধরে চলমান যুদ্ধটি বন্ধ করা যায়।
তথ্যসূত্র: পলিটিকো, রয়টার্স, এএফপি ও আরটি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর থেকেই আলোচনায় মধ্যপ্রাচ্য, চীন ও ইউক্রেন ইস্যু। তিনি আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের পর যেসব বিষয় অগ্রাধিকারভিত্তিতে সমাধানের চেষ্টা করবেন, তার একটি হলো ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ। এ ক্ষেত্রে রাশিয়া এরই মধ্যে ইউক্রেনের যেসব ভূখণ্ড দখল করেছে, সেগুলো ফেরত পাওয়া আশা হয়তো ইউক্রেনকে ছেড়ে দিতে হবে।
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প মনোনীত দূত সাবেক মার্কিন জেনারেল কিথ কেলোগের পরিকল্পনা থেকেও এমনটাই ইঙ্গিত মিলেছে। এমনকি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইদানীং যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন, সেখানেও রাশিয়া অধিকৃত ভূখণ্ড নিয়ে কোনো বক্তব্য নেই। অথচ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে জেলেনস্কি রাশিয়ার সঙ্গে যেকোনো শান্তি আলোচনার প্রধান শর্ত হিসেবে দখল করা ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গেই উল্লেখ করছিলেন।
চলতি বছরের এপ্রিলে কেলোগ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি এনএসএ–এর সাবেক চিফ অব স্টাফ ফ্রেড ফ্লেইটজ একটি কৌশলপত্র প্রকাশ করেন। সেখানে তাঁরা যুক্তি দেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা করা। এই কৌশলপত্রটি প্রকাশ করেছে আমেরিকা ফার্স্ট পলিসি ইনস্টিটিউট (এএফপিআই)। ২০২১ সালে তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা এই থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন।
এই কৌশলপত্রে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনকে ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার জন্য দায়ী করা হয়েছে। বিশেষত, ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্ত এবং রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ব্যর্থ হওয়ার কথা তারা উল্লেখ করেছে। এতে আরও অভিযোগ আনা হয়েছে যে, বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেনের মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে একটি ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।
কেলোগের লেখায় উল্লেখ করা হয়েছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিপরীতে একজন শক্তিশালী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ প্রেসিডেন্ট থাকলে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার হামলা ঠেকানো যেত। মূলত ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রতিধ্বনিই করেছেন কেলোগে।
অবশ্য বাইডেনকে দুর্বল মনে করার কারণেই পুতিনের ইউক্রেন আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন—কেলোগ ও ফ্লেইটজের এমন দাবি সপক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।
কেলোগের পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধ শেষ করার একটি আনুষ্ঠানিক নীতি প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে, যেখানে যুদ্ধবিরতি ও আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধান খোঁজার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনার মূল বিষয়গুলো হলো—যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখবে। তবে ভবিষ্যতে এই সামরিক সহায়তা নির্ভর করবে ইউক্রেন রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অংশ নেবে কিনা তার ওপর। পুতিনকে আলোচনায় রাজি করানোর জন্য ন্যাটো নেতারা ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার প্রস্তাব দিতে পারেন।
কেলোগ–ফ্লেইটজের কৌশলপত্রে আরও যেসব মূল বিষয় তুলে ধরা হয়েছে সেগুলো হলো—রাশিয়া যদি একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে, তবে কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা বিবেচনা করা হবে। এ ছাড়া, রাশিয়ার জ্বালানি বিক্রিতে শুল্ক আরোপ করে সেই অর্থ ইউক্রেন পুনর্গঠনের কাজে ব্যবহারেরও প্রস্তাব রাখা হয়েছে এই কৌশলপত্রে।
রাশিয়া ২০১৪ সালেই ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল করে নিজেদের ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ ছাড়া, ইউক্রেনের দনবাসের প্রায় ৮০ শতাংশ—যা দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক নিয়ে গঠিত এবং জাপোরিঝিয়া ও খেরসনের ৭০ শতাংশেরও বেশি, এর পাশাপাশি মাইকোলাইভ ও খারকিভের কিছু অংশ এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে।
মোট কথা, এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দল যে ধারণা হাজির করেছে, সেখানে ইউক্রেনকে তার হারানো ভূখণ্ড ছাড় দেওয়ারই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। সম্ভবত, জেলেনস্কিও বিষয়টি অনেকটা মেনে নিয়েছেন। কিছুদিন আগে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি আলোচনার জন্য প্রস্তুত। যদিও তিনি এখনো ন্যাটো সদস্যপদ নিয়ে আগ্রহী। তবে চলতি সপ্তাহে তিনি বলেছেন, দখলকৃত কিছু অঞ্চল ফিরে পাওয়ার জন্য কূটনৈতিক সমাধান খুঁজতে হবে।
অধিকৃত ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ ফেরত পাওয়ার প্রসঙ্গে জেলেনস্কির বক্তব্যে আর তেমন জোর নেই। যেখানে তাঁকে প্রতিনিয়ত জনবল সংকট এবং নতুন নতুন ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হওয়ার পাশাপাশি, অনেক অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব কষতে হচ্ছে।
সর্বশেষ গত রোববার (৮ ডিসেম্বর) ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন এলিসি প্রাসাদে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিয়ে জেলেনস্কি বলেছেন, ‘আমরা সবাই শান্তি চাই। তবে আমাদের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ...যে, এই শান্তি যেন সবার জন্য ন্যায়সংগত হয় এবং রাশিয়া, পুতিন বা অন্য কোনো আগ্রাসী কখনোই ফিরে আসার সুযোগ না পায়।’ জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘এবং এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—একটি ন্যায়সংগত শান্তি এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা, ইউক্রেনের জন্য শক্তিশালী নিরাপত্তার নিশ্চয়তা।’
ট্রাম্প বরাবরই ইউক্রেনের পেছনে সামরিক সহায়তার নামে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচের বিরোধী। এ নিয়ে তিনি সব সময়ই বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা করে এসেছেন। তিনি বরং দ্রুত সমঝোতার মাধ্যম যুদ্ধ বন্ধ করার কথা বলে আসছেন।
এলিসি প্রাসাদে বৈঠক শেষে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘জেলেনস্কি এবং ইউক্রেন একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে এবং এই পাগলামি থামাতে চাচ্ছেন। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি হওয়া উচিত এবং আলোচনার শুরু করা উচিত।’
পোস্টে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ইঙ্গিত করে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ভ্লাদিমিরকে ভালোভাবে চিনি। এটাই তাঁর জন্য কাজ করার সময়। চীন সহায়তা করতে পারে। বিশ্ব অপেক্ষায় আছে!’
এই দুই নেতার বক্তব্য থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, এলিসি প্রাসাদের আলোচনায় সেই অর্থে ইউক্রেনের হারানো ভূখণ্ডের বিষয়টি অতটা গুরুত্ব পায়নি। অথবা হতে পারে, রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে বসাতে এখনই বিষয়টি সামনে আনা হচ্ছে না।
কিন্তু ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের জন্য মনোনীত পরিকল্পনা এবং জেলেনস্কির সাম্প্রতিক বক্তব্যগুলো থেকে একটি বিষয় অনুমান করা যায় যে, ইউক্রেন হয়তো হারানো ভূখণ্ডের বিষয়টি আলোচনার শর্ত হিসেবে জোরালো ভাবে হাজির করতে পারবে না।
এর একটি কারণ হতে পারে, রণক্ষেত্রে কিয়েভের দুর্বল অবস্থান। পাশাপাশি আলোচনায় নিজেদের সুবিধাজনক অবস্থানে বা আপার হ্যান্ডে রাখার জন্য ইউক্রেন রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চল দখলে যে অভিযান পরিচালনা করেছিল তা এক প্রকার ব্যর্থ হয়েছে। রুশ বাহিনী কুরস্ক অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয়দের প্রায় তাড়িয়েই দিয়েছে এবং গত নভেম্বরে তারা ইউক্রেনে অন্তত ৬০০ বর্গকিলোমিটার নতুন করে দখল করেছে।
এখানে আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ—রণক্ষেত্রে জীবনবাজি রাখা ইউক্রেনীয়দের ভবিষ্যৎ আসলে কী? এই অসম যুদ্ধের বাস্তবতা তাঁরা এতদিনে টের পেয়ে গেছেন। সম্মুখযোদ্ধারা মূলত পশ্চিমা পরাশক্তিদের পক্ষে লড়ছেন। যে যুদ্ধে তাঁদের বিজয় প্রায় অসম্ভব। তাঁদের হাতে এখন দুটি অপশন—হয় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া, নয়তো মৃত্যু। স্বাধীনতা এখানে অপ্রাসঙ্গিক। এই বাস্তবতায় ইউক্রেনের প্রশাসনে দুর্নীতি বন্ধ হয়নি বরং বেড়েছে। ইউক্রেনীয়রা এরই মধ্যে ক্লান্ত, হতাশ।
এই অবস্থায় রাশিয়া যে, আলোচনার শর্ত নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে সেটি চোখ বন্ধ করে বলা যায়। এ বিষয়ে বিশ্লেষক এবং সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রাম্পের জন্য পুতিনকে আলোচনায় রাজি করানো কঠিন হতে পারে। কারণ, পুতিন এরই মধ্যে ইউক্রেনকে চাপের মুখে ফেলেছেন এবং আরও ভূমি দখলের মাধ্যমে লাভবান হতে পারেন—এমন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার রাশিয়া–বিষয়ক সাবেক শীর্ষ বিশ্লেষক এবং বর্তমানে কার্নেগি এন্ডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস থিংক ট্যাংকের সঙ্গে যুক্ত ইউজিন রুমার বলেন, ‘পুতিনের কোনো তাড়া নেই। যতক্ষণ না ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার প্রচেষ্টা পরিত্যাগ করে এবং চারটি অঞ্চল রাশিয়ার অংশ হিসেবে মেনে না নেয়—ততক্ষণ পর্যন্ত পুতিন যুদ্ধবিরতি এবং আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত নন।’
রুমার আরও বলেন, ‘পুতিন সম্ভবত সময় নিয়ে আরও ভূখণ্ড দখল করবেন এবং ট্রাম্প কী ধরনের ছাড় দেন, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করবেন।’
বার্তা সংস্থা রয়টার্স গত মে মাসে জানিয়েছিল, পুতিন একটি সমঝোতার যুদ্ধবিরতিতে যেতে প্রস্তুত, তবে ইউক্রেনকে হারানো ভূখণ্ড ফেরত দেওয়া হবে না। কিয়েভ এবং পশ্চিমা বিশ্ব সাড়া না দিলে লড়াই চালিয়ে যেতে প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন পুতিন।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এমন কোনো অবস্থানে নেই যেখান থেকে তিনি অধিকৃত অঞ্চল ফেরত পাওয়ার জন্য শক্তভাবে দাবি তুলতে পারেন। আপাতদৃষ্টিতে ট্রাম্পের দলের পরিকল্পনাও বলে যে, ট্রাম্পের নতুন প্রশাসন ইউক্রেনকে ভূখণ্ড হারানোর বিষয়টি মেনে নিতে চাপ দিতে পারে যাতে, প্রায় ৩ বছর ধরে চলমান যুদ্ধটি বন্ধ করা যায়।
তথ্যসূত্র: পলিটিকো, রয়টার্স, এএফপি ও আরটি
আব্দুর রহমান

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর থেকেই আলোচনায় মধ্যপ্রাচ্য, চীন ও ইউক্রেন ইস্যু। তিনি আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের পর যেসব বিষয় অগ্রাধিকারভিত্তিতে সমাধানের চেষ্টা করবেন, তার একটি হলো ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ। এ ক্ষেত্রে রাশিয়া এরই মধ্যে ইউক্রেনের যেসব ভূখণ্ড দখল করেছে, সেগুলো ফেরত পাওয়া আশা হয়তো ইউক্রেনকে ছেড়ে দিতে হবে।
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প মনোনীত দূত সাবেক মার্কিন জেনারেল কিথ কেলোগের পরিকল্পনা থেকেও এমনটাই ইঙ্গিত মিলেছে। এমনকি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইদানীং যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন, সেখানেও রাশিয়া অধিকৃত ভূখণ্ড নিয়ে কোনো বক্তব্য নেই। অথচ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে জেলেনস্কি রাশিয়ার সঙ্গে যেকোনো শান্তি আলোচনার প্রধান শর্ত হিসেবে দখল করা ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গেই উল্লেখ করছিলেন।
চলতি বছরের এপ্রিলে কেলোগ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি এনএসএ–এর সাবেক চিফ অব স্টাফ ফ্রেড ফ্লেইটজ একটি কৌশলপত্র প্রকাশ করেন। সেখানে তাঁরা যুক্তি দেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা করা। এই কৌশলপত্রটি প্রকাশ করেছে আমেরিকা ফার্স্ট পলিসি ইনস্টিটিউট (এএফপিআই)। ২০২১ সালে তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা এই থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন।
এই কৌশলপত্রে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনকে ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার জন্য দায়ী করা হয়েছে। বিশেষত, ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্ত এবং রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ব্যর্থ হওয়ার কথা তারা উল্লেখ করেছে। এতে আরও অভিযোগ আনা হয়েছে যে, বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেনের মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে একটি ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।
কেলোগের লেখায় উল্লেখ করা হয়েছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিপরীতে একজন শক্তিশালী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ প্রেসিডেন্ট থাকলে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার হামলা ঠেকানো যেত। মূলত ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রতিধ্বনিই করেছেন কেলোগে।
অবশ্য বাইডেনকে দুর্বল মনে করার কারণেই পুতিনের ইউক্রেন আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন—কেলোগ ও ফ্লেইটজের এমন দাবি সপক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।
কেলোগের পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধ শেষ করার একটি আনুষ্ঠানিক নীতি প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে, যেখানে যুদ্ধবিরতি ও আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধান খোঁজার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনার মূল বিষয়গুলো হলো—যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখবে। তবে ভবিষ্যতে এই সামরিক সহায়তা নির্ভর করবে ইউক্রেন রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অংশ নেবে কিনা তার ওপর। পুতিনকে আলোচনায় রাজি করানোর জন্য ন্যাটো নেতারা ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার প্রস্তাব দিতে পারেন।
কেলোগ–ফ্লেইটজের কৌশলপত্রে আরও যেসব মূল বিষয় তুলে ধরা হয়েছে সেগুলো হলো—রাশিয়া যদি একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে, তবে কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা বিবেচনা করা হবে। এ ছাড়া, রাশিয়ার জ্বালানি বিক্রিতে শুল্ক আরোপ করে সেই অর্থ ইউক্রেন পুনর্গঠনের কাজে ব্যবহারেরও প্রস্তাব রাখা হয়েছে এই কৌশলপত্রে।
রাশিয়া ২০১৪ সালেই ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল করে নিজেদের ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ ছাড়া, ইউক্রেনের দনবাসের প্রায় ৮০ শতাংশ—যা দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক নিয়ে গঠিত এবং জাপোরিঝিয়া ও খেরসনের ৭০ শতাংশেরও বেশি, এর পাশাপাশি মাইকোলাইভ ও খারকিভের কিছু অংশ এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে।
মোট কথা, এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দল যে ধারণা হাজির করেছে, সেখানে ইউক্রেনকে তার হারানো ভূখণ্ড ছাড় দেওয়ারই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। সম্ভবত, জেলেনস্কিও বিষয়টি অনেকটা মেনে নিয়েছেন। কিছুদিন আগে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি আলোচনার জন্য প্রস্তুত। যদিও তিনি এখনো ন্যাটো সদস্যপদ নিয়ে আগ্রহী। তবে চলতি সপ্তাহে তিনি বলেছেন, দখলকৃত কিছু অঞ্চল ফিরে পাওয়ার জন্য কূটনৈতিক সমাধান খুঁজতে হবে।
অধিকৃত ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ ফেরত পাওয়ার প্রসঙ্গে জেলেনস্কির বক্তব্যে আর তেমন জোর নেই। যেখানে তাঁকে প্রতিনিয়ত জনবল সংকট এবং নতুন নতুন ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হওয়ার পাশাপাশি, অনেক অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব কষতে হচ্ছে।
সর্বশেষ গত রোববার (৮ ডিসেম্বর) ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন এলিসি প্রাসাদে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিয়ে জেলেনস্কি বলেছেন, ‘আমরা সবাই শান্তি চাই। তবে আমাদের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ...যে, এই শান্তি যেন সবার জন্য ন্যায়সংগত হয় এবং রাশিয়া, পুতিন বা অন্য কোনো আগ্রাসী কখনোই ফিরে আসার সুযোগ না পায়।’ জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘এবং এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—একটি ন্যায়সংগত শান্তি এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা, ইউক্রেনের জন্য শক্তিশালী নিরাপত্তার নিশ্চয়তা।’
ট্রাম্প বরাবরই ইউক্রেনের পেছনে সামরিক সহায়তার নামে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচের বিরোধী। এ নিয়ে তিনি সব সময়ই বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা করে এসেছেন। তিনি বরং দ্রুত সমঝোতার মাধ্যম যুদ্ধ বন্ধ করার কথা বলে আসছেন।
এলিসি প্রাসাদে বৈঠক শেষে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘জেলেনস্কি এবং ইউক্রেন একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে এবং এই পাগলামি থামাতে চাচ্ছেন। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি হওয়া উচিত এবং আলোচনার শুরু করা উচিত।’
পোস্টে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ইঙ্গিত করে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ভ্লাদিমিরকে ভালোভাবে চিনি। এটাই তাঁর জন্য কাজ করার সময়। চীন সহায়তা করতে পারে। বিশ্ব অপেক্ষায় আছে!’
এই দুই নেতার বক্তব্য থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, এলিসি প্রাসাদের আলোচনায় সেই অর্থে ইউক্রেনের হারানো ভূখণ্ডের বিষয়টি অতটা গুরুত্ব পায়নি। অথবা হতে পারে, রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে বসাতে এখনই বিষয়টি সামনে আনা হচ্ছে না।
কিন্তু ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের জন্য মনোনীত পরিকল্পনা এবং জেলেনস্কির সাম্প্রতিক বক্তব্যগুলো থেকে একটি বিষয় অনুমান করা যায় যে, ইউক্রেন হয়তো হারানো ভূখণ্ডের বিষয়টি আলোচনার শর্ত হিসেবে জোরালো ভাবে হাজির করতে পারবে না।
এর একটি কারণ হতে পারে, রণক্ষেত্রে কিয়েভের দুর্বল অবস্থান। পাশাপাশি আলোচনায় নিজেদের সুবিধাজনক অবস্থানে বা আপার হ্যান্ডে রাখার জন্য ইউক্রেন রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চল দখলে যে অভিযান পরিচালনা করেছিল তা এক প্রকার ব্যর্থ হয়েছে। রুশ বাহিনী কুরস্ক অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয়দের প্রায় তাড়িয়েই দিয়েছে এবং গত নভেম্বরে তারা ইউক্রেনে অন্তত ৬০০ বর্গকিলোমিটার নতুন করে দখল করেছে।
এখানে আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ—রণক্ষেত্রে জীবনবাজি রাখা ইউক্রেনীয়দের ভবিষ্যৎ আসলে কী? এই অসম যুদ্ধের বাস্তবতা তাঁরা এতদিনে টের পেয়ে গেছেন। সম্মুখযোদ্ধারা মূলত পশ্চিমা পরাশক্তিদের পক্ষে লড়ছেন। যে যুদ্ধে তাঁদের বিজয় প্রায় অসম্ভব। তাঁদের হাতে এখন দুটি অপশন—হয় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া, নয়তো মৃত্যু। স্বাধীনতা এখানে অপ্রাসঙ্গিক। এই বাস্তবতায় ইউক্রেনের প্রশাসনে দুর্নীতি বন্ধ হয়নি বরং বেড়েছে। ইউক্রেনীয়রা এরই মধ্যে ক্লান্ত, হতাশ।
এই অবস্থায় রাশিয়া যে, আলোচনার শর্ত নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে সেটি চোখ বন্ধ করে বলা যায়। এ বিষয়ে বিশ্লেষক এবং সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রাম্পের জন্য পুতিনকে আলোচনায় রাজি করানো কঠিন হতে পারে। কারণ, পুতিন এরই মধ্যে ইউক্রেনকে চাপের মুখে ফেলেছেন এবং আরও ভূমি দখলের মাধ্যমে লাভবান হতে পারেন—এমন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার রাশিয়া–বিষয়ক সাবেক শীর্ষ বিশ্লেষক এবং বর্তমানে কার্নেগি এন্ডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস থিংক ট্যাংকের সঙ্গে যুক্ত ইউজিন রুমার বলেন, ‘পুতিনের কোনো তাড়া নেই। যতক্ষণ না ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার প্রচেষ্টা পরিত্যাগ করে এবং চারটি অঞ্চল রাশিয়ার অংশ হিসেবে মেনে না নেয়—ততক্ষণ পর্যন্ত পুতিন যুদ্ধবিরতি এবং আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত নন।’
রুমার আরও বলেন, ‘পুতিন সম্ভবত সময় নিয়ে আরও ভূখণ্ড দখল করবেন এবং ট্রাম্প কী ধরনের ছাড় দেন, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করবেন।’
বার্তা সংস্থা রয়টার্স গত মে মাসে জানিয়েছিল, পুতিন একটি সমঝোতার যুদ্ধবিরতিতে যেতে প্রস্তুত, তবে ইউক্রেনকে হারানো ভূখণ্ড ফেরত দেওয়া হবে না। কিয়েভ এবং পশ্চিমা বিশ্ব সাড়া না দিলে লড়াই চালিয়ে যেতে প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন পুতিন।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এমন কোনো অবস্থানে নেই যেখান থেকে তিনি অধিকৃত অঞ্চল ফেরত পাওয়ার জন্য শক্তভাবে দাবি তুলতে পারেন। আপাতদৃষ্টিতে ট্রাম্পের দলের পরিকল্পনাও বলে যে, ট্রাম্পের নতুন প্রশাসন ইউক্রেনকে ভূখণ্ড হারানোর বিষয়টি মেনে নিতে চাপ দিতে পারে যাতে, প্রায় ৩ বছর ধরে চলমান যুদ্ধটি বন্ধ করা যায়।
তথ্যসূত্র: পলিটিকো, রয়টার্স, এএফপি ও আরটি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর থেকেই আলোচনায় মধ্যপ্রাচ্য, চীন ও ইউক্রেন ইস্যু। তিনি আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের পর যেসব বিষয় অগ্রাধিকারভিত্তিতে সমাধানের চেষ্টা করবেন, তার একটি হলো ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ। এ ক্ষেত্রে রাশিয়া এরই মধ্যে ইউক্রেনের যেসব ভূখণ্ড দখল করেছে, সেগুলো ফেরত পাওয়া আশা হয়তো ইউক্রেনকে ছেড়ে দিতে হবে।
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প মনোনীত দূত সাবেক মার্কিন জেনারেল কিথ কেলোগের পরিকল্পনা থেকেও এমনটাই ইঙ্গিত মিলেছে। এমনকি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইদানীং যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন, সেখানেও রাশিয়া অধিকৃত ভূখণ্ড নিয়ে কোনো বক্তব্য নেই। অথচ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে জেলেনস্কি রাশিয়ার সঙ্গে যেকোনো শান্তি আলোচনার প্রধান শর্ত হিসেবে দখল করা ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গেই উল্লেখ করছিলেন।
চলতি বছরের এপ্রিলে কেলোগ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি এনএসএ–এর সাবেক চিফ অব স্টাফ ফ্রেড ফ্লেইটজ একটি কৌশলপত্র প্রকাশ করেন। সেখানে তাঁরা যুক্তি দেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা করা। এই কৌশলপত্রটি প্রকাশ করেছে আমেরিকা ফার্স্ট পলিসি ইনস্টিটিউট (এএফপিআই)। ২০২১ সালে তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা এই থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন।
এই কৌশলপত্রে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনকে ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার জন্য দায়ী করা হয়েছে। বিশেষত, ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্ত এবং রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ব্যর্থ হওয়ার কথা তারা উল্লেখ করেছে। এতে আরও অভিযোগ আনা হয়েছে যে, বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেনের মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে একটি ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।
কেলোগের লেখায় উল্লেখ করা হয়েছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিপরীতে একজন শক্তিশালী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ প্রেসিডেন্ট থাকলে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার হামলা ঠেকানো যেত। মূলত ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রতিধ্বনিই করেছেন কেলোগে।
অবশ্য বাইডেনকে দুর্বল মনে করার কারণেই পুতিনের ইউক্রেন আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন—কেলোগ ও ফ্লেইটজের এমন দাবি সপক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।
কেলোগের পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধ শেষ করার একটি আনুষ্ঠানিক নীতি প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে, যেখানে যুদ্ধবিরতি ও আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধান খোঁজার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনার মূল বিষয়গুলো হলো—যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখবে। তবে ভবিষ্যতে এই সামরিক সহায়তা নির্ভর করবে ইউক্রেন রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অংশ নেবে কিনা তার ওপর। পুতিনকে আলোচনায় রাজি করানোর জন্য ন্যাটো নেতারা ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার প্রস্তাব দিতে পারেন।
কেলোগ–ফ্লেইটজের কৌশলপত্রে আরও যেসব মূল বিষয় তুলে ধরা হয়েছে সেগুলো হলো—রাশিয়া যদি একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে, তবে কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা বিবেচনা করা হবে। এ ছাড়া, রাশিয়ার জ্বালানি বিক্রিতে শুল্ক আরোপ করে সেই অর্থ ইউক্রেন পুনর্গঠনের কাজে ব্যবহারেরও প্রস্তাব রাখা হয়েছে এই কৌশলপত্রে।
রাশিয়া ২০১৪ সালেই ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল করে নিজেদের ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ ছাড়া, ইউক্রেনের দনবাসের প্রায় ৮০ শতাংশ—যা দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক নিয়ে গঠিত এবং জাপোরিঝিয়া ও খেরসনের ৭০ শতাংশেরও বেশি, এর পাশাপাশি মাইকোলাইভ ও খারকিভের কিছু অংশ এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে।
মোট কথা, এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দল যে ধারণা হাজির করেছে, সেখানে ইউক্রেনকে তার হারানো ভূখণ্ড ছাড় দেওয়ারই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। সম্ভবত, জেলেনস্কিও বিষয়টি অনেকটা মেনে নিয়েছেন। কিছুদিন আগে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি আলোচনার জন্য প্রস্তুত। যদিও তিনি এখনো ন্যাটো সদস্যপদ নিয়ে আগ্রহী। তবে চলতি সপ্তাহে তিনি বলেছেন, দখলকৃত কিছু অঞ্চল ফিরে পাওয়ার জন্য কূটনৈতিক সমাধান খুঁজতে হবে।
অধিকৃত ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ ফেরত পাওয়ার প্রসঙ্গে জেলেনস্কির বক্তব্যে আর তেমন জোর নেই। যেখানে তাঁকে প্রতিনিয়ত জনবল সংকট এবং নতুন নতুন ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হওয়ার পাশাপাশি, অনেক অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব কষতে হচ্ছে।
সর্বশেষ গত রোববার (৮ ডিসেম্বর) ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন এলিসি প্রাসাদে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিয়ে জেলেনস্কি বলেছেন, ‘আমরা সবাই শান্তি চাই। তবে আমাদের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ...যে, এই শান্তি যেন সবার জন্য ন্যায়সংগত হয় এবং রাশিয়া, পুতিন বা অন্য কোনো আগ্রাসী কখনোই ফিরে আসার সুযোগ না পায়।’ জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘এবং এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—একটি ন্যায়সংগত শান্তি এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা, ইউক্রেনের জন্য শক্তিশালী নিরাপত্তার নিশ্চয়তা।’
ট্রাম্প বরাবরই ইউক্রেনের পেছনে সামরিক সহায়তার নামে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচের বিরোধী। এ নিয়ে তিনি সব সময়ই বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা করে এসেছেন। তিনি বরং দ্রুত সমঝোতার মাধ্যম যুদ্ধ বন্ধ করার কথা বলে আসছেন।
এলিসি প্রাসাদে বৈঠক শেষে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘জেলেনস্কি এবং ইউক্রেন একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে এবং এই পাগলামি থামাতে চাচ্ছেন। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি হওয়া উচিত এবং আলোচনার শুরু করা উচিত।’
পোস্টে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ইঙ্গিত করে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ভ্লাদিমিরকে ভালোভাবে চিনি। এটাই তাঁর জন্য কাজ করার সময়। চীন সহায়তা করতে পারে। বিশ্ব অপেক্ষায় আছে!’
এই দুই নেতার বক্তব্য থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, এলিসি প্রাসাদের আলোচনায় সেই অর্থে ইউক্রেনের হারানো ভূখণ্ডের বিষয়টি অতটা গুরুত্ব পায়নি। অথবা হতে পারে, রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে বসাতে এখনই বিষয়টি সামনে আনা হচ্ছে না।
কিন্তু ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের জন্য মনোনীত পরিকল্পনা এবং জেলেনস্কির সাম্প্রতিক বক্তব্যগুলো থেকে একটি বিষয় অনুমান করা যায় যে, ইউক্রেন হয়তো হারানো ভূখণ্ডের বিষয়টি আলোচনার শর্ত হিসেবে জোরালো ভাবে হাজির করতে পারবে না।
এর একটি কারণ হতে পারে, রণক্ষেত্রে কিয়েভের দুর্বল অবস্থান। পাশাপাশি আলোচনায় নিজেদের সুবিধাজনক অবস্থানে বা আপার হ্যান্ডে রাখার জন্য ইউক্রেন রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চল দখলে যে অভিযান পরিচালনা করেছিল তা এক প্রকার ব্যর্থ হয়েছে। রুশ বাহিনী কুরস্ক অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয়দের প্রায় তাড়িয়েই দিয়েছে এবং গত নভেম্বরে তারা ইউক্রেনে অন্তত ৬০০ বর্গকিলোমিটার নতুন করে দখল করেছে।
এখানে আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ—রণক্ষেত্রে জীবনবাজি রাখা ইউক্রেনীয়দের ভবিষ্যৎ আসলে কী? এই অসম যুদ্ধের বাস্তবতা তাঁরা এতদিনে টের পেয়ে গেছেন। সম্মুখযোদ্ধারা মূলত পশ্চিমা পরাশক্তিদের পক্ষে লড়ছেন। যে যুদ্ধে তাঁদের বিজয় প্রায় অসম্ভব। তাঁদের হাতে এখন দুটি অপশন—হয় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া, নয়তো মৃত্যু। স্বাধীনতা এখানে অপ্রাসঙ্গিক। এই বাস্তবতায় ইউক্রেনের প্রশাসনে দুর্নীতি বন্ধ হয়নি বরং বেড়েছে। ইউক্রেনীয়রা এরই মধ্যে ক্লান্ত, হতাশ।
এই অবস্থায় রাশিয়া যে, আলোচনার শর্ত নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে সেটি চোখ বন্ধ করে বলা যায়। এ বিষয়ে বিশ্লেষক এবং সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রাম্পের জন্য পুতিনকে আলোচনায় রাজি করানো কঠিন হতে পারে। কারণ, পুতিন এরই মধ্যে ইউক্রেনকে চাপের মুখে ফেলেছেন এবং আরও ভূমি দখলের মাধ্যমে লাভবান হতে পারেন—এমন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার রাশিয়া–বিষয়ক সাবেক শীর্ষ বিশ্লেষক এবং বর্তমানে কার্নেগি এন্ডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস থিংক ট্যাংকের সঙ্গে যুক্ত ইউজিন রুমার বলেন, ‘পুতিনের কোনো তাড়া নেই। যতক্ষণ না ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার প্রচেষ্টা পরিত্যাগ করে এবং চারটি অঞ্চল রাশিয়ার অংশ হিসেবে মেনে না নেয়—ততক্ষণ পর্যন্ত পুতিন যুদ্ধবিরতি এবং আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত নন।’
রুমার আরও বলেন, ‘পুতিন সম্ভবত সময় নিয়ে আরও ভূখণ্ড দখল করবেন এবং ট্রাম্প কী ধরনের ছাড় দেন, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করবেন।’
বার্তা সংস্থা রয়টার্স গত মে মাসে জানিয়েছিল, পুতিন একটি সমঝোতার যুদ্ধবিরতিতে যেতে প্রস্তুত, তবে ইউক্রেনকে হারানো ভূখণ্ড ফেরত দেওয়া হবে না। কিয়েভ এবং পশ্চিমা বিশ্ব সাড়া না দিলে লড়াই চালিয়ে যেতে প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন পুতিন।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এমন কোনো অবস্থানে নেই যেখান থেকে তিনি অধিকৃত অঞ্চল ফেরত পাওয়ার জন্য শক্তভাবে দাবি তুলতে পারেন। আপাতদৃষ্টিতে ট্রাম্পের দলের পরিকল্পনাও বলে যে, ট্রাম্পের নতুন প্রশাসন ইউক্রেনকে ভূখণ্ড হারানোর বিষয়টি মেনে নিতে চাপ দিতে পারে যাতে, প্রায় ৩ বছর ধরে চলমান যুদ্ধটি বন্ধ করা যায়।
তথ্যসূত্র: পলিটিকো, রয়টার্স, এএফপি ও আরটি

গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
২ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৩ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৩ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

রাশিয়া ২০১৪ সালেই ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল করে নিজেদের ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ ছাড়া, ইউক্রেনের দনবাসের প্রায় ৮০ শতাংশ—যা দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক নিয়ে গঠিত এবং জাপোরিঝিয়া ও খেরসনের ৭০ শতাংশেরও বেশি, এর পাশাপাশি মাইকোলাইভ ও খারকিভের কিছু অংশ এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে।
১০ ডিসেম্বর ২০২৪
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৩ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৩ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

রাশিয়া ২০১৪ সালেই ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল করে নিজেদের ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ ছাড়া, ইউক্রেনের দনবাসের প্রায় ৮০ শতাংশ—যা দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক নিয়ে গঠিত এবং জাপোরিঝিয়া ও খেরসনের ৭০ শতাংশেরও বেশি, এর পাশাপাশি মাইকোলাইভ ও খারকিভের কিছু অংশ এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে।
১০ ডিসেম্বর ২০২৪
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
২ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৩ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

রাশিয়া ২০১৪ সালেই ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল করে নিজেদের ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ ছাড়া, ইউক্রেনের দনবাসের প্রায় ৮০ শতাংশ—যা দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক নিয়ে গঠিত এবং জাপোরিঝিয়া ও খেরসনের ৭০ শতাংশেরও বেশি, এর পাশাপাশি মাইকোলাইভ ও খারকিভের কিছু অংশ এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে।
১০ ডিসেম্বর ২০২৪
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
২ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৩ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

রাশিয়া ২০১৪ সালেই ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল করে নিজেদের ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ ছাড়া, ইউক্রেনের দনবাসের প্রায় ৮০ শতাংশ—যা দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক নিয়ে গঠিত এবং জাপোরিঝিয়া ও খেরসনের ৭০ শতাংশেরও বেশি, এর পাশাপাশি মাইকোলাইভ ও খারকিভের কিছু অংশ এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে।
১০ ডিসেম্বর ২০২৪
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
২ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৩ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৩ দিন আগে