আজকের পত্রিকা ডেস্ক

উফা আলী। ৬৭ বছর বয়সী এই ভারতীয় মুসলিমকে গত মে মাসের শেষ নাগাদ বাংলাদেশে পুশইন করা হয়। এরপর, দুঃসহ চার-চারটি দিন বাংলাদেশে কাটিয়ে ৩১ মে ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্য আসামে নিজ বাড়িতে ফেরেন। উফা আলী স্মরণ করেন, তিনি জন্ম থেকে দেখে আসছেন, বাংলাদেশ শব্দটি আসামে স্থানীয়দের কাছে ‘গালির মতো’।
উফার সপ্তাহব্যাপী দুর্ভোগের শুরু গত ২৩ মে। সেদিন আসামের মরিগাঁও জেলার কুইয়াদল নামের ছোট্ট গ্রামের ভাড়া বাড়ি থেকে তাঁকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। আসামে ‘ঘোষিত বিদেশি নাগরিক’ বলে যে ক্যাটাগরি রয়েছে, তার আওতায় এই ধরপাকড় চালায় সরকার। আসাম ভারতের চা উৎপাদনের অন্যতম কেন্দ্র। এখানকার আদিবাসী—মূলত অহমিয়াদের সঙ্গে প্রতিবেশী অঞ্চল থেকে আসা বাংলাভাষীদের বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। এই বাংলাভাষীরা শত বছরের বেশি সময় আগে থেকে এই এলাকায় বসতি গড়েছেন।
২০১৬ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) প্রথমবার আসামের ক্ষমতায় আসার পর এই বিরোধ আরও বেড়ে গেছে। আসামে ভারতের যেকোনো রাজ্যের তুলনায় মুসলিম জনসংখ্যার হার সবচেয়ে বেশি। ৩ কোটি ১০ লাখ বাসিন্দার রাজ্যটিতে মুসলমান মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের বেশি।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার ভাষ্য অনুযায়ী, গত মে থেকে উফা আলীর মতো ৩ শতাধিক মুসলমানকে বাংলাদেশে ‘পুশইন’ করা হয়েছে। শর্মা রাজ্য বিধানসভায় বলেন, ‘এই পুশইন আরও জোরদার করা হবে। রাজ্যকে বাঁচাতে আমাদের আরও সক্রিয় হতে হবে।’
গত ২৩ মে উফাকে আটকের পর নিয়ে যাওয়া হয় আসামের গোয়ালপাড়া জেলার মাটিয়ায় অবস্থিত ভারতের সবচেয়ে বড় ‘অবৈধ অভিবাসী’ আটক কেন্দ্রে। তিন দিন পর, ২৭ মে ভোরের দিকে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের সদস্যরা পাঁচ নারী এবং উফা আলীসহ মোট ১৪ জনকে একটি ভ্যানে করে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়ে যায়।
আল-জাজিরাকে উফা আলী বলেন, ‘বিএসএফ আমাদের জোর করে ওপারে পাঠানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বিজিবি এবং স্থানীয়রা স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, তারা আমাদের নেবে না। কারণ, আমরা ভারতীয়।’ উভয় দেশের মাঝখানে ‘নো-ম্যানস ল্যান্ডে’ খোলা মাঠে আটকে পড়েন তাঁরা। কোনো খাবার ও আশ্রয় ছাড়াই ১২ ঘণ্টা হাঁটুসমান পানিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
উফা বলেন, ‘সেদিন নীল আকাশের নিচে আমরা নরক দেখেছি। চোখের সামনেই জীবন ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে আসছিল।’ তিনি জানান, ভারতের দিকে ফেরার চেষ্টা করলে বিএসএফ সদস্যরা হামলার হুমকি দেয়। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অনুরোধ করছিলাম, যেন আমাদের বাংলাদেশের দিকে জোর করে পাঠানো না হয়। কিন্তু তারা আমাদের ওপর রাবার বুলেট ছোড়ে। ওই নো-ম্যানস ল্যান্ড আমাদের কাছে যেন কোনো দেশেরই অংশ ছিল না। মনে হচ্ছিল আমাদের জন্য কোনো দেশ নেই।’
একইভাবে আসামের পূর্বাঞ্চলীয় গোলাঘাট জেলা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া ৫০ বছর বয়সী রহিমা বেগম বলেন, তিনিও ‘নো-ম্যানস ল্যান্ডের’ বিভীষিকার স্মৃতি ভুলতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের দিকে পালানোর চেষ্টা করলে বিজিবি আমাকে হুমকি ধামকি দেয়। আমার সামনে কোনো রাস্তা ছিল না। বিএসএফ আমাকে হুমকি দেয়, যদি আমি ওপারে না যাই, তারা আমাকে গুলি করে মেরে ফেলবে।’

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রামের রৌমারীর সাংবাদিক যতেন চন্দ্র দাস আল-জাজিরাকে বলেন, তিনি নিজ চোখে দেখেছেন বিএসএফ সদস্যরা ‘ভারতীয় নাগরিকদের’ লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছুড়েছে। তিনি আরও জানান, পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে বিএসএফ সদস্যরা চার রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। ২৭ মে এক বিবৃতিতে বিএসএফ এই অভিযোগ অস্বীকার করে। তারা দাবি করে, শুধু অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করা লোকদের থামানোর চেষ্টা করেছে তারা।
অবশেষে, বাংলাদেশের স্থানীয় লোকজন এবং বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে উফা আলীকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের এক সীমান্ত পয়েন্টে নিয়ে রেখে আসে বিজিবির সদস্যরা। সেখান থেকে তিনি ১০ ঘণ্টার দীর্ঘ পথ পেরিয়ে বন-জঙ্গল ঘুরে নিজ বাড়িতে ফিরে যান।
গত ৩১ মে আসামের সংবাদপত্র ‘দ্য সেনটিনেল’ এক প্রতিবেদনে জানায়, বিজিবি ৬৫ ভারতীয় নাগরিককে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করেছে। বাংলাদেশে পুশইন করা কয়েকজন মুসলমান আল-জাজিরাকে জানান, তাঁদের মধ্যে অন্তত ১০০ জন নিজেরাই ফিরে এসেছেন। যদিও এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে বেশির ভাগ প্রত্যাবর্তনকারী জানান, সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের দিকে ঢোকার পর ‘সাদা পোশাকের লোকেরা’ তাঁদের নিয়ে হাইওয়েতে ফেলে রেখে চলে যায়।
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর দেশটিতে নতুন করে মুসলিমবিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকেই ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ বিতাড়নের অভিযান আরও জোরালো হয়। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দি বিভাগের অধ্যাপক অপূর্বানন্দ আল-জাজিরাকে বলেন, ‘পেহেলগাম হামলাকে বিজেপি (যারা কেন্দ্র এবং আসাম রাজ্য দুই জায়গাতেই ক্ষমতায়) অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে। তারা রোহিঙ্গা এবং বাংলাভাষী মুসলিমদের মতো দুর্বল জনগোষ্ঠীকে বিতাড়নের সুযোগ হিসেবে এই ঘটনাকে কাজে লাগাচ্ছে।’ অপূর্বানন্দ বলেন, ‘বিজেপি শাসিত ভারতে মুসলিম পরিচয়কে যেকোনোভাবে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। সরকার বাংলাভাষী মুসলিমদের অবৈধ বাংলাদেশি বলেই ধরে নেয়।’
আসামের বিরোধী দল ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, এই বিতাড়নের পুরো প্রক্রিয়াই মূলত মুসলিমদের লক্ষ্য করে করা হচ্ছে। আসাম কংগ্রেসের নেতা দেবব্রত শইকিয়া আল-জাজিরাকে বলেন, ‘মাটিয়া ডিটেনশন সেন্টার থেকে শুধু মুসলিমদেরই বেছে বেছে বের করে দেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে বিজেপির মুখপাত্র মনোজ বরা দাবি করেন, এই পুরো প্রক্রিয়া ধর্মীয় পরিচয়ের ওপর নির্ভরশীল নয়। তিনি বলেন, ‘অবৈধ হিন্দুদের বাংলাদেশে পাঠানো হয়নি। কারণ, তারা সেখানে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হতে পারেন, যেহেতু বাংলাদেশ একটি মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ।’
আসামে জাতিগত ও ধর্মীয় বিভাজন বহু দশকের পুরোনো, যার শিকড় ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনামলে প্রোথিত। উনিশ শতকে ব্রিটিশরা আসামের পাহাড়ি অঞ্চলে ব্যাপকভাবে চা বাগান গড়ে তোলে। এতে বাংলাভাষী শ্রমিকদের—যাদের মধ্যে মুসলিম ও হিন্দু দুই ধর্মের মানুষই ছিলেন—ব্যাপক হারে সেখানে নিয়ে আসা হয়। এদের বড় অংশ আসে বর্তমান বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে।
বর্তমানে মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে, যার মধ্যে আসামের সঙ্গে ২৬০ কিলোমিটার। আসাম সরকার স্থির করেছে, ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ—বাংলাদেশ স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার আগের দিন—এর আগে যারা আসামে এসেছেন, শুধু তাঁরাই ভারতের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন।

এ সংক্রান্ত নাগরিকত্বের মামলাগুলোর বিচার হয় আসামের বিশেষ ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে। এই ট্রাইব্যুনালগুলো একধরনের বিশেষ আদালত। খুব সামান্য বানান ভুল বা কাগজপত্রের অসংগতির ভিত্তিতে কাউকে ‘বিদেশি’ ঘোষণা করে এসব আদালত। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ২০১৯ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামের ট্রাইব্যুনালগুলো পক্ষপাতদুষ্ট এবং স্বেচ্ছাচারিতায় ভরা।
ওই বছরেই আসামে নাগরিক তালিকার (এনআরসি) চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হয়, যা ‘অবৈধ’ বাসিন্দাদের শনাক্ত করতে সরকারের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার ফসল। চূড়ান্ত তালিকা থেকে প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দার নাম বাদ পড়ে, যাদের মধ্যে ৭ লাখের বেশি মুসলিম। এই তালিকা প্রকাশের পর বহু মুসলিমকে ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো হয় এবং তাদের জোরপূর্বক বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
আলী নামের এক ব্যক্তির নাম এনআরসিতে থাকলেও ২০১৩ সালে মরিগাঁও জেলার একটি ট্রাইব্যুনাল তাঁকে ‘বিদেশি’ ঘোষণা করে। তাঁর বাবার নাম কখনও ‘সামত আলী’, কখনও ‘চামত আলী’ বা ‘চাহমত আলী’ হিসেবে সরকারি কাগজে উল্লেখ থাকায় তাঁকে নাগরিকত্ব হারাতে হয়। আলী দুই বছর ডিটেনশন সেন্টারে ছিলেন। ২০১৪ সালে রাজ্যের হাইকোর্টও ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে। আলী জানান, তিনি এতটাই দরিদ্র যে, সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার সামর্থ্য নেই।
অনেক মুসলিম—যাদের বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে—বলছেন, তাঁদের নাগরিকত্বের মামলাগুলো এখনো আদালতে বিচারাধীন। তাই সরকার যেভাবে তাঁদের তাড়িয়ে দিচ্ছে, তা বেআইনি ও স্বেচ্ছাচারিতা। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা স্বীকার করেছেন, যাদের মামলা এখনো আদালতে বিচারাধীন, তাদের মধ্যে কাউকে কাউকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে কূটনৈতিক আলাপের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
এরকমই একজন, বারপেতা জেলার বুড়িখামার গ্রামের বাসিন্দা ৫৯ বছর বয়সী সোনা বানু। গত ২৭ মে তাঁকে বাংলাদেশ সীমান্তে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘আমি কখনো কল্পনাও করিনি, যে দেশে আমি জন্মেছি, যেখানে আমার বাবা-মা আর দাদা-দাদির জন্ম হয়েছে, সেই দেশই আমাকে বাংলাদেশ সীমান্তে পাঠাবে। তারা আমাকে বাংলাদেশি বানিয়ে দিল। অথচ জীবনে প্রথম এবং শেষবার বাংলাদেশ দেখেছি যখন সেটা মাত্র ১০ মিটার দূরে ছিল, নো-ম্যানস ল্যান্ডের ওপারে।’
মরিগাঁও জেলার মিকিরভিটা গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক খায়রুল ইসলাম বলেন, তাঁকে বাংলাদেশে জোর করে পাঠানো ছিল ‘মৃত্যুদণ্ডের মতো’। ২০১৬ সালে খাইরুল ইসলামকে ‘বিদেশি’ বলে ঘোষণা করা হয়, যদিও তাঁর পরিবার ব্রিটিশ আমলের জমির দলিলসহ নানা প্রমাণপত্র আদালতে জমা দিয়েছিল। তিনি এখন সুপ্রিম কোর্টে ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা চালাচ্ছেন।
খাইরুল ইসলাম বলেন, নো-ম্যানস ল্যান্ডে কাটানো সময় তাঁর মনে গভীর ক্ষত তৈরি করেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের শরণার্থীদের থেকেও খারাপ অবস্থায় রাখা হয়েছিল। আমাদের কষ্ট-যন্ত্রণা যেন সবার সামনে উন্মুক্ত ছিল। আমরা ভারতের কাছে বিদেশি, বাংলাদেশের কাছেও বিদেশি।’
নিজাম আহমেদ (৫০) ভারতের সরকারি নথি অনুযায়ী বিদেশি নন। গোলাঘাটের জামুগুড়ি চা-বাগান এলাকার এই ট্রাকচালকের নাম রয়েছে আসামের জাতীয় নাগরিক তালিকায়। তবুও তাঁকে বাংলাদেশ সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে ফেলে আসা হয়। নিজামের ছেলে জাহিদ জানান, বাবাকে আটকের বিষয়টি তিনি জানতে পারেন, যখন বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে তাঁর বাবাকে দেখা যাওয়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়।
জাহিদ বলেন, ‘আমরা ভারতীয়। আমার দাদু ছিলেন সেকেন্ড আসাম পুলিশ ব্যাটালিয়নে।’ আল-জাজিরা তাঁর এই দাবি নিশ্চিত করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিজামের বাবা সেলিম উদ্দিন আহমেদ ১৯৬০ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আসাম রাজ্য পুলিশে চাকরি করেছেন। জাহিদ বলেন, ‘আমার দাদু বেঁচে থাকলে এটা তাঁর জন্য সবচেয়ে বড় আঘাত হতো। একজন পুলিশ সদস্যের ছেলেকে বাংলাদেশ সীমান্তে ফেলে আসা হলো!’
সম্প্রতি ভারতে বিজেপি শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে কথিত ‘অবৈধ’ বাংলাদেশিদের বের করে দেওয়ার অভিযান আরও জোরদার হয়েছে। গুজরাটের প্রধান শহর আহমেদাবাদের পুলিশ জানিয়েছে, তারা অন্তত ২৫০ জন ‘বাংলাদেশিকে’ চিহ্নিত করেছে, যারা নাকি অবৈধভাবে সেখানে বসবাস করছিলেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে পুলিশ কর্মকর্তা অজিত রাজিয়ান বলেছেন, ‘তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।’
ভারতের সবচেয়ে ধনী রাজ্য মহারাষ্ট্রেও গত মাসে ৭ মুসলিমকে ‘বিদেশি’ সন্দেহে আটক করে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে তুলে দেওয়া হয় এবং তাদের বাংলাদেশে পাঠানোর চেষ্টা হয়। তবে ১৫ জুন ওই সাতজনকে আবার সীমান্ত থেকে ফিরিয়ে আনা হয়। কারণ তাঁরা পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা বলে জানায় রাজ্য সরকার। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের (এআইটিসি) বিধায়ক এবং পশ্চিমবঙ্গ মাইগ্র্যান্ট ওয়েলফেয়ার বোর্ডের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম।
সামিরুল ইসলাম বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ও রাজ্য প্রশাসন মহারাষ্ট্র পুলিশকে জানিয়েছিল, এরা সবাই পশ্চিমবঙ্গের ভারতীয় নাগরিক। কিন্তু রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে তাদের বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হয়।’ এ বিষয়ে ১৬ জুন কলকাতায় এক সংবাদ সম্মেলনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘শুধু বাংলা বলার কারণে তাদের বাংলাদেশি বলা হলো এবং বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হলো।’
আল-জাজিরার সঙ্গে কথা বলা ওই সাতজনের মধ্যে তিনজন জানান, তাঁরা মহারাষ্ট্র পুলিশের হেফাজতে থাকার সময় তাদের পরিবার এবং পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসন ভারতীয় নাগরিকত্বের যাবতীয় প্রমাণাদি জমা দিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বাসিন্দা মিরানুল শেখ এবং নিজামউদ্দিন শেখকেও সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে দেখা গেছে। এর ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
৩২ বছর বয়সী মিরানুল শেখ আল-জাজিরাকে বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি আমরা মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা, কিন্তু বিএসএফ আমাদের মারধর করেছে। আমাদের বলা হয়েছে, ফিরলে গুলি করব।’ এ বিষয়ে আল-জাজিরা ১৯ জুন বিএসএফকে ই-মেইল করে তাদের বক্তব্য জানতে চাইলেও তারা এখনো সাড়া দেয়নি।
আসামে পুলিশের অভিযানে গত ২৫ মে গোলাঘাট জেলার নওজান গ্রাম থেকে আব্দুল হানিফ নামের এক বাংলাভাষী মুসলিমকে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়া হয়। কোনো কারণও দেখায়নি পুলিশ। হানিফের বড় ভাই দ্বীন ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ বলেছিল, দুদিন পর ছেড়ে দেবে।’
আসামের চা-বাগান অধ্যুষিত এলাকায় বাংলাভাষী মুসলিমদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই সন্দেহ ও বিদ্বেষ রয়েছে। পুলিশের ভাষ্য, এটি ছিল ‘রুটিন ভেরিফিকেশন’। কিন্তু এরপর থেকেই হানিফকে মরিয়া হয়ে খোঁজে তাঁর পরিবার। দ্বীন ইসলাম বলেন, ‘আমরা এক থানার পর আরেক থানায় গিয়েছি, খুঁজেছি। কিন্তু পুলিশ কিছু বলছে না।’
দ্বীন দাবি করেন, হানিফকে শেষবার গোলাঘাটের পুলিশ সুপার রাজেন সিংহের অফিসে দেখা যায়। পরে যাদের বাংলাদেশ সীমান্তে পাঠানো হয়, তাদের সঙ্গেই ছিলেন হানিফ। তাঁর ভাষ্য, ‘হানিফ কোনোভাবেই বিদেশি নন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ট্রাইব্যুনালে মামলা নেই। শুধু “মিঞা” বলে সন্দেহের বশে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’

‘মিঞা’ শব্দটি আসামের আদিবাসী অহমিয়াদের মধ্যে বাংলাভাষী মুসলিমদের ‘অবজ্ঞা সূচকভাবে বাংলাদেশি’ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। হানিফের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার রাজেন সিংহ আল-জাজিরাকে বলেন, ‘এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যায় না।’
এক স্থানীয় বাসিন্দাকেও হানিফের সঙ্গে পুলিশ সুপারের অফিসে নেওয়া হয় এবং পরে তাঁকেও সীমান্তে নেওয়া হয়। তিনি জানান, তাঁদের দলকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। সম্ভবত হানিফকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়েছে। ওই ব্যক্তি বলেন, ‘রাতারাতি লোকজন উধাও হয়ে যাচ্ছে। হানিফও হয়তো অনেকের মতো বাংলাদেশে হারিয়ে গেছে।’
আল-জাজিরা স্বাধীনভাবে নিশ্চিত করেছে, গত মাসে যাদের নো-ম্যানস ল্যান্ডে পাঠানো হয়েছে, তাদের মধ্যে অন্তত ১০ জনের এখনো কোনো খোঁজ নেই। আসামে নিখোঁজ হওয়া সদস্যদের সন্ধান দাবিতে অন্তত চারটি পরিবার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। আসাম হাইকোর্টে তাঁরা পিটিশন দায়ের করেছেন। নিখোঁজদের মধ্যে অন্তত দুটি পরিবার রাজ্য সরকারের স্বীকৃত ‘দেশি’ মুসলিম সম্প্রদায়ের। এই সম্প্রদায়কে আসামের আদিবাসী মুসলিম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
নিখোঁজ সামসুল আলীর ছেলে বক্কর আলী বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম, আমরা আদিবাসী মুসলিম, তাই নিরাপদ। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, এখানে কোনো মুসলিম-ই নিরাপদ নয়।’ বক্কর আলীর দাবি, তাঁর বাবা এখন বাংলাদেশে পুলিশের হেফাজতে। বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার জেল সুপার আমিরুল ইসলাম আল-জাজিরাকে ১৬ জুন জানিয়েছেন, আরেক দেশি (ভারতীয়) মুসলিম, দইজান বিবিও বাংলাদেশ পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মুখপাত্র ফয়সাল মাহমুদ আল-জাজিরাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার কূটনৈতিকভাবে ভারতকে জানিয়েছে যে, বিএসএফ যেভাবে বাংলাদেশ সীমান্তে মানুষকে ঠেলে পাঠাচ্ছে, তা কোনো আইনি প্রক্রিয়া মেনে করা হচ্ছে না।’ এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও আল-জাজিরা কোনো সাড়া পায়নি।
উত্তর-পূর্ব ভারত বিশ্লেষক এবং সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও লন্ডনের কিংস কলেজ লন্ডনের যৌথ গবেষণা সহকারী অংশুমান চৌধুরী আল-জাজিরাকে বলেন, ‘আসামের সরকার যেটাকে পুশব্যাক বলছে, সেটা আদতে জোরপূর্বক বহিষ্কার।’ তিনি বলেন, ‘পুশব্যাকের মানে হলো, কোনো অভিবাসী অবৈধভাবে সীমান্তে ঢোকার চেষ্টা করলে তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া। কিন্তু এই ক্ষেত্রে সরকার নিজেই লোকজনকে ধরে নিয়ে আরেক দেশে ফেলে দিচ্ছে।’

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সরকারের এই পদক্ষেপের জন্য ১৯৫০ সালের এক আইন দেখাচ্ছেন। ওই আইনে জেলা প্রশাসকদের নির্দিষ্ট কিছু অবৈধ অভিবাসীকে বহিষ্কারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আসামের হাইকোর্টের আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী ওয়ালিউল্লাহ লস্কর বলেন, ‘এই আইন শুধু তাদের জন্য, যারা অবৈধভাবে ভারতে ঢুকেছে বা ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও থাকছে। এটা কোনোভাবেই তাদের জন্য নয়, যারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আসামে বসবাস করছে এবং যাদের হাতে রাজ্য সরকারের দেওয়া নাগরিকত্বের নথি আছে।’
আরেক স্থানীয় আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্টে ‘ঘোষিত বিদেশি’ বন্দীদের বিষয়ে শুনানির সময় আসাম সরকার নিজেই বলেছে, যাদের বাংলাদেশে কোনো ঠিকানা জানা নেই, তাদের ফেরত পাঠানো যাবে না। সরকার হলফনামায় উল্লেখ করেছে, ‘বিদেশি দেশটির পক্ষ থেকে জাতীয়তা যাচাই এবং ভ্রমণের অনুমতি না পেলে, এই বন্দীদের ফেরত পাঠানো যাবে না।’
গত বছর আসাম সরকার পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিল, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে রাজ্যে আসা অমুসলিম, বিশেষ করে হিন্দুদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা ট্রাইব্যুনালে না পাঠানোর জন্য। ভারতের বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে যাঁরা ওই সময়ের মধ্যে ভারতে এসেছেন, তাঁদের দ্রুত নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। তবে শুধু অমুসলিমদের জন্যই এই সুবিধা। এই আইন ভারতের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার লঙ্ঘন বলে দেশজুড়ে তীব্র বিক্ষোভ হয়েছিল। জাতিসংঘ এই আইনকে ‘মৌলিকভাবে বৈষম্যমূলক’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
ক্ষুব্ধ বক্কর আলী বলেন, ‘আমাদের জাতীয়তা প্রমাণ করতে ২০-৩০টা কাগজ দেখাতে হয়। অথচ বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দুদের শুধু বলতে হয় যে তারা হিন্দু, তাহলেই নাগরিকত্ব হয়ে যায়।’ গোলাঘাটে নিজের বাড়ির সামনে বসে থাকা ৫০ বছর বয়সী বেগম বলেন, বিএসএফ তাঁকেও ধরে নিয়ে গিয়েছিল। জন্মভূমির এমন আচরণে তিনি ভীষণ হতাশ। তিনি বলেন, ‘এই দেশ আমার, কিন্তু আমি এই দেশের না।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

উফা আলী। ৬৭ বছর বয়সী এই ভারতীয় মুসলিমকে গত মে মাসের শেষ নাগাদ বাংলাদেশে পুশইন করা হয়। এরপর, দুঃসহ চার-চারটি দিন বাংলাদেশে কাটিয়ে ৩১ মে ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্য আসামে নিজ বাড়িতে ফেরেন। উফা আলী স্মরণ করেন, তিনি জন্ম থেকে দেখে আসছেন, বাংলাদেশ শব্দটি আসামে স্থানীয়দের কাছে ‘গালির মতো’।
উফার সপ্তাহব্যাপী দুর্ভোগের শুরু গত ২৩ মে। সেদিন আসামের মরিগাঁও জেলার কুইয়াদল নামের ছোট্ট গ্রামের ভাড়া বাড়ি থেকে তাঁকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। আসামে ‘ঘোষিত বিদেশি নাগরিক’ বলে যে ক্যাটাগরি রয়েছে, তার আওতায় এই ধরপাকড় চালায় সরকার। আসাম ভারতের চা উৎপাদনের অন্যতম কেন্দ্র। এখানকার আদিবাসী—মূলত অহমিয়াদের সঙ্গে প্রতিবেশী অঞ্চল থেকে আসা বাংলাভাষীদের বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। এই বাংলাভাষীরা শত বছরের বেশি সময় আগে থেকে এই এলাকায় বসতি গড়েছেন।
২০১৬ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) প্রথমবার আসামের ক্ষমতায় আসার পর এই বিরোধ আরও বেড়ে গেছে। আসামে ভারতের যেকোনো রাজ্যের তুলনায় মুসলিম জনসংখ্যার হার সবচেয়ে বেশি। ৩ কোটি ১০ লাখ বাসিন্দার রাজ্যটিতে মুসলমান মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের বেশি।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার ভাষ্য অনুযায়ী, গত মে থেকে উফা আলীর মতো ৩ শতাধিক মুসলমানকে বাংলাদেশে ‘পুশইন’ করা হয়েছে। শর্মা রাজ্য বিধানসভায় বলেন, ‘এই পুশইন আরও জোরদার করা হবে। রাজ্যকে বাঁচাতে আমাদের আরও সক্রিয় হতে হবে।’
গত ২৩ মে উফাকে আটকের পর নিয়ে যাওয়া হয় আসামের গোয়ালপাড়া জেলার মাটিয়ায় অবস্থিত ভারতের সবচেয়ে বড় ‘অবৈধ অভিবাসী’ আটক কেন্দ্রে। তিন দিন পর, ২৭ মে ভোরের দিকে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের সদস্যরা পাঁচ নারী এবং উফা আলীসহ মোট ১৪ জনকে একটি ভ্যানে করে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়ে যায়।
আল-জাজিরাকে উফা আলী বলেন, ‘বিএসএফ আমাদের জোর করে ওপারে পাঠানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বিজিবি এবং স্থানীয়রা স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, তারা আমাদের নেবে না। কারণ, আমরা ভারতীয়।’ উভয় দেশের মাঝখানে ‘নো-ম্যানস ল্যান্ডে’ খোলা মাঠে আটকে পড়েন তাঁরা। কোনো খাবার ও আশ্রয় ছাড়াই ১২ ঘণ্টা হাঁটুসমান পানিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
উফা বলেন, ‘সেদিন নীল আকাশের নিচে আমরা নরক দেখেছি। চোখের সামনেই জীবন ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে আসছিল।’ তিনি জানান, ভারতের দিকে ফেরার চেষ্টা করলে বিএসএফ সদস্যরা হামলার হুমকি দেয়। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অনুরোধ করছিলাম, যেন আমাদের বাংলাদেশের দিকে জোর করে পাঠানো না হয়। কিন্তু তারা আমাদের ওপর রাবার বুলেট ছোড়ে। ওই নো-ম্যানস ল্যান্ড আমাদের কাছে যেন কোনো দেশেরই অংশ ছিল না। মনে হচ্ছিল আমাদের জন্য কোনো দেশ নেই।’
একইভাবে আসামের পূর্বাঞ্চলীয় গোলাঘাট জেলা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া ৫০ বছর বয়সী রহিমা বেগম বলেন, তিনিও ‘নো-ম্যানস ল্যান্ডের’ বিভীষিকার স্মৃতি ভুলতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের দিকে পালানোর চেষ্টা করলে বিজিবি আমাকে হুমকি ধামকি দেয়। আমার সামনে কোনো রাস্তা ছিল না। বিএসএফ আমাকে হুমকি দেয়, যদি আমি ওপারে না যাই, তারা আমাকে গুলি করে মেরে ফেলবে।’

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রামের রৌমারীর সাংবাদিক যতেন চন্দ্র দাস আল-জাজিরাকে বলেন, তিনি নিজ চোখে দেখেছেন বিএসএফ সদস্যরা ‘ভারতীয় নাগরিকদের’ লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছুড়েছে। তিনি আরও জানান, পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে বিএসএফ সদস্যরা চার রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। ২৭ মে এক বিবৃতিতে বিএসএফ এই অভিযোগ অস্বীকার করে। তারা দাবি করে, শুধু অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করা লোকদের থামানোর চেষ্টা করেছে তারা।
অবশেষে, বাংলাদেশের স্থানীয় লোকজন এবং বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে উফা আলীকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের এক সীমান্ত পয়েন্টে নিয়ে রেখে আসে বিজিবির সদস্যরা। সেখান থেকে তিনি ১০ ঘণ্টার দীর্ঘ পথ পেরিয়ে বন-জঙ্গল ঘুরে নিজ বাড়িতে ফিরে যান।
গত ৩১ মে আসামের সংবাদপত্র ‘দ্য সেনটিনেল’ এক প্রতিবেদনে জানায়, বিজিবি ৬৫ ভারতীয় নাগরিককে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করেছে। বাংলাদেশে পুশইন করা কয়েকজন মুসলমান আল-জাজিরাকে জানান, তাঁদের মধ্যে অন্তত ১০০ জন নিজেরাই ফিরে এসেছেন। যদিও এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে বেশির ভাগ প্রত্যাবর্তনকারী জানান, সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের দিকে ঢোকার পর ‘সাদা পোশাকের লোকেরা’ তাঁদের নিয়ে হাইওয়েতে ফেলে রেখে চলে যায়।
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর দেশটিতে নতুন করে মুসলিমবিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকেই ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ বিতাড়নের অভিযান আরও জোরালো হয়। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দি বিভাগের অধ্যাপক অপূর্বানন্দ আল-জাজিরাকে বলেন, ‘পেহেলগাম হামলাকে বিজেপি (যারা কেন্দ্র এবং আসাম রাজ্য দুই জায়গাতেই ক্ষমতায়) অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে। তারা রোহিঙ্গা এবং বাংলাভাষী মুসলিমদের মতো দুর্বল জনগোষ্ঠীকে বিতাড়নের সুযোগ হিসেবে এই ঘটনাকে কাজে লাগাচ্ছে।’ অপূর্বানন্দ বলেন, ‘বিজেপি শাসিত ভারতে মুসলিম পরিচয়কে যেকোনোভাবে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। সরকার বাংলাভাষী মুসলিমদের অবৈধ বাংলাদেশি বলেই ধরে নেয়।’
আসামের বিরোধী দল ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, এই বিতাড়নের পুরো প্রক্রিয়াই মূলত মুসলিমদের লক্ষ্য করে করা হচ্ছে। আসাম কংগ্রেসের নেতা দেবব্রত শইকিয়া আল-জাজিরাকে বলেন, ‘মাটিয়া ডিটেনশন সেন্টার থেকে শুধু মুসলিমদেরই বেছে বেছে বের করে দেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে বিজেপির মুখপাত্র মনোজ বরা দাবি করেন, এই পুরো প্রক্রিয়া ধর্মীয় পরিচয়ের ওপর নির্ভরশীল নয়। তিনি বলেন, ‘অবৈধ হিন্দুদের বাংলাদেশে পাঠানো হয়নি। কারণ, তারা সেখানে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হতে পারেন, যেহেতু বাংলাদেশ একটি মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ।’
আসামে জাতিগত ও ধর্মীয় বিভাজন বহু দশকের পুরোনো, যার শিকড় ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনামলে প্রোথিত। উনিশ শতকে ব্রিটিশরা আসামের পাহাড়ি অঞ্চলে ব্যাপকভাবে চা বাগান গড়ে তোলে। এতে বাংলাভাষী শ্রমিকদের—যাদের মধ্যে মুসলিম ও হিন্দু দুই ধর্মের মানুষই ছিলেন—ব্যাপক হারে সেখানে নিয়ে আসা হয়। এদের বড় অংশ আসে বর্তমান বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে।
বর্তমানে মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে, যার মধ্যে আসামের সঙ্গে ২৬০ কিলোমিটার। আসাম সরকার স্থির করেছে, ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ—বাংলাদেশ স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার আগের দিন—এর আগে যারা আসামে এসেছেন, শুধু তাঁরাই ভারতের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন।

এ সংক্রান্ত নাগরিকত্বের মামলাগুলোর বিচার হয় আসামের বিশেষ ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে। এই ট্রাইব্যুনালগুলো একধরনের বিশেষ আদালত। খুব সামান্য বানান ভুল বা কাগজপত্রের অসংগতির ভিত্তিতে কাউকে ‘বিদেশি’ ঘোষণা করে এসব আদালত। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ২০১৯ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামের ট্রাইব্যুনালগুলো পক্ষপাতদুষ্ট এবং স্বেচ্ছাচারিতায় ভরা।
ওই বছরেই আসামে নাগরিক তালিকার (এনআরসি) চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হয়, যা ‘অবৈধ’ বাসিন্দাদের শনাক্ত করতে সরকারের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার ফসল। চূড়ান্ত তালিকা থেকে প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দার নাম বাদ পড়ে, যাদের মধ্যে ৭ লাখের বেশি মুসলিম। এই তালিকা প্রকাশের পর বহু মুসলিমকে ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো হয় এবং তাদের জোরপূর্বক বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
আলী নামের এক ব্যক্তির নাম এনআরসিতে থাকলেও ২০১৩ সালে মরিগাঁও জেলার একটি ট্রাইব্যুনাল তাঁকে ‘বিদেশি’ ঘোষণা করে। তাঁর বাবার নাম কখনও ‘সামত আলী’, কখনও ‘চামত আলী’ বা ‘চাহমত আলী’ হিসেবে সরকারি কাগজে উল্লেখ থাকায় তাঁকে নাগরিকত্ব হারাতে হয়। আলী দুই বছর ডিটেনশন সেন্টারে ছিলেন। ২০১৪ সালে রাজ্যের হাইকোর্টও ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে। আলী জানান, তিনি এতটাই দরিদ্র যে, সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার সামর্থ্য নেই।
অনেক মুসলিম—যাদের বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে—বলছেন, তাঁদের নাগরিকত্বের মামলাগুলো এখনো আদালতে বিচারাধীন। তাই সরকার যেভাবে তাঁদের তাড়িয়ে দিচ্ছে, তা বেআইনি ও স্বেচ্ছাচারিতা। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা স্বীকার করেছেন, যাদের মামলা এখনো আদালতে বিচারাধীন, তাদের মধ্যে কাউকে কাউকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে কূটনৈতিক আলাপের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
এরকমই একজন, বারপেতা জেলার বুড়িখামার গ্রামের বাসিন্দা ৫৯ বছর বয়সী সোনা বানু। গত ২৭ মে তাঁকে বাংলাদেশ সীমান্তে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘আমি কখনো কল্পনাও করিনি, যে দেশে আমি জন্মেছি, যেখানে আমার বাবা-মা আর দাদা-দাদির জন্ম হয়েছে, সেই দেশই আমাকে বাংলাদেশ সীমান্তে পাঠাবে। তারা আমাকে বাংলাদেশি বানিয়ে দিল। অথচ জীবনে প্রথম এবং শেষবার বাংলাদেশ দেখেছি যখন সেটা মাত্র ১০ মিটার দূরে ছিল, নো-ম্যানস ল্যান্ডের ওপারে।’
মরিগাঁও জেলার মিকিরভিটা গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক খায়রুল ইসলাম বলেন, তাঁকে বাংলাদেশে জোর করে পাঠানো ছিল ‘মৃত্যুদণ্ডের মতো’। ২০১৬ সালে খাইরুল ইসলামকে ‘বিদেশি’ বলে ঘোষণা করা হয়, যদিও তাঁর পরিবার ব্রিটিশ আমলের জমির দলিলসহ নানা প্রমাণপত্র আদালতে জমা দিয়েছিল। তিনি এখন সুপ্রিম কোর্টে ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা চালাচ্ছেন।
খাইরুল ইসলাম বলেন, নো-ম্যানস ল্যান্ডে কাটানো সময় তাঁর মনে গভীর ক্ষত তৈরি করেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের শরণার্থীদের থেকেও খারাপ অবস্থায় রাখা হয়েছিল। আমাদের কষ্ট-যন্ত্রণা যেন সবার সামনে উন্মুক্ত ছিল। আমরা ভারতের কাছে বিদেশি, বাংলাদেশের কাছেও বিদেশি।’
নিজাম আহমেদ (৫০) ভারতের সরকারি নথি অনুযায়ী বিদেশি নন। গোলাঘাটের জামুগুড়ি চা-বাগান এলাকার এই ট্রাকচালকের নাম রয়েছে আসামের জাতীয় নাগরিক তালিকায়। তবুও তাঁকে বাংলাদেশ সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে ফেলে আসা হয়। নিজামের ছেলে জাহিদ জানান, বাবাকে আটকের বিষয়টি তিনি জানতে পারেন, যখন বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে তাঁর বাবাকে দেখা যাওয়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়।
জাহিদ বলেন, ‘আমরা ভারতীয়। আমার দাদু ছিলেন সেকেন্ড আসাম পুলিশ ব্যাটালিয়নে।’ আল-জাজিরা তাঁর এই দাবি নিশ্চিত করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিজামের বাবা সেলিম উদ্দিন আহমেদ ১৯৬০ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আসাম রাজ্য পুলিশে চাকরি করেছেন। জাহিদ বলেন, ‘আমার দাদু বেঁচে থাকলে এটা তাঁর জন্য সবচেয়ে বড় আঘাত হতো। একজন পুলিশ সদস্যের ছেলেকে বাংলাদেশ সীমান্তে ফেলে আসা হলো!’
সম্প্রতি ভারতে বিজেপি শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে কথিত ‘অবৈধ’ বাংলাদেশিদের বের করে দেওয়ার অভিযান আরও জোরদার হয়েছে। গুজরাটের প্রধান শহর আহমেদাবাদের পুলিশ জানিয়েছে, তারা অন্তত ২৫০ জন ‘বাংলাদেশিকে’ চিহ্নিত করেছে, যারা নাকি অবৈধভাবে সেখানে বসবাস করছিলেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে পুলিশ কর্মকর্তা অজিত রাজিয়ান বলেছেন, ‘তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।’
ভারতের সবচেয়ে ধনী রাজ্য মহারাষ্ট্রেও গত মাসে ৭ মুসলিমকে ‘বিদেশি’ সন্দেহে আটক করে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে তুলে দেওয়া হয় এবং তাদের বাংলাদেশে পাঠানোর চেষ্টা হয়। তবে ১৫ জুন ওই সাতজনকে আবার সীমান্ত থেকে ফিরিয়ে আনা হয়। কারণ তাঁরা পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা বলে জানায় রাজ্য সরকার। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের (এআইটিসি) বিধায়ক এবং পশ্চিমবঙ্গ মাইগ্র্যান্ট ওয়েলফেয়ার বোর্ডের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম।
সামিরুল ইসলাম বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ও রাজ্য প্রশাসন মহারাষ্ট্র পুলিশকে জানিয়েছিল, এরা সবাই পশ্চিমবঙ্গের ভারতীয় নাগরিক। কিন্তু রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে তাদের বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হয়।’ এ বিষয়ে ১৬ জুন কলকাতায় এক সংবাদ সম্মেলনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘শুধু বাংলা বলার কারণে তাদের বাংলাদেশি বলা হলো এবং বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হলো।’
আল-জাজিরার সঙ্গে কথা বলা ওই সাতজনের মধ্যে তিনজন জানান, তাঁরা মহারাষ্ট্র পুলিশের হেফাজতে থাকার সময় তাদের পরিবার এবং পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসন ভারতীয় নাগরিকত্বের যাবতীয় প্রমাণাদি জমা দিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বাসিন্দা মিরানুল শেখ এবং নিজামউদ্দিন শেখকেও সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে দেখা গেছে। এর ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
৩২ বছর বয়সী মিরানুল শেখ আল-জাজিরাকে বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি আমরা মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা, কিন্তু বিএসএফ আমাদের মারধর করেছে। আমাদের বলা হয়েছে, ফিরলে গুলি করব।’ এ বিষয়ে আল-জাজিরা ১৯ জুন বিএসএফকে ই-মেইল করে তাদের বক্তব্য জানতে চাইলেও তারা এখনো সাড়া দেয়নি।
আসামে পুলিশের অভিযানে গত ২৫ মে গোলাঘাট জেলার নওজান গ্রাম থেকে আব্দুল হানিফ নামের এক বাংলাভাষী মুসলিমকে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়া হয়। কোনো কারণও দেখায়নি পুলিশ। হানিফের বড় ভাই দ্বীন ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ বলেছিল, দুদিন পর ছেড়ে দেবে।’
আসামের চা-বাগান অধ্যুষিত এলাকায় বাংলাভাষী মুসলিমদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই সন্দেহ ও বিদ্বেষ রয়েছে। পুলিশের ভাষ্য, এটি ছিল ‘রুটিন ভেরিফিকেশন’। কিন্তু এরপর থেকেই হানিফকে মরিয়া হয়ে খোঁজে তাঁর পরিবার। দ্বীন ইসলাম বলেন, ‘আমরা এক থানার পর আরেক থানায় গিয়েছি, খুঁজেছি। কিন্তু পুলিশ কিছু বলছে না।’
দ্বীন দাবি করেন, হানিফকে শেষবার গোলাঘাটের পুলিশ সুপার রাজেন সিংহের অফিসে দেখা যায়। পরে যাদের বাংলাদেশ সীমান্তে পাঠানো হয়, তাদের সঙ্গেই ছিলেন হানিফ। তাঁর ভাষ্য, ‘হানিফ কোনোভাবেই বিদেশি নন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ট্রাইব্যুনালে মামলা নেই। শুধু “মিঞা” বলে সন্দেহের বশে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’

‘মিঞা’ শব্দটি আসামের আদিবাসী অহমিয়াদের মধ্যে বাংলাভাষী মুসলিমদের ‘অবজ্ঞা সূচকভাবে বাংলাদেশি’ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। হানিফের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার রাজেন সিংহ আল-জাজিরাকে বলেন, ‘এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যায় না।’
এক স্থানীয় বাসিন্দাকেও হানিফের সঙ্গে পুলিশ সুপারের অফিসে নেওয়া হয় এবং পরে তাঁকেও সীমান্তে নেওয়া হয়। তিনি জানান, তাঁদের দলকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। সম্ভবত হানিফকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়েছে। ওই ব্যক্তি বলেন, ‘রাতারাতি লোকজন উধাও হয়ে যাচ্ছে। হানিফও হয়তো অনেকের মতো বাংলাদেশে হারিয়ে গেছে।’
আল-জাজিরা স্বাধীনভাবে নিশ্চিত করেছে, গত মাসে যাদের নো-ম্যানস ল্যান্ডে পাঠানো হয়েছে, তাদের মধ্যে অন্তত ১০ জনের এখনো কোনো খোঁজ নেই। আসামে নিখোঁজ হওয়া সদস্যদের সন্ধান দাবিতে অন্তত চারটি পরিবার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। আসাম হাইকোর্টে তাঁরা পিটিশন দায়ের করেছেন। নিখোঁজদের মধ্যে অন্তত দুটি পরিবার রাজ্য সরকারের স্বীকৃত ‘দেশি’ মুসলিম সম্প্রদায়ের। এই সম্প্রদায়কে আসামের আদিবাসী মুসলিম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
নিখোঁজ সামসুল আলীর ছেলে বক্কর আলী বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম, আমরা আদিবাসী মুসলিম, তাই নিরাপদ। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, এখানে কোনো মুসলিম-ই নিরাপদ নয়।’ বক্কর আলীর দাবি, তাঁর বাবা এখন বাংলাদেশে পুলিশের হেফাজতে। বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার জেল সুপার আমিরুল ইসলাম আল-জাজিরাকে ১৬ জুন জানিয়েছেন, আরেক দেশি (ভারতীয়) মুসলিম, দইজান বিবিও বাংলাদেশ পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মুখপাত্র ফয়সাল মাহমুদ আল-জাজিরাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার কূটনৈতিকভাবে ভারতকে জানিয়েছে যে, বিএসএফ যেভাবে বাংলাদেশ সীমান্তে মানুষকে ঠেলে পাঠাচ্ছে, তা কোনো আইনি প্রক্রিয়া মেনে করা হচ্ছে না।’ এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও আল-জাজিরা কোনো সাড়া পায়নি।
উত্তর-পূর্ব ভারত বিশ্লেষক এবং সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও লন্ডনের কিংস কলেজ লন্ডনের যৌথ গবেষণা সহকারী অংশুমান চৌধুরী আল-জাজিরাকে বলেন, ‘আসামের সরকার যেটাকে পুশব্যাক বলছে, সেটা আদতে জোরপূর্বক বহিষ্কার।’ তিনি বলেন, ‘পুশব্যাকের মানে হলো, কোনো অভিবাসী অবৈধভাবে সীমান্তে ঢোকার চেষ্টা করলে তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া। কিন্তু এই ক্ষেত্রে সরকার নিজেই লোকজনকে ধরে নিয়ে আরেক দেশে ফেলে দিচ্ছে।’

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সরকারের এই পদক্ষেপের জন্য ১৯৫০ সালের এক আইন দেখাচ্ছেন। ওই আইনে জেলা প্রশাসকদের নির্দিষ্ট কিছু অবৈধ অভিবাসীকে বহিষ্কারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আসামের হাইকোর্টের আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী ওয়ালিউল্লাহ লস্কর বলেন, ‘এই আইন শুধু তাদের জন্য, যারা অবৈধভাবে ভারতে ঢুকেছে বা ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও থাকছে। এটা কোনোভাবেই তাদের জন্য নয়, যারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আসামে বসবাস করছে এবং যাদের হাতে রাজ্য সরকারের দেওয়া নাগরিকত্বের নথি আছে।’
আরেক স্থানীয় আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্টে ‘ঘোষিত বিদেশি’ বন্দীদের বিষয়ে শুনানির সময় আসাম সরকার নিজেই বলেছে, যাদের বাংলাদেশে কোনো ঠিকানা জানা নেই, তাদের ফেরত পাঠানো যাবে না। সরকার হলফনামায় উল্লেখ করেছে, ‘বিদেশি দেশটির পক্ষ থেকে জাতীয়তা যাচাই এবং ভ্রমণের অনুমতি না পেলে, এই বন্দীদের ফেরত পাঠানো যাবে না।’
গত বছর আসাম সরকার পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিল, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে রাজ্যে আসা অমুসলিম, বিশেষ করে হিন্দুদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা ট্রাইব্যুনালে না পাঠানোর জন্য। ভারতের বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে যাঁরা ওই সময়ের মধ্যে ভারতে এসেছেন, তাঁদের দ্রুত নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। তবে শুধু অমুসলিমদের জন্যই এই সুবিধা। এই আইন ভারতের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার লঙ্ঘন বলে দেশজুড়ে তীব্র বিক্ষোভ হয়েছিল। জাতিসংঘ এই আইনকে ‘মৌলিকভাবে বৈষম্যমূলক’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
ক্ষুব্ধ বক্কর আলী বলেন, ‘আমাদের জাতীয়তা প্রমাণ করতে ২০-৩০টা কাগজ দেখাতে হয়। অথচ বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দুদের শুধু বলতে হয় যে তারা হিন্দু, তাহলেই নাগরিকত্ব হয়ে যায়।’ গোলাঘাটে নিজের বাড়ির সামনে বসে থাকা ৫০ বছর বয়সী বেগম বলেন, বিএসএফ তাঁকেও ধরে নিয়ে গিয়েছিল। জন্মভূমির এমন আচরণে তিনি ভীষণ হতাশ। তিনি বলেন, ‘এই দেশ আমার, কিন্তু আমি এই দেশের না।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৩ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৩ দিন আগে
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
৪ দিন আগে
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

২০১৬ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) প্রথমবার আসামের ক্ষমতায় আসার পর এই বিরোধ আরও বেড়ে গেছে। আসামে ভারতের যেকোনো রাজ্যের তুলনায় মুসলিম জনসংখ্যার হার সবচেয়ে বেশি। ৩ কোটি ১০ লাখ বাসিন্দার রাজ্যটিতে মুসলমান মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের বেশি।
২৭ জুন ২০২৫
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৩ দিন আগে
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
৪ দিন আগে
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

২০১৬ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) প্রথমবার আসামের ক্ষমতায় আসার পর এই বিরোধ আরও বেড়ে গেছে। আসামে ভারতের যেকোনো রাজ্যের তুলনায় মুসলিম জনসংখ্যার হার সবচেয়ে বেশি। ৩ কোটি ১০ লাখ বাসিন্দার রাজ্যটিতে মুসলমান মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের বেশি।
২৭ জুন ২০২৫
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৩ দিন আগে
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
৪ দিন আগে
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
মনে রাখা দরকার, এ বছরের মে মাসে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এক হামলার পর দুই দেশের মধ্যে পাঁচ দিনের সংঘাত বাধে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও আরও মার্কিন অস্ত্র কেনার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের কী চুক্তি হলো
ব্রাসেলসভিত্তিক থিংকট্যাংক আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রবীণ দোন্থি জানান, এই অনুমোদনটি মূলত ২০২২ সালের এক রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তির অংশ। এই চুক্তির লক্ষ্য পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের বহরকে কার্যক্ষম রাখা। তিনি বলেন, ‘এই এফ-১৬ চুক্তিটি বৃহত্তর যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ কারণে কিছুটা দেরি হলেও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দেখানো পথেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনও এটিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। দুই পক্ষই এই অঞ্চলে যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে এই যুদ্ধবিমানগুলোর উপযোগিতার ওপর জোর দেয়।’
সর্বশেষ এই চুক্তি নতুন কোনো যুদ্ধবিমান বিক্রির জন্য নয়, বরং পাকিস্তানের হাতে থাকা এফ-১৬ বহরের জন্য প্রযুক্তি বিক্রি এবং সেগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রর প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা সহযোগিতা সংস্থা (ডিএসসিএ) ৪ ডিসেম্বর দেশটির কংগ্রেসে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়ে চুক্তিটি নিশ্চিত করে।
ধারণা করা হয়, পাকিস্তানের কাছে ৭০ থেকে ৮০টি কার্যক্ষম এফ-১৬ বিমান আছে। এর মধ্যে কিছু পুরোনো কিন্তু পরে আধুনিক করে তোলা ‘ব্লক-১৫’ মডেল, জর্ডানের কাছ থেকে পাওয়া কিছু এফ-১৬ এবং কিছু নতুন ‘ব্লক ৫২+’ মডেলের বিমান রয়েছে।
এই প্যাকেজে আছে—উন্নত ফ্লাইট অপারেশন ও বিমানের ইলেকট্রনিক সিস্টেমের জন্য হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার আপডেট। অ্যাডভান্সড আইডেনটিফিকেশন ফ্রেন্ড অর ফো (আইএফএফ) সিস্টেম, যা পাইলটদের শত্রু বিমান থেকে মিত্র বিমান শনাক্ত করতে সাহায্য করে। নেভিগেশন আপগ্রেড, খুচরা পার্টস ও মেরামত সুবিধা।
এফ-১৬-এর সাপোর্ট ও আপগ্রেডের জন্য ৬৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম (এমডিই) দেওয়া হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ৯২টি লিংক-১৬ সিস্টেম। এই লিংক-১৬ একটি সুরক্ষিত সামরিক ট্যাকটিক্যাল ডেটা লিংক নেটওয়ার্ক, যার মাধ্যমে সামরিক বিমান, জাহাজ এবং স্থলবাহিনীর মধ্যে খুদে বার্তা বা ছবির মাধ্যমে রিয়েল টাইম বা তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা যায়।
বিক্রির জন্য অনুমোদিত অন্য গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামগুলোর মধ্যে রয়েছে ছয়টি এমকে-৮২ ৫০০-পাউন্ড সাধারণ বোমার কাভার। এগুলো বিস্ফোরক ছাড়া কংক্রিট বা বালু দিয়ে পূর্ণ থাকে এবং প্রশিক্ষণ বা পরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়। এমকে-৮২ যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি আনগাইডেড বোমা, যা নিখুঁত-নির্দেশনা দেওয়া অস্ত্রের ওয়ারহেড হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কী
এফ-১৬ যুদ্ধবিমানটি এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন বা ভাইপার নামেও পরিচিত। এটি এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট যুদ্ধবিমান। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দ্বারা আকাশপথে যুদ্ধ ও আকাশ থেকে ভূমিতে আক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রথমে এটি তৈরি করেছিল জেনারেল ডাইনামিকস নামে একটি মার্কিন কোম্পানি। বর্তমানে এটি উৎপাদন করে লকহিড মার্টিন।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের শেষ দিকে সোভিয়েত মিকোয়ান-গুরেভিচ (মিগ) বিমানের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য এটিকে তৈরি করা হয়। এটি প্রথম উড্ডয়ন করে ১৯৭৪ সালে। লকহিড মার্টিনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এফ-১৬ এখন বিশ্বের ২৯টি দেশে ব্যবহৃত অন্যতম বহুল ব্যবহৃত যুদ্ধবিমান। পাকিস্তান ছাড়াও ইউক্রেন, তুরস্ক, ইসরায়েল, মিশর, পোল্যান্ড, গ্রিস, তাইওয়ান, চিলি, সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও নরওয়ের মতো দেশগুলো এফ-১৬ ব্যবহার করে।
ভারত-পাকিস্তানের মে মাসের সংঘাতে এফ-১৬-এর ভূমিকা কী ছিল
এপ্রিলের ২২ তারিখে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। হামলার দায় স্বীকার করে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) ’ নামে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। নয়াদিল্লির অভিযোগ, এর সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তাইয়্যেবার যোগসূত্র আছে। তবে ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পেহেলগাম হামলার পর নয়াদিল্লি ইসলামাবাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে নামিয়ে আনে এবং ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু নদের পানি ভাগাভাগি নিশ্চিত করার সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে। ৭ মে ভারত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ৯টি জায়গায় আঘাত হানে। ইসলামাবাদের দাবি, এসব হামলায় বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এরপরের তিন দিন দুই দেশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে একে অপরের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে আকাশপথে তীব্র সংঘাত চালায়।
পাকিস্তানের এয়ার ভাইস মার্শাল আওরঙ্গজেব আহমেদের ভাষ্যমতে, এই আকাশযুদ্ধে পাকিস্তান ৪২টি ‘হাই-টেক বিমান’ ব্যবহার করেছিল, যার মধ্যে এফ-১৬ ছাড়াও চীনের তৈরি জেএফ-১৭ ও জে-১০ বিমান ছিল। অবশেষে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ১০ মে একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়।
পাকিস্তানকে এফ-১৬-এর প্রযুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কি ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে
হ্যাঁ, কয়েকটি কারণে। পাকিস্তানের এফ-১৬ আপগ্রেডের জন্য যুক্তরাষ্ট্রর এই অনুমোদন এমন এক সময় এল, যখন ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে তাদের থেকে আরও অস্ত্র কিনতে চাপ দিচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স তিন ভারতীয় কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, গত আগস্টে নয়াদিল্লি মার্কিন অস্ত্র ও বিমান কেনার পরিকল্পনা স্থগিত করে। এর ঠিক কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের ওয়াশিংটন সফরের কথা ছিল, যেখানে তিনি কিছু অস্ত্র কেনার কথা ঘোষণা করতে পারতেন। সেই সফরটি বাতিল হয়ে যায়।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কেও সম্প্রতি উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত ৬ আগস্ট ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিলেন। এর আগে থেকেই ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল ছিল। ফলে মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে। ভারতকে রাশিয়া থেকে সস্তা অপরিশোধিত তেল কেনার শাস্তি হিসেবে এই শুল্ক আরোপ করা হয়।
ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে এই শুল্কের ঘোষণা দিয়ে লেখেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক কার্যকলাপ অব্যাহত থাকায় এটি একটি ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ এবং তাই রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের শীর্ষ ক্রেতা ভারতের ওপর বর্ধিত শুল্ক আরোপ করা ‘প্রয়োজনীয় ও যথাযথ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি দেখছি যে ভারত সরকার বর্তমানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাশিয়ান ফেডারেশনের তেল আমদানি করছে।’
যদিও যুক্তরাষ্ট্রর চাপের ফলস্বরূপ ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা সামান্য কমিয়েছে, তবে নয়াদিল্লি মস্কো থেকে কেনা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। রাশিয়া থেকে তেল কেনার ক্ষেত্রে চীনের পর ভারতই দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা। গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে রাশিয়া-ভারত বার্ষিক দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সেখানে বলেন, ‘ভারতকে জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন চালান সরবরাহ করতে রাশিয়া প্রস্তুত।’
পাকিস্তানের এফ-১৬ বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকীকরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এই সর্বশেষ চুক্তি ঘোষণার ফলে ভারত সন্তুষ্ট হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রবীণ দোন্থি জানান, আগে থেকেই পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, যার আওতায় পাকিস্তানের এফ-১৬ বহরের রক্ষণাবেক্ষণ করা নিয়ে নয়াদিল্লি আপত্তি জানিয়েছিল। ভারতের দাবি, এফ-১৬ বিমান তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়।
দোন্থি বলেন, ‘ওয়াশিংটন এবার আগেভাগেই বলে দিয়েছে যে এই বিক্রির ফলে অঞ্চলের মৌলিক সামরিক ভারসাম্যের পরিবর্তন হবে না।’
ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘এখানে ভারতের দিকটি বেশি অতিরঞ্জিত করে দেখা উচিত নয়। কেউ কেউ এটিকে হয়তো ওয়াশিংটনের সর্বশেষ কৌশল হিসেবে দেখতে পারে, পাকিস্তানের প্রতি উদারতা দেখিয়ে ভারতকে বাণিজ্য আলোচনায় আরও ছাড় দিতে চাপ দেওয়া।’
তবে তিনি আরও যোগ করেন, এই চুক্তির ‘একটি নিজস্ব যুক্তি আছে, যা ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।’ কুগেলম্যানের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এটি মূলত পাকিস্তানের যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত বিমানগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য এক দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির অধীনে এক স্বতন্ত্র ব্যবস্থা। এটি ভারতের সঙ্গে অব্যাহত, যদিও কম উদার মার্কিন প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পাশাপাশি বিদ্যমান।
যুক্তরাষ্ট্রের এই অনুমোদন পাকিস্তানকে কতটা শক্তিশালী করবে
কুগেলম্যান জানান, এই প্যাকেজটি তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানকে দেওয়া অন্যতম উদার নিরাপত্তা সহায়তা প্যাকেজ। প্রায় ৭০ কোটি ডলারকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।’ এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতায় ট্রাম্প প্রশাসন যে গুরুত্ব দিচ্ছে, তার ইঙ্গিত বহন করে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের পুনরুত্থান নিয়ে আলোচনায় সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও অন্যান্য বাণিজ্যিক সুযোগগুলোই বেশি শিরোনামে আসে। কিন্তু সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, যার ব্যাপ্তি সামান্য হলেও এই প্রশাসনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’
তবে দোন্থি মনে করিয়ে দেন, যুক্তরাষ্ট্রর এই সর্বশেষ প্যাকেজটি পাকিস্তানকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত তার বহর রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করবে বটে, কিন্তু ২০২০ সাল থেকে পাকিস্তানের ৮০ শতাংশের বেশি অস্ত্র সরবরাহ করেছে চীন। সুইডিশ থিংকট্যাংক সিআইপিআরআইয়ের এই বছরের একটি প্রতিবেদনেও এই পরিসংখ্যানের সমর্থন পাওয়া যায়।
দোন্থি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে মে মাসের সংঘাতে পাকিস্তান চীনের তৈরি জে-১০ বিমান ব্যবহার করেছিল। ইসলামাবাদ ওয়াশিংটন ও বেইজিং—উভয় পক্ষ থেকেই সুবিধা নিয়ে ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছে।’
আল জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
মনে রাখা দরকার, এ বছরের মে মাসে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এক হামলার পর দুই দেশের মধ্যে পাঁচ দিনের সংঘাত বাধে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও আরও মার্কিন অস্ত্র কেনার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের কী চুক্তি হলো
ব্রাসেলসভিত্তিক থিংকট্যাংক আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রবীণ দোন্থি জানান, এই অনুমোদনটি মূলত ২০২২ সালের এক রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তির অংশ। এই চুক্তির লক্ষ্য পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের বহরকে কার্যক্ষম রাখা। তিনি বলেন, ‘এই এফ-১৬ চুক্তিটি বৃহত্তর যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ কারণে কিছুটা দেরি হলেও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দেখানো পথেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনও এটিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। দুই পক্ষই এই অঞ্চলে যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে এই যুদ্ধবিমানগুলোর উপযোগিতার ওপর জোর দেয়।’
সর্বশেষ এই চুক্তি নতুন কোনো যুদ্ধবিমান বিক্রির জন্য নয়, বরং পাকিস্তানের হাতে থাকা এফ-১৬ বহরের জন্য প্রযুক্তি বিক্রি এবং সেগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রর প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা সহযোগিতা সংস্থা (ডিএসসিএ) ৪ ডিসেম্বর দেশটির কংগ্রেসে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়ে চুক্তিটি নিশ্চিত করে।
ধারণা করা হয়, পাকিস্তানের কাছে ৭০ থেকে ৮০টি কার্যক্ষম এফ-১৬ বিমান আছে। এর মধ্যে কিছু পুরোনো কিন্তু পরে আধুনিক করে তোলা ‘ব্লক-১৫’ মডেল, জর্ডানের কাছ থেকে পাওয়া কিছু এফ-১৬ এবং কিছু নতুন ‘ব্লক ৫২+’ মডেলের বিমান রয়েছে।
এই প্যাকেজে আছে—উন্নত ফ্লাইট অপারেশন ও বিমানের ইলেকট্রনিক সিস্টেমের জন্য হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার আপডেট। অ্যাডভান্সড আইডেনটিফিকেশন ফ্রেন্ড অর ফো (আইএফএফ) সিস্টেম, যা পাইলটদের শত্রু বিমান থেকে মিত্র বিমান শনাক্ত করতে সাহায্য করে। নেভিগেশন আপগ্রেড, খুচরা পার্টস ও মেরামত সুবিধা।
এফ-১৬-এর সাপোর্ট ও আপগ্রেডের জন্য ৬৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম (এমডিই) দেওয়া হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ৯২টি লিংক-১৬ সিস্টেম। এই লিংক-১৬ একটি সুরক্ষিত সামরিক ট্যাকটিক্যাল ডেটা লিংক নেটওয়ার্ক, যার মাধ্যমে সামরিক বিমান, জাহাজ এবং স্থলবাহিনীর মধ্যে খুদে বার্তা বা ছবির মাধ্যমে রিয়েল টাইম বা তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা যায়।
বিক্রির জন্য অনুমোদিত অন্য গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামগুলোর মধ্যে রয়েছে ছয়টি এমকে-৮২ ৫০০-পাউন্ড সাধারণ বোমার কাভার। এগুলো বিস্ফোরক ছাড়া কংক্রিট বা বালু দিয়ে পূর্ণ থাকে এবং প্রশিক্ষণ বা পরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়। এমকে-৮২ যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি আনগাইডেড বোমা, যা নিখুঁত-নির্দেশনা দেওয়া অস্ত্রের ওয়ারহেড হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কী
এফ-১৬ যুদ্ধবিমানটি এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন বা ভাইপার নামেও পরিচিত। এটি এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট যুদ্ধবিমান। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দ্বারা আকাশপথে যুদ্ধ ও আকাশ থেকে ভূমিতে আক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রথমে এটি তৈরি করেছিল জেনারেল ডাইনামিকস নামে একটি মার্কিন কোম্পানি। বর্তমানে এটি উৎপাদন করে লকহিড মার্টিন।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের শেষ দিকে সোভিয়েত মিকোয়ান-গুরেভিচ (মিগ) বিমানের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য এটিকে তৈরি করা হয়। এটি প্রথম উড্ডয়ন করে ১৯৭৪ সালে। লকহিড মার্টিনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এফ-১৬ এখন বিশ্বের ২৯টি দেশে ব্যবহৃত অন্যতম বহুল ব্যবহৃত যুদ্ধবিমান। পাকিস্তান ছাড়াও ইউক্রেন, তুরস্ক, ইসরায়েল, মিশর, পোল্যান্ড, গ্রিস, তাইওয়ান, চিলি, সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও নরওয়ের মতো দেশগুলো এফ-১৬ ব্যবহার করে।
ভারত-পাকিস্তানের মে মাসের সংঘাতে এফ-১৬-এর ভূমিকা কী ছিল
এপ্রিলের ২২ তারিখে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। হামলার দায় স্বীকার করে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) ’ নামে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। নয়াদিল্লির অভিযোগ, এর সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তাইয়্যেবার যোগসূত্র আছে। তবে ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পেহেলগাম হামলার পর নয়াদিল্লি ইসলামাবাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে নামিয়ে আনে এবং ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু নদের পানি ভাগাভাগি নিশ্চিত করার সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে। ৭ মে ভারত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ৯টি জায়গায় আঘাত হানে। ইসলামাবাদের দাবি, এসব হামলায় বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এরপরের তিন দিন দুই দেশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে একে অপরের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে আকাশপথে তীব্র সংঘাত চালায়।
পাকিস্তানের এয়ার ভাইস মার্শাল আওরঙ্গজেব আহমেদের ভাষ্যমতে, এই আকাশযুদ্ধে পাকিস্তান ৪২টি ‘হাই-টেক বিমান’ ব্যবহার করেছিল, যার মধ্যে এফ-১৬ ছাড়াও চীনের তৈরি জেএফ-১৭ ও জে-১০ বিমান ছিল। অবশেষে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ১০ মে একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়।
পাকিস্তানকে এফ-১৬-এর প্রযুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কি ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে
হ্যাঁ, কয়েকটি কারণে। পাকিস্তানের এফ-১৬ আপগ্রেডের জন্য যুক্তরাষ্ট্রর এই অনুমোদন এমন এক সময় এল, যখন ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে তাদের থেকে আরও অস্ত্র কিনতে চাপ দিচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স তিন ভারতীয় কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, গত আগস্টে নয়াদিল্লি মার্কিন অস্ত্র ও বিমান কেনার পরিকল্পনা স্থগিত করে। এর ঠিক কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের ওয়াশিংটন সফরের কথা ছিল, যেখানে তিনি কিছু অস্ত্র কেনার কথা ঘোষণা করতে পারতেন। সেই সফরটি বাতিল হয়ে যায়।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কেও সম্প্রতি উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত ৬ আগস্ট ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিলেন। এর আগে থেকেই ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল ছিল। ফলে মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে। ভারতকে রাশিয়া থেকে সস্তা অপরিশোধিত তেল কেনার শাস্তি হিসেবে এই শুল্ক আরোপ করা হয়।
ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে এই শুল্কের ঘোষণা দিয়ে লেখেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক কার্যকলাপ অব্যাহত থাকায় এটি একটি ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ এবং তাই রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের শীর্ষ ক্রেতা ভারতের ওপর বর্ধিত শুল্ক আরোপ করা ‘প্রয়োজনীয় ও যথাযথ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি দেখছি যে ভারত সরকার বর্তমানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাশিয়ান ফেডারেশনের তেল আমদানি করছে।’
যদিও যুক্তরাষ্ট্রর চাপের ফলস্বরূপ ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা সামান্য কমিয়েছে, তবে নয়াদিল্লি মস্কো থেকে কেনা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। রাশিয়া থেকে তেল কেনার ক্ষেত্রে চীনের পর ভারতই দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা। গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে রাশিয়া-ভারত বার্ষিক দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সেখানে বলেন, ‘ভারতকে জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন চালান সরবরাহ করতে রাশিয়া প্রস্তুত।’
পাকিস্তানের এফ-১৬ বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকীকরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এই সর্বশেষ চুক্তি ঘোষণার ফলে ভারত সন্তুষ্ট হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রবীণ দোন্থি জানান, আগে থেকেই পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, যার আওতায় পাকিস্তানের এফ-১৬ বহরের রক্ষণাবেক্ষণ করা নিয়ে নয়াদিল্লি আপত্তি জানিয়েছিল। ভারতের দাবি, এফ-১৬ বিমান তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়।
দোন্থি বলেন, ‘ওয়াশিংটন এবার আগেভাগেই বলে দিয়েছে যে এই বিক্রির ফলে অঞ্চলের মৌলিক সামরিক ভারসাম্যের পরিবর্তন হবে না।’
ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘এখানে ভারতের দিকটি বেশি অতিরঞ্জিত করে দেখা উচিত নয়। কেউ কেউ এটিকে হয়তো ওয়াশিংটনের সর্বশেষ কৌশল হিসেবে দেখতে পারে, পাকিস্তানের প্রতি উদারতা দেখিয়ে ভারতকে বাণিজ্য আলোচনায় আরও ছাড় দিতে চাপ দেওয়া।’
তবে তিনি আরও যোগ করেন, এই চুক্তির ‘একটি নিজস্ব যুক্তি আছে, যা ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।’ কুগেলম্যানের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এটি মূলত পাকিস্তানের যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত বিমানগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য এক দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির অধীনে এক স্বতন্ত্র ব্যবস্থা। এটি ভারতের সঙ্গে অব্যাহত, যদিও কম উদার মার্কিন প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পাশাপাশি বিদ্যমান।
যুক্তরাষ্ট্রের এই অনুমোদন পাকিস্তানকে কতটা শক্তিশালী করবে
কুগেলম্যান জানান, এই প্যাকেজটি তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানকে দেওয়া অন্যতম উদার নিরাপত্তা সহায়তা প্যাকেজ। প্রায় ৭০ কোটি ডলারকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।’ এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতায় ট্রাম্প প্রশাসন যে গুরুত্ব দিচ্ছে, তার ইঙ্গিত বহন করে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের পুনরুত্থান নিয়ে আলোচনায় সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও অন্যান্য বাণিজ্যিক সুযোগগুলোই বেশি শিরোনামে আসে। কিন্তু সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, যার ব্যাপ্তি সামান্য হলেও এই প্রশাসনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’
তবে দোন্থি মনে করিয়ে দেন, যুক্তরাষ্ট্রর এই সর্বশেষ প্যাকেজটি পাকিস্তানকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত তার বহর রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করবে বটে, কিন্তু ২০২০ সাল থেকে পাকিস্তানের ৮০ শতাংশের বেশি অস্ত্র সরবরাহ করেছে চীন। সুইডিশ থিংকট্যাংক সিআইপিআরআইয়ের এই বছরের একটি প্রতিবেদনেও এই পরিসংখ্যানের সমর্থন পাওয়া যায়।
দোন্থি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে মে মাসের সংঘাতে পাকিস্তান চীনের তৈরি জে-১০ বিমান ব্যবহার করেছিল। ইসলামাবাদ ওয়াশিংটন ও বেইজিং—উভয় পক্ষ থেকেই সুবিধা নিয়ে ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছে।’
আল জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

২০১৬ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) প্রথমবার আসামের ক্ষমতায় আসার পর এই বিরোধ আরও বেড়ে গেছে। আসামে ভারতের যেকোনো রাজ্যের তুলনায় মুসলিম জনসংখ্যার হার সবচেয়ে বেশি। ৩ কোটি ১০ লাখ বাসিন্দার রাজ্যটিতে মুসলমান মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের বেশি।
২৭ জুন ২০২৫
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৩ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৩ দিন আগে
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত বুধবার মার্কিন বাহিনী ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছাকাছি অভিযান চালিয়ে একটি তেল ট্যাংকার জব্দ করেছে। ট্যাংকারে ভেনেজুয়েলা ও ইরানের তেল বহন করা হচ্ছিল বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। এই ঘটনার পর ভেনেজুয়েলার তেল বহনের অভিযোগের আরও ছয়টি জাহাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
জাহাজ ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, প্রথম ট্যাংকারটির অবস্থান (লোকেশন) গোপন করার বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি নিশ্চিত করেছেন, জব্দ হওয়া জাহাজটির নাম ‘স্কিপার’। তাঁর দাবি, এটি ভেনেজুয়েলা এবং ইরানের নিষেধাজ্ঞা ভুক্ত অপরিশোধিত তেল পরিবহনে ব্যবহৃত ক্রুড অয়েল ট্যাংকার।
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর। জব্দ হওয়ার আগে এটি গত ৭ নভেম্বর থেকে তার অবস্থান প্রকাশ করেনি।
মেরিন অ্যানালিটিক্স ফার্ম কেপ্লার (Kpler) জানিয়েছে, ‘স্কিপার’-এর অবস্থান গোপন করার (স্পুফিং) দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জানা যায়, ২০২২ সালে যখন জাহাজটি ‘আদিশা’ (Adisa) নামে চলছিল, তখন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এটিকে একটি ‘আন্তর্জাতিক তেল পাচার নেটওয়ার্কের’ অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘স্কিপার’ ঘন ঘন ট্র্যাকারকে মিথ্যা তথ্য দিত। যেমন, এআইএস সিস্টেমে জাহাজটি ৭ ও ৮ জুলাই ইরাকের বসরা অয়েল টার্মিনালে অবস্থান দেখালেও, টার্মিনাল রিপোর্টে এর কোনো রেকর্ড ছিল না। উল্টো কেপ্লার জানিয়েছে, সেই সময়েই ট্যাংকারটি ইরানের খার্গ দ্বীপ থেকে অপরিশোধিত তেল বোঝাই করছিল। এ ছাড়া, ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাহাজটি এআইএস-এ সম্পূর্ণ ভুল সংকেত পাঠাচ্ছিল, যা এর আসল অবস্থানকে প্রতিফলিত করেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘স্কিপার’ সম্ভবত ‘ডার্ক ফ্লিট’ নামক বিশ্বব্যাপী তেলবাহী ট্যাংকারের একটি নেটওয়ার্কের অংশ। এই নেটওয়ার্কটি মালিকানা, পরিচয় এবং ভ্রমণ ইতিহাস গোপন করে তেলের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কাজ করে।
যদিও ‘স্কিপার’ গায়ানার পতাকা ব্যবহার করে যাত্রা করছিল, কিন্তু গায়ানা সরকার দ্রুত বিবৃতি দিয়ে জানায় যে ২০ বছর বয়সী এই ট্যাংকারটি তাদের দেশে নিবন্ধিত নয় এবং এটি ‘অবৈধভাবে গায়ানার পতাকা ব্যবহার করছিল’। জাহাজটির নিবন্ধিত মালিক হিসেবে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ-ভিত্তিক ‘ট্রাইটন নেভিগেশন করপোরেশন’-এর নাম রয়েছে। তবে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, এই ট্রাইটন করপোরেশনকে একজন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত রুশ জ্বালানি ধনকুবের ভিক্তর আর্তেমভ তাঁর বৈশ্বিক ‘তেল পাচার নেটওয়ার্ক’ পরিচালনার জন্য ব্যবহার করতেন।
ভেনেজুয়েলার তেল মজুত বিশ্বের বৃহত্তম হলেও, মাদুরোর প্রশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সাল থেকে দেশটির তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ‘স্কিপার’ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত। কেপ্লার বিশ্লেষকেরা জানান, ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দর থেকে প্রায় ১ দশমিক ১ মিলিয়ন (১১ লাখ) ব্যারেল মেরে ক্রুড তেল বোঝাই করেছিল এবং গন্তব্য হিসেবে কিউবার নাম উল্লেখ করেছিল।
১১ থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে এটি পূর্বে যাত্রা করে একটি ‘শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফার’ সম্পন্ন করে। এটির কার্গো পরে চীনেও ‘ভুয়া ঘোষিত’ হয়েছিল। মার্কিন অভিযানের মাত্র কয়েক দিন আগে, ৭ ডিসেম্বরে এটি ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে অন্য একটি জাহাজের সঙ্গে স্থানান্তরে জড়িত ছিল বলে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়। বেলজিয়ামের নৌবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট ফ্রেডেরিক ভ্যান লোকারেন জানান, এই ধরনের স্থানান্তর আইনত অবৈধ না হলেও, তা ‘অত্যন্ত অস্বাভাবিক’ এবং সাধারণত নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্যই করা হয়।
‘স্কিপার’ সর্বশেষ ৭ নভেম্বর তার অবস্থান ঘোষণা করে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যায়। মার্কিন অভিযানে ১০ ডিসেম্বর এর অবস্থান পুনরায় দৃশ্যমান হয়। এই অন্তর্বর্তী সময়ে, ১৮ নভেম্বর স্যাটেলাইট চিত্রগুলো নিশ্চিত করছে যে ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দরে ছিল।
তথ্যসূত্র: বিবিসি

নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত বুধবার মার্কিন বাহিনী ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছাকাছি অভিযান চালিয়ে একটি তেল ট্যাংকার জব্দ করেছে। ট্যাংকারে ভেনেজুয়েলা ও ইরানের তেল বহন করা হচ্ছিল বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। এই ঘটনার পর ভেনেজুয়েলার তেল বহনের অভিযোগের আরও ছয়টি জাহাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
জাহাজ ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, প্রথম ট্যাংকারটির অবস্থান (লোকেশন) গোপন করার বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি নিশ্চিত করেছেন, জব্দ হওয়া জাহাজটির নাম ‘স্কিপার’। তাঁর দাবি, এটি ভেনেজুয়েলা এবং ইরানের নিষেধাজ্ঞা ভুক্ত অপরিশোধিত তেল পরিবহনে ব্যবহৃত ক্রুড অয়েল ট্যাংকার।
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর। জব্দ হওয়ার আগে এটি গত ৭ নভেম্বর থেকে তার অবস্থান প্রকাশ করেনি।
মেরিন অ্যানালিটিক্স ফার্ম কেপ্লার (Kpler) জানিয়েছে, ‘স্কিপার’-এর অবস্থান গোপন করার (স্পুফিং) দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জানা যায়, ২০২২ সালে যখন জাহাজটি ‘আদিশা’ (Adisa) নামে চলছিল, তখন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এটিকে একটি ‘আন্তর্জাতিক তেল পাচার নেটওয়ার্কের’ অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘স্কিপার’ ঘন ঘন ট্র্যাকারকে মিথ্যা তথ্য দিত। যেমন, এআইএস সিস্টেমে জাহাজটি ৭ ও ৮ জুলাই ইরাকের বসরা অয়েল টার্মিনালে অবস্থান দেখালেও, টার্মিনাল রিপোর্টে এর কোনো রেকর্ড ছিল না। উল্টো কেপ্লার জানিয়েছে, সেই সময়েই ট্যাংকারটি ইরানের খার্গ দ্বীপ থেকে অপরিশোধিত তেল বোঝাই করছিল। এ ছাড়া, ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাহাজটি এআইএস-এ সম্পূর্ণ ভুল সংকেত পাঠাচ্ছিল, যা এর আসল অবস্থানকে প্রতিফলিত করেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘স্কিপার’ সম্ভবত ‘ডার্ক ফ্লিট’ নামক বিশ্বব্যাপী তেলবাহী ট্যাংকারের একটি নেটওয়ার্কের অংশ। এই নেটওয়ার্কটি মালিকানা, পরিচয় এবং ভ্রমণ ইতিহাস গোপন করে তেলের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কাজ করে।
যদিও ‘স্কিপার’ গায়ানার পতাকা ব্যবহার করে যাত্রা করছিল, কিন্তু গায়ানা সরকার দ্রুত বিবৃতি দিয়ে জানায় যে ২০ বছর বয়সী এই ট্যাংকারটি তাদের দেশে নিবন্ধিত নয় এবং এটি ‘অবৈধভাবে গায়ানার পতাকা ব্যবহার করছিল’। জাহাজটির নিবন্ধিত মালিক হিসেবে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ-ভিত্তিক ‘ট্রাইটন নেভিগেশন করপোরেশন’-এর নাম রয়েছে। তবে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, এই ট্রাইটন করপোরেশনকে একজন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত রুশ জ্বালানি ধনকুবের ভিক্তর আর্তেমভ তাঁর বৈশ্বিক ‘তেল পাচার নেটওয়ার্ক’ পরিচালনার জন্য ব্যবহার করতেন।
ভেনেজুয়েলার তেল মজুত বিশ্বের বৃহত্তম হলেও, মাদুরোর প্রশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সাল থেকে দেশটির তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ‘স্কিপার’ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত। কেপ্লার বিশ্লেষকেরা জানান, ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দর থেকে প্রায় ১ দশমিক ১ মিলিয়ন (১১ লাখ) ব্যারেল মেরে ক্রুড তেল বোঝাই করেছিল এবং গন্তব্য হিসেবে কিউবার নাম উল্লেখ করেছিল।
১১ থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে এটি পূর্বে যাত্রা করে একটি ‘শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফার’ সম্পন্ন করে। এটির কার্গো পরে চীনেও ‘ভুয়া ঘোষিত’ হয়েছিল। মার্কিন অভিযানের মাত্র কয়েক দিন আগে, ৭ ডিসেম্বরে এটি ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে অন্য একটি জাহাজের সঙ্গে স্থানান্তরে জড়িত ছিল বলে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়। বেলজিয়ামের নৌবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট ফ্রেডেরিক ভ্যান লোকারেন জানান, এই ধরনের স্থানান্তর আইনত অবৈধ না হলেও, তা ‘অত্যন্ত অস্বাভাবিক’ এবং সাধারণত নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্যই করা হয়।
‘স্কিপার’ সর্বশেষ ৭ নভেম্বর তার অবস্থান ঘোষণা করে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যায়। মার্কিন অভিযানে ১০ ডিসেম্বর এর অবস্থান পুনরায় দৃশ্যমান হয়। এই অন্তর্বর্তী সময়ে, ১৮ নভেম্বর স্যাটেলাইট চিত্রগুলো নিশ্চিত করছে যে ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দরে ছিল।
তথ্যসূত্র: বিবিসি

২০১৬ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) প্রথমবার আসামের ক্ষমতায় আসার পর এই বিরোধ আরও বেড়ে গেছে। আসামে ভারতের যেকোনো রাজ্যের তুলনায় মুসলিম জনসংখ্যার হার সবচেয়ে বেশি। ৩ কোটি ১০ লাখ বাসিন্দার রাজ্যটিতে মুসলমান মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের বেশি।
২৭ জুন ২০২৫
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৩ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৩ দিন আগে
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
৪ দিন আগে