Ajker Patrika

আল জাজিরার প্রতিবেদন /‘এই দেশ আমার, কিন্তু আমি এই দেশের নই’, আসামের মুসলিমরা যাবে কোথায়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৭ জুন ২০২৫, ১৭: ৫৩
বাংলাদেশে পুশ-ইনের শিকার আসামের বাসিন্দা সোনা বানু। ছবি: আল-জাজিরার
বাংলাদেশে পুশ-ইনের শিকার আসামের বাসিন্দা সোনা বানু। ছবি: আল-জাজিরার

উফা আলী। ৬৭ বছর বয়সী এই ভারতীয় মুসলিমকে গত মে মাসের শেষ নাগাদ বাংলাদেশে পুশইন করা হয়। এরপর, দুঃসহ চার-চারটি দিন বাংলাদেশে কাটিয়ে ৩১ মে ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্য আসামে নিজ বাড়িতে ফেরেন। উফা আলী স্মরণ করেন, তিনি জন্ম থেকে দেখে আসছেন, বাংলাদেশ শব্দটি আসামে স্থানীয়দের কাছে ‘গালির মতো’।

উফার সপ্তাহব্যাপী দুর্ভোগের শুরু গত ২৩ মে। সেদিন আসামের মরিগাঁও জেলার কুইয়াদল নামের ছোট্ট গ্রামের ভাড়া বাড়ি থেকে তাঁকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। আসামে ‘ঘোষিত বিদেশি নাগরিক’ বলে যে ক্যাটাগরি রয়েছে, তার আওতায় এই ধরপাকড় চালায় সরকার। আসাম ভারতের চা উৎপাদনের অন্যতম কেন্দ্র। এখানকার আদিবাসী—মূলত অহমিয়াদের সঙ্গে প্রতিবেশী অঞ্চল থেকে আসা বাংলাভাষীদের বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। এই বাংলাভাষীরা শত বছরের বেশি সময় আগে থেকে এই এলাকায় বসতি গড়েছেন।

২০১৬ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) প্রথমবার আসামের ক্ষমতায় আসার পর এই বিরোধ আরও বেড়ে গেছে। আসামে ভারতের যেকোনো রাজ্যের তুলনায় মুসলিম জনসংখ্যার হার সবচেয়ে বেশি। ৩ কোটি ১০ লাখ বাসিন্দার রাজ্যটিতে মুসলমান মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের বেশি।

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার ভাষ্য অনুযায়ী, গত মে থেকে উফা আলীর মতো ৩ শতাধিক মুসলমানকে বাংলাদেশে ‘পুশইন’ করা হয়েছে। শর্মা রাজ্য বিধানসভায় বলেন, ‘এই পুশইন আরও জোরদার করা হবে। রাজ্যকে বাঁচাতে আমাদের আরও সক্রিয় হতে হবে।’

গত ২৩ মে উফাকে আটকের পর নিয়ে যাওয়া হয় আসামের গোয়ালপাড়া জেলার মাটিয়ায় অবস্থিত ভারতের সবচেয়ে বড় ‘অবৈধ অভিবাসী’ আটক কেন্দ্রে। তিন দিন পর, ২৭ মে ভোরের দিকে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের সদস্যরা পাঁচ নারী এবং উফা আলীসহ মোট ১৪ জনকে একটি ভ্যানে করে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়ে যায়।

আল-জাজিরাকে উফা আলী বলেন, ‘বিএসএফ আমাদের জোর করে ওপারে পাঠানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বিজিবি এবং স্থানীয়রা স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, তারা আমাদের নেবে না। কারণ, আমরা ভারতীয়।’ উভয় দেশের মাঝখানে ‘নো-ম্যানস ল্যান্ডে’ খোলা মাঠে আটকে পড়েন তাঁরা। কোনো খাবার ও আশ্রয় ছাড়াই ১২ ঘণ্টা হাঁটুসমান পানিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

উফা বলেন, ‘সেদিন নীল আকাশের নিচে আমরা নরক দেখেছি। চোখের সামনেই জীবন ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে আসছিল।’ তিনি জানান, ভারতের দিকে ফেরার চেষ্টা করলে বিএসএফ সদস্যরা হামলার হুমকি দেয়। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অনুরোধ করছিলাম, যেন আমাদের বাংলাদেশের দিকে জোর করে পাঠানো না হয়। কিন্তু তারা আমাদের ওপর রাবার বুলেট ছোড়ে। ওই নো-ম্যানস ল্যান্ড আমাদের কাছে যেন কোনো দেশেরই অংশ ছিল না। মনে হচ্ছিল আমাদের জন্য কোনো দেশ নেই।’

একইভাবে আসামের পূর্বাঞ্চলীয় গোলাঘাট জেলা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া ৫০ বছর বয়সী রহিমা বেগম বলেন, তিনিও ‘নো-ম্যানস ল্যান্ডের’ বিভীষিকার স্মৃতি ভুলতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের দিকে পালানোর চেষ্টা করলে বিজিবি আমাকে হুমকি ধামকি দেয়। আমার সামনে কোনো রাস্তা ছিল না। বিএসএফ আমাকে হুমকি দেয়, যদি আমি ওপারে না যাই, তারা আমাকে গুলি করে মেরে ফেলবে।’

বাংলাদেশ-ভারতের মাঝে নো-ম্যানস ল্যান্ডে চার দিন উফা আলীকে ফেলে রেখেছিল বিএসএফ। ছবি: আল-জাজিরা
বাংলাদেশ-ভারতের মাঝে নো-ম্যানস ল্যান্ডে চার দিন উফা আলীকে ফেলে রেখেছিল বিএসএফ। ছবি: আল-জাজিরা

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রামের রৌমারীর সাংবাদিক যতেন চন্দ্র দাস আল-জাজিরাকে বলেন, তিনি নিজ চোখে দেখেছেন বিএসএফ সদস্যরা ‘ভারতীয় নাগরিকদের’ লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছুড়েছে। তিনি আরও জানান, পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে বিএসএফ সদস্যরা চার রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। ২৭ মে এক বিবৃতিতে বিএসএফ এই অভিযোগ অস্বীকার করে। তারা দাবি করে, শুধু অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করা লোকদের থামানোর চেষ্টা করেছে তারা।

অবশেষে, বাংলাদেশের স্থানীয় লোকজন এবং বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে উফা আলীকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের এক সীমান্ত পয়েন্টে নিয়ে রেখে আসে বিজিবির সদস্যরা। সেখান থেকে তিনি ১০ ঘণ্টার দীর্ঘ পথ পেরিয়ে বন-জঙ্গল ঘুরে নিজ বাড়িতে ফিরে যান।

গত ৩১ মে আসামের সংবাদপত্র ‘দ্য সেনটিনেল’ এক প্রতিবেদনে জানায়, বিজিবি ৬৫ ভারতীয় নাগরিককে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করেছে। বাংলাদেশে পুশইন করা কয়েকজন মুসলমান আল-জাজিরাকে জানান, তাঁদের মধ্যে অন্তত ১০০ জন নিজেরাই ফিরে এসেছেন। যদিও এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে বেশির ভাগ প্রত্যাবর্তনকারী জানান, সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের দিকে ঢোকার পর ‘সাদা পোশাকের লোকেরা’ তাঁদের নিয়ে হাইওয়েতে ফেলে রেখে চলে যায়।

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর দেশটিতে নতুন করে মুসলিমবিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকেই ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ বিতাড়নের অভিযান আরও জোরালো হয়। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দি বিভাগের অধ্যাপক অপূর্বানন্দ আল-জাজিরাকে বলেন, ‘পেহেলগাম হামলাকে বিজেপি (যারা কেন্দ্র এবং আসাম রাজ্য দুই জায়গাতেই ক্ষমতায়) অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে। তারা রোহিঙ্গা এবং বাংলাভাষী মুসলিমদের মতো দুর্বল জনগোষ্ঠীকে বিতাড়নের সুযোগ হিসেবে এই ঘটনাকে কাজে লাগাচ্ছে।’ অপূর্বানন্দ বলেন, ‘বিজেপি শাসিত ভারতে মুসলিম পরিচয়কে যেকোনোভাবে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। সরকার বাংলাভাষী মুসলিমদের অবৈধ বাংলাদেশি বলেই ধরে নেয়।’

আসামের বিরোধী দল ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, এই বিতাড়নের পুরো প্রক্রিয়াই মূলত মুসলিমদের লক্ষ্য করে করা হচ্ছে। আসাম কংগ্রেসের নেতা দেবব্রত শইকিয়া আল-জাজিরাকে বলেন, ‘মাটিয়া ডিটেনশন সেন্টার থেকে শুধু মুসলিমদেরই বেছে বেছে বের করে দেওয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে বিজেপির মুখপাত্র মনোজ বরা দাবি করেন, এই পুরো প্রক্রিয়া ধর্মীয় পরিচয়ের ওপর নির্ভরশীল নয়। তিনি বলেন, ‘অবৈধ হিন্দুদের বাংলাদেশে পাঠানো হয়নি। কারণ, তারা সেখানে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হতে পারেন, যেহেতু বাংলাদেশ একটি মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ।’

আসামে জাতিগত ও ধর্মীয় বিভাজন বহু দশকের পুরোনো, যার শিকড় ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনামলে প্রোথিত। উনিশ শতকে ব্রিটিশরা আসামের পাহাড়ি অঞ্চলে ব্যাপকভাবে চা বাগান গড়ে তোলে। এতে বাংলাভাষী শ্রমিকদের—যাদের মধ্যে মুসলিম ও হিন্দু দুই ধর্মের মানুষই ছিলেন—ব্যাপক হারে সেখানে নিয়ে আসা হয়। এদের বড় অংশ আসে বর্তমান বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে।

বর্তমানে মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে, যার মধ্যে আসামের সঙ্গে ২৬০ কিলোমিটার। আসাম সরকার স্থির করেছে, ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ—বাংলাদেশ স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার আগের দিন—এর আগে যারা আসামে এসেছেন, শুধু তাঁরাই ভারতের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন।

ভারত সরকারের দেওয়া উফা আলীর জাতীয় পরিচয়পত্র। ছবি: আল-জাজিরা
ভারত সরকারের দেওয়া উফা আলীর জাতীয় পরিচয়পত্র। ছবি: আল-জাজিরা

এ সংক্রান্ত নাগরিকত্বের মামলাগুলোর বিচার হয় আসামের বিশেষ ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে। এই ট্রাইব্যুনালগুলো একধরনের বিশেষ আদালত। খুব সামান্য বানান ভুল বা কাগজপত্রের অসংগতির ভিত্তিতে কাউকে ‘বিদেশি’ ঘোষণা করে এসব আদালত। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ২০১৯ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামের ট্রাইব্যুনালগুলো পক্ষপাতদুষ্ট এবং স্বেচ্ছাচারিতায় ভরা।

ওই বছরেই আসামে নাগরিক তালিকার (এনআরসি) চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হয়, যা ‘অবৈধ’ বাসিন্দাদের শনাক্ত করতে সরকারের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার ফসল। চূড়ান্ত তালিকা থেকে প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দার নাম বাদ পড়ে, যাদের মধ্যে ৭ লাখের বেশি মুসলিম। এই তালিকা প্রকাশের পর বহু মুসলিমকে ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো হয় এবং তাদের জোরপূর্বক বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়।

আলী নামের এক ব্যক্তির নাম এনআরসিতে থাকলেও ২০১৩ সালে মরিগাঁও জেলার একটি ট্রাইব্যুনাল তাঁকে ‘বিদেশি’ ঘোষণা করে। তাঁর বাবার নাম কখনও ‘সামত আলী’, কখনও ‘চামত আলী’ বা ‘চাহমত আলী’ হিসেবে সরকারি কাগজে উল্লেখ থাকায় তাঁকে নাগরিকত্ব হারাতে হয়। আলী দুই বছর ডিটেনশন সেন্টারে ছিলেন। ২০১৪ সালে রাজ্যের হাইকোর্টও ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে। আলী জানান, তিনি এতটাই দরিদ্র যে, সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার সামর্থ্য নেই।

অনেক মুসলিম—যাদের বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে—বলছেন, তাঁদের নাগরিকত্বের মামলাগুলো এখনো আদালতে বিচারাধীন। তাই সরকার যেভাবে তাঁদের তাড়িয়ে দিচ্ছে, তা বেআইনি ও স্বেচ্ছাচারিতা। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা স্বীকার করেছেন, যাদের মামলা এখনো আদালতে বিচারাধীন, তাদের মধ্যে কাউকে কাউকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে কূটনৈতিক আলাপের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

এরকমই একজন, বারপেতা জেলার বুড়িখামার গ্রামের বাসিন্দা ৫৯ বছর বয়সী সোনা বানু। গত ২৭ মে তাঁকে বাংলাদেশ সীমান্তে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘আমি কখনো কল্পনাও করিনি, যে দেশে আমি জন্মেছি, যেখানে আমার বাবা-মা আর দাদা-দাদির জন্ম হয়েছে, সেই দেশই আমাকে বাংলাদেশ সীমান্তে পাঠাবে। তারা আমাকে বাংলাদেশি বানিয়ে দিল। অথচ জীবনে প্রথম এবং শেষবার বাংলাদেশ দেখেছি যখন সেটা মাত্র ১০ মিটার দূরে ছিল, নো-ম্যানস ল্যান্ডের ওপারে।’

মরিগাঁও জেলার মিকিরভিটা গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক খায়রুল ইসলাম বলেন, তাঁকে বাংলাদেশে জোর করে পাঠানো ছিল ‘মৃত্যুদণ্ডের মতো’। ২০১৬ সালে খাইরুল ইসলামকে ‘বিদেশি’ বলে ঘোষণা করা হয়, যদিও তাঁর পরিবার ব্রিটিশ আমলের জমির দলিলসহ নানা প্রমাণপত্র আদালতে জমা দিয়েছিল। তিনি এখন সুপ্রিম কোর্টে ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা চালাচ্ছেন।

খাইরুল ইসলাম বলেন, নো-ম্যানস ল্যান্ডে কাটানো সময় তাঁর মনে গভীর ক্ষত তৈরি করেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের শরণার্থীদের থেকেও খারাপ অবস্থায় রাখা হয়েছিল। আমাদের কষ্ট-যন্ত্রণা যেন সবার সামনে উন্মুক্ত ছিল। আমরা ভারতের কাছে বিদেশি, বাংলাদেশের কাছেও বিদেশি।’

নিজাম আহমেদ (৫০) ভারতের সরকারি নথি অনুযায়ী বিদেশি নন। গোলাঘাটের জামুগুড়ি চা-বাগান এলাকার এই ট্রাকচালকের নাম রয়েছে আসামের জাতীয় নাগরিক তালিকায়। তবুও তাঁকে বাংলাদেশ সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে ফেলে আসা হয়। নিজামের ছেলে জাহিদ জানান, বাবাকে আটকের বিষয়টি তিনি জানতে পারেন, যখন বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে তাঁর বাবাকে দেখা যাওয়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়।

জাহিদ বলেন, ‘আমরা ভারতীয়। আমার দাদু ছিলেন সেকেন্ড আসাম পুলিশ ব্যাটালিয়নে।’ আল-জাজিরা তাঁর এই দাবি নিশ্চিত করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিজামের বাবা সেলিম উদ্দিন আহমেদ ১৯৬০ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আসাম রাজ্য পুলিশে চাকরি করেছেন। জাহিদ বলেন, ‘আমার দাদু বেঁচে থাকলে এটা তাঁর জন্য সবচেয়ে বড় আঘাত হতো। একজন পুলিশ সদস্যের ছেলেকে বাংলাদেশ সীমান্তে ফেলে আসা হলো!’

সম্প্রতি ভারতে বিজেপি শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে কথিত ‘অবৈধ’ বাংলাদেশিদের বের করে দেওয়ার অভিযান আরও জোরদার হয়েছে। গুজরাটের প্রধান শহর আহমেদাবাদের পুলিশ জানিয়েছে, তারা অন্তত ২৫০ জন ‘বাংলাদেশিকে’ চিহ্নিত করেছে, যারা নাকি অবৈধভাবে সেখানে বসবাস করছিলেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে পুলিশ কর্মকর্তা অজিত রাজিয়ান বলেছেন, ‘তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।’

ভারতের সবচেয়ে ধনী রাজ্য মহারাষ্ট্রেও গত মাসে ৭ মুসলিমকে ‘বিদেশি’ সন্দেহে আটক করে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে তুলে দেওয়া হয় এবং তাদের বাংলাদেশে পাঠানোর চেষ্টা হয়। তবে ১৫ জুন ওই সাতজনকে আবার সীমান্ত থেকে ফিরিয়ে আনা হয়। কারণ তাঁরা পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা বলে জানায় রাজ্য সরকার। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের (এআইটিসি) বিধায়ক এবং পশ্চিমবঙ্গ মাইগ্র্যান্ট ওয়েলফেয়ার বোর্ডের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম।

সামিরুল ইসলাম বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ও রাজ্য প্রশাসন মহারাষ্ট্র পুলিশকে জানিয়েছিল, এরা সবাই পশ্চিমবঙ্গের ভারতীয় নাগরিক। কিন্তু রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে তাদের বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হয়।’ এ বিষয়ে ১৬ জুন কলকাতায় এক সংবাদ সম্মেলনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘শুধু বাংলা বলার কারণে তাদের বাংলাদেশি বলা হলো এবং বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হলো।’

আল-জাজিরার সঙ্গে কথা বলা ওই সাতজনের মধ্যে তিনজন জানান, তাঁরা মহারাষ্ট্র পুলিশের হেফাজতে থাকার সময় তাদের পরিবার এবং পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসন ভারতীয় নাগরিকত্বের যাবতীয় প্রমাণাদি জমা দিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বাসিন্দা মিরানুল শেখ এবং নিজামউদ্দিন শেখকেও সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে দেখা গেছে। এর ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।

৩২ বছর বয়সী মিরানুল শেখ আল-জাজিরাকে বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি আমরা মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা, কিন্তু বিএসএফ আমাদের মারধর করেছে। আমাদের বলা হয়েছে, ফিরলে গুলি করব।’ এ বিষয়ে আল-জাজিরা ১৯ জুন বিএসএফকে ই-মেইল করে তাদের বক্তব্য জানতে চাইলেও তারা এখনো সাড়া দেয়নি।

আসামে পুলিশের অভিযানে গত ২৫ মে গোলাঘাট জেলার নওজান গ্রাম থেকে আব্দুল হানিফ নামের এক বাংলাভাষী মুসলিমকে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়া হয়। কোনো কারণও দেখায়নি পুলিশ। হানিফের বড় ভাই দ্বীন ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ বলেছিল, দুদিন পর ছেড়ে দেবে।’

আসামের চা-বাগান অধ্যুষিত এলাকায় বাংলাভাষী মুসলিমদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই সন্দেহ ও বিদ্বেষ রয়েছে। পুলিশের ভাষ্য, এটি ছিল ‘রুটিন ভেরিফিকেশন’। কিন্তু এরপর থেকেই হানিফকে মরিয়া হয়ে খোঁজে তাঁর পরিবার। দ্বীন ইসলাম বলেন, ‘আমরা এক থানার পর আরেক থানায় গিয়েছি, খুঁজেছি। কিন্তু পুলিশ কিছু বলছে না।’

দ্বীন দাবি করেন, হানিফকে শেষবার গোলাঘাটের পুলিশ সুপার রাজেন সিংহের অফিসে দেখা যায়। পরে যাদের বাংলাদেশ সীমান্তে পাঠানো হয়, তাদের সঙ্গেই ছিলেন হানিফ। তাঁর ভাষ্য, ‘হানিফ কোনোভাবেই বিদেশি নন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ট্রাইব্যুনালে মামলা নেই। শুধু “মিঞা” বলে সন্দেহের বশে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’

ভারত সরকারের দেওয়া উফা আলীর জাতীয় পরিচয়পত্র। ছবি: আল-জাজিরা
ভারত সরকারের দেওয়া উফা আলীর জাতীয় পরিচয়পত্র। ছবি: আল-জাজিরা

‘মিঞা’ শব্দটি আসামের আদিবাসী অহমিয়াদের মধ্যে বাংলাভাষী মুসলিমদের ‘অবজ্ঞা সূচকভাবে বাংলাদেশি’ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। হানিফের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার রাজেন সিংহ আল-জাজিরাকে বলেন, ‘এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যায় না।’

এক স্থানীয় বাসিন্দাকেও হানিফের সঙ্গে পুলিশ সুপারের অফিসে নেওয়া হয় এবং পরে তাঁকেও সীমান্তে নেওয়া হয়। তিনি জানান, তাঁদের দলকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। সম্ভবত হানিফকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়েছে। ওই ব্যক্তি বলেন, ‘রাতারাতি লোকজন উধাও হয়ে যাচ্ছে। হানিফও হয়তো অনেকের মতো বাংলাদেশে হারিয়ে গেছে।’

আল-জাজিরা স্বাধীনভাবে নিশ্চিত করেছে, গত মাসে যাদের নো-ম্যানস ল্যান্ডে পাঠানো হয়েছে, তাদের মধ্যে অন্তত ১০ জনের এখনো কোনো খোঁজ নেই। আসামে নিখোঁজ হওয়া সদস্যদের সন্ধান দাবিতে অন্তত চারটি পরিবার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। আসাম হাইকোর্টে তাঁরা পিটিশন দায়ের করেছেন। নিখোঁজদের মধ্যে অন্তত দুটি পরিবার রাজ্য সরকারের স্বীকৃত ‘দেশি’ মুসলিম সম্প্রদায়ের। এই সম্প্রদায়কে আসামের আদিবাসী মুসলিম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

নিখোঁজ সামসুল আলীর ছেলে বক্কর আলী বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম, আমরা আদিবাসী মুসলিম, তাই নিরাপদ। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, এখানে কোনো মুসলিম-ই নিরাপদ নয়।’ বক্কর আলীর দাবি, তাঁর বাবা এখন বাংলাদেশে পুলিশের হেফাজতে। বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার জেল সুপার আমিরুল ইসলাম আল-জাজিরাকে ১৬ জুন জানিয়েছেন, আরেক দেশি (ভারতীয়) মুসলিম, দইজান বিবিও বাংলাদেশ পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মুখপাত্র ফয়সাল মাহমুদ আল-জাজিরাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার কূটনৈতিকভাবে ভারতকে জানিয়েছে যে, বিএসএফ যেভাবে বাংলাদেশ সীমান্তে মানুষকে ঠেলে পাঠাচ্ছে, তা কোনো আইনি প্রক্রিয়া মেনে করা হচ্ছে না।’ এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও আল-জাজিরা কোনো সাড়া পায়নি।

উত্তর-পূর্ব ভারত বিশ্লেষক এবং সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও লন্ডনের কিংস কলেজ লন্ডনের যৌথ গবেষণা সহকারী অংশুমান চৌধুরী আল-জাজিরাকে বলেন, ‘আসামের সরকার যেটাকে পুশব্যাক বলছে, সেটা আদতে জোরপূর্বক বহিষ্কার।’ তিনি বলেন, ‘পুশব্যাকের মানে হলো, কোনো অভিবাসী অবৈধভাবে সীমান্তে ঢোকার চেষ্টা করলে তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া। কিন্তু এই ক্ষেত্রে সরকার নিজেই লোকজনকে ধরে নিয়ে আরেক দেশে ফেলে দিচ্ছে।’

আসাম পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে নিখোঁজ আব্দুল হানিফ। ছবি: আল-জাজিরা
আসাম পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে নিখোঁজ আব্দুল হানিফ। ছবি: আল-জাজিরা

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সরকারের এই পদক্ষেপের জন্য ১৯৫০ সালের এক আইন দেখাচ্ছেন। ওই আইনে জেলা প্রশাসকদের নির্দিষ্ট কিছু অবৈধ অভিবাসীকে বহিষ্কারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আসামের হাইকোর্টের আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী ওয়ালিউল্লাহ লস্কর বলেন, ‘এই আইন শুধু তাদের জন্য, যারা অবৈধভাবে ভারতে ঢুকেছে বা ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও থাকছে। এটা কোনোভাবেই তাদের জন্য নয়, যারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আসামে বসবাস করছে এবং যাদের হাতে রাজ্য সরকারের দেওয়া নাগরিকত্বের নথি আছে।’

আরেক স্থানীয় আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্টে ‘ঘোষিত বিদেশি’ বন্দীদের বিষয়ে শুনানির সময় আসাম সরকার নিজেই বলেছে, যাদের বাংলাদেশে কোনো ঠিকানা জানা নেই, তাদের ফেরত পাঠানো যাবে না। সরকার হলফনামায় উল্লেখ করেছে, ‘বিদেশি দেশটির পক্ষ থেকে জাতীয়তা যাচাই এবং ভ্রমণের অনুমতি না পেলে, এই বন্দীদের ফেরত পাঠানো যাবে না।’

গত বছর আসাম সরকার পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিল, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে রাজ্যে আসা অমুসলিম, বিশেষ করে হিন্দুদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা ট্রাইব্যুনালে না পাঠানোর জন্য। ভারতের বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে যাঁরা ওই সময়ের মধ্যে ভারতে এসেছেন, তাঁদের দ্রুত নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। তবে শুধু অমুসলিমদের জন্যই এই সুবিধা। এই আইন ভারতের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার লঙ্ঘন বলে দেশজুড়ে তীব্র বিক্ষোভ হয়েছিল। জাতিসংঘ এই আইনকে ‘মৌলিকভাবে বৈষম্যমূলক’ বলে আখ্যা দিয়েছে।

ক্ষুব্ধ বক্কর আলী বলেন, ‘আমাদের জাতীয়তা প্রমাণ করতে ২০-৩০টা কাগজ দেখাতে হয়। অথচ বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দুদের শুধু বলতে হয় যে তারা হিন্দু, তাহলেই নাগরিকত্ব হয়ে যায়।’ গোলাঘাটে নিজের বাড়ির সামনে বসে থাকা ৫০ বছর বয়সী বেগম বলেন, বিএসএফ তাঁকেও ধরে নিয়ে গিয়েছিল। জন্মভূমির এমন আচরণে তিনি ভীষণ হতাশ। তিনি বলেন, ‘এই দেশ আমার, কিন্তু আমি এই দেশের না।’

অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

২৪৩ আসনে প্রার্থী দিল জি এম কাদেরের জাপা

‘অনলাইনে জুয়ার টাকা ভাগাভাগি’ নিয়ে খুন হন বগুড়ার সেই ব্যবসায়ী

সখীপুরে নিখোঁজের ৭ ঘণ্টা পর বন থেকে উদ্ধার শিশুটি মারা গেছে

সূর্যাস্তের আগে স্মৃতিসৌধে পৌঁছাতে পারলেন না তারেক রহমান, তাঁর পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন কেন্দ্রীয় নেতাদের

ছাত্রশিবিরের নতুন সভাপতি সাদ্দাম, সাধারণ সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নাইজেরিয়ায় কোন আইএসকে আঘাত করল মার্কিন বাহিনী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে আইএস আস্তানা লক্ষ্য করে মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে আইএস আস্তানা লক্ষ্য করে মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।

ইসলামিক স্টেট কী

ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।

পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।

বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়

মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।

এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।

লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল

আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।

মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।

আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা

কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।

নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

২৪৩ আসনে প্রার্থী দিল জি এম কাদেরের জাপা

‘অনলাইনে জুয়ার টাকা ভাগাভাগি’ নিয়ে খুন হন বগুড়ার সেই ব্যবসায়ী

সখীপুরে নিখোঁজের ৭ ঘণ্টা পর বন থেকে উদ্ধার শিশুটি মারা গেছে

সূর্যাস্তের আগে স্মৃতিসৌধে পৌঁছাতে পারলেন না তারেক রহমান, তাঁর পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন কেন্দ্রীয় নেতাদের

ছাত্রশিবিরের নতুন সভাপতি সাদ্দাম, সাধারণ সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নাইজেরিয়ায় কেন হামলা চালাল মার্কিন বাহিনী, খ্রিষ্টান নিপীড়নের সঙ্গে এর সম্পর্ক কী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।

ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’

গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।

মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।

কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন

অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।

তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।

নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে

নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।

উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।

নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান

ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।

এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।

নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।

উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।

এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’

এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।

দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

২৪৩ আসনে প্রার্থী দিল জি এম কাদেরের জাপা

‘অনলাইনে জুয়ার টাকা ভাগাভাগি’ নিয়ে খুন হন বগুড়ার সেই ব্যবসায়ী

সখীপুরে নিখোঁজের ৭ ঘণ্টা পর বন থেকে উদ্ধার শিশুটি মারা গেছে

সূর্যাস্তের আগে স্মৃতিসৌধে পৌঁছাতে পারলেন না তারেক রহমান, তাঁর পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন কেন্দ্রীয় নেতাদের

ছাত্রশিবিরের নতুন সভাপতি সাদ্দাম, সাধারণ সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘ভেনেজুয়েলা সংকট’ কীভাবে আন্তর্জাতিক সংঘাতের রূপ নিচ্ছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।

ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।

ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।

ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।

এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।

‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।

সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

২৪৩ আসনে প্রার্থী দিল জি এম কাদেরের জাপা

‘অনলাইনে জুয়ার টাকা ভাগাভাগি’ নিয়ে খুন হন বগুড়ার সেই ব্যবসায়ী

সখীপুরে নিখোঁজের ৭ ঘণ্টা পর বন থেকে উদ্ধার শিশুটি মারা গেছে

সূর্যাস্তের আগে স্মৃতিসৌধে পৌঁছাতে পারলেন না তারেক রহমান, তাঁর পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন কেন্দ্রীয় নেতাদের

ছাত্রশিবিরের নতুন সভাপতি সাদ্দাম, সাধারণ সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—ট্রাম্প প্রশাসনের এই দাবি কি যৌক্তিক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ছবি: সংগৃহীত
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।

গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।

মিলার কী বলেছেন

গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’

মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।

মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।

ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।

২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।

অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।

যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে

২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।

এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।

১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।

পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।

কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা

২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে

না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।

১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।

তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে

যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।

২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।

শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।

ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।

আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

২৪৩ আসনে প্রার্থী দিল জি এম কাদেরের জাপা

‘অনলাইনে জুয়ার টাকা ভাগাভাগি’ নিয়ে খুন হন বগুড়ার সেই ব্যবসায়ী

সখীপুরে নিখোঁজের ৭ ঘণ্টা পর বন থেকে উদ্ধার শিশুটি মারা গেছে

সূর্যাস্তের আগে স্মৃতিসৌধে পৌঁছাতে পারলেন না তারেক রহমান, তাঁর পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন কেন্দ্রীয় নেতাদের

ছাত্রশিবিরের নতুন সভাপতি সাদ্দাম, সাধারণ সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত