
ভারত ঘিরে থাকা এশিয়ার তিন দেশের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর নির্মাণে অর্থ দিয়েছে চীন। শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা ও পাকিস্তানের গোয়াদরের বন্দরের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি বন্দরও আছে এই তালিকায়। এই অঞ্চলে কৌশলগত আধিপত্য বজায় রাখতে চীন এই বন্দরগুলোকে ব্যবহার করছে বলে ভারতের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা।
এই তিন বন্দরকে চীনের ‘ট্রায়াঙ্গল অব ডেথ’ আখ্যা দিয়ে তারা বলছেন, চীনকে ঠেকাতে ঢাকা ও কলম্বোর ঘনিষ্ঠ হতে চাইছে দিল্লি। এ ক্ষেত্রে জ্বালানি, সমুদ্র ও যোগাযোগ খাতে সম্পর্ক উন্নয়ন করছে। পাশাপাশি সামরিক সরঞ্জাম দিয়েও সহযোগিতার চেষ্টা চালাচ্ছে।
ভারত শ্রীলঙ্কার সমুদ্রবন্দর উন্নয়নে কাজ করছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে রুশ সামরিক সরঞ্জাম কেনার পক্ষে ওকালতি করছে। ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি তেজাস যুদ্ধবিমান কিনতেও নাকি আগ্রহ দেখিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু পরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর নজর ইউরোপীয় যুদ্ধবিমানের দিকে ঘুরে যায়।
বাংলাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত বঙ্গোপসাগর এমন কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে, যেখান দিয়ে বিশ্বের মোট বাণিজ্যের অন্তত ৫০ শতাংশ পরিবাহিত হয়। এই উপসাগরের বুক চিরে যাওয়া সামুদ্রিক রুটগুলো চীন, জাপান, দুই কোরিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে।
বিশ্বের বৃহত্তম উপসাগর হলো বঙ্গোপসাগর। এর পশ্চিমে ভারত এবং পূর্বে ইন্দোনেশিয়া। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমার এর উপকূলীয় দেশ। অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত গুরুত্বের কারণে এই অঞ্চল বরাবরই পূর্ব ও পশ্চিমের প্রধান শক্তিগুলোকে চীন, জাপান, ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এমনকি রাশিয়া আকৃষ্ট করেছে।
এ বছরই বঙ্গোপসাগরের বুকে কক্সবাজারে বিএনএস শেখ হাসিনা নামে ঘাঁটি চালু হয়েছে। ওই ঘাঁটি তৈরিতে বাংলাদেশকে সহায়তা দিয়েছে চীন। সব মিলে ছয়টি সাবমেরিন ও আটটি অন্যান্য নৌযান জায়গা করে নিতে পারবে। বঙ্গোপসাগরে চীনের উপস্থিতি ভারতের জন্য পরিস্থিতি জটিল করে তুলতে পারে। যে চুক্তির আওতায় এই সহায়তা, তা এই অঞ্চলে চীনের উপস্থিতিকেও বৈধ করে তোলে। তাই, স্বাভাবিকভাবেই ভারতের সামনে জটিল পরিস্থিতি হাজির হয়েছে।
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে জোরালো সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারতই প্রথম স্বীকৃতি দেয় এবং প্রথম দেশ হিসেবে ঢাকার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। কিন্তু প্রথম চীনা প্রেসিডেন্ট হিসেবে সি চিন পিং বাংলাদেশ সফর করার পর এই চিত্র বদলে যায়। সির সেই সফরের পরপরই বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে ২৩ কোটি ডলারে দুটি সাবমেরিন কেনে। পরে এই সাবমেরিন দুটিকে বিএনএস নবযাত্রা ও জয়যাত্রা নামে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে কমিশন করানো হয়। এই সাবমেরিনগুলো ভারতের জন্য হুমকি না হলেও বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে আসা চীনা কর্মকর্তাদের বিষয়টি আলাদা।
এর বাইরে বাংলাদেশ চীন থেকে ৪৪টি টি-২০০০ মেইন ব্যাটল ট্যাংক, দুই রেজিমেন্ট এফএম-৯০ স্বল্পপাল্লার ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, কিউডব্লিউ-২ এবং এফএন-৬ হাতে বহনযোগ্য অ্যান্টি এয়ারক্রাফট ক্ষেপণাস্ত্র, পিএফ-৯৮ অ্যান্টি ট্যাংক রকেট এবং ৩৬টি ডব্লিউএস-২২ মাল্টিপল রকেট লঞ্চার সিস্টেম কিনেছে। এ ছাড়া চীনের কাছ থেকে ১৬টি এফ-৭ বিজি লাইট অ্যাটাক যুদ্ধবিমানও কিনেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ রাশিয়া থেকেও ১৬টি ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ বিমান এবং লাইট অ্যাটাক যুদ্ধবিমান কিনেছে।
এসবের বিপরীতে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সড়ক ও অভ্যন্তরীণ নৌপথে যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি সামরিক সংযোগও বাড়ানোর চেষ্টা করছে। যেমন—বাংলাদেশে থাকা রুশ সরঞ্জাম এমআই-১৭ হেলিকপ্টার, আন্তনভ এএন-৩২ পরিবহন বিমান এবং মিগ-২৯-এর মতো যুদ্ধবিমানগুলো রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে ভারতের সহায়তার সুযোগ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ ভারতের এমন ধরনের বিমান এবং হেলিকপ্টারের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিজস্ব সুবিধা আছে। কেবল তাই নয়, ভারত বাংলাদেশকে বিভিন্ন প্রতিরক্ষাসামগ্রী কেনার জন্য ঋণও দিচ্ছে।
এ বিষয়ে ভারতীয় এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার জন্য।’
এর আগে ২০২১ সালে বাংলাদেশ বিমনাবাহিনীর তৎকালীন প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মসীহুজ্জামান সেরনিয়াবাত ভারতের ডিফেন্স এক্সপো-২০২১-এ ভারতের তেজাস যুদ্ধবিমানে উড়ে বেশ অভিভূত হয়েছিলেন। ভারত আশা করেছিল, বাংলাদেশের কাছে হয়তো কিছু তেজাস বিক্রি করা যাবে। কিন্তু মসীহুজ্জামান সেরনিয়াবাত অবসরে যাওয়ায় এবং মহামারি চলে আসায় বিষয়টি ঝুলে যায়।
নতুন সূত্রে পাওয়া খবর বলছে, আগামী জাতীয় নির্বাচন হওয়ার আগে আর কোনো চুক্তির সম্ভাবনা নেই। এ ছাড়া বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে ইউরোপীয় বিমানকে প্রাধান্য দিচ্ছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।
বাংলাদেশ সরকারের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বাংলাদেশ সম্ভবত ইউরোপীয় যুদ্ধবিমান কিনতে যাচ্ছে। হয় ইউরো ফাইটার টাইফুন, আর না হয় ফরাসি রাফালে। তবে এই চুক্তিও আগামী নির্বাচনের আগে সম্ভব হবে না।’
২০২৩ সালের জুলাই মাসে ভারত সফর করেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে সফরে গিয়ে দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব বিমান, সমুদ্র, জ্বালানি ও শক্তি খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির আওতায় ভারত শ্রীলঙ্কায় বেশ কয়েকটি বন্দর তৈরি করবে। এর মধ্যে আছে দ্বীপের দেশটির পশ্চিম উপকূলে কলম্বো, পূর্বে ত্রিঙ্কোমালি এবং দেশের উত্তর প্রান্তে পাক প্রণালির মুখে কাঙ্কেসান্থুরাই বন্দর। ত্রিঙ্কোমালি বিশ্বের প্রাকৃতিক পোতাশ্রয়গুলোর একটি হলেও বন্দরটিতে বড় আকারে জাহাজ ভেড়ানোর কোনো সুবিধা নেই। দিল্লি এই সুযোগটিই নিতে চায় এবং চীনের ট্রায়াঙ্গেল অব ডেথের পাশেই নিজের অবস্থান নিশ্চিত করতে চায়।
এ ছাড়া দিল্লি ও কলম্বো সমন্বিত বিদ্যুৎ গ্রিড বা সঞ্চালন ব্যবস্থাসহ বেশ কয়েকটি যৌথ উদ্যোগ নিয়ে কথা বলছে। এই গ্রিড বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালসহ দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের সঙ্গে শ্রীলঙ্কাকে সংযুক্ত করবে। এই দেশগুলোর আঞ্চলিক উদ্যোগ, যা বিবিআইএন নামে (বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল) পরিচিত হতে পারে। ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের চিরবৈরী সম্পর্কের কারণে সার্ক অপ্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠায় এই জোটের ভবিষ্যৎ দেখছেন না অনেকে।
এর বাইরে পাইপলাইন নির্মাণে কলম্বোর সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন। এটি শ্রীলঙ্কার কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ তিনটি জায়গা নাগাপট্টিনাম, কলম্বো ও ত্রিঙ্কোমালিকে সংযুক্ত করবে। এই ত্রিঙ্কোমালিতেই ভারত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার তেলের ডিপো সংস্কার করে দিতে চাইছে। এ ছাড়া দক্ষিণ ভারত থেকে আরেকটি পাইপলাইন শ্রীলঙ্কার মূল ভূখণ্ডে নেওয়ারও প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। জ্বালানিসংকটে থাকা দেশটির জন্য এই পাইপলাইন লাইফলাইন হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।
২০২২ সালে যখন শ্রীলঙ্কা চরম আর্থিক দুর্দশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, তখন দেশটি চীনের কাছে ঋণ নবায়নের অনুরোধ জানিয়েছিল, কিন্তু কোনো জবাব পায়নি। বিপরীতে ভারত সে সময় শ্রীলঙ্কাকে ৪০০ কোটি ডলারেরও বেশি আর্থিক সহায়তা দিয়েছিল। এর মধ্যে খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি সহায়তা ছিল। ভারতের এই আর্থিক সহায়তা ঋণে জর্জরিত শ্রীলঙ্কাকে অনেকটাই আশার আলো দেখিয়েছিল। এর বাইরেও ২০২৩ সালে ভারত ভারতীয় মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সুবিধার আওতায় শ্রীলঙ্কাকে ১০ বছরের জন্য ঋণ পরিশোধ স্থগিত এবং ১৫ বছরের জন্য ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়ার ঘোষণা দেয়। অন্যদিকে চীন দ্বীপরাষ্ট্রকে মাত্র দুই বছরের ঋণ স্থগিত করার প্রস্তাব দেয়। অথচ বেইজিংকে শ্রীলঙ্কা ৯৯ বছরের জন্য হাম্বানটোটা বন্দর ইজারা দিয়েছে।
ভারত মহাসাগরে কৌশলগত অবস্থানের কারণে চীন ও ভারত উভয়ের কাছেই শ্রীলঙ্কা গুরুত্বপূর্ণ দেশ। তাই চীন এই অঞ্চলে প্রভাববলয় প্রসারিত করতে চায় এবং ভারত তার স্বার্থের জন্য এটিকে রক্ষা করতে চায়।
এ বিষয়ে শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক বিশ্লেষক অরুণা কুলাতুঙ্গা সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে বলেন, ভারত শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে ‘চীনের ডি-ফ্যাক্টো স্যাটেলাইট স্টেট’ হিসেবে দেখে। কারণ দেশগুলো চীনকে জমি লিজ দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই তিন দেশ ভারতের জন্য একটি ট্রায়াঙ্গেল অব ডেথ গঠন করেছে, যা ভারতের জন্য অনেকটা শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির মতো। তাই তাঁর মতে, এই অঞ্চলে নিজেকে মুক্ত রাখার জন্য এবং গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক রুট রক্ষার জন্য ভারতকে এই অঞ্চলে আরও বেশি রিসোর্স ব্যবহার করতে হবে।
অনুবাদ: আব্দুর রহমান

ভারত ঘিরে থাকা এশিয়ার তিন দেশের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর নির্মাণে অর্থ দিয়েছে চীন। শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা ও পাকিস্তানের গোয়াদরের বন্দরের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি বন্দরও আছে এই তালিকায়। এই অঞ্চলে কৌশলগত আধিপত্য বজায় রাখতে চীন এই বন্দরগুলোকে ব্যবহার করছে বলে ভারতের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা।
এই তিন বন্দরকে চীনের ‘ট্রায়াঙ্গল অব ডেথ’ আখ্যা দিয়ে তারা বলছেন, চীনকে ঠেকাতে ঢাকা ও কলম্বোর ঘনিষ্ঠ হতে চাইছে দিল্লি। এ ক্ষেত্রে জ্বালানি, সমুদ্র ও যোগাযোগ খাতে সম্পর্ক উন্নয়ন করছে। পাশাপাশি সামরিক সরঞ্জাম দিয়েও সহযোগিতার চেষ্টা চালাচ্ছে।
ভারত শ্রীলঙ্কার সমুদ্রবন্দর উন্নয়নে কাজ করছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে রুশ সামরিক সরঞ্জাম কেনার পক্ষে ওকালতি করছে। ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি তেজাস যুদ্ধবিমান কিনতেও নাকি আগ্রহ দেখিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু পরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর নজর ইউরোপীয় যুদ্ধবিমানের দিকে ঘুরে যায়।
বাংলাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত বঙ্গোপসাগর এমন কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে, যেখান দিয়ে বিশ্বের মোট বাণিজ্যের অন্তত ৫০ শতাংশ পরিবাহিত হয়। এই উপসাগরের বুক চিরে যাওয়া সামুদ্রিক রুটগুলো চীন, জাপান, দুই কোরিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে।
বিশ্বের বৃহত্তম উপসাগর হলো বঙ্গোপসাগর। এর পশ্চিমে ভারত এবং পূর্বে ইন্দোনেশিয়া। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমার এর উপকূলীয় দেশ। অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত গুরুত্বের কারণে এই অঞ্চল বরাবরই পূর্ব ও পশ্চিমের প্রধান শক্তিগুলোকে চীন, জাপান, ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এমনকি রাশিয়া আকৃষ্ট করেছে।
এ বছরই বঙ্গোপসাগরের বুকে কক্সবাজারে বিএনএস শেখ হাসিনা নামে ঘাঁটি চালু হয়েছে। ওই ঘাঁটি তৈরিতে বাংলাদেশকে সহায়তা দিয়েছে চীন। সব মিলে ছয়টি সাবমেরিন ও আটটি অন্যান্য নৌযান জায়গা করে নিতে পারবে। বঙ্গোপসাগরে চীনের উপস্থিতি ভারতের জন্য পরিস্থিতি জটিল করে তুলতে পারে। যে চুক্তির আওতায় এই সহায়তা, তা এই অঞ্চলে চীনের উপস্থিতিকেও বৈধ করে তোলে। তাই, স্বাভাবিকভাবেই ভারতের সামনে জটিল পরিস্থিতি হাজির হয়েছে।
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে জোরালো সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারতই প্রথম স্বীকৃতি দেয় এবং প্রথম দেশ হিসেবে ঢাকার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। কিন্তু প্রথম চীনা প্রেসিডেন্ট হিসেবে সি চিন পিং বাংলাদেশ সফর করার পর এই চিত্র বদলে যায়। সির সেই সফরের পরপরই বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে ২৩ কোটি ডলারে দুটি সাবমেরিন কেনে। পরে এই সাবমেরিন দুটিকে বিএনএস নবযাত্রা ও জয়যাত্রা নামে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে কমিশন করানো হয়। এই সাবমেরিনগুলো ভারতের জন্য হুমকি না হলেও বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে আসা চীনা কর্মকর্তাদের বিষয়টি আলাদা।
এর বাইরে বাংলাদেশ চীন থেকে ৪৪টি টি-২০০০ মেইন ব্যাটল ট্যাংক, দুই রেজিমেন্ট এফএম-৯০ স্বল্পপাল্লার ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, কিউডব্লিউ-২ এবং এফএন-৬ হাতে বহনযোগ্য অ্যান্টি এয়ারক্রাফট ক্ষেপণাস্ত্র, পিএফ-৯৮ অ্যান্টি ট্যাংক রকেট এবং ৩৬টি ডব্লিউএস-২২ মাল্টিপল রকেট লঞ্চার সিস্টেম কিনেছে। এ ছাড়া চীনের কাছ থেকে ১৬টি এফ-৭ বিজি লাইট অ্যাটাক যুদ্ধবিমানও কিনেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ রাশিয়া থেকেও ১৬টি ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ বিমান এবং লাইট অ্যাটাক যুদ্ধবিমান কিনেছে।
এসবের বিপরীতে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সড়ক ও অভ্যন্তরীণ নৌপথে যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি সামরিক সংযোগও বাড়ানোর চেষ্টা করছে। যেমন—বাংলাদেশে থাকা রুশ সরঞ্জাম এমআই-১৭ হেলিকপ্টার, আন্তনভ এএন-৩২ পরিবহন বিমান এবং মিগ-২৯-এর মতো যুদ্ধবিমানগুলো রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে ভারতের সহায়তার সুযোগ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ ভারতের এমন ধরনের বিমান এবং হেলিকপ্টারের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিজস্ব সুবিধা আছে। কেবল তাই নয়, ভারত বাংলাদেশকে বিভিন্ন প্রতিরক্ষাসামগ্রী কেনার জন্য ঋণও দিচ্ছে।
এ বিষয়ে ভারতীয় এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার জন্য।’
এর আগে ২০২১ সালে বাংলাদেশ বিমনাবাহিনীর তৎকালীন প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মসীহুজ্জামান সেরনিয়াবাত ভারতের ডিফেন্স এক্সপো-২০২১-এ ভারতের তেজাস যুদ্ধবিমানে উড়ে বেশ অভিভূত হয়েছিলেন। ভারত আশা করেছিল, বাংলাদেশের কাছে হয়তো কিছু তেজাস বিক্রি করা যাবে। কিন্তু মসীহুজ্জামান সেরনিয়াবাত অবসরে যাওয়ায় এবং মহামারি চলে আসায় বিষয়টি ঝুলে যায়।
নতুন সূত্রে পাওয়া খবর বলছে, আগামী জাতীয় নির্বাচন হওয়ার আগে আর কোনো চুক্তির সম্ভাবনা নেই। এ ছাড়া বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে ইউরোপীয় বিমানকে প্রাধান্য দিচ্ছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।
বাংলাদেশ সরকারের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বাংলাদেশ সম্ভবত ইউরোপীয় যুদ্ধবিমান কিনতে যাচ্ছে। হয় ইউরো ফাইটার টাইফুন, আর না হয় ফরাসি রাফালে। তবে এই চুক্তিও আগামী নির্বাচনের আগে সম্ভব হবে না।’
২০২৩ সালের জুলাই মাসে ভারত সফর করেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে সফরে গিয়ে দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব বিমান, সমুদ্র, জ্বালানি ও শক্তি খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির আওতায় ভারত শ্রীলঙ্কায় বেশ কয়েকটি বন্দর তৈরি করবে। এর মধ্যে আছে দ্বীপের দেশটির পশ্চিম উপকূলে কলম্বো, পূর্বে ত্রিঙ্কোমালি এবং দেশের উত্তর প্রান্তে পাক প্রণালির মুখে কাঙ্কেসান্থুরাই বন্দর। ত্রিঙ্কোমালি বিশ্বের প্রাকৃতিক পোতাশ্রয়গুলোর একটি হলেও বন্দরটিতে বড় আকারে জাহাজ ভেড়ানোর কোনো সুবিধা নেই। দিল্লি এই সুযোগটিই নিতে চায় এবং চীনের ট্রায়াঙ্গেল অব ডেথের পাশেই নিজের অবস্থান নিশ্চিত করতে চায়।
এ ছাড়া দিল্লি ও কলম্বো সমন্বিত বিদ্যুৎ গ্রিড বা সঞ্চালন ব্যবস্থাসহ বেশ কয়েকটি যৌথ উদ্যোগ নিয়ে কথা বলছে। এই গ্রিড বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালসহ দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের সঙ্গে শ্রীলঙ্কাকে সংযুক্ত করবে। এই দেশগুলোর আঞ্চলিক উদ্যোগ, যা বিবিআইএন নামে (বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল) পরিচিত হতে পারে। ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের চিরবৈরী সম্পর্কের কারণে সার্ক অপ্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠায় এই জোটের ভবিষ্যৎ দেখছেন না অনেকে।
এর বাইরে পাইপলাইন নির্মাণে কলম্বোর সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন। এটি শ্রীলঙ্কার কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ তিনটি জায়গা নাগাপট্টিনাম, কলম্বো ও ত্রিঙ্কোমালিকে সংযুক্ত করবে। এই ত্রিঙ্কোমালিতেই ভারত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার তেলের ডিপো সংস্কার করে দিতে চাইছে। এ ছাড়া দক্ষিণ ভারত থেকে আরেকটি পাইপলাইন শ্রীলঙ্কার মূল ভূখণ্ডে নেওয়ারও প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। জ্বালানিসংকটে থাকা দেশটির জন্য এই পাইপলাইন লাইফলাইন হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।
২০২২ সালে যখন শ্রীলঙ্কা চরম আর্থিক দুর্দশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, তখন দেশটি চীনের কাছে ঋণ নবায়নের অনুরোধ জানিয়েছিল, কিন্তু কোনো জবাব পায়নি। বিপরীতে ভারত সে সময় শ্রীলঙ্কাকে ৪০০ কোটি ডলারেরও বেশি আর্থিক সহায়তা দিয়েছিল। এর মধ্যে খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি সহায়তা ছিল। ভারতের এই আর্থিক সহায়তা ঋণে জর্জরিত শ্রীলঙ্কাকে অনেকটাই আশার আলো দেখিয়েছিল। এর বাইরেও ২০২৩ সালে ভারত ভারতীয় মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সুবিধার আওতায় শ্রীলঙ্কাকে ১০ বছরের জন্য ঋণ পরিশোধ স্থগিত এবং ১৫ বছরের জন্য ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়ার ঘোষণা দেয়। অন্যদিকে চীন দ্বীপরাষ্ট্রকে মাত্র দুই বছরের ঋণ স্থগিত করার প্রস্তাব দেয়। অথচ বেইজিংকে শ্রীলঙ্কা ৯৯ বছরের জন্য হাম্বানটোটা বন্দর ইজারা দিয়েছে।
ভারত মহাসাগরে কৌশলগত অবস্থানের কারণে চীন ও ভারত উভয়ের কাছেই শ্রীলঙ্কা গুরুত্বপূর্ণ দেশ। তাই চীন এই অঞ্চলে প্রভাববলয় প্রসারিত করতে চায় এবং ভারত তার স্বার্থের জন্য এটিকে রক্ষা করতে চায়।
এ বিষয়ে শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক বিশ্লেষক অরুণা কুলাতুঙ্গা সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে বলেন, ভারত শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে ‘চীনের ডি-ফ্যাক্টো স্যাটেলাইট স্টেট’ হিসেবে দেখে। কারণ দেশগুলো চীনকে জমি লিজ দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই তিন দেশ ভারতের জন্য একটি ট্রায়াঙ্গেল অব ডেথ গঠন করেছে, যা ভারতের জন্য অনেকটা শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির মতো। তাই তাঁর মতে, এই অঞ্চলে নিজেকে মুক্ত রাখার জন্য এবং গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক রুট রক্ষার জন্য ভারতকে এই অঞ্চলে আরও বেশি রিসোর্স ব্যবহার করতে হবে।
অনুবাদ: আব্দুর রহমান

গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
৯ ঘণ্টা আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

ভারত ঘিরে থাকা এশিয়ার তিন দেশের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর নির্মাণে অর্থ দিয়েছে চীন। শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা ও পাকিস্তানের গোয়াদরের বন্দরের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি বন্দরও আছে এই তালিকায়। এই অঞ্চলে কৌশলগত আধিপত্য বজায় রাখতে চীন এই বন্দরগুলোকে ব্যবহার করছে বলে ভারতের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন নিরাপত্ত
০৯ আগস্ট ২০২৩
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

ভারত ঘিরে থাকা এশিয়ার তিন দেশের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর নির্মাণে অর্থ দিয়েছে চীন। শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা ও পাকিস্তানের গোয়াদরের বন্দরের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি বন্দরও আছে এই তালিকায়। এই অঞ্চলে কৌশলগত আধিপত্য বজায় রাখতে চীন এই বন্দরগুলোকে ব্যবহার করছে বলে ভারতের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন নিরাপত্ত
০৯ আগস্ট ২০২৩
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
৯ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

ভারত ঘিরে থাকা এশিয়ার তিন দেশের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর নির্মাণে অর্থ দিয়েছে চীন। শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা ও পাকিস্তানের গোয়াদরের বন্দরের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি বন্দরও আছে এই তালিকায়। এই অঞ্চলে কৌশলগত আধিপত্য বজায় রাখতে চীন এই বন্দরগুলোকে ব্যবহার করছে বলে ভারতের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন নিরাপত্ত
০৯ আগস্ট ২০২৩
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
৯ ঘণ্টা আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভারত ঘিরে থাকা এশিয়ার তিন দেশের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর নির্মাণে অর্থ দিয়েছে চীন। শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা ও পাকিস্তানের গোয়াদরের বন্দরের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি বন্দরও আছে এই তালিকায়। এই অঞ্চলে কৌশলগত আধিপত্য বজায় রাখতে চীন এই বন্দরগুলোকে ব্যবহার করছে বলে ভারতের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন নিরাপত্ত
০৯ আগস্ট ২০২৩
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
৯ ঘণ্টা আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১ দিন আগে