আব্দুর রহমান

দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে সম্পদশালী এলাকা জোহানেসবার্গে শুরু হয়েছে বিশ্বের উদীয়মান শীর্ষ পাঁচ অর্থনীতির—ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা—জোট ব্রিকসের ১৫তম শীর্ষ সম্মেলন। কোভিড মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্ব অর্থনীতি নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে; যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা বলয়ের সঙ্গে চীন ও রাশিয়ার নানামাত্রিক দ্বন্দ্ব ভূরাজনীতিকেও নতুন মোড়ে টেনে এসেছে। এমন সময়ে এবারের ব্রিকস সম্মেলনকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, পশ্চিমা বিশ্বের আধিপত্য মোকাবিলায় এবং বৈশ্বিক নানা বিষয়ে জোরালো অবস্থান তৈরির মাধ্যমে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এই জোট। এবারের সম্মেলন দেশগুলোর জন্য গর্বের ও মুক্তির এবং একই সঙ্গে অস্বস্তিরও।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সম্মেলনে সশরীরে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া—এই মুহূর্তে জোটের জন্য সবচেয়ে স্বস্তির। এতে আয়োজক দক্ষিণ আফ্রিকা অনেকটাই নির্ভার। কারণ, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) পরোয়ানা মাথায় নিয়ে পুতিন সম্মেলনে এলে নেলসন ম্যান্ডেলার দেশ বিপদেই পড়ত। সদস্য দেশ হিসেবে আদালতের নির্দেশনা মেনে সহযোগিতা করতে হতো দেশটিকে।
যেসব বিষয়কে সামনে রেখে ব্রিকস সম্মেলন শুরু হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকট কাটিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের দ্বৈরথের প্রভাব মোকাবিলা করে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়, তা উল্লেখযোগ্য। আর এখানেই প্রশ্ন আসে, তাহলে কি ব্রিকস পশ্চিমা বিশ্ববিরোধী অবস্থান নিতে যাচ্ছে? কিংবা তারা নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়তে যাচ্ছে—নিদেনপক্ষে এমন কোনো চেষ্টা করছে কি?
চলতি বছরের মাঝামাঝি কেপটাউনে অনুষ্ঠিত ব্রিকস জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে রাশিয়ার সাংবাদিকেরা বিবিসির সাংবাদিক অ্যান্ড্রু হার্ডিংকে বলেছিলেন, ‘তোমরা তোমাদের পশ্চিমা দুনিয়ায় মানবাধিকারের স্বর্গ সাজাতে থাকো। আমরা দুনিয়াকে নতুন করে গড়তে যাচ্ছি।’
কিন্তু চাইলেই কি ব্রিকস দুনিয়াকে নতুন করে গড়তে পারবে? এর জন্য ব্রিকসের অভ্যন্তরীণ ঘটনাবলির বোঝাপড়া জরুরি। ২০০১ সালের দিকে বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাস প্রথম চারটি দেশের অর্থনীতির সম্ভাব্য অগ্রগতি বোঝাতে ব্রিক-বিআরআইসি (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন) ধারণা নিয়ে আসে। চীনের উদ্যোগে এর সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকাকে যুক্ত করে যাত্রা শুরু করে ব্রিকস। প্রথম সম্মেলন হয় ২০০৯ সালে।
যাত্রা শুরুর পর অনেক বিশ্লেষক ধারণা করেন, ব্রিকস শিগগিরই শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭-এর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করবে। তবে অভ্যন্তরীণ কোন্দল শুরুতে কিছুটা সংশয় তৈরি করে। কিন্তু বাস্তবে বিশ্লেষকদের ধারণাকে জোরালো করে জোট বিকশিত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২২ আগস্ট জোটের ১৫তম শীর্ষ সম্মেলন হচ্ছে।
এই সম্মেলনে উল্লিখিত দুটি বিষয় ছাড়াও অন্য যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্ব পাবে, তাহলো জোটের বিস্তার। এই বিষয়ে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বিভেদ স্পষ্ট—চীন ও রাশিয়া জোটের সম্প্রসারণ চায়। কিন্তু ভারত ও ব্রাজিলের অবস্থান এর বিপরীত। ‘বৃহত্তর ব্রিকস’-এর অর্থ পশ্চিমা বিশ্বের জন্য বড় হুমকি আসন্ন। কিন্তু সেটা সামরিক হুমকি না হওয়া এখনই পশ্চিমের অতটা ভীত হওয়ার কিছু নেই।
পশ্চিমা বিশ্বের ভীত না হওয়ার কারণ জোটের গঠনের মধ্যেই নিহিত। কারণ, জোটের দেশগুলো আদর্শিক বা শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর দিক থেকে এক রকম নয়। যেমন—ব্রাজিল, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চললেও চীন-রাশিয়ায় তা নেই। শুধু তা-ই নয়, এ দুই দেশ পশ্চিমা গণতন্ত্র ও উদারনৈতিকতার বড় সমালোচকও। ভারত, চীন ও রাশিয়া পারমাণবিক শক্তিধর হলেও ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকা তা নয়। আবার ব্রাজিল ও রাশিয়ার পণ্যের অন্যতম বড় গন্তব্যস্থল চীন হলেও এর বিপরীত হার খুবই সামান্য। অর্থাৎ তাদের মধ্যে বড় বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু জোটের বাকি সদস্য দেশগুলোর মোট অর্থনীতির আকার চীনের চেয়ে অনেক ছোট। এ ছাড়া ভারত ও চীনের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে সীমান্ত নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এ ছাড়া জোটের এখনো কোনো নির্দিষ্ট সনদ, গঠনতন্ত্র বা সদস্য গ্রহণের নির্ধারিত কোনো শর্তাবলি নেই।
ফলে জোটের টিকে থাকার বিষয়টি এখনো একটি মৌলিক প্রশ্ন। তবে জোটের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে যেমন মতপার্থক্য রয়েছে, তেমনি আবার জোটকে টিকিয়ে রাখার জন্য একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও রয়েছে। এর একটি হলো পশ্চিমা বিশ্বের সমালোচনা। বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও জাতিসংঘের মতো বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে ‘গ্লোবাল সাউথ বা বৈশ্বিক দক্ষিণের’ দেশগুলোকে (পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলো) একপাশে সরিয়ে রেখেছে সে বিষয়ে মুখর ব্রিকসের দেশগুলো। পাশাপাশি দেশগুলো চেষ্টা করছে গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠার। এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করের মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছিলেন, বিশ্বের অর্থনৈতিক শক্তি এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। যার ফলে অধিকাংশ দেশকেই অল্প কয়েকটি দেশের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হচ্ছে।
জোটের টিকে থাকার আরেকটি কারণ হলো—নিজের সম্মান রক্ষা করা। বিশেষ করে যেসব দেশ বিশ্বসম্প্রদায়ে টিকে থাকতে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। যেমন ২০১৩ সালের পর থেকে ব্রাজিল, রাশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার সামষ্টিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ১ শতাংশেরও কম। বিপরীতে ভারত ও চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ শতাংশেরও বেশি। ফলে নিজেদের সম্মান রক্ষায় কিছু দেশের জন্য জোটে থাকাটা অনেকটা বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের জন্য ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ব্রিকস সম্মেলনকে বড় করে দেখানোটা বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে। টানা কয়েক দশক ক্ষমতায় থাকার পর এই প্রথম দলটির ক্ষমতার ভিত নড়বড়ে হয়ে গেছে।
এর বাইরে জোটটি পতিতদের আশ্রয়স্থলে হিসেবে একটি ভালো জায়গা। যেমন ব্রাজিলে যখন জাইর বলসোনারে ক্ষমতায় ছিলেন তখন তিনি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর মিত্র ছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার পর যুক্তরাষ্ট্র বলসোনারোর ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। পরে বলসোনারো ব্রিকসকে নিজের আশ্রয় হিসেবে খুঁজে নেন। একইভাবে ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে রাশিয়া যখন পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত, তখন দেশটির জন্য সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা হলো ব্রিকস। ব্রিকসের সর্বশেষ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে ব্রিকসে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে দ্য ইকোনমিস্টের তরফ থেকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, জোটের উদ্দেশ্য কী? জবাবে রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আরও বন্ধু বাড়ানো।’
রাশিয়ার মতো চীনেরও অবস্থান একই। বেইজিংও চায় জোট সম্প্রসারিত হোক। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র এবং এর পশ্চিমা মিত্ররা যেভাবে চীনের সঙ্গে আচরণ করছে তাতে ব্রিকসের মাধ্যমে নতুন ‘বন্ধু’ বাড়ানোর প্রচেষ্টা অমূলক নয়। কারণ, চীনের দৃষ্টি থেকে বিবেচনা করলে পশ্চিমা বিশ্বের বিপরীতে একটি পাল্টা জোট হয়ে ওঠার যতটা সম্ভাবনা রয়েছে অন্য জোট—সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা, জি-২০-এর সে রকম সম্ভাবনা নেই। কারণ, সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা অনেকটাই ইউরেশিয়া চরিত্রের এবং জি-২০ জোটেও পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর প্রাধান্য। তাই পশ্চিমা বিশ্বের ‘ক্ষুদ্র বৃত্তের’ বিপরীতে ব্রিকসকে একটি ‘বড় পরিবারে’ পরিণত করতেই আগ্রহ বেশি।
চীন যে এই প্রথম সদস্য বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে তা কিন্তু নয়। এর আগে, বেইজিংই দক্ষিণ আফ্রিকাকে জোটের নেওয়ার উকালতি করেছিল। এখন ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থায় বেইজিং আবারও জোটে সদস্য বাড়ানোর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। যদিও জোটে সদস্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে সবারই ঐকমত্য জরুরি তারপরও চীনের প্রভাব উপেক্ষা করা অনেকটাই কঠিন। কারণ ব্রিকসের মোট উৎপাদনের প্রায় ৭০ শতাংশ একাই করে থাকে চীন। যার বড় ভোক্তা আবার বাকি চার দেশ।
জোটটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোন দেশগুলো সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করেছে তার তালিকা প্রকাশ করেনি। তবে দ্য ইকোনমিস্ট বিভিন্ন শর্ত মিলিয়ে হিসেবে করে দেখেছে যে ১৮টি দেশ সম্ভবত ব্রিকসের সদস্য হতে চায়। এই তালিকায় বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক প্রভাবশালী দেশ রয়েছে। এসব দেশের মধ্যে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত উল্লেখযোগ্য। ব্রিকসে জোট দেওয়ার মাধ্যমে দেশ দুটি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার পাশাপাশি তাদের দীর্ঘদিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক নতুন করে ঝালিয়ে নিতে চায়।
বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়ার মতো জনবহুল এবং এত দিন জোট নিরপেক্ষ বলে পরিচিত দেশও জোটের সদস্য হতে চায়। তাদের উদ্দেশ্য হলো পশ্চিমা মানদণ্ডের মানবাধিকারের যে সমালোচনা তা থেকে আশ্রয় খুঁজে পাওয়া। এর বাইরে আর্জেন্টিনা, ইথিওপিয়া, মেক্সিকো ও নাইজেরিয়ার মতো জনবহুল দেশগুলোও জোটের সদস্য হওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। শেষ পর্যন্ত যদি এই ১৮টি দেশই জোটের সদস্য হয়ে যায়, তবে হয়তো জোটটি নতুন নাম নেবে। এ ছাড়া জোটটি বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল জোটে পরিণত হবে এবং জোটের মোট জিডিপির পরিমাণ হবে বিশ্বের মোট জিডিপির ৩৪ শতাংশ।
জোটকে কার্যকরী করতে ব্রিকস দেশগুলো শিক্ষা, গবেষণা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, মন্ত্রী, থিংক ট্যাংক এমনকি ক্ষমতাসীন দলগুলোর প্রতিনিধি পর্যায়ের সম্মেলনও আয়োজন করছে নিয়মিত। কিছুদিন আগেই দক্ষিণ আফ্রিকায় হয়ে গেল ব্রিকস ইয়ুথ সামিট। রাশিয়া এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে তাঁরা আগামী বছর প্যারিস অলিম্পিকের আগেই ব্রিকস গেমসের আয়োজন করবে। এই যে আন্তদেশীয় সফট টুলসের ব্যবহার এগুলো জোটের স্থায়ীত্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। এ বিষয়ে ব্রাজিলীয় থিংক ট্যাংক গুতলিও ভার্গাস ফাউন্ডেশনের ফেলো অলিভার স্টুয়েঙ্কেল বলেন, ‘এসব বৈঠক চরিত্রগত দিক থেকে খুব নিরামিষ হলেও এগুলো কূটনীতিবিদদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক বাড়ানোর সুযোগ করে দেয়।’
জোটের টিকে থাকার ক্ষেত্রে আরও বড় একটি রক্ষাকবচ হলো দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। যেগুলো রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, মিনি বিশ্বব্যাংক এবং মিনি আইএমএফ। সদস্য দেশগুলোকে সহজশর্তে ঋণ দেওয়ার জন্য গঠিত হয়েছে কন্টিনজেন্ট রিজার্ভ অ্যারাঞ্জমেন্ট বা সিআরএ—যা মিনি আইএমএফ নামে পরিচিত। সহজশর্তে উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণ দেওয়ার জন্য গঠিত হয়েছে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা এনডিবি। ২০১৫ সালে গঠনের পর থেকে মিনি বিশ্বব্যাংক বা এনডিবি ৩৩ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ঋণ দিয়েছে। তবে বিশ্বব্যাংকের তুলনায় ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এনডিবি এখনো অনেক পিছিয়ে। এ ছাড়া এনডিবির কার্যক্রমের স্বচ্ছতা এবং অন্যান্য বিষয়ে দক্ষতা এখনো বিশ্ব ব্যাংকের তুলনায় কম। বিষয়টি আমলে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড্যানিয়েল ব্র্যাডলো বলেন, বিশ্বব্যাংক এনডিবির তুলনায় এখনো অনেক বেশি স্বচ্ছ এবং দায়বদ্ধ।
অনেক সীমাবদ্ধতার পরও টিকে থাকার চেষ্টায় ব্রিকস অনেকটাই সফল। তবে জোটটির ভবিষ্যৎ কোন পথে যাবে, তা অনেকগুলো শর্তের ওপর নির্ভর করে। বিশেষ করে ভারত-চীন সম্পর্ক, ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক, ভারত ও ব্রাজিলের সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্ক ইত্যাদি সমীকরণ মেলানোর পর বোঝা যাবে আসলে জোটের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাবে। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে দুর্বলতা থাকলেও তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকটাই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বিশেষ করে জোট সম্প্রসারণ এবং নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ার বিষয়ে। এ বিষয়ে জোটের দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি পরিষ্কার না হলেও এ বিষয়ে যে নজর রয়েছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, তিনটি মহাদেশের কোটি কোটি মানুষের প্রতিনিধি করা ব্রিকসের দেশগুলোর একটি বিষয়ে মিল রয়েছে, আর তা হলো, ধনী পশ্চিমাশক্তির হয়ে কাজ করা বিশ্বব্যবস্থার প্রতি অনীহা।
এ বিষয়ে এশিয়া ও ব্রিকসবিষয়ক দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ অনিল সুকলাল গত শুক্রবার এএফপিকে বলেন, এই জোটে যোগ দেওয়ার জন্য আগ্রহ বাড়ছে কোনো কোনো দেশের। এর অন্যতম কারণ, মেরুকৃত বিশ্বের আরও মেরুকরণ হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে। তাই দেশগুলোকে বাধ্য হয়ে কোনো পক্ষে যেতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘দক্ষিণের দেশগুলো কাকে সমর্থন করবে, কীভাবে আচরণ করবে এবং কীভাবে তাদের সার্বভৌম বিষয়গুলো পরিচালনা করবে, তা বলতে চায় না। তারা এখন তাদের নিজ নিজ অবস্থান জাহির করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী।’ ফলে ‘বিশ্বকাঠামো’ পুনর্গঠন করতে চাওয়া দেশগুলোর জন্য ব্রিকস আশা জাগিয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে।
লিম্পোপো বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রভাষক লেবোগং লেগোডি এই বিষয়ে একমত যে বর্তমান বিশ্বে কর্তৃত্বের বিকল্প হিসেবে অনেক দেশই এখন ব্রিকসে যোগদানে আগ্রহ দেখাচ্ছে। কিন্তু ব্রিকসের প্রতি নজর রাখা বিশ্লেষকেরা এই সম্মেলনের ফলাফল নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী নন। কেননা, বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ক্ষমতা এখনো পশ্চিমা দেশগুলোর হাতেই রয়েছে এবং চীন এখনো প্রভাবশালী শক্তি হয়ে ওঠেনি।
সব মিলিয়ে জোহানেসবার্গে চলমান ব্রিকস সম্মেলন জোটকে নতুন করে ‘সংজ্ঞায়িত’ করার মুহূর্ত। কারণ, জোটের সম্প্রসারণ একই সঙ্গে এতে চীনের প্রভাবকে বৃদ্ধি করবে এবং একই সঙ্গে জোটের পশ্চিমাবিরোধী মনোভাব বাড়বে, যা রাশিয়াকেও প্রকারান্তে সুবিধা দেবে। এতে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়া নিয়ে যে আলোচনা চলমান তার পালে হাওয়া লাগবে।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, এএফপি, দ্য ইকোনমিস্ট এবং বিবিসি

দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে সম্পদশালী এলাকা জোহানেসবার্গে শুরু হয়েছে বিশ্বের উদীয়মান শীর্ষ পাঁচ অর্থনীতির—ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা—জোট ব্রিকসের ১৫তম শীর্ষ সম্মেলন। কোভিড মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্ব অর্থনীতি নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে; যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা বলয়ের সঙ্গে চীন ও রাশিয়ার নানামাত্রিক দ্বন্দ্ব ভূরাজনীতিকেও নতুন মোড়ে টেনে এসেছে। এমন সময়ে এবারের ব্রিকস সম্মেলনকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, পশ্চিমা বিশ্বের আধিপত্য মোকাবিলায় এবং বৈশ্বিক নানা বিষয়ে জোরালো অবস্থান তৈরির মাধ্যমে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এই জোট। এবারের সম্মেলন দেশগুলোর জন্য গর্বের ও মুক্তির এবং একই সঙ্গে অস্বস্তিরও।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সম্মেলনে সশরীরে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া—এই মুহূর্তে জোটের জন্য সবচেয়ে স্বস্তির। এতে আয়োজক দক্ষিণ আফ্রিকা অনেকটাই নির্ভার। কারণ, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) পরোয়ানা মাথায় নিয়ে পুতিন সম্মেলনে এলে নেলসন ম্যান্ডেলার দেশ বিপদেই পড়ত। সদস্য দেশ হিসেবে আদালতের নির্দেশনা মেনে সহযোগিতা করতে হতো দেশটিকে।
যেসব বিষয়কে সামনে রেখে ব্রিকস সম্মেলন শুরু হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকট কাটিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের দ্বৈরথের প্রভাব মোকাবিলা করে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়, তা উল্লেখযোগ্য। আর এখানেই প্রশ্ন আসে, তাহলে কি ব্রিকস পশ্চিমা বিশ্ববিরোধী অবস্থান নিতে যাচ্ছে? কিংবা তারা নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়তে যাচ্ছে—নিদেনপক্ষে এমন কোনো চেষ্টা করছে কি?
চলতি বছরের মাঝামাঝি কেপটাউনে অনুষ্ঠিত ব্রিকস জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে রাশিয়ার সাংবাদিকেরা বিবিসির সাংবাদিক অ্যান্ড্রু হার্ডিংকে বলেছিলেন, ‘তোমরা তোমাদের পশ্চিমা দুনিয়ায় মানবাধিকারের স্বর্গ সাজাতে থাকো। আমরা দুনিয়াকে নতুন করে গড়তে যাচ্ছি।’
কিন্তু চাইলেই কি ব্রিকস দুনিয়াকে নতুন করে গড়তে পারবে? এর জন্য ব্রিকসের অভ্যন্তরীণ ঘটনাবলির বোঝাপড়া জরুরি। ২০০১ সালের দিকে বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাস প্রথম চারটি দেশের অর্থনীতির সম্ভাব্য অগ্রগতি বোঝাতে ব্রিক-বিআরআইসি (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন) ধারণা নিয়ে আসে। চীনের উদ্যোগে এর সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকাকে যুক্ত করে যাত্রা শুরু করে ব্রিকস। প্রথম সম্মেলন হয় ২০০৯ সালে।
যাত্রা শুরুর পর অনেক বিশ্লেষক ধারণা করেন, ব্রিকস শিগগিরই শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭-এর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করবে। তবে অভ্যন্তরীণ কোন্দল শুরুতে কিছুটা সংশয় তৈরি করে। কিন্তু বাস্তবে বিশ্লেষকদের ধারণাকে জোরালো করে জোট বিকশিত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২২ আগস্ট জোটের ১৫তম শীর্ষ সম্মেলন হচ্ছে।
এই সম্মেলনে উল্লিখিত দুটি বিষয় ছাড়াও অন্য যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্ব পাবে, তাহলো জোটের বিস্তার। এই বিষয়ে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বিভেদ স্পষ্ট—চীন ও রাশিয়া জোটের সম্প্রসারণ চায়। কিন্তু ভারত ও ব্রাজিলের অবস্থান এর বিপরীত। ‘বৃহত্তর ব্রিকস’-এর অর্থ পশ্চিমা বিশ্বের জন্য বড় হুমকি আসন্ন। কিন্তু সেটা সামরিক হুমকি না হওয়া এখনই পশ্চিমের অতটা ভীত হওয়ার কিছু নেই।
পশ্চিমা বিশ্বের ভীত না হওয়ার কারণ জোটের গঠনের মধ্যেই নিহিত। কারণ, জোটের দেশগুলো আদর্শিক বা শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর দিক থেকে এক রকম নয়। যেমন—ব্রাজিল, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চললেও চীন-রাশিয়ায় তা নেই। শুধু তা-ই নয়, এ দুই দেশ পশ্চিমা গণতন্ত্র ও উদারনৈতিকতার বড় সমালোচকও। ভারত, চীন ও রাশিয়া পারমাণবিক শক্তিধর হলেও ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকা তা নয়। আবার ব্রাজিল ও রাশিয়ার পণ্যের অন্যতম বড় গন্তব্যস্থল চীন হলেও এর বিপরীত হার খুবই সামান্য। অর্থাৎ তাদের মধ্যে বড় বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু জোটের বাকি সদস্য দেশগুলোর মোট অর্থনীতির আকার চীনের চেয়ে অনেক ছোট। এ ছাড়া ভারত ও চীনের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে সীমান্ত নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এ ছাড়া জোটের এখনো কোনো নির্দিষ্ট সনদ, গঠনতন্ত্র বা সদস্য গ্রহণের নির্ধারিত কোনো শর্তাবলি নেই।
ফলে জোটের টিকে থাকার বিষয়টি এখনো একটি মৌলিক প্রশ্ন। তবে জোটের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে যেমন মতপার্থক্য রয়েছে, তেমনি আবার জোটকে টিকিয়ে রাখার জন্য একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও রয়েছে। এর একটি হলো পশ্চিমা বিশ্বের সমালোচনা। বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও জাতিসংঘের মতো বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে ‘গ্লোবাল সাউথ বা বৈশ্বিক দক্ষিণের’ দেশগুলোকে (পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলো) একপাশে সরিয়ে রেখেছে সে বিষয়ে মুখর ব্রিকসের দেশগুলো। পাশাপাশি দেশগুলো চেষ্টা করছে গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠার। এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করের মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছিলেন, বিশ্বের অর্থনৈতিক শক্তি এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। যার ফলে অধিকাংশ দেশকেই অল্প কয়েকটি দেশের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হচ্ছে।
জোটের টিকে থাকার আরেকটি কারণ হলো—নিজের সম্মান রক্ষা করা। বিশেষ করে যেসব দেশ বিশ্বসম্প্রদায়ে টিকে থাকতে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। যেমন ২০১৩ সালের পর থেকে ব্রাজিল, রাশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার সামষ্টিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ১ শতাংশেরও কম। বিপরীতে ভারত ও চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ শতাংশেরও বেশি। ফলে নিজেদের সম্মান রক্ষায় কিছু দেশের জন্য জোটে থাকাটা অনেকটা বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের জন্য ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ব্রিকস সম্মেলনকে বড় করে দেখানোটা বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে। টানা কয়েক দশক ক্ষমতায় থাকার পর এই প্রথম দলটির ক্ষমতার ভিত নড়বড়ে হয়ে গেছে।
এর বাইরে জোটটি পতিতদের আশ্রয়স্থলে হিসেবে একটি ভালো জায়গা। যেমন ব্রাজিলে যখন জাইর বলসোনারে ক্ষমতায় ছিলেন তখন তিনি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর মিত্র ছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার পর যুক্তরাষ্ট্র বলসোনারোর ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। পরে বলসোনারো ব্রিকসকে নিজের আশ্রয় হিসেবে খুঁজে নেন। একইভাবে ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে রাশিয়া যখন পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত, তখন দেশটির জন্য সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা হলো ব্রিকস। ব্রিকসের সর্বশেষ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে ব্রিকসে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে দ্য ইকোনমিস্টের তরফ থেকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, জোটের উদ্দেশ্য কী? জবাবে রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আরও বন্ধু বাড়ানো।’
রাশিয়ার মতো চীনেরও অবস্থান একই। বেইজিংও চায় জোট সম্প্রসারিত হোক। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র এবং এর পশ্চিমা মিত্ররা যেভাবে চীনের সঙ্গে আচরণ করছে তাতে ব্রিকসের মাধ্যমে নতুন ‘বন্ধু’ বাড়ানোর প্রচেষ্টা অমূলক নয়। কারণ, চীনের দৃষ্টি থেকে বিবেচনা করলে পশ্চিমা বিশ্বের বিপরীতে একটি পাল্টা জোট হয়ে ওঠার যতটা সম্ভাবনা রয়েছে অন্য জোট—সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা, জি-২০-এর সে রকম সম্ভাবনা নেই। কারণ, সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা অনেকটাই ইউরেশিয়া চরিত্রের এবং জি-২০ জোটেও পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর প্রাধান্য। তাই পশ্চিমা বিশ্বের ‘ক্ষুদ্র বৃত্তের’ বিপরীতে ব্রিকসকে একটি ‘বড় পরিবারে’ পরিণত করতেই আগ্রহ বেশি।
চীন যে এই প্রথম সদস্য বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে তা কিন্তু নয়। এর আগে, বেইজিংই দক্ষিণ আফ্রিকাকে জোটের নেওয়ার উকালতি করেছিল। এখন ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থায় বেইজিং আবারও জোটে সদস্য বাড়ানোর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। যদিও জোটে সদস্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে সবারই ঐকমত্য জরুরি তারপরও চীনের প্রভাব উপেক্ষা করা অনেকটাই কঠিন। কারণ ব্রিকসের মোট উৎপাদনের প্রায় ৭০ শতাংশ একাই করে থাকে চীন। যার বড় ভোক্তা আবার বাকি চার দেশ।
জোটটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোন দেশগুলো সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করেছে তার তালিকা প্রকাশ করেনি। তবে দ্য ইকোনমিস্ট বিভিন্ন শর্ত মিলিয়ে হিসেবে করে দেখেছে যে ১৮টি দেশ সম্ভবত ব্রিকসের সদস্য হতে চায়। এই তালিকায় বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক প্রভাবশালী দেশ রয়েছে। এসব দেশের মধ্যে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত উল্লেখযোগ্য। ব্রিকসে জোট দেওয়ার মাধ্যমে দেশ দুটি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার পাশাপাশি তাদের দীর্ঘদিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক নতুন করে ঝালিয়ে নিতে চায়।
বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়ার মতো জনবহুল এবং এত দিন জোট নিরপেক্ষ বলে পরিচিত দেশও জোটের সদস্য হতে চায়। তাদের উদ্দেশ্য হলো পশ্চিমা মানদণ্ডের মানবাধিকারের যে সমালোচনা তা থেকে আশ্রয় খুঁজে পাওয়া। এর বাইরে আর্জেন্টিনা, ইথিওপিয়া, মেক্সিকো ও নাইজেরিয়ার মতো জনবহুল দেশগুলোও জোটের সদস্য হওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। শেষ পর্যন্ত যদি এই ১৮টি দেশই জোটের সদস্য হয়ে যায়, তবে হয়তো জোটটি নতুন নাম নেবে। এ ছাড়া জোটটি বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল জোটে পরিণত হবে এবং জোটের মোট জিডিপির পরিমাণ হবে বিশ্বের মোট জিডিপির ৩৪ শতাংশ।
জোটকে কার্যকরী করতে ব্রিকস দেশগুলো শিক্ষা, গবেষণা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, মন্ত্রী, থিংক ট্যাংক এমনকি ক্ষমতাসীন দলগুলোর প্রতিনিধি পর্যায়ের সম্মেলনও আয়োজন করছে নিয়মিত। কিছুদিন আগেই দক্ষিণ আফ্রিকায় হয়ে গেল ব্রিকস ইয়ুথ সামিট। রাশিয়া এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে তাঁরা আগামী বছর প্যারিস অলিম্পিকের আগেই ব্রিকস গেমসের আয়োজন করবে। এই যে আন্তদেশীয় সফট টুলসের ব্যবহার এগুলো জোটের স্থায়ীত্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। এ বিষয়ে ব্রাজিলীয় থিংক ট্যাংক গুতলিও ভার্গাস ফাউন্ডেশনের ফেলো অলিভার স্টুয়েঙ্কেল বলেন, ‘এসব বৈঠক চরিত্রগত দিক থেকে খুব নিরামিষ হলেও এগুলো কূটনীতিবিদদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক বাড়ানোর সুযোগ করে দেয়।’
জোটের টিকে থাকার ক্ষেত্রে আরও বড় একটি রক্ষাকবচ হলো দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। যেগুলো রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, মিনি বিশ্বব্যাংক এবং মিনি আইএমএফ। সদস্য দেশগুলোকে সহজশর্তে ঋণ দেওয়ার জন্য গঠিত হয়েছে কন্টিনজেন্ট রিজার্ভ অ্যারাঞ্জমেন্ট বা সিআরএ—যা মিনি আইএমএফ নামে পরিচিত। সহজশর্তে উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণ দেওয়ার জন্য গঠিত হয়েছে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা এনডিবি। ২০১৫ সালে গঠনের পর থেকে মিনি বিশ্বব্যাংক বা এনডিবি ৩৩ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ঋণ দিয়েছে। তবে বিশ্বব্যাংকের তুলনায় ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এনডিবি এখনো অনেক পিছিয়ে। এ ছাড়া এনডিবির কার্যক্রমের স্বচ্ছতা এবং অন্যান্য বিষয়ে দক্ষতা এখনো বিশ্ব ব্যাংকের তুলনায় কম। বিষয়টি আমলে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড্যানিয়েল ব্র্যাডলো বলেন, বিশ্বব্যাংক এনডিবির তুলনায় এখনো অনেক বেশি স্বচ্ছ এবং দায়বদ্ধ।
অনেক সীমাবদ্ধতার পরও টিকে থাকার চেষ্টায় ব্রিকস অনেকটাই সফল। তবে জোটটির ভবিষ্যৎ কোন পথে যাবে, তা অনেকগুলো শর্তের ওপর নির্ভর করে। বিশেষ করে ভারত-চীন সম্পর্ক, ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক, ভারত ও ব্রাজিলের সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্ক ইত্যাদি সমীকরণ মেলানোর পর বোঝা যাবে আসলে জোটের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাবে। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে দুর্বলতা থাকলেও তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকটাই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বিশেষ করে জোট সম্প্রসারণ এবং নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ার বিষয়ে। এ বিষয়ে জোটের দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি পরিষ্কার না হলেও এ বিষয়ে যে নজর রয়েছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, তিনটি মহাদেশের কোটি কোটি মানুষের প্রতিনিধি করা ব্রিকসের দেশগুলোর একটি বিষয়ে মিল রয়েছে, আর তা হলো, ধনী পশ্চিমাশক্তির হয়ে কাজ করা বিশ্বব্যবস্থার প্রতি অনীহা।
এ বিষয়ে এশিয়া ও ব্রিকসবিষয়ক দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ অনিল সুকলাল গত শুক্রবার এএফপিকে বলেন, এই জোটে যোগ দেওয়ার জন্য আগ্রহ বাড়ছে কোনো কোনো দেশের। এর অন্যতম কারণ, মেরুকৃত বিশ্বের আরও মেরুকরণ হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে। তাই দেশগুলোকে বাধ্য হয়ে কোনো পক্ষে যেতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘দক্ষিণের দেশগুলো কাকে সমর্থন করবে, কীভাবে আচরণ করবে এবং কীভাবে তাদের সার্বভৌম বিষয়গুলো পরিচালনা করবে, তা বলতে চায় না। তারা এখন তাদের নিজ নিজ অবস্থান জাহির করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী।’ ফলে ‘বিশ্বকাঠামো’ পুনর্গঠন করতে চাওয়া দেশগুলোর জন্য ব্রিকস আশা জাগিয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে।
লিম্পোপো বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রভাষক লেবোগং লেগোডি এই বিষয়ে একমত যে বর্তমান বিশ্বে কর্তৃত্বের বিকল্প হিসেবে অনেক দেশই এখন ব্রিকসে যোগদানে আগ্রহ দেখাচ্ছে। কিন্তু ব্রিকসের প্রতি নজর রাখা বিশ্লেষকেরা এই সম্মেলনের ফলাফল নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী নন। কেননা, বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ক্ষমতা এখনো পশ্চিমা দেশগুলোর হাতেই রয়েছে এবং চীন এখনো প্রভাবশালী শক্তি হয়ে ওঠেনি।
সব মিলিয়ে জোহানেসবার্গে চলমান ব্রিকস সম্মেলন জোটকে নতুন করে ‘সংজ্ঞায়িত’ করার মুহূর্ত। কারণ, জোটের সম্প্রসারণ একই সঙ্গে এতে চীনের প্রভাবকে বৃদ্ধি করবে এবং একই সঙ্গে জোটের পশ্চিমাবিরোধী মনোভাব বাড়বে, যা রাশিয়াকেও প্রকারান্তে সুবিধা দেবে। এতে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়া নিয়ে যে আলোচনা চলমান তার পালে হাওয়া লাগবে।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, এএফপি, দ্য ইকোনমিস্ট এবং বিবিসি
আব্দুর রহমান

দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে সম্পদশালী এলাকা জোহানেসবার্গে শুরু হয়েছে বিশ্বের উদীয়মান শীর্ষ পাঁচ অর্থনীতির—ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা—জোট ব্রিকসের ১৫তম শীর্ষ সম্মেলন। কোভিড মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্ব অর্থনীতি নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে; যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা বলয়ের সঙ্গে চীন ও রাশিয়ার নানামাত্রিক দ্বন্দ্ব ভূরাজনীতিকেও নতুন মোড়ে টেনে এসেছে। এমন সময়ে এবারের ব্রিকস সম্মেলনকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, পশ্চিমা বিশ্বের আধিপত্য মোকাবিলায় এবং বৈশ্বিক নানা বিষয়ে জোরালো অবস্থান তৈরির মাধ্যমে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এই জোট। এবারের সম্মেলন দেশগুলোর জন্য গর্বের ও মুক্তির এবং একই সঙ্গে অস্বস্তিরও।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সম্মেলনে সশরীরে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া—এই মুহূর্তে জোটের জন্য সবচেয়ে স্বস্তির। এতে আয়োজক দক্ষিণ আফ্রিকা অনেকটাই নির্ভার। কারণ, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) পরোয়ানা মাথায় নিয়ে পুতিন সম্মেলনে এলে নেলসন ম্যান্ডেলার দেশ বিপদেই পড়ত। সদস্য দেশ হিসেবে আদালতের নির্দেশনা মেনে সহযোগিতা করতে হতো দেশটিকে।
যেসব বিষয়কে সামনে রেখে ব্রিকস সম্মেলন শুরু হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকট কাটিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের দ্বৈরথের প্রভাব মোকাবিলা করে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়, তা উল্লেখযোগ্য। আর এখানেই প্রশ্ন আসে, তাহলে কি ব্রিকস পশ্চিমা বিশ্ববিরোধী অবস্থান নিতে যাচ্ছে? কিংবা তারা নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়তে যাচ্ছে—নিদেনপক্ষে এমন কোনো চেষ্টা করছে কি?
চলতি বছরের মাঝামাঝি কেপটাউনে অনুষ্ঠিত ব্রিকস জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে রাশিয়ার সাংবাদিকেরা বিবিসির সাংবাদিক অ্যান্ড্রু হার্ডিংকে বলেছিলেন, ‘তোমরা তোমাদের পশ্চিমা দুনিয়ায় মানবাধিকারের স্বর্গ সাজাতে থাকো। আমরা দুনিয়াকে নতুন করে গড়তে যাচ্ছি।’
কিন্তু চাইলেই কি ব্রিকস দুনিয়াকে নতুন করে গড়তে পারবে? এর জন্য ব্রিকসের অভ্যন্তরীণ ঘটনাবলির বোঝাপড়া জরুরি। ২০০১ সালের দিকে বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাস প্রথম চারটি দেশের অর্থনীতির সম্ভাব্য অগ্রগতি বোঝাতে ব্রিক-বিআরআইসি (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন) ধারণা নিয়ে আসে। চীনের উদ্যোগে এর সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকাকে যুক্ত করে যাত্রা শুরু করে ব্রিকস। প্রথম সম্মেলন হয় ২০০৯ সালে।
যাত্রা শুরুর পর অনেক বিশ্লেষক ধারণা করেন, ব্রিকস শিগগিরই শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭-এর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করবে। তবে অভ্যন্তরীণ কোন্দল শুরুতে কিছুটা সংশয় তৈরি করে। কিন্তু বাস্তবে বিশ্লেষকদের ধারণাকে জোরালো করে জোট বিকশিত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২২ আগস্ট জোটের ১৫তম শীর্ষ সম্মেলন হচ্ছে।
এই সম্মেলনে উল্লিখিত দুটি বিষয় ছাড়াও অন্য যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্ব পাবে, তাহলো জোটের বিস্তার। এই বিষয়ে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বিভেদ স্পষ্ট—চীন ও রাশিয়া জোটের সম্প্রসারণ চায়। কিন্তু ভারত ও ব্রাজিলের অবস্থান এর বিপরীত। ‘বৃহত্তর ব্রিকস’-এর অর্থ পশ্চিমা বিশ্বের জন্য বড় হুমকি আসন্ন। কিন্তু সেটা সামরিক হুমকি না হওয়া এখনই পশ্চিমের অতটা ভীত হওয়ার কিছু নেই।
পশ্চিমা বিশ্বের ভীত না হওয়ার কারণ জোটের গঠনের মধ্যেই নিহিত। কারণ, জোটের দেশগুলো আদর্শিক বা শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর দিক থেকে এক রকম নয়। যেমন—ব্রাজিল, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চললেও চীন-রাশিয়ায় তা নেই। শুধু তা-ই নয়, এ দুই দেশ পশ্চিমা গণতন্ত্র ও উদারনৈতিকতার বড় সমালোচকও। ভারত, চীন ও রাশিয়া পারমাণবিক শক্তিধর হলেও ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকা তা নয়। আবার ব্রাজিল ও রাশিয়ার পণ্যের অন্যতম বড় গন্তব্যস্থল চীন হলেও এর বিপরীত হার খুবই সামান্য। অর্থাৎ তাদের মধ্যে বড় বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু জোটের বাকি সদস্য দেশগুলোর মোট অর্থনীতির আকার চীনের চেয়ে অনেক ছোট। এ ছাড়া ভারত ও চীনের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে সীমান্ত নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এ ছাড়া জোটের এখনো কোনো নির্দিষ্ট সনদ, গঠনতন্ত্র বা সদস্য গ্রহণের নির্ধারিত কোনো শর্তাবলি নেই।
ফলে জোটের টিকে থাকার বিষয়টি এখনো একটি মৌলিক প্রশ্ন। তবে জোটের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে যেমন মতপার্থক্য রয়েছে, তেমনি আবার জোটকে টিকিয়ে রাখার জন্য একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও রয়েছে। এর একটি হলো পশ্চিমা বিশ্বের সমালোচনা। বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও জাতিসংঘের মতো বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে ‘গ্লোবাল সাউথ বা বৈশ্বিক দক্ষিণের’ দেশগুলোকে (পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলো) একপাশে সরিয়ে রেখেছে সে বিষয়ে মুখর ব্রিকসের দেশগুলো। পাশাপাশি দেশগুলো চেষ্টা করছে গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠার। এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করের মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছিলেন, বিশ্বের অর্থনৈতিক শক্তি এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। যার ফলে অধিকাংশ দেশকেই অল্প কয়েকটি দেশের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হচ্ছে।
জোটের টিকে থাকার আরেকটি কারণ হলো—নিজের সম্মান রক্ষা করা। বিশেষ করে যেসব দেশ বিশ্বসম্প্রদায়ে টিকে থাকতে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। যেমন ২০১৩ সালের পর থেকে ব্রাজিল, রাশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার সামষ্টিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ১ শতাংশেরও কম। বিপরীতে ভারত ও চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ শতাংশেরও বেশি। ফলে নিজেদের সম্মান রক্ষায় কিছু দেশের জন্য জোটে থাকাটা অনেকটা বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের জন্য ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ব্রিকস সম্মেলনকে বড় করে দেখানোটা বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে। টানা কয়েক দশক ক্ষমতায় থাকার পর এই প্রথম দলটির ক্ষমতার ভিত নড়বড়ে হয়ে গেছে।
এর বাইরে জোটটি পতিতদের আশ্রয়স্থলে হিসেবে একটি ভালো জায়গা। যেমন ব্রাজিলে যখন জাইর বলসোনারে ক্ষমতায় ছিলেন তখন তিনি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর মিত্র ছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার পর যুক্তরাষ্ট্র বলসোনারোর ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। পরে বলসোনারো ব্রিকসকে নিজের আশ্রয় হিসেবে খুঁজে নেন। একইভাবে ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে রাশিয়া যখন পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত, তখন দেশটির জন্য সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা হলো ব্রিকস। ব্রিকসের সর্বশেষ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে ব্রিকসে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে দ্য ইকোনমিস্টের তরফ থেকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, জোটের উদ্দেশ্য কী? জবাবে রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আরও বন্ধু বাড়ানো।’
রাশিয়ার মতো চীনেরও অবস্থান একই। বেইজিংও চায় জোট সম্প্রসারিত হোক। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র এবং এর পশ্চিমা মিত্ররা যেভাবে চীনের সঙ্গে আচরণ করছে তাতে ব্রিকসের মাধ্যমে নতুন ‘বন্ধু’ বাড়ানোর প্রচেষ্টা অমূলক নয়। কারণ, চীনের দৃষ্টি থেকে বিবেচনা করলে পশ্চিমা বিশ্বের বিপরীতে একটি পাল্টা জোট হয়ে ওঠার যতটা সম্ভাবনা রয়েছে অন্য জোট—সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা, জি-২০-এর সে রকম সম্ভাবনা নেই। কারণ, সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা অনেকটাই ইউরেশিয়া চরিত্রের এবং জি-২০ জোটেও পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর প্রাধান্য। তাই পশ্চিমা বিশ্বের ‘ক্ষুদ্র বৃত্তের’ বিপরীতে ব্রিকসকে একটি ‘বড় পরিবারে’ পরিণত করতেই আগ্রহ বেশি।
চীন যে এই প্রথম সদস্য বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে তা কিন্তু নয়। এর আগে, বেইজিংই দক্ষিণ আফ্রিকাকে জোটের নেওয়ার উকালতি করেছিল। এখন ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থায় বেইজিং আবারও জোটে সদস্য বাড়ানোর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। যদিও জোটে সদস্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে সবারই ঐকমত্য জরুরি তারপরও চীনের প্রভাব উপেক্ষা করা অনেকটাই কঠিন। কারণ ব্রিকসের মোট উৎপাদনের প্রায় ৭০ শতাংশ একাই করে থাকে চীন। যার বড় ভোক্তা আবার বাকি চার দেশ।
জোটটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোন দেশগুলো সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করেছে তার তালিকা প্রকাশ করেনি। তবে দ্য ইকোনমিস্ট বিভিন্ন শর্ত মিলিয়ে হিসেবে করে দেখেছে যে ১৮টি দেশ সম্ভবত ব্রিকসের সদস্য হতে চায়। এই তালিকায় বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক প্রভাবশালী দেশ রয়েছে। এসব দেশের মধ্যে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত উল্লেখযোগ্য। ব্রিকসে জোট দেওয়ার মাধ্যমে দেশ দুটি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার পাশাপাশি তাদের দীর্ঘদিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক নতুন করে ঝালিয়ে নিতে চায়।
বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়ার মতো জনবহুল এবং এত দিন জোট নিরপেক্ষ বলে পরিচিত দেশও জোটের সদস্য হতে চায়। তাদের উদ্দেশ্য হলো পশ্চিমা মানদণ্ডের মানবাধিকারের যে সমালোচনা তা থেকে আশ্রয় খুঁজে পাওয়া। এর বাইরে আর্জেন্টিনা, ইথিওপিয়া, মেক্সিকো ও নাইজেরিয়ার মতো জনবহুল দেশগুলোও জোটের সদস্য হওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। শেষ পর্যন্ত যদি এই ১৮টি দেশই জোটের সদস্য হয়ে যায়, তবে হয়তো জোটটি নতুন নাম নেবে। এ ছাড়া জোটটি বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল জোটে পরিণত হবে এবং জোটের মোট জিডিপির পরিমাণ হবে বিশ্বের মোট জিডিপির ৩৪ শতাংশ।
জোটকে কার্যকরী করতে ব্রিকস দেশগুলো শিক্ষা, গবেষণা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, মন্ত্রী, থিংক ট্যাংক এমনকি ক্ষমতাসীন দলগুলোর প্রতিনিধি পর্যায়ের সম্মেলনও আয়োজন করছে নিয়মিত। কিছুদিন আগেই দক্ষিণ আফ্রিকায় হয়ে গেল ব্রিকস ইয়ুথ সামিট। রাশিয়া এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে তাঁরা আগামী বছর প্যারিস অলিম্পিকের আগেই ব্রিকস গেমসের আয়োজন করবে। এই যে আন্তদেশীয় সফট টুলসের ব্যবহার এগুলো জোটের স্থায়ীত্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। এ বিষয়ে ব্রাজিলীয় থিংক ট্যাংক গুতলিও ভার্গাস ফাউন্ডেশনের ফেলো অলিভার স্টুয়েঙ্কেল বলেন, ‘এসব বৈঠক চরিত্রগত দিক থেকে খুব নিরামিষ হলেও এগুলো কূটনীতিবিদদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক বাড়ানোর সুযোগ করে দেয়।’
জোটের টিকে থাকার ক্ষেত্রে আরও বড় একটি রক্ষাকবচ হলো দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। যেগুলো রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, মিনি বিশ্বব্যাংক এবং মিনি আইএমএফ। সদস্য দেশগুলোকে সহজশর্তে ঋণ দেওয়ার জন্য গঠিত হয়েছে কন্টিনজেন্ট রিজার্ভ অ্যারাঞ্জমেন্ট বা সিআরএ—যা মিনি আইএমএফ নামে পরিচিত। সহজশর্তে উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণ দেওয়ার জন্য গঠিত হয়েছে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা এনডিবি। ২০১৫ সালে গঠনের পর থেকে মিনি বিশ্বব্যাংক বা এনডিবি ৩৩ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ঋণ দিয়েছে। তবে বিশ্বব্যাংকের তুলনায় ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এনডিবি এখনো অনেক পিছিয়ে। এ ছাড়া এনডিবির কার্যক্রমের স্বচ্ছতা এবং অন্যান্য বিষয়ে দক্ষতা এখনো বিশ্ব ব্যাংকের তুলনায় কম। বিষয়টি আমলে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড্যানিয়েল ব্র্যাডলো বলেন, বিশ্বব্যাংক এনডিবির তুলনায় এখনো অনেক বেশি স্বচ্ছ এবং দায়বদ্ধ।
অনেক সীমাবদ্ধতার পরও টিকে থাকার চেষ্টায় ব্রিকস অনেকটাই সফল। তবে জোটটির ভবিষ্যৎ কোন পথে যাবে, তা অনেকগুলো শর্তের ওপর নির্ভর করে। বিশেষ করে ভারত-চীন সম্পর্ক, ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক, ভারত ও ব্রাজিলের সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্ক ইত্যাদি সমীকরণ মেলানোর পর বোঝা যাবে আসলে জোটের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাবে। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে দুর্বলতা থাকলেও তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকটাই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বিশেষ করে জোট সম্প্রসারণ এবং নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ার বিষয়ে। এ বিষয়ে জোটের দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি পরিষ্কার না হলেও এ বিষয়ে যে নজর রয়েছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, তিনটি মহাদেশের কোটি কোটি মানুষের প্রতিনিধি করা ব্রিকসের দেশগুলোর একটি বিষয়ে মিল রয়েছে, আর তা হলো, ধনী পশ্চিমাশক্তির হয়ে কাজ করা বিশ্বব্যবস্থার প্রতি অনীহা।
এ বিষয়ে এশিয়া ও ব্রিকসবিষয়ক দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ অনিল সুকলাল গত শুক্রবার এএফপিকে বলেন, এই জোটে যোগ দেওয়ার জন্য আগ্রহ বাড়ছে কোনো কোনো দেশের। এর অন্যতম কারণ, মেরুকৃত বিশ্বের আরও মেরুকরণ হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে। তাই দেশগুলোকে বাধ্য হয়ে কোনো পক্ষে যেতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘দক্ষিণের দেশগুলো কাকে সমর্থন করবে, কীভাবে আচরণ করবে এবং কীভাবে তাদের সার্বভৌম বিষয়গুলো পরিচালনা করবে, তা বলতে চায় না। তারা এখন তাদের নিজ নিজ অবস্থান জাহির করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী।’ ফলে ‘বিশ্বকাঠামো’ পুনর্গঠন করতে চাওয়া দেশগুলোর জন্য ব্রিকস আশা জাগিয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে।
লিম্পোপো বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রভাষক লেবোগং লেগোডি এই বিষয়ে একমত যে বর্তমান বিশ্বে কর্তৃত্বের বিকল্প হিসেবে অনেক দেশই এখন ব্রিকসে যোগদানে আগ্রহ দেখাচ্ছে। কিন্তু ব্রিকসের প্রতি নজর রাখা বিশ্লেষকেরা এই সম্মেলনের ফলাফল নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী নন। কেননা, বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ক্ষমতা এখনো পশ্চিমা দেশগুলোর হাতেই রয়েছে এবং চীন এখনো প্রভাবশালী শক্তি হয়ে ওঠেনি।
সব মিলিয়ে জোহানেসবার্গে চলমান ব্রিকস সম্মেলন জোটকে নতুন করে ‘সংজ্ঞায়িত’ করার মুহূর্ত। কারণ, জোটের সম্প্রসারণ একই সঙ্গে এতে চীনের প্রভাবকে বৃদ্ধি করবে এবং একই সঙ্গে জোটের পশ্চিমাবিরোধী মনোভাব বাড়বে, যা রাশিয়াকেও প্রকারান্তে সুবিধা দেবে। এতে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়া নিয়ে যে আলোচনা চলমান তার পালে হাওয়া লাগবে।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, এএফপি, দ্য ইকোনমিস্ট এবং বিবিসি

দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে সম্পদশালী এলাকা জোহানেসবার্গে শুরু হয়েছে বিশ্বের উদীয়মান শীর্ষ পাঁচ অর্থনীতির—ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা—জোট ব্রিকসের ১৫তম শীর্ষ সম্মেলন। কোভিড মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্ব অর্থনীতি নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে; যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা বলয়ের সঙ্গে চীন ও রাশিয়ার নানামাত্রিক দ্বন্দ্ব ভূরাজনীতিকেও নতুন মোড়ে টেনে এসেছে। এমন সময়ে এবারের ব্রিকস সম্মেলনকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, পশ্চিমা বিশ্বের আধিপত্য মোকাবিলায় এবং বৈশ্বিক নানা বিষয়ে জোরালো অবস্থান তৈরির মাধ্যমে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এই জোট। এবারের সম্মেলন দেশগুলোর জন্য গর্বের ও মুক্তির এবং একই সঙ্গে অস্বস্তিরও।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সম্মেলনে সশরীরে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া—এই মুহূর্তে জোটের জন্য সবচেয়ে স্বস্তির। এতে আয়োজক দক্ষিণ আফ্রিকা অনেকটাই নির্ভার। কারণ, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) পরোয়ানা মাথায় নিয়ে পুতিন সম্মেলনে এলে নেলসন ম্যান্ডেলার দেশ বিপদেই পড়ত। সদস্য দেশ হিসেবে আদালতের নির্দেশনা মেনে সহযোগিতা করতে হতো দেশটিকে।
যেসব বিষয়কে সামনে রেখে ব্রিকস সম্মেলন শুরু হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকট কাটিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের দ্বৈরথের প্রভাব মোকাবিলা করে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়, তা উল্লেখযোগ্য। আর এখানেই প্রশ্ন আসে, তাহলে কি ব্রিকস পশ্চিমা বিশ্ববিরোধী অবস্থান নিতে যাচ্ছে? কিংবা তারা নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়তে যাচ্ছে—নিদেনপক্ষে এমন কোনো চেষ্টা করছে কি?
চলতি বছরের মাঝামাঝি কেপটাউনে অনুষ্ঠিত ব্রিকস জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে রাশিয়ার সাংবাদিকেরা বিবিসির সাংবাদিক অ্যান্ড্রু হার্ডিংকে বলেছিলেন, ‘তোমরা তোমাদের পশ্চিমা দুনিয়ায় মানবাধিকারের স্বর্গ সাজাতে থাকো। আমরা দুনিয়াকে নতুন করে গড়তে যাচ্ছি।’
কিন্তু চাইলেই কি ব্রিকস দুনিয়াকে নতুন করে গড়তে পারবে? এর জন্য ব্রিকসের অভ্যন্তরীণ ঘটনাবলির বোঝাপড়া জরুরি। ২০০১ সালের দিকে বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাস প্রথম চারটি দেশের অর্থনীতির সম্ভাব্য অগ্রগতি বোঝাতে ব্রিক-বিআরআইসি (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন) ধারণা নিয়ে আসে। চীনের উদ্যোগে এর সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকাকে যুক্ত করে যাত্রা শুরু করে ব্রিকস। প্রথম সম্মেলন হয় ২০০৯ সালে।
যাত্রা শুরুর পর অনেক বিশ্লেষক ধারণা করেন, ব্রিকস শিগগিরই শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭-এর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করবে। তবে অভ্যন্তরীণ কোন্দল শুরুতে কিছুটা সংশয় তৈরি করে। কিন্তু বাস্তবে বিশ্লেষকদের ধারণাকে জোরালো করে জোট বিকশিত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২২ আগস্ট জোটের ১৫তম শীর্ষ সম্মেলন হচ্ছে।
এই সম্মেলনে উল্লিখিত দুটি বিষয় ছাড়াও অন্য যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্ব পাবে, তাহলো জোটের বিস্তার। এই বিষয়ে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বিভেদ স্পষ্ট—চীন ও রাশিয়া জোটের সম্প্রসারণ চায়। কিন্তু ভারত ও ব্রাজিলের অবস্থান এর বিপরীত। ‘বৃহত্তর ব্রিকস’-এর অর্থ পশ্চিমা বিশ্বের জন্য বড় হুমকি আসন্ন। কিন্তু সেটা সামরিক হুমকি না হওয়া এখনই পশ্চিমের অতটা ভীত হওয়ার কিছু নেই।
পশ্চিমা বিশ্বের ভীত না হওয়ার কারণ জোটের গঠনের মধ্যেই নিহিত। কারণ, জোটের দেশগুলো আদর্শিক বা শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর দিক থেকে এক রকম নয়। যেমন—ব্রাজিল, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চললেও চীন-রাশিয়ায় তা নেই। শুধু তা-ই নয়, এ দুই দেশ পশ্চিমা গণতন্ত্র ও উদারনৈতিকতার বড় সমালোচকও। ভারত, চীন ও রাশিয়া পারমাণবিক শক্তিধর হলেও ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকা তা নয়। আবার ব্রাজিল ও রাশিয়ার পণ্যের অন্যতম বড় গন্তব্যস্থল চীন হলেও এর বিপরীত হার খুবই সামান্য। অর্থাৎ তাদের মধ্যে বড় বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু জোটের বাকি সদস্য দেশগুলোর মোট অর্থনীতির আকার চীনের চেয়ে অনেক ছোট। এ ছাড়া ভারত ও চীনের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে সীমান্ত নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এ ছাড়া জোটের এখনো কোনো নির্দিষ্ট সনদ, গঠনতন্ত্র বা সদস্য গ্রহণের নির্ধারিত কোনো শর্তাবলি নেই।
ফলে জোটের টিকে থাকার বিষয়টি এখনো একটি মৌলিক প্রশ্ন। তবে জোটের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে যেমন মতপার্থক্য রয়েছে, তেমনি আবার জোটকে টিকিয়ে রাখার জন্য একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও রয়েছে। এর একটি হলো পশ্চিমা বিশ্বের সমালোচনা। বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও জাতিসংঘের মতো বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে ‘গ্লোবাল সাউথ বা বৈশ্বিক দক্ষিণের’ দেশগুলোকে (পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলো) একপাশে সরিয়ে রেখেছে সে বিষয়ে মুখর ব্রিকসের দেশগুলো। পাশাপাশি দেশগুলো চেষ্টা করছে গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠার। এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করের মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছিলেন, বিশ্বের অর্থনৈতিক শক্তি এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। যার ফলে অধিকাংশ দেশকেই অল্প কয়েকটি দেশের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হচ্ছে।
জোটের টিকে থাকার আরেকটি কারণ হলো—নিজের সম্মান রক্ষা করা। বিশেষ করে যেসব দেশ বিশ্বসম্প্রদায়ে টিকে থাকতে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। যেমন ২০১৩ সালের পর থেকে ব্রাজিল, রাশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার সামষ্টিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ১ শতাংশেরও কম। বিপরীতে ভারত ও চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ শতাংশেরও বেশি। ফলে নিজেদের সম্মান রক্ষায় কিছু দেশের জন্য জোটে থাকাটা অনেকটা বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের জন্য ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ব্রিকস সম্মেলনকে বড় করে দেখানোটা বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে। টানা কয়েক দশক ক্ষমতায় থাকার পর এই প্রথম দলটির ক্ষমতার ভিত নড়বড়ে হয়ে গেছে।
এর বাইরে জোটটি পতিতদের আশ্রয়স্থলে হিসেবে একটি ভালো জায়গা। যেমন ব্রাজিলে যখন জাইর বলসোনারে ক্ষমতায় ছিলেন তখন তিনি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর মিত্র ছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার পর যুক্তরাষ্ট্র বলসোনারোর ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। পরে বলসোনারো ব্রিকসকে নিজের আশ্রয় হিসেবে খুঁজে নেন। একইভাবে ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে রাশিয়া যখন পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত, তখন দেশটির জন্য সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা হলো ব্রিকস। ব্রিকসের সর্বশেষ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে ব্রিকসে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে দ্য ইকোনমিস্টের তরফ থেকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, জোটের উদ্দেশ্য কী? জবাবে রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আরও বন্ধু বাড়ানো।’
রাশিয়ার মতো চীনেরও অবস্থান একই। বেইজিংও চায় জোট সম্প্রসারিত হোক। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র এবং এর পশ্চিমা মিত্ররা যেভাবে চীনের সঙ্গে আচরণ করছে তাতে ব্রিকসের মাধ্যমে নতুন ‘বন্ধু’ বাড়ানোর প্রচেষ্টা অমূলক নয়। কারণ, চীনের দৃষ্টি থেকে বিবেচনা করলে পশ্চিমা বিশ্বের বিপরীতে একটি পাল্টা জোট হয়ে ওঠার যতটা সম্ভাবনা রয়েছে অন্য জোট—সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা, জি-২০-এর সে রকম সম্ভাবনা নেই। কারণ, সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা অনেকটাই ইউরেশিয়া চরিত্রের এবং জি-২০ জোটেও পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর প্রাধান্য। তাই পশ্চিমা বিশ্বের ‘ক্ষুদ্র বৃত্তের’ বিপরীতে ব্রিকসকে একটি ‘বড় পরিবারে’ পরিণত করতেই আগ্রহ বেশি।
চীন যে এই প্রথম সদস্য বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে তা কিন্তু নয়। এর আগে, বেইজিংই দক্ষিণ আফ্রিকাকে জোটের নেওয়ার উকালতি করেছিল। এখন ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থায় বেইজিং আবারও জোটে সদস্য বাড়ানোর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। যদিও জোটে সদস্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে সবারই ঐকমত্য জরুরি তারপরও চীনের প্রভাব উপেক্ষা করা অনেকটাই কঠিন। কারণ ব্রিকসের মোট উৎপাদনের প্রায় ৭০ শতাংশ একাই করে থাকে চীন। যার বড় ভোক্তা আবার বাকি চার দেশ।
জোটটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোন দেশগুলো সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করেছে তার তালিকা প্রকাশ করেনি। তবে দ্য ইকোনমিস্ট বিভিন্ন শর্ত মিলিয়ে হিসেবে করে দেখেছে যে ১৮টি দেশ সম্ভবত ব্রিকসের সদস্য হতে চায়। এই তালিকায় বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক প্রভাবশালী দেশ রয়েছে। এসব দেশের মধ্যে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত উল্লেখযোগ্য। ব্রিকসে জোট দেওয়ার মাধ্যমে দেশ দুটি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার পাশাপাশি তাদের দীর্ঘদিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক নতুন করে ঝালিয়ে নিতে চায়।
বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়ার মতো জনবহুল এবং এত দিন জোট নিরপেক্ষ বলে পরিচিত দেশও জোটের সদস্য হতে চায়। তাদের উদ্দেশ্য হলো পশ্চিমা মানদণ্ডের মানবাধিকারের যে সমালোচনা তা থেকে আশ্রয় খুঁজে পাওয়া। এর বাইরে আর্জেন্টিনা, ইথিওপিয়া, মেক্সিকো ও নাইজেরিয়ার মতো জনবহুল দেশগুলোও জোটের সদস্য হওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। শেষ পর্যন্ত যদি এই ১৮টি দেশই জোটের সদস্য হয়ে যায়, তবে হয়তো জোটটি নতুন নাম নেবে। এ ছাড়া জোটটি বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল জোটে পরিণত হবে এবং জোটের মোট জিডিপির পরিমাণ হবে বিশ্বের মোট জিডিপির ৩৪ শতাংশ।
জোটকে কার্যকরী করতে ব্রিকস দেশগুলো শিক্ষা, গবেষণা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, মন্ত্রী, থিংক ট্যাংক এমনকি ক্ষমতাসীন দলগুলোর প্রতিনিধি পর্যায়ের সম্মেলনও আয়োজন করছে নিয়মিত। কিছুদিন আগেই দক্ষিণ আফ্রিকায় হয়ে গেল ব্রিকস ইয়ুথ সামিট। রাশিয়া এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে তাঁরা আগামী বছর প্যারিস অলিম্পিকের আগেই ব্রিকস গেমসের আয়োজন করবে। এই যে আন্তদেশীয় সফট টুলসের ব্যবহার এগুলো জোটের স্থায়ীত্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। এ বিষয়ে ব্রাজিলীয় থিংক ট্যাংক গুতলিও ভার্গাস ফাউন্ডেশনের ফেলো অলিভার স্টুয়েঙ্কেল বলেন, ‘এসব বৈঠক চরিত্রগত দিক থেকে খুব নিরামিষ হলেও এগুলো কূটনীতিবিদদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক বাড়ানোর সুযোগ করে দেয়।’
জোটের টিকে থাকার ক্ষেত্রে আরও বড় একটি রক্ষাকবচ হলো দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। যেগুলো রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, মিনি বিশ্বব্যাংক এবং মিনি আইএমএফ। সদস্য দেশগুলোকে সহজশর্তে ঋণ দেওয়ার জন্য গঠিত হয়েছে কন্টিনজেন্ট রিজার্ভ অ্যারাঞ্জমেন্ট বা সিআরএ—যা মিনি আইএমএফ নামে পরিচিত। সহজশর্তে উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণ দেওয়ার জন্য গঠিত হয়েছে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা এনডিবি। ২০১৫ সালে গঠনের পর থেকে মিনি বিশ্বব্যাংক বা এনডিবি ৩৩ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ঋণ দিয়েছে। তবে বিশ্বব্যাংকের তুলনায় ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এনডিবি এখনো অনেক পিছিয়ে। এ ছাড়া এনডিবির কার্যক্রমের স্বচ্ছতা এবং অন্যান্য বিষয়ে দক্ষতা এখনো বিশ্ব ব্যাংকের তুলনায় কম। বিষয়টি আমলে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড্যানিয়েল ব্র্যাডলো বলেন, বিশ্বব্যাংক এনডিবির তুলনায় এখনো অনেক বেশি স্বচ্ছ এবং দায়বদ্ধ।
অনেক সীমাবদ্ধতার পরও টিকে থাকার চেষ্টায় ব্রিকস অনেকটাই সফল। তবে জোটটির ভবিষ্যৎ কোন পথে যাবে, তা অনেকগুলো শর্তের ওপর নির্ভর করে। বিশেষ করে ভারত-চীন সম্পর্ক, ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক, ভারত ও ব্রাজিলের সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্ক ইত্যাদি সমীকরণ মেলানোর পর বোঝা যাবে আসলে জোটের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাবে। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে দুর্বলতা থাকলেও তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকটাই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বিশেষ করে জোট সম্প্রসারণ এবং নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ার বিষয়ে। এ বিষয়ে জোটের দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি পরিষ্কার না হলেও এ বিষয়ে যে নজর রয়েছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, তিনটি মহাদেশের কোটি কোটি মানুষের প্রতিনিধি করা ব্রিকসের দেশগুলোর একটি বিষয়ে মিল রয়েছে, আর তা হলো, ধনী পশ্চিমাশক্তির হয়ে কাজ করা বিশ্বব্যবস্থার প্রতি অনীহা।
এ বিষয়ে এশিয়া ও ব্রিকসবিষয়ক দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ অনিল সুকলাল গত শুক্রবার এএফপিকে বলেন, এই জোটে যোগ দেওয়ার জন্য আগ্রহ বাড়ছে কোনো কোনো দেশের। এর অন্যতম কারণ, মেরুকৃত বিশ্বের আরও মেরুকরণ হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে। তাই দেশগুলোকে বাধ্য হয়ে কোনো পক্ষে যেতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘দক্ষিণের দেশগুলো কাকে সমর্থন করবে, কীভাবে আচরণ করবে এবং কীভাবে তাদের সার্বভৌম বিষয়গুলো পরিচালনা করবে, তা বলতে চায় না। তারা এখন তাদের নিজ নিজ অবস্থান জাহির করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী।’ ফলে ‘বিশ্বকাঠামো’ পুনর্গঠন করতে চাওয়া দেশগুলোর জন্য ব্রিকস আশা জাগিয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে।
লিম্পোপো বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রভাষক লেবোগং লেগোডি এই বিষয়ে একমত যে বর্তমান বিশ্বে কর্তৃত্বের বিকল্প হিসেবে অনেক দেশই এখন ব্রিকসে যোগদানে আগ্রহ দেখাচ্ছে। কিন্তু ব্রিকসের প্রতি নজর রাখা বিশ্লেষকেরা এই সম্মেলনের ফলাফল নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী নন। কেননা, বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ক্ষমতা এখনো পশ্চিমা দেশগুলোর হাতেই রয়েছে এবং চীন এখনো প্রভাবশালী শক্তি হয়ে ওঠেনি।
সব মিলিয়ে জোহানেসবার্গে চলমান ব্রিকস সম্মেলন জোটকে নতুন করে ‘সংজ্ঞায়িত’ করার মুহূর্ত। কারণ, জোটের সম্প্রসারণ একই সঙ্গে এতে চীনের প্রভাবকে বৃদ্ধি করবে এবং একই সঙ্গে জোটের পশ্চিমাবিরোধী মনোভাব বাড়বে, যা রাশিয়াকেও প্রকারান্তে সুবিধা দেবে। এতে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়া নিয়ে যে আলোচনা চলমান তার পালে হাওয়া লাগবে।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, এএফপি, দ্য ইকোনমিস্ট এবং বিবিসি

ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
২১ ঘণ্টা আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
১ দিন আগে
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
১ দিন আগে
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

সব মিলিয়ে জোহানেসবার্গে চলমান ব্রিকস সম্মেলন জোটকে নতুন করে ‘সংজ্ঞায়িত’ করার মুহূর্ত। কারণ, জোটের সম্প্রসারণ একই সঙ্গে এতে চীনের প্রভাবকে বৃদ্ধি করবে এবং একই সঙ্গে জোটের পশ্চিমাবিরোধী মনোভাব বাড়বে, যা রাশিয়াকেও প্রকারান্তে সুবিধা দেবে। এতে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়া নিয়ে যে আলোচনা চলমান, তার পালে হাওয়া
২৩ আগস্ট ২০২৩
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
১ দিন আগে
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
১ দিন আগে
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

সব মিলিয়ে জোহানেসবার্গে চলমান ব্রিকস সম্মেলন জোটকে নতুন করে ‘সংজ্ঞায়িত’ করার মুহূর্ত। কারণ, জোটের সম্প্রসারণ একই সঙ্গে এতে চীনের প্রভাবকে বৃদ্ধি করবে এবং একই সঙ্গে জোটের পশ্চিমাবিরোধী মনোভাব বাড়বে, যা রাশিয়াকেও প্রকারান্তে সুবিধা দেবে। এতে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়া নিয়ে যে আলোচনা চলমান, তার পালে হাওয়া
২৩ আগস্ট ২০২৩
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
২১ ঘণ্টা আগে
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
১ দিন আগে
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
মনে রাখা দরকার, এ বছরের মে মাসে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এক হামলার পর দুই দেশের মধ্যে পাঁচ দিনের সংঘাত বাধে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও আরও মার্কিন অস্ত্র কেনার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের কী চুক্তি হলো
ব্রাসেলসভিত্তিক থিংকট্যাংক আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রবীণ দোন্থি জানান, এই অনুমোদনটি মূলত ২০২২ সালের এক রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তির অংশ। এই চুক্তির লক্ষ্য পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের বহরকে কার্যক্ষম রাখা। তিনি বলেন, ‘এই এফ-১৬ চুক্তিটি বৃহত্তর যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ কারণে কিছুটা দেরি হলেও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দেখানো পথেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনও এটিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। দুই পক্ষই এই অঞ্চলে যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে এই যুদ্ধবিমানগুলোর উপযোগিতার ওপর জোর দেয়।’
সর্বশেষ এই চুক্তি নতুন কোনো যুদ্ধবিমান বিক্রির জন্য নয়, বরং পাকিস্তানের হাতে থাকা এফ-১৬ বহরের জন্য প্রযুক্তি বিক্রি এবং সেগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রর প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা সহযোগিতা সংস্থা (ডিএসসিএ) ৪ ডিসেম্বর দেশটির কংগ্রেসে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়ে চুক্তিটি নিশ্চিত করে।
ধারণা করা হয়, পাকিস্তানের কাছে ৭০ থেকে ৮০টি কার্যক্ষম এফ-১৬ বিমান আছে। এর মধ্যে কিছু পুরোনো কিন্তু পরে আধুনিক করে তোলা ‘ব্লক-১৫’ মডেল, জর্ডানের কাছ থেকে পাওয়া কিছু এফ-১৬ এবং কিছু নতুন ‘ব্লক ৫২+’ মডেলের বিমান রয়েছে।
এই প্যাকেজে আছে—উন্নত ফ্লাইট অপারেশন ও বিমানের ইলেকট্রনিক সিস্টেমের জন্য হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার আপডেট। অ্যাডভান্সড আইডেনটিফিকেশন ফ্রেন্ড অর ফো (আইএফএফ) সিস্টেম, যা পাইলটদের শত্রু বিমান থেকে মিত্র বিমান শনাক্ত করতে সাহায্য করে। নেভিগেশন আপগ্রেড, খুচরা পার্টস ও মেরামত সুবিধা।
এফ-১৬-এর সাপোর্ট ও আপগ্রেডের জন্য ৬৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম (এমডিই) দেওয়া হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ৯২টি লিংক-১৬ সিস্টেম। এই লিংক-১৬ একটি সুরক্ষিত সামরিক ট্যাকটিক্যাল ডেটা লিংক নেটওয়ার্ক, যার মাধ্যমে সামরিক বিমান, জাহাজ এবং স্থলবাহিনীর মধ্যে খুদে বার্তা বা ছবির মাধ্যমে রিয়েল টাইম বা তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা যায়।
বিক্রির জন্য অনুমোদিত অন্য গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামগুলোর মধ্যে রয়েছে ছয়টি এমকে-৮২ ৫০০-পাউন্ড সাধারণ বোমার কাভার। এগুলো বিস্ফোরক ছাড়া কংক্রিট বা বালু দিয়ে পূর্ণ থাকে এবং প্রশিক্ষণ বা পরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়। এমকে-৮২ যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি আনগাইডেড বোমা, যা নিখুঁত-নির্দেশনা দেওয়া অস্ত্রের ওয়ারহেড হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কী
এফ-১৬ যুদ্ধবিমানটি এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন বা ভাইপার নামেও পরিচিত। এটি এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট যুদ্ধবিমান। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দ্বারা আকাশপথে যুদ্ধ ও আকাশ থেকে ভূমিতে আক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রথমে এটি তৈরি করেছিল জেনারেল ডাইনামিকস নামে একটি মার্কিন কোম্পানি। বর্তমানে এটি উৎপাদন করে লকহিড মার্টিন।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের শেষ দিকে সোভিয়েত মিকোয়ান-গুরেভিচ (মিগ) বিমানের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য এটিকে তৈরি করা হয়। এটি প্রথম উড্ডয়ন করে ১৯৭৪ সালে। লকহিড মার্টিনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এফ-১৬ এখন বিশ্বের ২৯টি দেশে ব্যবহৃত অন্যতম বহুল ব্যবহৃত যুদ্ধবিমান। পাকিস্তান ছাড়াও ইউক্রেন, তুরস্ক, ইসরায়েল, মিশর, পোল্যান্ড, গ্রিস, তাইওয়ান, চিলি, সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও নরওয়ের মতো দেশগুলো এফ-১৬ ব্যবহার করে।
ভারত-পাকিস্তানের মে মাসের সংঘাতে এফ-১৬-এর ভূমিকা কী ছিল
এপ্রিলের ২২ তারিখে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। হামলার দায় স্বীকার করে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) ’ নামে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। নয়াদিল্লির অভিযোগ, এর সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তাইয়্যেবার যোগসূত্র আছে। তবে ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পেহেলগাম হামলার পর নয়াদিল্লি ইসলামাবাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে নামিয়ে আনে এবং ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু নদের পানি ভাগাভাগি নিশ্চিত করার সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে। ৭ মে ভারত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ৯টি জায়গায় আঘাত হানে। ইসলামাবাদের দাবি, এসব হামলায় বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এরপরের তিন দিন দুই দেশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে একে অপরের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে আকাশপথে তীব্র সংঘাত চালায়।
পাকিস্তানের এয়ার ভাইস মার্শাল আওরঙ্গজেব আহমেদের ভাষ্যমতে, এই আকাশযুদ্ধে পাকিস্তান ৪২টি ‘হাই-টেক বিমান’ ব্যবহার করেছিল, যার মধ্যে এফ-১৬ ছাড়াও চীনের তৈরি জেএফ-১৭ ও জে-১০ বিমান ছিল। অবশেষে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ১০ মে একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়।
পাকিস্তানকে এফ-১৬-এর প্রযুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কি ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে
হ্যাঁ, কয়েকটি কারণে। পাকিস্তানের এফ-১৬ আপগ্রেডের জন্য যুক্তরাষ্ট্রর এই অনুমোদন এমন এক সময় এল, যখন ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে তাদের থেকে আরও অস্ত্র কিনতে চাপ দিচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স তিন ভারতীয় কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, গত আগস্টে নয়াদিল্লি মার্কিন অস্ত্র ও বিমান কেনার পরিকল্পনা স্থগিত করে। এর ঠিক কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের ওয়াশিংটন সফরের কথা ছিল, যেখানে তিনি কিছু অস্ত্র কেনার কথা ঘোষণা করতে পারতেন। সেই সফরটি বাতিল হয়ে যায়।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কেও সম্প্রতি উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত ৬ আগস্ট ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিলেন। এর আগে থেকেই ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল ছিল। ফলে মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে। ভারতকে রাশিয়া থেকে সস্তা অপরিশোধিত তেল কেনার শাস্তি হিসেবে এই শুল্ক আরোপ করা হয়।
ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে এই শুল্কের ঘোষণা দিয়ে লেখেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক কার্যকলাপ অব্যাহত থাকায় এটি একটি ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ এবং তাই রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের শীর্ষ ক্রেতা ভারতের ওপর বর্ধিত শুল্ক আরোপ করা ‘প্রয়োজনীয় ও যথাযথ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি দেখছি যে ভারত সরকার বর্তমানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাশিয়ান ফেডারেশনের তেল আমদানি করছে।’
যদিও যুক্তরাষ্ট্রর চাপের ফলস্বরূপ ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা সামান্য কমিয়েছে, তবে নয়াদিল্লি মস্কো থেকে কেনা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। রাশিয়া থেকে তেল কেনার ক্ষেত্রে চীনের পর ভারতই দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা। গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে রাশিয়া-ভারত বার্ষিক দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সেখানে বলেন, ‘ভারতকে জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন চালান সরবরাহ করতে রাশিয়া প্রস্তুত।’
পাকিস্তানের এফ-১৬ বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকীকরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এই সর্বশেষ চুক্তি ঘোষণার ফলে ভারত সন্তুষ্ট হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রবীণ দোন্থি জানান, আগে থেকেই পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, যার আওতায় পাকিস্তানের এফ-১৬ বহরের রক্ষণাবেক্ষণ করা নিয়ে নয়াদিল্লি আপত্তি জানিয়েছিল। ভারতের দাবি, এফ-১৬ বিমান তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়।
দোন্থি বলেন, ‘ওয়াশিংটন এবার আগেভাগেই বলে দিয়েছে যে এই বিক্রির ফলে অঞ্চলের মৌলিক সামরিক ভারসাম্যের পরিবর্তন হবে না।’
ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘এখানে ভারতের দিকটি বেশি অতিরঞ্জিত করে দেখা উচিত নয়। কেউ কেউ এটিকে হয়তো ওয়াশিংটনের সর্বশেষ কৌশল হিসেবে দেখতে পারে, পাকিস্তানের প্রতি উদারতা দেখিয়ে ভারতকে বাণিজ্য আলোচনায় আরও ছাড় দিতে চাপ দেওয়া।’
তবে তিনি আরও যোগ করেন, এই চুক্তির ‘একটি নিজস্ব যুক্তি আছে, যা ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।’ কুগেলম্যানের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এটি মূলত পাকিস্তানের যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত বিমানগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য এক দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির অধীনে এক স্বতন্ত্র ব্যবস্থা। এটি ভারতের সঙ্গে অব্যাহত, যদিও কম উদার মার্কিন প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পাশাপাশি বিদ্যমান।
যুক্তরাষ্ট্রের এই অনুমোদন পাকিস্তানকে কতটা শক্তিশালী করবে
কুগেলম্যান জানান, এই প্যাকেজটি তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানকে দেওয়া অন্যতম উদার নিরাপত্তা সহায়তা প্যাকেজ। প্রায় ৭০ কোটি ডলারকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।’ এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতায় ট্রাম্প প্রশাসন যে গুরুত্ব দিচ্ছে, তার ইঙ্গিত বহন করে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের পুনরুত্থান নিয়ে আলোচনায় সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও অন্যান্য বাণিজ্যিক সুযোগগুলোই বেশি শিরোনামে আসে। কিন্তু সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, যার ব্যাপ্তি সামান্য হলেও এই প্রশাসনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’
তবে দোন্থি মনে করিয়ে দেন, যুক্তরাষ্ট্রর এই সর্বশেষ প্যাকেজটি পাকিস্তানকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত তার বহর রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করবে বটে, কিন্তু ২০২০ সাল থেকে পাকিস্তানের ৮০ শতাংশের বেশি অস্ত্র সরবরাহ করেছে চীন। সুইডিশ থিংকট্যাংক সিআইপিআরআইয়ের এই বছরের একটি প্রতিবেদনেও এই পরিসংখ্যানের সমর্থন পাওয়া যায়।
দোন্থি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে মে মাসের সংঘাতে পাকিস্তান চীনের তৈরি জে-১০ বিমান ব্যবহার করেছিল। ইসলামাবাদ ওয়াশিংটন ও বেইজিং—উভয় পক্ষ থেকেই সুবিধা নিয়ে ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছে।’
আল জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
মনে রাখা দরকার, এ বছরের মে মাসে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এক হামলার পর দুই দেশের মধ্যে পাঁচ দিনের সংঘাত বাধে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও আরও মার্কিন অস্ত্র কেনার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের কী চুক্তি হলো
ব্রাসেলসভিত্তিক থিংকট্যাংক আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রবীণ দোন্থি জানান, এই অনুমোদনটি মূলত ২০২২ সালের এক রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তির অংশ। এই চুক্তির লক্ষ্য পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের বহরকে কার্যক্ষম রাখা। তিনি বলেন, ‘এই এফ-১৬ চুক্তিটি বৃহত্তর যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ কারণে কিছুটা দেরি হলেও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দেখানো পথেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনও এটিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। দুই পক্ষই এই অঞ্চলে যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে এই যুদ্ধবিমানগুলোর উপযোগিতার ওপর জোর দেয়।’
সর্বশেষ এই চুক্তি নতুন কোনো যুদ্ধবিমান বিক্রির জন্য নয়, বরং পাকিস্তানের হাতে থাকা এফ-১৬ বহরের জন্য প্রযুক্তি বিক্রি এবং সেগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রর প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা সহযোগিতা সংস্থা (ডিএসসিএ) ৪ ডিসেম্বর দেশটির কংগ্রেসে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়ে চুক্তিটি নিশ্চিত করে।
ধারণা করা হয়, পাকিস্তানের কাছে ৭০ থেকে ৮০টি কার্যক্ষম এফ-১৬ বিমান আছে। এর মধ্যে কিছু পুরোনো কিন্তু পরে আধুনিক করে তোলা ‘ব্লক-১৫’ মডেল, জর্ডানের কাছ থেকে পাওয়া কিছু এফ-১৬ এবং কিছু নতুন ‘ব্লক ৫২+’ মডেলের বিমান রয়েছে।
এই প্যাকেজে আছে—উন্নত ফ্লাইট অপারেশন ও বিমানের ইলেকট্রনিক সিস্টেমের জন্য হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার আপডেট। অ্যাডভান্সড আইডেনটিফিকেশন ফ্রেন্ড অর ফো (আইএফএফ) সিস্টেম, যা পাইলটদের শত্রু বিমান থেকে মিত্র বিমান শনাক্ত করতে সাহায্য করে। নেভিগেশন আপগ্রেড, খুচরা পার্টস ও মেরামত সুবিধা।
এফ-১৬-এর সাপোর্ট ও আপগ্রেডের জন্য ৬৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম (এমডিই) দেওয়া হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ৯২টি লিংক-১৬ সিস্টেম। এই লিংক-১৬ একটি সুরক্ষিত সামরিক ট্যাকটিক্যাল ডেটা লিংক নেটওয়ার্ক, যার মাধ্যমে সামরিক বিমান, জাহাজ এবং স্থলবাহিনীর মধ্যে খুদে বার্তা বা ছবির মাধ্যমে রিয়েল টাইম বা তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা যায়।
বিক্রির জন্য অনুমোদিত অন্য গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামগুলোর মধ্যে রয়েছে ছয়টি এমকে-৮২ ৫০০-পাউন্ড সাধারণ বোমার কাভার। এগুলো বিস্ফোরক ছাড়া কংক্রিট বা বালু দিয়ে পূর্ণ থাকে এবং প্রশিক্ষণ বা পরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়। এমকে-৮২ যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি আনগাইডেড বোমা, যা নিখুঁত-নির্দেশনা দেওয়া অস্ত্রের ওয়ারহেড হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কী
এফ-১৬ যুদ্ধবিমানটি এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন বা ভাইপার নামেও পরিচিত। এটি এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট যুদ্ধবিমান। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দ্বারা আকাশপথে যুদ্ধ ও আকাশ থেকে ভূমিতে আক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রথমে এটি তৈরি করেছিল জেনারেল ডাইনামিকস নামে একটি মার্কিন কোম্পানি। বর্তমানে এটি উৎপাদন করে লকহিড মার্টিন।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের শেষ দিকে সোভিয়েত মিকোয়ান-গুরেভিচ (মিগ) বিমানের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য এটিকে তৈরি করা হয়। এটি প্রথম উড্ডয়ন করে ১৯৭৪ সালে। লকহিড মার্টিনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এফ-১৬ এখন বিশ্বের ২৯টি দেশে ব্যবহৃত অন্যতম বহুল ব্যবহৃত যুদ্ধবিমান। পাকিস্তান ছাড়াও ইউক্রেন, তুরস্ক, ইসরায়েল, মিশর, পোল্যান্ড, গ্রিস, তাইওয়ান, চিলি, সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও নরওয়ের মতো দেশগুলো এফ-১৬ ব্যবহার করে।
ভারত-পাকিস্তানের মে মাসের সংঘাতে এফ-১৬-এর ভূমিকা কী ছিল
এপ্রিলের ২২ তারিখে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। হামলার দায় স্বীকার করে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) ’ নামে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। নয়াদিল্লির অভিযোগ, এর সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তাইয়্যেবার যোগসূত্র আছে। তবে ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পেহেলগাম হামলার পর নয়াদিল্লি ইসলামাবাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে নামিয়ে আনে এবং ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু নদের পানি ভাগাভাগি নিশ্চিত করার সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে। ৭ মে ভারত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ৯টি জায়গায় আঘাত হানে। ইসলামাবাদের দাবি, এসব হামলায় বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এরপরের তিন দিন দুই দেশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে একে অপরের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে আকাশপথে তীব্র সংঘাত চালায়।
পাকিস্তানের এয়ার ভাইস মার্শাল আওরঙ্গজেব আহমেদের ভাষ্যমতে, এই আকাশযুদ্ধে পাকিস্তান ৪২টি ‘হাই-টেক বিমান’ ব্যবহার করেছিল, যার মধ্যে এফ-১৬ ছাড়াও চীনের তৈরি জেএফ-১৭ ও জে-১০ বিমান ছিল। অবশেষে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ১০ মে একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়।
পাকিস্তানকে এফ-১৬-এর প্রযুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কি ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে
হ্যাঁ, কয়েকটি কারণে। পাকিস্তানের এফ-১৬ আপগ্রেডের জন্য যুক্তরাষ্ট্রর এই অনুমোদন এমন এক সময় এল, যখন ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে তাদের থেকে আরও অস্ত্র কিনতে চাপ দিচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স তিন ভারতীয় কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, গত আগস্টে নয়াদিল্লি মার্কিন অস্ত্র ও বিমান কেনার পরিকল্পনা স্থগিত করে। এর ঠিক কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের ওয়াশিংটন সফরের কথা ছিল, যেখানে তিনি কিছু অস্ত্র কেনার কথা ঘোষণা করতে পারতেন। সেই সফরটি বাতিল হয়ে যায়।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কেও সম্প্রতি উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত ৬ আগস্ট ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিলেন। এর আগে থেকেই ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল ছিল। ফলে মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে। ভারতকে রাশিয়া থেকে সস্তা অপরিশোধিত তেল কেনার শাস্তি হিসেবে এই শুল্ক আরোপ করা হয়।
ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে এই শুল্কের ঘোষণা দিয়ে লেখেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক কার্যকলাপ অব্যাহত থাকায় এটি একটি ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ এবং তাই রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের শীর্ষ ক্রেতা ভারতের ওপর বর্ধিত শুল্ক আরোপ করা ‘প্রয়োজনীয় ও যথাযথ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি দেখছি যে ভারত সরকার বর্তমানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাশিয়ান ফেডারেশনের তেল আমদানি করছে।’
যদিও যুক্তরাষ্ট্রর চাপের ফলস্বরূপ ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা সামান্য কমিয়েছে, তবে নয়াদিল্লি মস্কো থেকে কেনা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। রাশিয়া থেকে তেল কেনার ক্ষেত্রে চীনের পর ভারতই দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা। গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে রাশিয়া-ভারত বার্ষিক দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সেখানে বলেন, ‘ভারতকে জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন চালান সরবরাহ করতে রাশিয়া প্রস্তুত।’
পাকিস্তানের এফ-১৬ বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকীকরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এই সর্বশেষ চুক্তি ঘোষণার ফলে ভারত সন্তুষ্ট হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রবীণ দোন্থি জানান, আগে থেকেই পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, যার আওতায় পাকিস্তানের এফ-১৬ বহরের রক্ষণাবেক্ষণ করা নিয়ে নয়াদিল্লি আপত্তি জানিয়েছিল। ভারতের দাবি, এফ-১৬ বিমান তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়।
দোন্থি বলেন, ‘ওয়াশিংটন এবার আগেভাগেই বলে দিয়েছে যে এই বিক্রির ফলে অঞ্চলের মৌলিক সামরিক ভারসাম্যের পরিবর্তন হবে না।’
ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘এখানে ভারতের দিকটি বেশি অতিরঞ্জিত করে দেখা উচিত নয়। কেউ কেউ এটিকে হয়তো ওয়াশিংটনের সর্বশেষ কৌশল হিসেবে দেখতে পারে, পাকিস্তানের প্রতি উদারতা দেখিয়ে ভারতকে বাণিজ্য আলোচনায় আরও ছাড় দিতে চাপ দেওয়া।’
তবে তিনি আরও যোগ করেন, এই চুক্তির ‘একটি নিজস্ব যুক্তি আছে, যা ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।’ কুগেলম্যানের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এটি মূলত পাকিস্তানের যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত বিমানগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য এক দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির অধীনে এক স্বতন্ত্র ব্যবস্থা। এটি ভারতের সঙ্গে অব্যাহত, যদিও কম উদার মার্কিন প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পাশাপাশি বিদ্যমান।
যুক্তরাষ্ট্রের এই অনুমোদন পাকিস্তানকে কতটা শক্তিশালী করবে
কুগেলম্যান জানান, এই প্যাকেজটি তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানকে দেওয়া অন্যতম উদার নিরাপত্তা সহায়তা প্যাকেজ। প্রায় ৭০ কোটি ডলারকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।’ এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতায় ট্রাম্প প্রশাসন যে গুরুত্ব দিচ্ছে, তার ইঙ্গিত বহন করে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের পুনরুত্থান নিয়ে আলোচনায় সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও অন্যান্য বাণিজ্যিক সুযোগগুলোই বেশি শিরোনামে আসে। কিন্তু সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, যার ব্যাপ্তি সামান্য হলেও এই প্রশাসনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’
তবে দোন্থি মনে করিয়ে দেন, যুক্তরাষ্ট্রর এই সর্বশেষ প্যাকেজটি পাকিস্তানকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত তার বহর রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করবে বটে, কিন্তু ২০২০ সাল থেকে পাকিস্তানের ৮০ শতাংশের বেশি অস্ত্র সরবরাহ করেছে চীন। সুইডিশ থিংকট্যাংক সিআইপিআরআইয়ের এই বছরের একটি প্রতিবেদনেও এই পরিসংখ্যানের সমর্থন পাওয়া যায়।
দোন্থি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে মে মাসের সংঘাতে পাকিস্তান চীনের তৈরি জে-১০ বিমান ব্যবহার করেছিল। ইসলামাবাদ ওয়াশিংটন ও বেইজিং—উভয় পক্ষ থেকেই সুবিধা নিয়ে ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছে।’
আল জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

সব মিলিয়ে জোহানেসবার্গে চলমান ব্রিকস সম্মেলন জোটকে নতুন করে ‘সংজ্ঞায়িত’ করার মুহূর্ত। কারণ, জোটের সম্প্রসারণ একই সঙ্গে এতে চীনের প্রভাবকে বৃদ্ধি করবে এবং একই সঙ্গে জোটের পশ্চিমাবিরোধী মনোভাব বাড়বে, যা রাশিয়াকেও প্রকারান্তে সুবিধা দেবে। এতে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়া নিয়ে যে আলোচনা চলমান, তার পালে হাওয়া
২৩ আগস্ট ২০২৩
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
২১ ঘণ্টা আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
১ দিন আগে
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত বুধবার মার্কিন বাহিনী ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছাকাছি অভিযান চালিয়ে একটি তেল ট্যাংকার জব্দ করেছে। ট্যাংকারে ভেনেজুয়েলা ও ইরানের তেল বহন করা হচ্ছিল বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। এই ঘটনার পর ভেনেজুয়েলার তেল বহনের অভিযোগের আরও ছয়টি জাহাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
জাহাজ ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, প্রথম ট্যাংকারটির অবস্থান (লোকেশন) গোপন করার বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি নিশ্চিত করেছেন, জব্দ হওয়া জাহাজটির নাম ‘স্কিপার’। তাঁর দাবি, এটি ভেনেজুয়েলা এবং ইরানের নিষেধাজ্ঞা ভুক্ত অপরিশোধিত তেল পরিবহনে ব্যবহৃত ক্রুড অয়েল ট্যাংকার।
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর। জব্দ হওয়ার আগে এটি গত ৭ নভেম্বর থেকে তার অবস্থান প্রকাশ করেনি।
মেরিন অ্যানালিটিক্স ফার্ম কেপ্লার (Kpler) জানিয়েছে, ‘স্কিপার’-এর অবস্থান গোপন করার (স্পুফিং) দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জানা যায়, ২০২২ সালে যখন জাহাজটি ‘আদিশা’ (Adisa) নামে চলছিল, তখন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এটিকে একটি ‘আন্তর্জাতিক তেল পাচার নেটওয়ার্কের’ অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘স্কিপার’ ঘন ঘন ট্র্যাকারকে মিথ্যা তথ্য দিত। যেমন, এআইএস সিস্টেমে জাহাজটি ৭ ও ৮ জুলাই ইরাকের বসরা অয়েল টার্মিনালে অবস্থান দেখালেও, টার্মিনাল রিপোর্টে এর কোনো রেকর্ড ছিল না। উল্টো কেপ্লার জানিয়েছে, সেই সময়েই ট্যাংকারটি ইরানের খার্গ দ্বীপ থেকে অপরিশোধিত তেল বোঝাই করছিল। এ ছাড়া, ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাহাজটি এআইএস-এ সম্পূর্ণ ভুল সংকেত পাঠাচ্ছিল, যা এর আসল অবস্থানকে প্রতিফলিত করেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘স্কিপার’ সম্ভবত ‘ডার্ক ফ্লিট’ নামক বিশ্বব্যাপী তেলবাহী ট্যাংকারের একটি নেটওয়ার্কের অংশ। এই নেটওয়ার্কটি মালিকানা, পরিচয় এবং ভ্রমণ ইতিহাস গোপন করে তেলের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কাজ করে।
যদিও ‘স্কিপার’ গায়ানার পতাকা ব্যবহার করে যাত্রা করছিল, কিন্তু গায়ানা সরকার দ্রুত বিবৃতি দিয়ে জানায় যে ২০ বছর বয়সী এই ট্যাংকারটি তাদের দেশে নিবন্ধিত নয় এবং এটি ‘অবৈধভাবে গায়ানার পতাকা ব্যবহার করছিল’। জাহাজটির নিবন্ধিত মালিক হিসেবে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ-ভিত্তিক ‘ট্রাইটন নেভিগেশন করপোরেশন’-এর নাম রয়েছে। তবে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, এই ট্রাইটন করপোরেশনকে একজন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত রুশ জ্বালানি ধনকুবের ভিক্তর আর্তেমভ তাঁর বৈশ্বিক ‘তেল পাচার নেটওয়ার্ক’ পরিচালনার জন্য ব্যবহার করতেন।
ভেনেজুয়েলার তেল মজুত বিশ্বের বৃহত্তম হলেও, মাদুরোর প্রশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সাল থেকে দেশটির তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ‘স্কিপার’ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত। কেপ্লার বিশ্লেষকেরা জানান, ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দর থেকে প্রায় ১ দশমিক ১ মিলিয়ন (১১ লাখ) ব্যারেল মেরে ক্রুড তেল বোঝাই করেছিল এবং গন্তব্য হিসেবে কিউবার নাম উল্লেখ করেছিল।
১১ থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে এটি পূর্বে যাত্রা করে একটি ‘শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফার’ সম্পন্ন করে। এটির কার্গো পরে চীনেও ‘ভুয়া ঘোষিত’ হয়েছিল। মার্কিন অভিযানের মাত্র কয়েক দিন আগে, ৭ ডিসেম্বরে এটি ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে অন্য একটি জাহাজের সঙ্গে স্থানান্তরে জড়িত ছিল বলে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়। বেলজিয়ামের নৌবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট ফ্রেডেরিক ভ্যান লোকারেন জানান, এই ধরনের স্থানান্তর আইনত অবৈধ না হলেও, তা ‘অত্যন্ত অস্বাভাবিক’ এবং সাধারণত নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্যই করা হয়।
‘স্কিপার’ সর্বশেষ ৭ নভেম্বর তার অবস্থান ঘোষণা করে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যায়। মার্কিন অভিযানে ১০ ডিসেম্বর এর অবস্থান পুনরায় দৃশ্যমান হয়। এই অন্তর্বর্তী সময়ে, ১৮ নভেম্বর স্যাটেলাইট চিত্রগুলো নিশ্চিত করছে যে ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দরে ছিল।
তথ্যসূত্র: বিবিসি

নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত বুধবার মার্কিন বাহিনী ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছাকাছি অভিযান চালিয়ে একটি তেল ট্যাংকার জব্দ করেছে। ট্যাংকারে ভেনেজুয়েলা ও ইরানের তেল বহন করা হচ্ছিল বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। এই ঘটনার পর ভেনেজুয়েলার তেল বহনের অভিযোগের আরও ছয়টি জাহাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
জাহাজ ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, প্রথম ট্যাংকারটির অবস্থান (লোকেশন) গোপন করার বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি নিশ্চিত করেছেন, জব্দ হওয়া জাহাজটির নাম ‘স্কিপার’। তাঁর দাবি, এটি ভেনেজুয়েলা এবং ইরানের নিষেধাজ্ঞা ভুক্ত অপরিশোধিত তেল পরিবহনে ব্যবহৃত ক্রুড অয়েল ট্যাংকার।
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর। জব্দ হওয়ার আগে এটি গত ৭ নভেম্বর থেকে তার অবস্থান প্রকাশ করেনি।
মেরিন অ্যানালিটিক্স ফার্ম কেপ্লার (Kpler) জানিয়েছে, ‘স্কিপার’-এর অবস্থান গোপন করার (স্পুফিং) দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জানা যায়, ২০২২ সালে যখন জাহাজটি ‘আদিশা’ (Adisa) নামে চলছিল, তখন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এটিকে একটি ‘আন্তর্জাতিক তেল পাচার নেটওয়ার্কের’ অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘স্কিপার’ ঘন ঘন ট্র্যাকারকে মিথ্যা তথ্য দিত। যেমন, এআইএস সিস্টেমে জাহাজটি ৭ ও ৮ জুলাই ইরাকের বসরা অয়েল টার্মিনালে অবস্থান দেখালেও, টার্মিনাল রিপোর্টে এর কোনো রেকর্ড ছিল না। উল্টো কেপ্লার জানিয়েছে, সেই সময়েই ট্যাংকারটি ইরানের খার্গ দ্বীপ থেকে অপরিশোধিত তেল বোঝাই করছিল। এ ছাড়া, ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাহাজটি এআইএস-এ সম্পূর্ণ ভুল সংকেত পাঠাচ্ছিল, যা এর আসল অবস্থানকে প্রতিফলিত করেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘স্কিপার’ সম্ভবত ‘ডার্ক ফ্লিট’ নামক বিশ্বব্যাপী তেলবাহী ট্যাংকারের একটি নেটওয়ার্কের অংশ। এই নেটওয়ার্কটি মালিকানা, পরিচয় এবং ভ্রমণ ইতিহাস গোপন করে তেলের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কাজ করে।
যদিও ‘স্কিপার’ গায়ানার পতাকা ব্যবহার করে যাত্রা করছিল, কিন্তু গায়ানা সরকার দ্রুত বিবৃতি দিয়ে জানায় যে ২০ বছর বয়সী এই ট্যাংকারটি তাদের দেশে নিবন্ধিত নয় এবং এটি ‘অবৈধভাবে গায়ানার পতাকা ব্যবহার করছিল’। জাহাজটির নিবন্ধিত মালিক হিসেবে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ-ভিত্তিক ‘ট্রাইটন নেভিগেশন করপোরেশন’-এর নাম রয়েছে। তবে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, এই ট্রাইটন করপোরেশনকে একজন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত রুশ জ্বালানি ধনকুবের ভিক্তর আর্তেমভ তাঁর বৈশ্বিক ‘তেল পাচার নেটওয়ার্ক’ পরিচালনার জন্য ব্যবহার করতেন।
ভেনেজুয়েলার তেল মজুত বিশ্বের বৃহত্তম হলেও, মাদুরোর প্রশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সাল থেকে দেশটির তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ‘স্কিপার’ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত। কেপ্লার বিশ্লেষকেরা জানান, ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দর থেকে প্রায় ১ দশমিক ১ মিলিয়ন (১১ লাখ) ব্যারেল মেরে ক্রুড তেল বোঝাই করেছিল এবং গন্তব্য হিসেবে কিউবার নাম উল্লেখ করেছিল।
১১ থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে এটি পূর্বে যাত্রা করে একটি ‘শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফার’ সম্পন্ন করে। এটির কার্গো পরে চীনেও ‘ভুয়া ঘোষিত’ হয়েছিল। মার্কিন অভিযানের মাত্র কয়েক দিন আগে, ৭ ডিসেম্বরে এটি ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে অন্য একটি জাহাজের সঙ্গে স্থানান্তরে জড়িত ছিল বলে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়। বেলজিয়ামের নৌবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট ফ্রেডেরিক ভ্যান লোকারেন জানান, এই ধরনের স্থানান্তর আইনত অবৈধ না হলেও, তা ‘অত্যন্ত অস্বাভাবিক’ এবং সাধারণত নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্যই করা হয়।
‘স্কিপার’ সর্বশেষ ৭ নভেম্বর তার অবস্থান ঘোষণা করে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যায়। মার্কিন অভিযানে ১০ ডিসেম্বর এর অবস্থান পুনরায় দৃশ্যমান হয়। এই অন্তর্বর্তী সময়ে, ১৮ নভেম্বর স্যাটেলাইট চিত্রগুলো নিশ্চিত করছে যে ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দরে ছিল।
তথ্যসূত্র: বিবিসি

সব মিলিয়ে জোহানেসবার্গে চলমান ব্রিকস সম্মেলন জোটকে নতুন করে ‘সংজ্ঞায়িত’ করার মুহূর্ত। কারণ, জোটের সম্প্রসারণ একই সঙ্গে এতে চীনের প্রভাবকে বৃদ্ধি করবে এবং একই সঙ্গে জোটের পশ্চিমাবিরোধী মনোভাব বাড়বে, যা রাশিয়াকেও প্রকারান্তে সুবিধা দেবে। এতে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়া নিয়ে যে আলোচনা চলমান, তার পালে হাওয়া
২৩ আগস্ট ২০২৩
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
২১ ঘণ্টা আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
১ দিন আগে
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
১ দিন আগে