আব্দুর রহমান

দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে সম্পদশালী এলাকা জোহানেসবার্গে শুরু হয়েছে বিশ্বের উদীয়মান শীর্ষ পাঁচ অর্থনীতির—ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা—জোট ব্রিকসের ১৫তম শীর্ষ সম্মেলন। কোভিড মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্ব অর্থনীতি নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে; যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা বলয়ের সঙ্গে চীন ও রাশিয়ার নানামাত্রিক দ্বন্দ্ব ভূরাজনীতিকেও নতুন মোড়ে টেনে এসেছে। এমন সময়ে এবারের ব্রিকস সম্মেলনকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, পশ্চিমা বিশ্বের আধিপত্য মোকাবিলায় এবং বৈশ্বিক নানা বিষয়ে জোরালো অবস্থান তৈরির মাধ্যমে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এই জোট। এবারের সম্মেলন দেশগুলোর জন্য গর্বের ও মুক্তির এবং একই সঙ্গে অস্বস্তিরও।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সম্মেলনে সশরীরে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া—এই মুহূর্তে জোটের জন্য সবচেয়ে স্বস্তির। এতে আয়োজক দক্ষিণ আফ্রিকা অনেকটাই নির্ভার। কারণ, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) পরোয়ানা মাথায় নিয়ে পুতিন সম্মেলনে এলে নেলসন ম্যান্ডেলার দেশ বিপদেই পড়ত। সদস্য দেশ হিসেবে আদালতের নির্দেশনা মেনে সহযোগিতা করতে হতো দেশটিকে।
যেসব বিষয়কে সামনে রেখে ব্রিকস সম্মেলন শুরু হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকট কাটিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের দ্বৈরথের প্রভাব মোকাবিলা করে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়, তা উল্লেখযোগ্য। আর এখানেই প্রশ্ন আসে, তাহলে কি ব্রিকস পশ্চিমা বিশ্ববিরোধী অবস্থান নিতে যাচ্ছে? কিংবা তারা নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়তে যাচ্ছে—নিদেনপক্ষে এমন কোনো চেষ্টা করছে কি?
চলতি বছরের মাঝামাঝি কেপটাউনে অনুষ্ঠিত ব্রিকস জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে রাশিয়ার সাংবাদিকেরা বিবিসির সাংবাদিক অ্যান্ড্রু হার্ডিংকে বলেছিলেন, ‘তোমরা তোমাদের পশ্চিমা দুনিয়ায় মানবাধিকারের স্বর্গ সাজাতে থাকো। আমরা দুনিয়াকে নতুন করে গড়তে যাচ্ছি।’
কিন্তু চাইলেই কি ব্রিকস দুনিয়াকে নতুন করে গড়তে পারবে? এর জন্য ব্রিকসের অভ্যন্তরীণ ঘটনাবলির বোঝাপড়া জরুরি। ২০০১ সালের দিকে বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাস প্রথম চারটি দেশের অর্থনীতির সম্ভাব্য অগ্রগতি বোঝাতে ব্রিক-বিআরআইসি (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন) ধারণা নিয়ে আসে। চীনের উদ্যোগে এর সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকাকে যুক্ত করে যাত্রা শুরু করে ব্রিকস। প্রথম সম্মেলন হয় ২০০৯ সালে।
যাত্রা শুরুর পর অনেক বিশ্লেষক ধারণা করেন, ব্রিকস শিগগিরই শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭-এর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করবে। তবে অভ্যন্তরীণ কোন্দল শুরুতে কিছুটা সংশয় তৈরি করে। কিন্তু বাস্তবে বিশ্লেষকদের ধারণাকে জোরালো করে জোট বিকশিত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২২ আগস্ট জোটের ১৫তম শীর্ষ সম্মেলন হচ্ছে।
এই সম্মেলনে উল্লিখিত দুটি বিষয় ছাড়াও অন্য যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্ব পাবে, তাহলো জোটের বিস্তার। এই বিষয়ে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বিভেদ স্পষ্ট—চীন ও রাশিয়া জোটের সম্প্রসারণ চায়। কিন্তু ভারত ও ব্রাজিলের অবস্থান এর বিপরীত। ‘বৃহত্তর ব্রিকস’-এর অর্থ পশ্চিমা বিশ্বের জন্য বড় হুমকি আসন্ন। কিন্তু সেটা সামরিক হুমকি না হওয়া এখনই পশ্চিমের অতটা ভীত হওয়ার কিছু নেই।
পশ্চিমা বিশ্বের ভীত না হওয়ার কারণ জোটের গঠনের মধ্যেই নিহিত। কারণ, জোটের দেশগুলো আদর্শিক বা শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর দিক থেকে এক রকম নয়। যেমন—ব্রাজিল, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চললেও চীন-রাশিয়ায় তা নেই। শুধু তা-ই নয়, এ দুই দেশ পশ্চিমা গণতন্ত্র ও উদারনৈতিকতার বড় সমালোচকও। ভারত, চীন ও রাশিয়া পারমাণবিক শক্তিধর হলেও ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকা তা নয়। আবার ব্রাজিল ও রাশিয়ার পণ্যের অন্যতম বড় গন্তব্যস্থল চীন হলেও এর বিপরীত হার খুবই সামান্য। অর্থাৎ তাদের মধ্যে বড় বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু জোটের বাকি সদস্য দেশগুলোর মোট অর্থনীতির আকার চীনের চেয়ে অনেক ছোট। এ ছাড়া ভারত ও চীনের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে সীমান্ত নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এ ছাড়া জোটের এখনো কোনো নির্দিষ্ট সনদ, গঠনতন্ত্র বা সদস্য গ্রহণের নির্ধারিত কোনো শর্তাবলি নেই।
ফলে জোটের টিকে থাকার বিষয়টি এখনো একটি মৌলিক প্রশ্ন। তবে জোটের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে যেমন মতপার্থক্য রয়েছে, তেমনি আবার জোটকে টিকিয়ে রাখার জন্য একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও রয়েছে। এর একটি হলো পশ্চিমা বিশ্বের সমালোচনা। বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও জাতিসংঘের মতো বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে ‘গ্লোবাল সাউথ বা বৈশ্বিক দক্ষিণের’ দেশগুলোকে (পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলো) একপাশে সরিয়ে রেখেছে সে বিষয়ে মুখর ব্রিকসের দেশগুলো। পাশাপাশি দেশগুলো চেষ্টা করছে গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠার। এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করের মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছিলেন, বিশ্বের অর্থনৈতিক শক্তি এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। যার ফলে অধিকাংশ দেশকেই অল্প কয়েকটি দেশের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হচ্ছে।
জোটের টিকে থাকার আরেকটি কারণ হলো—নিজের সম্মান রক্ষা করা। বিশেষ করে যেসব দেশ বিশ্বসম্প্রদায়ে টিকে থাকতে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। যেমন ২০১৩ সালের পর থেকে ব্রাজিল, রাশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার সামষ্টিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ১ শতাংশেরও কম। বিপরীতে ভারত ও চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ শতাংশেরও বেশি। ফলে নিজেদের সম্মান রক্ষায় কিছু দেশের জন্য জোটে থাকাটা অনেকটা বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের জন্য ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ব্রিকস সম্মেলনকে বড় করে দেখানোটা বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে। টানা কয়েক দশক ক্ষমতায় থাকার পর এই প্রথম দলটির ক্ষমতার ভিত নড়বড়ে হয়ে গেছে।
এর বাইরে জোটটি পতিতদের আশ্রয়স্থলে হিসেবে একটি ভালো জায়গা। যেমন ব্রাজিলে যখন জাইর বলসোনারে ক্ষমতায় ছিলেন তখন তিনি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর মিত্র ছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার পর যুক্তরাষ্ট্র বলসোনারোর ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। পরে বলসোনারো ব্রিকসকে নিজের আশ্রয় হিসেবে খুঁজে নেন। একইভাবে ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে রাশিয়া যখন পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত, তখন দেশটির জন্য সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা হলো ব্রিকস। ব্রিকসের সর্বশেষ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে ব্রিকসে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে দ্য ইকোনমিস্টের তরফ থেকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, জোটের উদ্দেশ্য কী? জবাবে রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আরও বন্ধু বাড়ানো।’
রাশিয়ার মতো চীনেরও অবস্থান একই। বেইজিংও চায় জোট সম্প্রসারিত হোক। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র এবং এর পশ্চিমা মিত্ররা যেভাবে চীনের সঙ্গে আচরণ করছে তাতে ব্রিকসের মাধ্যমে নতুন ‘বন্ধু’ বাড়ানোর প্রচেষ্টা অমূলক নয়। কারণ, চীনের দৃষ্টি থেকে বিবেচনা করলে পশ্চিমা বিশ্বের বিপরীতে একটি পাল্টা জোট হয়ে ওঠার যতটা সম্ভাবনা রয়েছে অন্য জোট—সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা, জি-২০-এর সে রকম সম্ভাবনা নেই। কারণ, সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা অনেকটাই ইউরেশিয়া চরিত্রের এবং জি-২০ জোটেও পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর প্রাধান্য। তাই পশ্চিমা বিশ্বের ‘ক্ষুদ্র বৃত্তের’ বিপরীতে ব্রিকসকে একটি ‘বড় পরিবারে’ পরিণত করতেই আগ্রহ বেশি।
চীন যে এই প্রথম সদস্য বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে তা কিন্তু নয়। এর আগে, বেইজিংই দক্ষিণ আফ্রিকাকে জোটের নেওয়ার উকালতি করেছিল। এখন ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থায় বেইজিং আবারও জোটে সদস্য বাড়ানোর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। যদিও জোটে সদস্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে সবারই ঐকমত্য জরুরি তারপরও চীনের প্রভাব উপেক্ষা করা অনেকটাই কঠিন। কারণ ব্রিকসের মোট উৎপাদনের প্রায় ৭০ শতাংশ একাই করে থাকে চীন। যার বড় ভোক্তা আবার বাকি চার দেশ।
জোটটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোন দেশগুলো সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করেছে তার তালিকা প্রকাশ করেনি। তবে দ্য ইকোনমিস্ট বিভিন্ন শর্ত মিলিয়ে হিসেবে করে দেখেছে যে ১৮টি দেশ সম্ভবত ব্রিকসের সদস্য হতে চায়। এই তালিকায় বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক প্রভাবশালী দেশ রয়েছে। এসব দেশের মধ্যে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত উল্লেখযোগ্য। ব্রিকসে জোট দেওয়ার মাধ্যমে দেশ দুটি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার পাশাপাশি তাদের দীর্ঘদিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক নতুন করে ঝালিয়ে নিতে চায়।
বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়ার মতো জনবহুল এবং এত দিন জোট নিরপেক্ষ বলে পরিচিত দেশও জোটের সদস্য হতে চায়। তাদের উদ্দেশ্য হলো পশ্চিমা মানদণ্ডের মানবাধিকারের যে সমালোচনা তা থেকে আশ্রয় খুঁজে পাওয়া। এর বাইরে আর্জেন্টিনা, ইথিওপিয়া, মেক্সিকো ও নাইজেরিয়ার মতো জনবহুল দেশগুলোও জোটের সদস্য হওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। শেষ পর্যন্ত যদি এই ১৮টি দেশই জোটের সদস্য হয়ে যায়, তবে হয়তো জোটটি নতুন নাম নেবে। এ ছাড়া জোটটি বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল জোটে পরিণত হবে এবং জোটের মোট জিডিপির পরিমাণ হবে বিশ্বের মোট জিডিপির ৩৪ শতাংশ।
জোটকে কার্যকরী করতে ব্রিকস দেশগুলো শিক্ষা, গবেষণা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, মন্ত্রী, থিংক ট্যাংক এমনকি ক্ষমতাসীন দলগুলোর প্রতিনিধি পর্যায়ের সম্মেলনও আয়োজন করছে নিয়মিত। কিছুদিন আগেই দক্ষিণ আফ্রিকায় হয়ে গেল ব্রিকস ইয়ুথ সামিট। রাশিয়া এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে তাঁরা আগামী বছর প্যারিস অলিম্পিকের আগেই ব্রিকস গেমসের আয়োজন করবে। এই যে আন্তদেশীয় সফট টুলসের ব্যবহার এগুলো জোটের স্থায়ীত্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। এ বিষয়ে ব্রাজিলীয় থিংক ট্যাংক গুতলিও ভার্গাস ফাউন্ডেশনের ফেলো অলিভার স্টুয়েঙ্কেল বলেন, ‘এসব বৈঠক চরিত্রগত দিক থেকে খুব নিরামিষ হলেও এগুলো কূটনীতিবিদদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক বাড়ানোর সুযোগ করে দেয়।’
জোটের টিকে থাকার ক্ষেত্রে আরও বড় একটি রক্ষাকবচ হলো দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। যেগুলো রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, মিনি বিশ্বব্যাংক এবং মিনি আইএমএফ। সদস্য দেশগুলোকে সহজশর্তে ঋণ দেওয়ার জন্য গঠিত হয়েছে কন্টিনজেন্ট রিজার্ভ অ্যারাঞ্জমেন্ট বা সিআরএ—যা মিনি আইএমএফ নামে পরিচিত। সহজশর্তে উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণ দেওয়ার জন্য গঠিত হয়েছে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা এনডিবি। ২০১৫ সালে গঠনের পর থেকে মিনি বিশ্বব্যাংক বা এনডিবি ৩৩ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ঋণ দিয়েছে। তবে বিশ্বব্যাংকের তুলনায় ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এনডিবি এখনো অনেক পিছিয়ে। এ ছাড়া এনডিবির কার্যক্রমের স্বচ্ছতা এবং অন্যান্য বিষয়ে দক্ষতা এখনো বিশ্ব ব্যাংকের তুলনায় কম। বিষয়টি আমলে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড্যানিয়েল ব্র্যাডলো বলেন, বিশ্বব্যাংক এনডিবির তুলনায় এখনো অনেক বেশি স্বচ্ছ এবং দায়বদ্ধ।
অনেক সীমাবদ্ধতার পরও টিকে থাকার চেষ্টায় ব্রিকস অনেকটাই সফল। তবে জোটটির ভবিষ্যৎ কোন পথে যাবে, তা অনেকগুলো শর্তের ওপর নির্ভর করে। বিশেষ করে ভারত-চীন সম্পর্ক, ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক, ভারত ও ব্রাজিলের সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্ক ইত্যাদি সমীকরণ মেলানোর পর বোঝা যাবে আসলে জোটের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাবে। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে দুর্বলতা থাকলেও তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকটাই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বিশেষ করে জোট সম্প্রসারণ এবং নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ার বিষয়ে। এ বিষয়ে জোটের দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি পরিষ্কার না হলেও এ বিষয়ে যে নজর রয়েছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, তিনটি মহাদেশের কোটি কোটি মানুষের প্রতিনিধি করা ব্রিকসের দেশগুলোর একটি বিষয়ে মিল রয়েছে, আর তা হলো, ধনী পশ্চিমাশক্তির হয়ে কাজ করা বিশ্বব্যবস্থার প্রতি অনীহা।
এ বিষয়ে এশিয়া ও ব্রিকসবিষয়ক দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ অনিল সুকলাল গত শুক্রবার এএফপিকে বলেন, এই জোটে যোগ দেওয়ার জন্য আগ্রহ বাড়ছে কোনো কোনো দেশের। এর অন্যতম কারণ, মেরুকৃত বিশ্বের আরও মেরুকরণ হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে। তাই দেশগুলোকে বাধ্য হয়ে কোনো পক্ষে যেতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘দক্ষিণের দেশগুলো কাকে সমর্থন করবে, কীভাবে আচরণ করবে এবং কীভাবে তাদের সার্বভৌম বিষয়গুলো পরিচালনা করবে, তা বলতে চায় না। তারা এখন তাদের নিজ নিজ অবস্থান জাহির করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী।’ ফলে ‘বিশ্বকাঠামো’ পুনর্গঠন করতে চাওয়া দেশগুলোর জন্য ব্রিকস আশা জাগিয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে।
লিম্পোপো বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রভাষক লেবোগং লেগোডি এই বিষয়ে একমত যে বর্তমান বিশ্বে কর্তৃত্বের বিকল্প হিসেবে অনেক দেশই এখন ব্রিকসে যোগদানে আগ্রহ দেখাচ্ছে। কিন্তু ব্রিকসের প্রতি নজর রাখা বিশ্লেষকেরা এই সম্মেলনের ফলাফল নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী নন। কেননা, বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ক্ষমতা এখনো পশ্চিমা দেশগুলোর হাতেই রয়েছে এবং চীন এখনো প্রভাবশালী শক্তি হয়ে ওঠেনি।
সব মিলিয়ে জোহানেসবার্গে চলমান ব্রিকস সম্মেলন জোটকে নতুন করে ‘সংজ্ঞায়িত’ করার মুহূর্ত। কারণ, জোটের সম্প্রসারণ একই সঙ্গে এতে চীনের প্রভাবকে বৃদ্ধি করবে এবং একই সঙ্গে জোটের পশ্চিমাবিরোধী মনোভাব বাড়বে, যা রাশিয়াকেও প্রকারান্তে সুবিধা দেবে। এতে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়া নিয়ে যে আলোচনা চলমান তার পালে হাওয়া লাগবে।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, এএফপি, দ্য ইকোনমিস্ট এবং বিবিসি

দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে সম্পদশালী এলাকা জোহানেসবার্গে শুরু হয়েছে বিশ্বের উদীয়মান শীর্ষ পাঁচ অর্থনীতির—ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা—জোট ব্রিকসের ১৫তম শীর্ষ সম্মেলন। কোভিড মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্ব অর্থনীতি নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে; যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা বলয়ের সঙ্গে চীন ও রাশিয়ার নানামাত্রিক দ্বন্দ্ব ভূরাজনীতিকেও নতুন মোড়ে টেনে এসেছে। এমন সময়ে এবারের ব্রিকস সম্মেলনকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, পশ্চিমা বিশ্বের আধিপত্য মোকাবিলায় এবং বৈশ্বিক নানা বিষয়ে জোরালো অবস্থান তৈরির মাধ্যমে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এই জোট। এবারের সম্মেলন দেশগুলোর জন্য গর্বের ও মুক্তির এবং একই সঙ্গে অস্বস্তিরও।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সম্মেলনে সশরীরে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া—এই মুহূর্তে জোটের জন্য সবচেয়ে স্বস্তির। এতে আয়োজক দক্ষিণ আফ্রিকা অনেকটাই নির্ভার। কারণ, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) পরোয়ানা মাথায় নিয়ে পুতিন সম্মেলনে এলে নেলসন ম্যান্ডেলার দেশ বিপদেই পড়ত। সদস্য দেশ হিসেবে আদালতের নির্দেশনা মেনে সহযোগিতা করতে হতো দেশটিকে।
যেসব বিষয়কে সামনে রেখে ব্রিকস সম্মেলন শুরু হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকট কাটিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের দ্বৈরথের প্রভাব মোকাবিলা করে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়, তা উল্লেখযোগ্য। আর এখানেই প্রশ্ন আসে, তাহলে কি ব্রিকস পশ্চিমা বিশ্ববিরোধী অবস্থান নিতে যাচ্ছে? কিংবা তারা নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়তে যাচ্ছে—নিদেনপক্ষে এমন কোনো চেষ্টা করছে কি?
চলতি বছরের মাঝামাঝি কেপটাউনে অনুষ্ঠিত ব্রিকস জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে রাশিয়ার সাংবাদিকেরা বিবিসির সাংবাদিক অ্যান্ড্রু হার্ডিংকে বলেছিলেন, ‘তোমরা তোমাদের পশ্চিমা দুনিয়ায় মানবাধিকারের স্বর্গ সাজাতে থাকো। আমরা দুনিয়াকে নতুন করে গড়তে যাচ্ছি।’
কিন্তু চাইলেই কি ব্রিকস দুনিয়াকে নতুন করে গড়তে পারবে? এর জন্য ব্রিকসের অভ্যন্তরীণ ঘটনাবলির বোঝাপড়া জরুরি। ২০০১ সালের দিকে বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাস প্রথম চারটি দেশের অর্থনীতির সম্ভাব্য অগ্রগতি বোঝাতে ব্রিক-বিআরআইসি (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন) ধারণা নিয়ে আসে। চীনের উদ্যোগে এর সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকাকে যুক্ত করে যাত্রা শুরু করে ব্রিকস। প্রথম সম্মেলন হয় ২০০৯ সালে।
যাত্রা শুরুর পর অনেক বিশ্লেষক ধারণা করেন, ব্রিকস শিগগিরই শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭-এর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করবে। তবে অভ্যন্তরীণ কোন্দল শুরুতে কিছুটা সংশয় তৈরি করে। কিন্তু বাস্তবে বিশ্লেষকদের ধারণাকে জোরালো করে জোট বিকশিত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২২ আগস্ট জোটের ১৫তম শীর্ষ সম্মেলন হচ্ছে।
এই সম্মেলনে উল্লিখিত দুটি বিষয় ছাড়াও অন্য যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্ব পাবে, তাহলো জোটের বিস্তার। এই বিষয়ে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বিভেদ স্পষ্ট—চীন ও রাশিয়া জোটের সম্প্রসারণ চায়। কিন্তু ভারত ও ব্রাজিলের অবস্থান এর বিপরীত। ‘বৃহত্তর ব্রিকস’-এর অর্থ পশ্চিমা বিশ্বের জন্য বড় হুমকি আসন্ন। কিন্তু সেটা সামরিক হুমকি না হওয়া এখনই পশ্চিমের অতটা ভীত হওয়ার কিছু নেই।
পশ্চিমা বিশ্বের ভীত না হওয়ার কারণ জোটের গঠনের মধ্যেই নিহিত। কারণ, জোটের দেশগুলো আদর্শিক বা শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর দিক থেকে এক রকম নয়। যেমন—ব্রাজিল, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চললেও চীন-রাশিয়ায় তা নেই। শুধু তা-ই নয়, এ দুই দেশ পশ্চিমা গণতন্ত্র ও উদারনৈতিকতার বড় সমালোচকও। ভারত, চীন ও রাশিয়া পারমাণবিক শক্তিধর হলেও ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকা তা নয়। আবার ব্রাজিল ও রাশিয়ার পণ্যের অন্যতম বড় গন্তব্যস্থল চীন হলেও এর বিপরীত হার খুবই সামান্য। অর্থাৎ তাদের মধ্যে বড় বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু জোটের বাকি সদস্য দেশগুলোর মোট অর্থনীতির আকার চীনের চেয়ে অনেক ছোট। এ ছাড়া ভারত ও চীনের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে সীমান্ত নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এ ছাড়া জোটের এখনো কোনো নির্দিষ্ট সনদ, গঠনতন্ত্র বা সদস্য গ্রহণের নির্ধারিত কোনো শর্তাবলি নেই।
ফলে জোটের টিকে থাকার বিষয়টি এখনো একটি মৌলিক প্রশ্ন। তবে জোটের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে যেমন মতপার্থক্য রয়েছে, তেমনি আবার জোটকে টিকিয়ে রাখার জন্য একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও রয়েছে। এর একটি হলো পশ্চিমা বিশ্বের সমালোচনা। বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও জাতিসংঘের মতো বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে ‘গ্লোবাল সাউথ বা বৈশ্বিক দক্ষিণের’ দেশগুলোকে (পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলো) একপাশে সরিয়ে রেখেছে সে বিষয়ে মুখর ব্রিকসের দেশগুলো। পাশাপাশি দেশগুলো চেষ্টা করছে গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠার। এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করের মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছিলেন, বিশ্বের অর্থনৈতিক শক্তি এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। যার ফলে অধিকাংশ দেশকেই অল্প কয়েকটি দেশের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হচ্ছে।
জোটের টিকে থাকার আরেকটি কারণ হলো—নিজের সম্মান রক্ষা করা। বিশেষ করে যেসব দেশ বিশ্বসম্প্রদায়ে টিকে থাকতে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। যেমন ২০১৩ সালের পর থেকে ব্রাজিল, রাশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার সামষ্টিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ১ শতাংশেরও কম। বিপরীতে ভারত ও চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ শতাংশেরও বেশি। ফলে নিজেদের সম্মান রক্ষায় কিছু দেশের জন্য জোটে থাকাটা অনেকটা বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের জন্য ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ব্রিকস সম্মেলনকে বড় করে দেখানোটা বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে। টানা কয়েক দশক ক্ষমতায় থাকার পর এই প্রথম দলটির ক্ষমতার ভিত নড়বড়ে হয়ে গেছে।
এর বাইরে জোটটি পতিতদের আশ্রয়স্থলে হিসেবে একটি ভালো জায়গা। যেমন ব্রাজিলে যখন জাইর বলসোনারে ক্ষমতায় ছিলেন তখন তিনি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর মিত্র ছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার পর যুক্তরাষ্ট্র বলসোনারোর ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। পরে বলসোনারো ব্রিকসকে নিজের আশ্রয় হিসেবে খুঁজে নেন। একইভাবে ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে রাশিয়া যখন পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত, তখন দেশটির জন্য সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা হলো ব্রিকস। ব্রিকসের সর্বশেষ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে ব্রিকসে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে দ্য ইকোনমিস্টের তরফ থেকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, জোটের উদ্দেশ্য কী? জবাবে রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আরও বন্ধু বাড়ানো।’
রাশিয়ার মতো চীনেরও অবস্থান একই। বেইজিংও চায় জোট সম্প্রসারিত হোক। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র এবং এর পশ্চিমা মিত্ররা যেভাবে চীনের সঙ্গে আচরণ করছে তাতে ব্রিকসের মাধ্যমে নতুন ‘বন্ধু’ বাড়ানোর প্রচেষ্টা অমূলক নয়। কারণ, চীনের দৃষ্টি থেকে বিবেচনা করলে পশ্চিমা বিশ্বের বিপরীতে একটি পাল্টা জোট হয়ে ওঠার যতটা সম্ভাবনা রয়েছে অন্য জোট—সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা, জি-২০-এর সে রকম সম্ভাবনা নেই। কারণ, সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা অনেকটাই ইউরেশিয়া চরিত্রের এবং জি-২০ জোটেও পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর প্রাধান্য। তাই পশ্চিমা বিশ্বের ‘ক্ষুদ্র বৃত্তের’ বিপরীতে ব্রিকসকে একটি ‘বড় পরিবারে’ পরিণত করতেই আগ্রহ বেশি।
চীন যে এই প্রথম সদস্য বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে তা কিন্তু নয়। এর আগে, বেইজিংই দক্ষিণ আফ্রিকাকে জোটের নেওয়ার উকালতি করেছিল। এখন ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থায় বেইজিং আবারও জোটে সদস্য বাড়ানোর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। যদিও জোটে সদস্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে সবারই ঐকমত্য জরুরি তারপরও চীনের প্রভাব উপেক্ষা করা অনেকটাই কঠিন। কারণ ব্রিকসের মোট উৎপাদনের প্রায় ৭০ শতাংশ একাই করে থাকে চীন। যার বড় ভোক্তা আবার বাকি চার দেশ।
জোটটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোন দেশগুলো সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করেছে তার তালিকা প্রকাশ করেনি। তবে দ্য ইকোনমিস্ট বিভিন্ন শর্ত মিলিয়ে হিসেবে করে দেখেছে যে ১৮টি দেশ সম্ভবত ব্রিকসের সদস্য হতে চায়। এই তালিকায় বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক প্রভাবশালী দেশ রয়েছে। এসব দেশের মধ্যে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত উল্লেখযোগ্য। ব্রিকসে জোট দেওয়ার মাধ্যমে দেশ দুটি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার পাশাপাশি তাদের দীর্ঘদিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক নতুন করে ঝালিয়ে নিতে চায়।
বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়ার মতো জনবহুল এবং এত দিন জোট নিরপেক্ষ বলে পরিচিত দেশও জোটের সদস্য হতে চায়। তাদের উদ্দেশ্য হলো পশ্চিমা মানদণ্ডের মানবাধিকারের যে সমালোচনা তা থেকে আশ্রয় খুঁজে পাওয়া। এর বাইরে আর্জেন্টিনা, ইথিওপিয়া, মেক্সিকো ও নাইজেরিয়ার মতো জনবহুল দেশগুলোও জোটের সদস্য হওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। শেষ পর্যন্ত যদি এই ১৮টি দেশই জোটের সদস্য হয়ে যায়, তবে হয়তো জোটটি নতুন নাম নেবে। এ ছাড়া জোটটি বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল জোটে পরিণত হবে এবং জোটের মোট জিডিপির পরিমাণ হবে বিশ্বের মোট জিডিপির ৩৪ শতাংশ।
জোটকে কার্যকরী করতে ব্রিকস দেশগুলো শিক্ষা, গবেষণা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, মন্ত্রী, থিংক ট্যাংক এমনকি ক্ষমতাসীন দলগুলোর প্রতিনিধি পর্যায়ের সম্মেলনও আয়োজন করছে নিয়মিত। কিছুদিন আগেই দক্ষিণ আফ্রিকায় হয়ে গেল ব্রিকস ইয়ুথ সামিট। রাশিয়া এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে তাঁরা আগামী বছর প্যারিস অলিম্পিকের আগেই ব্রিকস গেমসের আয়োজন করবে। এই যে আন্তদেশীয় সফট টুলসের ব্যবহার এগুলো জোটের স্থায়ীত্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। এ বিষয়ে ব্রাজিলীয় থিংক ট্যাংক গুতলিও ভার্গাস ফাউন্ডেশনের ফেলো অলিভার স্টুয়েঙ্কেল বলেন, ‘এসব বৈঠক চরিত্রগত দিক থেকে খুব নিরামিষ হলেও এগুলো কূটনীতিবিদদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক বাড়ানোর সুযোগ করে দেয়।’
জোটের টিকে থাকার ক্ষেত্রে আরও বড় একটি রক্ষাকবচ হলো দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। যেগুলো রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, মিনি বিশ্বব্যাংক এবং মিনি আইএমএফ। সদস্য দেশগুলোকে সহজশর্তে ঋণ দেওয়ার জন্য গঠিত হয়েছে কন্টিনজেন্ট রিজার্ভ অ্যারাঞ্জমেন্ট বা সিআরএ—যা মিনি আইএমএফ নামে পরিচিত। সহজশর্তে উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণ দেওয়ার জন্য গঠিত হয়েছে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা এনডিবি। ২০১৫ সালে গঠনের পর থেকে মিনি বিশ্বব্যাংক বা এনডিবি ৩৩ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ঋণ দিয়েছে। তবে বিশ্বব্যাংকের তুলনায় ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এনডিবি এখনো অনেক পিছিয়ে। এ ছাড়া এনডিবির কার্যক্রমের স্বচ্ছতা এবং অন্যান্য বিষয়ে দক্ষতা এখনো বিশ্ব ব্যাংকের তুলনায় কম। বিষয়টি আমলে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড্যানিয়েল ব্র্যাডলো বলেন, বিশ্বব্যাংক এনডিবির তুলনায় এখনো অনেক বেশি স্বচ্ছ এবং দায়বদ্ধ।
অনেক সীমাবদ্ধতার পরও টিকে থাকার চেষ্টায় ব্রিকস অনেকটাই সফল। তবে জোটটির ভবিষ্যৎ কোন পথে যাবে, তা অনেকগুলো শর্তের ওপর নির্ভর করে। বিশেষ করে ভারত-চীন সম্পর্ক, ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক, ভারত ও ব্রাজিলের সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্ক ইত্যাদি সমীকরণ মেলানোর পর বোঝা যাবে আসলে জোটের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাবে। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে দুর্বলতা থাকলেও তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকটাই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বিশেষ করে জোট সম্প্রসারণ এবং নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ার বিষয়ে। এ বিষয়ে জোটের দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি পরিষ্কার না হলেও এ বিষয়ে যে নজর রয়েছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, তিনটি মহাদেশের কোটি কোটি মানুষের প্রতিনিধি করা ব্রিকসের দেশগুলোর একটি বিষয়ে মিল রয়েছে, আর তা হলো, ধনী পশ্চিমাশক্তির হয়ে কাজ করা বিশ্বব্যবস্থার প্রতি অনীহা।
এ বিষয়ে এশিয়া ও ব্রিকসবিষয়ক দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ অনিল সুকলাল গত শুক্রবার এএফপিকে বলেন, এই জোটে যোগ দেওয়ার জন্য আগ্রহ বাড়ছে কোনো কোনো দেশের। এর অন্যতম কারণ, মেরুকৃত বিশ্বের আরও মেরুকরণ হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে। তাই দেশগুলোকে বাধ্য হয়ে কোনো পক্ষে যেতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘দক্ষিণের দেশগুলো কাকে সমর্থন করবে, কীভাবে আচরণ করবে এবং কীভাবে তাদের সার্বভৌম বিষয়গুলো পরিচালনা করবে, তা বলতে চায় না। তারা এখন তাদের নিজ নিজ অবস্থান জাহির করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী।’ ফলে ‘বিশ্বকাঠামো’ পুনর্গঠন করতে চাওয়া দেশগুলোর জন্য ব্রিকস আশা জাগিয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে।
লিম্পোপো বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রভাষক লেবোগং লেগোডি এই বিষয়ে একমত যে বর্তমান বিশ্বে কর্তৃত্বের বিকল্প হিসেবে অনেক দেশই এখন ব্রিকসে যোগদানে আগ্রহ দেখাচ্ছে। কিন্তু ব্রিকসের প্রতি নজর রাখা বিশ্লেষকেরা এই সম্মেলনের ফলাফল নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী নন। কেননা, বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ক্ষমতা এখনো পশ্চিমা দেশগুলোর হাতেই রয়েছে এবং চীন এখনো প্রভাবশালী শক্তি হয়ে ওঠেনি।
সব মিলিয়ে জোহানেসবার্গে চলমান ব্রিকস সম্মেলন জোটকে নতুন করে ‘সংজ্ঞায়িত’ করার মুহূর্ত। কারণ, জোটের সম্প্রসারণ একই সঙ্গে এতে চীনের প্রভাবকে বৃদ্ধি করবে এবং একই সঙ্গে জোটের পশ্চিমাবিরোধী মনোভাব বাড়বে, যা রাশিয়াকেও প্রকারান্তে সুবিধা দেবে। এতে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়া নিয়ে যে আলোচনা চলমান তার পালে হাওয়া লাগবে।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, এএফপি, দ্য ইকোনমিস্ট এবং বিবিসি
আব্দুর রহমান

দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে সম্পদশালী এলাকা জোহানেসবার্গে শুরু হয়েছে বিশ্বের উদীয়মান শীর্ষ পাঁচ অর্থনীতির—ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা—জোট ব্রিকসের ১৫তম শীর্ষ সম্মেলন। কোভিড মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্ব অর্থনীতি নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে; যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা বলয়ের সঙ্গে চীন ও রাশিয়ার নানামাত্রিক দ্বন্দ্ব ভূরাজনীতিকেও নতুন মোড়ে টেনে এসেছে। এমন সময়ে এবারের ব্রিকস সম্মেলনকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, পশ্চিমা বিশ্বের আধিপত্য মোকাবিলায় এবং বৈশ্বিক নানা বিষয়ে জোরালো অবস্থান তৈরির মাধ্যমে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এই জোট। এবারের সম্মেলন দেশগুলোর জন্য গর্বের ও মুক্তির এবং একই সঙ্গে অস্বস্তিরও।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সম্মেলনে সশরীরে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া—এই মুহূর্তে জোটের জন্য সবচেয়ে স্বস্তির। এতে আয়োজক দক্ষিণ আফ্রিকা অনেকটাই নির্ভার। কারণ, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) পরোয়ানা মাথায় নিয়ে পুতিন সম্মেলনে এলে নেলসন ম্যান্ডেলার দেশ বিপদেই পড়ত। সদস্য দেশ হিসেবে আদালতের নির্দেশনা মেনে সহযোগিতা করতে হতো দেশটিকে।
যেসব বিষয়কে সামনে রেখে ব্রিকস সম্মেলন শুরু হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকট কাটিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের দ্বৈরথের প্রভাব মোকাবিলা করে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়, তা উল্লেখযোগ্য। আর এখানেই প্রশ্ন আসে, তাহলে কি ব্রিকস পশ্চিমা বিশ্ববিরোধী অবস্থান নিতে যাচ্ছে? কিংবা তারা নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়তে যাচ্ছে—নিদেনপক্ষে এমন কোনো চেষ্টা করছে কি?
চলতি বছরের মাঝামাঝি কেপটাউনে অনুষ্ঠিত ব্রিকস জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে রাশিয়ার সাংবাদিকেরা বিবিসির সাংবাদিক অ্যান্ড্রু হার্ডিংকে বলেছিলেন, ‘তোমরা তোমাদের পশ্চিমা দুনিয়ায় মানবাধিকারের স্বর্গ সাজাতে থাকো। আমরা দুনিয়াকে নতুন করে গড়তে যাচ্ছি।’
কিন্তু চাইলেই কি ব্রিকস দুনিয়াকে নতুন করে গড়তে পারবে? এর জন্য ব্রিকসের অভ্যন্তরীণ ঘটনাবলির বোঝাপড়া জরুরি। ২০০১ সালের দিকে বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাস প্রথম চারটি দেশের অর্থনীতির সম্ভাব্য অগ্রগতি বোঝাতে ব্রিক-বিআরআইসি (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন) ধারণা নিয়ে আসে। চীনের উদ্যোগে এর সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকাকে যুক্ত করে যাত্রা শুরু করে ব্রিকস। প্রথম সম্মেলন হয় ২০০৯ সালে।
যাত্রা শুরুর পর অনেক বিশ্লেষক ধারণা করেন, ব্রিকস শিগগিরই শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭-এর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করবে। তবে অভ্যন্তরীণ কোন্দল শুরুতে কিছুটা সংশয় তৈরি করে। কিন্তু বাস্তবে বিশ্লেষকদের ধারণাকে জোরালো করে জোট বিকশিত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২২ আগস্ট জোটের ১৫তম শীর্ষ সম্মেলন হচ্ছে।
এই সম্মেলনে উল্লিখিত দুটি বিষয় ছাড়াও অন্য যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্ব পাবে, তাহলো জোটের বিস্তার। এই বিষয়ে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বিভেদ স্পষ্ট—চীন ও রাশিয়া জোটের সম্প্রসারণ চায়। কিন্তু ভারত ও ব্রাজিলের অবস্থান এর বিপরীত। ‘বৃহত্তর ব্রিকস’-এর অর্থ পশ্চিমা বিশ্বের জন্য বড় হুমকি আসন্ন। কিন্তু সেটা সামরিক হুমকি না হওয়া এখনই পশ্চিমের অতটা ভীত হওয়ার কিছু নেই।
পশ্চিমা বিশ্বের ভীত না হওয়ার কারণ জোটের গঠনের মধ্যেই নিহিত। কারণ, জোটের দেশগুলো আদর্শিক বা শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর দিক থেকে এক রকম নয়। যেমন—ব্রাজিল, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চললেও চীন-রাশিয়ায় তা নেই। শুধু তা-ই নয়, এ দুই দেশ পশ্চিমা গণতন্ত্র ও উদারনৈতিকতার বড় সমালোচকও। ভারত, চীন ও রাশিয়া পারমাণবিক শক্তিধর হলেও ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকা তা নয়। আবার ব্রাজিল ও রাশিয়ার পণ্যের অন্যতম বড় গন্তব্যস্থল চীন হলেও এর বিপরীত হার খুবই সামান্য। অর্থাৎ তাদের মধ্যে বড় বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু জোটের বাকি সদস্য দেশগুলোর মোট অর্থনীতির আকার চীনের চেয়ে অনেক ছোট। এ ছাড়া ভারত ও চীনের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে সীমান্ত নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এ ছাড়া জোটের এখনো কোনো নির্দিষ্ট সনদ, গঠনতন্ত্র বা সদস্য গ্রহণের নির্ধারিত কোনো শর্তাবলি নেই।
ফলে জোটের টিকে থাকার বিষয়টি এখনো একটি মৌলিক প্রশ্ন। তবে জোটের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে যেমন মতপার্থক্য রয়েছে, তেমনি আবার জোটকে টিকিয়ে রাখার জন্য একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও রয়েছে। এর একটি হলো পশ্চিমা বিশ্বের সমালোচনা। বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও জাতিসংঘের মতো বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে ‘গ্লোবাল সাউথ বা বৈশ্বিক দক্ষিণের’ দেশগুলোকে (পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলো) একপাশে সরিয়ে রেখেছে সে বিষয়ে মুখর ব্রিকসের দেশগুলো। পাশাপাশি দেশগুলো চেষ্টা করছে গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠার। এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করের মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছিলেন, বিশ্বের অর্থনৈতিক শক্তি এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। যার ফলে অধিকাংশ দেশকেই অল্প কয়েকটি দেশের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হচ্ছে।
জোটের টিকে থাকার আরেকটি কারণ হলো—নিজের সম্মান রক্ষা করা। বিশেষ করে যেসব দেশ বিশ্বসম্প্রদায়ে টিকে থাকতে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। যেমন ২০১৩ সালের পর থেকে ব্রাজিল, রাশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার সামষ্টিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ১ শতাংশেরও কম। বিপরীতে ভারত ও চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ শতাংশেরও বেশি। ফলে নিজেদের সম্মান রক্ষায় কিছু দেশের জন্য জোটে থাকাটা অনেকটা বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের জন্য ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ব্রিকস সম্মেলনকে বড় করে দেখানোটা বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে। টানা কয়েক দশক ক্ষমতায় থাকার পর এই প্রথম দলটির ক্ষমতার ভিত নড়বড়ে হয়ে গেছে।
এর বাইরে জোটটি পতিতদের আশ্রয়স্থলে হিসেবে একটি ভালো জায়গা। যেমন ব্রাজিলে যখন জাইর বলসোনারে ক্ষমতায় ছিলেন তখন তিনি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর মিত্র ছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার পর যুক্তরাষ্ট্র বলসোনারোর ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। পরে বলসোনারো ব্রিকসকে নিজের আশ্রয় হিসেবে খুঁজে নেন। একইভাবে ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে রাশিয়া যখন পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত, তখন দেশটির জন্য সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা হলো ব্রিকস। ব্রিকসের সর্বশেষ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে ব্রিকসে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে দ্য ইকোনমিস্টের তরফ থেকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, জোটের উদ্দেশ্য কী? জবাবে রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আরও বন্ধু বাড়ানো।’
রাশিয়ার মতো চীনেরও অবস্থান একই। বেইজিংও চায় জোট সম্প্রসারিত হোক। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র এবং এর পশ্চিমা মিত্ররা যেভাবে চীনের সঙ্গে আচরণ করছে তাতে ব্রিকসের মাধ্যমে নতুন ‘বন্ধু’ বাড়ানোর প্রচেষ্টা অমূলক নয়। কারণ, চীনের দৃষ্টি থেকে বিবেচনা করলে পশ্চিমা বিশ্বের বিপরীতে একটি পাল্টা জোট হয়ে ওঠার যতটা সম্ভাবনা রয়েছে অন্য জোট—সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা, জি-২০-এর সে রকম সম্ভাবনা নেই। কারণ, সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা অনেকটাই ইউরেশিয়া চরিত্রের এবং জি-২০ জোটেও পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর প্রাধান্য। তাই পশ্চিমা বিশ্বের ‘ক্ষুদ্র বৃত্তের’ বিপরীতে ব্রিকসকে একটি ‘বড় পরিবারে’ পরিণত করতেই আগ্রহ বেশি।
চীন যে এই প্রথম সদস্য বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে তা কিন্তু নয়। এর আগে, বেইজিংই দক্ষিণ আফ্রিকাকে জোটের নেওয়ার উকালতি করেছিল। এখন ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থায় বেইজিং আবারও জোটে সদস্য বাড়ানোর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। যদিও জোটে সদস্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে সবারই ঐকমত্য জরুরি তারপরও চীনের প্রভাব উপেক্ষা করা অনেকটাই কঠিন। কারণ ব্রিকসের মোট উৎপাদনের প্রায় ৭০ শতাংশ একাই করে থাকে চীন। যার বড় ভোক্তা আবার বাকি চার দেশ।
জোটটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোন দেশগুলো সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করেছে তার তালিকা প্রকাশ করেনি। তবে দ্য ইকোনমিস্ট বিভিন্ন শর্ত মিলিয়ে হিসেবে করে দেখেছে যে ১৮টি দেশ সম্ভবত ব্রিকসের সদস্য হতে চায়। এই তালিকায় বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক প্রভাবশালী দেশ রয়েছে। এসব দেশের মধ্যে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত উল্লেখযোগ্য। ব্রিকসে জোট দেওয়ার মাধ্যমে দেশ দুটি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার পাশাপাশি তাদের দীর্ঘদিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক নতুন করে ঝালিয়ে নিতে চায়।
বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়ার মতো জনবহুল এবং এত দিন জোট নিরপেক্ষ বলে পরিচিত দেশও জোটের সদস্য হতে চায়। তাদের উদ্দেশ্য হলো পশ্চিমা মানদণ্ডের মানবাধিকারের যে সমালোচনা তা থেকে আশ্রয় খুঁজে পাওয়া। এর বাইরে আর্জেন্টিনা, ইথিওপিয়া, মেক্সিকো ও নাইজেরিয়ার মতো জনবহুল দেশগুলোও জোটের সদস্য হওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। শেষ পর্যন্ত যদি এই ১৮টি দেশই জোটের সদস্য হয়ে যায়, তবে হয়তো জোটটি নতুন নাম নেবে। এ ছাড়া জোটটি বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল জোটে পরিণত হবে এবং জোটের মোট জিডিপির পরিমাণ হবে বিশ্বের মোট জিডিপির ৩৪ শতাংশ।
জোটকে কার্যকরী করতে ব্রিকস দেশগুলো শিক্ষা, গবেষণা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, মন্ত্রী, থিংক ট্যাংক এমনকি ক্ষমতাসীন দলগুলোর প্রতিনিধি পর্যায়ের সম্মেলনও আয়োজন করছে নিয়মিত। কিছুদিন আগেই দক্ষিণ আফ্রিকায় হয়ে গেল ব্রিকস ইয়ুথ সামিট। রাশিয়া এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে তাঁরা আগামী বছর প্যারিস অলিম্পিকের আগেই ব্রিকস গেমসের আয়োজন করবে। এই যে আন্তদেশীয় সফট টুলসের ব্যবহার এগুলো জোটের স্থায়ীত্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। এ বিষয়ে ব্রাজিলীয় থিংক ট্যাংক গুতলিও ভার্গাস ফাউন্ডেশনের ফেলো অলিভার স্টুয়েঙ্কেল বলেন, ‘এসব বৈঠক চরিত্রগত দিক থেকে খুব নিরামিষ হলেও এগুলো কূটনীতিবিদদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক বাড়ানোর সুযোগ করে দেয়।’
জোটের টিকে থাকার ক্ষেত্রে আরও বড় একটি রক্ষাকবচ হলো দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। যেগুলো রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, মিনি বিশ্বব্যাংক এবং মিনি আইএমএফ। সদস্য দেশগুলোকে সহজশর্তে ঋণ দেওয়ার জন্য গঠিত হয়েছে কন্টিনজেন্ট রিজার্ভ অ্যারাঞ্জমেন্ট বা সিআরএ—যা মিনি আইএমএফ নামে পরিচিত। সহজশর্তে উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণ দেওয়ার জন্য গঠিত হয়েছে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা এনডিবি। ২০১৫ সালে গঠনের পর থেকে মিনি বিশ্বব্যাংক বা এনডিবি ৩৩ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ঋণ দিয়েছে। তবে বিশ্বব্যাংকের তুলনায় ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এনডিবি এখনো অনেক পিছিয়ে। এ ছাড়া এনডিবির কার্যক্রমের স্বচ্ছতা এবং অন্যান্য বিষয়ে দক্ষতা এখনো বিশ্ব ব্যাংকের তুলনায় কম। বিষয়টি আমলে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড্যানিয়েল ব্র্যাডলো বলেন, বিশ্বব্যাংক এনডিবির তুলনায় এখনো অনেক বেশি স্বচ্ছ এবং দায়বদ্ধ।
অনেক সীমাবদ্ধতার পরও টিকে থাকার চেষ্টায় ব্রিকস অনেকটাই সফল। তবে জোটটির ভবিষ্যৎ কোন পথে যাবে, তা অনেকগুলো শর্তের ওপর নির্ভর করে। বিশেষ করে ভারত-চীন সম্পর্ক, ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক, ভারত ও ব্রাজিলের সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্ক ইত্যাদি সমীকরণ মেলানোর পর বোঝা যাবে আসলে জোটের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাবে। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে দুর্বলতা থাকলেও তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকটাই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বিশেষ করে জোট সম্প্রসারণ এবং নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ার বিষয়ে। এ বিষয়ে জোটের দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি পরিষ্কার না হলেও এ বিষয়ে যে নজর রয়েছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, তিনটি মহাদেশের কোটি কোটি মানুষের প্রতিনিধি করা ব্রিকসের দেশগুলোর একটি বিষয়ে মিল রয়েছে, আর তা হলো, ধনী পশ্চিমাশক্তির হয়ে কাজ করা বিশ্বব্যবস্থার প্রতি অনীহা।
এ বিষয়ে এশিয়া ও ব্রিকসবিষয়ক দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ অনিল সুকলাল গত শুক্রবার এএফপিকে বলেন, এই জোটে যোগ দেওয়ার জন্য আগ্রহ বাড়ছে কোনো কোনো দেশের। এর অন্যতম কারণ, মেরুকৃত বিশ্বের আরও মেরুকরণ হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে। তাই দেশগুলোকে বাধ্য হয়ে কোনো পক্ষে যেতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘দক্ষিণের দেশগুলো কাকে সমর্থন করবে, কীভাবে আচরণ করবে এবং কীভাবে তাদের সার্বভৌম বিষয়গুলো পরিচালনা করবে, তা বলতে চায় না। তারা এখন তাদের নিজ নিজ অবস্থান জাহির করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী।’ ফলে ‘বিশ্বকাঠামো’ পুনর্গঠন করতে চাওয়া দেশগুলোর জন্য ব্রিকস আশা জাগিয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে।
লিম্পোপো বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রভাষক লেবোগং লেগোডি এই বিষয়ে একমত যে বর্তমান বিশ্বে কর্তৃত্বের বিকল্প হিসেবে অনেক দেশই এখন ব্রিকসে যোগদানে আগ্রহ দেখাচ্ছে। কিন্তু ব্রিকসের প্রতি নজর রাখা বিশ্লেষকেরা এই সম্মেলনের ফলাফল নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী নন। কেননা, বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ক্ষমতা এখনো পশ্চিমা দেশগুলোর হাতেই রয়েছে এবং চীন এখনো প্রভাবশালী শক্তি হয়ে ওঠেনি।
সব মিলিয়ে জোহানেসবার্গে চলমান ব্রিকস সম্মেলন জোটকে নতুন করে ‘সংজ্ঞায়িত’ করার মুহূর্ত। কারণ, জোটের সম্প্রসারণ একই সঙ্গে এতে চীনের প্রভাবকে বৃদ্ধি করবে এবং একই সঙ্গে জোটের পশ্চিমাবিরোধী মনোভাব বাড়বে, যা রাশিয়াকেও প্রকারান্তে সুবিধা দেবে। এতে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়া নিয়ে যে আলোচনা চলমান তার পালে হাওয়া লাগবে।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, এএফপি, দ্য ইকোনমিস্ট এবং বিবিসি

দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে সম্পদশালী এলাকা জোহানেসবার্গে শুরু হয়েছে বিশ্বের উদীয়মান শীর্ষ পাঁচ অর্থনীতির—ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা—জোট ব্রিকসের ১৫তম শীর্ষ সম্মেলন। কোভিড মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্ব অর্থনীতি নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে; যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা বলয়ের সঙ্গে চীন ও রাশিয়ার নানামাত্রিক দ্বন্দ্ব ভূরাজনীতিকেও নতুন মোড়ে টেনে এসেছে। এমন সময়ে এবারের ব্রিকস সম্মেলনকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, পশ্চিমা বিশ্বের আধিপত্য মোকাবিলায় এবং বৈশ্বিক নানা বিষয়ে জোরালো অবস্থান তৈরির মাধ্যমে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এই জোট। এবারের সম্মেলন দেশগুলোর জন্য গর্বের ও মুক্তির এবং একই সঙ্গে অস্বস্তিরও।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সম্মেলনে সশরীরে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া—এই মুহূর্তে জোটের জন্য সবচেয়ে স্বস্তির। এতে আয়োজক দক্ষিণ আফ্রিকা অনেকটাই নির্ভার। কারণ, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) পরোয়ানা মাথায় নিয়ে পুতিন সম্মেলনে এলে নেলসন ম্যান্ডেলার দেশ বিপদেই পড়ত। সদস্য দেশ হিসেবে আদালতের নির্দেশনা মেনে সহযোগিতা করতে হতো দেশটিকে।
যেসব বিষয়কে সামনে রেখে ব্রিকস সম্মেলন শুরু হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকট কাটিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের দ্বৈরথের প্রভাব মোকাবিলা করে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়, তা উল্লেখযোগ্য। আর এখানেই প্রশ্ন আসে, তাহলে কি ব্রিকস পশ্চিমা বিশ্ববিরোধী অবস্থান নিতে যাচ্ছে? কিংবা তারা নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়তে যাচ্ছে—নিদেনপক্ষে এমন কোনো চেষ্টা করছে কি?
চলতি বছরের মাঝামাঝি কেপটাউনে অনুষ্ঠিত ব্রিকস জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে রাশিয়ার সাংবাদিকেরা বিবিসির সাংবাদিক অ্যান্ড্রু হার্ডিংকে বলেছিলেন, ‘তোমরা তোমাদের পশ্চিমা দুনিয়ায় মানবাধিকারের স্বর্গ সাজাতে থাকো। আমরা দুনিয়াকে নতুন করে গড়তে যাচ্ছি।’
কিন্তু চাইলেই কি ব্রিকস দুনিয়াকে নতুন করে গড়তে পারবে? এর জন্য ব্রিকসের অভ্যন্তরীণ ঘটনাবলির বোঝাপড়া জরুরি। ২০০১ সালের দিকে বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাস প্রথম চারটি দেশের অর্থনীতির সম্ভাব্য অগ্রগতি বোঝাতে ব্রিক-বিআরআইসি (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন) ধারণা নিয়ে আসে। চীনের উদ্যোগে এর সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকাকে যুক্ত করে যাত্রা শুরু করে ব্রিকস। প্রথম সম্মেলন হয় ২০০৯ সালে।
যাত্রা শুরুর পর অনেক বিশ্লেষক ধারণা করেন, ব্রিকস শিগগিরই শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭-এর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করবে। তবে অভ্যন্তরীণ কোন্দল শুরুতে কিছুটা সংশয় তৈরি করে। কিন্তু বাস্তবে বিশ্লেষকদের ধারণাকে জোরালো করে জোট বিকশিত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২২ আগস্ট জোটের ১৫তম শীর্ষ সম্মেলন হচ্ছে।
এই সম্মেলনে উল্লিখিত দুটি বিষয় ছাড়াও অন্য যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্ব পাবে, তাহলো জোটের বিস্তার। এই বিষয়ে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বিভেদ স্পষ্ট—চীন ও রাশিয়া জোটের সম্প্রসারণ চায়। কিন্তু ভারত ও ব্রাজিলের অবস্থান এর বিপরীত। ‘বৃহত্তর ব্রিকস’-এর অর্থ পশ্চিমা বিশ্বের জন্য বড় হুমকি আসন্ন। কিন্তু সেটা সামরিক হুমকি না হওয়া এখনই পশ্চিমের অতটা ভীত হওয়ার কিছু নেই।
পশ্চিমা বিশ্বের ভীত না হওয়ার কারণ জোটের গঠনের মধ্যেই নিহিত। কারণ, জোটের দেশগুলো আদর্শিক বা শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর দিক থেকে এক রকম নয়। যেমন—ব্রাজিল, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চললেও চীন-রাশিয়ায় তা নেই। শুধু তা-ই নয়, এ দুই দেশ পশ্চিমা গণতন্ত্র ও উদারনৈতিকতার বড় সমালোচকও। ভারত, চীন ও রাশিয়া পারমাণবিক শক্তিধর হলেও ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকা তা নয়। আবার ব্রাজিল ও রাশিয়ার পণ্যের অন্যতম বড় গন্তব্যস্থল চীন হলেও এর বিপরীত হার খুবই সামান্য। অর্থাৎ তাদের মধ্যে বড় বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু জোটের বাকি সদস্য দেশগুলোর মোট অর্থনীতির আকার চীনের চেয়ে অনেক ছোট। এ ছাড়া ভারত ও চীনের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে সীমান্ত নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এ ছাড়া জোটের এখনো কোনো নির্দিষ্ট সনদ, গঠনতন্ত্র বা সদস্য গ্রহণের নির্ধারিত কোনো শর্তাবলি নেই।
ফলে জোটের টিকে থাকার বিষয়টি এখনো একটি মৌলিক প্রশ্ন। তবে জোটের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে যেমন মতপার্থক্য রয়েছে, তেমনি আবার জোটকে টিকিয়ে রাখার জন্য একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও রয়েছে। এর একটি হলো পশ্চিমা বিশ্বের সমালোচনা। বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও জাতিসংঘের মতো বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে ‘গ্লোবাল সাউথ বা বৈশ্বিক দক্ষিণের’ দেশগুলোকে (পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলো) একপাশে সরিয়ে রেখেছে সে বিষয়ে মুখর ব্রিকসের দেশগুলো। পাশাপাশি দেশগুলো চেষ্টা করছে গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠার। এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করের মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছিলেন, বিশ্বের অর্থনৈতিক শক্তি এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। যার ফলে অধিকাংশ দেশকেই অল্প কয়েকটি দেশের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হচ্ছে।
জোটের টিকে থাকার আরেকটি কারণ হলো—নিজের সম্মান রক্ষা করা। বিশেষ করে যেসব দেশ বিশ্বসম্প্রদায়ে টিকে থাকতে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। যেমন ২০১৩ সালের পর থেকে ব্রাজিল, রাশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার সামষ্টিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ১ শতাংশেরও কম। বিপরীতে ভারত ও চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ শতাংশেরও বেশি। ফলে নিজেদের সম্মান রক্ষায় কিছু দেশের জন্য জোটে থাকাটা অনেকটা বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের জন্য ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ব্রিকস সম্মেলনকে বড় করে দেখানোটা বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে। টানা কয়েক দশক ক্ষমতায় থাকার পর এই প্রথম দলটির ক্ষমতার ভিত নড়বড়ে হয়ে গেছে।
এর বাইরে জোটটি পতিতদের আশ্রয়স্থলে হিসেবে একটি ভালো জায়গা। যেমন ব্রাজিলে যখন জাইর বলসোনারে ক্ষমতায় ছিলেন তখন তিনি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর মিত্র ছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার পর যুক্তরাষ্ট্র বলসোনারোর ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। পরে বলসোনারো ব্রিকসকে নিজের আশ্রয় হিসেবে খুঁজে নেন। একইভাবে ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে রাশিয়া যখন পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত, তখন দেশটির জন্য সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা হলো ব্রিকস। ব্রিকসের সর্বশেষ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে ব্রিকসে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে দ্য ইকোনমিস্টের তরফ থেকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, জোটের উদ্দেশ্য কী? জবাবে রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আরও বন্ধু বাড়ানো।’
রাশিয়ার মতো চীনেরও অবস্থান একই। বেইজিংও চায় জোট সম্প্রসারিত হোক। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র এবং এর পশ্চিমা মিত্ররা যেভাবে চীনের সঙ্গে আচরণ করছে তাতে ব্রিকসের মাধ্যমে নতুন ‘বন্ধু’ বাড়ানোর প্রচেষ্টা অমূলক নয়। কারণ, চীনের দৃষ্টি থেকে বিবেচনা করলে পশ্চিমা বিশ্বের বিপরীতে একটি পাল্টা জোট হয়ে ওঠার যতটা সম্ভাবনা রয়েছে অন্য জোট—সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা, জি-২০-এর সে রকম সম্ভাবনা নেই। কারণ, সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা অনেকটাই ইউরেশিয়া চরিত্রের এবং জি-২০ জোটেও পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর প্রাধান্য। তাই পশ্চিমা বিশ্বের ‘ক্ষুদ্র বৃত্তের’ বিপরীতে ব্রিকসকে একটি ‘বড় পরিবারে’ পরিণত করতেই আগ্রহ বেশি।
চীন যে এই প্রথম সদস্য বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে তা কিন্তু নয়। এর আগে, বেইজিংই দক্ষিণ আফ্রিকাকে জোটের নেওয়ার উকালতি করেছিল। এখন ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থায় বেইজিং আবারও জোটে সদস্য বাড়ানোর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। যদিও জোটে সদস্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে সবারই ঐকমত্য জরুরি তারপরও চীনের প্রভাব উপেক্ষা করা অনেকটাই কঠিন। কারণ ব্রিকসের মোট উৎপাদনের প্রায় ৭০ শতাংশ একাই করে থাকে চীন। যার বড় ভোক্তা আবার বাকি চার দেশ।
জোটটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোন দেশগুলো সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করেছে তার তালিকা প্রকাশ করেনি। তবে দ্য ইকোনমিস্ট বিভিন্ন শর্ত মিলিয়ে হিসেবে করে দেখেছে যে ১৮টি দেশ সম্ভবত ব্রিকসের সদস্য হতে চায়। এই তালিকায় বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক প্রভাবশালী দেশ রয়েছে। এসব দেশের মধ্যে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত উল্লেখযোগ্য। ব্রিকসে জোট দেওয়ার মাধ্যমে দেশ দুটি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার পাশাপাশি তাদের দীর্ঘদিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক নতুন করে ঝালিয়ে নিতে চায়।
বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়ার মতো জনবহুল এবং এত দিন জোট নিরপেক্ষ বলে পরিচিত দেশও জোটের সদস্য হতে চায়। তাদের উদ্দেশ্য হলো পশ্চিমা মানদণ্ডের মানবাধিকারের যে সমালোচনা তা থেকে আশ্রয় খুঁজে পাওয়া। এর বাইরে আর্জেন্টিনা, ইথিওপিয়া, মেক্সিকো ও নাইজেরিয়ার মতো জনবহুল দেশগুলোও জোটের সদস্য হওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। শেষ পর্যন্ত যদি এই ১৮টি দেশই জোটের সদস্য হয়ে যায়, তবে হয়তো জোটটি নতুন নাম নেবে। এ ছাড়া জোটটি বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল জোটে পরিণত হবে এবং জোটের মোট জিডিপির পরিমাণ হবে বিশ্বের মোট জিডিপির ৩৪ শতাংশ।
জোটকে কার্যকরী করতে ব্রিকস দেশগুলো শিক্ষা, গবেষণা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, মন্ত্রী, থিংক ট্যাংক এমনকি ক্ষমতাসীন দলগুলোর প্রতিনিধি পর্যায়ের সম্মেলনও আয়োজন করছে নিয়মিত। কিছুদিন আগেই দক্ষিণ আফ্রিকায় হয়ে গেল ব্রিকস ইয়ুথ সামিট। রাশিয়া এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে তাঁরা আগামী বছর প্যারিস অলিম্পিকের আগেই ব্রিকস গেমসের আয়োজন করবে। এই যে আন্তদেশীয় সফট টুলসের ব্যবহার এগুলো জোটের স্থায়ীত্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। এ বিষয়ে ব্রাজিলীয় থিংক ট্যাংক গুতলিও ভার্গাস ফাউন্ডেশনের ফেলো অলিভার স্টুয়েঙ্কেল বলেন, ‘এসব বৈঠক চরিত্রগত দিক থেকে খুব নিরামিষ হলেও এগুলো কূটনীতিবিদদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক বাড়ানোর সুযোগ করে দেয়।’
জোটের টিকে থাকার ক্ষেত্রে আরও বড় একটি রক্ষাকবচ হলো দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। যেগুলো রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, মিনি বিশ্বব্যাংক এবং মিনি আইএমএফ। সদস্য দেশগুলোকে সহজশর্তে ঋণ দেওয়ার জন্য গঠিত হয়েছে কন্টিনজেন্ট রিজার্ভ অ্যারাঞ্জমেন্ট বা সিআরএ—যা মিনি আইএমএফ নামে পরিচিত। সহজশর্তে উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণ দেওয়ার জন্য গঠিত হয়েছে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা এনডিবি। ২০১৫ সালে গঠনের পর থেকে মিনি বিশ্বব্যাংক বা এনডিবি ৩৩ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ঋণ দিয়েছে। তবে বিশ্বব্যাংকের তুলনায় ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এনডিবি এখনো অনেক পিছিয়ে। এ ছাড়া এনডিবির কার্যক্রমের স্বচ্ছতা এবং অন্যান্য বিষয়ে দক্ষতা এখনো বিশ্ব ব্যাংকের তুলনায় কম। বিষয়টি আমলে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড্যানিয়েল ব্র্যাডলো বলেন, বিশ্বব্যাংক এনডিবির তুলনায় এখনো অনেক বেশি স্বচ্ছ এবং দায়বদ্ধ।
অনেক সীমাবদ্ধতার পরও টিকে থাকার চেষ্টায় ব্রিকস অনেকটাই সফল। তবে জোটটির ভবিষ্যৎ কোন পথে যাবে, তা অনেকগুলো শর্তের ওপর নির্ভর করে। বিশেষ করে ভারত-চীন সম্পর্ক, ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক, ভারত ও ব্রাজিলের সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্ক ইত্যাদি সমীকরণ মেলানোর পর বোঝা যাবে আসলে জোটের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাবে। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে দুর্বলতা থাকলেও তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকটাই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বিশেষ করে জোট সম্প্রসারণ এবং নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ার বিষয়ে। এ বিষয়ে জোটের দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি পরিষ্কার না হলেও এ বিষয়ে যে নজর রয়েছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, তিনটি মহাদেশের কোটি কোটি মানুষের প্রতিনিধি করা ব্রিকসের দেশগুলোর একটি বিষয়ে মিল রয়েছে, আর তা হলো, ধনী পশ্চিমাশক্তির হয়ে কাজ করা বিশ্বব্যবস্থার প্রতি অনীহা।
এ বিষয়ে এশিয়া ও ব্রিকসবিষয়ক দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ অনিল সুকলাল গত শুক্রবার এএফপিকে বলেন, এই জোটে যোগ দেওয়ার জন্য আগ্রহ বাড়ছে কোনো কোনো দেশের। এর অন্যতম কারণ, মেরুকৃত বিশ্বের আরও মেরুকরণ হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে। তাই দেশগুলোকে বাধ্য হয়ে কোনো পক্ষে যেতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘দক্ষিণের দেশগুলো কাকে সমর্থন করবে, কীভাবে আচরণ করবে এবং কীভাবে তাদের সার্বভৌম বিষয়গুলো পরিচালনা করবে, তা বলতে চায় না। তারা এখন তাদের নিজ নিজ অবস্থান জাহির করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী।’ ফলে ‘বিশ্বকাঠামো’ পুনর্গঠন করতে চাওয়া দেশগুলোর জন্য ব্রিকস আশা জাগিয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে।
লিম্পোপো বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রভাষক লেবোগং লেগোডি এই বিষয়ে একমত যে বর্তমান বিশ্বে কর্তৃত্বের বিকল্প হিসেবে অনেক দেশই এখন ব্রিকসে যোগদানে আগ্রহ দেখাচ্ছে। কিন্তু ব্রিকসের প্রতি নজর রাখা বিশ্লেষকেরা এই সম্মেলনের ফলাফল নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী নন। কেননা, বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ক্ষমতা এখনো পশ্চিমা দেশগুলোর হাতেই রয়েছে এবং চীন এখনো প্রভাবশালী শক্তি হয়ে ওঠেনি।
সব মিলিয়ে জোহানেসবার্গে চলমান ব্রিকস সম্মেলন জোটকে নতুন করে ‘সংজ্ঞায়িত’ করার মুহূর্ত। কারণ, জোটের সম্প্রসারণ একই সঙ্গে এতে চীনের প্রভাবকে বৃদ্ধি করবে এবং একই সঙ্গে জোটের পশ্চিমাবিরোধী মনোভাব বাড়বে, যা রাশিয়াকেও প্রকারান্তে সুবিধা দেবে। এতে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়া নিয়ে যে আলোচনা চলমান তার পালে হাওয়া লাগবে।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, এএফপি, দ্য ইকোনমিস্ট এবং বিবিসি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

সব মিলিয়ে জোহানেসবার্গে চলমান ব্রিকস সম্মেলন জোটকে নতুন করে ‘সংজ্ঞায়িত’ করার মুহূর্ত। কারণ, জোটের সম্প্রসারণ একই সঙ্গে এতে চীনের প্রভাবকে বৃদ্ধি করবে এবং একই সঙ্গে জোটের পশ্চিমাবিরোধী মনোভাব বাড়বে, যা রাশিয়াকেও প্রকারান্তে সুবিধা দেবে। এতে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়া নিয়ে যে আলোচনা চলমান, তার পালে হাওয়া
২৩ আগস্ট ২০২৩
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

সব মিলিয়ে জোহানেসবার্গে চলমান ব্রিকস সম্মেলন জোটকে নতুন করে ‘সংজ্ঞায়িত’ করার মুহূর্ত। কারণ, জোটের সম্প্রসারণ একই সঙ্গে এতে চীনের প্রভাবকে বৃদ্ধি করবে এবং একই সঙ্গে জোটের পশ্চিমাবিরোধী মনোভাব বাড়বে, যা রাশিয়াকেও প্রকারান্তে সুবিধা দেবে। এতে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়া নিয়ে যে আলোচনা চলমান, তার পালে হাওয়া
২৩ আগস্ট ২০২৩
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

সব মিলিয়ে জোহানেসবার্গে চলমান ব্রিকস সম্মেলন জোটকে নতুন করে ‘সংজ্ঞায়িত’ করার মুহূর্ত। কারণ, জোটের সম্প্রসারণ একই সঙ্গে এতে চীনের প্রভাবকে বৃদ্ধি করবে এবং একই সঙ্গে জোটের পশ্চিমাবিরোধী মনোভাব বাড়বে, যা রাশিয়াকেও প্রকারান্তে সুবিধা দেবে। এতে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়া নিয়ে যে আলোচনা চলমান, তার পালে হাওয়া
২৩ আগস্ট ২০২৩
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সব মিলিয়ে জোহানেসবার্গে চলমান ব্রিকস সম্মেলন জোটকে নতুন করে ‘সংজ্ঞায়িত’ করার মুহূর্ত। কারণ, জোটের সম্প্রসারণ একই সঙ্গে এতে চীনের প্রভাবকে বৃদ্ধি করবে এবং একই সঙ্গে জোটের পশ্চিমাবিরোধী মনোভাব বাড়বে, যা রাশিয়াকেও প্রকারান্তে সুবিধা দেবে। এতে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়া নিয়ে যে আলোচনা চলমান, তার পালে হাওয়া
২৩ আগস্ট ২০২৩
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে