আজকের পত্রিকা ডেস্ক

বাংলাদেশে আশ্রিত ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারের আরাকানে তাদের নিজ ভূমে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায় আশানুরূপ কোনো অগ্রগতি হয়নি। সর্বশেষ ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের রোহিঙ্গা সমস্যাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেনটেটিভ খলিলুর রহমানের সঙ্গে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে মিয়ানমার পক্ষ ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা দেখিয়েছে। এই তালিকার রোহিঙ্গারা দেশে ফেরার যোগ্য বলে চিহ্নিত করেছে তারা। বাকিদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই চলছে।
তবে মিয়ানমারের আরাকান (রাখাইন) রাজ্যের অধিকাংশ এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। বলতে গেলে মিয়ানমারের অধিকাংশ এলাকাই এখন বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। জান্তা সরকার অনেকখানিই দুর্বল। ফলে রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়টি এখন আর শুধু দ্বিপক্ষীয় আলোচনার বিষয় নয়। খোদ সরকারি কর্মকর্তারাও এই জটিলতার কথা স্বীকার করছেন।
আরাকান এলাকায় এখন পক্ষগুলোর মধ্যে রয়েছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি, মিয়ানমার সরকার এবং চীন। সেখানে বিশেষ করে খনিজ সম্পদে চীনের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রয়েছে।
ফলে আরাকান আর্মি (এএ) এবং চীনের মধ্যে সম্পর্কও এখন বেশ জটিল এবং বহুমুখী। এই সম্পর্ক নির্ধারিত হচ্ছে ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ, অর্থনৈতিক বিনিয়োগ এবং মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধে গতিপ্রকৃতির মাধ্যমে।
আরাকান আর্মি হলো একটি জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন (ইএও)। ২০০৯ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রাখাইন বৌদ্ধরা এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। তারা এই অঞ্চলের জন্য বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন বা ‘কনফেডারেট স্ট্যাটাস’ চায়। চীন, মিয়ানমারের বৃহত্তম প্রতিবেশী এবং অর্থনৈতিক অংশীদার। এই এলাকায় চীনের উল্লেখযোগ্য স্বার্থ রয়েছে, বিশেষ করে তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য আরাকান বেইজিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং প্রাথমিক সম্পর্ক
আরাকান আর্মি মিয়ানমার-চীন সীমান্তে কাচিন রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কাচিন ইনডিপেনডেন্ট আর্মি (কেআইএ) তাদের প্রথম দিকের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়। চীনের এই ভৌগোলিক নৈকট্য আরাকান আর্মিকে এমন একটি অঞ্চলে সম্পদ এবং নেটওয়ার্কে প্রবেশাধিকার দিয়েছিল, যেখানে চীন দীর্ঘদিন ধরে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তার করে আসছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরাকান আর্মি ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মির (ইউডব্লিউএসএ) দিকে ঝুঁকে পড়ে। এটি আরেকটি জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন। এই সংগঠন আবার চীনের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রাখে। আরাকান আর্মি পরে ফেডারেল পলিটিক্যাল নেগোসিয়েশন অ্যান্ড কনসালটেটিভ কমিটিতে (এফপিএনসিসি) যোগ দেয়, যেটির নেতৃত্বে রয়েছে ইউডব্লিউএসএ। এই পরিবর্তন আরাকান আর্মিকে এমন একটি জোটের মধ্যে স্থান করে দিয়েছে, যা চীনের সমর্থন পায়। যদিও বেইজিংয়ের সরাসরি জড়িত থাকার প্রত্যক্ষ প্রমাণ খুব সীমিত।
রাখাইনে চীনের কৌশলগত স্বার্থ
চীনের রাখাইন রাজ্যে আগ্রহ মূলত চীন-মিয়ানমার ইকোনমিক করিডরের (সিএমইসি) ওপর কেন্দ্রীভূত। এটি বেইজিংয়ে বিআরআইয়ের মূল অংশ। এর মধ্যে রয়েছে কিয়াউকফিউ গভীর সমুদ্রবন্দর এবং রাখাইন থেকে ইউনান প্রদেশ পর্যন্ত তেল ও গ্যাসের দ্বৈত পাইপলাইন। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে মালাক্কা প্রণালিকে এড়াতে পারবে চীন। চীনের জ্বালানি আমদানির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাধা এই মালাক্কা প্রণালি।
রাখাইনের স্থিতিশীলতা এই বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পগুলোর জন্য অত্যাবশ্যক। এসব প্রকল্প চীনের বঙ্গোপসাগরে প্রবেশাধিকার এবং আঞ্চলিক প্রভাব বাড়াতে সহায়তা করবে। চলতি বছর আরাকান আর্মি রাখাইনের বেশির ভাগ এলাকা, বিশেষ করে কিয়াউকফিউয়ের কাছাকাছি অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ফলে এই অঞ্চলের চীনের স্বার্থগুলো সরাসরি প্রভাবিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আরাকান আর্মিকে চীনের মিয়ানমার কৌশলে একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় করে তুলেছে।
সমর্থন এবং অস্ত্রের প্রবাহ
বিভিন্ন প্রতিবেদন এবং বিশ্লেষণে জানা যায়, চীন পরোক্ষভাবে আরাকান আর্মিকে সমর্থন করে। প্রধানত অস্ত্র সরবরাহ এবং আর্থিক সহায়তা দেয় বেইজিং। যদিও সরাসরি জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে। আরাকান আর্মি চীনের তৈরি অস্ত্র ব্যবহার করে; যেমন ২০১৯ সালে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর ওপর হামলায় ১০৭ মিমি ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য রকেট এবং মিয়ানমার সামরিক বাহিনী কর্তৃক মিত্র গোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে জব্দ করা এফএন-৬ অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট বন্দুক।
এই অস্ত্রগুলো ইউডব্লিউএসএর কাছ থেকে তারা পেয়েছে বলে ধারণা করা হয়। যারা চীনা নকশার অস্ত্র উৎপাদনের কারখানা পরিচালনা করে এবং চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখে। ২০২০ সালে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল, তারা আরাকান আর্মি এবং অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে অস্ত্র সরবরাহ করছে। বেইজিংয়ের উদ্দেশ্য মূলত ভারতের কালাদান মাল্টি-মোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পকে অস্থিতিশীল করা। যদিও বেইজিংয়ের সঙ্গে এমন অস্ত্র সরবরাহে সরাসরি সংযোগের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ বিরল।
বিশ্লেষকেরা অনুমান করেন, আরাকান আর্মি তাদের তহবিলের ৯০ শতাংশই চীনা উৎস থেকে পায়। সম্ভবত ইউডব্লিউএসএর মতো প্রক্সির মাধ্যমে আসে এসব অর্থ ও অস্ত্র।
ভারসাম্য রক্ষার কৌশল: চীনের দ্বৈত পদ্ধতি
চীন মিয়ানমারে একটি দ্বৈত কৌশল অনুসরণ করে। নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় সামরিক জান্তা (স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিল, এসএসি) এবং কিছু জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী, যার মধ্যে আরাকান আর্মিও রয়েছে, উভয়কেই সমর্থন করে চীন। যদিও বেইজিং আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এসএসিকে সমর্থন করে। যেমন ২০২৪ সালের নভেম্বরে জেনারেল মিন অং হ্লাইং-এর কুনমিং সফরে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, বেইজিং স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে রাখাইনে আরাকান আর্মির উত্থান এই ভারসাম্যকে জটিল করে তুলেছে। উত্তরাঞ্চলের জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মতো মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মিকে (এমএনডিএএ) চীন ২০২৪ সালে অপারেশন ১০২৭-এর পর যুদ্ধবিরতি মেনে চলতে বাধ্য করেছিল। বেইজিং তাদের তৎপরতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু আরাকান আর্মি এর বিরোধিতা করেছে। বিশেষ করে শান রাজ্যে যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও রাখাইনে তারা আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। এই অবাধ্যতা আরাকান আর্মির ক্রমবর্ধমান স্বায়ত্তশাসন এবং স্থানীয় সমর্থনেরই নিদর্শন। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওপর এই বিজয় আরাকান আর্মিকে সীমান্ত-সংলগ্ন গোষ্ঠীগুলোর তুলনায় চীনা প্রভাবের কাছে কম নমনীয় করে তুলেছে।
ভূরাজনৈতিক প্রভাব
আরাকান আর্মির কর্মকাণ্ডের আঞ্চলিক প্রভাবও রয়েছে। ২০২৪ সালের শেষের দিকে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ এবং ভারতের কালাদান প্রকল্পকে লক্ষ্যবস্তু করে আরাকান আর্মি। কিন্তু সেখানে তারা চীনা প্রকল্পগুলোতে হাত দেয়নি। ফলে এখানে ভারতীয় প্রভাবের বিরুদ্ধে চীনের সমর্থনের একটা জল্পনা তৈরি হয়েছে।
২০২৪ সালে আরাকান আর্মি রাখাইনে চীনা প্রকল্প এবং কর্মীদের সুরক্ষার আশ্বাস দেয়। তারা কিয়াউকফিউ আক্রমণ না করার অঙ্গীকার করে। এটি নিঃসন্দেহে চীন ও আরাকান আর্মির মধ্যে বাস্তববাদী সম্পর্কের পরিচয় দেয়। অর্থাৎ এটি নিছক আনুগত্যের মধ্যে আর সীমাবদ্ধ নেই।
বিশেষজ্ঞরা যুক্তি দেন, আরাকান আর্মি চীনের সমর্থনকে এসএসির বিরুদ্ধে তার অবস্থান শক্তিশালী করতে ব্যবহার করে। স্পষ্টত এখানে চীন আরাকান আর্মির অগ্রগতিতে ততক্ষণ পর্যন্ত সহ্য করে, যতক্ষণ তার বিনিয়োগ নিরাপদ থাকে। চলতি বছর আরাকান আর্মির আধিপত্য বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি পরিবর্তিত হয়েছে। বেইজিংয়ে এমন একটি গোষ্ঠীর ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরতা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ধারণা তৈরি হয়েছে, বেইজিং এই গোষ্ঠীকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
সম্পর্কের উত্তেজনা এবং সীমাবদ্ধতা
এই সম্পর্কের মধ্যে উত্থানপতন ও উত্তেজনাও রয়েছে। আরাকান আর্মির রয়েছে জাতীয়তাবাদী অ্যাজেন্ডা। তারা রাখাইন স্বায়ত্তশাসন চায়। তাদের এই অবস্থান চীনের এসএসি নিয়ন্ত্রিত মিয়ানমারের জান্তা সরকারের পছন্দের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ফলে এখানে চীনা স্বার্থ রক্ষার প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলেছে। ২০২৪ সালে এমএনডিএএর কমান্ডারকে আটক করার জন্য অন্যান্য জাতিগত গোষ্ঠীকে চাপ দেয় বেইজিং। কিন্তু আরাকান আর্মির প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি নরম। এর কারণ হতে পারে, চীনের সীমান্ত থেকে রাখাইনের দূরত্ব এবং চীনা সম্পদের প্রতি আরাকান আর্মির কৌশলগত সংযম। অপরদিকে, বেইজিং জান্তা সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে—এমন ধারণার প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় জন্য মিয়ানমারে চীনবিরোধী মনোভাব বাড়ছে। এমনকি বিদেশেও প্রবাসীরা চীনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে। ফলে মিয়ানমারে বেইজিংয়ের ভাবমূর্তি বেশ জটিল হয়ে উঠেছে।
সংক্ষেপে বললে, আরাকান আর্মি-চীন সম্পর্ক পারস্পরিক সুবিধা দ্বারা নির্ধারিত। তাদের মধ্যে আছে কৌশলগত সতর্কতা এবং সংযম। চীন সম্ভবত তাদের পরোক্ষ সমর্থন দেয়। ইউডব্লিউএসএর মতো মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে তারা অস্ত্র ও টাকা পায়। মূলত রাখাইনে প্রভাব বজায় রাখতে এবং ভারতের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের মোকাবিলা করতে চীন এটি করছে। আর সেই সুবাদে আরাকান আর্মি এসএসির বিরুদ্ধে লড়াই আরও শক্তিশালী করার রসদ পাচ্ছে।
তবে এটিও সত্য যে আরাকান আর্মির স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারার সক্ষমতা এবং স্থানীয় সমর্থন, নিজেদের শর্ত নির্ধারণে চীনের ক্ষমতাকে সীমিত করছে। এই আরাকান আর্মি মিয়ানমারের অন্যান্য অনুগত জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর চেয়ে আলাদা।
সর্বশেষ পরিস্থিতি যা, তাতে বলা যায়, সামগ্রিক অবস্থা এখনো ব্যাপক পরিবর্তনশীল। যুদ্ধক্ষেত্রে আরাকান আর্মির অগ্রগতি চীনকে মিয়ানমারের অস্থির পশ্চিমে তার অর্থনৈতিক এবং ভূরাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার জন্য কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করছে।
লিখেছেন: জাহাঙ্গীর আলম, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশে আশ্রিত ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারের আরাকানে তাদের নিজ ভূমে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায় আশানুরূপ কোনো অগ্রগতি হয়নি। সর্বশেষ ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের রোহিঙ্গা সমস্যাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেনটেটিভ খলিলুর রহমানের সঙ্গে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে মিয়ানমার পক্ষ ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা দেখিয়েছে। এই তালিকার রোহিঙ্গারা দেশে ফেরার যোগ্য বলে চিহ্নিত করেছে তারা। বাকিদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই চলছে।
তবে মিয়ানমারের আরাকান (রাখাইন) রাজ্যের অধিকাংশ এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। বলতে গেলে মিয়ানমারের অধিকাংশ এলাকাই এখন বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। জান্তা সরকার অনেকখানিই দুর্বল। ফলে রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়টি এখন আর শুধু দ্বিপক্ষীয় আলোচনার বিষয় নয়। খোদ সরকারি কর্মকর্তারাও এই জটিলতার কথা স্বীকার করছেন।
আরাকান এলাকায় এখন পক্ষগুলোর মধ্যে রয়েছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি, মিয়ানমার সরকার এবং চীন। সেখানে বিশেষ করে খনিজ সম্পদে চীনের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রয়েছে।
ফলে আরাকান আর্মি (এএ) এবং চীনের মধ্যে সম্পর্কও এখন বেশ জটিল এবং বহুমুখী। এই সম্পর্ক নির্ধারিত হচ্ছে ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ, অর্থনৈতিক বিনিয়োগ এবং মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধে গতিপ্রকৃতির মাধ্যমে।
আরাকান আর্মি হলো একটি জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন (ইএও)। ২০০৯ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রাখাইন বৌদ্ধরা এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। তারা এই অঞ্চলের জন্য বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন বা ‘কনফেডারেট স্ট্যাটাস’ চায়। চীন, মিয়ানমারের বৃহত্তম প্রতিবেশী এবং অর্থনৈতিক অংশীদার। এই এলাকায় চীনের উল্লেখযোগ্য স্বার্থ রয়েছে, বিশেষ করে তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য আরাকান বেইজিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং প্রাথমিক সম্পর্ক
আরাকান আর্মি মিয়ানমার-চীন সীমান্তে কাচিন রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কাচিন ইনডিপেনডেন্ট আর্মি (কেআইএ) তাদের প্রথম দিকের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়। চীনের এই ভৌগোলিক নৈকট্য আরাকান আর্মিকে এমন একটি অঞ্চলে সম্পদ এবং নেটওয়ার্কে প্রবেশাধিকার দিয়েছিল, যেখানে চীন দীর্ঘদিন ধরে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তার করে আসছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরাকান আর্মি ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মির (ইউডব্লিউএসএ) দিকে ঝুঁকে পড়ে। এটি আরেকটি জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন। এই সংগঠন আবার চীনের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রাখে। আরাকান আর্মি পরে ফেডারেল পলিটিক্যাল নেগোসিয়েশন অ্যান্ড কনসালটেটিভ কমিটিতে (এফপিএনসিসি) যোগ দেয়, যেটির নেতৃত্বে রয়েছে ইউডব্লিউএসএ। এই পরিবর্তন আরাকান আর্মিকে এমন একটি জোটের মধ্যে স্থান করে দিয়েছে, যা চীনের সমর্থন পায়। যদিও বেইজিংয়ের সরাসরি জড়িত থাকার প্রত্যক্ষ প্রমাণ খুব সীমিত।
রাখাইনে চীনের কৌশলগত স্বার্থ
চীনের রাখাইন রাজ্যে আগ্রহ মূলত চীন-মিয়ানমার ইকোনমিক করিডরের (সিএমইসি) ওপর কেন্দ্রীভূত। এটি বেইজিংয়ে বিআরআইয়ের মূল অংশ। এর মধ্যে রয়েছে কিয়াউকফিউ গভীর সমুদ্রবন্দর এবং রাখাইন থেকে ইউনান প্রদেশ পর্যন্ত তেল ও গ্যাসের দ্বৈত পাইপলাইন। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে মালাক্কা প্রণালিকে এড়াতে পারবে চীন। চীনের জ্বালানি আমদানির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাধা এই মালাক্কা প্রণালি।
রাখাইনের স্থিতিশীলতা এই বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পগুলোর জন্য অত্যাবশ্যক। এসব প্রকল্প চীনের বঙ্গোপসাগরে প্রবেশাধিকার এবং আঞ্চলিক প্রভাব বাড়াতে সহায়তা করবে। চলতি বছর আরাকান আর্মি রাখাইনের বেশির ভাগ এলাকা, বিশেষ করে কিয়াউকফিউয়ের কাছাকাছি অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ফলে এই অঞ্চলের চীনের স্বার্থগুলো সরাসরি প্রভাবিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আরাকান আর্মিকে চীনের মিয়ানমার কৌশলে একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় করে তুলেছে।
সমর্থন এবং অস্ত্রের প্রবাহ
বিভিন্ন প্রতিবেদন এবং বিশ্লেষণে জানা যায়, চীন পরোক্ষভাবে আরাকান আর্মিকে সমর্থন করে। প্রধানত অস্ত্র সরবরাহ এবং আর্থিক সহায়তা দেয় বেইজিং। যদিও সরাসরি জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে। আরাকান আর্মি চীনের তৈরি অস্ত্র ব্যবহার করে; যেমন ২০১৯ সালে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর ওপর হামলায় ১০৭ মিমি ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য রকেট এবং মিয়ানমার সামরিক বাহিনী কর্তৃক মিত্র গোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে জব্দ করা এফএন-৬ অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট বন্দুক।
এই অস্ত্রগুলো ইউডব্লিউএসএর কাছ থেকে তারা পেয়েছে বলে ধারণা করা হয়। যারা চীনা নকশার অস্ত্র উৎপাদনের কারখানা পরিচালনা করে এবং চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখে। ২০২০ সালে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল, তারা আরাকান আর্মি এবং অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে অস্ত্র সরবরাহ করছে। বেইজিংয়ের উদ্দেশ্য মূলত ভারতের কালাদান মাল্টি-মোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পকে অস্থিতিশীল করা। যদিও বেইজিংয়ের সঙ্গে এমন অস্ত্র সরবরাহে সরাসরি সংযোগের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ বিরল।
বিশ্লেষকেরা অনুমান করেন, আরাকান আর্মি তাদের তহবিলের ৯০ শতাংশই চীনা উৎস থেকে পায়। সম্ভবত ইউডব্লিউএসএর মতো প্রক্সির মাধ্যমে আসে এসব অর্থ ও অস্ত্র।
ভারসাম্য রক্ষার কৌশল: চীনের দ্বৈত পদ্ধতি
চীন মিয়ানমারে একটি দ্বৈত কৌশল অনুসরণ করে। নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় সামরিক জান্তা (স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিল, এসএসি) এবং কিছু জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী, যার মধ্যে আরাকান আর্মিও রয়েছে, উভয়কেই সমর্থন করে চীন। যদিও বেইজিং আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এসএসিকে সমর্থন করে। যেমন ২০২৪ সালের নভেম্বরে জেনারেল মিন অং হ্লাইং-এর কুনমিং সফরে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, বেইজিং স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে রাখাইনে আরাকান আর্মির উত্থান এই ভারসাম্যকে জটিল করে তুলেছে। উত্তরাঞ্চলের জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মতো মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মিকে (এমএনডিএএ) চীন ২০২৪ সালে অপারেশন ১০২৭-এর পর যুদ্ধবিরতি মেনে চলতে বাধ্য করেছিল। বেইজিং তাদের তৎপরতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু আরাকান আর্মি এর বিরোধিতা করেছে। বিশেষ করে শান রাজ্যে যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও রাখাইনে তারা আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। এই অবাধ্যতা আরাকান আর্মির ক্রমবর্ধমান স্বায়ত্তশাসন এবং স্থানীয় সমর্থনেরই নিদর্শন। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওপর এই বিজয় আরাকান আর্মিকে সীমান্ত-সংলগ্ন গোষ্ঠীগুলোর তুলনায় চীনা প্রভাবের কাছে কম নমনীয় করে তুলেছে।
ভূরাজনৈতিক প্রভাব
আরাকান আর্মির কর্মকাণ্ডের আঞ্চলিক প্রভাবও রয়েছে। ২০২৪ সালের শেষের দিকে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ এবং ভারতের কালাদান প্রকল্পকে লক্ষ্যবস্তু করে আরাকান আর্মি। কিন্তু সেখানে তারা চীনা প্রকল্পগুলোতে হাত দেয়নি। ফলে এখানে ভারতীয় প্রভাবের বিরুদ্ধে চীনের সমর্থনের একটা জল্পনা তৈরি হয়েছে।
২০২৪ সালে আরাকান আর্মি রাখাইনে চীনা প্রকল্প এবং কর্মীদের সুরক্ষার আশ্বাস দেয়। তারা কিয়াউকফিউ আক্রমণ না করার অঙ্গীকার করে। এটি নিঃসন্দেহে চীন ও আরাকান আর্মির মধ্যে বাস্তববাদী সম্পর্কের পরিচয় দেয়। অর্থাৎ এটি নিছক আনুগত্যের মধ্যে আর সীমাবদ্ধ নেই।
বিশেষজ্ঞরা যুক্তি দেন, আরাকান আর্মি চীনের সমর্থনকে এসএসির বিরুদ্ধে তার অবস্থান শক্তিশালী করতে ব্যবহার করে। স্পষ্টত এখানে চীন আরাকান আর্মির অগ্রগতিতে ততক্ষণ পর্যন্ত সহ্য করে, যতক্ষণ তার বিনিয়োগ নিরাপদ থাকে। চলতি বছর আরাকান আর্মির আধিপত্য বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি পরিবর্তিত হয়েছে। বেইজিংয়ে এমন একটি গোষ্ঠীর ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরতা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ধারণা তৈরি হয়েছে, বেইজিং এই গোষ্ঠীকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
সম্পর্কের উত্তেজনা এবং সীমাবদ্ধতা
এই সম্পর্কের মধ্যে উত্থানপতন ও উত্তেজনাও রয়েছে। আরাকান আর্মির রয়েছে জাতীয়তাবাদী অ্যাজেন্ডা। তারা রাখাইন স্বায়ত্তশাসন চায়। তাদের এই অবস্থান চীনের এসএসি নিয়ন্ত্রিত মিয়ানমারের জান্তা সরকারের পছন্দের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ফলে এখানে চীনা স্বার্থ রক্ষার প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলেছে। ২০২৪ সালে এমএনডিএএর কমান্ডারকে আটক করার জন্য অন্যান্য জাতিগত গোষ্ঠীকে চাপ দেয় বেইজিং। কিন্তু আরাকান আর্মির প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি নরম। এর কারণ হতে পারে, চীনের সীমান্ত থেকে রাখাইনের দূরত্ব এবং চীনা সম্পদের প্রতি আরাকান আর্মির কৌশলগত সংযম। অপরদিকে, বেইজিং জান্তা সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে—এমন ধারণার প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় জন্য মিয়ানমারে চীনবিরোধী মনোভাব বাড়ছে। এমনকি বিদেশেও প্রবাসীরা চীনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে। ফলে মিয়ানমারে বেইজিংয়ের ভাবমূর্তি বেশ জটিল হয়ে উঠেছে।
সংক্ষেপে বললে, আরাকান আর্মি-চীন সম্পর্ক পারস্পরিক সুবিধা দ্বারা নির্ধারিত। তাদের মধ্যে আছে কৌশলগত সতর্কতা এবং সংযম। চীন সম্ভবত তাদের পরোক্ষ সমর্থন দেয়। ইউডব্লিউএসএর মতো মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে তারা অস্ত্র ও টাকা পায়। মূলত রাখাইনে প্রভাব বজায় রাখতে এবং ভারতের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের মোকাবিলা করতে চীন এটি করছে। আর সেই সুবাদে আরাকান আর্মি এসএসির বিরুদ্ধে লড়াই আরও শক্তিশালী করার রসদ পাচ্ছে।
তবে এটিও সত্য যে আরাকান আর্মির স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারার সক্ষমতা এবং স্থানীয় সমর্থন, নিজেদের শর্ত নির্ধারণে চীনের ক্ষমতাকে সীমিত করছে। এই আরাকান আর্মি মিয়ানমারের অন্যান্য অনুগত জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর চেয়ে আলাদা।
সর্বশেষ পরিস্থিতি যা, তাতে বলা যায়, সামগ্রিক অবস্থা এখনো ব্যাপক পরিবর্তনশীল। যুদ্ধক্ষেত্রে আরাকান আর্মির অগ্রগতি চীনকে মিয়ানমারের অস্থির পশ্চিমে তার অর্থনৈতিক এবং ভূরাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার জন্য কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করছে।
লিখেছেন: জাহাঙ্গীর আলম, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
৯ ঘণ্টা আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

মিয়ানমারের আরাকান (রাখাইন) রাজ্যের অধিকাংশ এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। বলতে গেলে মিয়ানমারের অধিকাংশ এলাকাই এখন বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। জান্তা সরকার অনেকখানিই দুর্বল। ফলে রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়টি এখন আর শুধু দ্বিপক্ষীয় আলোচনার বিষয় নয়। খোদ সরকারি কর্মকর্তারাও এই...
০৫ এপ্রিল ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

মিয়ানমারের আরাকান (রাখাইন) রাজ্যের অধিকাংশ এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। বলতে গেলে মিয়ানমারের অধিকাংশ এলাকাই এখন বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। জান্তা সরকার অনেকখানিই দুর্বল। ফলে রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়টি এখন আর শুধু দ্বিপক্ষীয় আলোচনার বিষয় নয়। খোদ সরকারি কর্মকর্তারাও এই...
০৫ এপ্রিল ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
৯ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

মিয়ানমারের আরাকান (রাখাইন) রাজ্যের অধিকাংশ এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। বলতে গেলে মিয়ানমারের অধিকাংশ এলাকাই এখন বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। জান্তা সরকার অনেকখানিই দুর্বল। ফলে রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়টি এখন আর শুধু দ্বিপক্ষীয় আলোচনার বিষয় নয়। খোদ সরকারি কর্মকর্তারাও এই...
০৫ এপ্রিল ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
৯ ঘণ্টা আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

মিয়ানমারের আরাকান (রাখাইন) রাজ্যের অধিকাংশ এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। বলতে গেলে মিয়ানমারের অধিকাংশ এলাকাই এখন বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। জান্তা সরকার অনেকখানিই দুর্বল। ফলে রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়টি এখন আর শুধু দ্বিপক্ষীয় আলোচনার বিষয় নয়। খোদ সরকারি কর্মকর্তারাও এই...
০৫ এপ্রিল ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
৯ ঘণ্টা আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১ দিন আগে